#নতুন_তুই_আমি#
💜💜💜💜💜💜
Writer:Nargis Sultana Ripa.
🌹🌹🌹🌹🌹🌹🌹🌹
পর্ব::-৫………………………
আজ তামান্না আর সিয়ামের আংটি বদলের দিন।
শুক্রবার,ভার্সিটি নেই।
তাই সিয়াম ঘুমাচ্ছে।
অথচ ঘড়ির কাঁটায় সাড়ে এগারো টা।
এর মধ্যে অনেকবার রাইয়ান এসে ডেকে গেছে।
কিন্তু সিয়াম উঠে নি।
আজকে যে ওর জীবনের বিশেষ একটা দিন,এতে কোনো মাথা ব্যথা নেই ওর।
আর আম্মু কাজের চাপে ডাকতেই আসতে পারছে না ছেলেকে।না হলে এতক্ষণে পিটিয়ে ঘুম ভাঙাতো ছেলেকে।
!
আর এদিকে তামান্না রোজাকার মতো আজও ভোরে উঠেছে।বেচারী আছে নানা রকমের চিন্তায়।
কাল সারা রাত ঘুমাতে পারে নি সিয়ামের চিন্তায়।
স্বামী সংসার নিয়ে সব মেয়ে ই মনে মনে হাজার টা স্বপ্ন বুণে।তামান্নাও তো তাই করেছিলো।কিন্তু সিয়াম!!
ওকে নিয়ে কখনো তো ভাবে নি।সে তো বন্ধু ছিলো।
আর যা জ্বালা জ্বালায় সিয়াম;আল্লাহ্ ই জানে বিয়ের পর কি করে।
এসব ভাবতে ভাবতে ঘুম হয় নি আর।চোখ যখন লেগে আসছিলো একটু ফযরের আযানে সেটাও আর হয়ে উঠে না।
কি আর করার!!!
কপালে যা আছে তাই তো হবে।
তামান্নাদের বাড়িতেও চলছে নানা আয়োজন।
যদিও আজ বাইরের কোনো লোক আসবে না।
ঘরোয়া ভাবে সব কাজ হবে।
তবুও একমাত্র মেয়ের আংটি বদল বলে কথা,কাছের আত্মীয় স্বজনরা না থাকলে চলে নাকি!!!
তামান্নার কোনো খালা বা ফুপু নেই।জেঠা মারা গেছে সাত বছর আগে,জেঠি-জেঠাতো ভাই(রাফিন),ভাবী,ভাই পো…এরা তো পরিবারের সদস্যই।
আত্মীয় বলতে তামান্নার নানু(নানি)আর মামা-মামি।
ও হ্যাঁ,তাঁদের একটা গুনধর ছেলেও আছে ওয়াসিম নাম।
এবার ভার্সিটিতে পা রাখলো।তামান্নার তিন বছরের ছোট।
তো এরা এরাই।
মেয়ের রেজিস্টি হবে,বর,বরের বাড়ির লোক আসবে তাই কত রকমের আয়োজন হচ্ছে!!!
বিশেষ করে কত রকমের আইটেম যে হচ্ছে আজ;তামান্নার বাসায়।
পুরো বাড়ি খাবারের গন্ধে মৌ মৌ করছে।
“আপু,দেখ তো এি শার্ট টা কেমন??”(ওয়াসিম)
“ওয়াসিম,ভাই আমার যা তো…ভালো লাগছে না….”
“ওফফফ,আপু…..কি হয়েছে বল তো।কাল আসার পর থেকেই দেখছি তোর মুড অফ।এনি প্রবলেম??”
“ওয়াসিম,প্লিজ যা……”
“আপু!!!তুই কাঁদছিস???”
“ওয়াসিম….প্লিজ…..”
“দেখি….হা হা হা হা….কেঁদে কেঁদে তো চোখের পানি নাকের পানি এক করে ফেলছিস……কি রে বুড়ি??বিয়েতে মত নেই নাকি??
অন্য কারও সাথে ইটিস পিটিস আছে নাকি??হ্যাঁ??”
“ওয়াসিম,ভালে হবে না কিন্তু…..”
“আচ্ছা,দাঁড়া।আমি ফুপ্পিকে গিয়ে বলছি;তোর মনে অন্য কেউ…তুই সিয়াম ভাইয়াকে বিয়ে করবি না……”
“কিহ???”
লাফ দিয়ে উঠে বসে তামান্না।
“হ্যাঁ…নো টেনশন।এখনি যাচ্ছি……”
“ওয়াসিম না…..দাঁড়া বলছি….ওয়াসিম…..”
এটা আরেক চিস।সিয়ামের চেয়ে কোনো অংশে কম না।
যখন তামান্নাদের বাসায় আসে তখনি তামান্নার হাড্ডি মাংস এক করে ফেলে।
ওয়াসিম তামান্নার কোনো কথা শোনে ড্রয়িং রোমে চলে আসে।
পেছন পেছন তামান্নাও আসে।
কিন্তু তামান্না আসার আগেই ওয়াসিম সবার সামনে উল্টাপাল্টা বকে ফেলেছে।যা তামান্না আসতে আসতে শুনে নিয়েছে।
ওয়াসিমের বক্তব্য এমন ছিলো,
“ফুপ্পি,কার জন্য এতো সব করছো??”
“কেনো রে ওয়াসি???? ”
জবাব দেয় ওয়াসিমের মা।
“ওহ্,মা….তোর ভাগনী তো এই বিয়েতে রাজি ই না।সে তো অন্য কাউকে ভালোবাসে…….”
সবাই একটু হুচট খায়।
তামান্নার বাবা,মামাও সেখানে উপস্থিত ছিলো।
ওয়াসিম সিরিয়াস মুড নিয়েই কথাগুলে বলছে।
আর তাই সবাই!!!
এর মধ্যে তামান্নাও হাজির হয়……..
“ওয়াসিম!!!!!”
“তামান্না,কি হয়েছে মা??”
“মামা,ও কিসব বলছে??সব সময় পাঁকামি ওর।বাজে কথা,না বললে হয় না ওর।
বড় হয়ে গেছে ও??বেশি বেশি করছে…..”
“বা রে আপু…তুই ই তো শুয়ে শুয়ে কাঁদছিলি…..”
এতক্ষণে সবাই আন্দাজ করতে পারলো,ওয়াসিম বাজে বকছিলো।
ওরা তামান্নাকে ভালো করেি চিনে।তামান্না কখনো এসব প্রেম ভালোবাসা পচ্ছন্দ করে না বিয়ের আগে।
“ওয়াসিম….তুই কি বুঝবি না বল?তোর আপুর রেজেস্ট্রি আজ…আজকের দিনে এমন কথা কেউ বলে…”
“ফুপ্পি তোমার মেয়ে এমন ভাবে কাঁদছিলো না,আমি তো ভাবলাম সত্যি সত্যি এফেয়ার আছে……”
“ওয়াসিম!!!!মাম্মাম,ওকে থামতে বলো……”
“ফুপ্পি…..এখনো সময় আছে,নিবরে জানতে চাও তোমার মেয়ের কাছে,কার সাথে কি করে এসেছে কে জানে….না হলে আংটি বদলের দিন এভাবে কেউ কাঁদে নাকি!!!”
তামান্নার তো লজ্জায় নাক কাঁটা যাওয়ার মতো অবস্থা।
এই ছেলের বুদ্ধিসুদ্ধি নেই নাকি!!!
বাবা-মামার সামনে তামান্নার তো মাটির সাথে মিশে যাওয়ার উপক্রম হচ্ছে।
কি সব বললো ওয়াসিম!!
তামান্নার মুখ দিয়ে কোনো কথা বের হচ্ছে না।
ওর মাম্মাম আর মামীর দিকে অসহায় ভাবে তাঁকিয়ে আছে বেচারী।
তামান্নার বাবা আর মামা মন অন্য দিকে নেওয়ার চেষ্ঠা করছে।সবাই জানে,ওয়াসিমের কথা বার্তা বলার ধরণ এমনি।
ওয়াসিম তামান্নার কাছে গিয়ে লম্বা চুলের বেণুনীটা ধরে জোরে একটা টান দিয়ে বললো,
“যা তো…..ঢং করিস না…..”
“ওহুহু…….”
ব্যথা পেয়েছে যে তামান্না চুলে টান দেওয়ায়;তাই ছোটখাটো একটা চিৎকার দিয়েছে।
“ওয়াসিম!!!!!”
ওয়াসিমের মা তেড়ে আসে তাঁকে মারার জন্য।
ওয়াসিম তো দেখেই ভোঁ দৌঁড়।
“দাঁড়া,পালাচ্ছিস কেনো???বেয়াদপ ছেলে??”
“মামী……তোমার ছেলে কিসব বললো……”
“ধুর বোকা মেয়ে,আমরা কিচ্ছু মনে করি নি…….আপু(তামান্নার মা)তুমি অনুকে নিয়ে সামলাও এদিক টা আমি তামান্নাকে নিয়ে গেলাম…..”
তামান্নাকে ওর মামাী রোমে নিয়ে যায়।
বিছানায় বসে মাথায় হাত বুলিয়ে বলে,
“আজকে কি কাঁদতে হয়??হুম???কি করেছিস চোখ টা???”
“আমার না কেমন জানি লাগছে……”
বলেই হু হু করে কেঁদে উঠলো নৌশিন।
জড়িয়ে ধরলো ওর মামী।
“মা রে,কাঁদিস না।একটু নার্ভাস লাগে যে এই সময়ে…..”
“মামাী,সিয়াম না কেমন জানি!!!ও কি আমাকে সবার মতো কেয়ার করবে???এখন তো বন্ধু,বিয়ের পর যদি বন্ধু না হয়ে থাকে???”
“পাগলী,কোথাকার।দেখি চোখ টা,ইসসস….কেঁদে কেটে শেষ…..চোখ মুছে দিলাম…আর একটুও কাঁদবি না।
আর শোন,সিয়াম তোর খুব কেয়ার করে।এখন বন্ধু হয়ে করছে দেখিস বিয়ের পর ঠিকই প্রেমে পড়বে,এমন রূপবতী-গুনবতী মেয়ের প্রেমে না পড়লে সে তো ছেলের জাত ই না…..দেখিস,আজ এমন সাজ সাজাবো না আমাদের মা কে….সিয়াম বাবার চোখে তাঁক লেগে যাবে…….আর শোনো আজকে কিন্তু নো হিজাব…..”
“মামাী!!!না…..আমি হিজাব পড়বো…..সবার সামনে হিজাব ছাড়া যেতে পাড়বো না আমি…..”
“আচ্ছা সে না হয় দেখা যাবে……এখন যাও লম্বা একটা সাওয়ার নাও……”
“লম্বা সাওয়ারও নিতে হয় বুঝি??”
“হ্যাঁ….হয়…যাও……”
!
বিকাল হয়ে আসছে…….
জু’মা এর নামায পড়ে এসে তামান্নার বাবা একবার মেয়ের ঘরে যান।কিন্তু ভেতর থেকে দরজা লাগানো তাই চলে আসেন নক না করেই।
খাবার টেবিলেও মেয়েকে পান নি ওনি।তামান্নার মায়ের কাছে জানতে চাইলে,তামান্নার মা উল্টো বলে উঠে,”এতো মেয়ে মেয়ে না করে,খাওয়া শেষ করে……..মেয়ে ব্যস্ত আছে…..”
“তাই বলে খাবে না??”
“ওফফ…..খাও তো তুমি….কখন থেকে মেয়ে মেয়ে করছো….মেয়েকে খাইয়ে দিবো আমি…..টেনশন করার কিছু নেই…….”
আর এখন খাওয়া শেষ করে আবারও মেয়ের ঘরের সামনে যায় তামান্নার বাবা।
এবারও দরজা ভেতর থেকে লাগানো……কৌতুহল মেটাতে নক করে বসলো এবার……….
ভেতর থেকে রাফিনের ওয়াইফ বলে উঠে,
“কে???”
“বউ মা……..আ…”
“চাচ্চু…..”
“হ্যাঁ….”
!
অণু দরজা খোলতে যাবে,কিন্তু তামান্না বাঁধা দেয়।
ফিসফিস করে করুণ সুরে বলে,
“ভাবী,না….”
“কি না??”
“শাড়ি পড়ে পাপার সামনে???আমি পাড়বো না….”
“ধুর পাগলী….কিচ্ছু হবে না….”
“না ভাবী প্লিজ…..পড়ে তো যেতেই হবে….আগে পুরো রেডি হয়ে নিই….প্লিজ,রিকোয়েস্ট……”
“আচ্ছা…..মানলাম….”
“তাহলে পাপাকে বলে দাও….”
“পড়ে আসো না চাচ্চু,আমি তামান্নাকে রেডি করছি……”
“ও….আচ্ছা আচ্ছা ঠিক আছে…….”
!
তামান্নার সাজ শেষ।
অণু আর তামান্নার মামী বেরিয়ে আসে রোম থেকে।
তামান্নার মা আর জেঠি তো ঘরে ডুকে পুরো অবাক।
তামান্না খুব ছোট সময়ে প্লে নার্সারিতে থাকাকালীন পড়েছিলো।আর পড়ে নি কোনো দিন।ওদের মেয়েকে শাড়িতে যে এতো সুন্দর লাগবে,নিজের চোখে না দেখলে বিশ্বাস করতে না ওনারা।💜💜💜💜💜💜