নতুন তুই আমি পর্ব-৬

0
1786

#নতুন_তুই_আমি#
💜💜💜💜💜💜
Writer:Nargis Sultana Ripa.
🌹🌹🌹🌹🌹🌹🌹🌹🌹
পর্ব::-৬……………………………
!
তামান্নার বাসায় হৈচৈ পড়ে গেছে।সবার মুখে হাঁসি।
হবেই বা না কেনো??সিয়ামের পরিবার এসেছে যে।
কালো পান্জাবী,সাদা চুরিদার পায়জামা….স্পাইক করা চুল…চাঁপা খোঁচা খোঁচা দাঁড়ি….হাতে ব্রেন্ডড ঘড়ি…সব মিলিয়ে একটা রাজপুত্রের মতো লাগছে সিয়ামকে।
সিয়ামের আম্মু তো বাসায় ঢুকেই তামান্নার খোঁজ করা শুরু করেছে।
“মেয়ে কোথায় ভাবী?”
“কেনো?ঘরে নেই??”
“আমি তো ওর রোম থেকেই আসলাম,পেলাম না তো….”
“আচ্ছা,আমি দেখছি….”
তামান্নার মা মেয়েকে কোথাও পেলেন না।ফিরে আসছিলো হঠাৎ মনে হলো ছাদ টা তো দেখা হয় হি।
তামান্না ছাদেই ছিলো।
যখন সে কোনো চিন্তায় পড়ে,তখন ছাদের দোলনায় বসে।এমনিতে ওর মন যখন চায় তখনি আসে।তবে চিন্তায় থাকলে পা দুটো তুলে বসে।
এই টুকু যা পাথর্ক্য।
মেয়েকে দেখে স্বস্তি পেলো মা।
পাশে বসে,কাঁধে হাত রেখে বললেন,
“কি রে মা??”
“কেনো মাম্মাম??”
“বোকা মেয়ে,কি এত চিন্তা করছিস?দেখিস সব ঠিকঠাক হবে।আর তুই সাজ নিয়ে এখানে বসেছিস কেনো??চল নিচে চল….সবাই অপেক্ষা করছে……”
“একটু পরে যাই না মাম্মাম?”
“উমহু…..একদম না……”
বাধ্য মেয়ের মতো উঠে দাঁড়ালো তামান্না।
মা-বাবার সাথে অহেতুক কথা পেঁচানোর স্বভাব তাঁর নেই।
তামান্না মায়ের হাত ধরে সিড়ি দিয়ে নামছে।প্রতিটি সিড়ির প্রতিটি ধাপ পাড় হচ্ছে আর মনের ভেতরের খচখচ শব্দ টা আরও বেড়ে চলেছে।
জীবনে অনেক বার সে সিয়ামের সামনে এসেছে।এমন কোনো দিন যায় নি সিয়ামের সাথে কথা হয় নি।
অথচ আজ সে সিয়ামের সামনে যেতেই নাকি তামান্নার ভয় লাগছে।
তামান্নাকে সবার সামনে আনা হলো।
সিয়াম রাইয়ানের সাথে কোনল এক বিষয়ে ফিসফিস করে ঝগড়া করছিলো।
ওর মায়ের হাতের ধাক্কা খেয়ে সামনের দিকে তাঁকায়।
আর তাঁকানোর সাথে সাথে চোখের সামনে একটা ঝলক দেখতে পায় সে।তীব্র সৌর্ন্দযের ঝলক!!
একি সত্যি!!!নাকি কল্পনা!!!
তামান্নাকে তো রোজ দেখে সিয়াম।
তাহলে আজ!
রাইয়ানের হাঁসির শব্দে হুঁশ আসে রাইয়ানের।
তামান্নার বাবা মেয়েকে অপলক দৃষ্টিতে দেখছে।
মেয়ে বড় হওয়ার পর তো কখনো শাড়ি পড়া অবস্থায় দেখে নি।
তামান্না বসেছে ওর জেঠির পাশে।সিয়ামের মা উঠে গিয়ে তামান্নাকে সিয়ামের পাশে বসিয়ে দিলো।
তামান্না জীবনে বহুবার সিয়ামের পাশে বসেছে।
তবে আজ কেনো লজ্জা লাগছে??
ভেবে পাচ্ছে না তামান্না।
সিয়ামের ভেতরেও এক অন্য রকম অনুভূতি হচ্ছে।
কোনো মেয়েকে দেখে কোনেদিন মনের ভেতরে আঁতকে উঠে নি।থেমে যায় নি ভাবনার শক্তি।
অথচ আজ!!চিরচেনা বন্ধুর অন্য রূপে নিজের সমস্ত ভাবনা যেনো থেমে গেছে।
“তামান্না এতো সুন্দর!!!
এতো মায়াবী!!ওর চোখে তো সব সময় তো মায়ার জাল থাকে।তা তো আমাকে ঘায়েল করে নি কখনো।তাহলে আজ??শাড়ি পড়লে কি সব মেয়েকেই এতো সুন্দর লাগে।না না…ক্যাম্পাসে তো কত মেয়েই শাড়ি পড়ে।”
“আরে ভাইয়া!!হ্যাঁ করে কি দেখছিস??আগে তো রিং টা পড়া……”
তামান্না মাথা নিচু্ঁ করে বসে আছে।সিয়াম সবার সামনে যেভাবে তাঁকিয়ে আছে!!তাতে সিয়ামের লজ্জা না করলেও তামান্নার খুব লজ্জা করছে।
“মামনি,তোমার ডান হাত টা দাও তো…….”
রাইয়ানের মায়ের শোনে,ভয় পেয়ে যায় তামান্না।সবার সামনে সিয়ামে ওর হাতে রিং পড়াবে!
“কি হলো,মামনি??হাত টা দাও…..বাম হাতের কথা বলে নি।তাই বলে কিছু মনে কর না যেনো।রাইয়ান বলল,তুমি নাকি বাম হাতে ঘড়িও পড় না।তাই ভাবলাম যে মেয়ে সময়ের কাঁটাই বাম হাতে তুলে না সে মেয়ে কি জীবনের শ্রেষ্ঠ অলংকার টা বাম হাতে তুলবে!”
মুঁচকি হাঁসলো তামান্নার মা-বাবা।তাঁদের মেয়ে যে ডান হাতেই রিং টা পড়বে তারা খুব ভালো করে জানে।
তামান্না হাত দিচ্ছে না দেখে ওর জেঠি হাত টেনে নিয়ে সিয়ামের সামনে ধরলো।
সিয়াম এক নজরে তামান্নার হাতটাও দেখে নিলো এবার।
আগে কখনো আলাদা ভাবে তামান্নার কোনো কিছু খেয়াল করে নি।কিন্তু আজ!!দেখতে ইচ্ছা করছে।এতো বিচিত্র!!
যদি বর্তমান যুগের ভাষায় বলতে হয় তাহলে,সিয়াম জীবনে প্রথম কোনে মেয়েকে দেখে আজ ক্রাশ খেলো।
তবে খুব মজার ব্যাপার হলো,সে তাঁর সবচেয়ে কাছের বন্ধু।আর আজ থেকে বউ।
“কি হলো?আংটি টা পড়া??”
মায়ের কথায় হুশ আসে সিয়ামের।তামান্নার হাত টা আলতো করে ধরলো।
প্রচন্ড রকমের ব্যাখেয়ালি লাগছে সিয়ামের।
হাত টা ধরতেই সিয়াম রীতিমতো চমকে উঠে।
“হাত এতো নরম!!”
মনে মনেই বলে উঠে সিয়াম।
“কি হলো??জামাইবাবু??হাত টা ধরে না থেকে রিং টা তো পড়াও…..”
তামান্না লজ্জায় কুকড়ে যাচ্ছে।বিশেষ করে ওর বাবা-ভাইয়ের সামনে এভাবে লজ্জায় পড়ে-মুখ তুলারও সাহসও পাচ্ছে না।
তা ছাড়া সিয়ামের এমন অন্য রকম চাহনী,পাশে গা ঘেষে বসা,এমন সর্প্শে নিজেকে ঠিক রাখতে পারছে না।
সিয়াম অবশেষে রিং হাতে নিয়েছ,এই পড়াবে বলে!
ওর মা পাশ থেকে বলে উঠে,
“বিসমিল্লাহ বলে পড়াবে….”
সবাই মিটমিট করে হাঁসছে।
শুধু সিয়াম আর তামান্না ছাড়া।
শেষ পর্যন্ত সিয়াম রিং টা পড়িয়েই দিলো তামান্নার হাতে।তামান্নার মনে হলো কোনো এক আবেশ তাঁকে চারপাশে ঘিরে ফেললো।
যেটা ওর পুরো পৃথিবীকে ঘিরে ফেললো একমুহুর্তেই।
চোখ বন্ধ করে ফেলল তামান্না।আবেশে হারিয়ে গেলো মুহুর্তেই।
এখনও সিয়ামের দিকে একবারের জন্যও তাঁকায় নি তামান্না।কিন্তু এবার চোখ খুলে প্রথমেই সিয়ামের দিকে তাঁকায়।
সিয়াম আগে থেকেই তামান্নার মুখের দিকে তাঁকিয়ে ছিলো।
তামান্না ওর দিকে তাঁকানোতে চোখাচোখি হয়ে গেলো।
দ্রুত চোখ সরিয়ে নিলো তামান্না।নাহ,তাঁকিয়ে থাকতে পরছে না।আজ ঐ চোখ জোড়া বড্ড অন্য রকম লাগছে তামান্নার কাছে।
তামান্না তো চোখ গরম করে সিয়ামের দিকে কতবার তাঁকিয়েছে!আর আজ????
তাঁকানোর নুন্যতম সাহস পাচ্ছে না।
রাইয়ানের বাবা তামান্নার বাবাকে উদ্দেশ্য করে বললেন,
“আলহামদুলিল্লাহ……এবার তাহলে বাকী কাজ টা সারা যাক।তারপর না হয় একেবারেই মিষ্টি মুখ করবো।”
“নিশ্চয় নিশ্চয়….সব কাজ সেরে তবেই তো মিষ্টি মুখে পুরবো….”
“কাকা,তোমার ডায়াবেটিস…..”
“আরে ভাতিজা আমার,একদিন তো খেতে দে….”
“কাকি!!তুমি সামলাও কাকাকে……”
“ও একদিন মিষ্টি খেলে কিছু হবে না।ভাই সাহেব…আপনি যত খুশি মিষ্টি খাবেন তবে ওদের রেজিস্ট্রি টা হওয়ার পর….”
সিয়ামের মায়ের অনুমতি পেয়ে তামান্নার বাবা তো মহা খুশি।
রেজিস্টারকে বললেন,
“আপনি কাজ শুরু করুন।দেরী আর কেনো করবেন?”
তাই হলো।সব কিছু রেডি করে সিয়ামকে বললেন স্বাক্ষর করার জন্য।
তামান্নার দিকে একবার তাঁকিয়ে বেশ খানিক টা সময় নিয়ে স্বাক্ষর করলো।
এবার তামান্নার পালা।
বুকের ভেতর ঢুল বাজার মতো শব্দ হচ্ছে।সাথে সারা শরীরও তীব্রগতিতে কম্পিত হচ্ছে।
সবাই বলছে নিজের নামটা লেখার জন্য।কিন্তু বেচারী তো কলম ধরার শক্তি টুকু পাচ্ছে না।ভয় আর লজ্জায় চোখে পানিও চলে আসছে।
“কি হলে মা??কলম টা ধর……”
বলেই সিয়ামের মা তামান্নার হাতে কলম গুজে দিলো।
সাইন করার জন্য সবাই বলাবলি করলেও সাহস হচ্ছে না তার।
“ভাবী,কর না সাইন টা……”
রাইয়ানের ভাবী ডাকে যেনো আরও নার্ভাস হয়ে পড়লো তামান্না।চোখ দুটো ঝলঝল করছে।রাফিন বোনের মুখের দিকে তাঁকিয়ে বুঝতে পারলো বিষয় টা।
তামান্না ওর বাবার দিকে তাঁকালো।মেয়ের চোখে পানি দেখে বুক টা ধুক করে উঠলো বাবার।বুঝতে পারলেন মেয়ে ভয় পাচ্ছে।
তামান্না আবারও কাঁপাকাঁপা হাতে কলম এগিয়ে ধরলো।
তবুও পারছে না।
রাফিন সিয়ামের মা কে একটু অনুনয়ের স্বরে উঠিয়ে নিয়ে নিজে বোনের পাশে বসলো।
বোনের হাত টা ধরে বলল,
“কি রে??কাঁদছিস কেনো পাগলী??নরমাল ব্যাপার একটা।মনে কর নতুন খাতায় তোর নাৃ লিখছিস…..”
একবার ভাইয়ের দিকে তাঁকিয়ে আবার বাবার মুখের দিকে তাঁকালো তামান্না।
মাথা নেড়ে সম্মতি জানালো ওর বাবা।বুকে সাহস পাচ্ছে এবার।
মনে মনে দোয়া পাঠ করে অবশেষে নিজের নাম টা লিখেই ফেললো।এতক্ষণ তো শুধু চোখে পানি ছিলো।কান্নার কোনো শব্দ ছিলো না।সাইন করার সাথে সাথে ভাইকে জড়িয়ে ধরে ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলো।আর উপস্থিত সবাই এমন কান্ডে হাঁসতে হাঁসতে শেষ।
“বোন!!কাঁদছিস কেনো??দেখ তোর নতুন খাতা কিন্তু কাউকে দিতি না।আজকে তো নতুন খাতায় নাম লিখেই ফেললি।দুজনেই মালিক কিন্তু একটা খাতার।সো আগলে রাখিস দুজনেই।সব চেয়ে দামী খাতা তো…..”
ভাইয়ের বুক থেকে মুখ তুলে তামান্না।সবার সামনে অনেক কেঁদেছে।নিজেকে কিছুটা স্বাভাবিক করে নিলো এবার।
তামান্নার কান্নার সময় যদিও সবাই হাঁসছিলো তবে সিয়াম হা করে দেখছিলো সবকিছু।
কেমন যেনো বোকা বনে চলে গিয়েছিলো এক মুহুর্তের জন্য।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here