নতুন তুই আমি পর্ব-৭

0
1612

#নতুন_তুই_আমি#
💜💜💜💜💜💜
Writer:Nargis Sultana Ripa.
🌹🌹🌹🌹🌹🌹🌹🌹
!
পর্ব:-৭…………………………
!
তামান্না নিজের রোমে বসে আছে।রাইয়ান আর তামান্নার ভাবী ফোন হাতে তামান্না আর সিয়ামের সব ছবিগুলো দেখছে।
“ভাবী,এগুলো খুলে ফেলি না?কাজ তো শেষ………”
“খুলে ফেলবি?আবার যদি ডাক পড়ে??”
“গরম লাগছে তো??এটলিস্ট চুল টা খুলি??এতো ক্লিপ তো….”
“আচ্ছা,ঠিক আছে।চুল খুল তুই……দ্বারা আমি হেল্প করছি।”
“না না তোমার লাগবে না।আমি ই আস্তে আস্তে করছি….”
তামান্না চুলের বাঁধন খুলছে।এক এক করে সবগুলো ক্লিপ খুলে ফেলেছে।সাথে চুলগুলো এক ঝাঁক বনোপাখির মতো শু করে সারা পিঠ এলিয়ে গেছে।কি যে অপরূপ দৃশ্য!!
সিয়াম হয়তো জীবনে প্রথম এতো সুন্দর সৌন্দর্য দেখতে পেলো।
সিয়ামের মা ছেলেকে জোর করে তামান্নার ঘরে পাঠিয়েছে।
আর সে দরজার কাছে এসেই দেখতে পেলো তামান্না চুল খোলায় ব্যস্ত।দ্বিতীয় বার ক্রাশ খেলো বেচারা সিয়াম।
প্রথম তো বেনারসি পড়া এক হুরপরী আর এখন কমড় ছড়ানো এক গাধি কালো কেশ!!
নিজের অজান্তেই ঢুক গিললো সিয়াম।
ভেতর টা শুকিয়ে যাচ্ছে রূপের আগুনে।
না আর দেখতে পারছে না,তাহলে হয়তো চোখ টাও পুরে যাবে।পেছন ফিরে তাঁকায়।এক মুহুর্ত দেরী না করে চলে আসে তামান্নার রোমের সামনে থেকে।
.
“কি রে,গিয়েছিলি??”
“হ্যাঁ…বাট ডোর লক ছিলো ভেতর থেকে…..”
মিথ্যা বলল সিয়াম।তা না হলে মা আবার জোর করবে সেখানে যাওয়ার জন্য।
তবে সিয়াম সেটা পারছে না।
সবকিছু গুলিয়ে যাচ্ছে আজ।
না জানি এরপর আবার কোন রূপে দেখে ফেলে।তাহলে তো একমানুষের উপর একদিনেই তিন নম্বর ক্রাশ খাওয়াও হয়ে যাবে।
“ও চেন্স করছে হয়তো।”
কেনো তা জানে না সিয়াম।তবুও তামান্নার চেন্স করার বিষয় টা ওর মা সবার সামনে বলায়,লজ্জা লাগছে ওর।
ভেতরে কিসের একটা আলো-আধারী বাজনার সুর দোলা খাচ্ছে।যার উৎপত্তির কারণ খুজে পাচ্ছে না সিয়াম।
.
সিয়ামের মা মিষ্টি খাবার খেয়েই উঠে চলে যেতে চাইলে তামান্নার জেঠি আর বাবা উঠতে দেয় নি।
“আন্টি,ডিনার রেডি করতে আরও একটু টাইম লাগবে।তো চলো না আমরা সবাই ছাদে যাই!”
“হ্যাঁ,হ্যাঁ খালামনি,চলো।ভাবী তো ঠিক বলেছে।আর একটা গ্রুপ ফটো তুলা হবে।”
“তো হয়ে যাক…..”
রাইয়ানের সাথে তাল মিলিয়ে সিয়ামের বাবা সম্মতি জানিয়ে দিলো।
“আচ্ছা,তাহলে আমি ভাবীকে ডেকে নিয়ে আসি?”
“হ্যাঁ,যা….আর সিয়াম তুই মুখটা ওমন করে রেখেছিস কেনো??চল ওপরে…..”
“মা!আমার…..”
“হয়েছে।আর বলতে হবে না তোকে।রাইয়ান তুই যা তামান্না মাকে নিয়ে ছাদে চলে আয়।”
“ওকে ওকে……”
.
তামান্না আসতে চায় নি।ওর ভাবী আর রাইয়ান জোর করে নিয়ে এসেছে।
তামান্নার শাড়ি পরে থাকতে খুব কষ্ট হচ্ছিলো।যা গরম!!
তাই ওর ভাবী চেন্স করে থ্রি-পিস পড়ে নিতে বলছে।
তামান্না মনে মনে এটাই চাইছিলো।
একটা সাদা রং এর থ্রিপিস পরেছে।যার উপর গোল্ডেন বুটিক্সের কাজ।তামান্নার গাঁয়ে জাস্ট ধরে খাচ্ছে ড্রেসটা।
মাথায় উড়না দিয়ে সবার সামনে হাজির হলো তামান্না।
সিয়াম বোধহয় এক নারীর উপর তিন নম্বর ক্রাশ টা এখনি খেলো।
অপূর্ব লাগছে।হিজাব সুন্দরী আর ওড়না মাথায়।নতুন বউ মনে হচ্ছে।
এতো কেনো সুন্দর লাগছে আজ তামান্নাকে!সেটাই সিয়াম বুঝতে পারছে না।
সিয়াম-তামান্নাকে পাশাপাশি বসানো হলো।
আবারও তামান্নার সেই অদ্ভুত অনুভুতি কাজ করছে।যার সূচনা কোথায় সে জানে না।
সিয়াম আড় চোখে তামান্নাকে দেখলো।কেনো জানি দেখতে ইচ্ছা করছে!!
আজ সারা দিন কোনো কথা হয় নি ওদের দুজনের।
সিয়াম আনমনেই আস্তে করে বলে উঠলো,
“কথা বলছিস না কেনো?”
চমকে উঠে তামান্না।
দৃষ্টিনিক্ষেপ করে সিয়ামের দিকে।সিয়ামকেও বেশ লাগছে তামান্নার চোখে।
তবে বেশিক্ষণ চোখাচোখি হলো না তাঁদের তার আগেই সায়মান বলে উঠলো,
“শুনুন,শুনুন সবাই শুনুন।আসসালামু আকাইকুম।আজকে এখানে একটা ভালো মজা হবে।সবাইকে অনেকগুলো চকলেট দেওয়া হবে।”
সায়মানের কথায় হাঁসছে সবাই।সিয়ামও আনমনে হেঁসে ফেলেছে।তবে তামান্নার দিকে চোখ পড়া মাত্রই হাঁসি থামিয়ে ফেলল।তামান্না যে হাঁসছে না,গুটিসুটি হয়ে বসে আছে।
আর যাই হোক ছোট বেলা থেকে সিয়াম তামান্নার হাঁসি মুখ দেখে অভ্যস্ত।
.
সবাই অনেক মজা করে সময় টা পাড় করলো।গ্রুপ ফটোও তুলা হয়েছে।সিয়ামের পরিবার ডিনার করে চলে যায়।যাওয়ার আগে সে কি আদর নিজের ছেলের বউয়ের!তা বোধহয় সিয়ামের মাকে না দেখলে বুঝা যাবে না।
.
বালিশে মুখ গুজে শুয়ে আছে সিয়াম।ঘুমানোর চেষ্ঠা করেও লাভ হচ্ছে না।বার বার তামান্নার চুল খোলা দৃশ্য টা চোখের সামনে ভাসছে।কি অপরূপ!!
শাড়িতে এতো সুন্দর লাগে কোনো মেয়েকে!!মনের ভেতর আকুবাঁকি করছে।কিসের একটা চাহিদা তৈরী হচ্ছে।
সিয়ামের বুঝতে দেরী হলো না।বুঝতে পারছে সে,এই মুহুর্তে ওর মনে তামান্নার গলা শোনার তীব্র চাহিদা বাড়ছে।
কল করলো তামান্নাকে।
স্ক্রিনে সিয়ামের নম্বর দেখেই বুকটা কেঁপে উঠলো তামান্নার।
আনমনে ভাবতে গিয়ে,ফোনটা কেঁটে যায়।সিয়াম আবারও কল করলে,রিসিভ করলো তামান্না।
ওপাশ থেকে সিয়ামের বক্তব্য,
“ফোন ধরছিলি না কেনো?”
“………”
“কি হলো??কথা বলতে সমস্যা??কেঁটে দিবো নাকি?”
রেগে কথা বলছে সিয়াম।
তামান্না মৃদু স্ববরে বলল,
“না…..”
“এতো আস্তে কথা বলছিস কেনো??”
“কি??”
“থাপ্পর খাবি।বেয়াদপ মেয়ে…..”
“আমি আবার কি করলাম?”
কিছুক্ষণ চুপ করে থাকলো সিয়াম।নিজের অশান্ত মনটাকে শান্ত করে,মুঁচকি হেঁসে বলল,
“একটা কথা বলবো?”
তামান্নার ভেতরে এক অন্য রকম হাওয়া বইছে।তার স্বামী তার কাছে অনুমতি চাইছে কিছু বলার জন্য।কি বলতে পারে?বন্ধু হিসেবে কিছু বলবে নাকি স্বামী হিসেবে??
“কি হলে বলবো??”
“বল…..”
“তোকে না আজকে পুরো মর্জিনার মতো লেগেছে….”
তামান্না ভ্যাবাচেকা খেয়ে যায়।
প্রশ্ন করে,
“কার কথা বলছিস??মর্জিনা কে??”
সিয়াম হাঁসিতে ফেঁটে পড়ছে।
জবাব দিলো,
“বাংলা সিনেমাতে কাজের মহিলার নাম থাকে মর্জিনা।
বিশ্বাস কর দোস্ত তোকে আজকে পুরো কাজের লোকের মতো লেগেছে….”
“সিয়ামের বাচ্চা!!কুত্তা,বিলাই,চিকা,হারামি…….”
“হা হা হা হা হা…….”
“ধুর ফোন রাখ তুই।বদমাইশ…….”
“হপপপপপ……….”
“সিয়াম!!!”
“এই জানিস??”
সিয়ামের মুখে জীবনে প্রথম ‘এই’ সম্ভোধন শুনলো তামান্না।
কেমন একটা তীব্র ভালোলাগা কাজ করলো সিয়ামের এমন কন্ঠস্বরে।
আবেগী সুরে সেও বলল,
“হুমম…..”
“তোর চুলগুলো কিন্তু আসলেই সুন্দর…..”
থমকে গেলো তামান্না।
সিয়াম কি করে ওর চুল দেখলো!!
আর দেখেছেই যখন তবুও আবার নিজের মুখে স্বীকার করছে যে ‘সুন্দর চুল’।
কখনো তো সিয়ামের মুখে এমন ভালো কথা শোনে নি।
তাই অবাকের উপর অবাক হচ্ছে তামান্না।
সিয়াম আবারও ও পাশ থেকে বলে উঠলো,
“আম নট জোকিং।আসলেই তোর চুকগুলো অনেক সুন্দর।এমন চুল তো….. ”
তামান্না খুব লজ্জা লাগছে।
কিছু বলতে পারছে না।
সিয়াম ই বলে ফেললো,
“আরে,এতো সুন্দর চুল।পুরো ঘোড়ায় লেজ।একটু তো যত্ন করতে পারিস।শোন আজ থেকে যত্ন করবি…..”
“সিয়াম!!!তুই কি বললি এটা??আমার চুল….ঘোড়ার লেজ???হারামী রে……”
“হপপপপ তুই হারামী।ভুলে যাস না আজকে থেকে আমি তোর হাজবেন্ড।সো আমাকে সম্মান দিয়ে কথা বলবি।”
“ছাঁই দিবো।তুই তো চিরজীবন খারাপ খারাপ ই থাকবি।আসলে তুই…তুই….।ধুর ভাল লাগে না।তুই আর ফোন ই দিবি না আমাকে……”
বলেই ফোন কেঁটে দিলো তামান্না।আর সিয়াম তো হাঁসতে হাঁসতে শেষ।
তামান্নার রাগী ভয়েস টা জাস্ট জোশ লাগলো আজকে।
হাঁসি থামাতেই পারছে না সিয়াম।
মুহুর্তেই চোখের সামনে,আাবারও ভেসে উঠলো ওড়না মাথায় দেওয়া সেই নারীর মুখ।কি পবিত্র লাগছিলো!!কি অমায়িক সিন্ধতা!!!
কত রূপ!!কি মায়াজাল!!
বউ!!কিশোরী!!কেশবতী!!সব সাজেই যেনো অপসরী।
💜💜💜💜💜💜💜

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here