নতুন তুই আমি পর্ব-৮

0
1720

#নতুন_তুই_আমি#
💜💜💜💜💜💜💜
Writer:Nargis Sultana Ripa.
🌹🌹🌹🌹🌹🌹🌹🌹
!
পর্ব:-৮…………………………
!
“বুলি,বুলি…….ও বুলি…..”
তামান্না কোরআন শরীফ টা বন্ধ করে ফিরে তাঁকালো ভাতিজার দিকে।বলল,
“কি হলো বাবাই???”
“আম্মু নুডুলস করেছে।আসো……”
“তুমি খাও….. আমি পরছি যে……”
“তোমাল আয়াত তো শেষ।আসো….তুমি না গেলে আমি খাবো না…..”
“ওরে বাবা!আয়াত তো বুঝিস তুই??”
“বুঝি তো আম্মু বলেছে।এখন আসো আসো……”
শেষ পর্যন্ত আসতেই হলো তামান্নাকে।
দুজনে বসে বসে নুডুলস খাচ্ছে।
“বুলি,তুমি স্কুলে যাবে না?”
“হুম যাবো তো।তুমি কবে যাবে বাবা?”
“বল হলে যাবো তো…..”
ওদের কথা শোনে পাশ থেকে তামান্নার বলল,
“আজকে ভার্সিটিতে যাবে নাকি??”
“হ্যাঁ মাম্মাম।যেতে হবে।অনেক কাজ বাকী।।।।”
“আজকে না গেলেই হয় না।তোমার আন্টি বলছিলো তোমরা মানে তুমি আর সিয়াম যদি আজকে কোথায় ঘুরে আসতে…..”
তামান্নার পাশে বসে কথাগুলো বললো ওর মা।
তামান্নার একটু অবাক ই লাগছে।ওর মা ওকে ক্লাস মিস দিতে বলছে!!
“মাম্মাম,তুমি ক্লাস মিস দিতে ঘুরতে বলছো আমায়??তাও আবার সিয়ামের সাথে??”
“এই,এটা কোন ধরনের কথা।কিভাবে বলছো তুমি??এমনভাবে বলছো মনে হচ্ছে তুমি সিয়ামকে হেয় করছো।কেউ হয় না তোমার ও….এমন একটা ভাব…….”
তামান্না তো আরও অবাক।কি এমন বললো ও যার জন্য ওর মা ওকে কথা শোনাচ্ছে।
“মাম্মাম??আমি তো…..”
“চুপ।আমি যা বলি শোনো।আগে যা ছিলো ছিলো।কাল থেকে সে কিন্তু তোমার হাজবেন্ড হয়ে গেছে।সো কথা-বার্তা একটু সম্মান দিয়ে বলো….”
তামান্না কি বলবে বুঝতে পারছে না।বারবার ই বড়দের মুখের উপর কথা বলে না সে।
আজও তাই হলো।
তবে কি থেকে যে কি হলো!!এটাই মাথায় আনতে পারছে না।
তামান্না নুডুলসে মন দিলো।
ওর মা পাশ থেকে আবার বলল,
“আজকে ভার্সিটিতে যাওয়ার দরকার নেই……”
“মাম্মাম!!”
“নুডুলস শেষ করে সিয়ামকে ফোন করে আসতে বলো।”
এতো মহাবিপদ!!
“মাম্মাম কি হলো হঠাৎ তোমার??”
“আমার কি আর হবে??আমার নতুন মেয়ে জামাই হয়েছে।তো তাঁকে আমার একটু খাতির যত্ন করতে হবে না??”
“মাম্মাম।।।।আমার কিন্তু আসলেই খারাপ লাগছে….”
“মামনি,কেনো খারাপ লাগছে??”
তামান্নার বাবা বাড়িতে প্রবেশ করার সময় প্রশ্ন করলেন।
রোজ সকালে জগিং করতে যান ওনি।আজকেও গিয়েছিলেন।ঘরে ডুকে মা-মেয়ের কথা-বার্তা শেষটুকু শুনতে পেরেছেন।
তামান্না কিছু বলার আগেই ওর মা উঠে বলল,
“তোমার মেয়েকে বলছি সিয়ামকে কল করে আসতে।তাতে ওনার অস্বস্তি……”
“কেনো??ফোন করে আসতে বলো।তোমার ভাইয়া খাসির গোস্ত এনেছে তো।বেশ মজা করে মেয়ে জামাইয়ের সাথে খাওয়া যাবে……”
তামান্না প্রায় কাঁদাকাঁদো।সকাল সকাল কি শুরু করেছে ওর বাবা-মা।সবাই শুধু কখন থেকে সিয়াম,সিয়াম করছে।ওর কথা তো কিছু বলুক।
এ যেনো চারদিক থেকে সিয়াম-ময় পরিবার।
তাই তো মনে হচ্ছে,না হলে তামান্নার ভাইও এসে সিয়ামের কথা বলতো না।
“হ্যাঁ,বোন।বল আসতে…..আজকে সবাই মিলে একসাথে……”
কেঁদেই দিলো তামান্না।ওর ভাই তো পুরো অবাক।কথা শেষ না করে বুঝার চেষ্ঠা করছে কি হলো!!!
“ও বুলি??কাঁদো কেনো??”
তামান্না উঠে এক দৌঁড়ে নিজের রোমে।
“সবাই শুধু সিয়াম,সিয়াম….আমি যেনো কেউ না…….কাল হলো বাড়ির জামাই।আর আজ কি না……”
একা একাই বকবক করে চলেছে তামান্না।
ওর ভাই আর মা ঘরে ডুকছে,সেটা দেখে কাঁদতে কাঁদতেই বলে উঠলো,
“আমার রোমে আসতে হবে না তোমাদের।তোমরা তোমাদের সিয়ামকে নিয়েই থাকো।কখন থেকে শুধু সিয়াম,সিয়াম।ওর জন্যই তো খাসি আনা হয়।আমার জন্য এতো ঘটা করা হয় না।আগেও জ্বালিয়ে মারতো এখন তো তোমরা আরও সুযোগ করে দিয়েছো……”
মেয়ের কথা শোনে তামান্নার মা তো কুটিকুটি হাঁসছে।
সাথে তাল মিলিয়ে সশব্দে হাঁসছে তামান্নার ভাইয়াও।
তামান্নার যেনো আর সহ্য হলো না।বিছানায় বসে ছিলো এতক্ষণ।ছুটে এসে মাকে জড়িয়ে ধরলো।হাউমাউ করে কেঁদে ফেলল।
“এমন কেনো করছো তোমরা??হঠাৎ করে সব পাল্টে দিচ্ছো কেনো??আমার খারাপ লাগছে তো!!!”
“আল্লাহ্….দেখি বোকা মেয়ে!!কাঁদছো কেনো এভাবে??আমরা তো জাস্ট……”
“আমার হঠাৎ করে এগুলো কেমন যেনো লাগছে……”
মা মেয়েকে নিয়ে বেডে বসলাো।বেড সাইড টেবিল থেকে পানির গ্লাস টা এগিয়ে দিয়ে বলল,
“দেখি,আগে পানি টা খাও।আমার মেয়ে যে এতো বাচ্চা তা তো বুজতে পারি নি আমি…..”
পাশে বসে ভাই বোনের চোখ মুছে দিয়ে বলল,
“মাইর হবে কিন্তু!নো কান্নাকাটি…..বি নরমাল।
তুই আগে যেভাবে সিয়ামের সাথে বিহেভ করতি এখনো সেভাবে করতে পারিস।সেটা তোদের দুজনের ব্যাপার।বাট হাঁসি মুখ কিন্তু মাস্ট বোন…..”
তামান্না অভিমানী সুরে বলে উঠলো,
“তোমরাই তো……”
তামান্নাকে ওর মা জড়িয়ে ধরে চুলে চুমু দিয়ে বলল,
“এখনো বাচ্চা!!একদম কাঁদবে না।”
“আচ্ছা ঠিক আছে কাকি ছাড়ো।নুডুলস খেয়েছে শুধু।ব্রেকফাস্ট করিয়ে দাও ওকে।ভার্সিটিতে যাক আজকে নরলাম লাগবে তাহলে।পরে না হয় দুজনকে বিকালে আমি ট্রিট দিয়ে দিবো একটা……”
.
তামান্না ভার্সিটির ক্যান্টিনে বসে কফি খাচ্ছে।সিয়াম এসে বসলো পাশে,
“কি রে??কখন এলি?”
“মাত্রই…..”
“এভাবে মুখ গোমড়া করে আছিস কেনো??নি নরমাল। তুই আর আমি তো নতুন কেউ না তাই না??”
তামান্না নিশ্চুপ।ইদানিং কি জানি কি হয়েছে!!সিয়ামকে দেখলে একটু আধটু লজ্জা লাগে।
“ঐ….কি ভাবছিস??
আচ্ছা শোন,বাবা-মা যা করেছে করেছে।এমন তো নয় আমাদের দুজনের মন ভেঙে দিয়েছে….”
তামান্না সিয়ামের দিকে তাঁকালো।হয়তো ঠিক ধরতে পারে নি কথাটা,
“আরে বোকা,বুঝলি না?
বিষয়টা হচ্ছে এমন…..আমার বা তোর যদি আগে থেকে কোনো রিলেশন থাকতো তাহলে ব্যাপার টা আমাদের দুজনের জন্য কষ্টের হতো।বাট আমাদের কারও ক্ষেত্রে তো না…..সো ডোন্ট অরি…..।আরে এখনো মন খারাপ!!আরে চল ব্যাটা……”
সিয়াম তামান্নার হাত ধরে উঠিয়ে নিয়ে চলে আসলো।
“আরে,মামার বিল দিই নি…..”
“আমি দিয়ে দিয়েছি……”
সিয়াম টা এমনি।ওর মতল বন্ধু পাওয়া হয়তো ভাগ্যের ব্যাপার স্যাপার আছে।
তামান্নার যদি কোনো সিরিয়াস কারণে মন খারাপ থাকে তাহলে যে ভাবেই হোক মন ভালো করবে।
এরকম টাই হয়ে এসেছে ছোট বেলা থেকে। এখন তো এটা দেখার পালা হাসবেন্ড হিসেবে কেমন!!
.
“দোস্ত…….ইথানল আনছিস??”
“সিয়াম!!!আজও???”
“তুই তো জানিস ই….আমি এগুলোর জন্য তোর উপর ডিপন্ডেড”
মুঁচকি হেঁসে তামান্না ইথানলের বুরেট টা সিয়ামের দিকে এগিয়ে দিলো।
ল্যাবরেটরি থেকে কাজ শেষে বের হচ্ছে তামান্না।সাথে সিয়ামও আছে।টুকটাক কথা বলছে।ওদের চমকে দিয়ে এক ঝাঁক উড়ন্ত পাখির মতো সব গুলো ফ্রেন্ড ওদের ঘিরে বলয় তৈরী করে নিলো।
তামান্না তো ভয় ই পেয়ে গেছিলো।
“তোরা!!!এভাবে.??ভয় পেয়ে গেছিলাম তো……”
“আরে,বিয়ের কনে????এতো ভয়!!!”
সিাাম-তামান্না দুজনেই অবাক।কারণ ওরা ওদের দুজনের বিয়ের ব্যাপারে কোনো বন্ধুকেই কিছু বলে নি।
“সিয়াম???তুই না খুব বলতি??তামান্না বেস্টি…বেস্টি….এখন কি হলো??হ্যাঁ???”
“স্টপ!!!!!কি হচ্ছে……”
তামান্না চেঁচিয়ে উঠলো।
তবে রেগে নয়….।
“আমরা ল্যাবের পাশ না থেকে গ্রাউন্ডে গিয়ে কথা বলি??”
“উপপপপ….সত্যিই তো…..”
মেয়েরা তামান্নার হাত ধরে আর ছেলেরা সিয়ামকে টানতে টানতে গ্রাউন্ডে নিয়ে আসলো।
“উফফ….ছাড় ব্যাটা….এভাবে টেনে আনার মানে কি?”
“ও মামা।তুমি তলে তলে গাড়ি চালাও-আমরা সামনে পড়েলেই হরতাল।হা হা হা……চালাকি তো ভালোই জানো।”
“সজীব!!!!”
তামান্না ধমকে উঠলো বন্ধুটাকে।
“কি হয়েছে বোনো??”
“এমন করছিস কেনো??তোরা তো জানিস…ওর আর আমার মাঝে কিছু নেই…..”
“হ্যাঁ…আমরা জানি।বাট এখন তো তোরা হাসবেন্ড-ওয়াইফ….”
তামান্না-সিয়ামের সব বন্ধুই জানে ওদের সম্পর্ক টা কেমন ছিলো।সাথে এটাও স্পষ্ট ওরা দুজন বন্ধুর বাইরে কিছু ছিলো না।
দুজনে বন্ধুদের সাথে পুরো বিষয়টা শেয়ার করলো।
সবাই তো পুরো হা।
দুজনের ফ্যামেলির মধ্যে যে ভাব আছে ওরা তা জানতো তাই বলে এতো কিছু!!!
ঐশী নামের একটা মেয়ে দাঁড়িয়ে বলল,
“ওকে।ফ্রেন্ডস….আমরা পুরো টা বিষয় বুঝতে পেরেছি।তবে যেভাবেই হোক…আমাদের প্রাণপ্রিয় বন্ধু দুটো এখন নব্যদম্পতি।আমরা আশা করবো ওরা যেনো নতুন জীবনে সুখী হয়।তবে আমরা একটু আপসেট….কজ আমরা তো একটু দাওয়াতের ভাগিদার ছিলাম।
এটা কোনো ব্যাপার না।আমরা আমাদের অধিকার ঠিক ই আদায় করে নিবো।”
সবাই চেঁচিয়ে উঠলো,
“রাইট!!!!!”
.
“চল……”
অবাক হয়ে সিয়াম জানতে চাইলো,”কোথায়??”
“ট্রিট দিবি দুজনে আমাদের…..”
“মানে???তোদরে গরুর পালকে খাওয়াতে হবে আমায়??”
“ওয়াট দা!!!গরুর পাল মানে??”
“কতগুলো তোরা!!!প্যাকেটে নাই টাকা….আসছে…..সবাই গিয়ে ঠান্ডা পানি খেয়ে নে যা……”
সিয়াম চলে যেতে নিলো।
একটা বন্ধু বলে উঠলো,
“দোস্ত।তোর বউয়ের হাত কিন্তু ধরে রেখছি।তুই গেলে যা….তোর বউকে ছাড়ছি না।”
সিয়াম অট্ট হাঁসিতে ফেটে পড়লো।বলল,
“আরে রাখ…রাখ ওকে রেখে দে…..”
গাঁ হেলিয়ে-দুলিয়ে হাঁটা শুরু করলো সিয়াম।তামান্নার তো রাগে শরীর ফেটে যাচ্ছে।
“সিয়াম!!ভেবে দেখ….তোর বেস্টি বা বউ যাই বলিস….ওর হিজাব যদি টান দিয়ে সবার সামনে খুলে দিই??”
চমকে উঠলো তামান্না আলেয়ার কথা শোনে।এই মেয়েটা একটু বেশিই পাঁজি।
“আলেয়া!!!খবরদার…..নাআআআআ….”
আলেয়া জাস্ট হিজাবে হাত রেখেছিলো।তাতেই তামান্না চেঁচিয়ে উঠলো।
সিয়াম দৌঁড়ে এসে আলেয়ার হাত টা সরিয়ে দিলো,
“হুপপপ।।।কি করছিস??”
“তাহলে বল খাওয়াবি???”
“হবে না……”
বলেই সিয়াম তামান্নার হাত ধরে টানতে লাগলো।
তামান্না যেনো জীবন ফিরে পেলো।বন্ধুদের বিশ্বাস নেই।
যদি সত্যি ই হিজাব খুলে দিতো!!!
সিয়াম তামান্নাকে সরাতে পারছে না।কারণ সব কয়টা মেয়েই তো তামান্নাকে সিয়ামের অপজিটে টেনে ধরে রেখেছে।
বাধ্য হয়ে সিয়াম বলল,
“ওকে।ডান….খাওয়াবো……”
সাথে সাথে সবগুলোর মুখে ক্যাডার মার্কা হাঁসি।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here