#নতুন_তুই_আমি#
💜💜💜💜💜💜💜
Writer:Nargis Sultana Ripa.
🌹🌹🌹🌹🌹🌹🌹🌹🌹🌹🌹🌹
!
পর্ব:-৫৪……………………………….
রিসোর্টের তিনটা রোম সিয়াম আজ রাতের জন্য ভাড়া নিয়েছে।একটা তামান্না আর তার নিজের।অন্য দুটোর একটাতে আকাশ অপরটাতে রাইয়ান।তামান্না রোমে নেওয়ার আগেই তার ঘুম ভেঙে গিয়েছে।
সিয়াম কাছ থেকে জোর করে সে নিজেকে ছাড়িয়েছে।রির্সোটে যতই মানুষ কম থাকুক তবুও সবার সামনে নিজের বরের কোলে উঠা কেমন একটস লজ্জা!তামান্না তো তা হতে দিবে পারে না।
তামান্না রোমে গিয়ে দেখলে মফস্বলের রির্সোট হলেও রোম গুলো এতটাও ছোট নয়।বেশ সুন্দর বললেও হয়তো ভুল হবে না।সাধারণ বাড়ির মতই রোম টা গুছানো।তবে পার্থক্য হচ্ছে আসবাবপত্র গুলো বেশ পুরানো দেখাচ্ছে।এই রির্সোট টা নাকি পূর্বে অনেক নামকড়া ছিলো।কিন্তু রির্সোটের মালিক কোনো কারণে দেশের সবকিছু ফেলে বাইরে চিরস্থায়ী বসবাস করছেন।এখন সব কিছুই তার দূর সর্ম্পকের আত্মীয়দের আওতায়।তাই কোনো কিছুই আর আগের মত নেই।তবে লোক টা ভীষণ অভিজাত ছিলেন সেটা রির্সোটের পুরাতন যুগের নকশা দেখেই বুুঝা যাচ্ছে।দেয়াল গুলো দেখে মনে হবে নিশ্চয় কোনো ব্রিটিশ শাসকের বাংলো।কিন্তু আসলে তেমন না।খুব হলে পাকিস্তান আমলে গড়া এই ভবন।তবো যত্নের অভাবে এই বেহাল দশা।তামান্নার রির্সোট টার কথা ভেবে মনটা কেমন খারাপ হলে গেলো।লোকটা কত ভালোবেসে এই ভবন টা করেছে।অথচ আজ কোন কারণে এই ভালোবাসাটা এমন অবহেলায়!সত্যিই কারও রেখে যাওয়া ভালবাসা কখন যে স্মৃতি হয়ে যায়-আমরা কেউ জানি না।ঐ লোক টা ভাবছিলো বা জেনেছিলো তার এই ভালোবাসার দেশ,মাটি,বাড়ি,রির্সোট সব তার স্মৃতিতে রয়ে যাবে।নিঃসঙ্গ কোনো রাতে কাঁদাবে তাকে।কোনো অর্থলোভী স্বজনের অর্থের চাবিকাঠি হয়ে অবহেলিত হবে!
ভাবতে ভাবতে তামান্না একটা দীর্ঘশ্বাস নিলো।তারপর পা বাড়ালো খোলা বারান্দার দিকে।বারান্দায় দাঁড়াতেই তামান্নার মনটা শালিক পাখির মতো আনন্দে নেঁচে উঠলো।কি সুন্দর এই বারন্দা টা।সাধারণত কোনো হোটেল বা বাড়িতে এমন বারান্দা করা হয় না।একটা ছোট খাটো মুক্ত মঞ্চের মতো লাগছে বারান্দাটাকে।কোনো পাশে কোনো কাঁচ বা পাকা দেয়াল নেই।নেই কোনো গ্রিলও।শুধু ডান পাশে একটা বড় ডিভান।আর চারপাশে প্রায় দু হাত দূরে দূরে বারান্দার শেষ প্রান্ত ঘেষে নানা রকম ফুলের গাছ।চার কোণায় চারটা মাঝারি সাইজের নারকেলর চারও রয়েছে।তামান্না মুগ্ধ হয়ে দেখছে।কি অপরূপ চুরিসম্পন্ন পরিকল্পনা!
হাজার মন খারাপ থাকলেও মন ভালো না হয়ে উপায় নেই।
তামান্না তো এই মুহুর্তে মনে মনে এটাও ভেবে ফেললো-তার যখন বাচ্চা কাচ্চা হবে তখন তারা পুরো পরিবার এক রাত এই রির্সোটে কাটিয়ে যাবে।বাচ্চাদেরও তো দপখা উচিত মানুষ কতটা গভীর ভাবে মন থেকে নকশা তৈরী করতে পারে।
তামান্নার হঠাৎ খুব হাসি পেলো।কি ভাবলো সে?
বাচ্চারা!
আচ্ছা কয়টা বাচ্চা হবে তার?নাহ্।তামান্না উত্তর খুঁজে পায় না।
আচ্ছা!কোনো মেয়ে কি শতপুত্রের জননী হতে পারে!
যদি হওয়া যায় তাহলে তামান্না যদি তাই হতো তবে তো সে পুরো পৃথিবীর!
তামান্না আর ভাবতে পারলো ফিক করে হেসে ফেললো।কি সব আবল তাবল ভাবছে সে।
এর মধ্যে পেছন থেকে কেউ একজন এসে তামান্নাকে ঝাপটে ধরলো।তবে আশ্চর্যের বিষয় হলো ঘটনা টা এমন আকস্মিক হওয়ার পরও তামান্না এতটুকুও চমকে যায় নি।বরং নিজের শরীর টা পেছন দিকে আরও একটু দুলিয়ে মানুষটার হাতের উপর আলতো করে দুহাত রাখলো।
কারণ সে তো জানে-এই পৃথিবীতে কে তাকে এমন করে আগলে নিতে পারে!বুঝতে পারে এমন স্পর্শ শুধু একজনেরই হয়।
সিয়াম ভেবেছিলো তামান্না ভ পাবে।কিন্তু তা না হওয়ায় সিয়াম একটু অবাক হয়েই বললো, “ভয় পেলে না কেনো?”
তামান্না হাসলো।
বললো, “ভয় কেনো পাবো?”
“এই যে হঠাৎ করে জড়িয়ে ধরলাম।কে না কে?”
“ধুর।তা কি করে হবে।তুমি কি অচেনা?তোমার স্পর্শ,শরীরের গ্রাণ এই পৃথিবীর আর কেউ না বুঝলেও আমি ঠিক বুঝতে পারবো।”
সিয়াম তামান্নার হিজাবের উপর দিয়েই তামান্নার ঘাড়ে মুখ রাখলো।
বললো, “তাই?”
তামান্না সিয়ামের দিকে ঘুরে সিয়ামের গলা জড়িয়ে ধরে বললো, “কেনো?তোমার কি মনে হয়??”
সিয়াম তামান্নার কমড়ে হাত রেখে তামান্নাকে আরও কাছে টেনে নিয়ে বললো,
“কি মনে হয় ঠিক বলতে পারছি না।তবে এটা বলতে পারবো-তোর মতে কেউ আর কেউ কখনো আমাকে ভালোবাসতে পারবে না।”
তামান্না মাথা নিঁচু করে মুঁচকি হাসলো।সিয়ামের বুকে মাথা রেখে বললো, “আমিও জানি।”
“আচ্ছা!”
“হুম।”
সিয়াম দু হাতে জড়িয়ে নিলো তামান্নাকে।বাইরের খোলা হওয়ায় প্রকৃতির মিষ্টি প্রেমের মতই তাদের মনের পবিত্র অনুভূতিগুলো নড়া দিয়ে যাচ্ছে।অন্ধকারের মতো গভীর ভালোবাসার নিশ্ছিদ্র চাদরে আবৃত হয়ে আছে একটা দম্পতি।
!
বেশকিছুক্ষণ পর তামান্না নিজেকে নিজের থেকে ছাড়িয়ে নিলো।
সিয়াম বললো, “কি হলো?”
“কি আবার হবে।এভাবে দাঁড়িয়ে থাকবো নাকি সারা রাত?”
“তো।থাকলে ক্ষতি কি?”
“আহা রে।কত শখ।”
“অবশ্যই শখ।নিজের বউকে জড়িয়ে ধরে রাত্রি পাড় করবো এটা অবশ্যই খাটি শখের কাজ।”
“ইশশশ।”
সিয়াম হাত বাড়িয়ে তামান্নাকে ধরলো চাইলো।কিন্তু তামান্না দু কদম পিছিয়ে যাওয়ায় পাড়লো না।তবে আরও এগিয়ে ঠিকই পেছন দিক থেকে জড়িয়ে নিলো তামান্নাকে।
“এই কি হচ্ছে।ছাড়ো।”
“কিছু হচ্ছে না।”
তামান্না হাসলো।তারপর সিয়ামের ডান গালে হাত রেখে বললো, “জায়গা টা সুন্দর না?”
“কি জানি??”
“মানে?তোমার কাছে সুন্দর মনে হচ্ছে না?”
“নাহ্।”
“কিহ্?”
“হুম।কারণ আমার তামান্নুর সৌন্দর্যের তুলানায় এই সৌন্দর্য তো ফিকে।অতি ঠুনকো।”
তামান্না এবার একটু লজ্জা পেলো।সে কি সত্যই এতো সুন্দর?নাকি সিয়াম একটু বাড়িয়ে বাড়িয়ে বললো।
“আমি একটুও বাড়িয়ে বলছি না। ”
“কিহ্?”
“এই যে তুই ভাবছিস আমি বাড়িয়ে বলছি কি না।সেটাই বললাম।”
“বলছে তোমাকে!”
“তোর মন বলেছে।”
“ধুর।ছাড়ো তো।কেমিক্যাল কেমিস্ট্রি না পড়ে বাংলা পড়লেই পারতে। তাহলে আরও ভালো ভালো উপমা আর কাব্য বানাতে পারতে।ঠিক কালিদাসের মত।”
“কার মতো??”
“কালিদাস।”
“বেটা তো একটা……”
“লুচু।”
“কি বললি??”
“যা ঠিক তাই বলেছি।কি প্রেম যে ছিলো তার মনে।মেয়েদের নিয়ে কত ভাবো লিখে!
লুচু নয় তো কি?”
“তারমানে আমিও কি তেমন?”
“একদম না হলেও কাছাকাছি।”
“কি রে বুঝলি?”
“এই যে এতো কাব্যিক!কত প্রেমময়!আর নজর শুধু…..”
“নজর শুধু।কি বল??”
“কিছু না।সরো।রোমে যাবো।”
“লজ্জা পাস না প্লিজ।আমি এই মুহুর্তে কিছু করতে চাইছি না।কিন্তু পরমুহুর্তে…..”
তামান্না নরম কন্ঠে বললো,
“রোমে যাবো।”
“আগে বল না।আমার নজরের কি দোষ?”
“অনেক দোষ।”
“আমি তো কোনো দিন মেয়েদের দিকে তাকাই না।শুধু তোর আর তামিল হিরোইনননন………”
কথাটা বলা মাত্রই তামান্না কুনুই দিয়ে সিয়ামের পেটে দিলো একটা পান্স।সিয়াম পেটে হাত দিয়ে একটু পেছিয়ে যাওয়ার ভঙ্গি করলেও একটুও ব্যথা পায় নি।
এরমধ্যেই তামান্না রাগে গজগজ করে রোমে ডুকে গেলো।সিয়াম সবার জন্য আকাশকে নিয়ে পাশের একটা ছোট মার্কেট থেকে এক রাতের দরকারি পোশাক নিয়ে এসেছে।সেগুলো থেকে নিজের প্যাকেট খুজে বের করছে তামান্না। আর জোরে জোরে বলছে, “চোখ শুধু তামিল হিরোইনদের দিকেই পড়ে।কত সুন্দর নারী!আহ্…কি মায়াবী দেখতে।নিজের বউয়ের চেয়ে সুন্দর তো!নজর খারাপ হলে যা হয় আর কি।কালিদাস না এর চেয়ে ভালো ছিলো।অন্তত্যপক্ষে বাঙালীতেই থেমে ছিলেন।আর আমার কালিদাস তো বাঙালী হিন্দি ছাড়িয়ে তামিলে গিয়ে পড়ছে।ছিঃ ছিঃ।”
সিয়াম তামান্নার কথাগুলো শোনে হাসতে হাসতে রোমে এলো।এতে তামান্না আরও একটু ক্ষেপে গেলো।নিজের প্যাকেট টা খুজে পেয়েছে সে। সেটা হাতে নিয়ে ওয়াশরোমের দিকে যাচ্ছে।তবে রাগ সামলাতে না পেরে আবার পেছন ফিরে আসে।সিয়ামের কাছে গিয়ে আঙ্গুল উঠিয়ে বললো, “শোনো।হাবলার মত সব সময় হাসবে না।আর আরেকটা কথা।ভেবো না স্বামীকে সম্মান করি বলে সব মেনে নিবো।কখনোই না।আগের তামান্নাকে কিন্তু আগের মতই আছে।মনে রাখবি।বুঝবি।সিয়ামের বাচ্চা সিয়াম।”
সিয়াম প্রথমে হাসতে থাকলেও তামান্নার মুখে আগের মত তুই তুকারি শোনে বেচারা হা হয়ে গেছে।
তামান্না আবার চেঁচিয়ে উঠলো,
“হা করে কি দেখছিস।বাসায় গিয়ে নিই আমি।দেখবি,যদি প্রত্যেকটা হিন্দি-তামিল টি.ভি ক্যাবল না কাটিয়েছি তবে আমার নাম তামান্না না।হু!”
তামান্না অবশেষে থামলো।হনহন করে হেটে ওয়াশরোমে চলে গেলো।আর বেচারা সিয়াম স্তব্ধ হয়ে শূণ্য মাথায় ভাবতে লাগলো-কি হলো??কে এই নারী??
কে কালিদাস??
তামিল মুভি কি??
আর টি.ভি ক্যাবল??
অসহায় একটা বাঙালী বরের মাথা ঘুরছে।নারীর এ কোন রূপ।বহুরূপী নারী!অগ্নিকুন্ডের মতো চোখ!!!সিয়াম আর ভাবতে পারছে না।ধপপ করে রির্সোটের নরম গদির বিছানায় নিজেকে বির্সজন দিলো সে।
💜💜💜💜💜💜💜💜💜