#নতুন_তুই_আমি#
💜💜💜💜💜💜💜💜
Writer:Nargis Sultana Ripa
🌹🌹🌹🌹🌹🌹🌹🌹🌹🌹
!
পর্ব:-৫৬…………………………..
আকাশ ছাদে গিয়ে চারপাশে তাকালো।কোথাও রাইয়ান নেই।ছাদে এক চিলেকোঠার মতো ঘর আছে।কিন্তু ঘর টা পাশ থেকে দেখে ছনের মনে হচ্ছে।তবে এই ঘরে রাইয়ান যাবে!একা মেয়ে নিশ্চয় বোকা না হলে যাবে না।
তারপরও যেহেতু আশেপাশে নেই হলে হতেও তারে ভেতরে।তাই আকাশও সেখানে যায়।তবে বাইরে থেকে আকাশ যেমন টা ভেবেছিলো তেমন নয়।এটা কোনো ঘর না বরং একটা ছোট্ট সিরি বেয়ে আরো উপরে উঠা যায়।আর দেখতে ছনের তৈরী মনে হলেও এটা একই রকম ডিজাইন তবে ইটের তৈরী।
আকাশ সিরি বেয়ে উপরে উঠলো।জায়গা টা বেশ খানিক টা ছোট।একটা মাঝারি সাইজের ওয়াশরোমের মেঝের মতো।
এই জায়গাটাতেই রাইয়ান বসে আছে।ন। আছে কোনো রেলিং না আছে কোনো সার্পোট।একা একটা মেয়ে এতো রাতে এতো উপরে এমন একটা জায়গায় বসে থাকতে পারে?
আকাশের মনের ভেতর থেকে উত্তর আসলো-হ্যাঁ পারে।যদি সে সাহসী হয়।
আকাশ আবলীলা রাইয়ানের পাশে পা ঝুলিয়ে বসলো।
রাইয়ান ফিরেও তাকালো না।
একবারের জন্যেও না।
তার মানে আকাশ যে এখানে এসেছে এটা রাইয়ান বুঝতে পেরেছিলো!
আকাশও রাইয়ানের মতো খোলা আকাশের দিকে তাকিয়ে রইলো।
দুজনেই চুপ।শুধু চারপাশ থেকে চাপা স্বরে ঝি ঝি পোকার শব্দ আর পুরো রির্সোট জোড়ে ছোট ছোট রঙীন মৃদু আলোর সমাহারে পরিবেশ টা অন্যরকম মোহনীয়তা প্রকাশ করেছে।ভালোই লাগছে দুজনেই।
আলাদা করে নিজেদের মতো করে পাশাপাশি বসেও অনেক কিছু আবিষ্কার করা যায়।কেউ করে প্রকৃতি আবিষ্কার আর কেউ তার পাশে বসা মানবসত্বার।যেমন টা রাইয়ান আর আকাশের ক্ষেত্রে বলা যায়।
বেশকিছুক্ষণ পর নিরবতা ভাঙলো আকাশ।
দৃষ্টি রাইয়ানের দিকে ফিরিয়ে নিয়ে প্রশ্ন করলো, “ভয় করছিলো না একা একা?”
রাইয়ান আকাশের দিকে তাকিয়েই উত্তর দিলো, “না।”
“তাহলে বলতে হবে তুমি অনেক সাহসী মেয়ে।”
“হয়তো।”
“তাহলে আসার সময়-সিয়ামকে কেনো বলছিলে তোমার একা রোমে ভয় করে??”
রাইয়ান এবার আকাশের দিকে তাকালো।তারপর বললো, “আমার হোটেল বা রির্সোটে অচেনা কত রকমের কত মানুষ থাকে-তাই ভয় লাগে।সেজন্য রোমে একা রোমে থাকি না।”
“ওহ্!তার মানে তুমি ভুত-পেতে বিশ্বাসী নও।”
রাইয়ান বেশ জোর দিয়ে বললো, “মোটেও না।”
“আচ্ছা!”
“হুম।”
“তাহলে এই এখানে যে একা একা চলে এসেছো??”
“আমি জানি এখানে আমরা ছাড়া আর কেউ উঠে নি।তাই…..”
“ওয়াও।তারপরও কত রকমের খারাপ সার্ভেন্ট থাকতে পারে।”
রাইয়ান কিছুক্ষণ চুপ থাকলো।হয়তো সময় নিয়ে ভাবলো কিছু একটা।এমনও হতে পারে-কি বলবে সেটা গুছিয়ে নিলো।
রাইয়ান বললো,
“আমি একটা জিনিস বিশ্বাস করি।”
“কি?”
“মানুষের ক্ষতি সবাই করতে পারে তবে তার নিজের ক্যারাগরির মানুষ বা তার চেয়ে উপরের মানুষগুলো বেশি ভয়ঙ্কর এবং খুব সহজেই করতে পারে।”
আকাশ কিছুটা স্তম্ভিত হয়ে তাকিয়ে রইলো।
রাইয়ান বললো, “বিষয় টা ঠিক এরকম।সোজাসোজি বলছি-কোনো সার্ভেন্ট খুব বেশি হলে আমার টাকা পয়সা নিয়ে নিবে।কিন্তু আমার ক্যাটাগরির কেউ বা আমার চেয়ে আরও উন্নত কেউ থাকলে তারা আমার টাকা পয়সা না দেখে হয়তো আমাকেই দেখতো।আশা করছি আমি কি বলতে চাইছি।আপনি আন্দাজ করতে পারছেন?”
আকাশ অনেকটা অবাক হলো!এই মেয়েকে দেখে যতটা বাচ্চা মনে হয়!সত্যি বলতে এই মেয়ে ততটাই এডাল্ট চিন্তা করতে পারে।
আকাশ মুঁচকি হাসলো।
তারপর প্রশ্ন করলো, “হতেও তো পারো উল্টো টা??”
“হ্যাঁ হতে পারে।তবে সম্ভবা খুব কম।”
আকাশ আবারও হাসলো।
বললো, “ইউ আর ম্যাচিউর।”
“না হলেও হচ্ছি।”
আকাশ এবার প্রসঙ্গ পাল্টালো।
“আচ্ছা!তুমি কি আমার উপর রেগে আছো?”
“নাহ্।রাগ করবো কেনো?”
“তোমার কথাগুলো কেমন জটিল লাগছে আমার কাছে।”
“দূরের মানুষের কথা জটিল-ই মনে হয়।’
আকাশ এই কথাটায় কিছুটা হলেও আহত হলো।
আকাশ বললো, “তারমানে তুমি কি টাকার ব্যাপার টা নিয়ে এখনো নিজের মাঝে রাগ পুষে রেখে এসছো।”
“রাগ কেনো করবো??আপনার জায়গায় ভাইয়া হলে ঠিক ই রাগ করতাম।কিন্তু আপনি তো আমার তেমন কেউ না।ভাইয়ার বন্ধু।তাহলে কেনো ব্যাখাহীন রাগ আপনার সাথে করবো?”
আকাশ এবার কথাগুলোতে আর আহত হলো না।সত্যিই তো আকাশ আর রাইয়ানের মাঝে তেমন একটা সম্পর্ক হয় নি।তবে আকাশ যেমন কিছুটা হলেও আহত হয়েছিলো তেমন রাইয়ানও যে কিছুটা রেগে কথা বলছে সেটা আকাশ বুঝতে পারছে।তার মানে তাদের দুজনের কিছুটা হলেও সম্পর্ক আছে।সে হোক ভাইয়ার বন্ধু বা হোক কোনো যুবকের সূক্ষ্ম একটা অনুভূতি।
তবে এই ব্যাপারে আকাশ রাইয়ানে কিছু বললো না।
কথা বললো রাইয়ান, “রাত টা সুন্দর তাই না??”
“চাঁদ থাকলে আরও সুন্দর লাগতো।”
“উমহু।আরও সুন্দর না। এটা বলতে পারতেন-অন্য রকম সুন্দর লাগতো।”
“বাব্বাহ্….তুমি দেখছি সাহিত্যও বুঝো?”
রাইয়াম এবার নিজের চঞ্চলরূপ রূপে আর্বিভাব হলো।
রাগে কটকট করতে করতে জোর গলাা বললো, “আপনার কি মনে হয়?আমি বাচ্চা??আমি কিছু বুঝি না??”
আকাশ হঠাৎ এমন জোরে কথা শোনায় বড় বড় চোখ করে তাকালো।
ততক্ষণে রাইয়ান রাগে গজগজ করে উঠে গেলো।
আকাশ বেশ ভালো করেই ধরতে পেরেছে-রাইয়ান মনি এবার নিজের চিন চেনা ভার্সনে আছে।তাই সে ও ঝটপট উঠে দাঁড়ালো।
রাইয়ান কি জানি কি বকবক করে সিরি দিয়ে নামতে লাগলো।তবে কি বলছে সেটা আকাশ শুনতে পায় নি।তার শোনার দরকার-ই নেই।তবে তার জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ রাইয়ানকে আটকানো।
রাইয়ান ছাদে নামতেই আকাশ পেছন থেকে রাইয়ানের হাত টা ধরে ফেললো।
রাইয়ান বিষয়টাতে আরও রেগে গেলো, “হাত ছাড়ুন।আমি নিচে যাচ্ছি না??”
আকাশ স্বাভাবিক ভাবেই রাইয়ানের সামনে গিয়ে দাঁড়ালো।
বললো, “তোমার দেখছি খুব রাগ।”
“আপনার কি তাতে??আমার রাগ আমার-ই থাকবে।”
“একটু আগে তো খুব ম্যাচিউরের মতো কথা বলতে।এখন তো মনে হচ্ছে সদ্য কিশোরী।”
রাইয়ান এক ঝটকায় নিজের হাত টা ছাড়িয়ে নিলো।আকাশ এতটাও শক্ত করে ধরে নি।না হলে রাইয়ান আবার কি করে আকাশের হাত থেকে নিজের হাত টা মুক্ত করে।
রাইয়ান ছাদ থেকে নামলো না।কোণায় গিয়ে দাঁড়ালো।
আকাশও পাশে গিয়ে দাঁড়ালো।
মুঁচকি হেসে রাইয়ানের খোলা চুলে একটা টান দিয়ে বললো, “পিচ্চি!এতো রাগ করতে নেই রে।”
রাইয়ান অবাক হয়ে তাকালো আকাশের দিকে।কি রে খুব সহজে আকাশ তাকে পিচ্চি বলে ডাকলো।তারউপর আবার চুলও ধরেছে।
রাইয়ানের রাগ কোথায় কোনো নিরুদ্দেশে হারিয়ে গেলো।অনেক অনেক প্রশ্নমালা উদিত হচ্ছে তার মনে।ব্যতিক্রম,অচেনা কিছু অনুভূতিও দাগ কেটে যাচ্ছে মনের মাঝে।
!
খুব ভোরে ঘুম ভাঙলো তামান্নার।সিয়ামের বুকে মাথা রেখে শুয়ে ছিলো।সিয়াম এক হাতে আগলে রেখেছে তাকে।তামান্না আস্তে করে নিজেেদর উপর থেকে চাদর টা সরিয়ে লজ্জায় অনেকটা কাঁচুমুচো হয়ে গেলো।সিয়ামের বুকের উপরেই চোখ বন্ধ করে শুয়ে রইলো আরও কিছুক্ষণ।সিয়াম ঘুমাচ্ছে।তামান্না আরও কিছু সময় পর পাশ থেকে একটা ওড়না নিজের শরীরে পেঁচিয়ে ওয়াশরোমে চলে গেলো।সাওয়ার নিয়ে গতকালের শাড়ি টা পড়েই বের হলো।
জানালার পর্দা টা খোলে চুলগুলো মুছে নিচ্ছে।কাল রাতে বারান্দা টা যেমন আর্কষণীয় মনে হয়েছিলো ভোরের মিষ্টি আলোয় তার চেয়ে বেশী আর্কষণীয় লাগছে।সবুজের উপর সোনালী রোদের ঝিলিক!!
তামান্না সিয়ামকে ডেকে তুললো।ঘুমঘুম চোখে সিয়াম তামান্নার সদ্য ভেজা আদলে চোখ রাখলো।প্রকৃতি বড় মায়াবী।হয়তো তার চেয়ে হাজার গুণ বেশী মায়াবী তামান্নার মুখ।
সিয়াম হাসলো।তামান্নার হাত নিজের মাঝে নিয়ে বললো, “সদ্য ফোটা পদ্মের মতো সব সময় আকর্ষণ না করলেই কি হয় না??”
তামান্না মুঁচকি হাসলো।
বললো, “উঠো।নামাযের দেরী হয়ে গেছে।ফ্রেস হয়ে আসো।”
সিয়াম হাসলো।তামান্না জোর করে ঠেলে বসিয়ে দিলো সিয়ামকে।
“যাও,ফ্রেস হয়ে আসো…..”
“একটু!!!”
“জ্বী না।আগে যাও….”
সিয়াম অবশ্য নিজের দাবী টাই আগে পূরণ করলো।তামান্নাকে কাছে টেনে তামান্নার নরম ভেজা ওষ্ঠ দুটোতে নিজের ভালোবাসার পরশে ছেয়ে দিলো।
গভীর,দীর্ঘ,পরম আবেশে আর সুখকর কিঞ্চিত ব্যথা।
তামান্না হাফ ছাড়লো।সিয়াম হাসছে।
তামান্না চোখ নুয়ে ঠোটে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।লজ্জা পেয়েছে বেচারী।আর শেষের কামড় টা ভালোই ব্যথা দিয়েছে-তাই ঠোটে হাত।
সিয়াম তামান্নার টা সরিয়ে ঠোঁট দুটোতে আবারও গভীর অথচ স্বল্প সময়ে মিষ্টি একটা চুমু দিলো।
তামান্না এবার যেনো আরও লজ্জা পেলো।সিয়ামের বুকে আলতো করে ধাক্কা দিয়ে মাথা নিঁচু করেই লজ্জামাখা স্বরে বললো, “এবার তো যাও…..”