# নানান বরণ মানুষ রে ভাই
৮ম পর্ব
বড় গল্প
নাহিদ ফারজানা সোমা
মেজ আপার পোস্ট গ্র্যাজুয়েশন কমপ্লিট হয়েছে। হাসপাতালের ডিউটি, পারিবারিক ডিউটি সুন্দর ভাবে পালন করেই আপা পোস্ট গ্র্যাজুয়েশন শেষ করেছে। আপা ছোট বেলা থেকেই খুব পরিশ্রমী, ডিসিপ্লিনড। দুলাভাই এ দফা কেন যে পাশ করতে পারলো না কে জানে। বেচারার মনটা খারাপ হলেও মুখ হাসি হাসি রাখার চেষ্টা করছেন,উপহার হিসেবে আপাকে ডায়ামন্ড রিং কিনে দিয়েছেন। রেজাল্ট পেয়ে আপা প্রথমে আম্মুর সাথে দেখা করেছে। আব্বু মহাখুশি। আম্মুও খুশি কিন্তু আম্মুর অভিব্যক্তি বরাবরই কম। আম্মু নাকি অনেক শুকিয়ে গেছেন। বাসার খালাদেরও আগের মতো বকাঝকা করেন না। বাড়ি,নানীর বাড়ি,অফিস – এই আম্মুর গন্ডি। আমি একটু ইতস্তত করে বললাম, “আমার কথা কিছু বলেছেন?”
মেজ আপা একটু চুপ থেকে বললো,”নারে। আম্মুকেতো চিনিসই। আবার তুই কম একরোখা না। তোর এই জেদ আমার একদম ভালো লাগে না। যে যেমনই ব্যবহার করুক, নিজের কর্তব্য তো ঠিক করে পালন করতে হয়।নইলে পার্থক্য রইলো কিসে? আপন মা বলে কথা, তিনি যেমনই হোক,তুই যাবিনা তার কাছে? কিসের শিক্ষিত হচ্ছিস তুই?কতবার বললাম আমার সাথে একটাবার চল্, ইগো দেখিয়ে গেলি না। কি যে এক অস্বাভাবিক পরিবারে জন্মেছি আমি।”
আমি মনে মনে বলি,”আপারে, আমার কোনো ইগো নেই। ইগোর জন্য নয়। কেনো যে আমি যেতে পারিনা তাঁর কাছে, তাঁর বাসায়! কিসের এ জড়তা,তাতো আমিও জানিনা আপা।”
” আম্মু নাতাশাকেও দেখতে যান না?”
“নাহ্! ঐ বাসায় কোন মুখে যবেন। আমি প্রায়ই বাবুনিকে আম্মু-আব্বুর কাছে নিয়ে আসি। দুলাভাইরা বাধা দেয় না।”
“আম্মু আদর করেন বাবুনিকে?”
” কোলে নিয়ে বসে থাকেন। ওর পছন্দের খাবার আনিয়ে নেন। ভয়ংকর ব্যাপার হচ্ছে, ওকেও অ,আ,ক,খ, এবিসিডি শেখান, চোখ-নাক-মুখের ইংরেজি শেখান। বাবুনি ছবি আঁকতে গেলে বাধা দেন। তখন সূর্য দেখিয়ে সূর্যের ইংরেজি শেখান, পাখি থাকলে পাখির ইংরেজি শেখান, ফ্রিজ খুলে ডিম গোনানো শেখান। এইসব আর কি।ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি হচ্ছে। পার্থক্য একটাই, বাবুনির সাথে আম্মু সফট বিহেভ করেন।”
“আপা,আম্মুকে কি তোর সাধারণ একজন রাগী,অহংকারী, স্বার্থপর, দাপুটে মহিলা মনে হয়, নাকি রহস্যময়ী কোনো মানুষ মনে হয়? যে মানুষ ব্যবহার, কথায় এতো খারাপ, সেই মানুষ আবার শুনলাম,অফিসের এক পিওন অ্যাকসিডেন্টে মারা গেছেন অনেক আগে, খুব গরীব, তাঁর পরিবারকে নিজের টাকায় কয়েক বছর খাইয়েছেন, তাঁর একমাত্র মেয়ের লেখাপড়ার সব খরচ তিনি দিয়েছেন, মেয়েটি এবার নাকি জাহাঙ্গীর নগর থেকে পাশ করেছে। আরেকজন মারা যাওয়া পিওনের বৌকে নিজেদের অফিসে পার্মানেন্ট চাকরির ব্যবস্থা করে দিয়েছিলেন।এমন ঘটনা নাকি আরও অনেক আছে।”
“বলিস কি? শুনেইতো আমার গায়ে কাঁটা দিচ্ছে। তুই জানলি কেমন করে?”
“ছোট মামী বলছিলেন ঐ দিন। আপা,তোর কি মনে হয়, আম্মু কি স্বাভাবিক নাকি মানসিক রোগী? অনেকটা মিঃ জেকিল অ্যান্ড হাইডের মতো না?”
“আমরা সবাই মিঃ জেকিল অ্যান্ড হাইড,বুবলি।”
“না রে আপা,তুই না।তোর কি সৌভাগ্য। তুই আগাগোড়া ভালো একটা মেয়ে।সেই ছোট্ট বেলা থেকে।”
“যতোটা ভালো বলছিস,ততোটা আমি না বুবলি।তবে ভালো থাকার খুব চেষ্টা করি। ভালো হওয়াটা চর্চা করতে হয়। তুইও লক্ষী মেয়ে কিন্তু আম্মুর সাথে যা করছিস,খুবই অন্যায়।”
“জানি আপা। কিন্তু আমি কেন যেন পারছি না আপা। আম্মু কি ভয়ংকর কতোগুলো কথা বলেছিলেন আমাকে, সেগুলো শুধু মাথার মধ্যে ঘুরপাক খেতে থাকে,আপা। কেমন যেন একটা ভয়,কেমন যেন একটা ঘৃণা, না না,ঘৃণা ঠিক না, কেমন একটা অস্বস্তি মতো কাজ করে।”
“আব্বু-আম্মুকে ভালবাসিস?”
“মনে হয়,না।”
আমার চোখ বেয়ে পানি গড়িয়ে পড়লো।নিজের বাবা-মাকে ভালো না বাসতে পারার কষ্ট।
“আম্মু আসলে স্বাভাবিক না,তাই না আপা?”
“আমিতো এমন অনেক মানুষ দেখেছি রে বুবলি। আম্মু দাদীর সাথে চরম অন্যায় করেছেন। নিজের মেয়েদের আর সংসারের সিকিউরিটি নিশ্চিত করার জন্য দাদীকে আটকে রাখলেন, দাদী অথর্ব হয়ে যাওয়ার পরে তাঁকে ঝেড়ে ফেললেন। চরম অন্যায়। কিন্তু এখানে আম্মুর থেকেও আব্বুর দোষ অনেক বেশি। কেমন ছেলে তিনি। আর আম্মু দাদীর সাথে যা করেছেন,তা অনেক মহিলা তাদের শাশুড়ির সাথে করেন বুবলি।কাজের বেলায় শাশুড়ি, কাজ ফুরুলে শাশুড়ি তখন ময়লা আবর্জনা। আমার পোস্ট গ্র্যাজুয়েশনের সময় অনেক মেয়েকে দেখেছি শুধু শ্বশুর বাড়ির নামে নিন্দা। শাশুড়ি অত্যাচারী, ননদ কুটনি, ভাশুর জায়েরা স্বার্থপর। তাকেই সংসারের সব ঘানি টানতে হয়। তার বাচ্চাটার যত্ন কেউ নেয় না। যে পরিমাণ সময় শ্বশুর বাড়ির নিন্দায় ব্যয় করে, সেই সময়ে অনেকখানি পড়াশোনা করা যায়।আমি কয়েকজকে জিজ্ঞেস করেছিলাম,” অফিস টাইমে বাচ্চাকে মায়ের বাড়িতে রাখো না কেন শ্বশুর বাড়িতে যদি এতো অযত্ন হয়?” তখন নানাজনের নানা উত্তর, “আমার আম্মু চাকরি করেন,” “আমার আম্মু অনেক অসুস্থ, ” হ্যানত্যান আরও নানা অজুহাত। শাশুড়ির হাড়ে আরামের দরকার নেই, শাশুড়ির অবসরের দরকার নেই, শাশুড়ির শখ আহ্লাদ নেই। মা-বাপ-বোনের জন্য নানা মিষ্টি মিষ্টি অজুহাত, এদিকে শ্বশুরকুলের
বংশ উদ্ধার করা। পরচর্চায়, শ্বশুরকুলের গীবত করে, ফেসবুকে,মেসেন্জারে, শপিং করে, বন্ধুদের ঘন ঘন গেট টুগেদারে, নানারকম পার্টিতে যে পরিমাণ সময় ব্যয় হচ্ছে ওটা নিয়ে কোনো মাথাব্যথা নেই। আবার কিছু মেয়েকে শ্বশুরবাড়িতে অনেক নাকানিচুবানি খেতে হয়,এটাও ঠিক। অনেকের স্বামী কোঅপারেট করে না এটাও ঠিক। কতো রকম মানুষ আছে দুনিয়াতে। কাজেই আম্মুর মতো অনেক মহিলা আছে যারা শ্বশুরবাড়ির সাথে ভয়ংকর অন্যায় করে।আম্মুই একমাত্র নয়।”
“শুধু দাদাীর ব্যাপারে নয়, নানার বাড়ির কথা ভাব মেজ আপা। আম্মু অনেক করেছেন তাঁর ফ্যামিলির জন্য, প্রচুর। অর্থনৈতিক ভাবে, ভালোমন্দ সবদিকে তীক্ষ্ণ নজর রেখে, সবার বিপদে আপদে পাশে দাঁড়িয়ে, বলতে গেলে আম্মুই নানার বাড়ির গার্জিয়ান। কিন্তু কখনো আম্মুর মধ্যে আবেগ দেখেছিস? কারোর সাথে ভালো করে কথা বলতে দেখেছিস?নানা মারা যাবার দিন একফোঁটা চোখের পানি ফেলেননি, পরেও ফেলেন নি। মেয়েরা মায়ের সাথে কতো আহ্লাদ করে, আম্মুকে দেখেছিস নানীর সাথে আহলাদ করতে?আহলাদ দূরের কথা, নানীর সাথে অতি শীতল গলায় দরকারি কথা বলা ছাড়া আর কিছু করতে দেখেছিস?কোনোদিন নানীর কপালে হাত দিয়ে জ্বরটাও দেখেন নি।”
“একই ব্যবহার আম্মু আমাদের সাথেও করেছেন বুবলি। পড়ালেখা সংক্রান্ত ব্যাপার ছাড়া আর কয়টা কথা আম্মু আমাদের সাথে বলেছেন? ”
“যেগুলো বলেছেন,তা হলো অন্যের নামে সমালোচনা। বড় আপা শুরু করতো, আমরা সবাই পার্টিসিপেট করতাম।”
“আমি না বাপু। তবে হ্যাঁ, তোর কথা শুনে এখন আমারও একটু একটু মনে হয়,আম্মুর কোনো মানসিক সমস্যা আছে। বুবলি,আমার রিকোয়েস্টটা রাখ্, আম্মুর সাথে দেখা কর্। বাসায় যা।প্লিজ। আয়,আমরা একটু স্বাভাবিক ভাবে শ্বাস নেই। ”
এখন একটু ঘন ঘন নানীকে দেখতে যাই। কখন কি হয়! নানী হাত ধরে বসে থাকেন, কি কি যেনো বলতে থাকেন জড়িয়ে জড়িয়ে, কিচ্ছু বুঝা যায় না, শুধু মায়ের নামটা আর “পলাশ” শব্দটা বুঝা যায়।
ছোট মামীকে জিজ্ঞেস করলাম,” আম্মু প্রতিদিন আসেন?”
“বলতে গেলে প্রতিদিন। মায়ের অবস্থা ভালো না। প্রতিদিন আপা নানা রকম খাবার নিয়ে আসেন। রেভিট আর দুধের দাম কতো। অতো দামী দুধ চার-পাঁচ দিন পরপরই বড় আপা নিয়ে আসেন। সেই সাথে রাজ্যের ফল। মুরগী নিয়ে আসেন প্রতিদিন মা যেন চিকেন স্যুপ খেতে পারেন। এতো পরিমাণে নিয়ে আসেন,আমরাই খেয়ে কুল পাই না।”
“আম্মু বাসা থেকেই স্যুপ বানিয়ে আনেন?”
“না। চিকেন আনেন,আমিই স্যুপ বানাই।ফল নিয়ে আসেন,মাল্টা,আনার,তরমুজ। আমি জ্যুস করে মাকে খাওয়াই। শিং-মাগুর মাছ আনেন মায়ের জন্য। আমরা রান্না করে দিই।”
“আম্মু কি নিজের হাতে নানীকে খাওয়ান?”
“না, নার্স খাওয়ান,আমি বা তোর মামা খাওয়াই। নার্সের বেতন তো আপাই দেন। অনেক বড় আত্মা আপার। তোর মামার ইনকাম তো আহামরি কিছু না।”
“আম্মু এতো গম্ভীর, রাগী, তাও আম্মু এতো প্রিয়?”
“কোনোদিন আমার সাথে অন্তত খারাপ ব্যবহার করেন নি। বাপ-মা-ভাই -বোন সবার বিপদে আপদে ইনাকেই সবার আগে পেয়েছি। খারাপ বলি কি করে?আর মা রে, তিতা হলেও সত্যি কথা, যে গরু দুধ দেয়, মানুষ তার খাতির একটু বেশি করেই করে। ”
“তোমার ছেলে-মেয়েদের কোনোদিন আদর করে কাছে টানে নি।”
“তাতে কি? আবীরের থ্যালাসেমিয়া। তাকে রক্ত দেওয়া,দরকারে রক্তের ডোনার যোগাড় করে দেওয়া, ওর দামী ওষুধ কিনে দেওয়া, অসুখটা ধরা পড়ার থেকে আপা ই সবকিছু করে যাচ্ছে। জানিস এটা?”
জানতাম না।
“মামী, পলাশ কে? নানী শুধু পলাশ,পলাশ করে।”
“তোর সবচেয়ে বড় মামা। তোর মা ভাইবোনদের মধ্যে সবচেয়ে বড়,তাঁর পিঠাপিঠি ছোট ভাই ছিলেন পলাশ ভাই। খুব অল্প বয়সে কোনো একটা অ্যাক্সিডেন্টে উনি মারা যান। ভাই সম্পর্কে তোর মামা-খালাদের জিজ্ঞেস করলে তেমন উত্তর পাওয়া যায়না। এই প্রসঙ্গে কেউ কোনো কথা বলতে চায়না।কষ্ট হয় নিশ্চয়। মা সুস্থ থাকতেও পলাশ ভাই সম্পর্কে কিছু জানতে চাইলে গম্ভীর হয়ে যেতেন, তারপরে জায়নামাজ নিয়ে বসে পড়তেন। কি দরকার মৃত ছেলের কথা তাঁকে বলার?”
আমার একটা মামা ছিলেন। পলাশ। হায়,সেই পলাশ ঝরে গেছে।আর আমি জানতাম না কিছুই।
বড় আপাকে ঐ লোক বের করে দিয়েছে। তার বউ-বাচ্চাকে নিয়ে গেছে লন্ডনে। ওখানে আপার কোনো ক্যারিয়ারও হয়নি। আমাদের ভাষায়, আপা “অড” জব করছে। লন্ডনে সে ফূর্তি মেরে সময় কাটিয়েছে, নিজের পায়ের তলায় মাটি শক্ত করেন নি।
আম্মু খুব মুষড়ে পড়েছে, মেজ আপার কাছ থেকে শুনলাম। আব্বুও। মেয়ে বিদেশি ডিগ্রি ধারী হবে, বিদেশের হাসপাতালে ডাক্তারি করবে,নামীদামী ডাক্তার জামাই, হোক না সে দোজবরে, সব স্বপ্নে বালতি বালতি পানি ফেলে দিলো কেউ।
বলা হয়নি, বড় দুলাভাই আবার বিয়ে করেছেন। এবারে উনার মা-ভাবীদের পছন্দে। নাম রিংকি। দেখতে সুন্দর, এম.এস.সি পাশ, একটা কলেজের টিচার। একটু নিম্নবিত্ত পরিবারের মেয়ে। দুলাভাই সম্ভবত সুখী। আমরা এতেই খুব খুশি। নতুন বৌ যে শ্বশুর-শাশুড়ির খুব যত্ন আত্তি করছেন, সংসারের সব দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নিয়েছেন, তেমন মোটেও নয়। তবে সবার দিকে তাঁর খেয়াল আছে। নিজে বা সহকারীকে দিয়ে যার জন্য যতোটুকু করা দরকার,করেন। কথাবার্তা মধুবর্ষী না হলেও ভালো,সংযত।
আমি আর মেজ আপা-দুলাভাই ঐ বাসায় যাই, আমাদের যথেষ্ট সমাদর করেন। বড় দুলাভাই আমাদের দুই বোনের বিষয়ে একদম আগের মতো।পাল্টান নি এতোটুকু।খালাম্মা-খালু, ভাইয়া-তিথি ভাবী,আপারা মেজ আপা আর আমার সাথে ঠিক আগের মতোই। প্রতি ঈদে দুলাভাই জামাকাপড় দেন,ঈদি দেন,খালাম্মা-খালুও কাপড় দেন,আগে যেমন দিতেন।
দুলাভাই এর নতুন বৌকে আমরা ডাকি রিংকি আপা। উনি আমাদের বাবুনীকে যথেষ্ট আদর -যত্ন করেন। আন্তরিক ভাবেই। বাবুনিকে নিয়ে খেতে বসেন, বাবুনিকে নিজের হাতে খেতে শেখান,এই ব্যাপারটাই খালাম্মা অসন্তুষ্ট, কিন্তু রিংকী ভাবীর কথা,মানুষকে ছোট বেলা হতেই স্বাবলম্বী হওয়ার শিক্ষা দিতে হয়। বাবুনি ছোট ছোট হাতে খায়, রিংকি আপা একটু পর পর নিজের প্লেট থেকে ভাতের নলা বাবুনির মুখে তুলে দেন,দেখলেই মন ভরে যায়। বাবুনির খাওয়া-লেখাপড়া রিংকি আপার তত্ত্বাবধানে। সৎ মেয়েকে মানুষ করাটাকে রিংকি আপা একটা চ্যালেঞ্জ হিসাবে নিয়েছেন বোধ হয়।
দুলাভাই এর নতুন বিয়ের খবর পাওয়ার পর থেকে আম্মু নাতাশার জন্য অস্হির হয়ে গেছেন। তিনি নাতাশাকে নিজের কাছে নিয়ে আসতে চান। দুলাভাই এক কথায় নাকচ করে দিয়েছেন। তাঁদের ফ্যামিলি ও। আম্মু ভালোই জানেন,আইনি লড়াইয়ে রায় তাঁর পক্ষে যাবে না। আম্মু কাঁদেন, শুধু কাঁদেন। সবাইকে লুকিয়ে। মেজো আপা আম্মুর চোখ দেখলে টের পায়। তাছাড়া আব্বুও মেজ আপাকে সারারাত ধরে আম্মুর নীরব কান্নার কথা জানান।
এখন আম্মুর ভাষ্য, ঐ বাসায় থাকলে বাবুনি শীঘ্রই মারা যাবে নইলে ওর ভয়ংকর ক্ষতি হবে। কি অলক্ষুণে কথা। মেজ আপা প্রায় ধমকে উঠে আম্মুকে।
“কি যা তা বলো আম্মু।তোমার মেয়ে নিজের বাচ্চা ফেলে চলে গেছে, বাচ্চার উপর তার মায়াদয়া কিচ্ছু ছিলো না, আর বাবুনি হলো ঐ বাড়ির প্রাণ। দুলাভাই মেয়েকে চোখে হারান,আগের মতোই, পাল্টান নি একটুও। রিংকি আপাও মেয়ের অনেক যত্ন করেন। দাদা-দাদী, চাচা-ফুপু সবাই মাথায় তুলে রাখে বাবুনিকে।তিথি ভাবীরতো কথাই নেই। খামোখা টেনশন কোরো না আম্মু।চোখ মুছো।”
“নিজের একটা বাচ্চা হোক,তখন আসল চেহারা বেরোবে তোমার দুলাভাই আর নতুন বৌ এর। তখন তোমার ঐ বাড়ির খালাম্মা-খালু,তিথি ভাবীরও নতুন রূপ বের হবে। মিলিয়ে নিও আমার কথা।আমার বাবুকে আমার কাছে এনে দাও।”
“যে যেমন,অন্যকে সে তেমনই ভাবে আম্মু। নাতাশার উপরে তোমার এতো মায়া,তাতো জানতাম না। আর আমরা আছি তো। উল্টাপাল্টা চিন্তা কোরো না আম্মু। আমাদের রীতু বেগম দুলাভাইকে যে পরিমাণ কষ্ট দিয়েছে, অপমান করেছে,ঠকিয়েছে, এখন দুলাভাই একটু ভালো আছেন, তাঁকে নতুন করে অশান্তিতে ফেলো না।”
চলবে।