না_চাইলেও_তুমি_আমার পর্বঃ ০৪

0
3226

না_চাইলেও_তুমি_আমার
পর্বঃ ০৪
জাহান আরা

বাসর ঘরে একাকী বসে আছে মারিয়া।শত প্রতীক্ষার রাত আজ,যে দিনের জন্য সবাই মুখিয়ে থাকে।বুকের ভিতর অজানা শিহরন বয়ে যাচ্ছে।
একটু পরে শাহেদ রুমে আসবে,তারপর তাদের ফুলসজ্জা!
লজ্জা লাগছে মারিয়ার,আবার ভীষণ উত্তেজনা ও অনুভব করছে।

শাহেদ বারান্দায় দাঁড়িয়ে সিগারেট টানছে,পাশে মোবাইল পড়ে আছে। টুংটাং করে মেসেঞ্জারে মেসেজের শব্দ ভেসে আসছে।
সিগারেট শেষ করে শাহেদ মোবাইল হাতে নেয়।

“Jennifer sent a photo”

ঠোঁটের কোণে মুচকি হাসি ফুটে উঠে শাহেদের।জেনিফারের কনভার্সনে ঢুকতেই সর্বাঙ্গে আগুন লেগে যায় জেনিফারের ছবি দেখে,জেনিফারের নগ্ন দেহের ছবি। জেনিফারের দেহের প্রতিটি ভাঁজে ভাঁজে শাহেদ চোখ বুলিয়ে নেয়,রুমে সদ্যবিবাহিত স্ত্রী অপেক্ষা করছে শাহেদ তা ভুলে যায় যেনো।
জেনিফারের বুকের মাঝখানের তিলটি যতোবারই দেখছে,ততোবারই পুরো শরীরে শিহরণ বয়ে গেছে শাহেদের।

সাথেসাথে জেনিফার কে কল দেয় শাহেদ।কথা বলতে বলতে ঘন্টা পার হয়ে যায় শাহেদের খেয়াল থাকে না।

একা বসে থাকতে থাকতে রাগ উঠে যায় মারিয়ার।উঠে যায় শাহেদ কে ডাকতে।সবসময় মারিয়ার জন্য নিষাদ অপেক্ষা করতো,আর আজ মারিয়া কে কি-না অপেক্ষা করতে হচ্ছে!
মানতে পারে না মারিয়া সেটা।

বারান্দার দরজা বাহির থেকে লাগানো,শাহেদের অস্পষ্ট কথা শোনা যাচ্ছে।
বারান্দা আর রুমের মাঝখানে থাকা দেয়ালের থাই গ্লাস খোলে মারিয়া নিঃশব্দে।
শাহেদের কথা স্পষ্ট শুনতে পাচ্ছে এবার।
শাহেদ ইংরেজিতে কি বলছে তা ভালো করে বুঝতে মারিয়ার ২ মিনিট সময় লাগে।

হতবিহ্বল হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে মারিয়া,মানুষ এতো অশ্লীল কথা বলতে পারে মারিয়ার ধারণা তে ছিলো না।ক্রমাগত সেক্সুয়াল কথা বলে যাচ্ছে শাহেদ,ফোনের ওপাশে থাকা মেয়েটার শরীরের বর্ণনা,মেয়েটার সাথে সহবাস করার আনন্দ….
আর পারছে না মারিয়া শুনতে,গলায় জমাট বেঁধে আছে কি যেনো,দৌড়ে গিয়ে ওয়াশরুমে ঢুকে মারিয়া।
হড়হড় করে বমি করে দেয়,এরকম অশ্লীল কুরুচিপূর্ণ কথাবার্তা শুনে মারিয়া অসুস্থ হয়ে যায়।

নিষাদের কথা মনে পড়ে যায় তখন,নিষাদ তো কখনো এভাবে মারিয়ার দেহের বর্ণনা দেয় নি,কখনো এভাবে দেখতে চায় নি,কখনো ছুঁয়ে ও দেখে নি শরীরের কোনো স্পর্শকাতর স্থান।
তবে কেনো তার ভাগ্যে এরকম মানুষ এলো যে কি-না আগেই অন্য মেয়ের সাথে!

চোখ মুখে পানি দিয়ে ওয়াশরুম থেকে বের হয় মারিয়া।
ফোন হাতে নিয়ে নিষাদের নাম্বারে কল করে,মারিয়া ভালো করে বুঝতে পারে নিষাদ ছাড়া কেউ নেই মারিয়ার জন্য,সে-ই পারফেক্ট। আজীবন মারিয়া কে পাগলের মতো ভালোবেসে ও যে কখনো ক্লান্ত হবে না।

কাকে ছেড়ে এসেছে মারিয়া এতোক্ষণে বুঝতে পারে,জীবনের সেরা জিনিস নিজের হাতে আস্তাকুঁড়ে ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে এসেছে মারিয়া আজ,সাত রাজার ধন যে ছিলো,মারিয়া বুঝে নি,চিনে নি এতোদিন তাকে।

কল বেজে যাচ্ছে,নিষাদ স্ক্রিনে তাকিয়ে দেখে মারিয়ার নাম্বার।মুহূর্তের জন্য নিষাদের পুরো পৃথিবী থমকে যায়।
বন্ধুরা সবাই ঘুমিয়ে পড়েছে,নিষাদের বুকের ভিতর জ্বালাপোড়া কেউ দেখছে না,তবু বন্ধুরা চেষ্টা করে গেছে হাসিখুশি রাখার নিষাদ কে।

যা হয়ে গেছে তা নিয়ে কষ্ট না পেয়ে যে আছে তাকে নিয়ে ভাবতে অনুরোধ করে সবাই নিষাদ কে। কিন্তু নিষাদ পারছে না,বারবার চন্দ্রকে দোষী মনে হয় নিষাদের।

আজ মারিয়ার বাসর রাত।আজ তো এই রাত নিষাদের জন্য বরাদ্দ ছিলো,কাছে হয়তো যেতে পারতো না,তবুও সম্পর্ক তো বৈধ হয়ে যেতো।
মনের যতো গোপন কথা ছিলো বিয়ের পরে বলবে বলে সব জমিয়ে রেখেছে নিষাদ মনে,আর তো বলা হলো না।

মারিয়া তো ফাঁকি দিয়ে চলে গেলো,তবে কেনো এখন কল দিচ্ছে?

কল বেজে যাচ্ছে বারবার। নিষাদ রিসিভ করবে না করবে না করেও রিসিভ করে। নিজেকে আজও সামলাতে পারে না কেনো নিষাদ জানে না।

“নিষাদ”

মারিয়ার কান্নাভেজা কণ্ঠ,নিষাদের ভিতরে জমে থাকা ক্ষত কে আরো বেশি গভীর করে দেয়।

“কে আপনি?”

“আমাকে মাফ করে দাও নিষাদ,আমি ভুল করেছি,আমি লোভে পড়ে তোমায় ছেড়ে এসেছি,এখন বুঝতে পারছি তুমি ছাড়া কেউ আমার জন্য পারফেক্ট না।”

“আমার ভালোবাসা কিছুই মনে হয় নি মারিয়া,তুমি তোমার বান্ধবীর ব্রেনওয়াশ শুনে মত বদলে ফেললে কিভাবে?”

“বান্ধবীর কথা!
না তো,আমি তো বিয়ে করতে রাজী হয়েছি আমেরিকা যাওয়ার লোভে পড়ে,শাহেদ আমার জন্য পারফেক্ট না নিষাদ,ও আগে থেকে মেয়েদের সাথে শারীরিক সম্পর্কে জড়িত,আজ বাসর রাত,অথচ সে অন্য কোন মেয়ের সাথে যেনো ব্যস্ত তার দেহের বর্ণনা দিতে।
কি অশ্লীল কথা বলছে নিষাদ তুমি ভাবতে ও পারবে না,আমাকে নিয়ে যাও তুমি নিষাদ,আমি তোমার কাছে চলে যাবো।”

বুকের ভিতরের ক্ষত তে কে যেনো মলম লাগিয়ে দিয়েছে।চন্দ্রকে ভুল বুঝেছে,চন্দ্রর দোষ ছিলো না তা ভাবতেই শান্তি পাচ্ছে নিষাদ।

“কথা বলছো না কেনো নিষাদ,তুমি আমাকে নিয়ে যাও প্লিজ”

“আমিও বিয়ে করে ফেলেছি মারিয়া,রাগের মাথায় বিয়ে করে ফেলেছি তখনই,আমার পক্ষে সম্ভব না তোমাকে নিয়ে আসা,আজ এই মুহূর্ত থেকে তুমি আমার জীবনের অতীত,তোমার চ্যাপ্টার এখনই ক্লোজ করে দিবো আমি,আর ভাববো না তোমার মতো বেঈমান কে”

“তুমি বিয়ে করেছো নিষাদ?”

মারিয়ার কণ্ঠে অকৃত্রিম বিস্ময় ফুটে উঠে।

“হ্যাঁ করেছি”

“কাকে বিয়ে করেছো তুমি,কে সেই ভাগ্যবতী মেয়ে নিষাদ,আমি জীবনেও সেই মেয়েকে তোমার সংসার করতে দিবো না”

“তাকে তুমি চিনবে না,তোমাকে আমি কখনোই বলবো না তার কথা,রাখছি আমি মারিয়া,আমার বউকে কল দিবো,আমাকে আর পাবে না তুমি”

কল কেটে দিয়ে ফোন অফ করে দিলো নিষাদ,স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে রুমে গিয়ে শুয়ে পড়ে।

এক নতুন জীবনের শুরু করবে নিষাদ আজ থেকে,আগামীকাল নতুন ভোরে,সূর্যোদয়ের সাথে নিষাদ ও শুরু করবে সব নতুন করে। এতো বেশি ভালোবাসবে সে চন্দ্রকে যাতে চন্দ্র নিজেও ছেড়ে যেতে না চায়,মারিয়া দেখুক ভালোবাসা কাকে বলে। ”

চলবে…..???

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here