নিরব রদনে পব-১১

0
1130

#নীরব_রোদনে
#আলো_রহমান—Alo Rahman
#পর্ব:১১
.
.
.
শাদাব দুই পা পিছিয়ে গেল। ভেতরের সমস্ত শক্তিকে একত্রিত করে কিছু বলার চেষ্টা করলো। চেষ্টা ব্যর্থ হলো। ঠোঁট জোড়া একবার কাঁপলো কেবল। কিন্তু বুকের ভেতরের উথালপাতাল তার কন্ঠনালি রুদ্ধ করে দিলো। কি করবে বুঝতে না পেরে শাদাব ঘর থেকে বেরিয়ে যেতে চাইলো। সুরমা বলে উঠলো,
–প্লিজ যাবেন না। আজ অন্তত চলে যাবেন না। আমার কথাগুলো শুনুন।
শাদাব থেমে গেল। শত চেষ্টা করেও আর এক পাও বাইরে যেতে পারলো না। ঠায় দাঁড়িয়ে রইলো সেখানে। সুরমা ইতস্তত করে বলল,
–আমি যে এসেছি তাতে আপনি খুশি নাকি অখুশি সেটা আমি ঠিক বুঝতে পারছি না। আপনি কিছু বলছেন না কেন?
শাদাব এবারও কথা বলল না। অদ্ভুত অনুভূতিতে ছেঁয়ে গেছে সে। সে এবার গটগট করে হেঁটে বিছানায় গিয়ে হাত পা ছড়িয়ে বসলো। জানালা দিয়ে বাইরে তাকালো। সন্ধ্যা হয়ে এসেছে প্রায়। কনে দেখা আলোয় গোটা আকাশটা লালচে বর্ণ ধারণ করেছে। জানালার কাঁচ ভেদ করে তারই কিছুটা আলো এসে পরেছে ঘরের মেঝেতে। শাদাব একদৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো সেদিকে। সুরমা ক্ষীণ গলায় বলল,
–আমি ভালো আছি কিনা জানতে চাইবেন না?
এই প্রশ্নে হঠাৎই শাদাবের ভীষণ রাগ হলো। ওকে অশান্তিতে রেখে এখন নিজে কেমন আছে সেই খবর দিতে চায়? কই? শাদাব কেমন আছে সেটা তো একবারও জিজ্ঞেস করলো না!
সুরমা এবার ঘরের দরজা বন্ধ করে দিলো। তারপর ধীর পায়ে হেঁটে শাদাবের পাশে গিয়ে বসলো। শাদাব তবুও কিছু বলল না। একটু নড়াচড়াও করলো না। সুরমা কোমল গলায় বলল,
–তুমি কেমন আছ সেটা আমি জানতে চাই নি। কারণ আমি জানি তুমি ভালো নেই। আমাকে ছাড়া তুমি ভালো থাকতেই পারো না।
সুরমার তুমি সম্বোধনে শাদাব চমকালো। বুকের ভেতর অদ্ভুত সুখের যন্ত্রণাময় অনুভূতি ঢেউ খেলে গেল। সে সুরমার মুখের দিকে তাকালো। একে অপরের দিকে তাকিয়েই রইলো। কতক্ষণ এভাবে পার হলো কেউই বুঝতে পারলো না। একসময় নীরবতা ভেঙে সুরমাই বলল,
–তুমি কিন্তু এখনো কোনো কথা বলো নি আমার সাথে।
শাদাব এবার আচমকা সুরমার গলা চেপে ধরলো। হিসহিসিয়ে বলল,
–কেন এসেছিস তুই? কি চাস তুই? আমাকে শান্তিতে বাঁচতে দিবি না? মরতে চাস? নাকি মারতে? কেন বারবার আমাকে যন্ত্রণা দিতে আসিস? বল, কেন? একবার আমাকে কষ্ট দিয়ে তোর সাধ পূর্ণ হয় নি? আবার এসেছিস কষ্ট দিতে? সেই তো আবার দূরে চলে যাবি। তাহলে কেন কাছে আসিস বারবার?
কথাগুলো বলতে বলতে শাদাবের চোখ ছলছল করে উঠলো। সে নিজের ভার আর বইতে পারলো না যেন। ক্লান্ত শরীরটা এলিয়ে দিলো সুরমার কাঁধে। গলায় চেপে রাখা হাত দুটো আলগা হয়ে এলো। সুরমা আলতো হাতে শাদাবের মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে শুরু করলো। তার অসহ্য ধরণের আনন্দ হচ্ছে। আজ কতদিন পর শাদাব তাকে ছুঁয়েছে! সুরমার হাতের স্পর্শ পেয়ে শাদাবের আবেগের বাধ ভেঙে গেল। সে হুহু করে কেঁদে উঠলো। সুরমার চোখেও পানি। সে শাদাবের কানের কাছে ফিসফিস করে বলল,
–আমি ভালোবাসি তোমাকে। যে মানুষটা আমাকে এত ভালোবাসা দিয়েছে, আমার এত খেয়াল রেখেছে, আমার কখন কি প্রয়োজন সেটা মুখ ফুটে বলার আগেই যে মানুষটা সব পূরণ করে ফেলেছে, আমার সামান্য জ্বর হলে যে মানুষটা নির্ঘুম রাত কাটিয়েছে, যে মানুষটা সর্বদা আমাকেই সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়েছে, নিজের সবটা দিয়ে যে আমাকে খুশি রাখতে চেয়েছে সবসময়, সে মানুষটাকে আমি ভালো না বেসে কি করে পারবো? পারি নি, ভালোবেসে ফেলেছি খুব বেশি। তোমাকে ছেড়ে থাকতে পারবো না। বিশ্বাস করো, আর কখনো তোমাকে ছেড়ে আমি যাব না। বাকিটা জীবন তোমার সাথেই আমি কাটিয়ে দিতে চাই। ভালোবাসি, শাদাব। ভালোবাসি তোমাকে।
শাদাব সুরমার কাঁধ থেকে মাথা তুললো। প্রশ্নবোধক দৃষ্টিতে সুরমার মুখের দিকে তাকালো। সুরমা শাদাবের চোখের পানি মুছে দিয়ে বলল,
–আমার চোখের দিকে তাকাও। দেখো, সেখানে তোমার সাথে থাকতে চাওয়ার আকুতি ছাড়া আর কিছুই নেই।
শাদাব তাকালো এবং দীর্ঘ সময় ধরে তাকিয়েই থাকলো। সুরমাও আর কোনো কথা বলল না। আচমকা শাদাব নিজের সমস্ত ভার ছেড়ে দিলো সুরমার উপরে। সুরমা সামলাতে পারলো না। শাদাবকে নিয়ে বিছানায় পরে গেল। শাদাব একদৃষ্টিতে তাকিয়ে দেখছে সুরমাকে। অশ্রু টলমল চোখ দুটো কি ভীষণ সুন্দর লাগছে! সেই অপূর্ব চোখ জোড়া শাদাবকে প্রণয়ের আহ্বান জানাচ্ছে। কিন্তু শাদাব সংকোচ কাটিয়ে উঠতে পারছে না। সুরমা এবার ধীরে ধীরে এগিয়ে গিয়ে শাদাবের গালে চুমু বসিয়ে দিলো। সাথে সাথে শাদাবের সমস্ত বাধা হাওয়ায় মিলিয়ে গেল। সে সুরমাকে নিজের সাথে জড়িয়ে নিলো। তার ঠোঁট জোড়া স্পর্শ করলো সুরমার ঠোঁট। স্পর্শ গাঢ়তর হতেই সুরমার ইন্দ্রিয়সকল জানান দিলো এক নিদারুণ আনন্দ বার্তার। অবসান হলো বহুদিনের অপেক্ষার। বহুদিন পর শাদাব আবার স্ত্রীর আকন্ঠ আদরে ডুবে গেল। আদরে আদরে ঝরে পরলো বহুদিনের অভিমান। বাইরে অন্ধকার গাঢ় হলো। তার সাথে গাঢ়তর হলো তাদের প্রণয়।

সুরমা শাদাবের বুকে মাথা রেখে শুয়ে আছে। শাদাব সুরমার চুলে বিলি কাটছে। সুরমার মুখে লেগে থাকা প্রশান্তির হাসিটুকু শাদাবের চোখ এড়িয়ে যাচ্ছে না। ঘড়ি জানান দিচ্ছে সময়; রাত প্রায় নয়টা বেজেছে। সুরমা সলজ্জ হেসে বলল,
–বাইরে যেতে হবে না? মাকে খেতে দিতে হবে তো। আমারও কিন্তু খুব ক্ষিদে লেগেছে।
শাদাব সুরমার চুল নিজের আঙুলে পেঁচাতে পেঁচাতে বলল,
–সুর, আরও একবার ভেবে নাও। আমার সাথেই আজীবন থাকতে চাও তো?
সুরমা মাথা তুলে শাদাবের দিকে তাকালো। আহত গলায় বলল,
–এখনো বিশ্বাস করতে পারছো না আমাকে?
–কথাটা বিশ্বাস অবিশ্বাসের নয়।
–তাহলে কি?
শাদাব ছোট্ট নিঃশ্বাস ফেলে বলল,
–ধরো, কোনো একদিন তোমার প্রাক্তন প্রেমিক তোমাকে ফোন করে বসলো। তুমি ফোন ধরলে। তারপর সে তোমার কাছে আবদার করে বসলো যে সে তোমার সাথে দেখা করতে চায়। তুমি তখন নিজেকে সামলাতে পারলে না। দেখা করতে চলে গেলে। গোপনে তার সাথে সাক্ষাৎ সেরে আবার খুশি থাকার অভিনয় করে সংসার করে গেলে আমার সাথে। তখন কি হবে, সুর? এরকম সংসার কিন্তু আমি চাই না।
সুরমা কথার উপরে অনাবশ্যক জোর দিয়ে বলল,
–যদি কখনো এমন ফোন আসেও তাহলেও আমি কখনো এমনটা করবো না। বিশ্বাস করো, আমি কখনো গোপনে এরকম কিছু করে তোমাকে ঠকাবো না। আমার মনে আর কোনো দ্বিধা নেই। আমার মনে এখন শুধু তুমিই আছ। আমি বাকিটা জীবন শুধু তোমার জীবনের সুর হয়েই থেকে যেতে চাই। আর কিছুই নয়।
শাদাব হাসলো। সুরমাকে রাগানোর উদ্দেশ্যে বলল,
–ওই গানটার কথা তোমার মনে আছে, সুর?
সুরমা বুঝতে পারলো না। জানতে চাইলো,
–কোন গান?
–ওই যে ওই গান, যেটা তুমি আমাদের বিয়ের পরে সবসময় শুনতে। হ্যাঁ, মনে পরেছে, ‘ধরো যদি হঠাৎ সন্ধ্যে’। ওই গানটা যখন তুমি শুনবে তখন “সময় ছিল আমাদেরও” লাইনটা শুনে তোমার মনে টান লাগবে না তো?
সুরমা রাগলো না। ব্যথিত গলায় বলল,
–এসব আজেবাজে গান। আমি আর কখনো এই গান শুনবো না। কি ছিল, কি চাইতাম, তারচেয়ে আমার কাছে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ হলো এখন আমার যা আছে, এখন আমি যা চাই। আমি আমার বর্তমানটাকে হারিয়ে ফেলতে চাই না। সেই শক্তি আমার আর নেই।
শাদাব শীতল গলায় বলল,
–যদি কখনো তোমার অতীতের সাথে দেখা হয়ে যায়?
–তাতে কিচ্ছু যায় আসবে না।
–সত্যি? রবিঠাকুরের মতো আবার বলবে না তো, ‘রাতের সব তারাই আছে দিনের আলোর গভীরে?’
সুরমা এবার রাগী গলায় বলল,
–ধুর! আমি তো বলছি, আমার রাতের সব নক্ষত্র, দিনের সূর্য, সবই এখন তুমি। এসব কবিতা ছাড়া আর কিছু জানো না তুমি? খারাপ লোক একটা!
শাদাব হেসে ফেললো। পরক্ষণেই গম্ভীর হয়ে বলল,
–ভয় হয়, সুরমা। একা হয়ে যেতে ভয় হয়। একসাথে পথ চলতে চলতে হঠাৎ একলা হয়ে যাওয়ার চেয়ে শুরু থেকেই একলা থাকা ভালো নয় কি?
সুরমার চোখে আবার জল এলো। সে নতমুখে বলল,
–তোমাকে আর একলা হতে হবে না। তোমায় এতদিন অনেক কষ্ট দিয়েছি। আমাকে ক্ষমা করে দাও।
শাদাব সুরমার মাথা বুকে চেপে ধরে বলল,
–ক্ষমা করেছি। শুধু ভালোবেসে পাশে থেকো।
সুরমার মুখে হাসি ফুটলো। সে শাদাবের হাত শক্ত করে ধরে বলল,
–শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত থাকবো। কথা দিলাম।
______________________
রাত প্রায় দুটো বেজেছে। কারোর ফিসফিস করে কথা বলার আওয়াজে কঙ্কার ঘুম ভাঙলো। সে চোখ খুললো। আবির বিছানায় নেই। জানালার পাশে দাঁড়িয়ে ফোনে কারোর সাথে কথা বলছে সে। হয়তো কোনো মেয়ের সাথে। কঙ্কার কষ্ট পাওয়ার কথা নয়। সে ভালো করেই জানে আবিরের চরিত্র। তবুও কোনো এক অজানা কারণে কঙ্কার মন খারাপ লাগছে। কঙ্কা একবার আবিরকে ডাকবে বলে ভাবলো। পরক্ষণেই সিদ্ধান্ত বদল করলো। অপেক্ষা করতে লাগলো আবিরের কথা শেষ হওয়ার।
বেশিক্ষণ অপেক্ষা করতে হলো না। কয়েক মিনিটের মধ্যেই আবির বিছানায় এসে শুয়ে পরলো।
কঙ্কা শীতল গলায় বলল,
–কথা হয়ে গেল?
আবির চমকালো। কঙ্কার দিকে ঘুরে বলল,
–তুমি ঘুমাও নি?
–ঘুমিয়েছিলাম। তোমার কথা বলার আওয়াজে ঘুম ভেঙে গেল। কার সাথে কথা বলছিলে? তোমার কোনো প্রেমিকা?
আবির নির্লিপ্তভাবে জবাব দিলো,
–হ্যাঁ।
আবিরের এই সোজাসাপ্টা উত্তর কঙ্কার বুকে তীরের মতো বিঁধলো। সে আচমকা আবিরের টি শার্টের কলার চেপে ধরলো। চাপা গলায় বলল,
–মাত্র তিন চারদিন হয়েছে আমাকে বিয়ে করেছ। এর মধ্যেই আমার প্রতি সব আগ্রহ চলে গেল? আবার আরেকটা মেয়ের সাথে কথা বলতে শুরু করেছ?
আবির হেসে ফেললো। কঙ্কার কপালে পরে থাকা চুলগুলো সরিয়ে দিয়ে বলল,
–এইতো! এখন তোমাকে বউ বউ লাগছে, কঙ্কা। খুব মিষ্টি লাগছে। কাল যখন বলেছিলে আমি হাজারটা মেয়ের কাছে গেলেও তুমি কিছুই বলবে না, তখন তোমাকে একটুও ভালো লাগছিল না।
কথাটা বলেই আবির কঙ্কাকে চুমু খেতে যাচ্ছিলো। কঙ্কা তাকে ধাক্কা মেরে সরিয়ে দিয়ে অন্যপাশ ফিরে শুলো। আবির হাসলো। কঙ্কাকে জড়িয়ে ধরে শুয়ে পরলো পাশেই। আদুরে গলায় ডাকলো,
–কঙ্কাবতী!
কঙ্কা সাড়া দিলো না। আবির বলল,
–মেয়েটা আমার নতুন প্রেমিকা নয়। বেশ কয়েক মাস থেকে ওর সাথে প্রেম চলছে। তোমাকে নিয়ে যেদিন পালিয়ে এলাম, তার আগের রাতও এই মেয়েটার সাথেই আমি কাটিয়েছি।
কঙ্কা কথা বলল না। তার ভীষণ যন্ত্রণাময় অনুভূতি হচ্ছে। অহেতুক কষ্ট পাওয়ার কারণ সে জানে না। আবির আবার বলল,
–আমি কিন্তু এই মেয়েটাকে কোনো ব্ল্যাকমেইল করি নি। সে স্বেচ্ছায় আমার কাছে এসেছে।
কঙ্কা এবারেও কথা বলল না। আবির নিজে থেকেই বলল,
–এই কয়েকদিন আমি মেয়েটার সাথে একেবারেই কোনো যোগাযোগ করি নি। তাই মেয়েটা নিজে থেকেই আমাকে ফোন করেছিল। জিজ্ঞেস করছিল, আমি তার সাথে কোনো যোগাযোগ করছি না কেন? আমি বললাম, আমি আর তার সাথে কোনো সম্পর্ক রাখতে চাই না। কারণ আমি বিয়ে করেছি। আমার ঘরে রসগোল্লার মতো মিষ্টি একটা বউ আছে।
কঙ্কা এবার মুখ খুললো। কঠিন গলায় বলল,
–বিশ্বাস করি না তোমার কথা।
আবির নিঃশব্দে হাসলো। কঙ্কার ঘাড়ে নাক ঘসতে ঘসতে বলল,
–কল রেকর্ড আছে। শুনতে চাও?
কঙ্কা একইভাবে জবাব দিলো,
–কল রেকর্ড শুনলেও বিশ্বাস করবো না তোমাকে। কারণ আমি জানি, আজ হোক বা কাল, অন্য মেয়ের কাছে তুমি যাবেই।
আবির এবার শব্দ করে হেসে উঠলো। বলল,
–তা ঠিকই বলেছ। যেতেও পারি।
কঙ্কা এবার রাগী গলায় বলল,
–আমিও তাহলে এখন থেকে অন্য অনেক পুরুষ মানুষের সাথে সম্পর্ক রাখবো। তুমি পারলে আমি কেন নয়?
আবির হেসে ফেললো। সে খুব ভালো করেই জানে যে কঙ্কা একাজ কখনো পারবে না। সবই ওর রাগের কথা। আবির ভীষণ শক্ত করে কঙ্কাকে জাপটে ধরে চোখ বন্ধ করলো। কঙ্কা কয়েকবার ব্যর্থ চেষ্টা করলো আবিরকে সরানোর। তারপর সেও চোখ বুজলো।
.
#চলবে……..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here