নিরব রদনে পব-৯

0
1221

#নীরব_রোদনে
#আলো_রহমান—Alo Rahman
#পর্ব:৯
.
.
.
নীলয় এখনো মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে। সুরমা এক হাতে কপাল চেপে ধরে আছে। তার মাথা ঝিমঝিম করছে। খালুজান এসব কথা জানতে পারলে নির্ঘাত হার্ট অ্যাটাক করবেন। কিন্তু উনাকে না জানালে কঙ্কাকে উদ্ধারই বা কে করবে? সুরমার মাথা কাজ করছে না। সে ধীরে ধীরে উঠে দাঁড়ালো। শীতল গলায় নীলয়কে প্রশ্ন করলো,
–তুই ছেলেটার ব্যাপারে সব জানতি, ভাই?
নীলয় ইতস্তত করে বলল,
–আপা বিশ্বাস করো, আমি প্রথমে কিছুই জানতাম না।
–কঙ্কার সম্পর্কের ব্যাপারে তুই দুই বছরেও কিছুই জানতে পারিস নি? এই কথা বিশ্বাসযোগ্য নয়, নীলয়।
–আমি অনেক পরে জানতে পেরেছিলাম। জানার পরে খোঁজ খবর নিতে গিয়ে আবিষ্কার করলাম আবির ছেলেটা ভয়ংকর খারাপ। কঙ্কাকে বলার পরেও ও সব হেসে উড়িয়ে দিয়েছিল। ভেবেছিল আমার হিংসা হচ্ছে বলে আমি এসব কথা বলছি। পরে কঙ্কা প্রমাণ পেয়েছিল। কিন্তু তবুও সম্পর্কটা এগিয়ে নিয়ে গেছে। কেন নিয়ে গেছে, সেটা তখন আমি বুঝতে পারি নি। এই চিঠিটা পড়ে বুঝতে পারছি।
সুরমা কেঁদে ফেলে বলল,
–এখন কি হবে? কঙ্কাকে কি করে বাঁচাবো?
নীলয় শান্ত গলায় বলল,
–ওরা হয়তো বিয়ে করে নিয়েছে, আপা। আর কঙ্কা সারাজীবন সংসার করবে বলেই গেছে। ওকে ফেরানো সম্ভব হবে কি?
সুরমা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল,
–নীলয়, তুই কঙ্কাকে সেদিন প্রত্যাখ্যান না করলে হয়তো এমন একটা সম্পর্কে ও জড়াতো না। ও তো তোকেই ভালোবেসেছিল।
নীলয় মৃদু হেসে বলল,
–কঙ্কা আমাকে সত্যিই ভালোবাসতো? নাকি শুধুই অল্প বয়সের আবেগ ছিল? আমার মনে হয়, আবেগই ছিল। আমার মতো ছন্নছাড়া ছেলে, যে কিনা নিজের কবিতা ছাড়া আর কিছুকে গুরুত্ব দেয় নি কখনো, তাকে আবেগেই ভালো লাগে।
সুরমা আর এ বিষয়ে কথা বাড়ালো না। চোখমুখ মুছে নিজেকে স্বাভাবিক করলো। তারপর চিঠিটা রেখে বলল,
–নীলয়, এসব কথা এখনই খালা আর খালুজানকে বলিস না। ওদেরকে আমি খেতে বসতে বলেছি। অনেক কষ্টে রাজি করিয়েছি খেতে। চল, তুইও খেতে চল।
নীলয় মাথা নাড়লো। তারপর সুরমার সাথে এগিয়ে গেল।
_______________
বিকাল হয়ে এসেছে। কঙ্কা আর আবির মিলে ঘরটা মোটামুটি গুছিয়ে ফেলেছে। ঘরের একপাশে একটা ছোট আলনা রেখেছে, আরেক পাশে মেঝেতে পাতা বিছানা। একদিকে রান্নার সরঞ্জাম। কঙ্কা চুলে হাত খোঁপা বেঁধে, কোমড়ে শাড়ির আঁচল গুজে বটি দিয়ে তরকারি কুটছে। রান্নাবান্নায় বিশেষ দক্ষ না হলেও মোটামুটি রান্না সে করতে পারে। আবির বিছানায় শুয়ে আছে। গভীর দৃষ্টিতে কঙ্কাকে পর্যবেক্ষণ করছে সে। জানালা দিয়ে বিকেলের হলদে আলো এসে পরেছে কঙ্কার শরীরে। কপালে পরে থাকা দু চার‍টে চুল চিকচিক করছে সে আলোয়। কিঞ্চিৎ কুঁচকানো ভ্রু যুগলের নিচে কেমন স্বচ্ছ গভীর চোখ! মেয়েটা অদ্ভুত সুন্দর!
কঙ্কা চোখ তুলে আবিরের দিকে তাকালো। জিজ্ঞেস করলো,
–চা খাবে?
আবির মৃদু হেসে না সূচক মাথা নাড়লো। কঙ্কা আবার নিজের কাজে মন দিলো। আবির হঠাৎ প্রশ্ন করে বসলো,
–তুমি কি চাও, কঙ্কা?
কঙ্কা বুঝতে পারলো না। ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে বলল,
–কি চাই মানে? এটা কেমন প্রশ্ন?
–কিছু না। এমনি বলেছি।
কঙ্কার সবজি কাটা প্রায় শেষ। সে উঠে দাঁড়ালো। সবজির পাতিল হাতে তুলে নিয়ে বাইরে যেতে শুরু করলো। আবির পিছু ডাকলো,
–কঙ্কা, শুনে যাও।
কঙ্কা ঘুরে তাকালো। বিরক্ত গলায় বলল,
–কি বলবে তাড়াতাড়ি বলো। আমায় রান্না করতে হবে।
–রান্না একটু পরে করবে। আগে আমার পাশে এসে বসো।
কঙ্কা বাধ্য স্ত্রীর মতো তাই করলো। পাশে বসে বলল,
–বলো।
আবির শীতল গলায় প্রশ্ন করলো,
–কঙ্কা, সত্যি করে বলো। তুমি কি আমার সাথেই সারাজীবন সংসার করতে চাও?
কঙ্কা হেসে উঠে বলল,
–হ্যাঁ, চাই। নইলে বিয়ে করবো কেন?
–কেন চাও?
–কারণটা তো বলেছি। অন্য কাউকে শুধু শুধু কষ্ট দিয়ে কি লাভ? তারচেয়ে তোমার গলায় ঝুলে পরেছি, এই ভালো।
–আমার কাছে সংসার মানে একটা ঝামেলা। এত ঝামেলা পোহানো সম্ভব নয় আমার পক্ষে। বুঝেছ?
কঙ্কা তৎক্ষনাৎ বলল,
–তোমাকে কোনো ঝামেলা পোহাতে হবে না। সংসারের সব কাজ আমি করবো। তুমি যদি চাও, আমিই চাকরি করবো। তোমাকে কিছুই করতে হবে না।
আবির কিছুক্ষণ একদৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো কঙ্কার মুখের দিকে। তারপর ছোট্ট নিঃশ্বাস ফেলে বলল,
–এক মেয়ের প্রতি আমার খুব বেশিদিন আগ্রহ থাকে না। অল্পদিনেই শেষ হয়ে যায়। তোমার প্রতি আগ্রহও শেষ হয়ে যাবে একদিন।
কঙ্কার মুখে যন্ত্রণার ছাপ দেখা দিলো। সে কথা বলল না। আবির আবার বলল,
–চলে যাও, কঙ্কা। অযথা আগুন নিয়ে খেলো না।
কঙ্কা শান্ত গলায় বলল,
–আগুনে তো ঝাঁপ দিয়েই দিয়েছি। আর কিছু করার নেই। আমি জানি, একটা মেয়ের শরীরের গন্ধ নিয়ে মন ভরে গেলেই তোমার তার প্রতি আগ্রহ চলে যায়। তখন তুমি অন্য মেয়ে খুঁজে নাও। বিয়ের পরেও তুমি এভাবেই চলতে পারো। হাজারটা মেয়ের কাছে যাও, আমি বাধা দেবো না। আর আমি তো বলছি, সব দায়িত্ব আমি নেবো। সংসার নিয়ে তোমাকে ভাবতে হবে না কিছু।
আবির অবাক হলো। বিস্ময় নিয়ে বলল,
–এসব কি বলছো?
–ঠিকই বলছি।
আবির চোখ বড় বড় করে কঙ্কার দিকে তাকিয়ে রইলো। বিয়ে করা বউ বলছে তুমি হাজারটা মেয়ের সাথে সম্পর্ক রাখো! অদ্ভুত মেয়ে তো। আবিরের চাহনি দেখে কঙ্কা হেসে ফেললো। নির্বিকার ভঙ্গিতে বলল,
–আমি যতই চেষ্টা করি না কেন, তোমাকে তো বদলাতে পারবো না। মানুষ নিজে না চাইলে তার স্বভাব চরিত্র কখনো বদলায় না। তোমাকে যদি আমি বলি এসব ছেড়ে দাও, স্বাভাবিক জীবনযাপন করো, তুমি কি শুনবে আমার কথা? এসব যে পাপকাজ, তা কি তুমি জানো না? ঠিকই জানো। তবুও করে যাচ্ছো। পাপে যারা অভ্যস্ত হয়ে যায়, তাদের কানে আর কোনো ভালো কথা যায় না। ওই যে কথায় বলে না? চোরে না শোনে ধর্মের কাহিনী।
আবির হেসে উঠলো। বলল,
–যদি শুনি তাহলে তুমি খুশি হবে, কঙ্কা?
–সে তো হবোই। কিন্তু তুমি নিজেকে সামলে রাখতে পারবে বলে মনে হয় না। আর আমাকে খুশি করারই বা কিসের দায় তোমার?
আবির আবার হেসে ফেললো। মুখে হাসি ঝুলিয়েই প্রশ্ন করলো,
–আমার ফোনের মেমোরি কার্ড কোথায়, কঙ্কা?
কঙ্কা থতমত খেয়ে গেল। আজ কেনাকাটা করে ফিরে আসার পর আবির যখন ফ্রেশ হতে গিয়েছিল তখন কঙ্কা চুপিচুপি আবিরের ফোন থেকে মেমোরি কার্ড বের করে নিয়েছে। তারপর সেটা ভেঙে গুঁড়ো করে ফেলে দিয়েছে। আবিরের প্রশ্নের উত্তর সে দিতে পারলো না। আবির শীতল গলায় বলল,
–নষ্ট করে ফেলেছ। তাই তো?
কঙ্কা কাঁপা ঠোঁটে জবাব দিলো,
–হ্যাঁ, করেছি। কতগুলো মেয়ের আপত্তিকর ছবি তোমার কাছে থাকুক, সেটা আমি চাই নি। তাই নষ্ট করে ফেলেছি মেমোরি কার্ডটা।
–একটু আগে যে বললে আমি হাজারটা মেয়ের কাছে গেলেও তুমি কিছুই বলবে না।
কঙ্কা এবার কেঁদে ফেলে বলল,
–আবির, তোমার যদি এক মেয়েতে মন না ভরে তুমি কোনো নিষিদ্ধ পল্লিতে চলে যাও। কিন্তু যেসব মেয়েরা সাধারণভাবে বাঁচতে চায় তাদের ক্ষতি কেন করছো? এতে কি লাভ? প্লিজ এরকম করো না, আবির।
আবির উত্তর দিলো না। কঙ্কার সাথে কথা বলতে আর ভালো লাগছে না। একটা মেয়েকে ব্ল্যাকমেইল করে কাছে আনাতে যে আনন্দ, তা নিষিদ্ধ পল্লিতে আছে নাকি?
কঙ্কা চোখ মুছে ফেললো। আবিরের দিকে তাকিয়ে বলল,
–তুমি মানসিকভাবে অসুস্থ, আবির। স্বাভাবিক চিন্তা তুমি করতে পারো না। তোমার ডাক্তার দেখানো প্রয়োজন। সুস্থ হওয়া প্রয়োজন। একবার স্বাভাবিক চিন্তা করতে শিখলে দেখবে তুমি ভালো থাকার মানে বুঝতে পারবে। এসব অপকর্মে কোনো আনন্দ নেই, আবির। বরং একটা স্বাভাবিক সুন্দর সংসার করা, স্ত্রীকে ভালোবাসা, সংসারের প্রতি দায়বদ্ধ থাকা, এতেই ভালো থাকা যায়। তোমার কাউন্সেলিং দরকার। যাবে আমার সাথে?
আবির বিছানায় শুয়ে পরলো। চোখ বন্ধ করে বলল,
–আমাকে পাগল সাজানোর চেষ্টা করে লাভ নেই, কঙ্কা। যাও, রান্না করো গিয়ে।
কঙ্কা উঠে দাঁড়ালো। সত্যিই কোনো লাভ নেই। এতক্ষণ অযথাই অরণ্যে রোদন করছিল সে। সে এবার সোজা বাইরে চলে গেল। সময় নিয়ে চুলা জ্বালিয়ে রান্না বসালো। কড়াইতে তেলের ভেতরে পেঁয়াজ ছেড়ে দিতেই আবির ঝড়ের গতিতে রান্নাঘরে হাজির হলো। কঙ্কার হাত ধরে টেনে ঘরে নিয়ে এলো। এত দ্রুত ঘটনাটা ঘটলো যে কঙ্কা কিছু বলার সুযোগ পেলো না। ঘরে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দিলো আবির। কঙ্কা তাড়াহুড়ো করে বলল,
–আরেহ! কি করছো? রান্না পুড়ে যাবে তো।
আবির কঙ্কার কাছে এগিয়ে এলো। দাঁতে দাঁত চেপে বলল,
–আমার মাকে কি বলেছ?
কঙ্কা একবার আবিরের ফোনের দিকে তাকালো। তারপর আবিরের দিকে তাকিয়ে জানতে চাইলো,
–মা ফোন করেছিলেন তোমাকে?
আবির ধমকে উঠে বলল,
–হ্যাঁ, করেছিল। কেন বলেছ আমার মাকে এসব?
–যা সত্যি তাই তো বলেছি। এতে রাগ করার কি আছে?
আবির এবার প্রচন্ড রেগে কঙ্কার থুতনি চেপে ধরলো। কঙ্কা যন্ত্রণায় ককিয়ে উঠলো। বিষম ব্যাথায় তার চোখ বন্ধ হয়ে এলো। আবির হিসহিসিয়ে বলল,
–তোমার সাহস বড্ড বেশি, কঙ্কা। মেমোরি কার্ড ভেঙে ফেলছো, আমার মাকে সব বলে দিচ্ছো! কি ভেবেছ তুমি? যা খুশি তাই করবে?
কঙ্কার চোখ থেকে ততক্ষণে জল গড়িয়ে পরছে। সে আবিরকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে বলল,
–বেশ করেছি বলেছি। বলবো না তো কি করবো? কদিন এখানে এভাবে থাকতে পারবো আমরা? যেকটা টাকা আছে সেগুলো শেষ হয়ে গেলে কি করবো আমরা? বলো কি করবো? বাড়ি যেতে হবে না আমাদের? আমি তো বলছি আমি তোমার কোনোকিছুতে বাধা হবো না। সংসারের দায়িত্বও আমি নেবো। তবুও আমাকে কেন তোমার বাড়িতে নিয়ে যেতে চাইছো না? কেন?
কঙ্কা এবার হুহু করে কেঁদে ফেলেছে। কঙ্কার কান্না দেখে হঠাৎই আবির থমকে গেল। কঙ্কার ঠোঁট ফুলিয়ে কান্নার দৃশ্য দেখে তার কি যে হলো সে নিজেও বুঝতে পারলো না। সে শুধু কঙ্কার কাছে এগিয়ে গেল। স্ত্রীকে কাছে টেনে তার থুতনিতে গভীরভাবে চুমু খেলো। তারপর চোখের জল মুছে দিয়ে বলল,
–ব্যাথা পেয়েছ, কঙ্কা? সরি, আর কখনো তোমায় এভাবে আঘাত করবো না। আমি তোমাকে আমার বাড়িতে নিয়ে যাব।
_____________________
শাদাব বাড়ি ফিরলো সন্ধ্যার পর। সাবিনা বানু অপেক্ষায় ছিলেন। সুরমার বোনের পালিয়ে যাওয়ার খবর উনি শুনেছেন। শাদাব বাসায় ঢুকে মায়ের পাশে বসলো। সাবিনা বানু জানতে চাইলেন,
–কাজের চাপ খুব বেশি ছিল?
শাদাব সোফায় গা এলিয়ে দিয়ে বলল,
–হ্যাঁ, মা।
–ওই বাসায় সবার কি অবস্থা?
–যেমন হওয়ার কথা তেমনি।
–সুরমাকে রেখে এলি?
–হ্যাঁ, মা। সবার এরকম অবস্থায় ও পাশে না থাকলে কি করে হবে? তাই ভাবলাম, ও কয়েকটা দিন ওর খালা খালুজানের কাছেই থাকুক।
–ভালো করেছিস। বৌমার বোনের কি যেন নাম, বাবা?
–কঙ্কা, মা।
–কঙ্কা! ওর খোঁজ পাওয়া যায় নি এখনো?
–না, মা। আজ সকালে থানায় গিয়ে ডায়েরি করেছি। দেখা যাক, পাওয়া যায় কিনা।
–আচ্ছা, ঠিক আছে। বৌমাকে তাহলে কয়েকদিন পরে গিয়ে নিয়ে আসিস। এখন তুই বোস। আমি চা আনছি।
সাবিনা বানু উঠে যাচ্ছিলেন। চলে যাওয়ার আগেই শাদাব উনার হাত ধরে ফেললো। সাবিনা হেসে বললেন,
–কি রে? কিছু বলবি?
শাদাব ভারী গলায় বলল,
–মা, একটু আমার পাশে বসো।
সাবিনা বসলেন। চিন্তিত গলায় বললেন,
–কি হয়েছে, বাবা?
শাদাব কিছুক্ষণ মাথা নিচু করে বসে থাকলো। তারপর ক্ষীণ গলায় বলল,
–তোমার বৌমা আর ফিরবে না, মা।
সাবিনা হতভম্ব হয়ে গেলেন। ছেলের মুখের দিকে তাকিয়ে দেখলেন তার চোখ ভর্তি পানি। উনি প্রায় অস্পষ্ট গলায় বললেন,
–তুই কাঁদছিস?
শাদাব খুব দ্রুতই নিজেকে সামলে নিলো। স্বাভাবিক গলায় বলল,
–মা, আমি একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
সাবিনা আতঙ্কিত গলায় বললেন,
–কি সিদ্ধান্ত?
শাদাব খানিকক্ষণ চুপ করে থেকে বলল,
–সুরমাকে আমি তালাক দেবো, মা। একজন উকিলের সাথে কথাও বলেছি।
সাবিনা বানু হতচকিত হয়ে গেলেন। কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে বসে রইলেন কিছুটা সময়। তারপর রাগী গলায় বলে উঠলেন,
–এসব কি উল্টোপাল্টা কথা? বিয়েকে খেলা পেয়েছিস? তোদের বিয়ের এখনো এক বছরও হয় নি, শাদাব।
শাদাব এবার মায়ের একটা হাত নিজের হাতের মুঠোয় নিলো। কোমল গলায় বলল,
–এতেই ভালো হবে, মা। কারণ সুরমা আমাকে ভালোবাসে না। তুমিই বলো মা, শুধু দায়িত্বের দায়ে কি সংসার টেকে?
–না, টেকে না। কিন্তু বৌমা কি চেয়েছে বিয়েটা ভেঙে দিতে?
–না, ও চায় নি। কিন্তু বিয়েটা টিকিয়ে রেখে আমি শুধু কষ্টই পেয়েছি। আর পারছি না।
সাবিনা বানু স্তব্ধ হয়ে বসে থাকলেন কিছুক্ষণ। তারপর দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন,
–আমি চাই তুই ভালো থাক। কিন্তু যা করবি আরও একবার ভেবে কর। পরে যেন আফসোস করতে না হয়। আর একবার বৌমার সাথে কথা বল।
শাদাব শীতল গলায় বলল,
–আর কথা বলার কিছু নেই।
সাবিনা হেসে বললেন,
–শাদাব, যদি এখানে উল্টোটা হতো তাহলে বৌমা চাইলেও বিয়েটা ভেঙে দিয়ে চলে যেতে পারতো না। কিন্তু তুই পুরুষ মানুষ। বড় হয়েছিস, ভালো মন্দ বুঝিস। যা করবি কর। আমার কিছু বলার নেই।
শাদাব ক্লান্ত গলায় বলল,
–তুমি কি চাও, মা? আমি কাজটা না করি?
–না, বাবা। তুই যা করলে ভালো থাকবি বলে মনে করিস সেটাই করবি। তোর ভালো থাকাটা আমার কাছে সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। আমি শুধু বলছি যেন পরে তোর আফসোস না হয়।
শাদাব কথা বলল না। সাবিনা বানু ছেলের মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন,
–যা, ঘরে যা। হাতমুখ ধুয়ে আয়।
শাদাব উঠলো। ক্লান্ত পা ফেলে নিজের ঘরে গিয়ে ঢুকলো। পকেট থেকে ফোন বের করে বিছানায় রাখলো। আলমারি থেকে জামা বের করতেই ফোনটা বেজে উঠলো। শাদাব ফোন হাতে নিলো। সুরমা ফোন করছে। শাদাব ফোন ধরলো না। ওয়াশরুমে চলে গেল। হাতমুখ ধুয়ে বেরুনোর পরেও ফোনটা বাজতে শুনলো শাদাব। সুরমা অনবরত ফোন করে চলেছে। ধরবে না ধরবে না ভেবেও শেষ পর্যন্ত ফোনটা ধরলো সে। গম্ভীর গলায় বলল,
–কি চাও, সুরমা?
ওপাশ থেকে সুরমার ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কান্নার আওয়াজ আসছে। সে কথা বলছে না, শুধুই কাঁদছে। শাদাব আবার বলল,
–কি হয়েছে? কথা বলছো না কেন?
সুরমা এবারও কথা বলল না। কিছুক্ষণ উত্তরের অপেক্ষা করে শাদাব বেশ বিরক্তি নিয়ে বলল,
–আমাকে ফোন করে কান্নাকাটির মানে কি? কাঁদতে হলে নিজের ঘরে বসে কাঁদো। আমাকে বিরক্ত করছো কেন?
সুরমার কান্নার শব্দ বাড়লো। শাদাবের একবার মনে হলো আদুরে গলায় কিছু বলবে। কিন্তু পরক্ষণেই সে সিদ্ধান্ত বদল করলো। নিতান্তই রুক্ষভাবে বলল,
–তোমার কান্নাকাটি শোনার সময় নেই, সুরমা। আমি রাখছি।
শাদাব কল কেটে দিলো। সাথে সাথে মোবাইলের স্ক্রিনে একটা ম্যাসেজ দৃশ্যমান হলো। ম্যাসেজ পাঠিয়েছে সুরমাই। শাদাব ম্যাসেজ ওপেন করলো। সুরমা লিখেছে,
“আপনি যে কষ্টটা পেয়েছিলেন সেটা এখন আমিও পাচ্ছি। আর সেকারণে আপনার যন্ত্রণাটাও অনুভব করতে পারছি। আমাকে কি ক্ষমা করা যায় না? বিশ্বাস করুন, আপনার অবহেলা আমাকে ভীষণ কষ্ট দিচ্ছে। কারণ, আমি আপনাকে ভালোবেসে ফেলেছি। প্লিজ আমাকে বিশ্বাস করুন!”
শাদাবের মুখে হাসি ফুটলো। সে ফোনটা পাশে রেখে বিছানায় শুয়ে পরলো।
.
#চলবে………

(গল্প দিতে দেরি হচ্ছে বলে দুঃখিত। আমি চেষ্টা করছি প্রতিদিন লেখার। আজকের পর্বেও দয়া করে রেসপন্স করার চেষ্টা করবেন। ধন্যবাদ।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here