নিরালায় ভালোবাসি পর্ব-৮

0
660

নিরালায় ভালোবাসি
কলমে : তুহিনা পাকিরা
৮ .

ড্রেসিং টেবিলের আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে ছিল ইচ্ছে। পরিপাটি হয়ে তৈরি হয়েছে ও। নীরবের সঙ্গে এক অনুষ্ঠানে যাবে ও। নীরব রয়েছে বারান্দায়, বন্ধুদের কল অ্যাটেন্ড করতেই ও এখানে এসেছে। আজ ওর এক বন্ধু ইপশির বাড়িতে আজ যাবে ওরা। ইপসির বাবা মায়ের অ্যানিভার্সারি আজ। যাওয়ার যদি একফোঁটা ইচ্ছেও নীরবের মধ্যে বিদ্যমান না। কিন্তু ওই যে সব বন্ধুরা আজ ওখানে আসবে। তাই ওদেরও যেতে হবে। সেই সকাল থেকে এক এক বন্ধু ফোন করে জ্বালিয়ে চলেছে ওকে। অনেকদিন পর দেখা হবে। নাহলে সবাই যে যার সংসার জীবন, কেরিয়ার নিয়ে ব্যস্ত। সময় কী কারোর হাতে আছে।

– ” এই ইচ্ছে তোর হয়েছে চল বেরোতে হবে তো…”

থেমে গেল নীরব। ইচ্ছেকে দেখে ভাষা হারিয়ে গেছে। নীল জামদানিতে অপরূপ লাগছে ওকে। তার সঙ্গে সাজ আছে কি বোঝা নীরবের কম্ম না। তবে সিঁথির সিঁদুর ওকে যেনো ইচ্ছের দিকে বেশি আকর্ষণ করছে।

বাঙালি নারী শাড়িতেই সুন্দর। তবে শাড়ি পরিহিতা নারী যদি এক চিলতে সিঁদুরের অধিকারিণী হয়ে থাকে তবে বোধ করি সেই নারী হয় পরিপূর্ণ। হয়ে ওঠে কারোর স্ত্রী; হয় কারোর জীবনের অর্ধাঙ্গিনী।

নীরব যেনো এক ঝলকে থমকে গিয়েছিল। তবে ইচ্ছে ততক্ষনে নীরবের সামনে গিয়ে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়েছে। ও সম্পূর্ণ তৈরি। নীরব ফোনটা হাতে নিয়ে ঘর থেকে বেরোতে গিয়ে বলে গেলো, ” কপালে একটা টিপ পড়ে নে। ” কথাটা বলে নীরব ওখান থেকে পালিয়ে গেল। অনুভূতির সংস্পর্শে এসে তা সামান্যতম অনুভব করে পালিয়ে গেল। কিন্তু পরক্ষণেই তারাহুরো করে ঘরে ঢুকলো। কিন্তু প্রতিবারের মতো এবারেও ইচ্ছের টিপ পড়া হয়ে গেছে। না আগে থেকেই ও টিপটা পড়েছিল! মনে করতে পারলো না নীরব। প্রতিদিনের মতো ও আজকেও ইচ্ছেকে টিপ পড়তে বলেছিল। আসলে ও দেখতে চায় এই মেয়েটা আবার আয়না ছাড়া টিপ পড়তে জানে কিনা? ইচ্ছেকে তো ও আগে কোনো দিন টিপ পড়তেই দেখেনি। এই বিয়ের পর নীরব বলতে কেবল ও টিপ পড়ে। কিন্তু নীরবের কোনো দিনই দেখা হয় না ইচ্ছে আয়না না দেখে টিপ পড়ে কিনা।

রুমা দেবীকে বলে নীরব আর ইচ্ছে বেরিয়ে পড়ে। ইপশির বাড়ি ওদের বাড়ি থেকে একটু খানি, এই পাশের পাড়ায়। এইটুকুতে ক্যাব নেওয়া চলে না। ওরা হেঁটেই রওনা দেয়। এমনিতেই আসতে রাত হবে। তার সাথে রাতের শহর দেখা ফ্রি। তাই নীরব মিস করতে চায় না।

ওরা যখন ইপশির বাড়ি পৌঁছায় তখন প্রায় সকলেই এসে গেছে। গেস্ট বলতে ইপশির কিছু বন্ধু বান্ধব আর কিছু রিলেটিভ। নীরব আর ইচ্ছে গিয়ে ইপশির সামনে দাঁড়াতেই ইপশি নীরবকে দেখে লাজুক হাসলো। মনে মনে নীরবকে ও এখনও পছন্দ করে। কিন্তু পাশে ইচ্ছেকে দেখে বেচারী ভয়ে ঢোক গিলল। কোনোমতে কয়েকটা কথা বলেই ইপশি অন্য গেস্টদের কাছে চলে গেল।

ইপশি চলে যেতেই নীরব হেসে দিলো। ফাঁকা একটা চেয়ার দেখে ওখানে বসে পড়লো। ইচ্ছে তখনও পাশে দাঁড়িয়ে। নীরব হাসতে হাসতে বলল,
– ” মনে আছে ইচ্ছে, তুই এই মেয়েকে প্রতিবার কিভাবে নাকানি চুবানি খাওয়াতি। ”

ইচ্ছে মুচকি হাসলো। এই ইপশি নীরবকে খুব পছন্দ করত। আর নীরব আর সকলের মতো একেও এড়িয়ে চলতো। কিন্তু ইপশির বাড়াবাড়িটা অতিমাত্রায় হয় যখন
ও নীরবের বাড়ি পর্যন্ত গিয়ে ওর মাকে বিয়ের কথা বলে। নীরব প্রচণ্ড রেগে যায়। আর সেই মুহূর্তে ওকে বাঁচায় ইচ্ছে। দুই বন্ধুকে নিয়ে ইচ্ছে গিয়ে ইপশিকে ওর বাড়ির সামনের গলিতে আটকে রাখে। আরশোলা , টিকটিকির ভয় দেখিয়ে ওকে ছেড়ে ছিল সেইদিন। তারপর থেকে ওকে আর নীরবের বাড়ির আসে পাশে দেখা যায়নি। তবে বন্ধুত্ত্ব ছিল।

ইপশি মাঝে মাঝেই ঘাড় বেঁকিয়ে ইচ্ছের দিকে তাকাচ্ছে। কিন্তু আজ ইচ্ছেকে দেখে অন্য রকম লাগছে ওর। আগের সেই দূরন্ত মেয়েকে ও কোথাও খুঁজে পাচ্ছে না। নাকি ইচ্ছে এতো লোকের ভিড়ে চুপ করে থাকার নাটক করছে। সে যাই হোক এখন ও কাউকে ভয় পায় না। কারন ওর সালমান খানের ডুপ্লিকেট ওর কাছে আছে। কিন্তু রজত এখনও আসেনি। এলেই ও মজা দেখাবে ইচ্ছেকে। অন্তত একটু হলেও সেই দিনের জন্যে বকবে।

ইপশির বাবা, মা নীরবকে দেখে এগিয়ে গেল। ওনারা মেয়ের গুণকীর্তন শুনেছেন নিজের মেয়ের মুখেই। তার মধ্যে এটাও শুনেছেন নীরব বিয়ে করেছে।

– ” এই যে আমার না হওয়া জামাই কেমন আছো তুমি?”

হাসলো নীরব। ইপশির বাবা প্রচুর মজার মানুষ। লোককে উল্টোপাল্টা জোকস বলে তিনি প্রায়শই হাসিয়ে থাকে।

– ” এইতো খুব ভালো, না হওয়া শ্বশুর আঙ্কেল।”

ভদ্রলোক হাসলেন। নীরবের পাশে ইচ্ছেকে দেখে বললেন, ” এই অপ্সরী টা কে বাবা?”

– ” ও আপনার মেয়ের না হওয়া সতীন আঙ্কেল।”

হেসে উঠলেন ভদ্রলোক। ইপশির মা ওনার স্বামীকে থামিয়ে বললো, ” আহ্, তোমরা দুইজনে থামো তো। দেখো তো তোমাদের আবোল তাবোল কথা বার্তায় মেয়েটা কেমন ভয় পেয়ে গেছে। ”

ভদ্রমহিলা ইচ্ছের পাশে গিয়ে দাঁড়ালো। ইচ্ছের মুখটা দুই হাতে ধরে বললো, ” তোমার কোনো অসুবিধা হচ্ছে না তো মা?”

ঘাড় নাড়লো ইচ্ছে। ওর কোনো অসুবিধা হয় নি। ভদ্রলোক হাসলেন।

– ” কোনো অসুবিধা হলে বলো মা। আর আমার কথায় কিছু মনে করো না। আমি সবসময় ইয়ার্কির মধ্যেই থাকি। তবে নীরবের কথায় মনে করতে পারো। তুমি বলে এখনও দাঁড়িয়ে আছো। কিন্তু আমার ডলিং তোমার জায়গায় থাকলে আমার মাথার বাকি চুলগুলো সব উঠে যেত। দেখতেই তো পাচ্ছো মাথায় ইয়া বড়ো টাক। ”

ভদ্রমহিলা স্বামীকে মুখ বেকালেন। নীরব হাসতে হাসতে বলল, ” এই সব শেখাবেন না আঙ্কেল, তাহলে আমার মাথার কিউট কিউট চুল গুলো আপনার মত টাকে পরিণত হবে।”

ইচ্ছে হেসে উঠলো। নীরব হাঁ করে ওর দিকে তাকালো। কতদিন পর ইচ্ছের হাসি মুখটা ও দেখলো। শব্দহীন, প্রাণোচ্ছ্বল হাসি।

– ” আচ্ছা তোমরা কথা বলো। আমি আসছি। ”
ভদ্রমহিলা যেতে গেলে ভদ্রলোক ডেকে বলেন,
” আরে ডলিং আমিও যাবো। একা রেখে যেওনা আমায়। বোঝোনা কেনো কুছ কুছ হোতা হ্যায় ডলিং। ”

ভদ্রলোকের মুখে ডলিং শুনে থতমত খায় নীরব। ইচ্ছেকে বলে, ” ডলিং আবার কী? ”

পিছন থেকে সোহেল বলে, ” ডার্লিং। আঙ্কেল আন্টিকে ভালোবেসে ডার্লিং এর পরিবর্তে ডলিং বলে।”

– ” বাহ্, কী দারুণ নাম। আঙ্কেল বলেই পারেন।”

-” তা ঠিক। যা বলতে এলাম। তুই আর বৌদি উপরে চল। ছাদে রিন্তু, মৃণালরা আছে। তুই এসেছিস কি দেখতে এসেছিলাম আমি।”

-” আচ্ছা তুই চল। আমরা আসছি।

সোহেল যেতেই নীরব গিয়ে ইচ্ছের হাত ধরে বললো,
-” চলো ডলিং, তোমাকে একা রেখে যাই কীকরে। বোঝোনা কেনো কুছ কুছ হোতা হ্যায় ডলিং!”

( চলবে )
{ বিঃ : হ্যাপি রিডিং। অনেকেই গল্পের অপেক্ষায় থাকেন। কিন্তু আমি কিছু কারণ বসত রোজ গল্প দিতে বর্তমানে পারছি না। আমি তার জন্যে সত্যিই খুব দুঃখিত। }

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here