নিস্তব্ধ প্রেমাবেগ পর্ব_৭+৮

0
6368

#নিস্তব্ধ_প্রেমাবেগ
#পর্ব_০৭+৮
#লেখায়ঃস্বর্ণালি_আক্তার_শ্রাবণ

!
ড্রয়িংরুমে দাঁড়িয়ে সবাই।জয় আদিবা শ্রেয়া ঝর্ণা বেগম।
সবাই চুপ বেশ কিছুক্ষণ যাবৎ।আদিবা নিরবতা ভেঙে বললো দাদাভাই কিছু বলবে?নাকি যাবো?খিদে পেয়েছে।
কেনো চলে গেলো এ্যানি?কি হয়েছে!
আমি অপমান করেছি!
আবার বড় গলায় বলছিস?তোকে আমি বলেই আদিবাকে থাপ্পড় মারে জয়।
আদিবা আরো শক্ত হয়ে দাঁড়ায়। থাপ্পড় খেয়েছি যখন তখন ওই মেয়েকে আমি তোমার জীবন থেকে না সরিয়ে শান্তি হবো না।
আদিবা…
চিৎকার করবে না দাদাভাই। তুমি চিৎকার করলেই আমি ভয়ে গুটিয়ে যাবো না।
তোকে আমি..বলেই আবারও হাত উঠায় জয় আদিবাকে মারতে।শ্রেয়া হাতটা টেনে ধরে ফেলে।আপনি তো দেখছি আস্ত পাগল।
হে ইউ….তোকে কে বলেছে আমাদের ফ্যামিলির মাঝে আসতে?লজ্জা করে না!বাড়ির আশ্রিতা আশ্রিতার মত থাক।কোনো অধিকারে কথা বলিস আমাদের মাঝে?সরে যা আমার চোখের সামনে থেকে…আমাদের ভাই বোনের মাঝে খবরদার আসবি না।
জয় আবার ও বলে… দয়া করে জায়গা দিয়েছে ভুলে যাস না।আশ্রিতার মত থাক।সব ব্যপারে নাক গলালে ওই নাকটাই আর থাকবে না।
জয় চুপ কর অনেক বলেছিস!আমি এখানে দাঁড়িয়ে তোর চোখে পড়ছে না..
থাম মা…বাড়িটাকে তো আশ্রয়াগার বানিয়ে রেখেছো।আর নিজের মেয়েটাকে কি তৈরি করেছো তাই দেখো!
তোমার থেকে ভালো শিক্ষা দিয়েছে।লজ্জা করে না,সামনে বিয়ে তবুও সবটা যেনে আরেক মেয়ের সাথে রিলেশন করো!জানো মা তোমার ছেলে কি করে?ঘরে যেয়ে দেখি মেয়েটাকে..ছিহ
দেখ আদিবা তুই কিন্তু বেশি করছিস এবার।আমি তোকে..
কি থাপ্পড় মারবে?মারো…এবার আমার গায়ে হাত তুললে আমার হাতটাও কিন্তু উঠে যাবে..
আদিবা..
চিৎকার করো না দাদাভাই! আমার ঘৃণা করছে তোমাকে দাদাভাই ডাকতে।আমার চোখে এতটা নিচে নেমেছো তুমি।অবশ্য মেন্টালিটি যে ক্লাসের সে ক্লাসের মেয়েদের সাথেই তো রিলেশন করবে।বাবা মা তো ভালো শিক্ষাও দিতে পারে নি।গুরুজনদের সাথে কেমন ব্যবহার করতে হয় তাও জানে না।পারে শুধু মানুষকে শরীর দেখিয়ে ঘুরতে আর পারে অন্যকে অর্ডার করতে।ছ্যচড়ার মত অন্যের টাকা ধ্বংস করতে।রাস্তার মেয়ে একটা।
আদিবা…বলেই আদিবার গলা চেপে ধরলো জয়।ঝর্ণা বেগম আর শ্রেয়া এগুলো ওকে ছাড়াতে..
আদিবা এক প্রকার ধাক্কা দিয়ে সরালো জয়কে।বড়দের সম্মান করতে হয় সেই শিক্ষা আমি পেয়েছি বলেই তোমার ছেলের গায়ে হাত তুলতে পারলাম না মা।
ওকে বুঝিয়ে দিও কেউ ওর টাকায় খায় পড়ে না যে ওকে ভয় পেয়ে মুখে কুলুপ এঁটে থাকবে।আজ থেকে জানবো আমার একটাই ভাই।জিসান ভাই।আজকের পর কখনো রকম ব্যবহার করলে ভুলে যাবো সে আমার বড়।সত্যি টা সত্যি ই হয়।যে মেয়ে নিজের মাকে অপমান করে সে মেয়ের জন্য এতকিছু?ওই মেয়েকে জীবন থেকে না সরালে আমি আদিবা নই।খুব বাজে ভাবে অপমানিত হবে ওই মেয়ের দ্বারা।রাস্তার ছেলে কোথাকার!
আর এক মিনিট ও দাঁড়ালো না আদিবা!দ্রুত পায় নিজের ঘরে চলে গেলো।ঝর্ণা বেগম কাঁদতে কাঁদতে নিজের ঘরে চলে গেলেন।।জয় শক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।শ্রেয়া ও একটু দূরে দাঁড়িয়ে আছে।নিজের রুমে যেতে হলে জয়ের সামনে দিয়ে যেতে হবে তাই সাহস পাচ্ছে না।বেশ কয়েকমিনিট দাঁড়িয়ে থাকার পর শ্রেয়া পা বাড়ালো নিজের ঘরে যাবে বলে।
জয় একটানে শ্রেয়াকে সিঁড়ি রেলিংয়ের পাশে চেপে ধরলো।একহাতের মুঠোয় দুহাত নিয়ে আরেক হাতে গাল চেপে ধরল।
তোর জন্য হয়েছে আজ এতকিছু।তুই আমাদের মাঝে না আসলে আর এ্যানির সামনে না আসলে এত কিছু হতোই না।তোকে আমি পরে দেখে নিবো।
আজকেই আউট হাউজে শিফট হবি।এ ঘরের ত্রিসীমানায় দেখলে পুঁতে রেখে দেবো।তোর মুখটা দেখলেই আমার শরীর জ্বলে যায়।কেন এলি বলতো আমাদের জীবনে।তোর জন্য আজ এতসব হয়েছে।এর আগে কখনো এরকম ঘটনা আমাদের পরিবারে ঘটে নি।আদিবাকে ছুঁড়ে ফেলে নিজের ঘরে চলে যায় জয়।
মাথাটা যেয়ে ফুলদানির সাথে বাড়ি খায় শ্রেয়ার।বেশ ব্যাথা পায় তবুও নিজেকে সামলে ঘরে চলে যায়।
.
.
.
.
আউট হাউছে শ্রেয়ার সব জিনিস পত্র নেয়া হচ্ছে। রহিমসহ আরেকজন লোক নিচ্ছে।সাথে জিসান ও সব এগিয়ে দিচ্ছে।আদিবা সেই যে ঘরে ডুকেছে আর বের হয় নি।বিকেল গরিয়ে প্রায় সন্ধা।এখনো বাড়ির কেউ মুখে খাবার তোলে নি।শ্রেয়ার পাশে দাঁড়িয়ে আছেন ঝর্ণা বেগম।কপাল ফুলে রক্ত জমে গেছে। তবুও বলছে না কি করে ব্যাথা পেয়েছে।আর কেন হঠাৎ আউট হাউজে শিফট হচ্ছে?কিছু হয়নি তো মামনি একথাটা প্রায় দশবার শুনলো ঝর্ণা বেগম।তাই আর কিছু জিগ্যেস করছে না আপাতত!
আউট হাউজে নিজের ঘরটায় গিয়ে চারপাশে ভালো করে চোখ ঘুরালো শ্রেয়া।ওই ঘর থেকে এ ঘরটা একটু ছোট তবে বেশ সুন্দর লাগছে।
দুটো জানালা।একটা জানালা খোলা ছিলো আরেকটা খুলে দিতেই দেখলো জানালাটা জয়ের ঘরের জানালার বরাবর।ওই জানালায় দাঁড়ালে এ ঘরের সবটা দেখা যাবে।কিন্তু এখান থেকে জয়ের ঘরের সবটা দেখা যায় না।খাটের জন্য। শুধু জানালার সামনে কেউ দাঁড়ালে দেখা যাবে।চোখ সরিয়ে নিজের কাজে মন দিলো শ্রেয়া।

!!
কলেজের জন্য রেডি হচ্ছে শ্রেয়া।এমন সময় ঘরে ডুকল আদিবা।
শ্রেয়া চলো ব্রেকফাস্ট করবে!
শ্রেয়া আদিবার মুখের দিকে তাকিয়ে আছে। চোখমুখ ফুলে লাল হয়ে আছে।দেখেই বোঝা যাচ্ছে খুব কেদেছে।
তুমি কলেজ যাবে না?
যাবো।চলো একসাথে বের হই!
দুজনের কলেজ তো দুদিকে।
আমি তো জিসান ভাইয়ের সাথে যাবো।ওর ওদিকে গানের রেকডিং আছে নাকি বলল।
শ্রেয়া বুঝে গেলো তার জয়ের সাথে যেতে হবে।তবে আজ তো বলেছে চিনিয়ে দিবে।তাহলে আর কি।কাল থেকে যেতেও হবে না অপমানিত ও হতে হবে না।
দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে ব্যাগ নিয়ে বেরিয়ে গেলো।
.
.
.
.
ব্রেকফাস্ট করে উঠে পড়লো সবাই।আদিবা জলদি আয় বলেই জিসান বেরিয়ে গেলো।
জয় গাড়ি উঠতে নিলেই পেছন থেকে কেউ ডাকলো।
পেছন ঘুরে শ্রেয়াকে দেখে যেন আগুনে পড়লো জয়।রাগে চোয়াল শক্ত হয়ে গেছে। কাল এভাবে নলার পরও আজ যাবে আমার সাথে?কি দিয়ে তৈরি এ মেয়ে?
জয় কিছু বলতে যাবে তার আগেই শ্রেয়া বলে উঠে..
দেখুন ওইদিন তো বলেছিলেন আমায় রাস্তা চিনিয়ে দিবেন।আজ যদি একটু কষ্ট করে বলে দিতেন অটোতে বা সিনএনজি করে কিভাবে যাবো তাহলে ভালো হতো!
ড্রাইভিং সীটে বসে পড়লো জয়।শ্রেয়া ভাবলো হয়ত নিবে না।কিন্তু খুব জোড়েই হর্ণ বাজালো জয়।শ্রেয়া বুঝলো ওর জন্য অপেক্ষা করছে।গাড়িতে উঠে বসল শ্রেয়া।
রাস্তার মোরে এসে দাঁড়ালো। গাড়ি থেকে নেমে শ্রেয়ার পাশের দরজাটা খুলে দিলো।
শ্রেয়া বেড়িয়ে আসতেই বলল।বাড়ি থেকে এ মোড় পর্যন্ত আমার সাথে আসবে।যাতে বাড়ির কেউ কিছু না বুঝে।আর এখান থেকে ওই যে সিএনজি দেখছো বা অটো নিয়ে কলেজ লেকে যাবে।বললেই হবে কলেজ লেকের পাড় যাবো।ওখানে নামলেই দেখবে অনেক রিকশা দাঁড়িয়ে থাকে।প্রায় সময় থাকে না।ওখান থেকে রিকশা নিয়ে বললেই হবে তোমার ভার্সিটির নাম।নামিয়ে দিবে।আবার ভার্সিটি থেকে কলেজ লেকে হেঁটে আসতে হবে।কারন রিকশা সবসময় থাকে না।কলেজ লেক এসে সিনএনজি বা অটো নিয়ে মোড়ে এসে নামবে।তারপর রিকশা নিয়ে বা পায়ে হেটে বাড়ি আসবে.. বুঝলে?
জ্বি আচ্ছা।
এই নাও..একটা ছোট টাকার বান্ডিল শ্রেয়ার হাতে ধরিয়ে দিলো।
এত টাকা…
প্রতিদিন হাত পেতে নিতে চাইছো?এটা নিশ্চয়ই ভালো লাগবে না?তাই একবারেই নিয়ে নাও।এ মাস চলে যাবে।
শ্রেয়া আর কিছু বলল না।জয় গাড়ি করে চলে গেলো।শ্রেয়া দাঁড়িয়ে রইলো।
একটা অটো এসে সামনে। শ্রেয়া উঠে পড়লো।
কলেজ লেক এসে নামতে নিলেই খুব করে একটা ব্যাথা পেলো শ্রেয়া।ডান পায়ের দিকে তাকিয়ে দেখলো নখটাই অর্ধেক ভেঙে উঠে গেছে।অনেক রক্ত বের হচ্ছে।ড্রাইভার বলল আপু অনেক রক্ত বের হচ্ছে তো।
এই নিন বলে এক টুকরো কাপড় দিলো।কোনো রকম তা দিয়ে বাঁধলো শ্রেয়া।অটোর একরডের কোণা লেগেই এরকমটা হয়েছে।
আর কলেজ যেতে পারলো না শ্রেয়া।বাড়ি চলে আসতে হলো।
.
.
.
.
শ্রেয়াকে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে সদর দরজা দিয়ে বাড়িতে ডুকতে দেখে দৌড়ে গেলেন ঝর্ণা বেগম।কি হয়েছে এতটা কিভাবে কাটলো উত্তেজিত হয়ে জানতে চাইলে শ্রেয়া সবটা তাকে খুলে বলে।
আঙুলে বায়োডিন দেয় রক্ত কিছুটা বন্ধ হতে।সেভলন দিয়ে পরিষ্কার করে নিজে হাতে ব্যন্ডেজ করে দেয় ঝর্ণা বেগম।তারপর শ্রেয়াকে ধরে আউট হাউজে দিয়ে আসে।
বাড়ির দক্ষিণ পাশে বিশাল মাঠ।পশ্চিম পাশে মানে পেছনটায় আউট হাউজ।আর উত্তরে বাগান।
আউটহাউজে তিনটা ঘর।লম্বাভাবে।একটায় ময়না আর রফিক থাকতো আর দুটো খালি ছিলো।দুদিন আগে রফিক ময়না তাদের নিজেদের করা ছোট্ট বাড়িতে উঠেছে।আর আজ শ্রেয়া তিনটার একটায় শিফট হয়েছে।একাই থাকতে হবে শ্রেয়া।
শ্রেয়া অবশ্য ভয় পায় না একা থাকতে।

চলবে_

#নিস্তব্ধ_প্রেমাবেগ
#পর্ব_০৮
#লেখায়ঃস্বর্ণালি_আক্তার_শ্রাবণ

!
অনেক্ক্ষণ ট্রাই করার পর এ্যানিকে পেয়েছে জয়।
ফোন রিসিভ করেই কালকের গত কালকে ওদের বাসায় ঘটে যওয়া সব বলেছে।নিজের দোষগুলো উহ্য রেখে আদিবার কথা বলেছে ইচ্ছেমত।সাথে লেজ লাগিয়ে এটাও বলেছে শ্রেয়া নাকি তাকিয়ে জানিয়েছে শ্রেয়া জয়ের হবু বউ!সে যেনো জয়ের ধারে কাছেও না ঘেষে!আর বলেছে এখন বেরিয়ে না গেলে ঘাড় ধরে বের করে দিবে।
এসব বলেই ন্যাকা কান্নায় ভেঙে পড়লো এ্যানি।জয়ের মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়লো। এত বড় সাহস শ্রেয়ার?ছোট মুখে এসব বড় বড় কথা?
ওকে উচিত শিক্ষা দিতে হবে।
এ্যানির ফোনটা কেটে দিয়ে বিছানায় বসে আছে জয়।
.
.
.
.
.
কিছু সময় বসে থেকে নিচে গেলো জয়।ঝর্ণা বেগম শ্রেয়া খায়িয়ে দিচ্ছে আর শ্রেয়া টিভি দেখছে আর খাচ্ছে।জয় ও সোফায় বসল।আড়চোখে তাকিয়ে দেখলো শ্রেয়াকে!শ্রেয়ার খাওয়া শেষ।উঠবে কিনা ভাবছে।কিন্তু পায়ের জন্য উঠতে পারছে না একা!একবার সিনক্রিয়েট করেছে এখন আর করতে চাইছে না মায়ের সামনে।যা বলার পরে বলবে এ মেয়েটাকে ভেবেই চলে গেলো আবার উপরে।বিছানায় বসে হাঁটুতে মুখ গুজল জয়!কি করবে কি হবে কিছুই বুঝতে পারছে না!শ্রেয়াকে বিয়ে করার কথাটা কি বাড়ির সবাই জানে?
.
.
.
.
.
আদিবা এক প্রকার নাচতে নাচতে সিঁড়ি দিয়ে নিচে নামল।নিচে নামতেই থ! আজ শ্রেয়া আর আদিবা এক রকম জামা পড়েছে।আদিবার দেয়া সে জামাটা..বেশ লাগছে শ্রেয়াকে।চুল গুলো খোঁপা করা!আদিবা যেয়ে চুলগুলো খুলে দিলো।একটা মিষ্টি হাসি হাসল শ্রেয়া!
শ্রেয়াকে একটু আড়ালে ডাকলো আদিবা।
কি হয়েছে? একটু ফিসফিসিয়ে জিজ্ঞেস করল শ্রেয়া?
তোমায় বলেছিলাম না রোদ ভাইয়ার কথা?ও একটু দেখা করতে চায়!আসছে..আউট হাউজের পাশেই!বাসায় কি পরিস্থিতি জানোই তো তাই চাচ্ছি না বলতে!ভাইয়াকেই বা কি বলবে বলো?তুমি বরং আমার সাথে চলো…আমার কথা শেষ হলেই তুমি ঘরে যেও!
আমি এখানেই বসি?তুমি আসলে না হয় যাবো..
তুমি এখানে বসলে মা আমায় খুঁজতে পারে…আর আমার সাথে গেলে ভাববে তোমায় নিয়ে তোমার ঘরে গিয়েছি।আর যদি ওদিকটায় কেউ যায় ও তুমি সিগনাল দিতে পারবে..!
শ্রেয়া মুচকি হাসলো!চলো…

!!
রোদ বসে আছে চেয়ারে সামনে দাঁড়িয়ে আদিবা…!মাথায় ওড়না দেয়া বলে খুব মিষ্টি লাগছে..!
আদিবা চট করেই বলল দেখা শেষ হয়েছে এবার যাও রোদ ভাইয়া..!কেউ দেখলে সমস্যা হবে!
কি হবে?না হয় ধরে বেঁধে বিয়ে দিয়ে দেবে..আমি তো খুশিই.. খরচ ছাড়াই বউ নিয়ে যাবো!
আসছে কিপ্টায়!আগে মেরে তক্তা বানাবে তারপর অন্য কথা..যাও এখন!
রোদ উঠে দাঁড়ালো! আদিবার কোমড় জড়িয়ে কাছে টেনে আনল। মুড়োমুড়ি শুরু করে দিলো আদিবা।রোদ ভাইয়া উল্টো পাল্টা কিছু করলে কিন্তু আমিই মেরে তক্তা করে দিবো।
রোদ কিছুটা এগিয়ে এলো আদিবার দিকে।দাঁত মুখ শক্ত করে চোখ খিচে বন্ধ করে রাখল।মনে মনে ভাবল হয়ত রোদ ওর ঠোঁটে কিস করবে। প্রখর সিদ্ধান্ত নিলো আর কখনো এভাবে দেখা করবে না।এতে দিন দিন প্রশয় পাবে রোদ!কিন্তু ওর ধারণা ভুল প্রমাণ করে ওর চোখ জোড়ায় চুমু খেলো রোদ।কোমড় ছেড়ে সরে দাঁড়ালো।জানো তোমার প্রেমে পড়ার কারণ কি?
পিটপিট করে চোখ খেলো আদিবা।আস্তে করে জিজ্ঞেস করলো কেন?
ওই চোখ জোড়ার মায়ায় পড়ে!
মিষ্টি করে হাসল আদিবা।আসি বলেই বেরিয়ে গেলো। পেছন থেকে ডাকল আদিবা..
বলো!
চলো তোমায় এগিয়ে দিয়ে আসি।
মুচকি হাসলো রোদ।আলতো করে হাত ধরল আদিবার!

!!!
সবে বিছানায় গা এলিয়ে দিলো শ্রেয়া।আদিবা রোদ বেরিয়ে যেতেই ও ঘরে ডুকল।অন্ধকারে দাঁড়িয়ে থাকায় ওকে দেখে নি রোদ!চুল গুলো বেনী করতে হবে ভেবেই আস্তে করে উঠে চুল গুলো খুলে দিলো শ্রেয়া।হাতে চিরুনিটা নিতেই পেছন থেকে কেউ খুব জোড়ে টান দিয়ে দাঁড় করালো।জয় ভাইয়া আপনি..!আর কিছু বলার আগেই ঠাসস ঠাসস করে দুগালে দুটো চড় পড়লো শ্রেয়ার ডান গালে!
কে ছিলো ছেলেটা? বল কে ছিলো?১৫ দিন হতে না হতেই ছেলে জুটিয়ে নিয়েছিস?গ্রামের মেয়েরা বুঝি এমনি হয়?দুশ্চরিত্রা?শ্রেয়া ঘটনার আকস্মিকতায় হতভম্ব হয়ে গেছে! সব মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে যেন?মাথাটা ভন ভন করে ঘুরছে।কি করেছি আমি?কান্না জড়িত কন্ঠে বলল শ্রেয়া..
কি করেছিস?ভাবছিস কিছু দেখি নি আমি?ওই জানাল থেকে সব দেখেছি আমি..বল ছেলেটা কে ছিলো বল?গ্রামের কাউকে ঝুলিয়ে নিয়ে এসেছিস নাকি কেয়ারটেকার জাবেদ?
শ্রেয়ার আর বুঝতে বাকি নেই কাদের দেখেছে জয়। অস্পষ্ট স্বরে বলল আমি কিছু করি নি।এক ধাক্কায় শ্রেয়াকে ছুঁড়ে ফেলে দিলো জয়।আর চেঁচিয়ে বলল এক্ষুনি আমি বাড়ির সবাইকে ডেকে আনছি!দেখুক তাদের আদরের শ্রেয়া কতটা দুশ্চরিত্রা মেয়ে!
বেরিয়ে গেলো জয়।শ্রেয়া উঠে ফ্লোরে বসে চিৎকার করে কাঁদতে লাগলো।এরকম বাজে কথা বললে কি কখনোই শক্ত থাকা যায়?এ যে আত্মসম্মানকে ধ্যুলিশাৎ করে দেয়!
দম নিতে খুব কষ্ট হচ্ছে শ্রেয়ার!মাথা ঘোরাচ্ছে।একে তো পায়ের ব্যাথা তার উপর এভাবে ধাক্কা লাগায় মাথায় খুব লেগেছে।খুব অস্বস্তি হচ্ছে! এই বুঝি মরে যাবে!মুখ চেপে কান্না থামানোর চেষ্টা করছে শ্রেয়া!

!!!!
মা মা বলে চিৎকার করে সদর দরজা দিয়ে ড্রয়িংরুমে ডুকেছে জয়!ঝর্ণা বেগম আঁচলে হাত মুছতে মুছতে বললো বল!
কেয়ারটেকার জাবেদ কোথায়?
ও তো বলতে বলতেই আদিবা ডুকল ঘরে।মা পানি দাও!বলেই সোফায় বসল।জয় যেন ভড়কে গেছে।
এর মধ্যে ঝর্ণা বেগম বললো জাবেদ তো দুই মাস আগেই চাকরি ছেড়ে চলে গেছে।
জয়ের চোখ যেন আদিবার জামাতেই আটকে গেছে।মাথায় কাপড় দেওয়া সে একই ভাবে!তাহলে আদিবা…ই?না না তা কি করে হয়!
আদিবা তুই কি আউট হাউজে গিয়েছিলি?জয় হাতের মুঠ শক্ত করে জিজ্ঞেস করলো।
কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলল মা তোমার ছেলেকে বলে দাও হ্যা গিয়েছিলাম!এখন কি বাড়িতে ঘুরতেও তার অনুমতি নিতে হবে নাকি?বলেই দ্রুত পায়ে নিজের ঘরে চলে গেলো।
জয় আর এক মিনিট ও দেরী করলো না দৌড়ে বেরিয়ে গেলো।পেছন থেকে ঝর্ণা বেগম কয়েকবার ডাকলেন।কানে নিলো না জয়!

চলবে_

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here