নিস্তব্ধ প্রেমাবেগ পর্ব_৯+১০

0
6089

#নিস্তব্ধ_প্রেমাবেগ
#পর্ব_০৯+১০
#স্বর্ণালি_আক্তার_শ্রাবণ


জয় হন্তদন্ত হয়ে শ্রেয়ার ঘরে ডুকেই দেখে মাটিতে লুটিয়ে পড়েছে শ্রেয়া।খুব জোরে জোরে দম নিচ্ছে।আর হাত দিয়ে মুখ চাপা দিয়ে নিজেকে শান্ত করার চেষ্টা করছে।তড়িৎ গতিতে শ্রেয়াকে কোলে তুলে নিলো জয়।শ্রেয়ার শরীর থরথর করে কাঁপছে! আর তার সাথে খুব ভারী নিঃশ্বাস।
বিছানায় বসিয়ে দিলো। শ্রেয়া কি হয়েছে তোমার? কোথায় কষ্ট হচ্ছে? এরকম করছো কেন?একদমে বলতে লাগলো জয়।
শ্রেয়া তো কিছু বলতেই পারছে না।শুধু জয়ের শার্ট খামচে ধরে আছে।
জয় কি করবে বুঝতে পারছে না।একে তো শ্রেয়ার এ অবস্থার জন্য সে দায়ী।তার উপর এখন বাড়ির কাউকে ডাকলে সে-ই কথা শুনবে!আবার ওর সমস্যা টা কি? কেন এমন হচ্ছে তা ও জানে না জয়।ডাক্তার ডাকবে কি?তা ও বুঝতে পারছে না।
হাত মালিশ করে দিচ্ছে একবার একবার পা মালিশ করে দিচ্ছে!মাথায় ইচ্ছে মত পানি দিচ্ছে তাও কিছু তেই কিছু হচ্ছে না।উপায়ন্তর না পেয়ে শ্রেয়াকে নিজের বুকে শক্ত করে চেপে ধরল জয়।আর দোয়া পড়তে লাগলো।
বেশ অনেকক্ষণ পরে শ্রেয়ার শরীরটা নেতিয়ে পড়লো।স্বাভাবিক হয়ে গেলে নিঃশ্বাস।তবে শরীর এখনো কাঁপছে।
তোমার কি শ্বাসকষ্টের সমস্যা আছে?
শ্রেয়া মাথা নাড়িয়ে হ্যা বলল।
ইনহেলার ইউজ করো না?
শ্রেয়া মাথা নাড়িয়ে না বলল।
শ্রেয়াকে নিজের থেকে সরিয়ে বিছানায় শুয়িয়ে দিলো।ঘুমাও।
শ্রেয়া চোখ মুখ লাল হয়ে গেছে।চোখ বন্ধ ও করতে পারছে না।
কি হলো ঘুমাবে না?
শ্রেয়া কিছু বলল না।
আ’ম সরি শ্রেয়া আসলে…
বাড়ির কাউকে একটু ডেকে দিবেন?আমার খুব মাথা যন্ত্রণা করছে।
জয় ভাবল শ্রেয়া হয়ত তাদের সব বলে দিবে।তখন হবে আরেক ঝামেলা।আদিবাও ছোট হবে সবার সামনে!
দ্রুত বলল কিভাবে ডাকবো সবাই তো ঘুমায়!
শ্রেয়া জানে সবাই এত জলদি কখনোই ঘুমাবে না।কেবল তো ৮ কি ৯ টা বাজে।
শ্রেয়া আমি যখন তোমার অসুস্থতার জন্য দায়ী তাই আমিই থাকছি কিছুক্ষণ তোমার পাশে।
জয়ের বলা তখনকার কথাগুলো শ্রেয়ার খুব মনে পড়ছে। না চাইতেও অঝোরে পানি পড়ছে দুই গাল বেয়ে।কিন্তু আবারও শ্বাস উঠতে পারে তাই উঠে বসার চেষ্টা করলো! জয় সাহায্য করলো উঠে বসতে।
.
.
.
আদিবা সোফায় বসে ফোন টিপছে।আদিবা যা তো শ্রেয়াকে ডেকে নিয়ায় খেতে।
যাচ্ছি বলে উঠে গেলো।

শ্রেয়ার ঘরের দরজার সামনে আসতেই চোখ কপালে উঠলো আদিবার।ফোন বের করে ৫-৬ টা ছবি তুলে নিলো। আর সরে গেলো সেখান থেকে।যাক মেঘ না চাইতেই জল পাওয়ার মতন অবস্থা হলো!আদিবা মুচকি হেসে বাড়িতে ডুকে পড়লো।কিন্তু ভাবছে জয় হঠাৎ শ্রেয়ার অত কেয়ার কেনো করছে?ঘাবলা তো নিশ্চয়ই আছে।পরে জানতে হবে।
আদিবার ভাবনার বিচ্ছেদ ঘটে মায়ের কথায়!কি রে কই শ্রেয়া?
মা শ্রেয়া তো..
কি করে?আসবে না বলেছে?দাঁড়া আমি যাচ্ছি!
এই মা না না বলেই হাত টেনে ধরে আদিবা।ফোন থেকে ছবিগুলো দেখায়!থ মেরে যায় ঝর্ণা বেগম।আদিবা মুচকি হাসে মায়ের দিকে তাকিয়ে।
.
.
.
শ্রেয়াকে শুয়িয়ে দিয়ে কম্বল দিয়ে দিলো শরীরে।এখনো তেমন শীত পড়ে নি।তবুও রীতিমতো কাঁপছে শ্রেয়া।জয় ভাবছে শ্রেয়ার কি খুব শরীর খারাপ করছে? ডাক্তার ডাকবো?আর শ্রেয়া জয়ের কথাগুলো ভেবে চোখের পানি ফেলছে।পরক্ষণেই নিজেই নিজেকে শান্তনা দিচ্ছে। ওকে তো এমন কথা বহুত শুনতে হবে।এটা তার নিয়তি। এসব রাগ কান্না অভিমান তারজন্য নয়!চোখ মুছে পাশ ফিরল শ্রেয়া।
আমি ঠিকাছি আপনি এবার আসতে পারেন।
জয় কিছু বললো না আস্তে আস্তে উঠে লাইট অফ করে দরজা চাপিয়ে শ্রেয়ার পাশে এসে বসে পড়লো।মাথা টিপে দিতে শুরু করল।বার কয়েক চলে যেতে বলল কিন্তু জয় যাবে তো দূর হু হা কিছুই বলল না।একসময় ঘুমিয়ে পড়লো শ্রেয়া।কখনো যে নিজেও ঘুমিয়ে পড়েছে খেয়ালই নেই জয়ের!
.
.
.
সকালে যখন জয়ের ঘুম ভাঙল দেখে সে এ ঘরে। পাশে শ্রেয়া বেঘোরে ঘুমাচ্ছে।চুলগুলো এলোমেলো হয়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে।আর জয়ের বা হাতের উপর শুয়ে আছে শ্রেয়া।আর জয়ের ডান হাত শ্রেয়ার জামার ভেতর দিয়ে পেটে রাখা।
জয় দ্রুত ধড়ফড় করে উঠে বসল।শ্রেয়ার চুলে টান লাগায় তার ও ঘুম ভেঙে গেলো।উঠে বসে জয়ের দিকে তাকিয়ে রইলো অবাক চোখে।জয় আর এক সেকেন্ড ও দাঁড়ালো না। দ্রুত ঘর থেকে বেরিয়ে গেলো। শ্রেয়া থ মেরে বসে রইলো সেখানেই।


তিনদিন পর আজ দেখা হলো শ্রেয়ার সাথে!জয় মাথা নিচু করে আছে।দাদান ফিরেছে বাসায়।এসেই শ্রেয়ার ঘরে যায়।আউট হাউজে শিফট হওয়ায় খুব চেঁচামেচি করেছেন।তার উপর ঘরে যেয়ে দেখে শ্রেয়ার খুব জ্বর।বাসায় এনে সবাইকে ডেকে খুব চেচাঁমেচি করছে।
বেলা দশটার কিছু বেশি বাজে।জয় অফিসে।তখনি দাদান ফোন দিয়ে বলেছে বিশমিনিটের মধ্যে বাড়ি আসতে।
শ্রেয়াকে বলল জামা পাল্টে রেডি হয়ে নিতে।জিসান বলল_দাদান দাদাভাই তো অফিসে আমি ফ্রী আছি আমি নিয়ে যাই ওকে!
না!তার প্রয়োজন নেই!যার সম্পদ হবে সে ই সামলাবে…!
দাদানের কথা কিছু বুঝলো না জিসান।তবে মনে মনে বেশ রাগলো।কেনো তাকে না করলো?কেন সবসময় দাদাভাইকেই সবখানে ওর সাথে পাঠায়?ও তো শ্রেয়াকে পছন্দ করে ওকে কেন পাঠায় না?না পাঠালে কি আসে যায় হু!এসব ভেবেই রাগীভাব নিয়ে ঘরে চলে গেলো জিসান।
শ্রেয়া রেডি হয়ে সোফায় বসল।ঝর্ণা বেগম চুলগুলো আঁচড়ে দিলেন।এতদিনে শ্রেয়ার চুলগুলোর দিকে ওইভাবে খেয়াল করে নি তিনি।আজ তো পুরো অবাক।কি বড় সুন্দর চুল!সযত্নে আঁচড়ে ঝুটি করে দিলো।লম্বা চুলগুলো হাঁটু ছাড়িয়ে গেছে।
সোফায় চুপ করে বসে আছে শ্রেয়া।আমজাদ সাহেব দাঁড়িয়ে আছে।ঝর্ণা বেগম বেশ কয়েকবার বললেন বাবা ফ্রেশ হয়ে খেয়ে নেন। তিনি নাছোড়বান্দা। কেন এখনো ডক্টর দেখানো হয় নি শ্রেয়াকে?বাড়িতে তার ছেলে আর তিনি না থাকলে জয়-ই কর্তা।এটা তার দায়িত্ব! তবুও কেন সে ডক্টর দেখালো না!
.
.
.
জয় গাড়ি থেকে নেমে এক প্রকার দৌড়ে বাসার ভেতর ডুকল।দাদান আর ইউ ওকে?
ইয়াহ আই এম ওকে।বাট জয় দিনদিন কি তুমি দায়িত্ব জ্ঞানহীন হয়ে যাচ্ছো?
কেন দাদান?
শ্রেয়ার জ্বর…অথচ এখনো তুমি ওকে ডক্টরের কাছে নিয়ে যাও নি?ইভেন বাসায়ও ডাকো নি।
শ্রেয়ার জ্বর…?কিছুটা অবাকের সুরে বলল জয়
মনে হচ্ছে আকাশ থেকে পড়লে।
নিজেকে সামলে নিলো জয়।তাচ্ছিল্যের সুরে বলল বাড়ির বাহিরে থাকলে কিভাবে জানবো?
কারো যদি এমন ভালো ঘর ভালো না লাগে ওখানে ভালো লাগে আমার কি করার?
ঝর্ণা বেগম বললেন বাবা আমিও জানি না যে ওর জ্বর।আসলে আউট হাউজে শিফট হওয়ায় সমস্যা হয়ে গেছে!
আমজাদ সাহেব খুব জোরে ধমক দিলো শ্রেয়াকে!শ্রেয়া গুটিয়ে গেলো!
জয়কে বলল শ্রেয়াকে নিয়ে বেরিয়ে পড়তে।
এসো বলেই এগুলো জয়।শ্রেয়াও পিছু পিছু হাঁটা ধরল!
গাড়িতে বসে নিজেই সীট বেল্ট আটকে নিলো শ্রেয়া।জয় আড় চোখে তাকিয়ে ডাইভিং এ মন দিলো!
কিছু দূর যেতেই টের পেলো শ্রেয়া ঘুমিয়ে গেছে! গাড়িয়ে স্লো করে শ্রেয়ার মাথাটা আলতো করে ঠিক করে দিলো!তারপর একটু দ্রুত গতিতে হসপিটালে এসে পৌঁছালো…
আলতো করে ডাকতেই মিটমিট করে তাকালো শ্রেয়া।হসপিটালে এসে গেছি নামো।
আস্তে আস্তে নামলো শ্রেয়া।জয় এগিয়ে গেলো দ্রুত। পিছু ফিরে কিছুটা ধমকের সুরে বলল হাঁটছো না কেন?
শ্রেয়া মাথা নিচু করে পায়ের দিকে তাকালো।জয়ও দৃষ্টি অনুসারে তাকিয়ে দেখলো শ্রেয়ার নখে জখম।আর কিছু না বলে শ্রেয়ার পাশেই হাঁটতে লাগলো।
.
.
.
ডক্টর দেখিয়ে গাড়িতে বসে জয় শ্রেয়া।শ্রেয়াকে বলল আমি অফিস থেকে ফেরার সময় ঔষধ নিয়ে ফিরবো।এখন সময় নেই তোমায় বাড়িতে দিয়ে অফিসে আর্জেন্ট মিটিং এটেন্ড করতে হবে!
শ্রেয়া কিছু বলল না শুধু মাথা নাড়িয়ে হ্যা জানালো!
দ্রুত ড্রাইভিং করতে শুরু করলো জয়!বাড়ির কাছে পৌঁছুতেই মেসেজ টোন বেজে উঠলো জয়ের ফোনে।স্লো করে বাড়ির গেইটে ডুকতে ডুকতে মেসেজ ওপেন করে মাথায় রক্ত উঠে গেলো জয়ের!এ কাজ আদিবার ছাড়া কারো না বুঝতে বাকি নেই জয়ের!
damn it!বলেই খুব জোড়ে গাড়ি ব্রেক করলো।শ্রেয়া ঘুমিয়ে ছিলো বুঝতে পারে নি।ধড়ফড় করে উঠল শ্রেয়া।কি হয়েছে কি হয়েছে? বলতে লাগলো।জয় ফোন রেখে শ্রেয়ার দিকে তাকিয়ে স্পষ্ট খেয়াল করলো শ্রেয়া কাঁপছে! বুঝতে পারলো সে এভাবে ব্রেক করে ঠিক করে নি!আর ইউ ওকে শ্রেয়া?
ঘুম জড়ানো লাল চোখে জয়ের দিকে তাকালো।বুঝলো বাড়ি চলে এসেছে।আর সে ঘুমিয়ে গিয়েছিলো বলেই এভাবে ব্রেক করেছে জয়!
মুখে কিছু না বলে করুন চোখে তাকালো জয়ের দিকে।তারপর সীট বেল্ট খুলল।শ্রেয়ার উত্তর না পেয়ে গাড়ি থেকে নেমে গেলো জয়।শ্রেয়াও আস্তে আস্তে নামলো।এখনো মাথা ঝিম ধরে আছে!শরীর কাঁপছে!
শ্রেয়া সেই চোখে আবারও তাকালো জয়ের দিকে।শ্রেয়ার একটু এগুতেই মাথা চক্কর কাটলো।কিন্তু নিজেকে সামলে নিলো।জয় বলল শ্রেয়া তুমি ঠিক আছো?শ্রেয়া মাথা নাড়িয়ে বাসায় ডুকে পড়লো! জয় দুই মিনিট শ্রেয়ার যাওয়ার পানে তাকিয়ে রইলো! তারপর ফোনে কিসব মেসেজ টাইপ করে গাড়িতে উঠে পড়লো!এখন সব রেখে মিটিং জয়েন করা দরকার তারপর এ্যানির সাথে দেখা করে যা বলার বলবে!

চলবে_

#নিস্তব্ধ_প্রেমাবেগ
#পর্ব_১০
#লেখায়ঃস্বর্ণালি_আক্তার_শ্রাবণ


ঘরের মধ্যে পায়চারী করছে জিসান।বাড়ির সবাই জানে অথচ ও জানে না জয়ের জন্য শ্রেয়াকে আনা হয়েছে এ বাড়িতে..জয়ের বউ হবে শ্রেয়া..নাহ এটা ও হতেই দেবে না!এই প্রথম একটা মেয়েকে ও ভালোবেসেছে আর..!
পায় চারী করেই চলেছে জিসান।কখন কিভাবে এ ভালোবাসা হয়ে গেলো বুঝে উঠতে পারে নি সে।তবে শ্রেয়াকে প্রতিদিন একবার করে দেখা অভ্যাসে পরিণত হয়ে গেছে তার!
আকাশ পাতাল ভাবতে লাগলো জিসান!


সবে বাসায় এসেছে জয়।নিজের রুমেও যেতে পারে নি।তার আগে মা এসে বলল আজ ওর আন্টি আর ইরিনা আসছে।এয়ারপোর্টে যেতে হবে।
ওদিকে জিসান এসে বলল ভাই তোর সাথে কথা আছে..!
একদিকে এ্যানির সাথে বিশাল কথা কাটাকাটি হয়ে ব্রেকআপ হয়েছে।অন্যদিকে বাড়ির এ ভেজাল।
বিরক্তিতে কপালে সুক্ষ্ম ভাঁজ পড়ল!
গটগট করে বাড়ির বাহিরে চলে গেলো!
.
.
.
.
.
বাসায় এসেই নিজের রুমে চলে গেলো জয়।ইরিনা তার বাবা মা সোফায় বসে গল্প করতে বসলো।
সন্ধ্যার দিকে জিসান জয়ের ঘরে গেলো।জয় ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে সিগারেট টানছিলো।কারো পায়ের শব্দ পেয়ে ফেলে দিয়ে পিছু ফিরলো!মুখে হাসি ফুটিয়ে বলল কি রে কি বলবি বলা না।
জিসানের মুখে চোখে বিরক্তির ভাব।
ভাই আমি আসলে…
এমন সময় কল বেজে উঠলো জয়ের। বাবার ফোন!
রিসিভ করেই জানতে পারলো তার বাবা মাঝরাস্তায়!এয়ারপোর্ট থেকে আসার পথে গাড়ি নষ্ট হয়ে গেছে।সে যেনো নিয়ে আসে!
ফোন রেখে চেঁচামেচি শুরু করে দিলো।সবদিক আমাকেই সামলাতে হবে কেন?কেন?
বিরক্তি কর বলেই শার্ট পরতে পরতে বেরিয়ে গেলো।
জিসান আহত দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো জয়ের যাওয়ার দিকে!
.
.
.
.
.
শ্রেয়ার ঘরে দরজায় নক করলো জিসান।
আসবো?
আসুন!
শ্রেয়া ভাবল হয়ত জয় এসেছে।ঔষধ নিয়ে!
জিসানকে দেখে বলল ও জিসান ভাইয়া আপনি!
শ্রেয়া আমার কিছু ইমপর্টেন্ট কথা আছে তোমার সাথে।
বলুন!কি কথা..
শ্রেয়া আমি তোমাকে ভালোবাসি..দেখো কখন কিভাবে এসব আমি জানি না!শুধু জানি আমার তোমাকে চাই!তুমি দাদাভাইকে বিয়ে করবে না!কিছুতেই না!আমি আমি এবার ইউএস থেকে ফিরেই বাসায় সবটা জানাবো!দাদাভাই তোমাকে ভালোবাসে না ওর সাথে তুমি কখনো সুখী হবে না!
এক নিঃশ্বাসে সব বলে ফেললো জিসান
শ্রেয়া কি বলবে ভেবে পাচ্ছে না!জিসান কে এড়াতে বলল আমার একটু জয় ভাইয়ার কাছে যেতে হবে জিসান ভাইয়া! আমার ঔষধ আনতে।আমি আসছি বলেই বেরিয়ে গেলো শ্রেয়া!
জিসান পেছন থেকে বার কয়েক ডাক দিলো শ্রেয়া ফিরলো না!
কল এলো জিসানের কলে।ফোন রিসিভ করেই জানতে পারলো তার ইউএস ব্যাক করতে হবে!
জুঁইয়ের কল!তা বেস্ট ফ্রেন্ড না হলেও কাছের একজন!ওর বাবা খুব অসুস্থ। হয়ত মারা যাবে।তাই শেষবার জিসানকে দেখতে চায়!আর তাছাড়া এক্সামের জন্য ও যেতে হবে!
.
.
.
.
.
জিসানের কথা শোনার পর থেকে অনবরত ঘামছে শ্রেয়া!কিসের মধ্যে এসে পড়লো ও?সে তো সৎ মায়ের কাছেই ভালো ছিলো।উফফ সব কিছু এলোমেলো লাগছে শ্রেয়ার কাছে!চুপচাপ নিজের ঘরে চলে গেলো আবারও!দরজা আটকে শুয়ে পড়লো।
.
.
.
.
.
.
বাবাকে বাসায় এনে নিজের ঘরে চলে যায় জয়!জিসান আবারও যায় জয়ের কাছে।আজই তাকে ইউএস যেতে হবে!কথা বলেছে ভোর চারটায় ফ্লাইট!
জয়ের ঘরে এসে দেখে জয় শার্ট খুলে বিছানায় গা এলিয়েছে।জিসান এসেই বলল ভাই!
বল না কি বলবি!আমি ফ্রী আছি বল!
আসলে ভাইয়া আমি শ্রেয়ার ব্যাপারে বলতে এসেছি..আসলে..
শ্রেয়ার ব্যাপারে…ওফফ গড!জিসান আমাকে এখনি একটু বের হতে হবে!শ্রেয়ার ঔষধ লাগবে।সেই সকালে ডক্টর দেখিয়ে এনেছি।দাদান জানতে পারলে খুব রাগারাগি করবে।আমি আসছি!বলেই শার্ট পরে বেরিয়ে যায় জয়।জিসান পিছু ডাকলো কয়েকবার।কিছুই শুনলো না হয়।হতাশ হয়ে নিজের ঘরে চলে গেলো জিসান।ব্যাগে এলোমেলো ভাবে কাপড় ঘুছিয়ে ড্রয়িং রুমে এলো।সবাই অবাক হয়ে তাকালো জিসানের দিকে।সে সবটা বুঝিয়ে বলল সবাইকে।আদিবাকে ডেকে নিয়ে নিজের ঘরে গেলো।
বল ভাইয়া কি বলবে।
আদিবা আমি শ্রেয়াকে ভালোবাসি..
হোয়াট..
ঠিক বলছি রে!কখন কিভাবে হলো আমি জানি না তবে ওকে আমার চাই!
আর ইউ ম্যাড জিসান ভাই!
নাহ।আমি সৎজ্ঞানে বলছি।
ভাইয়া এসব কি বলছো..
দেখ আদিবা তুই যেভাবে পারিস দাদাভাই আর শ্রেয়ার বিয়েটা আটকাবি।আমি ততদিনে বাড়ি ফিরে আসবো।অফিসে জয়েন করবো।আর বাড়িতে ম্যানেজ করে ফেললো। আর শ্রেয়াকে..
থামো জিসান ভাইয়া।এটা হয় না।
কেনো হয় না?দাদা ভাই বা শ্রেয়া তো একেকঅপরকে ভালোবাসে না তবে?আর দাদাভাইয়ের আরেক জায়গায় রিলেশন ও আছে।এ বিয়ে হলে কেউ সুখী হবে না!
দেখো ভাই শ্রেয়া দাদাভাইকে পছন্দ করে এটা আমি বুঝি!আর বাড়ির সবাই এটাই চায়।দাদান ও.
কে কি চায় আমি জানি না।আমার শ্রেয়াকে চাই ব্যাস।
ভাইয়া তুমি…
থাম তুই।ওকে দেখে রাখবি।আসছি..
বলেই বেরিয়ে এলো জিসান।আদিবা ধপ করে বিছানায় বসে পড়লো।জুঁই আপু ও যে জিসান ভাইকে ভালোবাসে তাহলে?নাহ যা যেভাবে হচ্ছে সেভাবেই সবটা হতে দিবো।আমি কোনো বাঁধা দিবো না।বরং দাদাভাই – শ্রেয়ার বিয়ে হলে বাড়িসুদ্ধ সবাই সুখে থাকবে। আর একজনের জন্য সবার সুখ নষ্ট করা পাপের হবে!আর জিসান ভাইয়ের এটাকে ভালোবাসা বলে না।মোহ কেবলই!


শ্রেয়ার রুমের দরজায় নক করতেই টের পেলো দরজা আটকানো। আস্তে আস্তে দরজায় ধাক্কাতে লাগলো।প্রায় ১২.৩০ বাজে।এ সময় কেউ দেখলেও বাজে ভাববে..আস্তে আস্তে ডাকতে লাগলো জয় শ্রেয়ার নাম ধরে।পুরো দমে ঘুমেছিলো শ্রেয়া।হঠাৎ দরজার করাঘাতে চমকে উঠলো।ভাবলো হয়ত জিসান এসেছে।ঘুটিয়ে বসে রইলো শ্রেয়া।ভালো করে কন্ঠস্বর শুনে বুঝতে পারলো জয়!আস্তে আস্তে উঠে গিয়ে দরজা খুলতেই হুড়মুড় করে ঘরে ডুকল জয়!এতক্ষণ লাগে দরজা খুলতে হ্যা?এরকম মহিষের মত কেউ ঘুমায়?
শ্রেয়া কিছু বলল না।
এই নাও ঔষধ সব!হাতে দিয়ে কোনটা কখন খেতে হবে বুঝিয়ে দিচ্ছে। তারপর বলল সব পাতা যেন শেষ হয়!
কপালে হাত দিয়ে দেখলো এখনো বেশ জ্বর!পানি এগিয়ে দিয়ে বলল এখন এ দুটো খেয়ে নাও!
না চাইতেও ঠোঁটের কোনে হাসি ফুটে উঠল শ্রেয়ার।এরকম ধমকে ধমকে মিষ্টি শাসন আগে কেউ কখনো করি নি।জয়কে দেখতে বেশ লাগছে এখন।
কিন্তু জিসানের কথাগুলো মনে পরতেই হাসি মিলিয়ে গেলো।আবার নিজেই নিজেকে শান্তনা দিলো নানান কিছু ভেবে।হয়ত জিসান তার সাথে মজা করেছে।তার ভাইয়ের সাথে বিয়ের কথা কি সে জানে না?
কিন্তু জয় তো অন্য কাউকে ভালোবাসে তাহলে সে কি রাজি হবে? আর দাদাকে ছাড়াই তারা কি করে আমার সাথে বিয়ের কথা বলে? আমাদের ও তো একটা মতামত আছে।
জয়ের কথায় ঘোর কাটল শ্রেয়ার!
আমি আসছি।শুয়ে পড়ো বলেই বেরিয়ে গেলো জয়।
আমজাদ মাহমুদ ঘরে পানি না থাকায় ড্রয়িং রুমে আসছিলো জগ হাতে।জয়কে এত রাতে শ্রেয়ার ঘর থেকে বেরিয়ে সিড়ি হয়ে নিজের ঘরে যেতে দেখে বেশ অবাকই হলেন তিনি।নাহ দ্রুত চার হাত এক করে দিবেন তিনি।ভেবেই একটু হাসলো।

চলবে_

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here