#নিস্তব্ধ_প্রেমাবেগ
#পর্ব_১১+১২
#লেখায়ঃস্বর্ণালি_আক্তার_শ্রাবণ
!
গ্রামের পঞ্চায়েতের মত শালিসি বসেছে মাহমুদ ভিলায়! হ্যা জয়-শ্রেয়ার বিয়ের।আকাশ, আমজাদ, ঝর্ণা বেগম আদিবা সহ সবাই আছেন।শুধু জয় শ্রেয়াই নেই।একজন অফিসে একজন ভার্সিটিতে..!
আকাশ আমি চাইছিলাম ইরিনা শ্বশুর বাড়ি যাওয়ার পর পরই জয় শ্রেয়ার বিয়েটা দিয়ে দিতে!মানে একই সাজে!(আমজাদ)
বাবা একটু তাড়াহুড়ো হয়ে গেলো না!(আকাশ)
তাড়াহুড়ো টা প্রয়োজন..(আমজাদ)
তাছাড়া ওদের ও একটা মতামত আছে। যেহেতু দুজনই প্রাপ্তবয়ষ্ক(আকাশ)
কথাটা তুমি ঠিকই বলেছো কিন্তু..
আমি একটা কথা বলতে চাই দাদান।যদি তুমি অনুমতি দাও(আদিবা)
বলো দিদুন!
দাদান আমার মনে হয় ওরা একে অপরকে পছন্দ করে!(আদিবা)
কি বলছিস এসব আদিবা(ঝর্ণা বেগম)
মা দেখেছিলে না ওইদিন..(আদিব)
কিন্তু..(ঝর্ণা)
বউ মা আমার ও তাই মনে হয়।তবুও আমি জিজ্ঞেস করে নিবো দুজনকেই..(আমজাদ)
ইয়েএএএ দাদান তাহলে ইরিনা আপু বিয়ের শপিং এ ওদেরটাও করে ফেলবো(আদিবা)
না দিদুন।ইরিনার বউ ভাতের পরদিন শপিং তারপর দিন হলুদ!(আমজাদ)
এত জলদি সব হবে বাবা(আকাশ)
ডেকোরেটিং এর ভেজাল তো নেই আর খাওয়া দাওয়ার ব্যাপারটা তো ওদেরই বুঝিয়ে দিবো।আর শপিং বাচ্চারা করে নিবে!আর ইনভাইটেশনের ব্যাপারটা আমি আর বউমা করে নিবো!তোমার চাপ নিতে হবে না।
থেংকিউ বাবা!আমি তাহলে রুমে যাই(আকাশ)
যাও!দিদুন আজ বরং শ্রেয়া আসলে তোমরা ইরিনার শপিংয়ে চলে যেও!আর জয়কে ও নিয়ে যেও!(আমজাদ)
আচ্ছা দাদান!
কথাবার্তা শেষ হলে আমজাদ সাহেব আর আকাশ সাহেব নিজেদের ঘরে চলে যায়।
রেনু বেগম(ইরিনার মা)বললেন কি রে ঝর্ণা শেষে কি না তোর এরকম স্টাবিলিস্ড ছেলের জন্য এরকম পরিচয়হীন একটা মেয়ের সাথে বিয়ে দিবি।কত করে বলেছিলাম আমার ইরিনার সাথে জয়ের বিয়েটা দিয়ে দে দু বোনের সম্পর্ক আরো মজবুত হবে..
ঝর্ণা বেগম কিছু বলার আগেই ইরিনা ধমকে বলল আহ মা..তুমি বরাবর একটা কথা কেনো বলো?তুমি জানো আমি জয় ভাইয়াকে নিজের আপন ভাই মনে করি!আর তাছাড়া রিমনের সাথে আমার কাল বাদে পরশু বিয়ে আমরা একে অপরকে ভালোবাসি।আর তুমি কিনা…দেখো মা আজকের পর এসব কথা ২য় বার শুনলে খুব খারাপ হবে বলে দিলাম।বলেই হনহন করে নিজের ঘরে চলে গেলো ইরিনা!
রেনু বেগম মুখটা কালো করে ফেললো।ঝর্ণা বেগম বললেন দেখো বুবু তুমি আমার আপন বড় বোন!তাই আমাদের সম্পর্ক আজীবনই মজবুত থাকবে।এমন কোনো কথা ছোট বোনের শ্বশুর বাড়িতে এসে বলো না যাতে ছোট বোনের সংসারে অশান্তি হয়!আমার শ্বশুর এ কথা জানতে পারলে কত রিয়েক্ট করবে তুমি জানো?
রেনু বেগম মুখটা ছোট করে দ্রুত নিজের ঘরে চলে গেলো।
.
.
.
.
.
দুপুরে শ্রেয়াকে নিয়েই বাড়ি ফিরেছে জয়!দাদান ফোন না করলে হয়ত আসতো না!এদিকে আজ জয়ের সাথে অনেকটা সময় কাটিয়ে বেশ ভালো লাগছে শ্রেয়ার।যদিও দুজনের মধ্যে তেমন কথা হয়নি তবুও মাইন্ড ফ্রেশ লাগছে শ্রেয়ার!সব চিন্তা দূর হয়ে গেছে যেন।আরো কিছু সময় পাশে থাকলে মন্দ হতো না!
জয়কে নিয়ে আকাশ পাতাল ভাবতে ভাবতে গোসল সেরে ভেজা চুল নিয়ে খেতে বসল শ্রেয়া!জয় ফ্রেশ হয়ে নিচে এসেই দেখে সবাই ডাইনিং এ…হঠাৎ শ্রেয়ার সাথে চোখাচোখি হয়ে গেলো।জয় যেন চোখ সরাতেই ভুলে গেছে!ভেজা চুল থেকে টপটপ করে পানি পড়ছে!ভ্রু কুচকে সেদিকে তাকিয়ে খেতে বসল জয়!
খাওয়ার সময় কারো মধ্যেই তেমন কথা হলো না।
খাওয়া শেষে সবার চোখ এড়িয়ে শ্রেয়ার ঘরে গেলো জয়!কেনো গেলো সে জানে না।ঘরে গিয়ে পায়চারী করছে।মামনির সাথে সব কিছু গোছগাছ করল শ্রেয়া।আদিবা তাড়া দিলো ১০ মিনিট রেস্ট নিয়ে রেডি হতে।কারন ইরিনার বিয়ের জন্য শপিংয়ে যাবে।ঘরে এলো শ্রেয়া।এসেই জয়কে নিজের ঘরে দেখে বলল একি আপনি আমার ঘরে এসেছেন কেনো?
শ্রেয়া যে বেশ চটপটে দুরন্ত মেয়ে তা জয়ের জানা হয়ে গেছে।আর একটু জোরে শক্ত করেই কথাটা বলেছে শ্রেয়া!
ভ্রু কুচকে বলল লাইক সিরিয়াসলি শ্রেয়া?আমি তোমার ঘরে এসেছি?এ বাড়িটা আমাদের সো ঘরটাও আমাদের..
দমে গেলো শ্রেয়া। মন খারাপ করলো না একটুও।বরং মুখে হাসি এনে বলল আসলে আমি ওভাবে বলি নি।যেহেতু ঘরটায় আমি থাকি তাই বলেছি আমার ঘর!আচ্ছা আমি আসছি..বলেই ঘুরে চলে যেতে নেয় আর ওমনি জয় পেছন থেকে হাত টেনে ধরে!
শ্রেয়া জয়ের দিকে তাকিয়ে হাত সরিয়ে বলল কিছু বলবেন?
না মানে এসেছিলাম ঔষধ ঠিকভাবে খেয়েছো কিনা খাচ্ছো কিনা তাই দেখতে।পরশু ইরিনার হলুদ ঠান্ডা থেকে থাকলে দাদান খুব রাগ করবে তাই আরকি..
মুচকি হাসলো শ্রেয়া।বলল হুমমম!
কি হুমমম? চুল দিয়ে পানি পড়ছে চুল ভালো করে মুছো আর আদিবার কাছ থেকে হেয়ারড্রায়ার এনে চুল শুকিয়ে নাও।রেডি হও!বেরুবো বলেই দ্রুত বেরিয়ে গেলো জয়। শ্রেয়া দরজা আটকে ঘর কাঁপিয়ে একটা হাসি দিলো আর বলল সমাথিং সামথিং মিস্টার জয়!এ্যানি না ফ্যানি শাঁকচুন্নিটা ঘাড় থেকে নেমেছে মনে হয়?এই লোকটা আমার বর হবে।মুচকি মুচকি হাসছে শ্রেয়া।
.
.
.
.
.
জয় শ্রেয়া আদিবা রোদ ইরিনা সবাই এসেছে শপিং এ!রোদ এসে অব্দি আদিবার পেছনে চিপকে লেগে আছে!ইরিনা ফোনে কথা বলছে আর এ লেহেঙ্গা সে লেহেঙ্গা দেখছে।এদিকে জয়? সে রোদকে এনেছে তার সঙ্গী হিসেবে অথচ সে তার বোনের পেছনে সিকিউরিটি গার্ডের মতন হাঁটছে! জয় জানে আদিবাকে রোদ পছন্দ করে তবে রোদ সব সময়ই জয়ের সামনে খুব পার্ট নিয়ে আদিবার ব্যপারে বলে।যেন তাকে সহ্যই করতে পারে না।অথচ আড়ালে আড়ালে এত দূর…!
শ্রেয়া শুকনো মুখে সবার পেছন পেছন হাঁটছে!জয় হঠাৎ এদিকে ওদিকে তাকিয়ে দেখে তার আশেপাশে কেউ নেই!দাঁড়িয়ে পড়তেই দেখে শ্রেয়া নিচে দাঁড়িয়ে আছে।একটু এগিয়ে আস্তে করে বলল এটাকে লিফট বলে!উঠে এসো।একপা সাবধানে ফেলে উঠে শ্রেয়া কিন্তু উপরে আসতেই পড়ে যেতে নেয়।জয় খপ করে হাত ধরে নিজের কাছে নিয়ে আসে।
শ্রেয়া একটু ভয়েভয়ে বলে আমার কাছে কাছে থাকবেন একটু?আসলে খুব বড় মল তো ভয় লাগছে।আদিবাকেও পাচ্ছি না..
জয় একটু শক্ত করে শ্রেয়ার হাত ধরে হাঁটা ধরল।
আজ কেনো যেনো শ্রেয়ার হাতটা ধরতে খুব ভালো লাগছে তার।ইচ্ছে করছে হাতটা ধরে হাঁটতে। কিন্তু হঠাৎ এরকম ইচ্ছের কারণ কি?জানা নেই জয়ের।এই তো গত পরশুও এ্যানির সাথে সব ঠিকঠাক ছিলো!মেয়েটাকে সে ভালোবাসতো!এর আগে কতবার ব্রেকআপ করতে চেয়েছে এ্যানি। জয় একদিনের বেশি থাকতেই পারে নি।পাগল পাগল লেগেছে নিজেকে।কত কিছু করে এ্যানির রাগ ভাঙাতে হয়েছে।অথচ এবার দিব্যি দুদিন কাটিয়ে দিয়েছে।একটুও মনে পরে নি!কেনো?এর উত্তর ও নেই জয়ের কাছে।তবে এবার সে কঠিন আর মজবুত এক সিদ্ধান্ত নিয়েছে।এ্যানির সাথে এটাই ছিলো তার শেষ দেখা আর কথা!আর রাখবে না এ সম্পর্ক!মেয়েটাকে পাগলের মত ভালোবাসতো অথচ তার মাকে অপমান করেছে তার বোন তার সাথে কথা বলে না ওই মেয়ের জন্য!কি দুটো ছবি পাঠিয়েছে তাই যা নয় তাই বলে অপমান করেছে!এতটুকু বিশ্বাস ই যদি ওর প্রতি না থাকে তাহলে কিসের ভালোবাসা কিসের সম্পর্ক?
যদিও এ্যানিকে হয়ত মন থেকে সরাতে পারে নি।একটু সময় লাগবে!কিন্তু সরাতে পারবে।যেহেতু তাকে শ্রেয়াকেই বিয়ে করতে হবে নিশ্চয়ই এই মেয়েই সরিয়ে দিবে!
.
.
.
.
.
প্রায় দশমিনিট ধরে জয়কে ডাকছে শ্রেয়া।শরীরে ধাক্কা দিয়েও ডাকতে পারছে না।অথচ এদিকে আদিবা ডাকছে একটু দূর থেকে। তাকে যেতে বলছে আর জয় আদিবার হাত ধরে বসে আছে! হাঁটতে হাঁটতে হঠাৎ এক দোকানে বসে পড়লো।পড়লো তো পড়লোই দশমিনিটে ও হুশ নেই!
জয় ঘোর থেকে বেরিয়ে এদিকে ওদিকে তাকাতেই শ্রেয়া ধমকের সুরে বলল আদিবা ডাকছে আমায় দশমিনিট যাবৎ আর আপনি শুনছেনই না।হাতটাও ছাড়ছেন না।আমি বলেছিলাম পাশে থাকুন বলি নি এভাবে শিকলের মত হাত পেচিয়ে ধরে রাখুন!
অতিরিক্ত কথা বলো তুমি।চলো কই আদিবা…
জয় শ্রেয়াকে নিয়ে আদিবার কাছে গেলো। আদিবা শ্রেয়ার হাত ধরে পার্লারে ডুকে গেলো।ইরিনা ফেসিয়াল করতে বসে গেছে।আদিবা শ্রেয়াকে বসিয়ে দিয়ে নিজেও বসে গেলো।তিনজনকে একসিরিয়ালে বসিয়ে ফেইসপ্যাক দেয়া হয়েছে।থাই একটা ফাঁকা থাকায় রোদ একটা ছবি তুলে নিলো।জয়কে দেখাতেই দুজন হাসতে হাসতে গড়িয়ে পড়ছে প্রায়।
.
.
.
.
.
.
পুরো শপিংমল ঘোরা শেষ রোদ আর জয়ের!এখনো পার্লারের কাজ শেষ হয়নি। এবার জয় একটু রাগ রাগ করতে শুরু করলো!
ফোন বের করে আদিবাকে কল করতে যাবে ওমনি আদিবা শ্রেয়া বেরিয়ে এলো!
আদিবা শ্রেয়া জয় আর রোদের কাছে যেয়ে দাঁড়িয়ে বলল শ্রেয়া তোমার হবু স্বামীকে বলো দশ হাজার টাকা বিল হয়েছে তিনজনের!দিতে…
শ্রেয়া করুন চোখে তাকালো জয়ের দিকে! জয়ের দৃষ্টি শ্রেয়ার চুলে।রীতিমতো হা হয়ে তাকিয়ে আছে! চুলগুলো এমনিই হাঁটু অব্দি। একটু স্টেট করায় আরো লম্বা লাগছে।তবে ন্যাচারালেই ভালো লাগতো।
জয় কিছুটা ধমকের সুরে বলল চুলগুলোকে এরকম শনের মত সোজা করেছো কেনো?একদম ভালো লাগছে না!যাও ঠিক করে এসো!যদিও চুলগুলো বেশ সিল্কি আর স্মুথ লাগছে!তবুও জয় চায় না শ্রেয়া এরকম করে পুরো মল ঘুরুক!এতে চুলে বদনজর পড়তে পারে বলে সে ধারণা করে!লম্বা চুল যে তার দুর্বলতা তার নেশা।
শ্রেয়া ওনাকে বলে দাও এটা ওয়ানটাইম স্টেট!পানিতে ভিজালেই চলে যাবে!
শ্রেয়া আবারও আহত দৃষ্টিতে তাকালো জয়ের দিকে।
এদিকে রোদের সব কিছু মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে। রোদ বলল ওয়েট ওয়েট!ওর হবু স্বামী জয় মানে?বিয়ে তো হচ্ছে ইরিনা আর ওর বিএফ রিমনের!আর তো তোমাদের বাড়ির আ..থেমে গেলো রোদ!
আশ্রিতা!হ্যা ভাইয়া আমি ওনাদের বাড়ির আশ্রিতা!আসলে..শ্রেয়াকে পুরোটা শেষ করতে না দিয়ে আদিবা বলল শ্রেয়া ভাবি হবে বলে ভেবো না তুমি আমার বড়।কষিয়ে দিবো একটা!আর রোদ ভাইয়া তোমায় এসব কে বলেছে?তুমি শ্রেয়াকে কি করে চিনো?
জয়ই তো পরিচয় করিয়ে দিলো!
উনিই তোমাকে এসব বলেছে তাই না?বলবে নাই বা কেন যার বিয়ে ঠিক থাকা সত্বেও মেয়ে নিয়ে বাড়ি আসে।গার্লফ্রেন্ড পোষে সে এর চেয়ে ভালো আর কিই বা বলতে পারবে।
জয় মাথা নিচু করে আছে!
ওই টাকা পয়সা কিছু আনছো নাকি খালি পকেট নিয়ে দৌড়ে চলে আসছো?আদিবা কপট রাগ দেখিয়ে রোদকে জিজ্ঞেস করল!
এনেছি!পকেট থেকে টাকা বের করে আদিবার হাতে দিতে নিলেই জয় শ্রেয়াকে টাকা ধরিয়ে দিয়ে বলে নাও তোমার ননদীনিকে দাও।আর তাকে বলো আমি সব ব্রেকআপ করে ফেলেছি!আর এত বিয়ে বিয়ে করে যে সব কিছু মাথায় তুলছে আমায় কিন্তু এখনো বিয়ের ব্যাপারে কেউ কিছু বলে নি!
আদিবা মুখ বেকিয়ে চলে আসলো!
মাহমুদ ভিলায় বিয়ের উৎসবে শাড়ি লেহেঙ্গা সবসময় বাড়ি থেকেই পছন্দ করা হয়!লোক যায় শাড়ি লেহেঙ্গা নিয়ে বাড়িতে।সেখান থেকে সবাই নিজের পছন্দ মতো কিনে।তাই ইরিনা বিয়ের লেহেঙ্গা ছাড়া আর কিছু কিনে নি!জুয়েলারি তো মা এনেছেনই আর ও বাড়ি থেকেই দিবে।আর আদিবা টুকটাক অর্নামেন্টস কিনলো আর শ্রেয়াকে কিনে দিলো!
একজোড়া নুপুরে পকেট ভর্তি করলো জয় সকলের আড়ালে!
রোদ একটা আংটি সবার সামনেই আদিবা পরিয়ে দিলো। আর বললো এরা তোমার হাতেই মানাবে!শ্রেয়ার একটু মন বলল ইসস এমন যদি আমাকেও উনি কিছু পরিয়ে দিতো!সে কি জানতো তার কপালেও কিছু জুটতে চলেছে..!
সেদিনের মত কেনাকাটার পাট চুকিয়ে ডিনার করে বাড়ি ফিরল সবাই!বাসায় যেয়ে সব ব্যাগপত্র রেখে যে যার ঘরে চলে গেলো।বড়রা নিজেরাই বের করো দেখলো কে কি শপিং করেছে।
.
.
.
.
.
রোদ জয়ের ঘরে! শুয়ে শুয়ে ভাবছে কি করে একটু কথা বলা যায় আদিবার সাথে!অনেক বুদ্ধি এটেও কিছুতেই কিছু হলো না।সব বুদ্ধিতে ঠান্ডা পানি ঢেলে দিলো আদিবা।টেক্সট করে জানালো কোনো ভাবেই তার সাথে দেখা বা কথা বলার চেষ্টা যেন না করে।সে খুব ক্লান্ত। এখন ঘুমাবে!
নিরাশ হয়ে কম্বলে মাথা ডুকিয়ে শুয়ে রইলো রোদ।অন্যদিকে একটি নির্ঘুম রাত কাটিয়ে দিলো জয়!কারন??জানা নেই তার…!
চলবে_
#নিস্তব্ধ_প্রেমাবেগ
#পর্ব_১২
#লেখায়ঃস্বর্ণালি_আক্তার_শ্রাবণ
১
বাড়ি ভর্তি লোক!সকাল থেকেই আত্মীয় স্বজন আসা শুরু করে দিয়েছে!
চন্দ্র সরকার!কাপড়ের ব্যাগ সহ স্যাক্রেটারীকে নিয়ে এসেছেন!ঝর্ণা বেগম মাথায় কাপড় টেনে তাকে আদাব জানিয়ে সোফায় বসতে বললেন!
তিনি বেশ আয়েশ করে বসে ঝর্ণা বেগমকে বললেন দিদিমা জল হবে?
জ্বি বলেই ঝর্ণা বেগম রান্না ঘরের দিকে ছুটলেন।
আদিবা ফেসবুকিং করতে করতে সিঁড়ি ধরে নিচে নামছিলো!চন্দ্র সরকারকে দেখে চিৎকার করে বলল দাদু আপনি এসেছেন?
যেয়ে আদাব বলে পাশে বসল।ততক্ষণে ঝর্ণা বেগম পানি নিয়ে এসেছেন।তিনি পানি পান করে গ্লাস রাখতে রাখতে বলল দিদু ভাই আর কেকে শাড়ি কাপড় নিবে।ডাকো..!ঘন্টাখানিক পর আরেক বাড়ি অর্ডার আছে।
আচ্ছা বলেই আদিবা ছুটে শ্রেয়ার ঘরে গেলো।জয়ের শপিং করে দেয়া ড্রেসগুলো বিছানায় মেলে বসে আছে শ্রেয়া।এতটুকুন বয়স অব্দি কখনো ঘাগড়া(লং স্কার্ট) টি-শার্ট-টপস পড়ে নি ও!আজ এসব দেখে চোখ বেড়িয়ে আসার উপক্রম!আদিবাকে তো কতই পড়তে দেখে কিন্তু ওর পড়তে হবে ভেবে কেমন যেন লাগছে।এক হাতে মাথা চুলকাচ্ছে আরেক হাত গালে দিয়ে পা মেলে বসে আছে।
আদিবা ঠাসস করে দরজা খুলে হুড়মুড় করে ঘরে ডুকল।শ্রেয়া চমকে পিছু তাকালো।কিন্তু আদিবাকে দেখে আগের মতই বসে রইলো।
কি হয়েছে আমার ভাবিজানের!
আদিবার মুখে ভাবি শুনে ভ্রু কুচকে তাকালো শ্রেয়া।এগুলো আমি কি করে পড়বো আদিবা?
কেন হাত দিয়ে পড়বে।
আদিবা বি সিরিয়াস…
উফফ সরকার বস্ত্রালয় থেকে সরকার দাদু আসছে।জলদি চলো!
বলেই বিছানা থেকে একটা ঘাগড়া টি-শার্ট নিয়ে শ্রেয়ার হাতে দিলো।ঠেলেঠুলে ওয়াশরুমে পাঠালো।
.
.
.
.
.
আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে ঘুরে ঘুরে দেখতে লাগল শ্রেয়া।আদিবা সব জামা কাপড়গুলো ভাজ করে আলমারিতে তুলছিলো। শ্রেয়াকে এরকম ভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে গলায় একটা ওড়ানা দিয়ে বলল বাকি জামা কাপড় গুলো তুমি গুছিয়ে নিও।এখন চলো।
বা হাত ধরে টানতে লাগল।
আদিবা চুল আঁচড়াতে ভুলে গেছে।
দাঁড়াও ওয়েট।হাত দিয়ে চুলগুলোকে ঠিক করে খোঁপা করে দিলো!
হাত ধরে নিয়ে বসালো সোফায়।ওরা আসতে আসতে ইরিনা,রেনু বেগম।ইরিনার ফুপি মামী ঝর্ণা বেগম এবং তার বান্ধবী সাজু শেখ সবাই শাড়ি দেখতে শুরু করে দিয়েছেন!
শ্রেয়াকে দেখেই সাজু শেখ শাড়ি থেকে মুখ তুলে শ্রেয়ার মাথায় হাত বুলিয়ে বলল বাহ কি মিষ্টি মেয়ে..
কি হয় তোর ঝর্ণা?
ঝর্ণা বেগম আমতা আমতা করে বলল আমার শ্বশুরের বন্ধুর নাতনি।জয়ের হবু বউ এটা বললে যে এখন হুলুস্থুল কান্ড ঘটবে তা বেশ ভালো করে জানেন তিনি।তাই চেপে গেলো।
বাহ খুব ভালো!তা তোমার নাম কি আম্মু?
জ্বি আন্টি শ্রেয়া রহমান দিহা।
বাহ নামটাও সুন্দর!ঝর্ণা আমার ছেলের জন্য এমনই একটা মেয়ে খুঁজছি আমি!ওনার দাদার এড্রেসটা দিলে যোগাযোগ করতে পারতাম।
উপস্থিত সবাই তার দিকে তাকালো।আদিবা বিরক্তি নিয়ে বলল কিসের মধ্যে কি!আন্টি শ্রেয়াকে আমার ভাইয়ের জন্য পছন্দ করে রেখেছি।
ওহ আচ্ছা! সরি!আসলে..
আসলে আপনি জানতেন না তাই তো।এখন তো জেনেছেন তাহলে শাড়ির দিকে মনোযোগ দিই আমরা?
সাজু বেগম আদিবার কথায় কিছুটা রাগ হলো হয়ত।গম্ভীর হয়ে শাড়ি দেখতে লাগলো।
ডেকোরেশনের লোকের সাথে ফোনে কথা বলতে বলতে যাচ্ছিলো জয়।সাজু আন্টির কথাগুলো তার কানে গেলো।ফোনটা নামিয়ে তীক্ষ্ণ নজরে তাকালো শ্রেয়ার দিকে।আগের থেকে অনেকটা সুন্দর ফর্সা হয়ে গেছে।ডান গালে কানের সামনের চুলগুলোর দিকে একটা বড় তিল!কয়েকটা চুল সামনে দুপাশে আর বাকিগুলো খোঁপায় গোঁজা! নাহ মেয়েটা অতটাও খারাপ দেখতে না।হয়ত তার মত ফর্সা না তবে খারাপ না।খোলা চুলে বেশ লাগে।
জয়ের ধ্যান ভাঙল শ্রেয়া আদিবার চেঁচামেচিতে। দুজন এক লেহেঙ্গা নিয়ে টানাটানি করছে আর হাসছে।মুচকি হেসে চলে গেলো জয়!
.
.
.
.
.
পুরো বাড়ি ছুটছে আদিবা শ্রেয়া!শ্রেয়ার হাতে একটা লেহেঙ্গা! শ্রেয়া বলছে না এটা আমি পড়বো আদিবা বলছে না আমি!
একটু দূরে দেয়ালে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে একজন ব্যক্তি তাকিয়ে আছে ওদের দিকে!
চেঞ্জ করতে নিজের ঘরে গিয়ে ছিলো জয়।চেঁচামেচি শুনে বেরিয়ে আসে।ওদের দৌড়াদৌড়ি দেখে হাসতে শুরু করলেও সিফাতকে একটু দূরে দাঁড়িয়ে শ্রেয়ার ছবি তুলতে দেখে বেশ রেগে গেলো জয়।সিফাত ইরিনার কাজিন সেই সূত্রে ওর ও কাজিন।শ্রেয়া বলে এক ধমক দিলেই দুজন দাঁড়িশে পরে।কি হচ্ছে এসব।জয়ের ধমকে তিনজনই চুপচাপ।
এখনো তোমরা ছোট নও।ঢং ঢং করার কি হইছে শুনি?কাপড় কি এই একটাই শহরে?
আদিবা ভ্রু কুচকে শ্রেয়ার হাত থেকে খপ করে লেহেঙ্গাটা নিয়ে হনহন করে সিঁড়ি ধরে নিচে চলে গেলো।শ্রেয়া চলে আসতে নিলেই স্ট্রিকটলি বলল দাঁড়াও! তারপর সিফাতের কাছে যেয়ে হাত থেকে বলল ও তোর হবু ভাবী হয়!কারো অনুমতি ছাড়া পিক তুলতে নেই সেই শিক্ষা পাস নি?মোবাইল থেকে অলফোল্ডার ডিলিট দিয়ে ফোনটা হাতে দিয়ে দিলো।শ্রেয়াকে টেনে নিজের ঘরে নিয়ে গিয়ে দরজা আটকে দিলো।বোকা বনে তাকিয়ে রইলো সিফাত।
নিজের লিমিট ক্রস করে ফেলো না।ভুলে যেও না এবাড়িতে তোমার অবস্থানটা কোথায়!যার বিয়ে তার হুশ নাই তোমার তাহলে ঘুম নেই কেন?আমার বোনের না হয় কাজিন তোমার কি?
যখন তখন তোমাকে যেনো সবার মাঝে না দেখি!হলুদেও না!এত আহামরি কিছু না তোমার জন্য!না তোমার বিয়ে না তোমার কোনো রিলেটিভের!কারো বিরক্তির কারণ হও কেনো বারবার?ভদ্রতার খাতিরে একটা ড্রেস পড়ে হলুদে থাকলেই তো হলো!এত ঢংয়ের কি আছে!আর সারাদিন এরকম হাসতে থাকো কেন?তোমাদের গ্রামে বুঝি সবাই এরকম সারাক্ষন হাসতেই থাকে?কি ভাবো হাসলে তোমায় খুব সুন্দর দেখায়?মোটেও না ওই গ্যাজ দাঁতটা দেখা যায় আর পুরো জোকার জোকার লাগে।একদম এরকম সারাক্ষন হাসবে না!চুল গুলো খোলা রেখেছো কেনো?সবাইকে দেখাচ্ছো তোমার কত লম্বা চুল?আর কারো এরকম নেই?এটা তোমার ভুল ধারনা!চুলগুলো পাড়লে বেঁধে রাখো।তাহলে খাবারে চুল কম পাওয়া যাবে। যাও ঘরে যাও!
শ্রেয়া চুপচাপ ঘর থেকে বেরিয়ে গেলো।জয়ের মুখের উপর কতকিছুই না বলতে চেয়েছিলো।কিন্তু পারলো না।ওর অবস্থানটা যে বারবার চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয় জয়!নাহ এবার তাকেই পরিবর্তন হতে হবে!ভুলে গেলে চলবে না তার অবস্থান টা কোথায়..বিয়ে হবে কিনা তার ওতো নিশ্চয়তা নেই!কেনই বা এতো কথা শুনতে যাবে সে!এর চেয়ে নিজেকে গুটিয়ে নেয়াই ভালো।
নিচে আসতেই আদিবা ওই লেহেঙ্গাটা শ্রেয়ার হাতে দিয়ে বলল আমি তো দুষ্টামি করছিলাম গোল্ডেন আর ব্লু কালারটা তোমায় মানাবে এটা তুমি বিয়ের দিন পরো।আমি গোল্ডেন আর গ্রীন কালারটা পড়বো!
না আদিবা তুমি..
আহ শ্রেয়া এটা আমি নিবো না।তুমি দিলেও না।কারন রোদ ভাইয়ার গ্রীন কালার পছন্দ! আর আমিও ওনার পছন্দ সই ড্রেস পড়তেই কমফোর্ট ফিল করি!
মুচকি হাসলো শ্রেয়া।লেহেঙ্গাটা নিয়ে নিজের ঘরে চলে গেলো।
২
সারাদিনে একবারের জন্যও শ্রেয়াকে চোখের সীমানায় দেখে নি জয়।হয়ত তার কথায় হার্ট হয়েছে।এভাবে বলা তার ঠিক হয়েছে কিনা জানে না তবে ভুল হয়নি।এভাবে দৌড়ানোর কি আছে?বড় হয়েছো তো নাকি!তার বোনটাও কম না!
দুদিন অফিস যাবে না জয়।নিজেদের ফ্যাক্টরি সমস্যা হবে না!আকাশ আহমেদ ফুল কিভাবে কিভাবে সাজাবে তা বলে দিচ্ছেন!ইরিনার বাবা লাইটিংএর ব্যাপারটা দেখছে!
জয়ের দাদান আর মা সব রিলেটিভস অফিসের স্টাফ আর সবার বন্ধুদের মধ্যে কাদের ইনভাইট করা বাকি আছে কাদের কাছে কার্ড পৌঁছায় নি তাই দেখছে।আর নোট করছে।
ইরিনা ফোনে কথা বলছে আর পুরো বাড়ি ঘুরে বেড়াচ্ছে। আদিবা নখে নেইলপলিশ লাগিয়ে ফুঁ দিচ্ছে!বাকিরা নিজেদের মত কাজ করছে ঘুরছে!
এক মিনিটে চারদিকে চোখ বুলিয়ে এসব পর্যবেক্ষন করলো জয়।সবার চোখের আড়ালে শ্রেয়ার ঘরে উঁকি দিলো জয়।কই শ্রেয়া তো নেই!এদিক সেদিক তাকিয়ে খুঁজলো!কল আসতেই বাহিরে চলে গেলো বক্সে আনতে!
.
.
.
.
.
দুজন কাজের মহিলা এসেছেন।বিয়ের একয়দিন কাজ করবে।এত মেহমান তিন বেলার রান্না। মামনি একটা পেরে উঠবেন না।শ্রেয়া এতক্ষণ রান্না ঘরেই কাজ করছিলো। সন্ধ্যা হয়ে এসেছে প্রায়।মাগরিবের আযান হবে।কিছুটা ঠান্ডাও পড়ছে।শ্রেয়া কাজ সেরে নিজের ঘরে চলে গেলো।হাতমুখ ধুয়ে দরজা আটকে বই নিয়ে বসলো।সবার সাথে আড্ডা দিতে ইচ্ছে হলেও জয়ের কথা মনে পড়তেই কিছুটা হাসলো শ্রেয়া।এ কথাই মনে রেখেছে সে নিজের অবস্থানটা ভুলে গেলে চলবে না!
চোখের বালি বইটা নিয়ে পড়তে লাগলো!আটটা বাজতেই আদিবা এসে নক করলো দরজায়।শ্রেয়া আদিবার কন্ঠ শুনে দরজা খুলে দিতেই আদিবা বলল শ্রেয়া আজ আমার ঘরে থাকতে হবে তোমায়!বাসায় অনেক মেহমান এসেছে তো আর ঠান্ডা ও পড়ছে তাই তোমার ঘরটা লাগবে!
আচ্ছা সমস্যা নেই। আমি চলে যাবো।
না আসলে মুরব্বিরা থাকবে তো তাই এখনি যেতে হবে।ওনারা বিশ্রাম নিবে!
বইটা রেকের উপর রেখে মাথায় ওড়না পেচিয়ে বললো চলো!
একবারে খেয়ে নিয়ে আদিবার ঘরে শুতে চলে গেলো শ্রেয়া।আজ তার বাড়ির সবার কথা খুব মনে পড়ছে।দম বন্ধ লাগছে খুব!!
আদিবা বারান্দায় বেতের চেয়ারে বসে ফোনে কথা বলছে।এদিকে না চাইতেও খুব কান্না পাচ্ছে শ্রেয়ার।
রাত বারোটার সময় ঘরে আসে আদিবা।শ্রেয়ার শরীরে কম্বল টেনে দিতে গিয়ে দেখে ওর শরীরটা কেঁপে উঠছে।টেনে উঠিয়ে বসায়!কাঁদছো কেনো শ্রেয়া?
কাঁদতে কাঁদতে হিচকি তুলে ফেলেছে!তবুও বলল মা দাদুর কথা খুব মনে পড়ছে..
শ্রেয়াকে পানি খায়িয়ে দিয়ে নিজের কোলে মাথা রেখে হাত বুলিয়ে দিতে লাগলো আদিবা।কেঁদো না পাগলি!আমরা আছি না!আমরাও তো তোমার আপন বলো?ঘুমাতে চেষ্টা করো ভালো লাগবে!
হাত বুলিয়ে দেয়ায় ঘুমিয়ে পড়লো শ্রেয়া!আদিবাও ওভাবেই ঘুমিয়ে পড়লো।হঠাৎ ফোনের বাইব্রেশনের শব্দে চমকে উঠলো।তাকিয়ে দেখলো শ্রেয়া উঠেছে কিনা!নাহ ওঠে নি!ফোনে হাতে নিয়ে দেখে জিসান!
ঘাবড়ে যায় আদিবা।ফোন সাইলেন্ট করে দূরে রেখে দেয়!তারপর শ্রেয়ার মাথাটা বালিশে রেখে নিজেও ঘুমিয়ে পড়ে।
চলবে_