নীলাম্বরীর_প্রেমে পর্ব – ৩

নীলাম্বরীর_প্রেমে পর্ব – ৩
#Tuhina pakira

সারা রাস্তা স্পর্শ হেসে গেছে । কথায় কথায় হাসির কারণ কাদা মেখে আয়ুকে বেশ মানিয়েছে । আর আয়ু প্রতিবারই কাঁদো কাঁদো চোখে ওর দিকে তাকিয়ে ছিল । যদি স্পর্শের এই আয়ু বেচারিকে দেখে একটু কষ্ট হয় । বাড়ির সামনে আসতেই আয়ু কাউকে দেখে থেমে গেলো । স্পর্শ ওকে থেমে যেতে দেখে বললো ,

-” বাড়ির সামনে এসে কী পা ব্যথা করছে নাকি ?”

আয়ু কিছু না বলে স্পর্শকে সামনে দেখতে ইশারা করলো । স্পর্শ সেই দিকে তাকিয়ে খেয়াল করলো আয়ুদের পাশের বাড়ির 4 বছরের বাচ্চা তিশা ওর ঠাম্মার সাথে নিজেদের বাড়ির উঠোনে দাঁড়িয়ে রয়েছে । সম্ভবত তিশার ঠাম্মা তিশাকে বাড়ির ভিতরে যাবার জন্যে ডাকছে । কিন্তু তিশা যাবে না বলে চুপ করে দাঁড়িয়ে রয়েছে । তিশা জানে বাড়ির ভিতর গেলেই ওর মা নীলিমা ওকে পড়তে বসাবে । আর ওর সবসময় পড়তে ভালো লাগে না ।

-” আরে ওটা তো তিশা বুড়ি । চল দেখি ও কী করছে ? ”

-” না যাওনি । ”

– স্পর্শ ভ্রু কুঁচকে বললো, ” কেনো যাবো না কেনো ?

-” না যাবে না । ও আমি বলতে একেই পাগল । ও আমাকে দেখলেই ছুটে আসবে । আর আমার এই কাদা মাখা অবস্থা দেখে সবাইকে বলবে ‘ জানো আয়ু দি কাদা মেখে ভূত হয়ে গেছে । ‘ যা আমার একদম ভালো লাগবে না । ”

-” তো তুই কী চাস আমি বাড়ির সামনে এসে এখানে দাঁড়িয়ে থাকবো । আর মশার কামড় খাবো । ”

-” আমার জন্যে এইটুকু সহ্য করতে পারবে না স্পর্শ দা । আচ্ছা তুমি যাও আমি পরে আসছি । ”

কথাটা বলে আয়ু চোখ সরিয়ে নিলো স্পর্শের চোখের থেকে । তিশার দিকে তাকিয়ে রইল । স্পর্শ আয়ুর দিকে বাঁকা হেসে তাকিয়ে রইল ।

-” আচ্ছা আমি দাঁড়াচ্ছি । তুই হলি পুচকি একটা ছোট্ট মেয়ে । তোকে কী আমি একা ছাড়তে পারি বল । ”

স্পর্শের নর্মাল কথাটা আয়ুর কাছে কেনো যেনো খুব কিউট লাগলো । এতো কিউট করে কে বলে ? ইশ আয়ুর তো লজ্জা লাগছে ।

-” ওই চল তিশা চলে গেছে ।”

স্পর্শের কথায় আয়ুর হুশ ফিরল । নিজের নিজের মাথায় টোকা মেরে মনে মনে বললো , ” কী সব ভাবিস । আয়ু পাগল হোস না । স্পর্শের নীলাম্বরী আছে । সে #নীলাম্বরীর_প্রেমে আবেশিত । তুই ওর ভালোবাসা না । তুই হলি আয়ু । স্পর্শের আয়ু না কেবলই আয়ু । আর স্পর্শের প্রতিবেশী । ”

নিজেদের বাড়ির সদর দরজার দিকে এগিয়ে গিয়ে আয়ু চারপাশটা দেখে নিল ভালোভাবে । কেউ নেই দেখে হাফ ছেড়ে বাঁচলো । আয়ু নিজের বাড়ির দরজার কাছে এগোতেই স্পর্শের ডাকে থেমে গেলো ।
-” আয়ু একবার শোন । ”

স্পর্শের কাছে এগিয়ে এসে দাঁড়ালো আয়ু ।
-” কিছু বলবে ?

– ” হ্যাঁ ।”

-” তাড়াতাড়ি বলো । কেউ আমাকে এই অবস্থায় দেখলে যে কী হবে ? ”

-” সে উপরওয়ালাই জানে । নে এখন চোখ বন্ধ করতো । যখন বলবো চোখ খুলবি । তোর জন্যে কিছু আছে । ”

স্পর্শের কথায় আয়ুর মুখ খুশিতে ভরে উঠলো । স্পর্শ নিশ্চয় চকলেট দেবে । আয়ুর খুশি দেখে কে । তাড়াতাড়ি ও চোখ বন্ধ করে ফেললো । এইদিকে স্পর্শ আয়ুর কাদা লাগা কপালের দিকে তাকিয়ে আয়ুর চোখের দিকে তাকিয়ে ভাবলো , ” আয়ুর মায়া ভরা চোখ অপরূপ । ঠিক ওর নীলাম্বরীর মতো । ”

-” চোখ খোল আয়ু । ”

আয়ু মুখে এক ঝিলির রেখা ফুটিয়ে চোখ খুলতেই স্পর্শ ফটাফট ওর কটা পিকচার ক্লিক করে নিলো । আর আয়ু হতবুদ্ধি হয়ে ওর দিকে তাকিয়ে বললো ,
-” এটা কী হলো ?

-” কী আবার হবে তোর ফটো শুট হলো । চল যা এবার বাড়ি যা । অ্যান্টি তোকে এই অবস্থায় দেখলে তার বিখ্যাত স্কেল থেরাপি দেবে । ”

স্পর্শের শেষের কথায় আয়ুর বেশ ভয় লাগলেও প্রথম কথার প্রেক্ষিতে বললো ,
-” আমি কী তোমাকে গলা জড়িয়ে ধরে বলেছি , আমার ফটোশুট করে আমাকে উদ্ধার করো । ”

-” ইশ কথার কী ছিরি । তুই কেনো আমার গলা জড়িয়ে ধরবি ? আমার গলা জড়িয়ে ধরবে নীলাম্বরী । অবশ্য সে না ধরলে অসুবিধে নেই আমিই না হয় তার গলা জড়িয়ে ধরবো । আর তাছাড়া তোকে বিশ্বাস নেই । দেখা গেলো গলা জড়িয়ে ধরতে গিয়ে গলা টিপে ধরবি । তখন আবার না আমি অক্কা পাই । ”

আয়ু কয়েক পলক ফেলে স্পর্শকে দেখে নিলো । ওর স্পর্শ দা হাসছে। বেশ লাগছে তাকে । ফর্সা মুখে টোল পড়া হাসি , তার উপর আবার পাঞ্জাবি স্টাইলে চাপ দাড়ি রাখার চেষ্টায় থাকায় গোঁফের কাছে হালকা হালকা দাড়ি শেফ করেছে । কপালে পড়ে থাকা ঘনও চুলগুলো বাতাসে উড়ছে । স্পর্শ মাঝে মাঝে থেমে থেমে হাসছে । আয়ুকে নিজের দিকে পলকহীন তাকিয়ে থাকতে দেখে স্পর্শ ওকে বললো ,
-” তোর পাশের বাড়ির তিশা হলো বুড়ি । আর তিশার পাশের বাড়ির আয়ু হলো কাদা বুড়ি । নামটা ভালো না ?”

আয়ু দুষ্টু হেসে বলল ,
-” খুব ভালো । ”

আয়ু নিজের হাতের দিকে তাকিয়ে দেখলো হাতের লাগা কাদা শুকিয়ে গিয়েছে । কিন্তু হাতটা বেশ জ্বালা করছে । মনে তো হয় কেটে গেছে । কাদা থাকায় ঠিক বুঝতে পারে নি । স্পর্শ দা কে তা বলা যাবে না । আগে বদলা নিতে হবে ওকে । আয়ু শাড়ির আঁচলটা হাতে ধরে স্পর্শের হাসিময় গালে লাগিয়ে দিয়ে বললো ,
-” আর আয়ুর সামনের বাড়ির স্পর্শ হলো কাদা মাখা বুড়ো । ভালো না ? ”

তাকে আর কে পায় । সে বাড়ির ভিতরে ছুটেছে । পাছে স্পর্শ ওকে হাতে পায় তো কী যে ওর অবস্থা করবে কে জানে ?

স্পর্শ আয়ুর কাণ্ডে কিছুক্ষণ ওর দিকে রেগে তাকালেও আয়ু কে ছুট চলে যেতে দেখে ওর দিকে তাকিয়ে রইল । তারপর নিজের কাদা মাখানো গালে পরম আবেশে হাত রেখে মুচকি হেসে বাড়ির ভিতরে চলে গেলো ।

আয়ু অতি সাবাধানতার সাথে বাড়িতে প্রবেশ করলো । আয়ুর বাবা এখন অফিসে , ভাই আর মাসতুতো বোন টিউশনে গেছে এটা আয়ু সিউর । কিন্তু মা ? নীচের তলায় কেউ নেই যেহেতু ওর মা নিশ্চিত স্পর্শদের বাড়ি গেছে মিমির সাথে আড্ডা দিতে । আয়ু প্রাণ ভরে নিশ্বাস নিলো । এতক্ষণ মনে হচ্ছিল মরে যাবে । বড়ো জোর বাঁচলো ।

নিজের ঘরের ভিতর ঢুকেই থমকে দাঁড়ালো আয়ু । এবার ওকে স্কেল থেরাপি থেকে কেউ বাঁচাতে পারবে না । স্বয়ং ঈশ্বরও না..

(চলবে )
{ বিঃ – বাকিটা কাল দেবো । আজ আর লিখতে পারছি না । ভীষন ঘুম পাচ্ছে । সকালে কিছু ব্যস্ততার জন্যে গল্প লেখা হয়নি । তাই এত দেরি হলো । ত্রুটি ক্ষমা করবেন । ভালো কিংবা খারাপ কেমন হয়েছে জানাবেন । হ্যাপি রিডিং }

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here