নীলাম্বরীর_প্রেমে পর্ব -৪
#Tuhina pakira
আয়ু ঘরে ঢুকে দরজা বন্ধ করে যেই না পিছন ফিরলো সঙ্গে সঙ্গে আঁতকে উঠল । বিছানায় বসে আয়ুর একটা বই দেখছিল আয়ুর মা রাহী । দরজা বন্ধের শব্দে আয়ুর দিকে তাকিয়ে রীতিমত মাথায় রাগ উঠে গেল । ওর নতুন শাড়িটা অর্ধেক কাদায় মাখামাখি । আয়ু তো ওর মা কে দেখে ঢোক গিলছে । আজ ওর কী হবে ? বাবাও এখন বাড়িতে নেই যে বাঁচাবে । আর তাছাড়া ওকে যে কেউ বাঁচাবে সেই পরিস্থিতিই তো নেই । নিজেই তো ঘরের দরজা বন্ধ করে দিয়েছে ।
— ” আয়ু তুই এই শাড়িটা পড়েছিস কেনো ? ”
মায়ের রাগী গলায় বলা কথা শুনে ঢোক গিললো । আমতা আমতা করে বলল,
-” মা আসলে আমি ….”
-” ঠাস করে এক চড় মেরে তোমার গাল লাল করে দেবো একেবারে । এতই যখন শাড়ি পড়ার শখ তো বাবাকে বলবি তোকে যেনো আর জামা কিনে না দেয় । সবসময় শাড়ি , আর আমার শাড়িটার কি দশা । তোকে আজ ……”
পড়ার টেবিলে থাকা স্টিলের স্কেলটা নিয়ে এলো রাহী । আয়ুর ভয়ে চোখ দিয়ে জল পড়ছে ।
-” মা.. মা এবারের মতো ছেড়ে দাও । আমি আর কোনোদিন এই কাজ করবো না । মা মেরোনা প্লিজ।”
-” তোকে অনেক ছাড় দিয়েছি । আজ আর না । সারাদিন তুমি টইটই করে ঘুরছো । যেটুকু কেবল স্কুল, পড়তে যাও । আর পড়াশোনা তো মাথায় উঠেছে । ভেবেছো আমার তো মাধ্যমিক হয়ে গেছে, আমি ফ্রি । তাই না । ”
-” মা আমি পড়িতো । ”
-” কতো তুমি পড়ো তা আমি জানি । কেবল পড়তে যাবার পড়া গুলো করেই তুমি বই খাতা গুছিয়ে ফেলো । হাত পাত তাড়াতাড়ি । ”
মায়ের রাগী মুখের দিকে ছলছল চোখে তাকিয়ে আয়ু সামনে হাত বাড়িয়ে দিলো । আয়ুর মা স্কেল দিয়ে সপাটে মারতেই আয়ু ব্যথায় হাত গুটিয়ে নিলো । ওর হাত ভীষন জ্বলছে । স্টিলের স্কেলের কোণাটা ওর হাতে ব্যথা করা যায়গায় লেগে আরও জ্বলছে ।
আয়ুর মা আবারও মারতে উদ্যত হতেই বাইরে থেকে আয়ুর মাসতুতো বোন দ্রুতি “মাসিমণি বলে ডেকে উঠলো ।
-” তোকে আমি পড়ে দেখছি । যা গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নে । ”
আয়ুর মা চলে যেতেই আয়ু নিজের হাত ভালো করে দেখলো । স্কেলের কোণায় হাত কেটে গেছে । কাদা লেগে থাকায় ঠিক বোঝা যাচ্ছে না । ও কেঁদে ফেলল । তারপর ফ্রেশ হতে চলে গেলো ।
♠
-” কী রে আজ এতো তাড়াতাড়ি চলে এলি ? আর আয়ান কোথায় ? ”
দ্রুতি জল খাচ্ছিল । মাসির দিকে তাকিয়ে হাসলো । ছোটো থেকে ও এই বাড়িতেই থাকে । এখান থেকে 10 মিনিট গেলেই ওদের বাড়ি । বাড়িতে মা , বাবা ,কাকা কাকিমা,ভাই , বোন সবাই রয়েছে । দিনের বেলায় মাঝে মাঝে বাড়ি গেলেও আবার ও ফিরে আসে । ওর এইখানে থাকতেই ভালো লাগে । এই সবে ক্লাস 9 এ পড়ে ও ।
-” আজ স্যার কোথায় একটা যাবে তাই ছেড়ে দিয়েছে আমাদের । আর আয়ান আসছে পেন কিনছে । এই এলো বলে । ”
-” এই ছেলে নির্ঘাত আবার পেন খারাপ করেছে । বুঝিনা এক দিনে মানুষ কী করে পেন খারাপ করে । একটা পেন ও ওর এক দিনের বেশি চলে না । ”
দ্রুতি হেসে উঠলো । চুল থেকে ক্লিপটা খুলে হাত খোঁপা করার চেষ্টা করে বললো ,
-” আয়ু দি কোথায় মাসিমনি ? ”
-” কোথায় আবার ঘরে । আচ্ছা শোন ওকে ঘাটাস না । আজ মেরেছি বেচারি নির্ঘাত ক্ষেপে রয়েছে । তুই যা ফ্রেশ হয়ে আয় । আমি নীলাদের বাড়ি যাচ্ছি । আজ ওই বাড়িতে সকলের একটা পিকনিক আছে । একটু পড়ে তুই আয়ানকে নিয়ে চলে আসিস । আয়ু কে আমি পড়ে ডাকছি । ”
-” আচ্ছা ”
দ্রুতি নিজের ঘরের দিকে পা বাড়ালো । আয়ুর মা রাহী আর স্পর্শের মা নীলা দুজনেই বেস্ট ফ্রেন্ড । তাদের বাপের বাড়ি এক এলাকায় । তেমনি বিয়েও হয়েছে একদম সামনা সামনি বাড়িতে । আসলে নীলার বিয়েতেই আয়ুর বাবা,মা রাহী আর জয় এর দেখা । সেখান থেকেই তাদের বিয়ে । আরেক দিক দিয়ে আয়ুর দাদু তার আরেক মেয়ে দ্রুতির মা রুহির একই পাড়ায় বিয়ে দেন । যাতে মেয়েদের দূরে যেতে না হয় ।
♠
আয়ু নিজের ঘরের বারান্দায় মন মরা হয়ে বসে রয়েছে । একদিকে ও স্পর্শ দাকে পেলো না তার কষ্ট অপরদিকে ওর মা ওকে মারলো । হাতটা কেটে গিয়ে লাল হয়ে গেছে । ওর খুব কান্না পাচ্ছে । পাশেই তিশাদের অপর ঘর থেকে ওদের মা মেয়ের গলার স্বর পাওয়া যাচ্ছে । তিশার মা তিশাকে ABCD পড়াচ্ছে । আয়ু শুনতে পাচ্ছে তিশা বারবার আই ( I )কে এ ( A ) বলছে । তার উপর মাঝে মাঝে চিৎকার করে বলছে , ” আমি পড়বো না । আমি স্কুল যাবো না । ”
-” তুমি যদি স্কুল না যাও তবে তোমার বন্ধু হবে না । তখন কী হবে ?”
-” তুমি জানো না আমার রিমি বন্ধু আছে । আমি আর পড়বো না । ”
তিশার মা এবার ধুম করে তিশার পিঠে মারতেই তিশা ভ্যা করে উঠলো ।
আয়ু সবই শুনতে পেলো । মনে মনে বললো ,
-” মায়েরা একদম ভালো না । খালি আমাদের মারে । না না শুধু আমার মা । স্পর্শ দার মা খুব ভালো । স্পর্শ দাকে মারে না । খালি আমার মা খারাপ , খালি বকে । সবার মা ভালো । না না তিশার মা ও তো ভালো না তিশাকে মারে আমার মায়ের মতো।”
এইবার আয়ুর চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পড়লো । হাতে ফু দিয়ে জ্বালা কমানোর চেষ্টা করছিল ।
তখনই অপর দিকের বারান্দা থেকে কেউ ডেকে উঠলো ,
-” এই আয়ু কী হয়েছে হাতে ?”
স্পর্শকে দেখে আয়ু চোখের জল মুছে বললো ,
-” তোমাকে বলবো না । ”
স্পর্শ বারান্দার রেলিঙে হাত দুটো রেখে বেশ আয়েস করে দাঁড়ালো ।
– “ও মা নিশ্চয় মেরেছে ?”
আয়ু এবার ফ্যাচফ্যাচ করে কেঁদে ফেললো ।
-” আমার মা ভালো নয় । খালি মারে । আমি আর এখানে থাকবো না । ”
-” দূর পাগলি মা তো তোর ভালোর জন্যই মেরেছে । যে যাকে বেশি ভালোবাসে তাকেই তো মারে । ”
-” মা আমাকে ভালোবাসে ? ”
– ” হ্যাঁ বাসে তো । তুই না মায়ের বড়ো মেয়ে । তুই তো প্রথম মা বলে তোর মাকে ডেকেছিলি । তাহলে সব থেকে বেশি তো তোকেই ভালোবাসবে পাগলি ।”
-” তাইতো । ”
-” নে এবার বল হাতে কী হয়েছে ? ”
আয়ু হাত তুলে স্পর্শকে দেখালো । রাস্তার আলো , বারান্দার আলোয় স্পষ্ট বোঝা গেলো আয়ুর হাত কেটে গেছে ।
-” বাহ্ হাত ও কেটে ফেলেছিস । মলম লাগিয়েছিস?”
আয়ু মাথা নেড়ে না বোঝালো । স্পর্শ খানিক ক্ষণ তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে ওকে দেখে নিলো ।
– ” যা গিয়ে অয়েনমেন্ট লাগা আগে । তোর কাছে আছে ?”
– ” না , মা জানে । আমি মাকে বলছি । ”
– ” তোর মা আমাদের বাড়ি । আচ্ছা দাঁড়া । ”
স্পর্শ নিজের ঘরে গিয়ে অয়েনমেন্টটা নিয়ে আবার বারান্দায় ফিরে এলো । দুজনের বাড়ির মাঝের রাস্তাটা খুবই ছোটো । সহজেই আয়ু কে এটা ছোড়া যাবে ।
-” এই নে ক্যাচ কর । ”
স্পর্শ ছুড়ে দিতেই ওটা আয়ু ক্যাচ করতে গেলেও পারলো না । ওটা বারান্দা থেকে ছিটকে ঘরে চলে গেল।
স্পর্শ আয়ু কে রাগাতে বললো ,
-” তুই কিচ্ছু কর্মের না । ”
-” নিজে যেনো কতো কি পারে ঠিক মতো একটা ক্যাচ দিতেও পারে না । ”
আয়ু ভেংচি কেটে ঘরে চলে গেলো ।
(চলবে )
{ বিঃ – গতকাল কলেজ গিয়ে প্রচুর ক্লান্ত ছিলাম তাই আর গল্প লেখা হয়নি । তাই এত দেরি হলো । ত্রুটি ক্ষমা করবেন । ভালো কিংবা খারাপ কেমন হয়েছে জানাবেন । হ্যাপি রিডিং }