নীলাম্বরীর_প্রেমে Tuhina pakira পর্ব : ১৫

#নীলাম্বরীর_প্রেমে
Tuhina pakira
পর্ব : ১৫

সন্ধ্যা ৭ টা,

ঘরের দরজা, জানালা সব বন্ধ করে আয়ু ঘুমাচ্ছে। তখন স্পর্শ দের বাড়ি থেকে আসার পর নিজের ঘরে বসে ছিল। তারপর কখন যেন ঘুমিয়ে পড়েছে। পাশের কোনো একটা ঘর থেকে স্পর্শ, আয়ন,দিহান এর গলা পাওয়া যাচ্ছে। আয়ু আলেশী ভেঙে অন্য দিকে মুখ করে শুয়ে পড়লো। কিছুক্ষণ পর আয়ুকে না চাইলেও চোখ খুলতে হলো। চোখ খুলে চারিদিক অন্ধকার দেখে মাথাটা কেমন চক্কর দিয়ে উঠলো। স্বভাব গত চিৎকার করে বললো,

-” মা, ও মা তাড়াতাড়ি এসো। আমি অন্ধকারে তলিয়ে গেলাম।”

আয়ুর চিৎকারে পাশের ঘরের চাপা গুঞ্জন বন্ধ হলো। কিন্তু খানিক পড়ে আবার তাদের হাসাহাসি শুরু হলো। আয়ুর খুব রাগ হলো। পাশের ঘরের মানুষ গুলো কী তার কথা শুনতে পায়নি? আবারও ডাকতে গিয়েও থেমে গেলো। টেবিলের উপর আলো পড়ছে। আসলে আয়ুর ফোনে কেউ ফোন করেছে। আয়ু আস্তে আস্তে উঠে গিয়ে ফোনটা হাত বাড়িয়ে নিলো। ওর মা ফোন করেছে। আয়ু ফোনটা কেটে ফ্ল্যাশ লাইটটা জ্বালিয়ে নিজের ঘরের বোর্ডের দিকে এগিয়ে গেলো। ঘরের আলো জ্বেলে স্বস্তির শ্বাস নিলো। এমন না যে ওর অন্ধকারে ফোবিয়া আছে। কিন্তু অন্ধকারে প্রথমেই ওর মাথা চক্কর দিয়ে ওঠে। কিন্তু আস্তে আস্তে পড়ে ওই অন্ধকার ঠিকই ধাতস্থ হয়ে পড়ে। এইটা অবশ্য এই কয়েক মাস যাবত হচ্ছে। কিন্তু ও কাউকে বলেনি। এই সব নর্মাল ব্যাপার কাউকে না বলাটাই ভালো ওর কাছে।

ঘরের দরজা খুলে বাইরে আসতেই আয়ুর চোখ গেলো আয়ানের ঘরের দিকে। দরজাটা খোলাই আছে। তিনজনেরই গলার আওয়াজ পাওয়া যাচ্ছে। কিন্তু দরজা থেকে ও কাউকেই দেখতে পায়নি। দুখানা, তিনখানা সিঁড়ি বাদ দিয়ে লাফিয়ে লাফিয়ে আঠারো টা সিঁড়ি আয়ু ছয় পা ফেলেই নেমে গেলো। এটা ওর কাছে একটা খেলা বলা যেতে পারে। যার নাম হলো খরগোশ চলন। আয়ুর আবার খরগোশ বেশ ভালো লাগে। তবে ভয়ও হয়, ওরা যা তুলতুলে ওদের ধরতে গেলে যদি লেগে যায়। তাই খরগোশ থেকে ও দূরেই থাকে। ওর মাসি মানে দ্রুতির বাড়িতে একটা খরগোশ ছিল, সাদা ধবধবে। ওর নাম ছিল তুলতুল। দ্রুতি প্রায়ই ব্যাগে ভরে ওদের বাড়ি আনতো। সবাই ওকে কোলে নিতো। তবে আয়ুর ছিল আলাদা টেকনিক – ছোটো কোনো কাপড় কিংবা জামা কোলে পেতে তার পর তুলতুলকে কোলে নিতো। এতে তুলতুলের সফট গায়ে কিছুই হবে না বলে আয়ু মনে করতো। যদিও বা এখনও এটাই মনে করে। তবে তুলতুল আর নেই। বিড়ালে মেরে দিয়েছে।

আয়ু নীচে নেমে দেখলো, দ্রুতি একহাতে চায়ের ট্রে নিয়ে অপর হাতে পকোড়া নেবার চেষ্টা করছে।

-” কী রে কি করছিস তুই?”

আয়ুকে দেখে দ্রুতি যেনো আকাশের চাঁদ পেলো।

-” আয়ু দি তাড়াতাড়ি হেল্প কর প্লিজ। এইগুলো উপরে নিয়ে যাবো। ”

-” এই গুলো উপরে নিয়ে গিয়ে কী হবে?”

-” কী হবে মানে? আরে বাবা আড্ডা হবে চল।”

আয়ু সোফায় বসে টিভির চ্যানেল ঘোরাতে লাগলো।

-” আড্ডা হবে তো এখানে দাঁড়িয়ে কেনো? উপরে যা আমার অনেক কাজ।”

রান্নাঘর থেকে আয়ুর মা বলে উঠলো,

-” কী এমন কাজ মহারানীর জানতে পারি?”

-” কী কাজ মানে কি? আরে কাল শনিবার ভুলে গেলে। কলেজের পর আমাকে টিউশন পড়তে যেতে হবে। স্যারের পড়া গুলো তো করতে হবে তাইনা।”

-” তুই পড়ে তো একেবারে উদ্ধার করে ফেললি।”

আয়ু মুখ ফুলিয়ে ফেললো। এই মায়েদের বোঝা মুশকিল। যদি বলি আজ আমাকে পড়তে হবে তখন ও দোষ, আর না পড়লে তো কথাই নেই।

-” কী হলো যা পড়তে যা।”

-” হ্যাঁ হ্যাঁ , যাচ্ছি।

আয়ু যেতে উদ্যত হলেই আয়ুর মা বললো,

– ” যাবার আগে দ্রুতি কে একটু হেল্প করে দে। ও একা নিয়ে যেতে পারছে না।”

আয়ুর মা আবারও কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়লো। দ্রুতির
থেকে চায়ের ট্রে টা নিয়ে সিঁড়ি দিয়ে উঠে গেলো। দ্রুতিও ওর পিছনে চলে গেলো।

-” আমার মেয়েকে আমি পড়তে না বসলেও বকবো
না , আর বসলেও বকবোনা। ”

পিছন থেকে দ্রুতি বললো,

-” এখনও তো বিয়েই করলিনা। এর মধ্যে বাচ্চা। বাহ্, আয়ু দি দেখি ফ্যামিলি প্ল্যানিং ও করে ফেলেছে।”

-” ফেলেছি তো। আমার টুইন বাবু লাগবে। একটা ছেলে আর একটা মেয়ে। ”

আয়ু আর দ্রুতি আয়ানের ঘরে ঢুকলো। দিহান দ্রুতির দিকে তাকিয়ে বললো,

-” কার টুইন বাবু হবে বলছিস?”

আয়ু যে দ্রুতি কে থামাবে সেই সুযোগটা হলো না। তার আগেই দ্রুতি বলে উঠলো,

-” আয়ু দির। তবে এখন না ভবিষ্যতে।”

স্পর্শ চোখ গোলগোল করে আয়ুর দিকে তাকালো। কিন্তু আয়ু সেই দিকে তাকালো না। ওর এখন খুব লজ্জা লাগছে। এগুলো কি সবার সামনে বলে নাকি।

-” ঘুম থেকে উঠে যে মেয়ে বাচ্চাদের মতো চিৎকার করে তার আবার এই বয়সেই টুইন বাবু পালার শখ। বলিহারি শখ তোর। তোর বরের কপালে দুঃখ আছে বুঝলি। ”

স্পর্শের খোঁচা মারাটা আয়ুর পছন্দ হলো না। ওর টুইন বাবু পালার শখ তাতে ওর কী? আয়ু রাগী চোখে একবার দ্রুতির দিকে তাকালো। পরক্ষনেই এককাপ চা নিয়ে নিজের রুমের দিকে পা বাড়ালো।

-” ওই দিদি দাঁড়া রে। কোথায় যাচ্ছিস গল্পঃ করবো তো আয়। ”

-” ভাই তোরা গল্প কর। আমার কাজ আছে।”

আয়ু নিজের ঘরে গিয়ে চায়ের কাপটা টেবিলে রেখে ওয়াশ রুমে চলে গেলো। ঘুম ভেংগে চোখে মুখে জল না দিয়ে এক গ্লাস জল খেলেও যেখানে গা গুলায় কিছু মানুষ কী করে যে বাসি মুখে চা পান করে কে জানে?

কিছুক্ষণ পর ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে এসে আয়ু অবাক, সবাই ওর ঘরে বসে রয়েছে।

-” কী ব্যাপার সবাই এই ঘরে কেনো?”

-” বেশি না বকে বস তো তুই। ”

আয়ু বসলো না। স্পর্শের কথা শুনতে ও বাধ্য না। কিন্তু আয়ু কে নির্বিকারে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে স্পর্শ ওকে জোর করে ওর সামনে বসিয়ে দিলো।

-” আমি ভাবছি আমরা ছোটোরা একটা পিকনিক করবো। কেমন হবে?”

স্পর্শের কথায় আয়ু বাদে সকলে লাফিয়ে উঠলো।

-” দারুন হবে। কিন্তু কোথায় করবে? ”

-” করার জায়গার কী অভাব নাকি ছোটু ? অনেক জায়গাই আছে। কোথাও একটা করলেই হবে। ”

-” কবে করবি তবে স্পর্শ দা? ”

-” তিন , চার দিন দিন পর করলে কেমন হবে? আমি একবার পিমনির বাড়ি থেকে ঘুরে আসি। তারপর, অসুবিধা হবে?”

-” আরে স্পর্শ দা কী বলো ,অসুবিধা কিসের? যেই দিন বলবে সেইদিনই রাজি। কী বল আয়ু দি।”

আয়ু কিছু বললো না, চুপ করে বসে রইল। কিছুক্ষণের মধ্যেই সব প্ল্যান করে ওরা উঠে দাঁড়ালো। সবাই একে একে বেরিয়ে গেলেও গেলো না কেবল স্পর্শ। আয়ু স্পর্শের পাশের জানালার দিকে চোখ শক্ত করে তাকিয়ে রইল। কিন্তু স্পর্শের দিকে তাকালো না।

স্পর্শ আয়ুর পড়ার টেবিলের কাছে গিয়ে কিছু একটা করে বেরিয়ে গেলো। স্পর্শকে যেতে দেখে আয়ু গিয়ে দরজাটা দিয়ে পড়ার টেবিলে পড়তে বসলো। কিন্তু সামনের খাতায় কিছু লেখা রয়েছে দেখে আয়ু খাতাটা হাতে তুলে নিলো,

” ডিয়ার টুইন বাবুর মা,

তোর বরের কপালে সত্যিই খুব দুঃখ আছে। তবে সেই দিক দিয়ে আমি যদি তোর বর হই তাহলে তোর কপালে দুঃখ আছে।

ইতি-
টুইন বাবুর পাপা।।”

এই কাজটা স্পর্শের আয়ু খুব ভালো জানে। খাতার পাতাটা ছিঁড়ে নিয়ে মন্ড বানিয়ে স্পর্শের ঘরের বারান্দায় ছুঁড়ে মারলো।

-” যতসব বাজে ছেলে।”

(চলবে )
{ বিঃ : পর্বটা ডিলিট হয়ে যাওয়ায় দেরি হলো। এবং ছোটো হয়েছে। আরও লিখতে গেলে পোস্ট করতে দেরি হতো। পরেরটা বড়ো করে দেবো। আর একটা কথা, অনেকেই বলছেন আয়ুর তো অভিমান করা উচিত। স্পর্শের সাথে কথা না বলার কথা। এটা ঠিক । তবে কিছু মানুষ আছে যারা রাগ এর কথা বাদ ঠিক মতো অভিমান করতেও পারে না। তার কাছে এই যে আমি অভিমান করেছি সেটা বোঝাতে পর্যন্ত চায় না। কিন্তু গভীর রাতে ঠিকই মনে পড়ে। আমি আয়ু কে এই ভাবেই সাজাতে চাই। যেখানে অতীব দুঃখ থাকবে না। আনন্দ ময় একটা জীবন। তবে বাস্তবে এতো আনন্দময় জীবন হয়তো অনেকেরই হয় না। কিছু মানুষ সারা জীবন সুখের আশা করে দিন শেষে দুঃখ নিয়ে থাকে। কেউ বা জীবনে দুঃখ পাতাকে ছুঁয়েও ছোঁয় না। ভুল ক্ষমা করবেন । ভালো কিংবা খারাপ কেমন হয়েছে জানাবেন । হ্যাপি রিডিং }

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here