নীলাম্বরীর_প্রেমে Tuhina pakira পর্ব : ২০

নীলাম্বরীর_প্রেমে
Tuhina pakira
পর্ব : ২০

রাত ১০:১৭।।

স্পর্শদের বাড়ির পিছনের বাগানে গাড়িটা পার্ক করে রাস্তায় উঠে এলো স্পর্শ। ওর জন্যে আগে থেকেই দ্রুতি, দিহান, আয়ান দাঁড়িয়ে ছিল। মূলত স্পর্শই গাড়িটা পার্ক করার আগে ওদের রাস্তায় নামিয়ে দিয়েছিল। স্পর্শ আসতেই চারজনে হাঁটা ধরলো বাড়ির দিকে। স্পর্শ বাদে সকলের হাঁটার গতি একেবারে নেই বললেই চলে।

-” আচ্ছা কাল যে আমরা পিকনিক করবো, কিছু রেডি তো করা হয়নি।”

দিহান দ্রুতির মাথায় গাট্টা মেরে উঠলো। ব্যথায় হালকা চেঁচিয়ে উঠলো দ্রুতি।

-” ওই মারলি কেনো, শয়তান?”

-” তো কী করবো। তুই জানিস না আমরা কাল নয় আরও দুই দিন পর পিকনিকের জন্যে ঠিক করেছি?”

-” কোথায় আমায় তো কেউ কিছু বলেনি। স্পর্শ দা দিহান যা বলছে সত্যি না আমাকে ফেলে তোমরা পিকনিকের প্ল্যান করেছো?”

-” না রে দিহান ঠিকই বলেছে। দেখ আমরা তো পিসিমনির বাড়িতে ছিলাম, এরপর তো পিকনিকের কোনো কথাই হয়নি। গ্যাস সিলিন্ডার থেকে শুরু করে সব কিছু অর্ডার করতে হবে তো। তাই ডেট দুই দিন পরের করেছি।”

-” তোমরা আগে বলবেনা, আমি তো আয়ু দিকে কাল বললাম যে পরশু পিকনিক। উফফ তোমরাও না।”

-” ওই দিদি, আয়ু দি তো জানে। তোকে বলেনি? আমি তো কদিন আগেই বলেছি।”

-” কোথায় বললো না তো! আমার মনে হয় ভুলে গেছে। আচ্ছা আমি বরং বাড়িতে গিয়ে মনে করিয়ে দেবো।”

স্পর্শ কিছুই বললো না। চুপ করে বাড়ির দিকে এগিয়ে গেলো। রাস্তা দিয়ে এলে আয়ুদের বারান্দাটা আগে চোখে পড়ে। স্পর্শ বারান্দার দিকে তাকালো, যদি আয়ু কে দেখে। বারান্দার লাইট বন্ধ। রাস্তার ল্যাম্প পোস্টের আলোয় কিছুটা হলেও বারান্দার সব কিছু দেখা যাচ্ছে। কিন্তু সেখানে কোথাও আয়ু নেই। স্পর্শ তপ্ত শ্বাস ছাড়লো। আজ দুই দিন হলো ওদের দেখা হয়নি। স্পর্শ নিজের মনেই বিরবির করলো, সাড়ে তিন বছর যাকে না দেখে থেকে গেলো দূরে, একটা কল পর্যন্ত যাকে করেনি কখনো, সেখানে দুই দিন না দেখেই মনে হচ্ছে কখন তাকে দেখবে। আচ্ছা সত্যিই কি সে কল করেনি? কথা বলার চেষ্টা করেনি? আচ্ছা তবে সে কে ছিল, যে ফোনের ওপাশের ব্যাক্তির নিশ্বাসের শব্দ প্রতিনিয়ত শোনার অপেক্ষা করে গভীর রাত পর্যন্ত অপেক্ষা করতো? কে ছিল সে? নিজের মনেই হেসে স্পর্শ বাড়িতে ঢুকে গেলো। সদর দরজা খোলাই ছিল।

-” কী হলো ব্যাপারটা?”

-” আমিও তো তাই ভাবছি আয়ান। কতক্ষন ধরে আমি স্পর্শ দাকে ডাকলাম কিন্তু সে তো সাড়াই দিল না, কী হলো ব্যাপারটা?”

দ্রুতি তৎক্ষণাৎ পরপর কয়েকবার ঢোক গিললো। ভয়ে ভয়ে নিজের চারিদিকটা ভালো করে দেখে বললো,

-” আমার মনে হয় স্পর্শ দাকে ভূতে ধরেছে! নাহলে আমাদের কথার জবাব দিলো না কেনো?”

-” চুপ কর তুই, তুইতো নিজের ছায়া দেখলেও ভূত ভেবে পারলে হার্ট অ্যাটাক করিস।”

কথাটা বলেই দিহান মামার বাড়িতে চলে গেলো।
আয়ান কপাল চাপড়াতে চাপড়াতে নিজের বাড়ির ভিতর ঢুকলো।

-” এই মেয়ের কী হবে?”

-” ওই আয়ান দাঁড়া রে ভাই। আমি যাবো তো। ”

-” দ্রুতি তুই যে দিহানদের বাড়ি গিয়েছিস এটা আমাকে একবার ফোন করে বলা যেতো না?”

আজ কলেজের পর দিহানের সঙ্গে দ্রুতি ওদের বাড়িতে যায়। যাবার আগে অবশ্য নিজের জন্যে কেনাকাটা করতে ভোলেনি। তবে আয়ুর জন্যও একই ডিজাইনের জামা কিনেছে। শুধু ওর টা পার্পেল কালার এর আয়ুর টা অরেঞ্জ। এসবের মধ্যে বাড়িতে বলতেই ভুলে গেছে।

-” সরি মাসিমণি, আমি ভুলে গিয়েছিলাম।”

-” আর ওই রকম করিস না মা, চিন্তা হয় তো। এখনকার দিনের কী পরিস্থিতি তুই তো জানিস মা। তোদের দুটো কে নিয়ে খুব চিন্তা হয়। ”

-” আচ্ছা আর হবে না। তবে আমি কিন্তু সেলফ ডিফেন্স জানি কিছুটা। আগের বছর স্কুলে শিখিয়েছে।”

-” সে তো জানি আমি। কিন্তু মায়ের মন তো। তোরা বুঝবি না, মা হো বুঝবি।”

কথাটা বলতে দেরি আয়ান গিয়ে ওর মাকে জড়িয়ে ধরলো।

-” উফফ, মা এতক্ষণে মনে হলো আমি বাড়িতে আছি। দুই দিন তো তোমার এই ডায়লগটা কর্ণগোচর হয়নি।”

আয়ানের মা ওর কান টা ধরে বললো,

-” পাজি ছেলে, যা ফ্রেশ হয়ে আয়। ডিনারে কী খাবি?”

-” আহ্, মা লাগছে। আর তাছাড়া আমরা খেয়ে এসেছি। এবার বিছানায় পড়বো আর ঘুম। আহা, কী শান্তি।”

-” ঘুমানোর আগে মনে করে ড্রেস চেঞ্জ করে ফ্রেশ হবেন লাটসাহেব।”

-” যথা আজ্ঞে মাতে।”

ভোর সাড়ে পাঁচটা নাগাদ গায়ে ঠাণ্ডা হাওয়ার স্পর্শে ঘুম ভাঙলো স্পর্শের। এই সকালের দিকের শীতল হাওয়া প্রতিটা ব্যাক্তির হয়তো খুব মনোরম লাগে। তবে কেউ কেউ হয়তো ব্যতিক্রমী রয়েছে। কেউ কেউ এই শীতল হাওয়া শরীরে মাখানোর জন্যে সকালের শুরুতে বেরিয়ে পড়ে বাইরে, আবার অনেকে এই শীতল হাওয়ার সংস্পর্শে গায়ে চাদর দিয়ে আবারও একটা ঘুম দেয়।

পরপর কয়েকবার হাই তুলতে তুলতে স্পর্শ বারান্দায় এগিয়ে গেলো। বাতাসের হালকা পরশে উইন্ড চিমসের এক একটা মেটেল একে অপরের সংস্পর্শে রিনরিন করে বেজে চলেছে। আকাশটা সাদা হয়ে রয়েছে। পাশের পাড়ার সমরেশ কাকা একে একে তার নির্ধারিত বাড়িতে তাদের পছন্দের খবরের কাগজ ছুঁড়ে দিয়ে চলে যাচ্ছে।

-” কাকা উপরে।”

কারোর ডাকে সমরেশ কাকা উপরে তাকিয়ে স্পর্শকে দেখে তার বিশাল গোঁফের মধ্যে দিয়ে নিঃশব্দে হেসে খবরের কাগজটা ওর দিকে ছুঁড়ে মারলো। স্পর্শ ও সেটা ক্যাচ লুফে নিলো।

খবরের কাগজটার সামনের পাতাটা দেখে স্পর্শ পাশের টেবিলে ওটা রেখে আয়ুর বারান্দার দিকে তাকালো। কিন্তু বারান্দার দরজা এবং জানালা পুরোটাই বন্ধ। তারমানে আয়ু এখনও ঘুমোচ্ছে।
কাল রাতে স্পর্শ ফ্রেশ হয়ে এসে আধ ঘণ্টা মতো বারান্দায় দাঁড়িয়ে ছিল। এই আশায় যে আয়ু হয়তো একবার হলেও আসবে। কিন্তু যখন দেখলো ও আসছে না, স্পর্শ গিয়ে ঘুমিয়ে পড়েছিল।

স্পর্শের এখন আয়ু কে বিরক্ত করতে ইচ্ছে করলো না। ও খবরের কাগজটা হাতে নিয়ে ছাদের দিকে পা বাড়ালো। ছাদে পা রাখতে একটা মিষ্টি গন্ধ এসে স্পর্শের নাকে বাড়ি খেলো। স্পর্শের মা সারা ছাদ জুড়ে কেবল গোলাপ ফুলের এক একটা টব দিয়ে সাজিয়েছে। টব গুলোর নীচে কিছু ঝরে যাওয়া ফুলের পাপড়ি ও পড়ে রয়েছে৷ পুরো ছাদ জুড়ে এক আলাদাই প্রকৃতি বিরাজ করছে।

স্পর্শ ফুল গুলোর দিকে এগিয়ে গেলো। এক একটা গোলাপের দিকে তাকিয়ে ও যতটা না মুগ্ধ হলো তার থেকে বেশি মুগ্ধ হলো টবের নীচে পরে থাকা গোলাপের পাপড়ি দেখে। শীতল হাওয়ায় ফুলের পাপড়ি গুলো বলতে গেলে পুরো ছাদ জুড়ে এলোমেলো ভাবে ছড়িয়ে রয়েছে। স্পর্শ ছাদের মেঝেতে এক হাঁটু ভাঁজ করে বসে কিছু পাপড়ি তুলে নিলো। মুগ্ধ চোখে পাপড়ি গুলোর দিকে তাকিয়ে ভেসে উঠলো, কারোও প্রতিচ্ছবি। স্পর্শ নিজের মনেই বিড়বিড় করে উঠলো,

-“তোমাকে ভালোবেসে কয়েকহাজার গোলাপ দেবো না। তোমাকে ভালোবাসি, গোলাপের একমুঠো পাপড়ি দিয়েই না হয় বোঝাবো।”


-” সকাল সকাল গরম গরম চায়ের সাথে গরম গরম কচুরি। আহা, প্রাণটা জুড়িয়ে গেলো।”

-” দাঁড়াও সজল এই তো সবে শুরু এখনও অনেক কিছু আছে।”

-” পলাশ দা আমি আর বাড়ি যাবো না। তোমাদের গ্রামেই থেকে যাবো, অন্তত এই কচুরির জন্যে। ”

-” আচ্ছা তুমি থেকো। আপাতত এগুলো শেষ করো। তারপর গরম গরম রসগোল্লা করছে ময়রা।”

-” এই সজল তুই একটু আস্তে খেতে পারছিস না। আমরা কি তোর খাবার খেয়ে নেবো?”

সজল এক হাতে কচুরি ছোটো করে ছিঁড়ে তরকারিতে মাখিয়ে মুখের অদ্ভুদ শব্দ করে মুখে পুরলো। অর্ধেক খাবার মুখে রেখেই কথা জড়িয়ে বললো,

-” তোকে বিশ্বাস নেই রুহি খেয়ে নিতেও পারিস। তাও আগে থেকে সাবধান করছি, আমার প্লেটে হাত দিবি না। নিজের টা ফিনিশ কর। ”

আয়ু গরম চা মুখে পুরে সজলের কথায় হাসলো। এখানে এসে ওরা বেশ মজা করছে। কাল সারাদিন টায়ার্ড ছিল, তাই কালকের দিনটা রেস্ট নিয়ে আজ সকাল সকাল ওরা গ্রাম দেখতে বেরিয়ে পড়েছে। এখন তারা পাকা রাস্তার মোড়ে একটা দোকানে বসে রয়েছে। শাল পাতায় কচুরি আর মাটির ভাঁড়ে চা খেতে ব্যস্ত তিন বন্ধু ও তাদের সঙ্গী পলাশ।

(চলবে )
{ বিঃ : ভুল ক্ষমা করবেন । ভালো কিংবা খারাপ কেমন হয়েছে জানাবেন । হ্যাপি রিডিং }

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here