নীল চিরকুট
লেখনীতে- নৌশিন আহমেদ রোদেলা
৫৫.
রৌদ্রোজ্জ্বল সেই দুপুর বেলায়, অন্তু থেকে পালিয়ে এসেই ইরার মুখোমুখি হতে হলো নীরাকে। বিয়ের প্রায় তিনমাস পর ছোট বোনকে শ্বশুর বাড়িতে দেখে কিছুটা অবাক হলো সে। ইরা বসার ঘরে বসেছিল। কালো জমিনে সাদা ফুল তোলা জামা গায়ে। চোখে-মুখে নিদারুণ ক্লান্তি। নীরাকে দেখতে পেয়েই উঠে এসে একহাতে জাপটে ধরল ইরা। উচ্ছ্বসিত কন্ঠে বলল,
‘ উফ! আসব আসব বলে আসা হয়ে উঠছিল না। একটু শুকিয়েছ মনে হচ্ছে? কেমন আছ?’
নীরা ঠোঁট টেনে হাসার চেষ্টা করল। বোনকে একহাতে জড়িয়ে ধরে বলল,
‘ ভালো। তুই কেমন আছিস? আসবি, বলিসনি তো।’
‘ বললে তো সারপ্রাইজড হতে না, তাই বলিনি। মিড টার্ম শেষ হলো কাল। ছুটি পেয়েই সিদ্ধান্ত নিলাম তোমার কাছে আসব। ব্যস, চলে এলাম।’
নীরা ছোট্ট একটা নিঃশ্বাস ফেলল। মেকি হেসে বলল,
‘ ভালো করেছিস।’
ইরাকে জড়িয়ে রেখেই শাশুড়ী মায়ের দিকে তাকাল নীরা। চোখে-মুখে সূক্ষ্ম দুশ্চিন্তা। ইরা মেয়েটা অন্যরকম। বুদ্ধিমতি, মুক্তিচেতা, প্রতিবাদী, তীক্ষ্ম ব্যক্তিত্বসম্পন্ন। নীরার মতো চুপ থাকা তার ধাতে নেই। মুখের উপর কঠিন কথা বলে ঝামেলা পাকানোই তার কাজ। সমাজের প্রতি তার তীব্র অসন্তোষ। শাশুড়ী মায়ের সূক্ষ্ম বাঁকা চাহনী চোখে পড়লেও নির্ঘাত ঝামেলা পাকাবে ইরা। জাহানারাও তো থেমে থাকার মানুষ নন। স্বাভাবিক, ভালো কথাও মুখ গোমড়া করে বলা তাঁর অভ্যাস। নীরা যেন অকূল পাথারে পড়ল। বোনকে নিয়ে দুশ্চিন্তায় কাঁটা হয়ে রইল বুক।
‘ ইরার জন্য খাবার দাবারের ব্যবস্থা করো বউমা। তার আগে ঠান্ডা শরবত করে দাও। এই গরমে অতটুকু জার্নি করে এসেছে।’
জাহানারার এমন সুন্দর, স্বাভাবিক ব্যবহারে মনে মনে অসংখ্য ধন্যবাদ দিল নীরা। মৃদু কন্ঠে বলল,
‘ আচ্ছা মা।’
ইরা হেসে বলল,
‘ ওসব শরবত টরবত লাগবে না। তুমি বরং আমায় একটা ওয়াশরুম দেখিয়ে দাও। লম্বা একটা শাওয়ার নেব। ঘামে শরীর চটচট করছে।’
কথাটা বলে থামল ইরা। সোফা থেকে নিজের হ্যান্ড ব্যাগটা তুলে নিতে নিতে প্রশ্ন ছুঁড়ল,
‘ ভাইয়া আছে নাকি বাসায়? ভাইয়ার সাথে তো দেখা হলো না।’
নীরা অন্তুর নামটা উচ্চারণ করতে গিয়েও থেমে গেল। আড়চোখে শাশুড়ীর দিকে চেয়ে নিজেকে সংযত করল। শান্ত কন্ঠে বলল,
‘ তোর ভাইয়া রুমেই আছে। দেখা করবি, চল।’
জাহানারা উঠে রান্নাঘরের দিকে চলে যেতেই দৌঁড়ে এলো অয়ন। একহাত গালে রেখে মুখ গোমড়া করে নীরার দিকে তাকাল। নীরা তার চুপসে যাওয়া মুখটির দিকে চেয়ে বলল,
‘ আরও খেয়েছিস?’
অয়ন দুঃখ ভরা মন নিয়ে সম্মতি জানাল। প্রচন্ড মন খারাপ নিয়ে বলল,
‘ তুমি শাড়ি পাল্টে সালোয়ার-কামিজ না পরলে আবারও মারবে। ভাইয়া তোমাকে শাড়ি পরতে নিষেধ করেছে।’
অয়নের বলা কথাটা জাহানার কানে গিয়ে পৌঁছাতেই রান্নাঘর থেকে ধমকে উঠলেন তিনি,
‘ কেন? বউ কী পরবে সেটা ও ঠিক করে দেবে? বাড়ির বউ শাড়ি পরবে তাতে ওর সমস্যা কি?’
অয়ন দমে গেল। নীরার দিকে চেয়ে কাতর চোখে অনুরোধ করল,
‘ প্লিজ!’
নীরা দ্বিতীয়বারের মত অকূল পাথারে পড়ল। স্বামী না শাশুড়ী কার কথা শুনবে তা নিয়েও বিরাট এক প্রশ্ন দেখা দিল মনে। পুরোটা সময় লক্ষ্মী মেয়ের মতো চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইল ইরা। অয়নকে রেখে শোবার ঘরের দরজার কাছে আসতেই অন্তুর মুখোমুখি হলো তারা। অন্তু শার্টের বোতাম লাগাতে লাগাতে বেরুচ্ছিল। ইরাকে দেখে দাঁড়িয়ে গিয়ে মৃদু হাসল। খানিকটা বিস্ময় নিয়েই বলল,
‘ আরে ইরা নাকি! কেমন আছ আপু?’
ইরা ঠোঁট টেনে হাসল,
‘ আশেপাশের আবহাওয়া দেখে উত্তরটা নিয়ে খুব চিন্তায় পড়তে হচ্ছে জামাইবাবু।’
অন্তু কথাটা ধরতে না পেরে ভ্রু কুঁচকাল। অপ্রস্তুত কন্ঠে বলল,
‘ মানে?’
সাথে সাথেই ইরার হাত খামচে ধরল নীরা। ব্যস্ত হয়ে বলল,
‘ গরম। গরমের কথা বলছে ও।’
অন্তু নীরার দিকে এক নজর চেয়ে বলল,
‘ ওহ! আচ্ছা, থাকো তাহলে। আমি একটু বেরুচ্ছি। সন্ধ্যার পর দেখা হবে ইন-শা-আল্লাহ।’
‘ আমি বোধহয় বিকেলের দিকে চলে যাব ভাইয়া। দেখা হওয়ার সম্ভবনা কম।’
কথাটা বলে মৃদু হাসল ইরা। অন্তু অবাক হয়ে বলল,
‘ এইমাত্র না এলে? এসেই যাওয়ার চিন্তা কেন? বিয়ের পর আজই বোধহয় প্রথম এলে বাসায়। দুই একদিন থাকো আমাদের সাথে। নীরা তোমায় খুব মিস করে। আগে ওর মন ভরুক তারপর যাওয়ার চিন্তা তার আগে নয়।’
অন্তুর কথায় চট করে অন্তুর দিকে তাকাল নীরা। নিজের দুই অক্ষরের নামটা জীবনের প্রথম খুব সুন্দর শোনাল তার কানে। প্রায় তিনমাস পর অন্তুর মুখে ‘নীরা’ নামটা শুনতে পেয়ে অদ্ভুত এক তৃপ্তিতে ছেয়ে গেল মন-মস্তিষ্ক। ইরা জবাব না দিয়ে মৃদু হাসল। এটুকু সময় ঠিকঠাকভাবে কেটে যাওয়ায় বেশ স্বস্তি পেল নীরা। কিন্তু এই স্বস্তিটুকুও বেশিক্ষণ টিকল না। দুপুরের পর পাশের বাসার এক মহিলা এসে নিত্য দিনকার গল্প জুড়ল। নীরা-ইরা তখন রান্নাঘরের দরজায় দাঁড়িয়ে। মহিলাটি বেশ ফলাও করে জিজ্ঞেস করলেন,
‘ বউয়ের বাড়ি থেকে কিছু দেয়নি ভাবি?’
জাহানারা স্বাভাবিক মুখভঙ্গি নিয়ে বললেন,
‘ কি দেবে? বউয়ের বাপের বাড়ির অবস্থা অত ভালো না। পাঁচ-ছয় বছর আগে বাপ মারা গেছে।’
মহিলা অবাক হয়ে বললেন,
‘ তাই বলে কিছুই দিবে না? আমাদের বাসায় কাজ করত চম্পা নামের মেয়েটা? এই মাসেই ওর বিয়ে হলো। ওর বিয়েতে আমাদের বাবুর বাপই তো প্রায় ত্রিশ হাজার টাকা দিল। জামাইকে এক লক্ষ টাকা আর একটা মোটরসাইকেল দিয়েছে বিয়েতে। বিবেক বলেও তো একটা কথা আছে। এমনি কিভাবে পাঠিয়ে দেয় মেয়ে?’
এটুকু শুনেই মেজাজ খারাপ হয়ে গেল ইরার। নীরা চোখের ইশারায় বোনকে শান্ত থাকার জন্য অনুরোধ করল। ইরা রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে চুপ করে রইল। জাহানারা বিরস মুখে বললেন,
‘ ওদের বিবেকে বাঁধে নাই তাই দেয় নাই। অন্তু আর অন্তুর আব্বা কেউই এসব দেওয়া-নেওয়া পছন্দ করে না। আমার শ্বশুর আব্বাও পছন্দ করতেন না। হাদিসে যৌতুক হারাম।’
মহিলা এবার দমে গেলেন। মিনমিন করে বললেন,
‘ যৌতুক কই ভাবি? এগুলো তো সামাজিকতা।’
জাহানারা জবাব দিলেন না। ইরা বোনের প্রতি বিরক্ত হয়ে শোবার ঘরের দিকে পা বাড়াল। কিছুটা গিয়েই থমকে দাঁড়াল। কানে এলো মহিলার কিছু কুৎসিত ভাবনা,
‘ ভাবি? শুনলাম বউ নাকি আপনার ছেলের থেকে বড়? কি একটা জামানা আসছে বলুন তো ভাবি। এই বুইড়া বুইড়া মেয়েগুলো ভদ্র-নম্র ছেলেদের মাথাগুলো একদম চিবিয়ে খাচ্ছে। আমার ননাশের ননদের ছেলে সৈকতও এমন এক কান্ড করেছে জানেন? হুট করেই একদিন তার থেকে চার বছরের বড় এক মেয়েকে বিয়ে করে ঘরে উঠাল। ছেলের কান্ড দেখে আপা কি করল জানেন? খাওয়া-দাওয়া বাদ দিয়ে বিছানা নিল। এই বউকে সে মানবে না। এদিকে ছেলেও বউ ছাড়বে না। কাঁচা বয়স ছেলের, বাপ-মায়ের কথা শুনে? দুলাভাইও রাগারাগি। ছেলেকে ঘর থেকে বের করে দিবে দিবে অবস্থা। আমরা অনেক বুঝানোর পর আপা-দুলাভাই মেনে নিল। কিন্তু আল্লাহর কি কাজ ভাবি, বিয়ের দুই বছরের মাথায় সৈকত বউরে তালাক দিয়ে দিল। বউরে নাকি এখন আর ভালো লাগে না। লাগব কেমনে? জোয়ান পুরুষ মানুষ কচি মেয়ে বিয়ে করবে। বয়স্ক মেয়ে ক’দিন মনে ধরবে? আপনার ছেলেও না এমন করে ভাবি!’
মহিলার বলা প্রতিটি কথা যেন বিষের মতো ঠেকল নীরার কানে। ছলছলে চোখদুটো নিয়ে শোবার ঘরের দরজার কাছে দাঁড়িয়ে থাকা বোনের দিকে তাকাল। ইরার রক্তলাল চোখদুটোর দিকে চেয়ে চুপ থাকতে অনুরোধ করল। ইরা কিছু বলল না। বোনের দিকে নীরব দৃষ্টি নিক্ষেপ করে ঘরে ঢুকে গেল। নীরা নিজেকে শান্ত করে শোবার ঘরের দিকে পা বাড়াতেই জবাব দিল জাহানারা,
‘ আমার ছেলে আপনাদের সৈকতের মতো নয় ভাবি। আর না ছেলের বউ অন্তু থেকে চার-পাঁচ বছরের বড়। মাত্র দুই মাসের পার্থক্য। এইটুকু পার্থক্য চোখে বাজে না। সংসার টিকিয়ে রাখতে চেষ্টা, ভরসা আর সততা লাগে। আমি তো শুনেছিলাম, সৈকত ছেলেটার নাকি চরিত্রগত সমস্যা আছে? ছেলের চরিত্র খারাপ থাকলে তো ভাবি কচি খুকির সাথে বিয়ে দিলেও বেশিদিন মনে ধরবে না।’
_
ঘড়িতে তিনটা বাজে। দুপুরের তীব্র রোদে বিকেলের মোলায়েম আভা ফুটছে। ক্রমেই স্নিগ্ধ হয়ে উঠছে চারপাশ। ভার্সিটির নির্দিষ্ট একটি হলের ছাঁদে পা ঝুলিয়ে বসে আছে এক যুবক। পরনে তার থ্রী কোয়াটার প্যান্ট আর টি-শার্ট। মাথা ভর্তি এলোমেলো ঘন চুল। চোখ বন্ধ। হাত ছুটছে গিটারের তারে। তার পাশেই রেলিঙে ঠেস দিয়ে দাড়িয়ে আছে অন্তু। হাতদুটো বুকের উপর স্থির।
‘ তোর আজাইরা টুংটাং শুনতে ভালো লাগছে না। টিএসসি চল।’
নাদিম থামল। রেলিঙ থেকে লাফিয়ে নেমে বলল,
‘ অনুমতি নাই। রঞ্জন দুই মিনিটের মাথায় ফোন দিবে। তার নাকি তোর সাথে বিশেষ আলাপ আছে? আমার উপর কড়া হুকুম, রঞ্জন ফোন দেওয়ার আগ পর্যন্ত তোকে নিয়ে আঠার মতো দাঁড়িয়ে থাকতে হবে। নড়াচড়া করা যাবে না। তুইও নড়াচড়া করিস না। আঠার মতো দাঁড়িয়ে থাক।’
অন্তু বিরক্ত চোখে তাকাল। আর প্রায় সাথে সাথেই নাদিমের ফোনে দেখা দিল সুদর্শন এক যুবক। লাল রঙা শর্টস আর ঢোলাঢালা হোয়াইট টি-শার্ট পরে বসে আছে সে। মাথাভর্তি হালকা বাদামি চুলগুলো কপালময় বিস্তৃত। গায়ের ফর্সা রঙে কেমন বিদেশি বিদেশি ভাব। চুলের ছাঁটটাও আগের থেকে ভিন্ন। অন্তু আর নাদিমকে দেখেই অমায়িক হাসল রঞ্জন। নাদিম আর অন্তুর মনে একই সাথে বেজে উঠল একটিই শব্দ, ‘মা-শা-আল্লাহ’। বন্ধুদের সাথে স্বাভাবিক কুশলাদি শেষ করেই ফট করে প্রশ্ন করল রঞ্জন,
‘ তুই-নীরু, তোরা কেমন আছিস অন্তু?’
‘ কয়বার জিগ্যেস করবি? বললাম তো, সবাই ভালো।’
রঞ্জন মৃদু হেসে বলল,
‘ সবার কথা তো জিজ্ঞেস করিনি। তোর আর নীরার কথা আলাদা করেও জিজ্ঞেস করিনি। আমি জিজ্ঞেস করেছি, তোরা দুজন মিলে কেমন আছিস?’
অন্তু কয়েক সেকেন্ড চুপ থেকে বলল,
‘ ভালো আছি।’
রঞ্জন দীর্ঘশ্বাস ফেলল। শান্ত কন্ঠে বলল,
‘ তোরা কতটুকু ভালো আছিস জানি না। কিন্তু চাইলেই প্রত্যাশা থেকেও বেশি ভালো থাকতে পারিস। বিয়েটা খুব স্বাভাবিকভাবে না হলেও কিন্তু হয়েছে দোস্ত। আর তাদের সাথেই হয়েছে যাদের তোরা মনেপ্রাণে চাইতি। কেউ প্রকাশ্যে বা কেউ গোপনে। পার্থক্যটা এখানেই। ভালোও দুজনেই বেসেছিস। দোষও দু’জনেই করেছিস। সাফারও দু’জনেই করেছিস। কেউ বেশি বা কেউ কম। দেটস ইট। অতীতে কি হয়েছে সেটা নিয়ে বসে থাকা বোকামি। আর বসেই যদি থাকিস তাহলে কতদিন থাকবি? সারাজীবন? নীরাকে ছেড়ে দেওয়ার ক্ষমতা তোর একসময় থাকলেও এখন নেই। ওকে ছাড়া তুই নিজেই থাকতে পারবি না। এটা মানতে তুই বাধ্য। ধরা যেহেতু দিতেই হবে তাহলে শুধু শুধু দূরত্ব বাড়িয়ে লাভ কী? মেয়েটাকে কষ্ট দিস না দোস্ত। আমাদের নীরু কেমন চাপা স্বভাবের তা তো তুই জানিস। দোষ নাহয় করেছে। তুইও তো করেছিস, তাতে কি? ভালোবাসিস বলে নয়, বন্ধু হিসেবেই নাহয় সব ভুলে যা। হাতটা শক্ত করে ধরে একটু কাছে টেনে নে। নাদিমের থেকে যতটা শুনলাম তাতে মনে হলো, নীরা তোকে পজিটিভলিই চাইছে। সে সম্পর্কটাকে এগুতে চায়। ওর মতো মেয়ের এক পা এগিয়ে আসা মানে অনেক কিছু।’
এই পর্যায়ে গিয়ে লজ্জা পেয়ে গেল অন্তু। কটমট চোখে নাদিমের দিকে তাকাল। নাদিম মাথা চুলকাতে চুলকাতে অন্যদিকে তাকাল। অন্তুর নজরের হেরফের হয়নি দেখে গলা খাঁকারি দিয়ে বলল,
‘ ওমনে তাকাস ক্যান বাল? কি কইছি আমি? আমি শুধু কইছি অন্তুর নাহাল ব্যান্ডেজ লাগাইয়া ঘুরার জন্য হইলেও একটা বউপোকা দরকার। পোকায় কামড়ায় না বইলাই তো ফার্মেসীর সামনে দিয়া যাই অথচ ব্যান্ডেজ ট্যান্ডেজ কিনতে পারি না। ফার্মেসীর মালিক গো লাইগা মায়া লাগে। ভাই তোর যেহেতু বউপোকা আছে, তুই তার সঠিক ব্যবহার কর। ফার্মেসীর মালিকদের একটু উপকার কর। প্রয়োজনে আমি,নমু, রঞ্জন, ছোঁয়া মিইল্লা তোরে ব্যান্ডেজ কিনে দিমু। নিজেরা লাগাতে পারতেছি না তাতে কি? তুই লাগাবি। দরকার পড়লে সারা শরীরে লাগাবি।’
অন্তু নাদিমের দিকে তেড়ে গিয়ে বলল,
‘ শালা! এই তুই খাঁড়া! তোর মৃত্যু আজ অনিবার্য!’
_
ইরা ঘরময় পায়চারী করছে। রাগে শরীরটা জ্বলে যাচ্ছে তার। নীরা বিছানার উপর বসেছিল। মৃদু কন্ঠে বলল,
‘ এতো রেগে যাওয়ার মতো কিছু হয়নি ইরু। দয়া করে এই নিয়ে ঝামেলা বাড়াস না।’
ইরা নীরার সামনে এসে দাঁড়াল। ফুঁসে উঠে বলল,
‘ আমি ঝামেলা বাড়াচ্ছি? আমি? তোমার কি বিন্দুমাত্র সেল্ফ রেসপেক্ট নেই আপু? এতোকিছুর পরও মুখে কুলুপ মেরে বসে আছ। পড়াশোনা করেছ। শিক্ষিত একটি মেয়ের মাঝে সমাজের নিকৃষ্টদের মতো আচরণ কেন থাকবে? সেই মধ্যযুগের মতো স্বামীর পা ধরে বসে থাকা তোমায় শোভা পায় না আপু। তোমার উচিত এদের মুখে ডিভোর্স পেপার ছুঁড়ে ফেলে নিজের মূল্য বোঝানো। ঘরের বউ বলে যা ইচ্ছে তাই করবে? যা ইচ্ছে তাই বলবে? বিয়ে করে কিনে নিয়েছে? কি পরবে, কি খাবে সেটা ওরা ঠিক করে দেওয়ার কে? ফাকিং দ্য সিস্টেম।’
‘ ইরু আস্তে।’
ইরা আরও চেতে উঠল এবার। বোনের দিকে চেয়ে গলা উঁচু করে বলল,
‘ আস্তে?কেন? আস্তে কেন বলব? মিথ্যা কিছু বলেছি? তোমার মতো সতী সাবিত্রীদের জন্যই মেয়েদের আজ এই অবস্থা। সত্য কথা বলতে ভয় কিসের? কিসের এতো ভয় পাও তুমি? ওদের সাহস কি করে হয় তোমার বয়স নিয়ে কথা বলার? আমরা তাদের পায়ে ধরেছিলাম তোমাকে বিয়ে করার জন্য? তাদের ছেলে যে এতোসব কান্ড করল সেগুলো তাদের চোখে পড়ে না? তোমার জায়গায় আমি থাকলে এমন স্বামী সংসারকে লাথি দিয়ে নিজেদের অবস্থান বুঝাতাম। এনিওয়ে, তুমি যে দিন-রাত এসব কথা শুনে শুনে পেট ভরাচ্ছ তা তোমার ফেরেস্তার মতো স্বামী জানে?নাকি এসব তার ইন্ধনেই চলছে?’
#চলবে….