নেশাক্ত প্রণয়োণী পর্ব_০৬

0
1231

#নেশাক্ত_প্রণয়োণী
#লেখিকা_তামান্না(আল রাইয়ান)
#পর্ব_০৬

পুলিশের সামনে আনজুমা থতমত খেয়ে ভর্য়াত মুখ করে দাঁড়িয়ে আছে। ইতিমধ্যে ভয়ের চটে চার-পাঁচ গ্লাস পানি খেয়ে ফেলেছে। আরভীক রাগমিশ্রিত গলায় বলে,

‘মারাত্মক মনখুনি মহিলা তুমি। উফ যে জোরে মারছো বোধ হয় পরলোক গমন করছে সে।’

‘না না আমি ওতটা জোরেও বারি দেয়নি যতটা আপনারা আন্দাজ করছেন।’

‘মিথ্যে কি জম্মগত ভাবে শিখেছো! দেখছো না অঞ্জয় এখনো অজ্ঞান। অফিসার আমি বলছি মেয়েটা এক নাম্বারের গু*ন্ডি।’

ব্যস কথাটি যথেষ্ঠ ছিল আনজুমার ভেতরকার ক্রোধ জাগিয়ে তুলার জন্যে। ঠোঁট ফুলিয়ে চেঁচিয়ে বলে,

‘খামোশ আপনি কেন আদিখ্যেতা দেখাচ্ছেন হে! শোকরিয়া আদায় করেন। যে আপনার মাথায় বারিটা পড়েনি। বিশ্বাস করেন অফিসার, যদি এ অঞ্জয় নাকি টঞ্জয়ের জায়গায় এ লোকটা থাকতো না। নিশ্চিত একশত বারি মেরে মাথা ফাটিয়ে দিতাম।’

ফাহাদ হতবাক দৃষ্টিতে আরভীক এর দিকে তাকায়। বেচারার মুখও ভোঁতা বনে গেছে। ফাহাদের ভয় লাগছে। যদি মেয়েটা তার উপরও রেগে বোম হয়ে যায়। আরভীক গলা ঝেড়ে বলে,

‘হাহ আরভীক ফাওয়াজ এর গায়ে…।’

তার বলতে দেরি কিন্তু তার গালে ফ্রাইপেনের বারি দিতে সময় নষ্ট করেনি আনজুমা। ঠাস করে তার গালেও বারি দিয়ে দেয়। আরভীক হতভম্ব চোখে কি হলো বুঝার জন্য সময় নিল। আসলেই কি সে তার গালে বারি খেয়েছে নাকি তার মনে হচ্ছে দুঃস্বপ্ন দেখেছে। ফাহাদ না দেখার ভান করে মুখ ঘুরিয়ে নেয়। যদি তারও ইজ্জতের ফালুদা হয়ে যায়। আরভীক গালে হাত দেয়। অনুভব করে ব্যথা করছে তার গাল। তেলেবেগুনে জ্বলে উঠে। ফ্রাইপেনটা সজোরে ছিনিয়ে নিল আনজুমার হাত থেকে।

আনজুমা আরভীক এর দিকে সরু দৃষ্টিতে তাকায়। মনে মনে ভীতিগ্রস্থ হলো। পুলিশের সামনে আবার সে নিজেই না বারি খায়! যদি খায় ইজ্জতের দফারফা হয়ে যাবে। আরভীক ফ্রাইপেনটার দিকে অগ্নিশর্মা চোখে দেখে আনজুমার দিকে ভস্ম করার মত তাকায়। তার দিকে তিক্ষ্ণ চোখে তাকিয়ে থেকেই জানালার কাছে গেল। আনজুমা দেখছে কিন্তু বুঝতে পারছে না আরভীক কি করতে চাইছে !
আরভীক শয়তানি হাসি দিয়ে জানালার বাহিরে নর্দমার দিকে ছুড়ে মারে ফ্রাইপেনটা। নর্দমায় পড়ে কচফচ শব্দ হলো। আনজুমা, ফাহাদ ও ছোট আশফি হা হয়ে যায়। ফাহাদ আন্দাজ করেছিল তার বন্ধুকে আঘাত করার পরিণামে ফ্রাইপেনের শাস্তি হলো নর্দমায় ডুবে যাওয়া। মনে মনে ফ্রাইপেনের মাগফিরাত কামনা করে সে। যেন যেখানেই তলিয়ে যায় না কেনো ঘুরেফেরে বাজারে বিক্রি হোক! কথাগুলো ভেবে তপ্ত শ্বাস ফেলে। আকস্মিক চিৎকারে ড্যাবড্যাব করে তাকায়।
আনজুমা আর্তনাদের গলায় জানালার কাছে এসে নর্দমার দিকে চোখ বুলাতে থাকে। প্রিয় ফ্রাইপেন চোখে পড়ে কিনা দেখতে থাকে। না কোথাও দেখা যাচ্ছে না, সব আবর্জনার স্তূপ দেখা যাচ্ছে। ঠোঁট কাঁপিয়ে কান্নার চেহারা করে নেই। আরভীক এর দিকে সূচাঁলো দৃষ্টি নিয়ে তাকায়। গলায় যতটা জোড় পায় ততটা জোড় দিয়ে বলে,

‘বললদদ আমার ফ্রাইপেনকে ছুড়ে মারার সাহস কে দিলো আপনাকে।’

‘কে আবার তোমার প্রিয় ফ্রাইপেনই দিয়েছে। কেননা আমার গালে যে একবার চক খোঁসবে। তার জায়গা হবে নর্দমার কিট হুহ।’

আনজুমা আরভীক এর গলা চেপে ধরে। কিন্তু এতে বিন্দুমাত্র গলায় ব্যথা অনুভব করে না সে। বরং তার মনে হলো কোনো মশা রক্ত চুষার চেষ্টা করছে। ফাহাদ অবস্থা বেগতিক হতে দেখে আনজুমার হাত ছাড়িয়ে নেই। অথচ হিংস্র বাঘিনী আনজুমা পুনরায় আরভীক এর গলা চেপে ধরতে চাইলো। যা সম্ভব হলো না ফাহাদের জন্য। আনজুমার ক্রোধিত চেহারা দেখে আনমনে হেসে দেয় আরভীক।
ফাহাদের দিকে তাকিয়ে চোখ টিপ দেয়। এতে থতমত খেয়ে যায় সে। চোখের ইশারায় ‘কি’ বোঝায়। কিন্তু ঘাড়ত্যাড়া আরভীক জবাব না, কাজের উপর আগ্রহ দেখায়। ফলে সে এদিক ওদিক না তাকিয়ে সোজাসুজি আনজুমার গালে চুমু একেঁ দেয়। থেমে যায় আনজুমার শরীর। ফাহাদ নিজেও হা হয়ে যায়। হলো কি ব্যাপারটা বুঝতে পেরে ঢোক গিলল। তড়িঘড়ি কেটে পড়ে তাদের সামনে থেকে। অন্যথায় আনজুমা নিজেও শিহরিত,বিমূঢ়। আশফি হওয়া ঘটনাগুলো দেখে খালি হেসে যাচ্ছে। সে অবুঝ তাই ভ্রু নাঁচিয়ে হাসছে আর তালি দিচ্ছে। আরভীক বাকাঁ হেসে আনজুমার কান বরাবর এলো। ফিসফিসিয়ে বলে,

‘টিট ফর ট্যাট। তুমি গালে মেরেছো বারি, আমি তোমারই গালে একেঁছি চুমু। হিসাব বারাবার প্রিটিগার্ল।’

শিষ বাজিয়ে আনজুমার পাশ কাটিয়ে সোফার কাছে গেল। এখন অঞ্জয়ের হুঁশ ফেরানো উচিৎ। বেশিক্ষণ হয়ে গেল আনজুমার ফ্লাটে এসেছে তারা। কেউ যদি দেখে তখন মেয়েটার উপর কুৎসিত কথা রটাবে। পরিণামে অনুশোচনায় ভোগতে হবে তার। অঞ্জয়ের গালে বার দুয়েক থাপ্পড়,চটকানি দিল। না হুঁশ ফিরছে না। বিরক্তিতে আরভীক মুখ থেকে ‘চ’ উচ্চারণ করে। আনজুমার দিকে সূক্ষ্ম কপালের ভাঁজ টেনে বলে,

‘মুখ ভবিষ্যতেও দেখতে পারবে, আপাত পানি এনে দিলে খুশি হবো জনাবা।’

ঘাবড়ে গেল আনজুমা। তড়িঘড়ি কিচেনে গেল পানি আনতে। কিন্তু জগে একফুটো পানি নেই। দুঃখ ভারাক্রান্ত মনে জগ হাতে নিয়ে সোফার রুমে এলো। আরভীককে উদ্দেশ্য করে আমতা আমতা করে বলে,

‘আ আমি পানি আনছি কিছুক্ষণের মধ্যে।’

কিছু বলেনি আরভীক। শুধু মাথা নেড়ে সায় দিল তার কথায়। আশফি নিশ্চুপে তার আরভীক আঙ্কেলের আনা চকলেট বক্স থেকে একটি চকলেট বের করে চাবানো শুরু করে। বাচ্চা মানুষ বড়দের মাঝে থেকে তার কি লাভ! সে বিন্দাস চকলেট চাবানোয় মনযোগ দেয়। আনজুমা বের হবার পরই হুঁশ ফেরে অঞ্জয়ের। এতে আরভীক কি ভেবে যেন অঞ্জয়ের মাথায় পাতিল নিয়ে মৃদু বারি দেয়। বেচারা অঞ্জয় পুনরায় আঘাত পেয়ে নুয়ে পড়তে পড়তে মাতাল কণ্ঠে বলে,

‘মরণ মুই আইছি তোর কাছে।’

কথাটি শুনে আরভীক শুদ্ধভাবে উচ্চারণ করে দেয়।

‘হয়নি রে। কথাটি হবে মরণ আমি আসছি তোর কাছে। কিন্তু তুই যাবি না। তোকে শুধু ভ্রমণ করতে পাঠাচ্ছি। কিছুক্ষণের মধ্যে ফিরিয়ে আনব। ডোন্ট ওয়ারি মাই ব্রো।’

অঞ্জয়কে জাগতে দেওয়া যাবে না বলে ভেবে রেখেছে আরভীক। কেননা আনজুমা জব্দ হয়েছে প্রায়। তাকে পিএয়ের পদে যোগ দিতে রাজি করানোই হলো তার মূল উদ্দেশ্য। যদি রাজি না হয় তাহলে সেও জানে কেমনে আঙুল বাকাঁ করতে হয়। সোজা আঙুলে কখনো ঘি উঠে না। শয়তানি হাসি দিয়ে মনে মনে বলে,

‘আমার বাপের অফার রিজেক্ট করো হা! তোমার মুখ থেকে যদি রিজেক্টকে এগ্রিমেন্টে না নেই তাহলে আমার নামও আরভীক ফাওয়াজ না।’

আনজুমার আসতে সময় লাগায় আরভীক কিছুক্ষণ আগের ভাবনায় ডুব দিল।

১২.
কিছুক্ষণ আগে….

আনজুমা বিসমিল্লাহ্ বলে ব্যক্তির মাথায় যে বারিটা মারল। এতে ব্যক্তিটা অজ্ঞান হয়ে মেঝেতে লুটিয়ে পড়ে। দুঃসাধ্য কাজ করতে পেরে খুশিতে লাফিয়ে উঠে আনজুমা। জীবনে প্রথমবার সাহসিকতার জোড় দেখিয়েছে। ফ্রাইপেনের বারি দিয়ে সে নিজেকে রাপুনজেলের সঙ্গে তুলনা করছে। রাপুনজেলও ফ্রাইপেন দিয়ে আঘাত করে মানুষের হুঁশ উড়িয়ে দিতো। সেও পেরেছে। খুশির চটে সে ফ্রাইপেনটা রেখে যেই না মানুষটাকে মুখ বরাবর করে। তখনি চমকে ‘ইন্নালিল্লাহ্’ বলে লাফিয়ে উঠে। অজ্ঞানরত ব্যক্তি অন্য কেউ নয় বরংফাটাবাঁশ আরভীক ফাওয়াজ এর পিএ। অঞ্জয় তার পূর্ব চেনা। কেননা সে তাকে দেখে ছিল আরভীক এর সঙ্গে চলাফেরা করতে। বিধেয় বুঝতে পেরেছে বাসার মধ্যে আরভীক এসেছে। এ মুর্হুতে অঞ্জয়কে না দেখে আঘাত করার কারণে আফসোস করছে সে। কি করবে বুঝতে পারছে না। হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে বসেছে।
তখনি দরজা কটকট করে খুলে ভেতরে প্রবেশ করে আরভীক। ভেতরে নিরবতা দেখে সে প্রথমত আনজুমার দিকে তাকায়। তাকে বিধ্বস্ত, হতবাক দেখে আশ্চর্য হলো সে। কেননা আজ মেয়েটি তাকে দেখেও চিল্লাচ্ছে না। ব্যাপারটা তার হজম হলো না। ফলে আনজুমার চোখের দৃষ্টি অনুসরণ করে মেঝের দিকে তাকায়। মেঝেতে অঞ্জয়কে লুটিয়ে থাকতে দেখে চমকে গেল। আশফি আরভীককে দেখে খিলখিলিয়ে হেসে বলে,

‘মাম্মা বারি দিছে, মাম্মা বারি দিছে।’

ব্যস শুরু হলো আরভীক এর মেলোড্রামা। দাঁত কেলিয়ে আনজুমার দিকে তাকিয়ে বলে,

‘ছেহ্ ছেহ্ মনখুনি মহিলা। এতটা জোরে বারি দিলা। বুঝতে পারছি আমার ভাই তোমার ওয়াশরুম কি ব্যবহার করছে। সেজন্য মেরে ফেলতে চাইছো। সে তোমার ওয়াশরুম খেয়ে ফেলতে ছিল না। যে বারি মেরে তটকা বানিয়েছো। শুধু একনাম্বার কাজই ছাড়তে গেছিল।’

ঘোরের মধ্যে ছিল আনজুমা। তার উপর আরভীক এর ন্যাকা কথা শুনে সে চোখ বুজে দৃঢ় শ্বাস নিল। তার দিকে তাকিয়ে ইনিয়ে বিনিয়ে কণ্ঠে বলে,

‘তো আপনার ভাই মুতার আর জায়গা পাইলো না। আমারই বাথরুম ইউজ করতে হলো। মুতে দুর্গন্ধ করে ফেলছে। ইশ! কি দুর্গন্ধ। মনে হচ্ছে কমোডে পানিও মারিনী।’

আরভীক এর মুখ হা হয়ে গেল। মেয়ের কথার কি শ্রী! তার কথা শুনে সে নিজেই নিজের কথা গুলিয়ে ফেলছে। তবুও হার মানেনি। আনজুমার দিকে আঙুল তুলে বলে,

‘ইডিয়েট গার্ল এখনি পুলিশ এসে তোমাকে নিয়ে যাবে। দেখব তখন তোমার পটরপটর কোথায় যায়।’

‘যান যান পুলিশ এলেও আমার কিছু করতে পারবে না হাহ্।’

ভাব নিয়ে কথাটি বলে উঠে আনজুমা। দুহাত বুকের উপর গুজে ভ্রু বাঁকিয়ে হাসে সে। আরভীক সন্দেহের গলায় জিজ্ঞেস করে।

‘কেন ভয় লাগে না বুঝি! কপালে যে শনি ঘুরছে তা জানো না মেবি।’

‘একদম না আজ আমার কপালে মঙ্গল গ্রহ ঘুরছে। শনি তো আপনার কপালে আছে। এখনি যদি আপনার লাপাঙ্গা মুতখোড় সঙ্গীকে নিয়ে বেরিয়ে না যান। তাহলে আপনার উপর পানি ঢেলে দেব।’

পানি ঢালার ভয় দেখিয়ে আরভীককে ব্যর্থ জব্দ করার চেষ্টা করে আনজুমা। ইতিমধ্যে ফাহাদ একজন মহিলা কনস্টেবল নিয়ে চলে এসেছে। তাকে আসার জন্যে আহবান জানিয়ে ছিল আরভীক। মেসেজ করে ঠিকানা দিয়ে ছিল। এতে ফাহাদ কোনো ধরনের প্রশ্ন করেনি। বরং বন্ধুর ডাকে চলে এলো। এবার আনজুমা সত্যিতে ঘাবড়ে গেল। সে ভাবেনি আরভীক সত্যিই পুলিশ ডাকবে। ডেকেছে তো ডেকেছে এবার যদি বারি মারার দায়ে ফাঁসি হয় তাহলে ছাড়াবে কে তাকে। তিক্ষ্ণতার দৃষ্টিতে আরভীক এর দিকে তাকায়। আরভীক আনজুমার দৃষ্টি উপেক্ষা করে ফাহাদকে বলে,

‘অফিসার এ মেয়েটা আমার পিএয়ে কে বারি মেরে ভোঁতা বানিয়ে দিয়েছে। এখনো জ্ঞান ফিরেনি তার। দেখছেন আমার পিএয়ে হতে না পেরে আমার প্রাক্তন পিএয়ের জান কবজ নিয়ে ফেলতে চাইছে।’

নিজের নামে মিথ্যে অপবাদ শুনে আনজুমা নির্বোধ হয়ে গেল। আরভীক এর সামনে গিয়ে কলার টেনে ধরে বলে,

‘ঐ বলদ মুখের বুলিতে মিথ্যে কথা ভালোই ফুটাস। আমি কবে তোর পিএ হতে চেয়েছি হে!’

‘ওমা সেকি তালবাহানা করছে দেখছেন অফিসার। আজকাল কার মেয়েগুলো লাগামহীন হয়ে যাচ্ছে।’

ফাহাদ নিশ্চিত আরভীক জাল বুনে ফন্দিতে ফেলার চেষ্টা করছে আনজুমাকে। সে আনজুমাকে চিনলেও আনজুমা তাকে চিনতে পারেনি। কেননা সে মাস্ক পরে মুখ ডেকে এসেছে। যেহেতু আরভীক মেসেজে বলেই দিয়েছিল যে আনজুমার বাসায় আসতে হবে। সেহেতু তার থেকে গুপ্তচরের বেশে পুলিশ হয়ে আসতে হলো। আনজুমা দ্বিরুক্তি করতে গেলে ফাহাদ মাঝখানে থামিয়ে দেয়। আরভীকে চেনেও না চেনার ভান করে কথা জিজ্ঞেস করে।

‘স্যার আপনি এখন মেয়েটিকে কি শাস্তি দিতে চান!’

‘শাস্তি’ শব্দটা শুনে ঢোক গিলে আনজুমা। কেননা এই গর্দভ ছেলেটার কাছ থেকে শাস্তি নেওয়া মানে হলো সমুদ্রে গা ভাসিয়ে দেওয়া। মনে মনে আল্লাহর কাছে চাইছে যেন এ যাত্রায় বেঁচে যাক। কিন্তু সূচাঁলো দুষ্টুমিপূর্ণ হাসি যখন আরভীক এর ঠোঁটের কোণে বিরাজমান দেখে। তখন বুঝতে পারে সে মাইঙ্কার চিপায় ফেঁসেছে, প্রখরভাবে ফেঁসেছে। মাথা নুয়ে শান্ত কণ্ঠে জিজ্ঞেস করে।

‘বলুন আমি রাজি।’

কথাটি শুনে আরভীক ফাহাদকে চোখ টিপ দেয়। কারণ শেষমেষ মেয়েটাকে সে জব্দ করতে পেরেছে।

ভাবনার বিচ্ছেদ ঘটে আনজুমার কণ্ঠ শুনে। সে পানি ভর্তি জগ নিয়ে এসেছে। আরভীক পানি ছিটিয়ে দেয় অঞ্জয়ের মুখে। নিভু নিভু চোখ খুলে মাথা চেপে ধরে বসে। মাথায় মৃদু যন্ত্রণার চটে চোখ তুলে তাকায় আর্দশ ব্যক্তিদ্বয়ের দিকে। ঢোক গিলে আমতা আমতা করে বলে,

‘আ আমি কোথায়,কে আপনারা, চিনি না আপনাদের। আমি বরং যায়।’

তাদের কথা না শুনে দৌড়ে বেরিয়ে গেল অঞ্জয়। আনজুমা নিরবে মুখ হা করে তাকিয়ে রইল। অঞ্জয় স্মৃতিশক্তি হারিয়েছে নাকি জ্বিন ঢুকেছে তার উপর বুঝতে পারল না। আরভীক অঞ্জয়ের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে দুঃখি গলায় বলে,

‘উফ তোমার বারির ঠেলায় আমার পিএয়ের মেমোরি লস্ট হয়ে গেল। কাল যদি তোমাকে অফিসে না দেখছি। বিশ্বাস করো গলা টিপে মেরে ফ্রাইপেন দিয়ে তোমাকে ভেজে খাবো।’

অবুঝের চোখে তাকায় আনজুমা। ফ্রাইপেন হারিয়ে ফেলেছে ফাঁটাবাঁশের কারণেই। তো নতুন ফ্রাইপেন কোথার থেকে আসবে। তা ভেবে প্রশ্ন করে

‘আমার ফ্রাইপেনকে নর্দমায় ফেলছেন। সে আবার কোথার থেকে আসবে।’

‘বাজার থেকে কিনে পাঠিয়ে দেব। নতুন ফ্রাইপেনের উপর ঝাড়ফুক দিয়ে দোয়া পাঠ করে রান্না করিও। পুরাতন ফ্রাইপেন তো নর্দমায় গেছে। তার জন্যে মাগফিরাত কামনা করবে ওকে।’

কথা শেষ করে আনজুমার সামনে থেকে কেটে পড়ে আরভীক। বেচারী ক্রোধে জ্বলছে তাও চুপ রইল। ইচ্ছে করছে এখনি আরভীক এর মাথা বরাবর ফ্রাইপেন এর বারি মারতে। কিন্তু তার আদরের ফ্রাইপেনকে খুন করেও খুনি বাইরে টইটই মারতে চলে গেল। মনে মনে ফ্রাইপেনকে ভেবে বলে,

‘ফ্রাইপেন তুই চিন্তা করিস না। যেখানেই থাকিস ভালো থাকিস। তোকে দিয়ে আর মাছ-মাংস ভাজা হলো না। তোর সতীন এনে দিলেও তোকে কিন্তু ভুলব না। কারণ তুই আমার রান্নার প্রিয় ফ্রাইপেন বলে কথা।’

চলবে……

(আজ গল্পটা লিখার পরও কেটে গিয়েছিল। ২৫০০শব্দ লিখার পর কেটে গেলে কেমন কষ্ট লাগে সেটা শুধু তারাই বুঝে যারা লেখে। এখন তাও কষ্ট করে লিখেছি। যা লিখলাম তাতে ছোট পর্ব ১৭৯৯শব্দের হয়েছে। ক্ষমা করবেন এতে। কালকে বড় পর্ব দেব ইন শা আল্লাহ্।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here