নেশাক্ত প্রণয়োণী পর্ব_১৩

0
937

#নেশাক্ত_প্রণয়োণী
#লেখিকা_তামান্না(আল রাইয়ান)
#পর্ব_১৩
(এলার্ট)

‘মিস্টার ফাওয়াজ আইম এক্সট্রেমলি সরি। ইউর ওয়াইফ ইজ নট প্রেগন্যান্ট। দিজ ইজ ফেইক নিউজ।’

কথাটা শুনে হতাশার গ্লানি ফুটে উঠে আরভীক এর মুখশ্রীতে। ডক্টর ডেভিভ অপরাধীর মত দৃষ্টিনত করে বসে আছে। অঞ্জয় বারদুয়েক ঢোক গিলছে এবং বারংবার তার বসের চেহারা লক্ষ করছে। চেহারায় ক্রোধ ফুটে উঠার পূর্বেই সে পালানোর ফন্দি এঁটে রাখে। ডক্টর ডেভিড কে ক্ষুণ্ণ দেখে মায়া হলো আরভীক এর। সে নাস্তার মধ্যে থাকা নুডলসের স্যুপ এগিয়ে দিল। তার জন্যে বরাদ্দকৃত ভেজিটেবল স্যুপ নিয়ে রেখেছে। ডক্টর ডেভিড কৃতজ্ঞতার চোখে বলে,

‘থ্যাংকস বাট আই হেড মাই ব্রেকফাস্ট ইয়ারলি!’

‘গুড দ্যাটস ওয়াই ইউ আর ডক্টর।’

কথাটি শুনে হেসে মাথা নাড়ে ডক্টর ডেভিড। আরভীক সেই হাসিকে গর্দভ বানিয়ে দিল কয়েক পলকে। এমন কথা বলে যে,

‘বাট হার্টলি দ্যা বুল’শিট।’

আরভীক এর কথায় ভুলবশত হেসে মাথা নেড়ে সায় দিল ডক্টর ডেভিড। অঞ্জয় দেখে মুখ টিপে হেসে দেয়। ডক্টর ডেভিড মিস্টার ফাওয়াজ এর বলা বাক্য পুনরায় রিমাইন্ডে নেই। এতে সে ইঁদুরের চাহনী নিয়ে বলে,

‘ওয়াই ইউ সেয়ে দ্যাট!’

‘বাংলা জানেন নিশ্চয়। আপনার রোগী সন্দেশ হলো আসল ডক্টর। আমার মন বুঝে মাইয়া আমার বুকে বেঁধে দিল। আই প্রাউড অফ দ্যাট মেন্টালবয়।’

‘অপমান করছেন!’

‘না না মুন্না অপমানের অ ও করতে পারি না আমি।’

রেগে দাঁড়িয়ে যায় ডক্টর ডেভিড। তিনি ক্রোধান্বিত দৃষ্টিতে তর্জনী আঙুল দেখিয়ে শাঁসিয়ে উঠে।

‘আই উইল সি ইউ। এই অপমানের শোধ আপনাকে দিতে হবে।’

‘সে কি অঞ্জয় এখন তো দেখছি সবার জন্য সিমের অফার দিতে হবে। একে একে শোধ দিতে চাই। তুই এক কাজ করিস। ড্যাশ বাংলার অফার দিস অফিসের মধ্যে। যারা শোধ নিতে চাইবে তাদের একেকটা যেন একলাখ টাকার জরিমানা দিয়ে লোন পূরণ করে। আজকাল দেখছি সবাই শোধ দেওয়া-নেওয়ার জন্যে মরে যাচ্ছে। তাদের চিন্তায় খিদে পেয়ে গেল উফ!’

আরভীক মাথা ঝেড়ে। চোখ ড্যাবড্যাব করে ভেজিটেবল স্যুপ মুখে পুরে নেয়। গলার নিচে ভদ্র স্বভাবের মত রুমাল গেঁথে স্যুপের বাটি হাতে নিয়ে খেতে লাগে। এই বলদমার্কা ডক্টরের জন্যে খামোখা সে সাধুসন্ন্যাসী হয়ে কাঁধ সোজা করে বসে ছিল। ব্যাড বয়েস কাধ সোজা না ত্যাড়া বাকাঁ করে রাখে। ভেবেই আপনমনে চেয়ারে হেলান দিয়ে স্যুপের চামচ ভর্তি করে মুখে নিচ্ছে। ক্ষোভে দাঁড়িয়ে ফুসছে ডক্টর ডেভিড। তিনি তার ধাঁরালো চোখের ভস্মীভূত দৃষ্টি দিয়ে সামনে বসে থাকা ব্যক্তি অথাৎ আরভীক এর উপর মনে মনে ঘোর অপমান করার চিন্তা পুষে রাখে।
আরভীক খাওয়ার মাঝে আড়চোখে ডক্টর ডেভিডের ক্রোধের দৃষ্টি দেখতে পাই। বাঁকা হেসে তার অপমানের মাত্রাকে অত্যধিক বাড়িয়ে দিতে ঠাট্টার কণ্ঠে বলে,

‘প্লিজ ডোন্ট লুক ইন মাই স্যুপ! খাওয়ার মধ্যে আপনি চোখ দিলে আমার পেট খারাপ করবে। আপনাকে কবেই অফার করেছি নুডলস স্যুপ খাওয়ার জন্য। সেই আপনি ‘না না’ করে নিজেকে বেচারার নাতী বানিয়ে দিলেন। তাতে আমার আর কি করার থাকে।’

‘সেট আপ মিস্টার ফাওয়াজ। মুখ সামলে কথা বলুন! আপনি জানেন কার সামনে আপনি নিজের ম্যানারলেজ কথা বলছেন।’

আরভীক চমকে এদিক ওদিক দেখে। দাঁড়িয়ে অঞ্জয়ের চৌপাশ টেনেটুনে, তারে ঝাড়ফুক দিয়ে দেখল। মাথা নেড়ে কি যেন ভেবে ‘নাহ্’ বলে কেবিনে থাকা সোফার কোণায়,পেছনে,পর্দার পেছনে, তার বিশ্রাম রুমে খোঁজ লাগানোর ব্যর্থ ভান করে ক্লান্ত হলো। কোমরে হাত রেখে দাঁড়িয়ে যায়। ফোঁস ফোঁস করে জোরালো শ্বাস নিয়ে অঞ্জয়ের দিকে তাকায়। সে নিজেও আশ্চর্য চোখে তার বসের মতিগতি বুঝার চেষ্টা করছে। ডক্টর ডেভিড আরভীক এর দৃষ্টি আর্কষণে কেশে বলে,

‘কথা না বলতে জানলে বোবা থাকেন। এসব খোঁজাখোঁজির মানে কি!’

‘ডক্টর কেবিনের মধ্যে অঞ্জয় আর আমি বাদে এক শু’য়ো’রের’ বাচ্চা দাঁড়িয়ে আছে। তারে তাড়ানোর জন্য লাঠি খোঁজ ছিলাম। শু’য়ো’রের’ বাচ্চারা নাকি লাঠি দেখলে ভয় পায়। তাই লাঠি আছে কিনা দেখছিলাম।’

দাঁতে দাঁত চেপে ডক্টর ডেভিড ঝাঁঝালো গলায় শাঁসায়।

‘এসে ছিলাম আপনার ভালো করতে। তবে ভবিষ্যৎ আপনার খারাপ করার ব্যবস্থা করব।’

আরভীক তড়িঘড়ি ডক্টর ডেভিডের কাছে এসে তার পিঠে বার’দুয়েক ঠাস ঠাস করে হাতের জোরালো বারি দেয়। শেষ বারিটা তীব্রতর হওয়ায় ধপাস করে পা পিছলে টাইলসের উপর পড়ে তিনি। আরভীক মুখে হাত দিয়ে বলে,

‘সরি ডক্টর শুভকাজে আপনাকে গড ব্লেস দিতে চাইছিলাম। জানতাম না আপনার শুভ কাজের উপর গড নারাজ থাকবে। তিনবারের চড়ও সামলাতে পারলেন না ছেহ্ ছেহ্।’

‘ইউউউ….।’

ডক্টর ক্রোধের বশীভূত হয়ে দাঁড়িয়ে ঘু’ষি মা’র’তে হাত এগোয়। কিন্তু সেই হাত আরভীক এর মুখে লাগার পূর্বেই আঁকড়ে ধরে সে। ডক্টর ডেভিড এর মুখশ্রী লালবর্ণ হয়ে গেল। তা কি যন্ত্রণায় নাকি রাগে বুঝছে না অঞ্জয়! সে ঢোক গিলে আক্রমণ রোধের জন্য তার বসের সাথে দাঁড়িয়ে আছে। কিন্তু তাদের একে অপরের মধ্য থেকে গরম ভাবাবেগ তার বসের পক্ষ থেকেই বেশি পাচ্ছে সে। আরভীক ডক্টর ডেভিডের দিকে হাসিঠাট্টার চেহারা নিয়ে শুধায়।

‘এই হাত সামলে রাখুন মিস্টার ডেভিড! আমার হাতের হিংস্র চামড়া ঘুমিয়ে আছে। ইঁদুরের ছানার জন্য জেগে উঠে না সে। যদি জাগে তাহলে এই হাত কি শরীরও থাকবে না। প্লিজ কিপ দ্যা ওয়ার্ড’স সেভ ইন ইউর মাইন্ড। ইফ ইউ ফরগেট। দেন কল মি 01*****। আইম অলওয়েস এভেলেবেল।’

ডক্টর ডেভিডের হাত ছু’ড়ে দেয় আরভীক। সে অপমানিত নজরে চেয়ে দ্রুত হেঁটে কেবিনের দরজা খুলে। তথাপি সে বের হবার মুহুর্তে তার কাঁধ ধাক্কিয়ে সামনে এসে পড়ে আরভীক। ডক্টর ডেভিড থতমত খেল। ক্রোধের বশে সামনে দেখে চলার কথা ভুলেই গিয়ে ছিল। লেখিকা_তামান্না(আল রাইয়ান)
আজ যদি আরভীক এগিয়ে না আসতো। তবে মুখ থুবড়ে মাথা ফাটার তীব্র আশঙ্কা ছিল। ঢোক গিলে বুকে বার’দুয়েক ফুঁ দিয়ে সামনে দেখে অবাক হলো সে। অঞ্জয় চোখ নামিয়ে পকেট থেকে ফোন বের করে আজাইরা ঘাঁটাঘাঁটি করে। আনজুমা বিস্মিত নজরে আরভীক এর মুখপানে চেয়ে রইল। মনে মনে বিরক্ত হলো সে।
আরভীক আনজুমার চোখের চাহনীর মধ্যে চোখ মেরে ডক্টর ডেভিডের দিকে তাকিয়ে বলে,

‘ডক্টর আপনার তো দেখছি শরমবরম নেই। কাপলের চুমাচুমির সময় সামনে থেকে সরে যেতে হয়। তাও জানেন না দেখছি। হ্যান্ড্রেন পার্সেন্ট সিউর আপনি প** দেখে অভ্যস্ত।’

ডক্টর ডেভিড ঠোঁট ফুলিয়ে চোয়াল শক্ত করে বেরিয়ে যায় কেবিন থেকে।
অন্যথায় আরভীক এর মুখ থেকে বেরিয়ে আসা কথাগুলো শুনে কান গরম হয়ে গেছে আনজুমার। প্রচণ্ড অস্বস্তিতে ছড়াছড়ি করার চেষ্টা চালায়। তার মুখের দিকে তাকিয়ে আপনমনে ক্রোধ প্রকাশ করে।
এ ব্যাটার দেখছি খেয়ে দেয়ে কাম নেই। দেখা নেই, সাক্ষাৎ নেই সরাসরি কোমর জড়িয়ে ঝুকে আছে। নিশ্চিত গুলিস্তানের মাল!

‘কি যে বল তুমি!’

লাজুক চেহারা করে লজ্জামিশ্রিত হাসি দিল আরভীক। আনজুমা তার কথা শুনে বিব্রতে হা হয়ে গেল। সে তার মনের কথা শুনল কেমনে ভেবে পেল না! ঢোক গিলে কর্কশ গলায় শুধায়।

‘বে’হা’য়া লোক ছাড়ুন।’

আরভীক শুনে ভ্রু কুঁচকে তাকায়। কি ভেবে যেন কোলে উঠিয়ে নিল আনজুমাকে। একপলকে ভ্যাবাচেকা খেয়ে যায় সে। চোখ দিয়ে ড্যাবড্যাব করে তাকায়। অঞ্জয় লাজলজ্জার সহিত ‘আসছি’ বলে দ্রুত কেটে পড়ে। আনজুমা ঠোঁট পাঁকিয়ে চেঁচিয়ে বলে,

‘কি করছেন কি! নির্লজ্জমার্কা লোক। ছাড়তে বলছি কানে শুনেন না।’

‘ওকে ছেড়ে দিলাম।’

ঠাসস করে সোফার উপর পড়ে আনজুমা। কোমরে ব্যথা না পেলেও কোল থেকে পড়ার কারণে কোমর সামান্য বেঁকেছে। আরভীক শার্টের কলার বিকৃত করে গরম ভাব নেওয়ার চেষ্টা করে। এমনে হাত নেড়ে নিজেকে ‘ফিলিং হ’ট’ বুঝায়। ভাবপূর্ণ গলায় শুধায়।

‘গুলিস্তান তো দূরের কথা, আমি হলে হতাম আফগানিস্তানের মাল! আল হাবিবি, আল হাবিবি, আল হাবিবি ওয়াল্লাহ্ ওয়াল্লাহ্।’

কথাগুলো বলে কাঁধ নেড়ে নেড়ে আপনমনে নেচে সরে পড়ে আনজুমার সামনে থেকে।
আনজুমা চোখ বুজে উঠার চেষ্টা করে। কয়েক সেকেন্ডে দাঁড়িয়ে কোমর সটান করে। ফলে ব্যথাতুর জায়গায় আরামবোধ করে। এবার যেন বাঘিনী ক্ষেপেছে। কোমরে হাত রেখে আঙুল তুলে ঝারি দিতে চাইল আরভীককে। কিন্তু এ কি ! আরভীক ভদ্রসন্ন্যাসী সেজে তার চেয়ারে বসে কাঁধ সোজা করে কাজ করছে। কখন কবে বসল টেরই পেল না সে। তার কাজ দেখে মনে হচ্ছে। দুনিয়া উল্টে গেলেও কাজ তার একমাত্র ধ্যানপরায়ণ। আনজুমা তার সন্নিকটে গিয়ে টেবিলে মৃদু আওয়াজ করে। আরভীক কপাল কুঁচকে বিরক্তি প্রকাশ করল। যে কোন থার্ড পার্সন তার ও কাজের ভেতরে নাক গলিয়েছে! আনজুমা তার বিরক্তিভরা চেহারা দেখেও না দেখার ভান করে বলে,

‘আপনি আমাকে টার্চ করছিলেন কেনো!’

‘ওয়াট! আমি কেনো তোমাকে টার্চ করতে যাবো!’

‘এই একদম পল্টি মারবেন না। আপনি আমাকে টার্চ করে কোলে নিয়ে সোফায় ফেলছেন!’

‘ওয়াও ইউর ইমাজিনেশন ইজ ওয়ান্ডারফুল ! আই লাভ ইট।’

‘আপনার লাভ দেখাতে হচ্ছে না। জাস্ট সেয়ে ওয়াই ইউ আর টাচ মিইইই!’

‘লুক মিস আবান! দোয়া করি নিশ্চয় একদিন আপনাকে কোলে নিয়ে সোফায় ফেলব। বাট ইউ নো না দিজ ইজ আওয়ার ওয়ার্ক টাইম, নট প্রাইভেসি! ইফ ইউ রিয়েলি নিড ইট টু বি ট্রু। দেন আই অন্ট মাইন্ড। আই অলওয়েজ রেডি টু গিভ ইউ এ পাপ্পি হাগ!’

শেষাক্ত কথাটি চুমুর মত করে বলে ঠোঁটের কোণায় দুষ্টু হাসির রেখা টেনে আনে আরভীক। আনজুমার শরীর শিউরে উঠছে কথাগুলো হজম করতে। বেচারী চেয়ে ছিল আরভীককে কোলে নেওয়ার দায়ে শায়েস্তা করবে। তবে সে নিজেই তার পায়ে কুড়াল মেরে খাল খনন করে ফেলছে। এত এত বদ’মায়েসী কথাবার্তা এই মানুষটার পেট থেকে আসে কেমনে বুঝছে না সে। রুক্ষের ন্যায় দৃষ্টি সরিয়ে ইতস্ততবোধক শ্বাস ছাড়ে। সে এসে ছিল কাজে! অন্যথায় এসেই বে’হায়া’গিরির সম্মুখীন হলো।
আরভীক আড়চোখে আনজুমার মূর্তি ভাব দেখে মুখ খুলতে নিলে। সে থামিয়ে দিল। তার কাঁধ থেকে ফাইল বের করে আরভীক এর দিকে এগিয়ে দেয়।
সে ঝলমলে চোখে নিয়ে দাঁত কেলিয়ে বলে,

‘লাভ লেটার হাআ!’

‘স্যাররর!’

চিৎকার দিয়ে ফেলে আনজুমা। ঘাবড়ে যায় আরভীক। তড়িঘড়ি ফাইলটা নিয়ে দেখা শুরু করে। আনজুমা দম আঁটকে রেখে চোয়াল শক্ত করে বলে,

‘এ কয়েকদিনে যত সেল করেছি তার ফাইল! ভুলত্রুটি হলে দেখিয়ে দিন।’

‘হুম সেল কমপ্লিট করেছো বাইশটা, অর্ডার কনফার্ম হয়েছে পনেরোটা গুড জব! এই পনেরোটা অর্ডার কমপ্লিট করে আমাকে কাস্টমারের নামের লিস্ট দেবে। সব মিলিয়ে তোমাকে কমিশন দেওয়া হবে।’

উৎফুল্ল হলো আনজুমার মন। খুশিমনে ফাইলটি নিয়ে বেরিয়ে যায়। আরভীক কম্পিউটারের দিকে চোখ ফেলে আপনমনে তৃপ্তির হাসি দেয়। সে ভুল নয়, আনজুমাকে জব দিয়ে লাভের পথ দেখে চলেছে।

২৪.
কেবিনের থাই গ্লাস দিয়ে শক্ত চোখে পুরু দৃশ্য আয়ত্তে নিয়েছে শ্রেয়া। ক্রোধে তার মাথা ফেটে যাচ্ছে। আরভীককে পাওয়ার জন্যে ক্লাবে তার করা পাগলামী আদৌ তার মস্তিষ্কে কড়া নাড়ে।
হাত মুঠোবদ্ধ করে গ্লাসের সামনে থেকে সরে গেল সে। আরভীক এর টনক নড়ে। চোখ তুলে তৎক্ষণাৎ কেবিনের বাহিরে দৃষ্টিপাত করে। এমপ্লয় যে যার মত কাজ করছে দেখে, চোখ বুলিয়ে আনজুমার প্রস্থান করা নজরে আসে। সে লিফ্টে প্রবেশ করে কোথায় যেনো যাচ্ছে! চিন্তিত হলো তার মন। ব্লুটুথ অন করে অঞ্জয়ের ফোনে ডায়ল করে।

অঞ্জয় অফিসের কফি সাইডে বসে। কফি খাচ্ছিল! সিঙ্গেল মানুষ শেয়ারিং করার রমণী নেই। ফলে শান্তভাবে পান করে যাচ্ছে। আকস্মিক কল পেয়ে ফোনটি কানে ধরে।

‘ইয়েস বস!’

‘অঞ্জয় এখনি দুনাম্বর ফ্লোর থেকে লিফ্ট যাবে। তুই গিয়ে তিননাম্বর ফ্লোরের বাটন প্রেস করে ঢুকে যাবি।’

‘কেনো স্যার!’

মৌন রইল আরভীক। অঞ্জয় দিরুক্তি না করে ‘ওকে বস’ বলে কল কাট করে। লিফ্টের সামনে এসে তিননাম্বার বাটন প্রেস করে। কেননা সে তিননাম্বার ফ্লোরে আছে। তবে সে ভাবতে লাগে, ‘তার বস হঠাৎ দুনাম্বার মানে এমপ্লয়ের ওয়ার্ক ফ্লোর থেকে আসা লিফ্টে কেন ঢুকতে বলল। স্যারের ফ্লোর স্যার নিজেই কি আসতেছে!’

ভেবে সমাধান পেল না। হিতে বিপরীত সমাধান পায়। লিফ্টে আনজুমা ম্যাডামকে দেখে চমকে গেল। পরক্ষণে সে স্বাভাবিক হয়ে ম্যাডামের পাশে গিয়ে দৃষ্টিনত করে দাঁড়ায়। মনে মনে বিরবিরিয়ে বলে,

‘বস ম্যানেজার বানিয়ে এসিস্ট্যান্টের কাম করায়। এখন দেখছি ওয়াচম্যান হওয়াই বাকি ছিল। মাগো কই তুমি! ওবাবাগো তোমার বাসার চিরাগকে বাচিঁয়ে নাও। না হলে কোনো একদিন আরভীক বস আমাকে জিনি বানিয়ে ছাড়বে।’

লিফ্ট চারনাম্বার ফ্লোরে এসে থামল। চোখ পাঁকিয়ে একপলক আনজুমার দিকে তাকায় অঞ্জয়। সে দরজা খুলতেই বেরিয়ে পড়ে। তার পিছু নেই অঞ্জয়। আনজুমা ‘গার্লস প্রাইভেসি’ লিখা কেবিনের সামনে এলে। থেমে যায় অঞ্জয়ের কদম। লেখিকা_তামান্না(আল রাইয়ান)ঠোঁট চেপে সাইডে থাকা বক্সের সাথে আড়াল হয়ে দাঁড়িয়ে রইল। আনজুমা ভেতরে প্রবেশ করে।

______

রাজিব স্টেয়ারিং এ হাত রেখে শ্রেয়ার রাগান্বিত চেহারার দিকে তাকিয়ে আছে। মেয়েটা অল্পকিছুতে রেগে বোম হয়ে যায়। ফলে পুরু আবেদনময়ী নারীর রুপ ফুটে উঠে তার মাঝে। যা দেখে স্বয়ং বেকাবু হয়ে পড়ে রাজিব। ক্লেশকর চাহনী কাটিয়ে দিতে রাজিব আহ্লাদী গলায় জিজ্ঞেস করে।

‘হলো কি! গেলেন হাসিমুখে, আসলেন রেগেমেগে।’

‘আরভীক তার পিএয়ের সঙ্গে রঙলিলা রচায়। আর আমার সঙ্গে সামান্য হ’ট’নেসও শেয়ার করে না। হ’ট’ ফিলিংয়ের কথা শুধু ঐ পিএয়ের জন্যে কেনো! মেয়েটি কি তার বউ লাগে! বাট আইম হ্যাপ্পি ফর ওয়ান থিংক! মেয়েটা তাকে মোটেও পাত্তা দেয় না। আর আমি যে পুরু শরীর তার জন্য বেডে বিকিয়ে দিতে চাই। সেই আমাকে শ্রেয়া জাফরকে ক্লাবে সকলের সামনে চড় লাগিয়ে ছিল। সামান্য গা ঘেঁষে তার হাত নিজের বু’কে’ লাগাতে চেয়ে ছিলাম। কিন্তু বু’কে হাত বুলানোর বদলে গালে চড় বসিয়ে দিল। বাট আই হেভ নো প্রব্লেম! ড্যাড একবার বিয়েটা ঠিক করে ফেলুক। তখন এক রুমে রাত কি দিনেও বের হতে দেবো না।’

রাজিবের শরীর উত্তেজিত হয়ে আছে। কথাগুলো শ্রেয়া আরভীককে কল্পনা করে বললেও। তার প্রভাব বিস্তার করছে রাজিবের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে! আমতা আমতা করে শ্রেয়া কে বলে,

‘শুনেন আপনাকে বাসায় ছেড়ে স্যারের কাছে যেতে হবে। ডাকছে আমায়।’

শ্রেয়া চোখ ঘুরিয়ে মাথা নেড়ে সায় দিল। রাজিব সময় বিলম্ব না করে গাড়ি টেনে শ্রেয়াকে বাসা অব্দি নামিয়ে দেয়। শ্রেয়া যেতেই রাজিব গাড়ি সোজা ক্লাবে নিয়ে গেল। পার্কিং সাইডে গাড়ি পার্ক করে ক্লাবে ঢুকে ম্যানেজারকে তার আইডিকার্ড দেখায়। তিনি দেখে মুচকি হেসে জিজ্ঞেস করে।

‘হাউ ক্যান আই হেল্প ইউ স্যার!’

‘রুম নাম্বার ফরটি থ্রি। সেন্ড এ গার্ল ফর মি কুইক!’

রুমে গিয়ে শার্ট খুলে জোরে জোরে শ্বাস ছাড়ছে। নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে বসেছে সে। শ্রেয়াকে নিদিষ্ট দিন ছাড়া পাওয়ার চেষ্টা হলো বৃথা। ফলে সে এ পদ্ধতি অবলম্বন করে।

২৫.
লিয়াকত সাহেব সোফায় আয়েশে বসে আছে। তার সামনে পায়ের উপর পা তুলে বিপরীতে বসে আছে আরাজ সাহেব। ভদ্রতার হাসি তার মুখে বিরাজমান। আরাজ সাহেব গম্ভীরমুখে শুধায়।

‘কি জন্যে এসেছিস!’

‘সে কি সাহেব! ভাই বুঝি বাসায় আসতে পারবে না।’

মৌন হয়ে বসে রইল আরাজ সাহেব। তার অর্থ ‘হে সে আসতে পারবে না’। লিয়াকত সাহেব বিষয়টি আমলে না নিয়ে রসিকপূর্ণ ভাবে তার সঙ্গে আনা ব্যাগ থেকে একটি কার্ড বের করে। কার্ডটি আরাজ সাহেবের নিকট এগিয়ে দিল। তিনি কার্ডটি নিয়ে খুলে দেখে। এক নেকাপ পরিহিত ভদ্র মেয়ের ছবি! কার্ডের উপর ‘জম্মদিনের আমন্ত্রণ’ লিখা। ভ্রু কুঁচকে এলো তার। তিনি প্রশ্ন করার জন্যে ধাতস্থ হলেই লিয়াকত বলে,

‘সাহেব মামুনির ইচ্ছে তার জম্মদিনের উৎসবে আপনি আর ছোট সাহেব এসে উৎসব পালনের সঙ্গে বিয়ের পাক্কাপাক্কি করে যাবেন। উদার মনের মাইয়া। সবার কথা চিন্তা করে ফয়সালা করে।’

‘শ্রেয়া জাফর!’

‘জ্বি সাহেব!’

তিনি ইতস্তত মনে ভাবছে,ছেলেকে কেমনে রাজি করাবে! তার ছেলে যে হারে ত্যাড়ামি করে। মেয়ে দেখার কথা বললে নিশ্চিত ঘরে পাও রাখবে না। উল্টো নিজেকে আমার কথা ছাড়াই ত্যাজ্য পুত্র করে দিবে।

‘সাহেব কোথায় হারালেন!’

লিয়াকত সাহেবের কথায় আরাজ সাহেবের ধ্যান ফেরে। তিনি আশ্বস্ত গলায় বলে,

‘জম্মদিনের অনুষ্ঠান দুদিন পর। আমরা আসব জানিয়ে দিস। এখন যেতে পারিস তুই।’

কথার সমাপ্তি টেনে তিনি পত্রিকা পড়ায় মনোনিবেশ করে। লিয়াকত সাহেব কার্ডটি টেবিলে রেখে ব্যাগের চেইন মেরে সদর দরজা পেড়িয়ে বেরিয়ে গেল। যাওয়ার সময় তার মুখে ভেসে উঠছিল শয়তানি হাসি।
মনে মনে এক কথাই আওড়ে যায়।

‘সর্বনাশী কন্যার সাক্ষাৎ পেতে চলেছিস আরাজ তুই। অপেক্ষা কর।’

চলবে…..
(সবাই আরভীককে সুয়াইব ভেবে রাখল কেনো😳! অন্য কেউও তো হতে পারে।🤭)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here