#নেশাক্ত_প্রণয়োণী
#লেখিকা_তামান্না(আল রাইয়ান)
#পর্ব_১৪
‘শ্রেয়া শুন মামুনি তোর শ্বশুর আরাজ খুব ভদ্র,শালীন পুরুষ। তোর থেকে দুদিন খুব ভদ্রতার সহিত চলার অভিনয় করতে হবে। একটুও যেনো টের না পাই তুই কেমন মেয়ে! আমার মেয়ে আমার নজরে অভদ্র নয়। তবে তোর শ্বশুরের নজরে অভদ্র হতেই পারিস। ডু ইউ গেট দ্যাট!’
শ্রেয়া স্বাভাবিক ভাবে হাতের নখ পরিষ্কার করছে। ভাব এমন যে এ কাজটাই উত্তম। আশপাশের ‘কা কা’ করে কে কি বলল শুনছে না, পাত্তাও দিচ্ছে না! জাফর সাহেব মেয়ের মৌনতা দেখে তার নিকট গিয়ে নেইল মেশিনটা ছিনিয়ে নেন। সেটি টেবিলের ড্রয়ারে রাখতে রাখতে বলে,
‘দুদিন শর্ট ড্রেস না পরে লং ফুল হাতার ড্রেস পরার ড্রামা করো।’
ব্যস জাফর সাহেবের উক্ত কথায় কটমট করে রেগে তাকায় শ্রেয়া। চেঁচিয়ে বলে,
‘ওয়াট ড্যাড! আর ইউ মেন্টাল! ইউ নো দ্যাট আই হেইট দ্যাট ফা** লং ড্রেস।’
‘মুখ সামলে কথা বলো মামুনি। আমার সামনে যা নয় তাই মুখে আনলে। মনে রেখো তোমার শ্বশুর খুব শক্ত মানুষ! একবার খুঁত পেলে আরভীককে পাওয়ার কথা ভুলে যেতে হবে তোমার।’
জাফর সাহেব মেয়ের বিছানায় নম্র,শ্লীল কাপড় এলিয়ে রাখছে। আজই কিনে আনিয়েছে। শ্রেয়া কথাগুলো হজম করে নিশ্চুপে কাপড়গুলোর দিকে তাকিয়ে থাকে। একেকটা ফুল হাতার কাপড়!
কোনো দিক থেকেও কাটাছেঁড়া নেই, পুরু শরীর আবৃত করে দেয় কাপড়গুলো। আমতা আমতা করে তার বাবাকে উদ্দেশ্য করে বলে,
‘ড্যাড এসব কিসের ড্রেস! কোনো ছেঁড়া নেই। শরীর তো গরমে পুড়েই যাবে।’
‘এই তিনপিচ শেলোয়ার কামিজ আর এই পাঁচপিচ জামদানি শাড়ি। কেমনে পরতে হয় তা আমি ফিমেল মেইডকে বলে দেব। সে পরিয়ে দেবে।’
কথা শেষে তিনি অর্ডার করে আনা পার্সেল থেকে আরেকটি প্যাকেট বের করে। ভ্রু কুঁচকে সন্দেহের দৃষ্টিপাত প্যাকেটের দিকে রাখে শ্রেয়া। জাফর সাহেব ঢোক গিলে একপলক মেয়ের মুখের দিকে তাকায়। রক্তিম কাঠিন্যতা তখনো বিরাজমান তার! এই প্যাকেটের ভেতরকার কাপড়টি দেখার পর মনে হয় আগুনেই পুড়িয়ে দিবে কাপড়টিকে! তিনি সন্তপর্ণে প্যাকেট থেকে কাপড়টি বের করে। বিছানার অন্যপাশে সেটি বড় করে উম্মুক্ত করে এলিয়ে দিল। শ্রেয়া ক্ষেপে গজগজ করে উঠে। ধপধাপ পা ফেলে তার নিজের বাবাকে অবমাননা করে কাপড়টি হাতে নিয়ে বাথরুমের ভেতর ঢুকে। সেখানে পানি ভর্তি বালতির মধ্যে কাপড়টিকে ছু’ড়ে মা’রে। হতাশার গ্লানি নিয়ে মেয়ের অগোচরে ব্যর্থ শ্বাস নেই তিনি। শ্রেয়া তার বাবার দিকে তাকিয়ে কর্কশ গলায় শুধায়।
‘তুমি লং ড্রেস পরতে বললে মেনে নিলাম। কিন্তু বোরকা,নেকাপ, হাতমোজা এসব কি! এসব জিনিস পরলে আমাকে কোনো বেহেনজি থেকে কম মনে হবে না। আর রইল আরভীকের বাপের কথা। তিনি কেমন পছন্দ করে তা জেনে আমি কি করব! আমার নজর শুধু আরভীকের মধ্যে বুঝছো। তার বাপ নাক গলালে রাস্তা থেকেই সরিয়ে দেব।’
গজগজিয়ে নাক ছিটকে রুম থেকে বেরিয়ে যায় শ্রেয়া। জাফর সাহেব নিরবে শুনে আকস্মিক অট্টহাসি দিয়ে উঠে। তিনি আপনমনে হেসে তালি দিতে থেকে মেয়ের ড্রেসিং টেবিলের সামনে এলো। আয়নায় তার মুখশ্রীতে শয়তানি চেহারা ভেসে উঠেছে। সেই সঙ্গে অমার্জিত বিশ্রী হাসি! সেই হাসির প্রস্থ চওড়া রেখে বলে,
‘নাউ দ্যা ড্রামা ইজ স্টার্ট! মামুনি তোমাকে আরাজের প্রতি অতিষ্ঠ করেই তাদের বাসায় পাঠাব। সেখান থেকেই রিয়াল গেম স্টার্ট হবে। ছুহ ছুহ ছুহ আরাজ ভাই তোর যে কৈ মাছের প্রাণ! সেই মাছের প্রাণে এসিড ঢালতে আমার মেয়েকে পাঠাব। তুইও বোকা সেজে চলে আসতেছিস মামুনির জম্মদিনে হাহাহা। তবে সমস্যা তো শুধু একটাই।’
তার নিজের বলা শেষের কথায়। তারই মুখে নেমে এলো ঘন আঁধার। লেখিকা_তামান্না(আল রাইয়ান)
সঙ্কটের দুয়ারে ঐ এক ব্যক্তি রসিক হলেও রহস্যে ঘেরা। সে একটাই আরভীক! তার ক্ষেত্রে পড়া প্রতিটি আর্টিকেল প্রমাণ করে যে, ছেলেটি আরাজ সাহেবের দ্বিতীয় সন্তান। কিন্তু বছর এক আগে আজীবের মৃত্যুর পরেও তার ভাই কোথায় ছিল! যদি চেহারায় মিল হতো। তাহলে এভিডেন্স পেতো নকল ভাইয়ের রুপ সেজে আরাজ সাহেবের প্রপার্টির উপর হাত জমিয়েছে। তাও বলতে পারছে না, কেননা কোনো প্রমাণ নেই যে আরভীক আরাজের ছেলে নয়। নিজের রুমে এসে রকিং চেয়ারে বসে ভাবান্তর হলো জাফর সাহেব।
‘যতদূর মনে পড়ে। আজীবের মৃত্যুর দুমাস পরই আরভীকের নাম ছড়ায়। তার ব্যাপারে খোঁজ লাগিয়ে জানছি। সে লন্ডনে স্টাডি কর ছিল! বাবা-ভাইয়ের সঙ্গে মনোমানিল্যতা হওয়ায় যোগাযোগ করেনি। অথচ তাদের নাকি খুব ভালোবাসে। তাই বলে কত লাখ লাখ টাকা যে ছেলে পাঠিয়েছে এর ইয়াত্তা নেই। আজীব তার ছোট ভাইয়ের পেমেন্ট দেওয়া দেখে সে নিজেও কিছু করার জন্য উদ্বেগ নেই। এরপর তো আজীবের মৃত্যুতে সব শেষ হয়ে যায়। তখনি কেনো আরভীক ফিরে এলো! এসে তার বাপ-অফিস-জমিজমা সামাল দিচ্ছে। তার স্টাডি শেষ না চলছে তাও জানতে পারি নাই। একজন এসি হয়েও এর সমাধান করতে পারছি না। পারবোও বা কেমনে! খোঁজ লাগালেই এক কথা সামনে বেরিয়ে আছে। এই আরাজ নাকি তার দ্বিতীয় ছেলের উপর রেগে ছিল। এজন্য দুনিয়ার অগোচরে লুকিয়ে রাখছিল। এটা কি ধরনের অযুহাত তার! যাই হোক যেহেতু প্রপার্টি লিগ্যালি তার দ্বিতীয় ছেলের উপরে। সেহেতু শ্রেয়া মামুনি একবার বউ হতে পারলেই হবে। প্রপার্টির সাথে জামাইকে তার জোরকা গোলাম বানিয়ে ফেলবে। শ্রেয়া মামুনিও ফাস্ট অফ অল তাকেই বশে আনবে। এরপর আরাজকে আমাদের হাতে তুলে দেবে। সো অল্ড এজ হয়ে গেছে তোর আরাজ! এখন রেস্টিং টাইম লাগবে তোর। যেটা আমরা দেবো তোকে। হাহাহা।’
তার হাসির ঝংকার পুরু রুম কাঁপিয়ে দিলেও। এক মেসেজের আগমনে তা নিবিঘ্নতায় ছেয়ে গেল। রকিং চেয়ার থেকে উঠে চার্জে থাকা ফোন হাতে নিয়ে নোটিফিকেশন দেখে। ডিরেক্ট এসএমএস দিয়েছে কেউ। আননোন নাম্বার দেখে তিনি দেখবে না ভাবল। পরক্ষণে নাম্বারটি চেনা মনে হওয়ায় মেসেজ অপশনে প্রেস করে। খেয়াল করে দেখে পূর্বের ঐ নাম্বার থেকে মেসেজ এসেছে। যেখানে গোটা অক্ষরে লাল রঙের লেখা আছে।
‘ড্রিম অলওয়েজ নট কাম ট্রু। রিমেম্বার দিজ!’
মেসেজটি দেখে মাথা বিগড়ে গেল জাফর সাহেবের। তৎক্ষণাৎ এসি পদের ইউনিফর্ম পরে ড্রাইভারকে গাড়ি বের করতে বলে। ড্রাইভার মালিকের কণ্ঠ শুনে পুলিশের গাড়ি বের করে দাঁড়িয়ে রইল সদর গেটের সামনে। শ্রেয়া তখন রুম থেকে কটমটে বের হলেও। সামনে রাজিব কে পেয়ে ছিল। যাকে দেখেই উতলা হয়ে ঘনিষ্ঠ ভাবে জড়িয়ে ধরে। রাজিব শ্রেয়ার স্পর্শে মাতাল হতে গিয়েও হলো না। গলা ঝেড়ে বলে,
‘খুব খুশি দেখছি ম্যাডামকে! ব্যাপার কি হুম।’
‘আরভীক আমার বার্থডে পার্টিতে আসবে।’
কথাটি শুনে রাজিব ভ্রু নাচিঁয়ে হাতজোড়ে তালি দিল। যেন শ্রেয়ার মনে হয় সে জয় করেছে বিশ্বের মূল্যবান রত্ন! রাজিবকে টেনেটুনে গার্ডেনের দিক থাকা চেয়ার টেবিলের কাছে এনে বসে। সেখানে ওয়েটারকে নাস্তা দিতে বলে। রাজিবের ভাষ্যমতে, ‘সে খুব ক্ষুধার্ত’। বিষয়টি শ্রেয়ার কাছে সিরিয়াস ঠেকেছে। ফলে ওয়েটার নাস্তা আনা অব্দি কথায় মশগুল ছিল। হঠাৎ সে তার বাবাকে ইউনিফর্ম পরিহিত কোথাও যেতে দেখে দাঁড়িয়ে যায়। তাকে অনুসরণ করে রাজিবও। তবে উৎপেতে জেঁকে বসল না বিষয়টিতে। ওয়েটার টেবিলে নাস্তার ট্রে রাখায় দুজনের দৃষ্টি ট্রের মধ্যে পড়ে। ওয়েটার চলে গেলে রাজিব নাস্তার ট্রে থেকে ফ্রাইড রাইস নিয়ে খেতে থাকে। শ্রেয়া একগালে হাত রেখে ঘোরলাগা দৃষ্টিতে রাজিবকে খুটিয়ে দেখছে। কখনো সে খুটিয়ে দেখার সুযোগ পায়নি। প্রতি মুহুর্ত আরভীকের ভাবনা তাকে তাড়াতো। তবে অসময়ে রাজিবের সৌন্দর্য্য, মোহিত রুপ চোখে ভাসছে শ্রেয়ার। রাজিব খোশমনে ফ্রাইড রাইস খেয়ে যাচ্ছে। ইনিয়ে বিনিয়ে আধটু কথা বলছে। তবে মনযোগ সম্পূর্ণ খাবারে। যেন কতবছরের ক্ষুধার্ত যুবক সে। শ্রেয়ার চোখ আঁটকে গেল রাজিবের গলার ডান পাশে। স্নিগ্ধভাবে চুক্ষগোচর হচ্ছে না। তবে লাল রঙের ঠোঁট দেখতে পেয়েছে বলে সিউরিটি দিতে পারবে সে। ঠোঁটে দুষ্টু হাসি টেনে বলে,
‘হ’ট গার্ল কি স্ট্যাটিস্ফাইড করেছে হুম! মনে তো হচ্ছে, না করতে পারায় চলে এসেছিস পেটের খুদা মেটাতে।’
কথাগুলো শুনে রাজিবের হাত আপনাআপনি থেমে গেল। সে বলতে চাইনি শ্রেয়াকে। তবে জেনেই যেহেতু গেল লুকিয়ে লাভ কি! ফলে মাথা নেড়ে ‘না’ বোঝায়। শ্রেয়া তাজ্জবের দৃষ্টিতে চেয়ে বলে,
‘তোর শরীরে লাল লিপস্টিক মেখে আছে। মাখনের সঙ্গে শুয়েও রসমোলাই খেলি না। আই ডোন্ট বিলিভ! সিন্স ইউ আর বয়।’
রাজিব ক্রুর হেসে বলে,
‘আমাকে স্ট্যাটিস্ফাইড এক মেয়েই করতে পারবে। তারে আমি এখনো খুঁজতেছি কিন্তু পাইতেছি না।’
‘ওহ সো ব্যাড। হু ইজ দ্যা গার্ল এন্ড ওয়াট’স হার নেইম!’
‘ডোন্ট নো। আই জাস্ট সি হার ফেইস এন্ড ফল ইন ফাস্ট সাইড অফ এট্রাকশন।’
‘বাহ্ লাগে রেহ্ তারে পেলে আমাকে বলিস! সুযোগ করে দেব নে।’
চোখ টিপে শ্রেয়া তার হাটু অব্দি উম্মুক্ত পা দিয়ে রাজিবের পায়ের টাখনুতে ঘেঁষা দেয়। অন্যথায় সে নিজেও তার এক হাত দিয়ে রাজিবের হাতে নোংরাভাবে ছুঁয়ে দিচ্ছে। রাজিব ক্লান্ত, ক্লাবে পুরু তিনবার ক্লাবের মেয়েকে নিয়ে খেলছে! এখন শরীরে অনুভব, উত্তেজনা নেই তার। ফলে শ্রেয়াও আপনমনে করে চলেছে তার ফিলনেস।
২৬.
ফাহাদ আরভীককে টেনেহিচঁড়ে ভার্সিটি এনেছে। তার কোনো ইচ্ছেই ছিল না ভার্সিটির মুখ দর্শন করার। কিন্তু হা’রা’মী বন্ধুরে সেটা কেমনে বোঝাবে। তারা বুদ্ধিমান বলে সেও কি বুদ্ধিমান নাকি! সদর দরজার সামনে আনতেই আরভীক সটান দাঁড়িয়ে যায়। কাঁদো কাঁদো মুখ করে ফাহাদের দিকে তাকিয়ে বলে,
‘আমার মত নাদান বাচ্চাকে স্কুলে আনার দায়ে তোর উপর ঘোর মামলা করব কু’ত্তা’।’
‘কু’ত্তা তোর পেছনে লাগিয়ে দেব ফাজিল। আরে ভার্সিটি যেতে তোর গা হিসকিসাই কেন!’
‘জানিস না কেন! আমি লন্ডন থেকে স্টাডি কমপ্লিট করে আসছি।’
‘ডুড তোকে কি আমি এডমিশন করাতে নিয়ে যাচ্ছি!’
‘ধুর শা’লা জানা জিনিসে ঝাঁপ মারতে নিয়ে যাচ্ছিস। মনে রাখিস জিনিসটা সামনে এলেই তোর উপরে ঝুলায় আমি তো ভাই কেটে পড়ব। তখন কোথাকার ভাই, কোথাকার ডুড সব বুঝবি!’
‘স্ট্রেঞ্জ কিসের জন্যে এত ভড়কে আছিস বল তো!’
আরভীক আড়চোখে তার দিকে তাকিয়ে মুখ ফিরিয়ে নেয়। ফাহাদ প্রশ্নাত্মক চোখে চেয়ে আছে। সে পকেটে হাত গুজে এপাশওপাশ চোখ ঘুরিয়ে বিরক্তিসূচক ‘চ’ উচ্চারণ করে।
ফাহাদের কান বরাবর এসে ফিসফিস করে রগচটা কণ্ঠে বলে,
‘ওয়েট এখনি তোর জবাব পেয়ে যাবি।’
ফাহাদ ভ্রু কুঁচকে তাকায়। তার ভাবনার পূর্বেই কোথার থেকে যেন ‘আরভীক ডার্লিং’ বলে এক মেয়ে দৌড়ে আসতে লাগে। সে আতঙ্কিত চোখে ঢোক গিলে আরভীক এর দিকে তাকায়। বন্ধুর চোখে রক্তিম আভা দেখেই ‘হেহেহে’ করে হাসার চেষ্টা করে। দাঁতে দাঁত চেপে আরভীক রাগের ফুলকার ফোঁস করে উঠে। ফাহাদ ভড়কে তৎক্ষণাৎ মেয়েটির হাত ধরে সরিয়ে দেয়। এতে মেয়েটি তীব্র ক্ষুব্ধের চোখে ফাহাদের দিকে তাকায়। নিজের হাত ছাড়ানোর জন্যে সাপের মত ছটপট করে বলে,
‘ঐ ফাহাইদ্দা ছাড়। আরভীক বাবুকে বহুদিন পর দেখছি। এক হাগ তো বানতি হে!’
মেয়ের কথায় আরভীক গলা ঝেড়ে মানে মানে কেটে পড়ে। তাকে যেতে দেখে মেয়েটি অত্যধিক নড়চড় করতে থাকে। ফাহাদ মেয়েটির আচরণে ক্ষোভ ও হিংস্রতার বশে কষে এক চড় লাগিয়ে দেয়। চড় খেয়ে দিনদুনিয়া যেন ঘুরে উঠে মেয়েটার। রাস্তার মধ্যে পড়ে যায়। ছলছল চোখে ফাহাদের চোখের দিকে তাকায়। ঠোঁট কাপঁছে তার। ঠোঁট চেপে ব্যথাতুর গালে হাত রেখে উঠে দাঁড়ায়। সময় বিলম্ব না করে সেখান থেকে চলে যায়। ফাহাদ কপাল চেপে মুখ ফিরিয়ে নেওয়ার দরুণ সে খেয়াল করেনি মেয়েটির চোখের ভাষা। রাগ মানুষকে নিয়ন্ত্রণহীন করে দেয়। কিন্তু ঠান্ডা হলে ঠিকি মস্তিষ্কে রাগের বশে করা কাজের অনুতপ্ততা ভেসে উঠে। কপাল চুলকে মাথা ঠান্ডা হতে তার দু’মিনিট লাগল। মাথা ঠান্ডা হওয়ায় কি করেছে ভেবে তৎক্ষণাৎ পিছু ঘুরে। কিন্তু হতাশ মন! জায়গাটা নিরবতায় ছেয়ে আছে। তার প্রেয়সী নেই। হ্যাঁ, তারই প্রেয়সী। যাকে সে মন উজার করে ভালোবেসেছে। তবে কখনো মুখ ফুটে বলেনি। বলবেও বা কেমনে ভার্সিটি লাইফে যাকে পছন্দ করে ছিল। সেই পছন্দের রমণী তারই বন্ধু আরভীকের উপর ফিদা হয়ে আছে। এ জেনে ‘ভালোবাসি’ কথাটা বলার কোনো পন্থাই খুঁজে পেল না সে। প্রথম যেদিন ভার্সিটির মধ্যে সবার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিতে আরভীককে এনেছিল। তখনি তার প্রেয়সী ক্রাশ নামক বাঁশ খেয়ে মাতোয়ারা হয়ে গেল। এ শুনে তার হৃদয় দহনে ছাই হতে থাকে। আরভীক বুঝে তৎপর হলো বিষয়টার ধামাচাপা দিতে। একবারের পরিচয় শেষে আর কখনো দেখা দেয়নি ভার্সিটির আগপিছে। শুধু অনুষ্ঠান হলে আসতো। বাদ বাকি দিনে আড্ডার মশগুলেও আসতো না। ফাহাদ বুঝেও না বুঝার ভান করে আরভীককে সঙ্গে নিয়ে আসতে চাইতো। তবে এতে আরভীক এর অতিষ্ঠতা দেখে চুপ হয়ে যায়। আজ এনে ছিল ভার্সিটির হেডমাস্টার দেখা করতে চাইছে বলে!
এসে যে মাত্রাতিরিক্ত কান্ডের সম্মুখীন হবে কে জানতো!
কপাল চেপে ধপ করে বসে পড়ে ইট-সিমেন্টে বানানো বসার জায়গায়। আরভীক দূর থেকে গম্ভীরভাবে চেয়ে ছিল। ধীরস্থির পায়ে এগিয়ে ফাহাদের পাশে গা ঘেঁষে বসে। মনভার না করে রসিক কণ্ঠে শুধায়।
‘ডুড তুই বোকা সেটা জানতাম, বলদ সেটা আজকে বুঝছি।’
‘সি ডুড লিভ মি এলং!’
‘হে দেবদাস হওয়ার প্রথম ডায়লগ সবাই এটাই মা’রে।’
‘প্লিজ ডুড!’
ব্যস আরভীক সূক্ষ্ম দৃষ্টিতে চেয়ে ঠাসস করে ফাহাদের গালে চড় মা’রে। সে বেচারা ভেবাচ্যাকা খেয়ে তাকায়। গালে হাত রেখে ‘উহ্ উহ্’ শব্দের গোঙানি বের করে মুখ থেকে। যার অর্থ সে বুঝাচ্ছে, ‘বুঝি বুঝি সব বুঝি।’
চোখগুলো কান্নার মত করে ফেলে। কিন্তু চোখের পানি ঝরছে না। আরভীক তিক্ষ্ণ ঝাঁঝালো কণ্ঠে বলে,
‘হে এখন মেয়েদের মত কাঁদ তুই। শা’লা খব্বিশ কোথাকার! সাইবা যে তোরে ভালোবাসে। এটা সবাই বুঝে। আর তুই বলদ একটা। মেয়েটার মনের মও বুঝতে পারস নাই।’
এতক্ষণ আরভীকের চড় খেয়ে গাল মালিশ করছিল ফাহাদ। ব্যথা যেন কমে। কিন্তু তার কথা শুনে ব্যথাও ছু মন্তর হয়ে গেল। উম্মাদনা ভরা চোখে বন্ধুর দিকে তাকায়। আরভীক ঠোঁট চেপে বাঁকা হাসি দেয়। হাসিটা দেখে মুখটা ফাঁটা বেলুনের মত করে ফেলে ফাহাদ। কথাগুলো মন্দ বলেনি আরভীক। সে আড়ালে আড্ডার সময় শুনতে পেতো!
সাইবা তার বান্ধবীকে ফসুরফসুর করে কার নামে যেন বলতো।
‘বলইদ্দা আমার মনের কথাও বুঝে না। হা’লার প্রেমে পড়ে লুতুপুতু খাচ্ছি! আর ঐ মিয়া আমারেই শাঁসায়। কেমনে ঐডারে বুঝামু এখন বলতো!’
‘তো তুই তোর ড্রিমবয়কে বলেই দে।’
‘কমু না সে যদি বুঝে তাহলে ভালো, না বুঝলে ঠাঠাইয়া চড় লাগিয়ে ধুর ধুর করব।’
সাইবার কথাগুলো শুনে ফাহাদ সেদিন একটুর জন্যে ভেবেছিল। সে তার ব্যাপারে বলছে। পরক্ষণে তার মন বদলে গেল। কেননা সাইবাকে সে চেনে! সে আরভীকের উপর ফিদা হয়েই প্রেমের কথা তার বান্ধবীকে বলছে। কিন্তু এক কথায় তার মনে সন্দেহ হলো আরভীক যদি তার মন না বুঝে, তাহলে কি সাইবা সত্যিতে চড় লাগাবে নাকি! ভেবেই আতঁকে উঠে। কেননা ঐ চড় লাগানোর পরিণতি হিসেবে জান ছিনিয়ে নেবে আরভীক। না না প্রেয়সীকে বাঁচাতে তার কবজ হয়ে সে দাঁড়িয়ে থাকবে ভেবেই পণ করে নিল।
ধুপধাপ পিঠের মধ্যে বারি লাগায় ‘উহ উহ’ করে উঠে বেচারা! আরভীক বারি দিয়ে বলে,
‘এখন ভেবে লাভ নেই! মাইয়া হাতছাড়া করে ফেলছিস।’
আরভীক উঠে হাঁটা ধরে হেডমাস্টারের রুমের দিকে। তবে তার ফোন বেজে উঠে। ফলে সে কানের ব্লুটুথ অন করে। অটোমেটিক মেয়েলী কণ্ঠে শুনতে পেল। ‘কলিং মিস আবান’। নামটি শুনে দুষ্টুমি হেসে বাটন প্রেস করে।
‘আসসালামুয়ালাইকুম মিস আবান! দুদিনও দেখি আমাকে না দেখে সহ্য করতে পারছেন না। এতই মিস করলে বলে দিন। আমি হাজির হতে রাজি।’
‘ওয়ালাইকুম আসসালাম আপনার বে’হা’য়া কথা শুনতে কল দেয়নি। আর মিস তো দূরের কথা।’
আরভীক মুখটা বিড়ালের মত করে আনজুমাকে শুধায়।
‘ওগো ফুলটুসি রাজি হইয়া যাও না। সাতধনের রাণী বানাইয়া রাখমু।’
‘ধ্যাঁত আজাইরা কথা!’
কল কাটতে নিলে আরভীক ‘ওকে রিলেক্স’ বলে থামিয়ে দেয় তাকে। আনজুমাও চুপ হয়ে যায়। আরভীক চোখ বুজে দৃঢ় গলায় জিজ্ঞেস করে।
‘বলো তোমার কথা! আমার তো এই জীবনে আর প্রেম, বিয়েশাদি করা লাগবো না।’
‘আমার কাছে সেল করার যে প্রডাক্ট’স আছে। তার মধ্যে আশি শতাংশ শ্রেয়া জাফর নামের এক মেয়ে কিনতে চাইছে।’
নামটি শুনে চট করে চোখ খুলে চমকে যায় আরভীক। নামটি তার মস্তিষ্কে অগ্নিকুণ্ড ধরিয়ে দিল। হিংস্র অথচ স্থীর গলায় বলে,
‘সে কি বলছে তোমাকে!’
‘বলছে এই প্রডাক্ট’স সে অন্য কোথাও পাবে না। আমার থেকে নিলে নাকি আমার আর কোম্পানির জন্য লাভবান হবে।’
শার্টের হাতা হোল্ড করতে থেকে মাথার চুল টেনে তপ্ত জোরালো শ্বাস ছাড়ে আরভীক। আনজুমাকে উত্তপ্ত রাগে চোয়াল শক্ত করে বলে,
‘ডোন্ট গিভ হার এনি প্রডাক্ট’স।’
কট করে কল কাট করে দেয় আরভীক।
চলবে…..