নেশাক্ত প্রণয়োণী পর্ব_১৯

0
946

#নেশাক্ত_প্রণয়োণী
#লেখিকা_তামান্না(আল রাইয়ান)
#ধামাকা_পর্ব_০২(স্পেশাল)

অফিসার আনজুমার হিজাবে টান দিতেই তার হাতের মধ্যে বু’লে’ট লাগে। তীব্র আর্তনাদে হাত চেপে আতঙ্কিত চোখে সামনে তাকায়। কাউকে না দেখতে পেয়ে হাতের দিকে দৃষ্টি দেয়। বুলেট লেগে হাতের মধ্যে ছক কষে গেল যেন। র’ক্ত ঝরছে অগণিত। আনজুমা ভয়ে থরথর করে কাঁপছে। আকস্মিক কারো ঝাঁঝালো কণ্ঠ শুনতে পেয়ে ভীতি মনভাব পালিয়ে গেল তার। থমকানো চোখে দরজার দিকে তাকায়। ইতিমধ্যে ভেতরে এলো কয়েকজন পুরুষ। তার মধ্যে আনজুমার চোখ আঁটকে যায় আরভীক নামক পুরুষের উপর। লেখিকা_তামান্না(আল রাইয়ান)
ব্ল্যাক এন্ড হোয়াইট কালারের মিক্সড ফুল হাতা শার্ট,হাতের হাতা ফোল্ড করা,ডার্ক ব্লু প্যান্ট ড্রেসআপে পার্ফেক্ট মাফিয়া লাগছে তাকে। মাফিয়ার মতই তার চেহারায় একপ্রকার ঝাঁজমিশ্রিত অতীব হিংস্রতা ফুটে উঠেছে। পিস্তল ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে অফিসারের কাছে গেল। সে হতবাক চোখে ভীতিগ্রস্থ হয়ে তাকিয়ে আছে মিস্টার ফাওয়াজের দিকে। কখনো তার আচরণ বা রাগ সম্পর্কে ধারণা পায়নি সে। অথচ এখন যেন সে নিজের সামনে যম দেখতে পাচ্ছে। আরভীক নিজের কপালে পি’স্ত’ল দিয়ে চুলকাতে থেকে অতিষ্ঠ ভরা গলায় জিজ্ঞেস করে।

‘যে প্রাণেশ্রয়ীকে আমি ভালোবেসে আগলে রাখার প্রতিশ্রুতি দেই। সেই প্রাণেশ্রয়ীর গায়ে ফুলের টোকা দেওয়ার সাহস কেমনে হলো তোর হে! কোন হাত দিয়ে জানি চুল ধরছিলি।’

ভাবান্তর হওয়ার ভান ধরে চোয়াল শক্ত করে অফিসারের চুল শক্তপোক্ত হাত দিয়ে খামচে ধরল। চুলে চাপ পড়ায় গগদবিদারী চিৎকার দিয়ে উঠে সে। আরভীক মুখ থেকে ‘উফ বিরক্তিকর’ শব্দ বের করে অঞ্জয়ের দিকে তাকায়। আদেশের সুরে বলে,

‘শোন একটুকরো গোবরমাখা শুকনো কাপড় দেই। হা’রা’ম’জা’দার মুখ বন্ধ করতে হবে।’

অঞ্জয় শুনে ঢোক গিলে দুর্গন্ধে বেচারা মা’রা যাবে। তবুও বসের আদেশ শুনে, নাক চেপে ধরে। হাতে গ্লাভস পরে গার্ডের কাছ থেকে বক্স নিল। বক্সের ঢাকনা খুলে একটি শুকনো কাপড় নেয়। যেথায় বিভিন্ন পশুর গোবরমাখানো !
কাপড়টি দেখেই অঞ্জয়ের বমির মত মাথা ঘুরায় উঠার উপক্রম। দ্রুত গতিতে বসের কাছে গিয়ে কাপড়টি দেখায়। আরভীক চেয়ে অফিসারের মুখে ঢুকিয়ে দিতে ইশারা করে! অঞ্জয় তৎক্ষণাৎ অফিসারের গাল ধরে ভেতরে কাপড়টি ধেবে দেয়। অফিসার চোখ বড় বড় করে তার মুখ খুলার জন্য বিনতি করে। কিন্তু আরভীক এর মায়া হলো না।
সে গিয়ে আনজুমার দড়ি জোরালো ভাবে এক টান মে’রে ছিঁ’ড়ে ফেলে। মেয়েটি কাঁপছে তার মুখশ্রীর বর্বরপূর্ণ রুপ দেখে। আরভীক আনজুমার ঘনিষ্ঠ হয়ে কানের মধ্যে ফিসফিসিয়ে বলে,

‘আজ তোমার হাজবেন্ডের নিউ ভার্সন দেখবে মিসেস ফাওয়াজ।’

কথাটি সংক্ষিপ্ত হলেও এর গভীরতা যেন বিদ্যুৎ চমকানোর মত আনজুমার মাথায় বাজ পড়ছে। অবুঝ চোখে তাকায়।
‘হাজবেন্ড,মিসেস ফাওয়াজ’ সম্বন্ধ করার কারণ জানার আক্ষেপ,কৌতূহল যেন ঘিরে ধরেছে আনজুমাকে। আরভীক মেয়ের ঠোঁটের কোণায় লেগে থাকা রক্ত নিজ হাত দিয়ে স্পর্শ করে চুষে খেয়ে নেই। অঞ্জয়,ফাহাদ ও সায়াজ তাদের দৃষ্টি সরিয়ে রেখেছে। জামাই-বউ তাদের রোমান্স তারা করুক!
হুদাই কাবাব হতে কেন যাবে!
আনজুমার মুখশ্রী লালবর্ণের আভায় মেখে গিয়েছে। সে তার দৃষ্টিপাত সরিয়ে ফেলে এ পুরুষের থেকে। তার চোখের দিকে হিংস্রতা যেমন দেখাচ্ছে, তেমনি প্রণয় ফিরে পাওয়ার নেশায় মন্ত্রমগ্নও বোঝাচ্ছে।
আরভীক হঠাৎ আনজুমাকে কোলে করে বাহিরে নিয়ে গাড়িতে বসিয়ে দেয়। অঞ্জয়ের কানে এসে বলে,
‘ভাবীর বেস্ট ট্রিটমেন্টের ব্যবস্থা কর।’

সে বিনা বাক্য ব্যয় করে বসের কথামত আনজুমা ম্যাডামকে মেডিক্যালে নিয়ে যায়। পরিত্যক্ত বাড়ির ভেতরে গিয়ে দুজন ব্যক্তির সামনে আয়েশ করে বসে আরভীক। পি’স্ত’লটি রেখে কপাল কুঁচকে শান্ত কণ্ঠে জিজ্ঞেস করে।

‘আমি কি বলিনী আমার সঙ্গে পাঞ্জা না নিতে! তবুও কেন নিয়েছিস তোরা ! তাও আমাকে কষ্ট দিতে মাসুম মা-ছেলের উপর নিযার্তন করেছিস। তুই তো ডক্টর রে মিস্টার ডেভিড! কেমনে পারলি এ কাজ করতে। যেহেতু কাজ শেষই করেছিস সেহেতু তোর জায়গাও হবে ক্লেভের সঙ্গে জাহান্নামের আগুনে!’

আরভীক এর বলা শেষাক্ত কথায় চমকে উঠে সবাই। ডক্টর ডেভিডের নড়চড় পুরু দমে থেমে যায়। শিহরিত হলো। তাকে পরিত্যক্ত বাড়ির পেছনে পেয়ে গার্ডস বেঁধে নিয়ে আসে আরভীক এর সামনে। অফিসারের পাশে আলাদা চেয়ারে বাঁধা হয়েছে তাকে। কিন্তু আরভীক কে দেখে তার মুখশ্রী উগ্র, ভ’য়া’ন’ক হয়ে যায়। যেন আজই সে তাকে নিজ হাতে খু’ন করে ফেলবে। ফলে সে নড়চড়ে নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করে। আরভীক শুধু দৃশ্যটির মজা নিতে থাকে।
তবে এখন তার মুখে বলা কথাটি শুনে ডক্টর ডেভিড আমতা আমতা করে বলে,

‘ওয়াট’স রা’বি’শ! হু ইজ ক্লেভ! আই ডোন্ট নো ওয়াট আর ইউ টকিং এবাউট!’

‘রিয়েলি ইউ ডাজেন্ট নো হুমম! ওকে এটা ঠিক কিনা বল ! তোর বাপে দুটা বিয়ে করছিল। দ্বিতীয় মায়ের সন্তানের সঙ্গে তোর বেশ যোগসূত্র ছিল এম আই রাইট! যাই হোক ভুল করলি তোরা। সৎ ভাইয়ের প্রতি এত দরদ যে, আমাকে কষ্ট দেওয়ার জন্য মাসুমিয়াতের গলা টিপে ধরছিলি। তোদের যম আজ তোদেরকে সঙ্গেই নিয়ে যাবে।’

ডক্টর ডেভিড ইনিয়ে বিনিয়ে কথা বলার জন্য মুখ খুলতে নিল। তবে কথা বলতে সক্ষম হলো না। তার গালের ভেতর কণ্ঠনালী বরাবর বু’লে’ট চালায় আরভীক। অফিসার আতঙ্কে ভরা চোখে ডক্টরের দিকে তাকায়। মরা লাশের মত ডক্টর ডেভিড এক পলক র’ক্তে’র দিকে তাকানোর সময় পেল না। তার প্রাণপাখি উড়াল দিল। আরভীক বসা থেকে উঠে অফিসারের কাছে গিয়ে তার চুল শক্ত করে ধরে। তার কানের কাছে ঝাঁঝালো গলায় শুধায়।

‘আজ তোকে এমন মরণ দেব যেমন তুই কল্পনাও করতে পারবি না। গার্ডস গিভ মি মাই বক্স কুইক!’

এক গার্ড এসে আরভীককে বক্স দেয়। সে বক্সটি খুলে প্রথমত গ্লাভস ও এপ্রোন পরে, মুখে মাস্ক লাগিয়ে নেই। বক্স থেকে
ধারালো ছু’ড়ি’,কাঁ’চি’ ও বোতল ভর্তি তেলাপোকা থেকে একটি হাতে নিয়ে মৃদু ভাবে চেপে রাখে। অফিসারের কপালের উপর
মাথার অংশ কা’টা শুরু করে।
অফিসার মাথা নেড়ে ‘উম উম উম’ করে ‘না’ বোঝায়! কিন্তু আরভীক থামে না। মাথার অংশ খুলে দেখে পুরু মস্তিষ্ক রক্তে মাখামাখি হয়ে আছে। সে কাঁ’চি দিয়ে তেলাপোকার রস অফিসারের মস্তিষ্কের মধ্যে দেয়।
অতঃপর জোরপূর্বক অফিসারের বুকের বাঁ পাশ কেটে হৃদপিন্ডে ছিঁড়ে তেলাপোকাটি গেঁথে দেয়। তার চিৎকারের শব্দ যেন পুরু রুম কাঁপিয়ে দিচ্ছে। আরভীক কাজ শেষে তার সামনে থেকে সরে রিপোটার্সের নিকটে যায়। তারা দুজন ভিডিও করে ভাইরাল করে ছিল। সেই শাস্তির দ্বায়ে তাদের চোখ উপরে ফেলল।

আরভীক চোখ সরিয়ে পাশ ফিরে তাকায়। দুজন মহিলা কনস্টেবল ও একজন ছেলে কনস্টেবল আছে। মহিলা দুটি সকলের মরণ দশা দেখে কেঁদেকুটে নাজেহাল অবস্থা তাদের। আরভীক তিক্ষ্ণ দৃষ্টিতে ‘খালিদা’ নামের মহিলাটিকে দেখছে। তার নিকট গিয়ে শান্ত কণ্ঠে বলে,

‘আমার সন্তানকে হাত লাগিয়ে ছু’ড়ে মে’রেছিলি তুই রাইট!’

মহিলাটি কাঁপা কাঁপা গলায় বলে,

‘সাহেব আমারে ছাইড়া দেন। আমি গোলামী করে কামটা করছি।’

‘তোকে ছাড় দিতে পারব না। তুই যে আমার সন্তানের গায়ে হাত তুলে হাতে ব্যথা দিয়েছিলি। তার শোধে তোর জীবনহারা চাইই।’

গর্জনের সুরে বলে আরভীক। পি’স্ত’লটি খালিদার কপালে রেখে তৎক্ষণাৎ চালিয়ে দেয়। বুলেট তার মাথার এপার ওপার হলো। দ্বিতীয় মহিলা কিছু না করায় তার শাস্তি স্বরুপ হাত কেটে প্রাণ ভিক্ষা দেই। সায়াজ গার্ডকে ইশারায় বলে মেয়েটিকে নিয়ে যেতে।
গার্ড তেমনি করল। আরভীক ছেলে কনস্টেবলের কাছে গেল। থমথমে চেহারা নিয়ে আরভীক এর দিকে তাকায়। এতক্ষণ দৃষ্টিনত করে নিশ্চুপ ছিল। নির্বোধপূর্ণ ধারণায় এঁটে ছিল। তাকে ভাড়া করে ছিল মোটা অংকের টাকা দেওয়ার বিনিময়ে। সেও সংসার বাঁচাতে টাকার লোভে কাজে জড়িয়ে পড়ে। তবে এমুর্হুত অনুতপ্ত সে! ‘ভাবিয়া করিও কাজ, করিয়া ভাবিও না’ বলে প্রবাদটি সত্য হলো তার ক্ষেত্রে।
আরভীককে দেখে সে মোটেও ভীতিগ্রস্থ নয়। তথাপি তার চোখে ভেসে উঠছে তার প্রিয় স্ত্রী, দু’সন্তানের চেহারা। হয়তো শেষ দেখাও করার সুযোগ পাবে না। দীর্ঘ শ্বাস নিয়ে আরভীক এর যে হাতে পি’স্ত’ল আছে। সে হাতটি ধরে স্বেচ্ছায় নিজের কপালে পি’স্ত’লটি ঠেকায়। আশ্চর্য,বিস্ময়তায় চোখে চেয়ে থাকে ফাহাদ ও সায়াজ। হলো কি ব্যাপারটা! এতক্ষণ মূর্খ, নির্বোধ মানব-মানবী ম’র’ণের ভয়ে রেহাই পাওয়ার লোভে আকুতি-বিনতি করছিল একেকটা।
কিন্তু এ ছেলে স্বেচ্ছায় খু’ন হওয়ার জন্য নিজের মাথায় পি’স্ত’ল ঠেকিয়েছে। তার ঠোঁট কাঁপছে, চোখ বুজে তপ্ত শ্বাস ছেড়ে বলে,

‘সাহেব ভুল হয়ছে, করার কিছু নেই। আপনে গু’লি মা’ই’রা আপনের কাম খতম কইরা নেন। শাস্তি পাওনে মোর ডর নাই। ডর শুধু মোর বউ-বাচ্চারে লইয়া। আপনেরে মোর বাড়ির ঠিহানা কই! গরুর বাজারের শেষ গলিত মাঝে ছাউনীর পুড়া বাড়িত থাহে মোর বউ-বাচ্চা। মোর মরণ হলে আপনে তাগো টেহা দিয়া দেইহা রাইখেন।’

চোখ বুজে থাকা অবস্থায় অনুশোচনার অশ্রুসিক্ত হলো তার। ফাহাদ ও সায়াজ অনুনয়ের দৃষ্টিতে আরভীক এর দিকে তাকিয়ে থাকে। কিন্তু কোনদিক নজর নেই তার! সে একনজরে ছেলের দিকে দৃষ্টিকোণ বজায় রাখছে। পি’স্ত’ল চাপে ‘ঠাসস’ করে শব্দ হলো। ফাহাদ ও সায়াজ চোখ বন্ধ করে নেই।
যখনি চোখ খুলে তাকায়। তখন অবাক এবং খুশি হলো।
আরভীক দেওয়ালে বু’লে’ট চালিয়েছে। ছেলের কাঁপুনি তৎক্ষণাৎ থেমে গেল। চমকিত চাহনী নিয়ে আরভীক সাহেবের দিকে তাকায়। সে ছেলের কাঁধে হাত রেখে বলে,

‘তুই দোষ করেছিস যার ভয়হীনতা আর অনুশোচনা তোর চোখে দেখতে পেয়েছি। এতক্ষণ যারা মা’রা গিয়েছে! তাদের চোখে না ছিল অনুশোচনা, না ছিল ভয়হীনতা। শুধু ছিল বাঁচার আকাঙ্ক্ষা। তাই প্রাণ হারিয়েছে এরা। তোকেও মে’রে দিতাম। কিন্তু পাষাণ নয় আমি! তুই তোর পরিবারের সাথেই থাকবি। তবে তোদের গলিতে না। আমার অফিসের দারোয়ানের চাকরী করবি তুই। মাসে মোটা অংকের টাকা পাবি। অফিসের গেইটে তিনজন দারোয়ান দাঁড়ায়। তুইও সততা বজায় রেখে দাঁড়াবি। কখনো যদি জানছি তুই সততার পথ ছেড়ে অসৎ রাস্তায় গিয়েছিস। তখন দিগিদ্বিক না ভেবে মে’রে দেব।’

‘সাহেব আপনের জন্য জীবন দিয়া দিমু। তবুও সৎ পথ ছাড়মু না।’

আরভীক ছেলের চুক্ষগোচরে ফিচেল হাসি দেয়। নিবিড় কণ্ঠে জিজ্ঞেস করে।

‘নাম কি তোর!’

‘সাহেব আমার নাম জসিম।’

সময় অবিলম্বে সে সায়াজের নিকটস্থ হয়ে বলে,

‘বাকি কাজ তোর ডকুমেন্ট দেখে চালায় দিস। আর জসিমকে কাজে নিয়ে যাহ্।’

সায়াজ জসিমকে সঙ্গে নিয়ে বেরিয়ে যায়। ফাহাদের সামনে এসে আরভীক চওড়া এক হাসি দেই। যা দেখে সূক্ষ্ণ, খেয়ে ফেলার মত নজর দেয় ফাহাদ। মিছামিছি রাগের গলায় শুধায়।

‘হা’রা’মজা’দা মে’রে ভর্তার খিচুড়ি বানিয়ে এখন ইনভেস্টিগেইটে আমারে ফাঁসাইয়া দিলি! ইচ্ছে করছে তোকেও এদের লগে খু’ন কইরা দেয় ফাজিল কোথাকার!’

রসিক আরভীক যেন পুনরায় ফিরে এসেছে। বন্ধুর কাঁধ শক্ত করে চেপে তার কাঁধের উপর চড়ে বসে। বেচারা আরভীক এর মত বডিবিল্ডারকে চেপে ধরতে ফাহাদের কাঁধ ভেঙ্গে যাবার উপক্রম। আরভীক বাচ্চার মত তার বন্ধুর কাঁধে চড়ে থেকে বলে,

‘ডুড আমি জানি তুই পারবি!’

কাঁদো কাঁদো মুখ করে ফেলে ফাহাদ। তার বন্ধু সর্বদা জালের মধ্যে ডুবায় দিতেই সঙ্গে আনে তাকে। শা’লায়ে আর গোবরগনেশ পায় না। খালি তারেই পায়! আরভীক ফাহাদের গালে চুমু খেয়ে নেমে যায়। মিটমিটিয়ে হেসে বলে,

‘ডুড কাম আমি সারি, এওয়ার্ড তুই পাস। ফিটটি ফিটটি! ইন্টারেস্টিং।’

‘হে ভাই তুই আমাকে মহান সাজিয়ে ক্রিমিনালের কাছে ভাইরাল করে দেস। পরে তারা আমার উপর শোধ নিলে আমার সাইবাবউ বিধবা হয়ে যাবে।’

কান্নার ভান করে শার্টের হাতা দিয়ে চোখ মুছে সে। আরভীক ভেবে বলে, ‘তোর বউয়ের অন্য জায়গায় ব্যবস্থা করে দেব’।
ব্যস চটে গেল ফাহাদ। তেড়ে গেল আরভীক এর দিকে চড় লাগানোর জন্য। তাদের দৌড়াদৌড়ির মাঝে গার্ডস প্রতিক্ষণে লা’শগুলোর ঠিকানা লাগিয়ে দেয়।

৩৪.
শ্রেয়া বাসায় রুম অন্ধকার করে ভাঙচুর করছে। মেজাজ বিগড়ে ৩৬০° ডিগ্রি অতিক্রম করে ফেলছে তার। রাজিব থামাতে চেয়েও পারছে না। কেননা শ্রেয়াকে থামাতে আসা ব্যক্তির দিকেও জিনিসপত্র ছুঁ’ড়ে মা’র’ছে। রাজিব এককোণায় পকেটে হাত গুজে দাঁড়িয়ে আছে। অপেক্ষা করছে শ্রেয়া শান্ত হওয়ার! রাগের মাত্রায় তার শ্বাস প্রশ্বাস তেজ হয়ে আছে। চুলগুলো উশখুশ হয়ে গেছে, পরণের জামা ছিঁড়ছিঁড়ে হয়ে গেল। তাকে দেখতে পুরুই এক পাগলগরাধের বাস করা পাগল মেয়ে লাগছে।
রাজিব দেখে শ্রেয়া থেমেছে। বাঘের মত ফোঁসছে শিকারীকে খেয়ে ফেলার জন্য। আহ্লাদী ছোঁয়ায় পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে শ্রেয়াকে। তাকে লেপ্টে ধরে রাজিব। সেও নিশ্চুপে লেপ্টে রইল।
রাজিব নিবিড় থাকায় শ্রেয়া স্বেচ্ছায় বলে উঠে।

‘ভালো করেনি আরভীক! সে আমার হয়েও ঐ আনজুমার জন্য এসেছিল। না, তাকে আমি ছাড়া আর কেউ পাবে না। আনজুমাকে আমি রাস্তা থেকে সরিয়েইই ফেলব।’

রাজিব বিনা শব্দে তার পকেট থেকে ঘুমের ইঞ্জেকশন বের করে শ্রেয়ার কাঁধে পুশ করে। পরক্ষণে ঢলে পড়ে সে। রাজিব হাঁফ ছেড়ে ‘বাঁচছে’ বলে শ্রেয়াকে শুদ্ধভাবে বিছানায় শুয়ায় কাঁথা মোড়ে দেয়। রুমের দিকে একপলক তাকিয়ে হতাশার মত মুখ করে নেই। পুরু রুমের মধ্যে ঝড় বয়ে গেছে। মেইডকে ডেকে আনে। রুম পরিষ্কারের কাজে মেইড লেগে পড়লে সে চলে যায় খাবার খেতে। শ্রেয়ার চিন্তায় সে নিজেও খাওয়া-নেওয়া থেকে বিরত ছিল। অথচ আজ মেয়েটার খুশির দিন ছিল বটে। যা নিবিঘ্নে ছিন্নভিন্ন করে দিয়েছে মিস্টার ফাওয়াজে। সে রাজিবের অপছন্দের তালিকায় পড়া ব্যক্তি। কেননা শ্রেয়ার এ ব্যক্তিকেই আর্জি পূরণকারী মনে হয়। যা এককথায় ঈর্ষায় পরিণত করেছে রাজিবের মনকে। সে চাই না মিস্টার ফাওয়াজের ধারপ্রান্তেও শ্রেয়ার আনাগোনা হোক! তার জীবনসঙ্গী হওয়া তো দূরের ব্যাপার! ভেবেই বাঁকা হাসি দেয় রাজিব।
জাফর সাহেবকে নিচে আসতে দেখে সটান হয়ে বসে সে। তিনি এসে জিজ্ঞেস করে।

‘শ্রেয়া মামুনি কই!’

‘সে ঘুম স্যার।’

‘ওহ তার পার্টিতে তো আরভীকরা আসছে না।’

রাজিব মনে মনে ভীষণ খুশি হলো। প্রকাশ্যে সে দুঃখী হওয়ার ভান করে বলে,

‘কেনো স্যার!’

‘জানি না আরাজ বলছে কি জানি আরভীক কাজ আছে। এজন্য প্ল্যান ক্যান্সেল হয়ে গেছে।’

দুঃখ ভারাক্রান্ত মন নিয়ে রাজিব জাফর সাহেবের সামনে থেকে সরে যায়। তার ইচ্ছে করছে ক্লাবে গিয়ে ডিসকো ডান্স করতে! শ্রেয়ার বিয়ের কথা শুরুর পূর্বেই যে ক্যান্সেল হয়ে গেল তাই।
সে শ্রেয়ার রুমের বেলকনিতে বসে। মেইড রুম ক্লিন করে চলে গিয়েছে। ওয়াইনের বোতল খুলে পান করে। আর ভাবে শ্রেয়ার খুশির দিন চোখের পলকে বিঘ্নিত হওয়ার ঘটনা।

পূর্বের ঘটনা….

রাজিব গাড়ি পার্ক করে। শ্রেয়া ও সে বের হয়ে পরিত্যক্ত বাড়ির সামনে যায়। কিন্তু মাঝরাস্তায় সে শ্রেয়ার মুখ চেপে আড়ালে নিয়ে যায়। এতে শ্রেয়া বিরক্তিতে ‘উম উম’ করে। যার ফলে রাজিব আড়ালে লুকাতে চেয়েও পারছে না। যখন শ্রেয়ার মুখ থেকে হাত সরায় তখন মেয়েটি বাঘিনীর মত ক্ষেপে উঠে। রাজিব পরিস্থিতি সামলাতে তার কানে ফিসফিসিয়ে বলে,

‘শোনেন শ্রেয়া, চটজলদির কাজ বিপদেও ফেলতে পারে। সামনে দেখেন কতগুলো গাড়ি। এখানে কমপক্ষে দুটি গাড়ি থাকার কথা! নিশ্চয় এখানে কোনো কাহিনী চলছে। আমরা গেলে ধরা খেয়ে মরব। তাই আস্তেধীরে আমার সঙ্গে আসুন। দেখি কি চলছে ভেতরে!’

শ্রেয়া থমকে গেল। সেও চোখ পাঁকিয়ে দেখে সত্যিই এখানে বহুল গাড়ির সমাগম। সে রাজিবকে অনুসরণ করে সামনে যায়। পরিত্যক্ত বাড়ির বামপাশে ভাঙ্গা জানালার দাঁড়ায়। বাহিরে ও ভেতরে কালো পোশাক পরিহিত গার্ডস দাঁড়িয়ে আছে। এরা কাদের গার্ডস সেটা জানার প্রেক্ষিতে তারা জানালা দিয়ে উঁকি দেয়। শ্রেয়া রাজিবের হাত চেপে জানালার ভেতর চেয়ে শক্তমুখে শ্বাস ছাড়তে থাকে। যা দেখে রাজিব বিস্ময়ে,বিমূঢ় হলো। সে নিজেও মুখ ঘুরিয়ে থমকে যায়। মিস্টার ফাওয়াজ ও তার সঙ্গীরা ডক্টর ডেভিড ও ভুয়া অফিসারকে শায়েস্তা করছে। এ দেখে ঢোক গিলে সে। মিস্টার ফাওয়াজকে যতটা রসিক ভেবে ছিল সে ততটাই হিংস্র পশুর মত কাজ করছে। শ্রেয়ার কাছে আরভীক এর হিংস্রতা মনেপ্রাণে উত্তেজনার আগুন ধরালেও, আনজুমার জন্য এ কাজ করছে দেখে!
ঈর্ষার দহনে পুড়ে ছাই হতে থাকে। রাজিব হাতে তিক্ষ্ণ ব্যথা অনুভব করে চোখ পাঁকিয়ে তাকায়। শ্রেয়া রাগের বশে নখ ধেবে দিচ্ছে তার হাতে। বেচারা মুখ ফুসকে ব্যথার আর্তনাদ করতে না পেরে শ্রেয়াকে টেনে হিচঁড়ে সেখান থেকে সরিয়ে ফেলে। তৎক্ষণাৎ তারা রওনা দেয় তাদের গন্তব্যে।

‘আরভীক তুমি আমার।’

শ্রেয়ার ঘুমের ঘোরে বিরবির করে বলে। তার কণ্ঠ শুনে রাজিবের ধ্যান ফিরে। দৃষ্টি দেয় হাতের দিকে। নখ ধেবে রক্তাক্ত হয়েছে বটে। চাপা হেসে ব্যান্ডেজ করে নেয়। বেলকনিতে গা এলিয়ে দিয়ে ঘুমের জগৎ এ পাড়ি দেয়।

৩৫.
পরের দিন দুপুরে পিটপিটে চোখ খুলে আনজুমা। নিজেকে সে আলিশান রুমে আবিষ্কার করে। রুমের চর্তুপাশ্ব চেয়ে বুঝল এ রুম আরভীক এর। কেননা রুমের শৌখিনটা পূর্বে একবার দেখে ছিল। চট করে উঠে বসে সে। ভাবে এখানে কেমনে এলো! তাকে মেডিক্যালে ভর্তি করানো হয়ে ছিল। আকস্মিক শক্ত পুরুষের ছোঁয়া তার কোলে অনুভব হতেই চমকে যায়। পুরুষটি অন্য কেউ নয় আরভীক। আনজুমা নিশ্চুপ ভঙ্গিতে বসে রইল। আরভীক আনজুমার কোলে মাথা রেখে পরম প্রণয়ঘটিত নেশায় মতঁ হলো। ঘোরলাগা কণ্ঠে শুধায়।

‘ওগো বউ জাগলে কেন দশবছর পর জাগতে।’

রিনরিনে গলায় আনজুমা জিজ্ঞেস করে।

‘এটা কেমন কথা!’

‘কেন বুঝো না দশবছর পর জাগলে দেখতে, তুমি আমার দশবাবুর মা হয়ে গেছো।’

‘কিইই!’

আরভীক এর কথার অর্থ বুঝে ভ্যাবলাকান্তের মত মুখ করে ফেলে আনজুমা! চেঁচিয়ে তার বলতে ইচ্ছে করছে। নির্ল’জ্জ, অ’সভ্য কোথাকার! তোর বিশ্রী কথা বন্ধ কর।
আফসোস! সে বললে আরভীক ক্ষেপে নির্লজ্জের চেয়েও চরম বদ’মায়ে’সী রুপ নিয়ে নেবে। আরভীক আড়চোখে মেয়ের চাহনী দেখে লাজুক হেসে নিজের মুখ ঢেকে ফেলে। থতমত খেয়ে যায় আনজুমা। আরভীক তার কোলে শুয়ে থেকে লাজুক গলায় শুধায়।

‘ওগো বউ চলো বাসর দিনটা সেরে ফেলি। রাতে করতে দাও না। তখন তো তোমার মাদারতেরেসা হওয়ার রোগ জাগে। দিনে না হয় আমার জন্যে সানি লিওনী হয়ে যাও।’

আনজুমার কান পেঁকে লালাক্ত হয়ে গেছে। বে’হা’য়াগিরির সীমা লঙ্ঘন করে দিল লোকটা। সে কথাগুলো নিতে না পেরে আবারো চেতনশক্তি হারিয়ে বালিশের উপর শুয়ে পড়ে। বেচারী আরভীক এর কথা হজম না করতে না পেরে জ্ঞান হারালো। আরভীক আয়নার মধ্যে স্পষ্ট দৃশ্যটি দেখতে পেয়ে উঠে বসে। বউয়ের দিকে তাকিয়ে কপাল চাপড়ে বিরবির করে বলে,

‘ধ্যাঁত রোমান্টিক মুডেই মেয়েটার ফিট খেতে হয়। বলদমার্কা গাই! ওহ এই গাই হলে আমি না হয় গরু হেহেহে।’

মুখ টিপে নিজেই হেসে ফেলে আরভীক।

চলবে…
(ভুলত্রুটি ক্ষমা করুন)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here