#নেশাক্ত_প্রণয়োণী
#লেখিকা_তামান্না(আল রাইয়ান)
#পর্ব_২০
‘ড্যাড আরভীক বিয়ে করে ফেলেছে তাও আবার তার পিএকে। কবে,কেমনে,কখন করেছে!’
শ্রেয়ার রাগান্বিত প্রশ্নের জবাবে নিরব রইল জাফর সাহেব। তিনি রাতেই টিভিতে নিউজ দেখে ছিল। সেখানে রিপোর্টার সায়াজ রিপোর্টিং হিসেবে পাওয়ারফুল নিউজ দিল যে, আরভীক ফাওয়াজ ইজ ম্যারেড নাউ। হার ওয়াইফ’স নেইম ইজ আনজুমা আবান।
সংক্ষিপ্ত পরিসরের খবরটি যে পুরু দেশে হৈচৈ মাতিয়ে দিয়েছে। কিছুসংখ্যক মেয়ে ঈর্ষায় ছারখার হচ্ছে, তবে শ্রেয়ার বিষয় ভিন্ন! সে না ঈর্ষায় জ্বলছে, না পুড়ছে। বরং তার কণ্ঠধার, চলন স্বাভাবিক, নিবিড়। যেন ঝড় আসার পূর্ব উৎকণ্ঠা প্রকাশ মাত্র। জাফর সাহেব গাড়ি পার্ক করে মেয়েকে নিয়ে নেমে পড়ছিল ফাওয়াজ ম্যানশনে প্রবেশের উদ্দেশ্য। অথচ সিড়ির নিকট এসে থমকে যায় শ্রেয়ার কদম। জাফর সাহেব ঢোক গিলল। তিনি স্বচক্ষে দেখছে বাড়ির সাজসজ্জা কোনো বিয়ের বাড়ি থেকে কম লাগছে না। তাজ্জব ব্যাপার পুরু একদিনে ম্যানশনটা রঞ্জিত হয়েছে ঝলমলে। লিয়াকত সাহেব সবেই আসল। তাদের মত সেও নির্বোধ দৃষ্টিতে চেয়ে আছে।
আরভীক করিডোর দিয়ে অতীব আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করছে তার অতিথিদের জন্য। ইতিমধ্যে অঞ্জয় কল দেয়। সে ব্লুটুথ বাটন প্রেস করে।
‘স্যার তারা চলে এসেছে!’
‘তাদের অপেক্ষায় তো আমি কাহিল ছিলাম। নিয়ে আসো।’
ব্লুটুথ বাটন প্রেস করে অফ করে দেয়। লিয়াকত সাহেব তার বাহু দিয়ে খোঁচা দেয় জাফর সাহেবের কোমরে। তিনি ইতস্তত নয়নে ইশারায় ‘কি’ বোঝায়। লিয়াকত সাহেব তার কানের কাছে এসে ফিসফিসিয়ে বলে,
‘ঐ বেডা কি সত্যি বিয়া কইরা নিছে!’
‘কেমন আছেন হবু না হওয়া শ্বশুর,আঙ্কেল ও অভাগী বউ!’
তেলেবেগুনে জ্বলে উঠে শ্রেয়া। আরভীক এর কলার চেপে টেনে হিঁচড়ে চেঁচানি দিয়ে জিজ্ঞেস করে।
‘হাউ ডেয়ার ইউ! তুমি আমাকে ছেড়ে ঐ দু’টাকার ফকিন্নির বাচ্চাকে বিয়ে করলে। কি নেই আমার এসির মেয়ে আমি। টাকার জমিনে সাতার কাটতে পারব। তুমি সেই আমাকে রিজেক্ট করে ঐ ফকিন্নিকে আগলে নিলে। কেন ঐ কি বেশি সে** সুখ দেয় তোমায়!’
জাফর সাহেব ও লিয়াকত সাহেব মেয়ের মুখের কথায় ভর্য়াত দৃষ্টি নিক্ষেপ করে। মেয়ে তাদের ভুল মানুষের সামনে রাগের প্রলয় দেখিয়েছে। সেই সঙ্গে শ্লীলতাহীন বাক্য দ্বারা তারই পরম স্ত্রীর নামে বলায় আশঙ্কায় ভীতিগ্রস্থ হয়ে আছে তারা। শান্তশিষ্ঠ দৃষ্টিতে চেয়ে থাকলেও আরভীক এর মনমেজাজে অগ্নিকুণ্ড ফুটছে। ঠোঁট কামড়ে এপারওপার চেয়ে দেখে। কেউ নেই শুধু অঞ্জয় বিহীন! মাথার চুলগুলো শুদ্ধ,শক্তপোক্তভাবে টেনে সপাটে এক চ’ড় লাগায় শ্রেয়ার গালে। তবুও সে থামেনি। চ’ড়ের ধাক্কায় শ্রেয়া পড়তে গিয়েও পড়েনি। কেননা আরভীক বেশ জোরালোভাবে তার বাহু চেপে ধরে রেখেছে। চ’ড়ের দাগ একগালে স্পষ্ট হতেই আরেক গালে তীব্র শক্তি সঞ্চয় করে পুনরায় লাগায়। জাফর সাহেব তিক্ত হয়ে আরভীককে থামায়। সেও বিনা সংকোচ,জড়তাহীন সরে গেল। লিয়াকত সাহেব চোরা চোখে জাফর সাহেবের মেয়ের দিকে তাকায়। দু’গালে সেজে আসার যে চিহ্ন,সৌন্দয্যের গোলাপী রঙ মেখে ছিল তা মুছে গিয়ে পাঁচ আঙুলের ছাপ স্পষ্ট ভেসে উঠেছে, ওষ্ঠের কোণা ও নাক থেকে মাত্রাতিরিক্ত র’ক্ত বইয়ে পড়ছে। মা’ই’র সাধ্যের বেশি খেয়ে ফেলায় জ্ঞান হারিয়ে ফেলে শ্রেয়া। জাফর সাহেব মেয়ের হুঁশ নেই দেখে লিয়াকত কে ডাকে।
তারা মিলে মেয়েকে উঠিয়ে গাড়িতে বসায়। তবে জাফর সাহেব গাড়ির ইঞ্জিন চালু করার পূর্বে আরভীক এর মুখোমুখি এসে শাঁসায়।
‘তোকে আমি দেখে নেবো আরভীক ফাওয়াজ! আমাকে তুই চিনিসনি এখনো।’
‘ব্যস ব্যস তোকে না চিনলে তো আর কাউরেও চিনা লাগবে না আমার। তুই যে কে, কি কাজ করিস, চার বছর আগে মাউন্টেন ব্রিজে কার খুন করছিলি সব তথ্য তোর ব্যাকসাইড থেকে বের করে রাখছি হেহেহে। এবার তুই গিয়ে কমোডে বসে ব্যাকসাইড থেকে যত মূত্র আসে বের কর গিয়ে। মরার পর মূত্র বের করার সুযোগ পাবি না।’
অপমান,তিরস্কারে দমে গেল জাফর সাহেব। মেয়েকে বাঁচানোর সময় কম। না হলে সে এ ছেলের মুখ তালাবদ্ধ করে দিতো। বাক্যহীন মুখ নিয়ে গাড়িতে উঠে বসে। লেখিকা_তামান্না(আল রাইয়ান)
তবুও নজর যেন তিক্ষ্ণ করে আরভীককে দেখছে। সেও হাত নাড়িয়ে বিদায় জানানোর বাহানা করে উচ্চস্বরে বলে,
‘বাই বাই বা’স্টা’র্ড!’
অঞ্জয় চোখ পিটপিটিয়ে দেখছে। কি কথোপকথন হলো! তার মাথার উপর দিয়ে গেল। চারবছর আগে মাউন্টেন ব্রিজের কথা কেনো তার বস বলল বুঝতে পারছে না সে! আমতা ভাব নিয়ে সে বসের সামনে দাঁড়ায়। বিব্রতপূর্ণ দৃষ্টি নুয়ে বলে,
‘স্যার চারবছর আগে কি হয়েছিল ! আপনি কার খুনের কথা বলছেন।’
তার প্রশ্নে অনড় আরভীক জাগ্রত অবস্থায় চোখের পলকে চারবছর পূর্বে ঘুরে এলো। সেই খুনের দৃশ্যপট,কোমায় যাওয়া,ক্ষতপূর্ণ শরীরে বাঁচার অসম্ভাবনা! চোখের পলক ফেলে পাপড়ি ঝাপ্টায়। ফলে সে না জানার ভান করে বলে,
‘কোন চারবছর! তুই কি চারবছর আগে জম্মালি। তুই কচি খোকা, কচি খোকা হয়ে থাকবি। তুই কেন আগ্রাবাগ্রা প্রশ্ন করে মাথার গিলু খাবি।’
থতমত খেয়ে যায় অঞ্জয়। মাথা ডানেবামে নুয়ে ‘সরি’ বলে। আরভীক শুনে ম্যানশনের ভেতর হাঁটা ধরে অঞ্জয়ও পিছু নেই। মুচকি হেসে আরভীক একঝলক বেলকনির দিকে তাকায়। সঙ্গেই এক অবয়ব উধাও হয়ে যায়। বাঁকা হেসে অতিথিগণের চোখ ফাঁকি দিয়ে সে তার বেডরুমে এলো। দরজা খোলা ছিল বিধেয় সে স্বল্প ভিড়িয়ে চোরা দৃষ্টিতে উঁকি দেয়। আনজুমাকে গোলাপি রঙের জরজেট শাড়িতে বেশ রুপদেবী লাগছে, চোখের কাজলটানা হরিণের নয়নডগা,নরম তুলতুলে গালে মাখামাখি গোলাপী রঙের শ্যাডো! ইশ! খেয়ে ফেলতে মন চাইছে তার। টেস্ট করেই দেখি!
দুষ্টু হেসে কুবুদ্ধি নিয়ে রুমের মধ্যে অনড় রুপে প্রবেশ করে দরজা আঁটকে দেয় আরভীক। আশফি তার দাদুর কাছে আছে। জামাই-বউ পেয়েছে তাদের দুষ্টু মিষ্টি কাহিনী রচানোর সময়। ভেবেই আরভীক এর মনে খুঁতখুঁতুনি শুরু হয়ে গেছে। আনজুমা বেলকনির মধ্যে পায়চারী করে চলেছে। সে সুস্পষ্ট কানে শুনেছে, আরভীক চারবছর আগে মাউন্টেন ব্রিজে খুন হওয়ার কথা বলছে! এর অর্থ কি! সে কি জানে কোন কথা ঐ এসির সামনে টেনেছে। নতুবা ঐ এসিও বা কেনো এত ঘাবড়াল। আনজুমার মনে হিসেব মিলিয়েও কুল পাচ্ছে না। কখনো মনে হচ্ছে আরভীকই সুয়াইব! আবার মস্তিষ্ক বলছে, আরভীক এর মত রহস্যঘেরা মানুষের ফাঁদে না পড়তে।
কার কথা শুনবে সে! মন নাকি মস্তিষ্ক। দোটানায় পড়ল সে। আল্লাহর কাছে জবাব থাকবে ফলে সময় বিলম্ব না করে নামাজরত হওয়ার পণ নেই। যেই না পিছু যাবে সেই সময়ে তার কোমর টেনে দেওয়ালের সঙ্গে চেপে তার গলায় মুখ গুজে দেয় আরভীক। আকস্মিক কার্যে সম্পূর্ণ ভীতিগ্রস্থ হয়ে পড়ে আনজুমা। কি হলো, সে অনুভূতির কাছে পুনরায় বন্দি হয়ে গেল নাকি! আরভীক আনজুমার গলা থেকে সুঘ্রাণ শুকে নিচ্ছে! সদ্য গোসল সেরে আসা রমণী তার। গরম,আগুনে জ্বলছে যাওয়া তপ্ত শ্বাস নিচ্ছে তার গলায় মুখ গুজে। লেপ্টে আছে দুজনে, শরীরের মাঝে এক ইঞ্চি ফাঁক নেই। দূরত্ব আরভীক মানে না। বউ ছিল না তখন দূরত্ব বজায় রেখেছিল। বউ আছে তো দূরত্ব রাখার মত ছেলে সে নয়। মৃদু ওষ্ঠ চেপে দেয় বউয়ের গলায়। অনুরাগে মৃদু কেঁপে চলছে আনজুমা, ওষ্ঠদ্বয় বুজে ব্যর্থের ন্যায় শ্বাসকার্য সম্পূর্ণ করছে! কেননা আফিমের ন্যায় এ পুরুষের ধারপ্রান্তে এলে রক্ষে নেই তার। হাতজোড়া নড়চড়ে করে ছুটে পালানোর চেষ্টা করছে। আরভীক ছুটে যাওয়া মোটেও পছন্দ করে না। ফলে বউয়ের দুহাতের গোড়ালি আকঁড়ে উপর করে রাখে। বন্দের বন্দিনী হলো। চোখদ্বয় নিলীপিত করার জোঁ নেই আনজুমার। আরভীক থুতনী তুলে ঘোর দৃষ্টিতে তার পানে চাই। নজরে চৌদ্দ বছরের কিশোরীকে লক্ষ করছে। যার রুপ ফুটেছে যুবতীর ন্যায়! সে তার শ্রেষ্ঠ বউকেই বিয়ে করেছে! পরিণতি এটা হওয়ারই ছিল। আনজুমার বুজে থাকা পাপড়ির মধ্যে ওষ্ঠদ্বয়ের ছোঁয়া দিয়ে ফিসফিস করে বলে,
‘লজ্জায় গাল রাঙালে আমি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে বসব বউ! তুমি তো জানোই বিয়ের আগে তোমার জন্য কতশত পাগলামি করতাম। এখন তো….।’
ঠোঁট কামড়ে দুষ্টুমিপূর্ণ দৃষ্টিকোণে আনজুমার দিকে চেয়ে রইল। বেচারীর শরীর কেঁপে মরণ প্রান্তে যাওয়ার উপক্রম। তার ইচ্ছে করছে মাটি ফাঁকা করে সেখানে লুকিয়ে যেতে। এ বদ’মায়েসী কথার আড়াল হতে পারলে যেন বাঁচে সে। মৃদু কণ্ঠে আওড়ায়।
‘আই নিড টাইম প্লিজ!’
‘কিসের টাইম! নিজের জামাইকে চিনে না গর্দভ বউ একখান। এখন যদি বলতাম আমিই সুয়া…।’
দাঁত চেপে মুখ বন্ধ করে নেই আরভীক। চট করে ভয়ানক দৃষ্টিতে তাকায় আনজুমা। তার লাজুক দৃষ্টি সরে প্রশ্নাতীত দৃষ্টি দেখে তৎক্ষণাৎ ভড়কে যাওয়া ভাব সরিয়ে নিল আরভীক। হাসার চেষ্টা করে বলে,
‘ইউ নিড টাইম ওকে ইউ হেভ মেনি টাইম। নাউ আই উইল ডু মাই জব।’
কথাটি হু’ম’কি ছিল নাকি উদ্দেশ্য হাসিলের তৃষ্ণা বুঝে পেল না আনজুমা। মুখ খুলে প্রশ্নের ভীড় জমানোর পূর্বেই ওষ্ঠদ্বয় মিলিয়ে দেয় আরভীক। বৈধ ! পুনরায় সেই বৈধ স্পর্শের সমাগম হলো তাদের মাঝে। আনজুমার শ্বাস আঁটকে এলো। এতদিন যাও গালে ছোঁয়া পেতো! আজ সরাসরি ওষ্ঠে হওয়ায় আনজুমার নিয়ন্ত্রণ বেসামাল হয়ে পড়ছে। দোটানার মায়ায় সে নুয়ে যাচ্ছে। বারংবার মনের কথা শুনতে ইচ্ছে করছে তার। এই তার সুয়াইব, তার প্রাণরাজ। আরভীক এর মত শক্তপোক্ত শরীরের ব্যক্তিকে ঠেলে দূর করতে চাইছে। অথচ বিন্দুমাত্র স্থান হতে সরেনি বে’শরম ব্যক্তিটা।
সায়াজ,ফাহাদ জরুরি তলব করার সুবাদে গুরুগম্ভীর পায়ে কদম ফেলে আরভীক এর রুমে প্রবেশ করে। দরজা তালাবদ্ধ না হওয়ায় বিবেকহীন রুমে প্রবেশ করে। সামনে তাকিয়ে থ হয়ে যায়। লাজুকতায় মেয়েদের মত তাদের গাল রক্তিম হয়ে গেল। চোখজোড়া সরিয়ে নেয়। গলা ঝেড়ে তাদের অবস্থান জাহির করে। আনজুমা ফট করে চোখ খুলে দরজার দিকে দৃষ্টি ফেলে। দেবর দুজনকে দেখে জোরালোভাবে শক্তি প্রয়োগ করে ঠেলতে লাগল। আরভীক তার মিষ্টি খাওয়ার মধ্যে ঠেলাঠেলি পেয়ে বিরক্তিতে বউয়ের কোমর সটান করে টেনে লেপ্টে নিয়ে দেওয়ালে মিশে যায়। বেচারী আনজুমা শরমে ওষ্ঠ চেপে রাখা অবস্থায় আরভীককে শুধায়।
‘ফা ফাহাদ, সায়াজ ভাই আসছে।’
‘আসছে তবে চলেও যাবে।’
শরমহীন আরভীক চোখ বুজে মিষ্টি খেয়েই চলল। অমৃত সুধা পেয়ে ছাড়ার পাত্র নাকি সে! ফাহাদ,সায়াজ বুঝে নিল তাদের বন্ধুর মুড রোমান্সে আঁটকে আছে! অসময়ে কথা বললেও বন্ধুর মুখ থেকে গা-পিত্তি জ্বলনের বাক্য বের হবে। ফলে তারা স্বেচ্ছায় বেরিয়ে যায়। ফাহাদ সায়াজকে ধরে বলে,
‘ভালো করছি চলে আসছি। সে এলে এমন ভান ধরব যেন কিছুই দেখি নাই।’
‘ইয়েস ডুড। না হলে আমি সিঙ্গেল, তুই মিঙ্গেল হয়েও সিঙ্গেল থেকে চুমাচাটি না করার দুঃখে কাটাঁ গায়ে নুনের সিটে মারতে শুরু করবে।’
তাদের দুঃখ বোঝার কেউ নেই। ফাহাদের রাগ হচ্ছে সাইবার উপরে। মেয়েটা আগে ফাহাদ, ফাহাদ করে চুমাচাটি করার জন্য মরে যেতো। এখন যখন সে স্বেচ্ছায় চুমু দিতে আসে তখন ‘ধুর ধুর’ করে তাড়িয়ে দেয় মেয়েটা। বলে, চুমু খেলে নাকি প্রেগন্যান্ট হয়ে যাবে! আজগুবে কথা শুনে ক্ষোভে মাঝমধ্যে দু তিনবার চুমু সে খেয়ে নিয়েছে। ফলে তার অভিমানী হবু বউ রেগে পাঁচ-ছয়দিনের ব্রেকআপ করে ফেলে। এখন তো ব্রেকআপ শুনলেও মনে হয় কিসের ব্রেকআপ! মুখে নেয় অথচ করার সময় খালি পেজআপ আর পেজআপ মারে। ছেহ্ঃ কপাল পুড়ছে তার!
সায়াজ এর ধাক্কায় হুঁশ ফিরল ফাহাদের। দুজনে বউভাতের অনুষ্ঠানে আরাজ সাহেবের কাছে চলে যায়।
গতকাল বিয়ে হলেও আজ বিশাল অনুষ্ঠানের মাধ্যমে সকলের মাঝে প্রচার করা হচ্ছে আরভীক এর বিয়ের কথা।
৩৯.
মেডিক্যালে রাগে,হিংস্রতায় ফোঁসছে এসি সাহেব অর্থাৎ জাফর সাহেব। তার মেয়েকে কেবিনে দেওয়া হয়েছে। ডক্টরের মত আক্ষেপে বলে,
‘পেশেন্টের এক গাল বাকাঁ হয়েছে, ঠিক হতে মাসখানেক সময় লাগবে। এবং খাওয়ানোর সময় সর্তকতা অবলম্বন করে খাওয়াতে হবে। কারণ তার দুপাশ থেকে দু দাঁত ঝরে পড়ছে। অসুস্থ ও দূর্বল থাকবে তার শরীর। বেশি কথাও যেমন বলতে পারবে না তেমন বেশি নড়চড়ও করতে পারবে না।’
মেয়ের করুণ অবস্থার কযা শুনে আতঁকে উঠে দুজনে। লিয়াকত সাহেব ভাবে আরভীক এর চ’ড়ের মধ্যে এত শক্তি। যে এক মেয়ের দু চ’ড়ের মধ্যেই বেদনাদায়ক মরণ দশা করে দিয়েছে। জাফর সাহেব তখন থেকে মেয়ের পাশে শায়িত আছে। লিয়াকত সাহেব মুখ ভেটকিয়ে ভাবে।
‘এই আরভীক পোলাডা আসলে কেডা! এই কি ছোট সাহেবই নাকি অন্য কেউ।’
তার বন্ধু জাফরের ডাক শুনে তৎক্ষণাৎ কেবিনের ভেতর গেল সে। জাফর কাতর গলায় শুধায়।
‘যাহ্ তো রাজিবকে কল করে ডেকে আন।’
লিয়াকত সাহেব মাথা নেড়ে ফোন বের করে রাজিবকে কল দেয়।
অন্যথায় রাজিব ক্লাবে বসে ক্যারাম খেলছে। তার সঙ্গে বিদেশী কয়েকজন সঙ্গ আছে। মেয়েরা রাজিবের সৌন্দর্য্যে, কাহিল কড়া নজরে ঘায়েল প্রায়। তার পাশ ঘেঁষতে চেয়েও পারছে না। কেননা রাজিব ওয়ার্ন করেছে কাছে এলে একটারও হাত আস্ত রাখবে না! ভয়ে তারাও অন্য সঙ্গদের সঙ্গিনী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। ক্যারামের নীল গুটি দিয়ে লাল গুটিকে টার্গেট করে যেই না গুটি চালাবে এর পূর্বে তার ফোনে কল এলো। সে খেলা অন্য এক ছেলেকে দিয়ে উঠে পড়ে। ফোন ধরে বলে,
‘ইয়েস মিস্টার রাজিব স্পিকিং!’
‘রাজিব জলদি…(নাম)..মেডিক্যালে চলে আয়।’
চমকে গেল সে। কি হলো আবার! প্রশ্নের জোঁস নিয়ে জিজ্ঞেসাবাদ করতে পারল না। তৎক্ষণাৎ ফোন কেটে দেয় অপরপ্রান্তের ব্যক্তি। দিগিদ্বিক হারিয়ে প্রস্থান করে। মেডিক্যাল এসে শ্রেয়ার অবস্থা দেখে শঙ্কায় জর্জরিত হলো। কাঁপা কাঁপা হাতে তার গাল স্পর্শ করে। নিবিড় রইল শ্রেয়া চোখজোড়া উম্মুক্ত, তবে কণ্ঠে নেই সেই রাগ প্রকাশের ধারালো চিৎকার! ব্যাপারটা মাত্রাতিরিক্ত হলেও বেশ সন্তুষ্ট হলো রাজিব। তার কার্যসিদ্ধি সম্পূর্ণ করার শ্রেষ্ঠ উপায় পেয়েছে। জাফর সাহেব কেবিনে ছিল না ফলে রাজিব উম্মুক্ত নয়নের রমণীর মুখোমুখি হলো। শ্রেয়ার গালে স্লাইড করে ওষ্ঠজোড়ায় মৃদু স্পর্শ দেয়। হাত নাড়িয়ে কেঁপে উঠার বহিঃপ্রকাশ করে শ্রেয়া। ঝুঁকে থাকা থেকে সটান হয়ে দাঁড়িয়ে যায় রাজিব। ইতিমধ্যে সে ডক্টরের থেকে ঘটনার প্রতিহার সম্পর্কে জেনেছে। যেমন জাফর সাহেবকে বলে ছিল তেমন রাজিবকেও বলল। শুনে খুশিতে যেন তার মন নাচছে। দুদিন পর জাফর সাহেব কাজের উসিলায় জর্ডান যাবে। মোক্ষম সুবর্ণ সুযোগ লুপে নেওয়ার সময় তার ঘনিয়ে আসছে। সে অন্য কোনো রমণীকে ঘনিষ্ঠ হৃদয়ের প্রলকিতে চাইনি। অথচ শ্রেয়াকে সে প্রতিটা মুহুর্তে চাই! আর এই চাওয়া অবশ্যই সে দুদিন পরই পূরণ করবে। এখন তার একটাই উদ্দেশ্য এবং কাজ। জাফর সাহেবের সামনে তার নিজেকে ভালো বডিগার্ড রুপে পেশ করা। এতে সে রোগীর খেয়াল রাখার দায়িত্ব পাবে।
শ্রেয়ার দিকে তাকিয়ে বাঁকা হাসি দেয়। শ্রেয়ার কেনো জানি রাজিবের নজরপাত বেশ ভয়াবহ লাগছে। তবুও সে জানে তার বডিগার্ড হলেও বন্ধু সে! খারাপ কিছু করবে না। ভেবেই চোখ বুজে নেই।
রাজিব কে শ্রেয়ার কেবিনে পেয়ে জাফর সাহেব বলে,
‘যাক তুই আসলি। আমি তোকে বলতে চেয়ে ছিলাম জর্ডানে জরুরি কাজ পড়ে গেছে আমার। আজকে পাসপোর্ট,ভিসা পেয়েছি। কাল ব্যাগ প্যাকিং করে ফেলব। পরেরদিন রাত নয়টায় রওনা দেব এয়ারপোর্টে। তোর থেকে আমার মেয়ের খেয়াল রাখতে হবে। বেশিদিন নয় দুমাস খানেকের জন্য যাবো।’
জাফর সাহেবের কথায় দ্বিরুক্তি না করে বরং হাস্যজ্জ্বল মুখ নিয়ে রাজিব কথার প্রেক্ষিতে সায় দেয়। জাফর সাহেব চিন্তামুক্ত হলো। তিনি জর্ডান থেকে এসে মেয়ের করুণ হালের জন্য শোধ নেবে। আপাতত বিষয়টি ধামাচাপা দিয়ে সে ও লিয়াকত প্রস্তুত হবে যাবার জন্য। লিয়াকতকে দেখে বলে,
‘রাজিব আছে সে সামলে নেবে।’
‘ওকে চল ভিসার অফিসে যায়। আমার ভিসা মাত্রই আসল বলছে।’
‘চল তাহলে।’
৪০.
সৌহাদ্য অনুষ্ঠানে আসায় বেশ খুশি হলো আরভীক। গলা মিলিয়ে আপয়্যনের মধ্যে কোনো কমতি রাখেনি। সঙ্গে স্ত্রীকে ক্ষণে ক্ষণে লজ্জায় ফেলতে ভুলেনি। যেখানে আনজুমা যায়,পিছুপিছু সেও তার কানের কাছে গিয়ে লাজহীন কথা শুনিয়ে উধাও হয়ে যায়। তখন আনজুমা ক্ষেপে বাঘিনীর রুপে পরিণত হতে পারেনা। অতিথি আছে বলে সেও ছাড় দিচ্ছে। ইশ! এখন তার ঠোঁট জ্বলছে। মনে মনে ভয়ানক গা’লি দিয়ে বলে,
‘বদ’মায়ে’সী তোর নাক দিয়ে ছুটাব। উফ ঠোঁট ফেটে ফেলছে একদমে। শা’লার বলদ! উফ আল্লাহ এই কারে আমার কপালে জড়ায় বসালে।’
‘কে আবার তোমার পরম সোয়ামী আমাকে দেবে না তো! আর কাকে দেবে। গাছের ডালে বসা শাকচুন্নাকে তো আর দেবে না হে।’
‘দেখুন চুপ করুন কথার পৃষ্ঠে বাক্য বলতে আসবেন না।’
‘এটা বাকস্বাধীনতা হরণকারী বাক্য।’
‘কি!’
‘এটা প্রশ্নসূচক বাক্য!’
‘এসব কি বলছেন হতচ্ছাড়া ছেলে।’
‘এটা অভ্রান্তমূলক বাক্য।’
‘আমি কিন্তু আব্বুকে বলব!’
‘এটা অভিযোগমূলক বাক্য।’
‘আপনি কিন্তু বেশি বেশিই করছেন!’
‘এটা বিনা দ্বিধায় কাজ করা মূলক বাক্য।’
‘আপনাকে খুন করে দেব।’
‘এটা হত্যাচার মূলক বাক্য।’
‘আপনাকে তো আমি।’
চেঁচিয়ে গলা চেপে ধরার মত হাত উঁচিয়েও অতিথির সামনে হাতজোড়া নামিয়ে নেয় আনজুমা। আরভীক ঠোঁট কামড়ে দুষ্টু কণ্ঠে বলে,
‘এটা বউয়ের চুম্বনমূলক বাক্য।’
ব্যস আর কিছু শুনা লাগল না আনজুমা কান চেপে ‘আশফি আশফি’ বলে তার বাচ্চাকে ডেকে ছুটে পালায়। আরভীক চেঁচানো গলায় তবুও শুধায়।
‘এটা চুম্বন থেকে রক্ষার্থমূলক বাক্য।’
তার কথা শুনে ফাহাদ,সায়াজ ও অঞ্জয় হেসে গড়াগড়ি খেয়ে যেন একে অপরের উপর ঢলে পড়ছে। আরভীক গম্ভীর চোখে তাকিয়ে এগিয়ে গেল। হামি দিয়ে জিজ্ঞেস করে।
‘কারা জানি আমার রুমে আসছিল!’
আতঙ্কে আমতা রুপ ফুটে উঠে তাদের মাঝে। অঞ্জয় ভ্রু কুঁচকে ভাবে সে কবে তার বসের রুমে গেল! ফাহাদ সায়াজকে তাড়া দিয়ে বলে,
‘আরে ডুড তুই থাক আমরা আসছি।’
কিন্তু কে শুনে কার কথা! আরভীক তার মহাবাক্য বলা আরম্ভ করে দেয়।
‘কেন রে অন্য দম্পতির চুমাচুমি দেখিস! নিজের বেলায় তো তাও পাস না। তাই বলে হিংসে হয় হে! জানি তো দুটাই হুদাইয়ের মিঙ্গেল হয়ে আছিস। বিয়েশাদি তোদের করাই লাগবে না। তোরা খালি গরুর মত খাটতে থাক। আমি ঘাস,পানি সব খেয়ে নিয়ে তোদের দশ-বিশটা ছেলেমেয়ের চাচাগণ বানিয়ে দেব।’
ফাহাদ-সায়াজ হা হয়ে যায়। নির্বোধ কান্নামাখা চেহারা করে সাইবার দিকে তাকায় ফাহাদ। সে ফাহাদের চাহনী দেখে মিটমিটিয়ে হাসি দেয়। যা আগুনে ঘি ঢালছে। ফোঁস ফোঁস করে সাইবার দিকে ছুটে গেল সে। সাইবা ফাহাদকে আসতে দেখে পালানোর জন্য দৌড় লাগায়। সায়াজ বেচারা বউয়ের জন্য অপেক্ষায় মিছামিছি চোখের পানি মুছার ভান করে চুপিসারে কেটে পড়ে। আরভীক ও অঞ্জয় দেখে ভূবন ভুলানো হাসি দেয়।
চলবে…..