পদ্মফুল #জান্নাতুল_ফারিয়া_প্রত্যাশা ।২৫।

#পদ্মফুল
#জান্নাতুল_ফারিয়া_প্রত্যাশা
।২৫।

ট্র্যাক করা লোকেশনে গিয়ে কাউকে পাওয়া গেল না। জায়গা’টা শহর থেকে বেশ ভেতরে হওয়ায় পুলিশদের পৌঁছাতেও কিছুটা লেইট হয়ে গিয়েছে। উনারা এদিক ওদিক অনেক খোঁজা খুঁজির পর একটা পুরোনো দালান পেলেন। ভেতরে গিয়ে দেখলেন পুরো দালান শূন্য। তবে এখানে যে কিছুক্ষণ আগেও মানুষ ছিল সেটা আর উনাদের বুঝতে বাকি রইল না। রুমের ভেতর ছড়িয়ে ছিটিয়ে রাখা জিনিসগুলো দেখে, খুব ভালো ভাবেই আন্দাজ করতে পারলেন যে, যারা ছিল তারা কিছুক্ষণ আগেই এখান থেকে বেরিয়ে পড়েছে। পুরো দালান সার্চ করার পর বেশ কিছু জিনিস উনারা জব্দ করেন। যার মধ্যে মেয়েদের জিনিসপত্র বেশি ছিল। একের পর খটকা লেগেই চলছে। আর অফিসারের সন্দেহও ক্রমে ক্রমে তীব্র হচ্ছে। অফিসার বেশ চিন্তিত কন্ঠে তার পাশের এ.এস.আই কে বললেন,

‘আমার তো মনে হচ্ছে ঐ আকবর সাহেব’ই কিছু একটা করেছেন। আর উনার স্ত্রীও হয়তো উনার সাথে জড়িয়ে আছেন। উনাদের কথাবার্তা খুব খাপছাড়া লেগেছে। দু’জনের কথা দু’রকম। এতদিন তো সুজানা ছিল, এখন আবার এই পদ্ম। এই মেয়েটার সাথেও মনে হচ্ছে সেইম ঘটনা ঘটেছে। আচ্ছা, উনারা কোনোভাবে নারী পা*চার চক্রের সাথে জড়িত নয় তো? হয়তো পদ্ম’র মতো মেয়েদের এইভাবে ভুলিয়ে ভালিয়ে নিয়ে এসে পা*চার করে দেন।’

পাশের অফিসার’টি বললো,

‘হতে পারে স্যার। উনাদের হাব ভাব আমার প্রথম থেকেই সুবিধার মনে হচ্ছে না। আমি বরং এসব কথা ইনভেস্টিগেটর অভিকে জানিয়ে দেই। উনি তখন সেখানে থেকে অন্য কোনো স্টেপ নিতে পারবেন।’

‘ঠিক আছে আপনি জানিয়ে দিন। তারপর আমরা এখান থেকে বেরুব। কেন জানি মনে হচ্ছে, ওরা হয়তো বেশি দূর যেতে পারেনি। আমাদের এগিয়ে দেখতে হবে। আপনি ফাস্ট কাজ করুন।’

‘ওকে স্যার।’
.
.

অভি কল’টা কেটে দিয়ে আদিদের কাছে গেল। গম্ভীর গলায় বললো,

‘আরাফাত বা পদ্ম কাউকেই উনারা খুঁজে পাননি। তুই আন্টিকে গিয়ে জিজ্ঞেস কর, উনি তাদের এক্সেক্ট লোকেশন’টা জানেন কিনা? নয়তো কিন্তু পরে প্রেশার তোদের উপর দিয়েই যাবে। একে তো সুজানার কেইস, এখন যদি আবার পদ্ম’র সাথেও সেইম জিনিস হয় তবে অফিসাররা কিন্ত আর তদন্ত করবেন ডিরেক্ট সবাই’কে জেলে ঢুকিয়ে রি*মা*ন্ডে নিবেন। বুঝতে পারছিস তো, আমি কি বলছি?’

আদিদ দুই হাত দিয়ে মুখ ঢেকে পেছনে চেয়ারে হেলান দিয়ে বসল। তারপর সে ঠোঁট কামড়ে কী যেন কিছুক্ষণ ভাবল। অতঃপর বললো,

‘আমি আমার মা বাবাকে খুব ভালোবাসি। এত কিছু হয়ে যাওয়ার পরও আমি বলবো, উনাদের উপর আমার যথেষ্ট ভরসা আছে। উনারা তো সুজানাকে খুব ভালোবাসতেন। আর…আর পদ্ম-কেও তাই। আমার তো কোনোদিন কোনোকিছু ঐরকম ভাবে সন্দেহজনক লাগেনি। একবারের জন্যও মনে হয়নি আমার মা বাবা এসব করতে পারেন। তাহলে…তাহলে তুই হঠাৎ আমার মা বাবার পেছনে এইভাবে পরে আছিস কেন? অন্য কিছুও তো হতে পারে। হতে পারে সত্যিই এখানে অন্য কেউ আমাদের ফাঁ*সাচ্ছে। কি হতে পারে না? আর তুই তো দেখেছিস, মা অসুস্থ হয়ে পরেছেন। আর বাবাও কেমন স্তব্ধ হয়ে বসে আছেন। আমি নিজেও মানসিক ভাবে সুস্থ না। বারবার আমার দৃশ্যপটে কেবল ঐ ক*ঙ্কা*ল টা’ই ভেসে উঠছে। এত কিছুর মাঝে এখন আবার পদ্ম’র চিন্তা। বিশ্বাস কর, আর নিতে পারছি না আমি। মনে হচ্ছে এক্ষুণি স্ট্রোক করবো।’

আদিদ চোখ বুজে জোরে জোরে শ্বাস ফেলতে থাকে। অভি এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে তার দিকে। সত্যিই তো, এই ছেলেটা আর কত সহ্য করবে? সুজানা হারিয়ে যাওয়ার পর থেকে আজ পর্যন্ত ছেলেটা স্বাভাবিক হতে পারেনি। এখনও তার স্মৃতি আঁকড়ে ধরে বেঁচে আছে। এত এত কষ্টের পরও নিজেকে বাঁচিয়ে রেখেছে। আজ আবার সেই পুরোনো কষ্টে বুকটা তার থরথর করে কাঁপছে। হয়তো আশেপাশে এত মানুষ না থাকলে সে এতক্ষণে কেঁদে চোখ ভাসাতো। কিন্তু, দুর্ভাগ্যবশত সেটা এখন আর হয়ে উঠছে না।

অভি তার পাশে বসলো। নরম সুরে বললো,

‘প্রত্যেক’টা সন্তান’ই তার মা বাবাকে অন্ধের মত বিশ্বাস করে। আর এটাই স্বাভাবিক। আমি তোকে কষ্ট দেওয়ার মত কিছু বলতে চাই না। কিন্তু কী করবো বল? এই কেইস’টা এখন এমন একটা সিচুয়েশনে আছে যে, না চাইতেও এখন আঙ্গুল’টা তোদের দিকেই তুলতে হচ্ছে। তদন্তের খাতিরে এমন অনেক কিছু আমাদের করা লাগে যেটাতে আমাদের মন একেবারেই সাঁই দেয়না। কিন্তু, আমরা বাধ্য। আগে দায়িত্ব তারপর আবেগ। আমাকে ভুল বুঝিস না, দোস্ত। আমার কিছু করার নেই।’

আদিদ সোজা হয়ে বসলো। অভির পিঠে চাপড় মেরে বললো,

‘আরে না, আমি জানি এটা তোর ডিউটি। আর সত্যি বলতে তো আমিও চাই, আসল অপ*রাধী ধরা পরুক। তাদের কঠিন শাস্তি হোক। কিন্তু…মা বাবা-কে নিয়ে এসব কিছু আমি কল্পনাতেও ভাবতে পারবো না। আমার তখন বুক কাঁপে। মা বাবা-কে কেউ কি অপ*রাধীর চোখে দেখে বল?’

‘আর যদি মা বাবা সত্যি সত্যিই অপ*রাধী হয়ে থাকে, তখন?’

আদিদ চোখ মুখ খিঁচে বন্ধ করে বলে,

‘জানি না আমি। প্লীজ, আমাকে আর এসব ব্যাপারে প্রশ্ন করিস না। আই কান্ট টলোরেট ইট এনিমোর।’

অভি কথা বাড়াল না। জবাবে কেবল দীর্ঘশ্বাস ফেলল।

____________________________

চোখের পাতা পিট পিট করছে। হয়তো সেটা খুলতে চাইছে। কিন্তু পারছে না। সেইটুকু শক্তিও যে শরীরে নেই। তাও পদ্ম থামল না। চেষ্টা চালিয়ে গেল। খুব কষ্টে সে পল্লব মেলে তাকাল। চারদিক তো অন্ধকার। কিছু দেখতে পাচ্ছে না সে। মাথা ভার হয়ে আছে। মস্তিষ্ক ও তো কাজ করছে না। ঠোঁট নাড়াতে পারছে না। হাত আর পা ও যেন কেমন আষাঢ় লাগছে। সে এইটুকু বুঝতে পারছে তার শরীর দুলছে। আরেকটু সময় যাওয়ার পর সে বুঝতে পারলো, সে কোনো একটা গাড়িতে আছে। এবার তার স্নায়ুতে নাড়া পড়ল। সজাগ হলো মস্তিষ্ক। এবার টের পেল সে তার মুখ বাঁধা। আর তার সাথে তার হাত আর পা ও বাঁধা। সঙ্গে সঙ্গেই তখন তার মনে পড়ল তার কী হয়েছিল। সে তো খাবার খাচ্ছিল। আর খাবার শেষ করার পর পরই তার চোখ বন্ধ হয়ে আসছিল। বিছানায় হালকা হেলান দিয়ে বসেছিল সে। আরাফাতের জন্য অপেক্ষা করছিল। কিন্তু, তারপরই হঠাৎ কী যেন হলো। সে ঘুমিয়ে পড়ল। আর তারপর আর কিছু মনে নেই। পদ্ম এবার ছটফট করতে লাগল। এবার তার মনে হচ্ছে, সে ভুল করে ফেলেছে, মারাত্মক ভুল। নিজের হাতে নিজের জীবন শেষ করেছে সে। সে খুব চেষ্টা করছে, কথা বলার জন্য। কিন্তু পারছে না আর সেটা সম্ভবও না। সে এবার নড়ে চড়ে উঠায় টের পেল সে এখানে একা নয়। এখানে আরো কেউ আছে। কিন্তু, অন্ধকারে কাউকেই দেখা যাচ্ছে না। ভয়ে শরীর যেন তার জমে যাচ্ছে। কারা আছে তার সাথে, কেউ তো কোনো কথাও বলছে না। আরাফাত ঠকিয়েছে তাকে। শুধু আরাফাত না ঐ রুবি হোসেন আকবর সাহেব, সবাই তাকে ঠকিয়েছে। এইসব কিছু উনাদের নাটক ছিল। পদ্ম নিরবে কাঁদতে থাকে। ভয়ে তার গলা শুকিয়ে উঠেছে। তার মনে হচ্ছে তার শরীর যেন অবশ হয়ে যাচ্ছে। চোখগুলো যেন আবারও বুজে যাচ্ছে। কিছুক্ষণের মাঝেই চোখ বন্ধ হয়ে গেল তার। হয়তো ভয়ে সে আবারো চৈতন্য হারিয়েছে…

চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here