#পবিত্র_ভালোবাসা ❣️
#Writer_ইসরাত_জাহান_মাওয়া
#পর্ব_২৮
জান্নাতের বিয়ের দিন
আহ্ বিয়েতে দেখছি ডবল মজা হবে
অবশ্যই….
কথাটা বলে ফোন কাটলো মেরি আর মুখে তার ডেভিল মার্কা হাসি….
এই দুই দিন ঈশান ইসরাতের সাথে তেমন একটা কথা বলে নাই। এক রুমে থাকা সত্বেও দরকারি কথা ছাড়া ঈশান ইসরাতের দিকে তাকাতো ও না।
আর এইদিকে জান্নাতের বিয়ের দিন চলে আসছে ওর বিয়ের সব আয়োজন ইসলামিক ভাবে হচ্ছে । ইসরাতের মা বাবা ঈশানের অনেক আত্মীয় স্বজন রাও চলে এসেছে….
মেয়েদের উপরের সব রুম দেওয়া হয়েছে ওরা ওইখানে মজা করবে কিন্তু টা ইসলামের বাহিরে না। ওরা একেজন একেক রকমের গল্প বলছে কেউ বা বাচ্চাদের কবিতা দিয়ে অভিনয় করছে কেউ গজল কেউ বা হামদ এইভাবে চলতে লাগলো দুইটা দিন…..
জান্নাতের বাবা: কি বলছিস ইসরাত এখনো কিছু জানে না।
ইসরাতের বাবা: না ওকে কিছু বলি নাই আমরা। ভয় হয় যদি ও তখন আমাদের রেখে চলে যায়।
জান্নাতের বাবা:ইসরাত কে দেখে কি তোর মনে হয় ও এমন কিছু করবে।
ইসরাতের বাবা: না।কিন্তু তাও ভয় হয়। ইসরাতের মা তো মেয়ে কে ছাড়া কিছুই বুঝে না।
জান্নাতের বাবা: আমাদের উচিত ইসরাত কে সত্য কথা বলা। ওর জানার অধিকার আছে ওর জন্ম কোথায়? ওর আসল পরিচয় কি
কিছু একটা পড়ার শব্দে জান্নাত ও ইসরাতের বাবা পিছনে তাকিয়ে দেখলো ইসরাতের হাত থেকে ট্রে টা নিচে পড়ে আছে….আর চোখে হাজারো প্রশ্ন।
ইসরাতের বাবা: মা আমার আমাদের ভুল বুঝিস না।
ইসরাত: না আব্বু আমি আপনাদের কোনোদিন ও ভুল বুঝবো না। কিন্তু আপনারা যা বলেছেন তা কি সত্যি?
ইসরাতের বাবা: হুম রে মা। তুই আমাদের মেয়ে না(গলায় আটকে যাচ্ছে) তোর মার একটা অপারেশন হয় সেই অপারেশনে তোর মা চিরদিনের জন্য মা হবার ক্ষমতা হারায়। এই কথাটা শোনার পর ও প্রায় পাগল হবার পথে তাই ওকে আমি একটা অনাথ আশ্রম নিয়ে যায় সেখানে অনেক অনেক বাচ্চাকে দেখে ও অনেকটা সুস্থ্য হয়েছিলো তখন ডক্টর বলছে যে একটা সন্তান থাকলেই ও ভালো হয়ে যাবে খুব শীগ্রই। তাই ও আর আমি আবারও যাই অনাথ আশ্রমে ওইদিন তোকে এক মহিলা এই আশ্রমে রেখে যায় আমাদের সামনে কারণ মহিলাটির কান্সার ছিলো আর তোর ছোটো ছোট হাত গুলো তোর মাইয়ের বোরকায় হাত মিশাচ্ছিলো । আর তোর মা সেদিন নিজের বুকে তোকে নিয়ে মনে হচ্ছিলো যেনো সে তার আত্মা ফিরে ফেয়েছে ।
ইসরাত এইসব শুনছে আর কান্না করছে ওর কষ্ট এই জন্য হচ্ছে না যে ওর বাবা মা ওর না কেননা ও জানে এই মা বাবাই ওর সব। ওর কষ্ট হচ্ছে তার কারণ তার মা কে চিনার আগেই সে মারা যায় ।
জান্নাতের বাবা: দেখো ইসরাত তুমি ইমতিয়াজের নিজের মেয়ে না হওয়া সত্বেও ওরা কিন্তু তোমায় খুব ভালোবাসে প্লিজ ওদের জন্য হলেও কষ্ট পেওনা ।
ইসরাত: না বাবা আমার কোনো কষ্ট হচ্ছে না। কিন্তু আমি আমার বাবা মা কে নিয়ে খুব গর্ব বোধ করতাম আর এখন তাদের নিয়ে আমি আরো অনেক বেশি গর্ব বোধ করি। কেননা ওনাদের মেয়ে না হওয়া সত্বেও আমি কোনোদিন বুঝতে পারিনি যে আমি ওনাদের মেয়ে না। ওনারা আমাকে এত এত ভালোবাসা দিয়েছে যা আমি কোনোদিন ও ভুলবো না।
জান্নাত এসে…
ইসু পাখি চল তোকে মিশু আপু দেখতে এসেছে…
আসছি…
জান্নাতের বাবা ও ইসরাতের বাবা সম্মতি দিলো যেতে…..
ইসরাত ওর রুমে গিয়ে দেখে একটা মেয়ে ওর আর ঈশানের রুম টা ঘুরে ঘুরে দেখছে আর কি যেনো বিড়বিড় করে বলছে….
আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ ওয়া বারকাতুহু আপু। কেমন আছেন?
মিশু: ওয়া আলাইকুমুস সালাম ওয়া রহমাতুল্লাহ ওয়া বারকাতুহু। যেমন রেখেছো তেমন আছি(উল্টো ভাবে ঘুরেই বললো)
ঠিক বুঝতে পারলাম না আপু
কি বুঝতে পারলে না (পিছনে ঘুরে ইসরাতের মুখো মুখি এসে)
আপু আপনি…
তুমি আমায় চিনো?
আপু আপনি তো ওই রাস্তার আপু টা যাকে কিছু ছেলে বাজে কথা বলেছিলো।
তারমানে তুমি সেই হিজাবী বোন(ইসরাত কে জড়িয়ে ধরে)
হুম আপু। কিন্তু আপনি এইখানে…?
আসলে আমি তোমার সতীন হতে এসেছিলাম কিন্তু ভাগ্যের কি পরিহাস তোমার বোন হয়ে গেছি।
মানে?
মানে কিছু না। আমি তোমার বরের ফ্রেন্ড।
ওহহ
জানো ওইদিনের পর থেকে আমি ঈশান তিয়াস আর অর্নিলের সাথে সামনাসামনি দেখা করতাম না যদি ও কথা বলতাম তাহলে কিছুক্ষণ। আর ওদের সামনে বোরকা পড়ে যেতাম ।
ওহহ আচ্ছা….
কিরে ইসু পাখি তুই কি মিশু আপু কে চিনিস?
হুম আমরা একে উপরকে চিনি,,,,,,মিশু বললো….
পরে মিশু সব বললো জান্নাত কে….
জান্নাত: আমার ইসু পাখি টা কতো ভালো । কিভাবে সবাই কে ভালো করে দেয়।
ইসরাত: সবাই আর ভালো হলো কিভাবে(মনে মনে) আচ্ছা একটা বলি শুধু নামাজ না নামাজের সাথে দান ও করতে হয়।
জান্নাত ও মিশু: মানে?
ইসরাত: হুম বলছি….একদা এক ব্যাক্তি উচু পাহাড়ের পাশ দিয়ে একটি কবরস্থানের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন। বেশ কিছুক্ষণ যাওয়া পর হটাৎ তার চোখে পড়লো তিনটি কবর। এবং তিনি লক্ষ্য করলেন যে প্রত্যেকটি কবরে কিছু লেখা আছে তাই তিনি গভীর আগ্রহে কবর গুলোর কাছে গেলেন লেখা গুলো পড়ার জন্য। ওইখানে গিয়ে তিনি যা দেখলেন তাতে তিনি বিস্মিত হয়ে গেছিলেন।কারণ প্রথম কবরে লিখা ছিলো ……
পার্থিব বা দৈনন্দিনের জীবনে কি কোনো কাজে আসতে পারে।নামাজ ব্যাতিত পৃথিবীর সফলতা আখিরাতের কোনো কাজে আসবে না। কারণ আল্লাহ তায়ালা ইহকাল এবং পরকালে পৃথিবীর সকল কাজের হিসাব নিবেন। যদি ভালো কর্ম করে থাকেন তাহলে ফল পাবেন।আর যদি খারাপ কর্ম করে থাকেন তাহলে খারাপ ফল পাবেন।
দ্বিতীয় কবরে লিখা ছিলো…
প্রকৃতি পক্ষে আসল মানুষ তো সে যে চিন্তা করে যেকোনো সময় তার মৃত্যু হয়ে যেতে পারে যেকোনো সময় তার ক্ষণিকের বসবাসের স্থান এই পৃথিবীর মায়া ছেরে তার আখিরাতের যাত্রার সাথে তার কবরে শাহিত হতে হবে।
এবং তৃতীয় কবরে লিখা ছিলো…
ভয় হয় না কেনো সেইসব মানুষদের যারা বুঝতে চায় না কিছুদিন পরেই তার যৌবন বৃদ্ধে পরিণীত হবে। শরীলের সকল সুন্দর্য নষ্ট হয়ে যাবে এবং চামড়া কস্কে যাবে।
কবরের এই লিখাগুলো পড়ে সেইগুলোর সঠিক অর্থ বের করার জন্য তিনি ওই এলাকার একজন বৃদ্ধ জ্ঞানী আলেমের কাছে গেলেন। এবং তিনি তাকে জিজ্ঞেস করলেন আপনি কি এদের অর্থাৎ এই কবর গুলোর কাহিনী জানেন?
তখন সেই বৃদ্ধ ব্যাক্তি বললো
হ্যাঁ আমি এই তিন ব্যাক্তির কবরের কাহিনী জানি।তবে তুমি যদি তা জানতে চাও আমি তোমায় তা বলতে পারি।
তখন সেই ব্যাক্তি বললো আমি তাদের কাহিনী জানতে চাই
তার এই কথা শুনে বৃদ্ধ লোকটি বললো
চলো আমি আজ তোমাকে এই তিন ব্যাক্তির কথা তোমায় বলি…..এই তিনটি কবর হলো তিন ভাইয়ের তাদের মধ্য এক ভাই যে বাদশার সকল কাজের দেখাশোনা করতো
দ্বিতীয় ভাই এখন বড় ব্যবসায়ী ছিলেন আর প্রচুর টাকার মালিক ছিলেন।
আর তৃতীয় ভাই অনেক ঈমানদার বান্দা ছিলেন। তিনি তার সারাটা জীবন আল্লাহর পথে ইবাদত করে কাটিয়েছিলেন।
হটাৎ একদিন দুই ভাইয়ের কাছে তাদের ঈমানদার ভাইয়ের অসুস্থ্যতার খবর এসে পৌঁছালো। ফলে তার দুইভাই তার ঈমানদার ভাইয়ের কাছে তাড়াতাড়ি চলে গেলেন।
সেখানে গিয়ে তারা দেখলেন তাদের ভাই শেষ নিঃশ্বাস গুনছেন।তারা তাদের ভাইকে জিজ্ঞেস করলেন,,,
তোমার কি কোনো শেষ ইচ্ছা আছে? বা তুমি তোমার সম্পত্তি গুলো কে তুমি তোমার ছেলে মেয়েদের মধ্য কিভাবে ভাগ করতে চাও? আমাদের বলো আমরা তাই করবো।
তখন তার মৃত্যুশয্যা ভাই বললেন,
তাদের দেওয়ার মতো আমার কাছে কিছুই নেই
তখন তার ভাই বললো…
তাহলে তুমি আমাদের সম্পত্তির কিছু অংশ নেও আর সেই অংশ দিয়ে তুমি তোমার ছেলে মেয়েদের ইচ্ছা পূরণ করে যাও বা তোমার মনের সাধ পূরণ করে যাও।
তখন ওই ঈমানদার ব্যাক্তি টি বললেন…
না,আমার কোনো কিছু দরকার নেই। তাই তখন তিনি তার ব্যাবসায়ী ভাইকে বললেন,,
ভাই তুমি আমার একটি কাজ করবে….
চলবে…..