#পবিত্র_ভালোবাসা ❣️
#Writer_ইসরাত_জাহান_মাওয়া
#পর্ব_৭
ইসরাত মেয়েটার মুখ দেখে তো মনে হয় আকাশ থেকে পড়ছে কেননা মেয়েটার সাথে আজ তার বন্ধত্ব হয়েছে।
জান্নাত: ইসুপাখি তুইইইইই(অবাক হয়ে)
ইসরাত: আমি ও তো তাই ভাবছি তুই এখানে কেনো?
জান্নাত: আমার ভাইয়ের বিয়ে তো আমি থাকবো আর কে থাকবে।
ইসরাত: তোর ভাই মানে?
জান্নাত: আমার ভাই মানে তোর বর আর তোর বর মানে আমার ভাই বুঝছিস…
জান্নাতের কথা শুনে ইসরাতের আব্বু আর জান্নাতের আব্বু হেসে দিলো….
জান্নাতের আব্বু: তারমানে তোমার ওই ইসু পাখি আমার ইসরাত মা তাই তো….
জান্নাত: হুম আব্বু… আংকেল জানেন(ইসরাতের আব্বু কে উদ্দেশ্য করে) এই ইসু পাখির জন্য আজ আমি একটা সুন্দর মন পেয়েছি । আমি আগে নামাজ কুরআন তেলাওয়াত কিছুই করতাম না বেপর্দা ভাবে চলাফেরা করেছি বাট কয়েকদিন আগে আমার এই ইসু পাখির সাথে কথা হয়েছে ও ওর এত মিষ্টি মধুর কথায় আর ওর #পবিত্র_ভালোবাসা দিয়ে আমাকে শুধরানোর পথ দেখিয়েছে। ও আমাকে বুঝিয়েছে যে এই ইহকালের সব না এই পৃথিবী যে একটা পুতুল খেলার ঘর ওর সাথে থেকে আমি বুঝতে পেরেছি । আমাদের জন্য যে মৃত্যুর পরে পরকাল বলে একটা স্থান আছে ওইখানে যে আমাদের হিসাব নিকাশ করে আমাদের সত্যিকারের ঠিকানা বাড়ী হবে তা আমি ওর সাথে কথা বলে বুঝেছি এখন প্রতি নামাযে কান্না করে ক্ষমা চাই মহান আল্লাহ তায়ালার কাছে (কান্না করে)
জান্নাতের আব্বু: আমি জানি আমার এই ইসরাত মা এই পারবে আমার পরিবার কে ঠিক করতে।
জান্নাত: আব্বু তুমি ইসুপাখির খুঁজ কোথায় পেলে?
জান্নাতের আব্বু: শুনো তাহলে…. কিছুদিন আগে আমি রাস্তা দিয়ে যাচ্ছি তখন দেখি অনেকগুলো ছেলে মেয়েদের বিরক্ত করছে তো ওইখানে যেতে নিলে আমি ইসরাত মায়ের কথা গুলো শুনতে পাই তখন মনে হয় আল্লাহ তায়ালা এই ইসরাত মা কে আমার পরিবারের লক্ষ্মী হবার নিশানা দিয়েছে তখন আমি ওর অনেক খুঁজ খবর নেই আর জানতে পারি ও একজন ধার্মিক মেয়ে পরে ওর বাসায় এসে দেখি আমার সেই ছোটো কালের বন্ধুর মেয়ে ও।
জান্নাত: হুম বুঝতে পেরেছি এইবার দেরি হয়ে যাচ্ছে। বাসায় যেতে হবে…
পরে জান্নাতের পরিবার রা ইসরাত কে নিয়ে ওদের বাসায় রওনা দিলো। ইসরাতের মা বাবা তাদের একমাত্র চোখের মনি কে বিদায় জানালো।
জান্নাতের বাসায় বিয়ের নিয়ম গুলো সব মেনে ইসরাত কে বাসর ঘরে বসিয়ে দিয়ে আসলো…
জান্নাত: ইসুপাখি….
ইসরাত: হুম বল…
জান্নাত: তুই তো আমার ভাইয়ের সম্পর্কে সব কিছুই জানিস
ইসরাত: হুম(দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে)
জান্নাত: তুই আমার ভাইটাকে ভালো করে দে প্লিজ। জানিস ও খুব সরল সহজ একজন ছেলে ওর মন টা খুব নরম কিন্তু ও টা কাউকে বুঝতে দেই না আমি জানি তুই ওকে ভালো করতে পারবি আমার অনেক বিশ্বাস আছে তোর প্রতি।
ইসরাত: ইনশাআল্লাহ আমি চেষ্টা করবো কিন্তু সব কিছুই মহান আল্লাহ তায়ালার হাতে। ওনি যা ভালো মনে করেন তাই হবে….
জান্নাত: ভাইয়া আস্তে মনে হয় অনেক দেরি হবে তুই এই ফাঁকে আমায় একটা ইসলামিক গল্প শুনাবি (করুন গলায়)
ইসরাত: কেনো নয়।
জান্নাত: বল তাহলে,,,,ইসরাতের খুলে মাথা রেখে….
ইসরাত:এক বাদশার একটি বাগান ছিল। বাগানটি ছিল অনেক বড় এবং বিভিন্ন স্তর বিশিষ্ট। বাদশাহ একজন লোককে ডাকলেন। তার হাতে একটি ঝুড়ি দিয়ে বললেন, আমার এই বাগানে যাও এবং ঝুড়ি বোঝাই করে নানা রকম ফলমুল নিয়ে আস। তুমি যদি ঝুঁড়ি ভরে ফল আনতে পার আমি তোমাকে পুরস্কৃত করব। কিন্তু শর্ত হল, বাগানের যে অংশ তুমি পার হবে সেখানে তুমি আর যেতে পারবে না। লোকটি মনে করলো এটা তো কোন কঠিন কাজ নয়। সে এক দরজা দিয়ে বাগানে প্রবেশ করল। দেখল, গাছে গাছে ফল পেকে আছে। নানা জাতের সুন্দর সুন্দর ফল। কিন্তু এগুলো তার পছন্দ হল না। সে বাগানের সামনের অংশে গেল। এখানকার ফলগুলো তার কিছুটা পছন্দ হল। কিন্তু সে ভাবল আচ্ছা থাক সামনের অংশে গিয়ে দেখি সেখানে হয়ত আরো উন্নত ফল পাব, সেখান থেকেই ফল নিয়ে ঝুঁড়ি ভরব। সে সামনে এসে পরের অংশে এসে অনেক উন্নত মানের ফল পেল। এখানে এ সে তার মনে হল এখান থেকে কিছু ফল ছিড়ে নেই। কিন্তু পরক্ষণে ভাবতে লাগলো যে সবচেয়ে ভাল ফলই ঝুড়িতে নিবে। তাই সে সামনে এগিয়ে বাগানের সর্বশেষ অংশে প্রবেশ করল। সে এখানে এসে দেখল ফলের কোন চিহ্ন ই নেই। অতএব সে আফসোস করতে লাগল আর বলতে লাগল, হায় আমি যদি বাগানে ঢুকেই ফল সংগ্রহ করতাম তাহলে আমার ঝুড়ি এখন খালি থাকত না। আমি এখন বাদশাকে কি করে মুখ দেখাব। ঝুড়ি সহ বাগানে প্রবেশকারি লোকটির সাথে আমলনামা সহ দুনিয়ার বাগানে প্রবেশকারী তোমাকে তুলনা করা যায়। তোমাকে নেক কাজের ফল ছিঁড়তে বলা হয়েছে, কিন্তু তুমি প্রতিদিনই ভাব, আগামী কাল থেকে ফল ছেঁড়া আরম্ভ করব। আগামী দিন, আগামী দিন করতে করতে তোমার জীবনে আর আগামী দিন আসবে না। এভাবেই তুমি শূণ্য হাতে আল্লাহর সামনে হাজির হবে। এজন্য মুফতি তাকি উসমানী (রহঃ) বলেন, জীবনের সময়গুলো অতিবাহিত হচ্ছে। জীবন কেটে যাচ্ছে জানা নেই বয়স বাকি কত। সুতরাং নেক কাজের বাসনা জাগ্রত হওয়ার সাথে সাথে তা করে ফেল। কে জানে কিছুক্ষণ পরে মনের এই আগ্রহ থাকবে কি না? এটাও জানা নাই একটু পর বেঁচে থাকবো কিনা, যদিও বেঁচে থাকি হয়তো দুনিয়ার কোন ব্যস্ততা সামনে এসে পড়বে। অতএব নেক কাজ যখনি করতে মন চায় তখনি করে নাও। জীবন থেকে ফায়দা লুটে নাও। তাই জীবন নামক আল্লাহ্র অনুগ্রহে দেয়া বাগানে বিচরণ কালে আমল নামার বিশেষ ঝুড়িতে যখনই সুযোগ পাওয়া যায় তখনি নেকী নামক ফল দিয়ে প্রথম থেকেই ভরা শুরু করে দাও। পরে সময় পাওয়া যাবে কিনা জানা নাই । আল্লাহ সুবহা’নাহু ওয়া তা’য়ালা সবাইকে তওফিক দিন।
জান্নাত: আমিন। হুম আমাদের উচিত প্রতিদিনের কাজ/ইবাদাত প্রতিদিন করা কেননা আজ আছি আমরা কাল নাও থাকতে পারি তখন তো আল্লাহ তায়ালার দরবারে আমরা কিছুই নিতে পারবো না তখন হইতো নেকীর পাল্লা কম আর পাপের পাল্লা ভারী হয়ে যাবে।
ইসরাত: এই তো বুঝতে পেরেছিস আমার বাগান(গাল টেনে)
জান্নাত: বাগান মানে কিসের বাগান?
ইসরাত: জান্নাত শব্দের অর্থ বাগান। জান্নাত হল ইসলামিক পরিভাষা অনুযায়ী, পার্থিব জীবনে যে সকল মুসলিম আল্লাহর আদেশ নিষেধ মেনে চলবে এবং পরকালীন হিসাবে যার পাপের চেয়ে পুণ্যের পাল্লা ভারী হবে ও আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভ করবে তাদের জন্য আল্লাহ যে সকল স্বর্গ প্রস্তুত রেখেছেন।এটি একটি আরবী শব্দ, যার শাব্দিক অর্থ হল “বাগান” বা “উদ্যান”| প্রচলিত বাংলা ভাষায় একে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই বেহেশত বলা হয়ে থাকে|
জান্নাত: মাশাল্লাহ আমার নামের অর্থ এত সুন্দর।
ইসরাত: হুম । ঠিক তোর মতই।
জান্নাত: শুন তুই প্রতিদিন আমায় এমন সন্দর গল্প শুনবি আর একটা কথা(লজ্জা পেয়ে)
ইসরাত: হুম বল…
জান্নাত: আমি অনেক ছোট বেলায় কুরআন শিখছি কিন্তু এখন বেশি একটা ভালো করে পারি না যদি তুই আমায়…
(মাথা নিচু করে)
ইসরাত: আমার দিকে তাকা তুই(জান্নাতের মুখ নিজের দিকে নিয়ে) এইভাবে বললে কানের নিচে একটা চকোলেট দিয়ে দিবো। পড়ালিখা নিয়ে কোনোদিন লজ্জা করবি না। কেননা পড়ালিখা করার জন্য বয়স না লাগে সুন্দর একটি মন, সুন্দর মনোবল। তো শুন প্রতিদিন সকালে আমরা দুইজন একসাথে কুরআন তেলাওয়াত করবো কেমন।
জান্নাত: হুম। ভালোবাসি তোকে এত্ত এত্ত আমায় ইসুপাখি।
ইসরাত: আমি ও ভালোবাসি আমার এই ননদিনী কে।
এমন কারো দরজায় কেউ নক দিলো….
জান্নাত: মনে হয় ভাইয়া আসছে আমি যাই আল্লাহ হাফেজ।
ইসরাত: আল্লাহ হাফেজ…
জান্নাত: না জানি এখন কি হয় আমার ইসুপাখীটার সাথে(মনে মনে)
কেউ একজন রুমে প্রবেশ করলো। তাই ইসরাত খাট থেকে নেমে তাকে সালাম করতে যেতেই…..
চলবে…..
বানান ভূল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।
শিক্ষণীয় কিছু কথা: আমরা কিন্তু সব সময় বলি আজ না আগামীকাল থেকে নামাজ পড়বো। কিন্তু আমরা এইটা ভাবী না আমরা আজ আছি কাল নাও থাকতে পারি। মৃত্যু কিন্তু আমাদের প্রতিনিয়ত ডাকে। তাই চুলুন নামাজ আদায় করি প্রতিদিন। আগামীকালের জন্য ফেলে না রেখে। কেননা মৃত্যুর পর আমাদের সঙ্গী কিন্তু নামাজ,ইবাদত, ঈমান,কুরআন, পাঁচ কালিমা, যাকাত, বাবা মা কে সম্মান করা ভালো আচরণ করা গরিবদের সাহায্য করা এইসব যাবে । তাই চলুন পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ি নিজেকে একজন খাটি মুসলিম হিসেবে গড়ে তুলি।☺️