পবিত্র ভালোবাসা❣️পর্ব_১

0
4525

#পবিত্র_ভালোবাসা ❣️
লেখিকা: ইসরাত_জাহান_মাওয়া
#পর্ব_১

সকালে নামাজ পড়ে কুরআন তেলাওয়াত করছি। আজ মন টা খুব খারাপ তাই অনেক আগে থেকেই তাহাজ্জুদের নামায আদায় করে নফল নামাজ পড়ে ফজরের নামাজ পড়ে কুরআন তেলাওয়াত করছি এখন একটু ভালো লাগছে । হটাৎ করেই সূরা বাকারার একটি আয়াত চোখে পড়লো যার অর্থ হলো

যিনি পৃথীবিকে তোমাদের জন্য বিছানা ও আকাশকে ছাদ স্বরুপ করেছেন এবং আকাশ থেকে বারি বর্ষন করেও তাদ্বারা তোমাদের জীবিকার জন্য ফল-মুল উৎপাদন করেন, সুতরাং জেনে শুনে কাউকে আল্লাহর সমকক্ষ দাড় করোনা।(আয়াত ২২)

হুম এখন খুব শান্তি লাগছে তারমানে আল্লাহ তায়ালা চাইছিলেন যেনো আজ আমি তার ইবাদত করি মনে প্রাণে তাকে ডাকি তাই হইতো তিনি আজ আমার মনটাকে এইভাবে খারাপ রেখেছি….ঠিক এমন সময় আম্মু ডাক দিলো…..

ইসরাত আম্মু তুমি কি ঘুম থেকে উঠেছো….

আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহি ওয়া বারকতুহু… জ্বি আম্মু আমি অনেক আগেই ঘুম থেকে উঠে নামাজ পড়ে এখন কুরআন তেলাওয়াত করছি….

ওয়া আলাইকুমুস সালাম ওয়া রহমাতুল্লাহি ওয়া বরকাতুহু।
সুবহানাল্লাহ….. আচ্ছা তাহলে তুমি কুরআন তেলাওয়াত করো আমিও সালাত আদায় করি ইসরাতের আম্মু বললো…..

এখন তো ভালো করে সকাল হয় নাই তারমানে এখন আশে পাশে বা রাস্তায় কোনো মানুষ নেই তাহলে একটু ছাদে গিয়ে সকালের পরিবেশটা উপভোগ করি । ইসরাত বললো……

ইসরাত অনেক বড় একটা হিজাব পড়লো যা একদম হাঁটুর নিচে আর মুখ টা ডেকে ফেললো যদি কোনো মানুষ থাকে তাই….

ছাদে এসে….

মহান আল্লাহ তায়ালা আমাদের জন্য কত কিছুই না সৃষ্টি করেছে । পৃথিবীটাকে কি অপরূপ ভাবেই না জানিয়েছে…. তখন ইসরাতের একটি আয়াত মনে হলো…

তিনি পৃথীবির সব কিছু তোমাদের জন্য সৃষ্টি করেছেন । তারপরে আকাশের দিকে দৃষ্টি করেন এবং উহাকে (আকাশকে) সাত আসমান রুপে বিন্যস্ত করেন এবং তিনি সর্ব বিষয়ে মহা জ্ঞানী।(বাকারা -২৯)

আস্তে আস্তে এই শূন্য রাস্তা টা মানুষের ভিড়ে যাচ্ছে তাই ইসরাত তাড়াতাড়ি বাসায় চলে আসলো….

আম্মু আজকে আমি চা টা বানাই….

আচ্ছা বানাও কিন্তু তোমার তো আজকে কলেজ আছে তাই তাড়াতাড়ি খাওয়া দাওয়া সেরে কলেজ যাবে…

হুম আম্মু….

ইসরাত চা বানিয়ে ওর আব্বুর কাছে গেলো…..

আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহি ওয়া বারকাতুহু… ইসরাত তার বাবা কে সালাম দিলো…

ওয়া আলাইকুমুস সালাম ওয়া রহমাতুল্লাহি ওয়া বারকাতুহু আম্মু । তুমি নাকি আজ চা বানিয়েছো তোমার আম্মু বললো….(মিষ্টি হাসি দিয়ে)

জ্বি আব্বু, আজ রাতে ভালো ঘুম হইনি তাই সারারাত নামাজ আদায় করলাম এখন মন টা খুব ভালো লাগছে তাই ভাবছি আপনাদের জন্য আজ কিছু একটা বানাই আর আমি তো তেমন রান্না পারি না আর যা পারি তা দেরি হবে এই জন্যই অল্প সময়ের মধ্যে চা বানিয়ে নিয়ে আসলাম….(মিষ্টি হাসি দিয়ে)

ভালো করছো আম্মু , আর আমি তো তোমার চায়ের খুব ভালো ভক্ত একজন।

আমি তো জানি আব্বু…. আব্বু একটা কথা বলি….

হুম বলো আম্মু(চায়ে চুমুক দিয়ে)

আব্বু আপনি আমায় মাদ্রাসায় ভর্তি না করিয়ে কলেজ কেনো ভর্তি করালেন। এইটা এখনো ভেবে পাচ্ছি না আমি।

আমি জানি তোমার মনে এইটা নিয়ে সঞ্চয় সৃষ্টি হবে তাই বলছি…. আজকাল অনেকেই মনে করে পর্দা রেখে পড়ালেখা করা যায় না বিশেষ করে স্কুল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে । আর এখন মাদ্রাসায় ও কোনো মেয়ে ভালো করে পর্দা করে না। আর অনেক ফ্যামিলি তো মেয়েদের পর্দা চলে যাবে বলে এসএসসি পরীক্ষার পর বিয়ে দিয়ে দেয় তাই আমি ওদের দেখিয়ে দিতে চাই পর্দা করে কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় এ পড়া যায় । স্বাধীন ভাবে চলা যায় নিজের পায়ে দাঁড়ানো যায় উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত হওয়া যায় । মেয়েরাও তাদের মন মতে চলতে পারে।

ইসরাত বললো…

আব্বু এখন তো অনেক পরিবারে মেয়েদের তাদের সমান অধিকার দেওয়া হয় না। আবার অনেকে ভাবে ছেলেরা বেশি পড়ালেখা করবে মেয়েদের এত পড়ে লাভ নাই। আমাদের সমাজে কিন্তু এখনও মেয়েদের নিচু চোখে দেখছে কিছু মানুষ….

তাহলে আম্মু আজ তোমায় একটা বয়েন বলি..

হুম আব্বু…

শুনো আম্মু….

প্রথম সন্তান ছেলে বা মেয়ে যাই হোক না কেন ইসলামের দৃষ্টিতে এর মাঝে কোনো পার্থক্য বা মর্যাদাগত কোনো কম-বেশি নেই। কারণ ইসলাম কন্যা শিশু ও ছেলে শিশু উভয়কেই সমান দুষ্টিতে দেখতে নির্দেশ দিয়েছেন। তবে কারো প্রথম সন্তান কন্যা হলে তার জন্য হাদিস শরীফে বিশেষ ফজিলতের কথা উল্লেখ রয়েছে। (১) হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বলনে, রাসূল (সা.) ইরশাদ করনে, যার গৃহে কন্যা সন্তান জন্মগ্রহন করল,অতঃপর সে ঐ কন্যাকে কষ্টও দেয়নি,তার উপর অসন্তুষ্টও হয়নি এবং পুত্র সন্তানকে তার উপর প্রধান্য দেয়নি,তাহলে ঐ কন্যার কারনে আল্লাহ তায়ালা তাকে জান্নাতে প্রবশে করাবেন।(মুসনাদে আহমদ ১;২২৩) (২) রাসুল (সা.) ইরশাদ করেন,যে ব্যাক্তি দু”টি মেয়েকে বয়ঃপ্রাপ্ত হ্ওয়া পর্যন্ত লালন পালন করল সে কিয়ামতের দিন এরূপ অবস্থায় উঠবে যে আমি আর সে এরকম মিলিত অবস্থায় থাকব,এই বলে তিনি স্বীয় আঙ্গুলসমূহ মিলিয়ে দেখালেন।(মুসলিম শরীফ) (৩) রাসুল (সা.) ইরশাদ করেন, “কন্যা সন্তান হল উত্তম সন্তান। কেননা,তারা হচ্ছে অধিক গুনের অধিকারিনী বিনম্র ও মিস্টভাষী। এছাড়া তারা পিতা-মাতার সেবা -শুশ্রষার জন্য সদাসর্বদা প্রস্তুত থাকে(ছেলেরাও করে) এবং তারা মায়া মমতাকারীনী,স্নেহময়ী,বিনয়ী ও বরকতময়ী।”(ফিরদাউস ৪;২৫৫) আর প্রথম সন্তান মেয়ে হ্ওয়ার ফযীলত সম্পর্কে হাদীস নিম্নে উল্লেখ করা হল, হযরত আব্দুল্লাহ উমর (রা.) বর্ণনা করেন,রাসুল (সা.) ইরশাদ করেন,ঐ মহিলা বরকতময়ী ও সৌভাগ্যশালী,যার প্রথম সন্তান মেয়ে হয়। কেননা,(সন্তানদানের নিয়ামত বর্ণনা করার ক্ষেত্রে)আল্লাহ তায়ালা মেয়েকে আগে উল্লেখ করে বলেন,তিনি যাকে ইচ্ছা কন্যা সন্তান দান করেন আর যাকে ইচ্ছা পুত্র সন্তান দান করেন।”(কানযুল উম্মাহ ১৬:৬১১) এই জন্য তো আমরা তোমায় পেয়ে অনেক খুশি আম্মু,,,,,ইসরাতের আব্বু বললো…..

আমি ও খুব খুশি আব্বু আপনাদের মত মা বাবা পেয়ে তাই তো আমি আল্লাহ তায়ালার কাছে অনেক অনেক শুকরিয়া আদায় করি…

ইসরাত আম্মু তাড়াতাড়ি আসো পরে কলেজ যেতে দেরি হয়ে যাবে….ইসরাতের আম্মু বললো….

তো ইসরাত খাবার খেয়ে কলেজ চলে গেলো….

কলেজে….

ইসরাত কলেজ যেতেই সবাই যেনো ইসরাতের দিকে তাকিয়ে আছে কেননা ইসরাত কালো বোরকা কালো অনেক বড় হিজাব হাত ও পায়ে সুন্নতি মুজা আর চোখে একটা চশমা । চশমা টা দেওয়া তে ভালো করে ওর চোখ জোড়া ও দেখা যাচ্ছে না আর ইসরাতের এই সাজ থেকে সবাই চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছে মনে হচ্ছে ওরা ভুত দেখছে। এইদিকে ইসরাতের ওদের তাকানো দেখে কোনো মাথা ব্যাথা নেই ও ওর মতই চুপচাপ গিয়ে ক্লাসে বসে পড়লো……..

অন্যদিকে…..

আমার জন্যই যতই মেয়ে দেখো না কেনো আমার পছন্দ হবে না (চিল্লিয়ে)

ঈশান বাবা আমার একটু আস্তে বল তোর বাবা নিচে বসে আছে ওনি যদি একবার শুনে তাহলে বাসায় সুনামি শুরু হবে…..

মম শুনো তুমি তো জানো আমি ঈশান চৌধুরী । আমার পিছনে হাজার মেয়েরা লাইন দিয়ে বসে আছে । আর আমি এমন একজন কে বিয়ে করবো যে হবে অনেক সুন্দরী শিক্ষিত,,,,যাকে দেখে সবাই চোখ ফিরাতে পারবে না। তুমি তো জানো মা আমি স্মার্ট আধুনিক স্টাইলিশ এই রকম একজন কে খুঁজছি যাকে দেখলে আমার হৃদয়ে ঘণ্টা বাজবে…

ঈশানের মা: তাহলে মিশু কে বিয়ে করে ফেল।

ঈশান: নো মম মিশুর প্রতি আমার ওই রকম কোনো ফিলিংস নাই আর ডেড এইসব কি মেয়ে দেখছে পুরাই ক্ষ্যত (ছবি ফেলে দিয়ে)

ঈশানের মা: তোরা যা ভালো বুঝ তাই কর । কেউ আমার কথা বুঝে না (বলেই চলে গেলো)

এমন সময় ঈশানের ফোন টা বেজে উঠলো আর দেখলো তার ফ্রেন্ড অর্নিল ফোন দিয়েছে…

ঈশান: হরতাল দোস্ত আসছি তো বলছি। জানিস না বাসায় যে আমার বাপ বসে আছে এতবার ফোন দিয়া লাগে নাকি মামু

অর্ণিল: ওই আন্টি বলছে তোর জন্য নাকি একটা মেয়ে দেখছে…

ঈশান: হো আগের যুগের সাবানা মেয়ে দেখছে…

অর্ণীল: তাহলে বিয়ে করে ফেল সাবানা খালাম্মা কে পরে তোরে সবাই খালু ডাকমু নে(বলেই অর্নিলের সাথে ঈশানের সব বন্ধুরা হাসা শুরু করলো)

ঈশান: একবার হাসি পরে দেখ কি করি….

ইসরাতের ক্লাসে….

এই ভুত একটু সরে বসতো…

চলবে….

বানান ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।

শিক্ষিনীয় কিছু কথা: সমাজে এখনো ও বলা হয় ছেলেদের পড়া লেখা করানো উচিত কারণ তারা নাকি নিজের বাড়িতে থাকবে আর মেয়েরা নাকি স্বামীর ঘরে চলে যাবে এই রকম কথাবার্তা যারা বলে তাদের বলা উচিত ইসলামে কিন্তু ছেলেদের থেকে মেয়েদের বেশি প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে । মেয়েদের অবহেলা না করে সম্মান দেওয়া উচিত কেননা মেয়েরাই কিন্তু সমাজে পুরুষদের পৃত্তিতের স্বাদ দেয়। মেয়েরাও এখন ছেলেদের থেকে কম যায় না পর্দা করে ও কিন্তু সব কিছু করা যায় তাই আমাদের সবার উচিত ছেলে এবং মেয়ে কে সমান চোখে দেখা ☺️

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here