পরাণ প্রিয়া❤ পর্ব-১২

0
2811

#পরাণ_প্রিয়া
#রাবেয়া_সুলতানা
#১২

সালমা বেগম শাশুড়ী এসেছেন দেখে তড়িঘড়ি করে নিজের রুম থেকে বেরিয়ে ড্রইংরুমে এসে সালাম করে পাশে বসলেন, কেমন আছেন মা?
-আমি মা খুব ভালা।কিন্তু তোমাগো কি অবস্থা?
-এইতো মা চলছে।শেফালী তোর ভাবীকে একটু ডেকে নিয়ে আয় তো।
-মা আপনি বসেন আমি শরবত বানিয়ে নিয়ে আসি।আপনি অনেক দূর থেকে এলেন।
-খাড়াও, খাড়াও, আমারে লইয়া ব্যস্ত হওনের কিচ্ছু নাই।তুমি মাত্র একখান কথা কইলা,ভাবী আইলো কোথায় থেইক্যা?

প্রিয়তা রুমে বসে পরিক্ষার খাতাগুলো দেখছে।এমন সময় শেফালী এসে দাঁড়াতেই,শেফালী আপা কিছু বলবে?

-হ আপা।গ্রাম থেইক্কা আপনার দাদী শ্বাশুড়ি আইছে।খালাম্মা আপনারে ডাকে।
প্রিয়তা অবাক হয়ে, দাদী শ্বাশুড়ি!কিন্তু মা যে বললো ওনার শ্বাশুড়ি অনেক আগেই মারা গেছে তাহলে ইনি আসলেন কোথায় থেকে?
শেফালী আপা তুমি যাও আমি এখুনি আসছি।

সালমা বেগম শাশুড়ীর কথা শুনে আমতা আমতা করে বললো, আসলে মা নিবিড়কে তো হঠাৎ করেই বিয়ে করিয়ে নিয়ে আসলাম।আমি বলেছি আপনাকে বলার জন্য কিন্তু আপনার ছেলে বললো আপনাকে নিয়ে এসে তারপর সরাসরি দেখাবেন।তাই আমি আর বলিনি।
-আচ্ছা আচ্ছা,মাইয়াডারে একটু ডাকো দেহি।আমার নিবিড়ের বউরে দেইখা পরানডা জুড়াই।

প্রিয়তা এসে সালাম করে দাঁড়াতেই মাশাল্লাহ মাইয়াডা তো ভারী মিষ্টি। ভালা থাইকো আমার নাতিডারে লইয়া।

প্রিয়তা মুচকি হেসে, মা আপনার বসুন আমি নাশতা নিয়ে আসছি।
-ঠিক আছে মা,তুই গিয়ে নাশতা রেডি কর।আমি মায়ের রুমে মাকে নিয়ে যাই।
আসুন মা আপনি আসুন।

অধরার রাত থেকেই জ্বর উঠেছে।কিন্তু সকালে রিসাদ অফিসে এতো তাড়াহুড়ো করে যাচ্ছিলো যার কারণে ডাক্তার দেখানোর কথা বলাও হয়নি।
ফোন হাতে নিয়ে,রিসাদকে ফোন দিতেই রিসাদ বললো,তুমি হসপিটালে নিয়ে আসো আমি এখুনি ওইখানেই যাচ্ছি।
নাদু শুনো শুনো,,
-কী হলো আবার?
নাদু আমি ভুলেই গিয়েছিলাম আজ আমার অফিসে নতুন এমডি আসবে।তুমি এককাজ করো আমার অফিসে চলে আসো এমডির সাথে দেখা করে পরে তোমাকে নিয়ে যাবো।
নাদিয়া অসহায় গলায় বললো,আচ্ছা ঠিক আছে আমি একটু পরেই আসছি।

সবাই নতুন এমডিকে শুভেচ্ছা জানোর জন্য দরজায় দাঁড়িয়ে আছে।
নাদিয়াও আসতেই রিসাদ নাদিয়াকে নিজের কেবিনটা দেখিয়ে দিয়ে, নাদু তুমি ওইখানে গিয়ে বসো, আমি এমডি স্যারের সাথে দেখা করেই চলে যাবো।
নাদিয়া রিসাদের কেবিনের সামনে যেতেই সাবার হৈচৈ বাড়ছে দেখে নাদিয়া পিছনে ফিরে তাকিয়ে বুজলো এমডি এসেছে।
নিবিড় গাড়ি থেকে নেমেই, সবার সাথে একে একে পরিচয় হতে থাকলো।নাদিয়া চেষ্টা করছে দেখার জন্য কিন্তু সবার ভিড়ের কারণে দেখতে পাচ্ছে না।

নিবিড় সবাইকে জোরালো গলায় বললো
-এটেনশন প্লিজ।
মূহুর্তেই মধ্যেই সব যেনো থমথমে হয়ে গেলো।
নিবিড় গম্ভীর গলায় বললো,আমার এইগুলো মোটেও প্রছন্দ নয়।আমার আগে কাজ তারপর সব।
কাজ ছাড়া আমার এইসব ফালতু কাজ একদম ভালো লাগে না।
নাদিয়া হাসফাস করছে, গলাটা কেমন যেনো চেনা চেনা।
নিবিড় আবার বললো,আপনারা নিশ্চয়ই সবাই আমাকে চিনে।তবুও বলছি, আমি ইশতিয়াক ইসলাম নিবিড়।
কথাটা বলতেই নাদিয়া অধরাকে তড়িঘড়ি করে কোলে নিয়ে,ভাই,,,,,ভাই এইখানে?
না না আমাকে দেখলে সমস্যা হতে পারে,কথাটা বলেই রিসাদের কেবিনে ঢুকে গেলো।
এখানের ম্যানেজার কে?
রিসাদ এগিয়ে গিয়ে,স্যার আমি।
-আগের ফাইল গুলো নিয়ে আমার কেবিনে আসুন।
মাহিদ চলো আমরা কেবিনে যাই।
নিবিড় নিজের কেবিনে গিয়ে, মাহিদ,এই রুমের আগের সব কিছু চেইঞ্জ করবে কাল থেকে।

রিসাদ নিজের কেবিনে গিয়ে,নাদু নতুন এমডি যা দেখাচ্ছে বুজা যাচ্ছে তোমার সাথে আমি যেতে পারবো না।
-রিসাদ তোমার যাওয়ার দরকার নেই।
-নাদু তোমার কী হয়েছে?
-কিছু না রিসাদ আমি আমার মেয়েকে নিজেই ডাক্তার দেখাতে পারবো।তুমি কাজে মন দাও।

নাদিয়া রিসাদকে আর কিছু না বলে কেবিন থেকে বেরিয়ে গেলো অধরাকে কোলে নিয়ে।

রিসাদ তড়িঘড়ি করে নিবিড়ের কেবিনে এসে, স্যার আসবো?
-আসুন।
মাহিদ ফাইলগুলো এখানে দেখার সময় নেই। এইগুলো নিয়ে নাও।আমি বাসায় গিয়ে দেখবো।আর মিস্টার রিসাদ অফিসটা আমি আমার মতো করে চাই। আশা করছি আপনি আমার পাশে থাকবেন।
-জ্বি স্যার।

প্রিয়তা কলিং বেলের শব্দ শুনে, রান্নাঘর থেকে গিয়ে দরজা খুলে দিয়ে দেখে নিবিড় গম্ভীর হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।প্রিয়তা ঢোক গিলে,আ,, আপনি?
নিবিড় নিশ্চুপ হয়ে প্রিয়তার চোখে মুখে ভয় দেখে পলকহীনভাবে তাকিয়ে আছে।
রাক্ষুসের মতো কেমন করে তাকিয়ে আছে।আমাকে কী খেয়ে ফেলবে নাকি?
প্রিয়তা ভয়ে ভয়ে, আপনি আমার দিকে এইভাবে তাকিয়ে আছেন কেনো?
নিবিড় কিছু না বলে,প্রিয়তাকে এড়িয়ে ড্রইংরুমে এসে বসে,শেফালী আপা,দুই কাপ কফি।মাহিদ বসো।
প্রিয়তা মনে মনে ভাবছে,জন্মের সময় মা মনে হয় মধু দিতে ভুলে গেছে তাই হাসি দিতেও ওনার কষ্ট হয়।আচ্ছা! এইটা আবার কথায় থেকে জুটালো?ওনার জানের জান তনু কোথায়?

-মা এইদিকে আসো।শেফালী আপা মাকে ডাকো তো।
মাহিদ ফাইলগুলো এখানে টেবিলে রেখে দাও।
-জ্বি স্যার।
সালমা বেগম এসে কিরে তুই ডাকছিস কেনো? তোর দাদী এসেছে তাই ওই রুমেই ছিলাম।
-দাদী! কখন এলো মা?
-তোর বাবা নিয়ে এসেছে।
সালমা বেগমের মাহিদের দিকে চোখ পড়তেই,ও কে তো চিনলাম না।
-তোমাকে এইজন্যই ডেকেছি।ও হচ্ছে আমার পার্সোনাল এসিস্ট্যান্ট মাহিদ।আজ থেকেই জয়েন করেছে।মাহিদ ইনি আমার মা।
মাহিদ সালাম দিয়ে নিবিড়ের দিকে তাকাতেই,
প্রিয়তা এদিকে আসো,মাহিদ ও হচ্ছে আমার স্ত্রী।
তোমাকে সবার সাথে আলাপ করিয়ে দিচ্ছি কারণ আমি মাঝে মাঝে দেশের বাহিরে চলে যাই।তখন তো তোমাকেই অনেক কিছু সামলাতে হবে।
প্রিয়তা মনে মনে ভাবছে, হঠাৎ তনুকে বাদ দিয়ে মাহিদ? নাকি ওইদিন আমি কথাটা বলার কারণে,,,,
কিন্তু ওনি তো কথা শুনার মানুষ নয়।

মোশারফ হোসেন বাহিরে থেকে এসে নিবিড় আর মাহিদকে দেখে, একটু থমকে দাঁড়িয়ে তোমার বিজনেস কেমন চলছে?
-জ্বি বাবা ভালো,বাবা ও হচ্ছে মাহিদ,আমার পার্সোনার এসিস্ট্যান্ট।
-যাক বাবা এতোদিন পর তাহলে তোমার মাথাটা ক্লিয়ার হলো।ওইসব আজেবাজে মেয়ে অফিসে রেখে কাজ করা যায়? ভদ্র মেয়ে হলে একটা কথা ছিলো।
-বাবা তনুসাও কিন্তু ভদ্র মেয়ে।আপনি ভুল বুজছেন।
-তোমার কাছ থেকে ঠিক ভুল শিখার মতো বয়স আমার নয়।হয়তো ভদ্র তোমার চোখে হতে পারে।আমি অন্তত ভদ্র বলবো না।আমার ঘরের লক্ষ্মীও চাকরি করে,তবে ওর মতো অভদ্রতা নিয়ে নয়।
নিবিড় মোশারফ হোসেনের কথাবার্তা অন্য দিকে গড়িয়ে যাচ্ছে দেখে,বাবা আমার একটা কথা ছিলো।আপনি যদি অনুমতি দেন তাহলে বলতে পারি।মাহিদকে আবার অফিসে যেতে হবে।
-হুম বলো।
-আমরা এইবাড়িতে আর থাকছি না।নতুন বাড়ি নিয়েছি সেখানেই পরশু দিন সবাই চলে যাবো।
– হঠাৎ?
-বাবা এই বাড়িটা অনেক পুরনো হয়ে গেছে।আপনি চিন্তা করবেন না ওই বাড়িটাও আপনার মত অনুযায়ী হয়েছে।

-কিন্তু প্রিয়তা আর জুহি কলেজে যাবে কী করে?
-বাবা গাড়ি তো আছেই।তাদের জন্য কোনো প্রবলেম হবে না।আর এইসব নিয়ে আপনাকে টেনশন করতে হবে না।

-ঠিক আছে তোমার যা ভালো মনে হয়।আমাদের এখন বয়স হয়েছে।তুমি ছাড়া আমাদের দেখার মতো তেমন কেউ নেইও।আর তোমার মতামত যা ভালো মনে হবে তাই করো।
কথাটা বলে মোশারফ হোসেন নিজের রুমে চলে গেলেন।
নিবিড়ের কথাটা মোশারফ হোসেনের ভালো না লাগলেও তিনি বাঁধা দেননি।তিনি ভালো করেই জানেন আজ না হয় কাল নিবিড় এমনিতেই এইবাড়িতে থাকবে না।বাড়িটা অনেক পুরোনো হয়ে গেছে।শহরের বড় বিজনেসম্যান তো এই বাড়িতে থাকা যায় না।
কথাটা ভেবে দীর্ঘশ্বাস ফেললেন মোশারফ হোসেন।

-মাহিদ তাহলে কাল ওই বাড়ির সব চ্যাক করে নিও।এখন তুমি আসতে পারো।

নিবিড় দাদীর সাথে দেখা করে রুমে এসে দেখে প্রিয়তা গম্ভীরমুখে বসে আছে।
আলমারি থেকে ড্রেস বের করে ফ্রেশ হয়ে এসে ল্যাপটপ নিয়ে ইজিচেয়ারে বসে কাজ করছে।

প্রিয়তা নিবিড়ের পাশে এসে বসে, দ্বিধা গলায় বললো, একটা কথা বলবো?
-বলেন?
-আমার মনে হয় বাবা আপনার কথায় কষ্ট পেয়েছে। ওনার নিজের হাতের গড়া এই বাড়িটা তাই হয়তো ওনার যাওয়ার ইচ্ছে নেই।
নিবিড় প্রিয়তার কথা শুনে গম্ভীর হয়ে ল্যাপটপের থেকে চোখ অন্য দিকে ফিরিয়ে কিছু যেনো ভাবছে।
-আপনি আমাকে ভুল বুজবেন না প্লিজ।এই বাড়িটাও কিন্তু খারাপ নয়।অন্তত বাবা যতদিন বেঁচে আছে আপনি এই বাড়িতেই থাকুন।পরে না হয় আপনার তনুসাকে নিয়ে ওই বাড়িতে সুখেস্বচ্ছন্দে থাকবেন।
-হাউ ডেয়ার ইউ?
-মানে?আমি খারাপ কী বললাম?
-এইখানে না থাকলে কী ইশাক সাহেবের সাথে কম কথা হবে?এখন আসছেন আমার বাবার নাম দিয়ে নিজের স্বার্থ সিদ্ধি করার জন্য।তাই না?

-ছিঃ আপনি এতো নিচ মন মানুষিকতা নিয়ে থাকেন কেনো?আর ইশাক সাহেবের ব্যাপারে না জেনে একটা কথাও বলবেন না।ওনি আমার বড় ভাইয়ের মতো।
-বাহ্ বেশ ভালো তো।এতো ভালোবাসা? ওনার ব্যাপারে কথা বলতেও আমার জানতে হবে?
আপনি নিবিড়ের ক্ষমতা সম্পর্কে জানেন না।তাই হয়তো এখনো এইখানে দাঁড়িয়ে কথা বলছেন।

-কী করবেন? মেরে ফেলবেন? ডিভোর্স দিবেন? এই বাড়ি থেকে বের করে দিবেন?মিস্টার নিবিড় আমি এইসবের কিচ্ছু ভয় পাই না।এইটা ঠিক আপনার কাছে আমি একটা দিক দিয়ে অনেক কৃতজ্ঞ, তাই বলে এই না আপনি আমার চরিত্র নিয়ে কথা বলবেন।ইশাক সাহেবের কথা না বললে হয় না আপনার?

-গেট আউট, আপনি এখুনি আমার সামনে থেকে চলে যান।
-যাচ্ছি, আপনার সামনে আসার আমারও কোনো ইচ্ছা নেই।আপনি এতোটাই অমানবিক যে নিজের বাবার মনটাও বুজতে চান না।
প্রিয়তা আস্তে করে বললো,রাক্ষস একটা।কথাটা বলেই রুম থেকে বেরিয়ে গেলো।

নিবিড় আবার চেয়ারে বসে, প্রিয়তা আপনি জানেন না আমি কেনো এইবাড়িটা ছেড়ে দিচ্ছি।যদি জানতেন তাহলে এইসব আমাকে শুনাতেন না।আমার বাবা মা তিলে তিলে কতটা কষ্ট পাচ্ছে আমি বুজি।আমি চাই শেষ জীবনে বাবা মা একটু শান্তিতে থাকুক ছেলে মেয়ে,নাতি নাতনি সবাইকে নিয়ে।

সালমা বেগম মোশারফ হোসেনকে চুপ থাকতে দেখে, তুমি ছেলেটাকে বলতেই পারতে যে নতুন বাড়িতে আমরা যাবো না।প্রিয়তা আর নিবিড় গিয়ে ওইখানে থাকুক।

-তোমরা কী করে ভাবলে তোমাদের মেয়েটা তোমাদের একা রেখে এইবাড়ি ছেড়ে তোমাদের ছেলের হাত ধরে চলে যাবে?
সালমা বেগম পিছনে ফিরে প্রিয়তাকে দেখে,সমস্যা কী তোরা মাঝে মাঝে এসে আমাদের কাছে কয়েকটা দিন থেকে যাবি।
প্রিয়তা সালমা বেগমকে এসে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে,কখনো না।গেলে সবাই একসাথে। আর না গেলে কেউই না।

মোশারফ হোসেন মুচকি হেসে, সালমা আমার ছেলে যখনি যে ডিসিশন নিয়েছে আমাদের ভালোর জন্যই নিয়েছে হয়তো আজও কোনো ভালোর জন্যই এই বাড়িটা ছেড়ে দিচ্ছে।

প্রিয়াতা মুচকি হেসে ভাবলো,বাবা ঠিকি বলছেন।যেই লোক বাবার এক কথায় আমাকে বিয়ে করতে পারে সেই কখনো বাবা মাকে কষ্ট দিতে পারেন না।হয়তো ওনি খুবি রাগি,কথা কম বলেন,হাসেন না,তাই বলে মন এতোটাও খারাপ নয়।
ওনি কী জানেন না ওনাকে হাসলে কতটা সুন্দর দেখায়? ওনার মুচকি হাসিটা কিন্তু অনেক সুন্দর। তবে ভালো করে হাসলে হয়তো আরও সুন্দর দেখায়।

সন্ধ্যা থেকে আকাশটা মেঘলা হয়ে আছে।হয়তো বৃষ্টি আসবে।প্রিয়তা মাগরিবের নামাজ আদায় করে সবার জন্য চা বানিয়ে শেফালীকে বললো নিয়ে যেতে।কিন্তু বাহিরে যেনো ঝড়ের মাত্রা আস্তে আস্তে বাড়তে লাগলো।কিন্তু ওনি তো বাহিরে আছেন।এই সময় ওনার অফিসে যাওয়ার তো কোনো কারণ নেই।তাহলে কী তনুসার কাছে?

প্রিয়তা চিন্তিত মুখে সালমা বেগমের কাছে গিয়ে,মা!
-কিরে কিছু বলবি?
-ওনি যাওয়ার সময় তোমাকে কিছু বলে গেছে?
-ওনিটা বার কে?
-ওহ্ মা,তোমার ছেলের কথা বলছি।
-তোকে বললাম না ওকে আপনি আপনি না করতে?
-আস্তে আস্তে বলবো তো।
-আস্তে আস্তে কবে?
-মা প্লিজ আগে বলো না।
-নারে আমাকে কিছু বলে যায়নি।তুই একটা ফোন দিয়ে দেখ। আমি মায়ের রুমে যাচ্ছি।
প্রিয়তা রুমে এসে চটপট করতে লাগলো।নিবিড়ের ফোন নাম্বার ফোনে নেই।হঠাৎ প্রিয়তার মনে পড়লো কার্ডেই তো নাম্বার আছে।
প্রিয়তা নাম্বারটা নিয়ে ফোন দিতে লাগলো।কিন্তু নিবিড় বার বার কেটে দিচ্ছে।
কলিং বেলের শব্দ শুনে, শেফালী গিয়ে দরজা খুলে দিলো।প্রিয়তা রুম থেকে বেরিয়ে নিবিড়কে আধ ভাজা দেখে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললো।নিবিড়কে কিছু না বলে রুমে এসে খাটের কিনারায় বসে আছে ফোনটা সামনে রেখে।
নিবিড় রুমে ঢুকে প্রিয়তাকে বসে থাকতে দেখে,ফোন দিচ্ছেন কেনো?
কথাটা শুনে প্রিয়তা অবাক হয়ে ভ্রু কুঁচকে, আপনি কী করে জানলেন আমি ফোন দিচ্ছি? আমার নাম্বার তো আপনার কাছে নেই।
নিবিড় প্রিয়তার কথা শুনে,আমতা আমতা করে,জেনেছি।নিবিড় জানে না এমন কিছুই নাই।
কথাটা বলে তড়িঘড়ি করে ওয়াসরুমে ঢুকতে ঢুকতে নিজের মনে মনে বলতে লাগলো, নিবিড়, মাঝে মাঝে কেনো যে এতো ভাগ বকিস? একটুর জন্যই তো ধরা পড়ে যাচ্ছিলি।
প্রিয়তা তো জানে না, নাম্বারটা আমি ওর ফোন থেকেই নিয়ে রেখেছি।ভাগ্যিস একটুর জন্য ধরা পড়ে যায়নি।

বাহিরের বৃষ্টির যেনো কমতে ইচ্ছে করছে না।প্রিয়তা জানালার পর্দা সরিয়ে দিয়ে দাঁড়িয়ে দেখছে।আকাশের মন আজ এতোটা খারাপ কেনো? ওর হয়তো আমার মতো অনেক কষ্ট লুকিয়ে আছে কাউকে বলতে পারছে না।তাই আজ অঝোর ধারায় কাঁদছে সে।নিবিড় ড্রইংরুম থেকে এসে লাইট বন্ধ দেখে লাইট অন করার জন্য এগিয়ে যেতে চোখ পড়লো জানালার কাছে। বাহিরের বিদ্যুৎ চমকাছে আর সেই আলোতে দেখা যাচ্ছে প্রিয়তা দাঁড়িয়ে আছে চিন্তা মগ্ন হয়ে।নিবিড় ধীরে ধীরে কাছে গিয়ে,ঘুমাবেন না?
প্রিয়তা অন্ধকারে আবছা আলোয় নিবিড়ের দিকে তাকালো।কিছুটা সময় চুপ থেকে বললো,জানেন মিস্টার নিবিড়? আকাশের আজ খুব মন খারাপ।কেনো খারাপ সেটা কাউকে মন খুলে বলতে পারছে না।ঠিক আমার মতো।আমার শ্বশুর আছে,মায়ের মতো শ্বাশুড়ি আছে,বোনের মতো একটা ননদ আছে,এই সবকিছুর মাঝে যেটা সবচেয়ে বেশি দরকার সেটাই নেই।এই যে আপনি,এতো দেশে, দেশের বাহিরে আপনার নাম এতো ছড়িয়ে আছে, আপনি সবকিছুই তো বুজেন তাই না?কিন্তু আপনার জীবনে সামান্য আমার মতো মানুষটাকে বুজতে পারেন না? আমি কী এতোটাই খারাপ মিস্টার নিবিড়? আমি কী এতোটাই অসুন্দর?
কথাটা শুনে নিবিড় করুণ চোখে তাকিয়ে আছে প্রিয়তার দিকে।কিছু না বলে চলে যাওয়ার জন্য পা বাড়াতেই, থামেন” কাঁদো কাঁদো গলায় বললো, আপনি কতটা দিন এইভাবে পালিয়ে বাঁচবেন? আপনি আমাকে সত্যি করে একটা কথা বলবেন? এই কয়েকটা দিনও কি আমার প্রতি আপনার কোনো মায়া জন্ম নেয়নি?এক বিন্দুও নয়?

নিবিড় প্রিয়তার সামনের এসে দাঁড়িয়ে, গম্ভীর গলায় বললো, একটুও না।আর কখনো জন্মাবেও না।আপনাকে আমি আমার বাড়িতে রক্ষিতা হিসাবেই থাকতে দিয়েছি শুধু মাত্র আমার বাবার কথায়।তা ছাড়া আর কিছুই না।অনেক রাত হয়েছে এইসব বোকা বোকা কথা না ভেবে ঘুমিয়ে পড়ুন।সকালে আমার অফিস আছে।এবং তনুর সাথেও দেখা করতে হবে।
নিবিড় একমুহূর্তের জন্যও দাঁড়ালো না।খাটের থেকে একটা বালিশ নিয়ে গেস্ট রুমে চলে গেলো।

প্রিয়তা সেখানেই দাঁড়িয়ে আছে নিস্তব্ধ স্থির হয়ে।
নিবিড় বালিশটা রেখে থমকে বসে মনে মনে ভাবছে, প্রিয়তা আপনি জানেন না,আপনাকে আমি আমার মনের কোন জায়গায় বসিয়েছি।এই রাতে আপনার সাথে থাকলে আমার শিওর ভুল কিছু হয়ে যাবে।আপনি জানেন বিদ্যুৎ চমকানোর আলোতে আপনাকে কতটা সুন্দর দেখাচ্ছিলো? আপনি যখন আপনার কথা বলা নিয়ে ব্যস্ত তখন আমি আপনাকে দেখা নিয়ে ব্যস্ত। আপনার চোখের দিকে তাকালে আমি কেমন যেনো হয়ে যাই বুজতেই পারি না।আমার অস্তিত্ব যেনো নিজের ভেতরেই থাকে না।আজ রাতে আমি আপনার কাছে থাকলে হয়তো নিজেকে কোনো ভাবেই কন্ট্রোল করতে পারবো না।আপনার মন্ত্রমুগ্ধের মায়ায় নিজেকে হারাতে একমুহূর্তেও দেরি হবে না আমার।

চলবে,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here