পরাণ প্রিয়া❤ পর্ব-১৫

0
2534

#পরাণ_প্রিয়া
#রাবেয়া_সুলতানা
#১৫

সালমা বেগম প্রিয়তার দিকে চোখ পড়তেই, আরে প্রিয়তা তোমার গালে কি হয়েছে?
প্রিয়তা ভাত মুখে পুরে চুপ করে আছে।নিবিড় প্রিয়তার দিকে আড় চোখে তাকিয়ে দেখছে।
প্রিয়তা কি সত্যিটা বলে দিবে সবাইকে? সেরেছে বাবা শুনলে তো এখন না জানি কি হয়।
মোশারফ হোসেন তাকিয়ে, সত্যিই তো কী হয়েছে মা?

প্রিয়তা শান্ত গলায় বললো, বাবা আসলে আমার এলার্জির প্রবলেম আছে।তাই হয়তো এমন হয়েছে।
প্রিয়তার কথা শুনে নিবিড় অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে।
-মেয়ের কথা শুনেছো? আমি যে তোকে এতোবার ডাকলাম তখন বললি না কেনো? নিবিড় এককাজ কর ডাক্তারকে ফোন দে।আর না হলে ওকে নিয়ে যা।

-আরে মা,তুমি এতো চিন্তা করো না।এইটা এমনিই ঠিক হয়ে যাবে।মাঝে মধ্যে হয় আবার ঠিক হয়ে যায়।

সালমা বেগম বিরক্তিকর গলায় বললো, তুই আমার কোনো কথাই শুনিশ না।তুই যেমন ইচ্ছা কর আমি বলার কে? নিজের মা হলে ঠিকি,,,,,
-মা প্লিজ তুমি অন্তত এইভাবে বলো না।আচ্ছা ঠিক আছে,আমার কাছে মেডিসিন আছে ওইগুলো খেয়ে নিবো।
মোশারফ এতোক্ষণ নিজের মনের সাথেই কথা বলে অনেক প্রশ্নের উত্তর খোঁজার চেষ্টা করছেন।তবুও নিবিড়ের দিকে তাকিয়ে,
নিবিড় তোর অফিসে যে রিসাদ নামের ছেলেটা ওকে চিনিস।
-বাবা আমরা এইসব নিয়ে পরে কথা বলবো।কথাটা বলে নিবিড় উঠে গিয়ে আবার পিছনে ফিরে প্রিয়তাকে একবার দেখে উপরে উঠে গেলো।

নিবিড় নিজের ইজিচেয়ারেই বসে কাজ করছে।প্রিয়তা এসে খাট থেকে বালিশ নিতেই,
কোথায় যাচ্ছেন?
-আমার জায়গায়।
-আজ থেকে খাটেই শুবেন।কোথাও যেতে হবে না।
-কোনো প্রয়োজন নেই জুতা মেরে গরু দান করার।আমার তো আবার চরিত্রের ঠিক নেই।
-শাটাপ, আপনাকে একটা কথা এতোবার বলতে হয় কেনো?আমি একটা জিনিস খেয়াল করলাম আপনাকে যে কাজ করতে বারন করা হয় আপনি সেই কাজটাই বেশি করে করে? প্রবলেম কী আপনার?
-আমার কোনো প্রবলেম নেই।
নিবিড় আবার ল্যাপটপে মন দিয়ে,তাহলে শুয়ে পড়ুন।
প্রিয়তা নিবিড়ের কথা না শুনেই বালিশ নিয়ে হেঁটে যেতেই,নিবিড় উঠে এসে সামনে দাঁড়িয়ে কিছুক্ষণ রাগী চোখে তাকিয়ে থেকে হাত ধরে টেনে খাটে নিয়ে বসিয়ে,হাউ ডেয়ার ইউ?
প্রিয়তা হাত ছাড়িয়ে, বললাম তো আমি এখানে ঘুমাবো না।আমি আজ জুহির সাথে ঘুমাবো।

নিবিড় মুখে আর কিছু না বলে প্রিয়তাকে জোর করে শুয়ে দিয়ে, আজ থেকে এইরুমে আমার সাথে একখাটেই ঘুমাবেন।যদি তা না হয় মাহিদকে এখুনি ফোন দিয়ে ইশাকের বাড়িতে দিয়ে আসবো।
কথাটা বলেই নিবিড় আবার চেয়ারে এসে বসেছে।

সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠে নিবিড় প্রিয়তাকে না দেখে কলেজে চলে গেছে ভেবেই, রুম থেকে বেরিয়ে, সিঁড়ি দিয়ে নামতেই দেখে প্রিয়তা কফি হাতে উঠে আসছে।
নিবিড় স্বস্থির নিঃশ্বাস ফেলে তাকিয়ে আছে।
প্রিয়তা নিবিড়কে দেখে,কি হলো আপনার ফ্রেশ না হয়ে বাহিরে? তোয়ালে রেখে আসলাম তো খাটের উপরে।
কথাগুলো বলতে বলতে প্রিয়তা উঠে এসে,চলুন।আপনার কফি নিয়ে এসেছি ঠান্ডা হয়ে যাবে।

নিবিড় কিছু বলছে না দেখে,কি ভেবেছেন আমি কলেজে?
নিবিড় চুপ করেই তাকিয়ে আছে।
-আমি যাইনি।আপনি যখন বলেছেন তখন যাবো না।দেড় বছর তো আপনার কথামতোই তো চলতে হবে তাই না? দেড় বছর পর যা হবার হবে।অবশ্য প্রিয়তার কপালে কখনো সুখ লিখা ছিলো না।আর হয়তো নেইও।
কথাটা বলে প্রিয়তা রুমে গিয়ে কফি রেখে,একটা কথা বলবো?
নিবিড় গম্ভীর গলায় বললো, হোয়াট?
আপনি কথা এতো কম বলেন কীভাবে? ছোটো বেলা থেকেই কি এইরকম নাকি,,,, আচ্ছা আপনি হাসেন না কেনো? নাকি, দাঁত ব্রাশ করেন না বলেই হাসেন না?
আরেকটা কথা, আপনার কাজে ফাঁকি দিতে ইচ্ছে করে না? জানেন আমি খুব অলস একটুতেই হাঁপিয়ে উঠি।তবে আগে ছিলো না।আপনার বাড়িতে আসার পর থেকেই এমন হয়ছে।
প্রিয়তার এমন বোকা বোকা কথায় নিবিড় মনে মনে হাসলেও প্রিয়তার হাত ধরে টেনে নিজের কাছে এনে,রাগন্বিত চোখে তাকিয়ে আছে।
প্রিয়তা ভয়ে ভয়ে নিবিড়ের চোখের দিকে তাকিয়ে, করুন স্বরে বললো, আমি কি ভুল বলে ফেললাম? কথাটা বলেই প্রিয়তা চোখ বন্ধ করে আছে, নিবিড় সেদিকে তাকিয়ে, আমার ব্যাপার আপনার এতো কিউরিওসিটি কেনো?

প্রিয়তা কথাটা শুনে তাকিয়ে, আপনি সত্যিই আজব।কখন কি করেন আমি মোটেও বুজতে পারি না।
প্রিয়তা দরজার দিকে তাকিয়ে, মা আপনি?
কথাটা বলতেই নিবিড় প্রিয়তাকে তড়িঘড়ি করে ছেড়ে দিয়ে পিছনে ফিরে দেখে কেউ নেই।

প্রিয়তাকে ছেড়ে দিতেই দরজার সামনে দাঁড়িয়ে অট্র হাসি দিয়ে,কেমন দিলাম? এইবার গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নিচে আসুন।আপনার অফিসের লেট হয়ে যাচ্ছে।প্রিয়তা কথাটা বলেই চলে গেলো।
আর নিবিড় মুচকি হেসে মাথা চুলকাতে চুলকাতে,আমি চাই সারাজীবন এই হাসিটাই আপনার মুখে লেগে থাকুক।আপনার এই ছোটো ছোটো দুষ্টামিগুলোতেই নিবিড় মুগ্ধ।আপনার মায়াবী হাসিতেই নিবিড় নিজেকে আস্তে আস্তে তলিয়ে নিচ্ছে আপনি কি টের পাচ্ছেন? নিবিড় কখনো কারো হাসির প্রেমে পড়েনি।এবং কি তনুসারও না।

নিবিড় অফিসে আসিতেই রিসাদ নিবিড়ের কেবিনে ঢুকে, স্যার আমার কিছু কথা ছিলো।

নিবিড় রিসাদকে কিছু না বলে,মাহিদ,ওনার বেতনটা বাড়িয়ে দিও এই মাস থেকে।
-ইয়েস স্যার।
-স্যার আমি বেতনের কথা বলতে আসিনি।
-তো? আমার তো জানা মতে আপনার এইমুহূর্তে আমার সাথে কোন জরুরী কথা নেই।
-স্যার আমি চাকরিটা আর করতে পারছি না।
-মিস্টার রিসাদ আপনি বললেই তো আর হলো না।আমাকেও তো ভাবতে হবে।আপনি বললেন চাকরিতে জয়েন করলেন আবার আপনার মন চাইলো ছেড়ে চলে গেলেন আপনার কী মনে হয় এইটা সেইরকম কোনো কোম্পানি?
-স্যার কি করতে হবে আমাকে বলুন।তবুও আমি চাকরিটা করতে পারবো না।

নিবিড় কিছু না বলে মাহিদকে চোখ দিয়ে ইশারা করলো।
মাহিদ একটা ফাইল বের করে,এই নিন রিসাদ সাহেব এইটা দেখুন।

রিসাদ ফাইলটা হাতে নিয়ে তড়িঘড়ি করে ভ্রু কুঁচকে অবাক চোখে তাকিয়ে পড়ছে।যত পড়ছে চোখ মুখে যেনো বিস্ময়কর ছড়িয়ে পড়ছে।
নিবিড় গম্ভীর গলায় বললো, মিস্টার রিসাদ ভালো করে মনোযোগ দিয়ে পড়ুন।তবে হ্যাঁ আপনার আর কোনো উপায় নেই।পেপারের শর্ত অনুযায়ী আপনি ছয় মাস কোথাও যেতে পারবেন না।আমি বসতে বললে বসবেন দাঁড়াতে বললে দাঁড়াবেন।

-স্যার আপনি কিন্তু এইটা আমার সাথে চিটিং করছেন।
কিন্তু আমার সাইন পেপারে আসলো কোথায় থেকে?

-মিস্টার রিসাদ এইজন্যই তো আমি বস্ আপনি কর্মচারী।
নিবিড় আর কিছু না বলে চট করে দাঁড়িয়ে, মাহিদ আমাদের মিটিং কয়টায়?

-স্যার ১২.০০ টায়।
– ওকে,রিসাদ আপনি এইটা নিয়ে যান।কারণ অর্জিনাল কপি আমার কাছে আছে।আরেকটা কথা পেপারগুলো বাড়িতে নিয়ে ভালো করে আপনার স্ত্রী সহ পড়বেন।কয়েকদিন পর আমার স্ত্রীর জন্মদিন আশা করছি আপনার স্ত্রী সহ আমার বাড়িতে আপনাকে দেখতে পাবো।আপনি এইবার আপনার স্ত্রীকে কিভাবে নিয়ে আসবেন সেটা আপনার ব্যাপার।
চলো মাহিদ মিটিং এর দেরি হয়ে যাচ্ছে।

রিসাদ তাকিয়ে আছে নিবিড়ের চলে যাওয়ার দিকে।নিবিড় এইভাবে তাকে বিপদে ফেলবে রিসাদ বুজতেই পারেনি।স্যার বিয়ে করেছেন? এইটা তো জানতাম না।
নাদুকে কি বলবো? কী করে নিবো আমি ওই বাড়িতে?
রিসাদের চোখ দুটা ভারী হয়ে আসছে।

নিবিড় মিটিং শেষ করে বাড়ি ফিরে দেখে জুহি আর প্রিয়তা মিলে দাদীর সাথে বসে গল্প করছে।কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে পাশ কেটে উপরে উঠে যেতেই প্রিয়তার নজর পড়তেই ,আরে আপনি এলেন আমাকে বলবেন না।কথাটা বলেই প্রিয়তা উঠে নিবিড়ের পাশে গিয়ে দাঁড়ালো।
আপনি খেয়ে এসেছেন,নাকি খাবার দিবো?
-আমি খেয়ে এসেছি।
নিবিড় আর কিছু বললো না।নিবিড়ের পিছন পিছন প্রিয়তা উপরে এসে,আচ্ছা আপনি কথা বলেন না আমি মানলাম কিন্তু আপনি রাগ করে আছেন কেনো?
নিবিড় এসেই চেয়ারে বসে পড়ছে।
দেখুন কাল আপনি যা দেখেছেন,,,
-প্লিজ বকবক না করে এখান থেকে যান।কীভাবে পারেন এতো বকবক করতে? আপনার মুখ ব্যাথা করে না?
-ওমা,,মুখ ব্যাথা করবে কেনো? আপনি জানেন কথা বলা স্বাস্থ্যের জন্য কতটা ভালো?কাকে কী বলছি! এইট পাশ করা লোকে জানবে ডাক্তারী।কথাটা বলেই প্রিয়তা মিটমিট করে হাসছে আর ভাবছে মিস্টার নিবিড় আপনাকে যদি আমি বকবক না করিয়েছি আমার নামও প্রিয়তা নয়।

নিবিড় কথাটা শুনে গালে হাত দিয়ে তাকিয়ে, এখানে বসেন।
-আপনার পাশে?আপনি তো চেয়ারে বসেছেন তাহলে আমি কোথায় বসবো? এককাজ করি আপনার কোলে বসি।
-হোয়াট?
-কি হোয়াট হোয়াট করছেন? ঠিকি তো বললাম।
-খাটে বসুন, আমার কোলে নয়।
-আগে বলবেন তো।প্রিয়তা নিবিড়ের পাশে খাটের কিনারায় বসে,হু বলুন?
-কাল আমি যে প্র,,,,,
নিবিড়কে বলতে না দিয়ে প্রিয়তাই বললো,আমি জানি আপনি ইশাকের কথা বলবেন।কিন্তু বিশ্বাস করুন ইশাকের সাথে আমার কিচ্ছু নেই।
-এখানে ইশাকের কথা কোথায় থেকে আসছে?
-তার মানে তনুসা।তাই তো? আমিও চাই আপনি ওকে নিয়ে ভালো থাকুন।
প্রিয়তা কথাটা বলতেই নিবিড় জেদ করে উঠে দাঁড়িয়ে, আপনি কখনো শুধরাবেন না।
নিজেকে কী মনে করেন? না দিচ্ছেন আমাকে কোনো কথা বলতে না বলছেন নিজে ঠিক করে কিছু।কথাটা বলেই নিবিড় বাহিরে চলে গেলো।

প্রিয়তা কিছু বলতে গিয়েও চুপ করে বসে আছে।

কেটে গেলো আরও কয়েকটা দিন।প্রিয়তার জন্মদিন আজ।কলেজের চাকরিটা নিবিড়ের কথায় ছেড়ে দিয়েছে সে।শুধু শুধু সংসারে অশান্তি ডেকে কী লাভ?
সকালে ঘুম থেকে উঠে নিবিড়কে না দেখতে পেয়ে একটু অবাক হলো।
উনি তো এতো সকাল ঘুম থেকে উঠে না।ওয়াশরুমে গেলো?
প্রিয়তা উঠে গিয়ে দেখে সেখানেও নেই।নিজে ফ্রেশ হয়ে নিচে গিয়ে, মা তুমি রান্নাঘরে কী করছো বলো তো?
-কিচ্ছু না,সামান্য একটু পায়েশ বানাচ্ছি।
– কেনো মা হটাৎ পায়েশ?
-নিবিড় খেতে চাইলো তাই।কিন্তু মা ওনি তো পায়েশ খান না।
-জানি না।আজ সকালে উঠেই শেফালীকে বললো পায়েশ বানাতে।তাই আমি নিজেই করে ফেললাম।
-মা ওনি কোথায় গেছেন?
-জানি না, গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে গেলো।
নিবিড়ের দাদী নিজের রুম থেকে আসতে আসতে বললো,কি হইলো,বউ শ্বাশুড়ি মিল্লা কি শুরু করছো?
-কিছু না দাদী,আপনি কি খাবেন বলেন।
-এহন কিছু খামু না।মোশারফ আহক তারপর। তয়ে নিবিড় কোথায় পিয়ু?
-দাদী ওনি নাকি বাহিরে গেছেন।তবে আমি শিওর জানি না।

প্রিয়তা কথাটা শেষ করে রান্নাঘর থেকে নাশতা নিয়ে এসে, দাদী বাবা এসেছে আপনি আসুন। আমি জুহিকে ডেকে নিয়ে আসছি।

প্রিয়তা এগিয়ে এসে দেখে সদর দরজায় তাঁর মা দাঁড়িয়ে আছে। পিছনে এসে রিয়াও দাঁড়ালো।
প্রিয়তা কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে,মা”
মোশারফ হোসেন সহ সবাই পিছনে ফিরে অবাক হয়ে তাকিয়েই আছেন।নুর জাহান বেগম আস্তে আস্তে প্রিয়তার কাছে এগিয়ে এসে,হাত দুটো বাড়িয়ে দিল।
প্রিয়তা মোশারফ হোসেনের দিকে কান্নাজড়িত চোখে তাকাতেই তিনি চোখ বন্ধ করে হ্যাঁ বুজালেন।
প্রিয়তা দেরি না করেই মায়ে বুকে ঝাপিয়ে পড়ে কাঁদতে লাগলো।
নুর জাহান বেগম মেয়ের মাথা মুছতে মুছতে,কাঁদছিস কেনো? তুই অনেক কষ্ট করেছিস তাই আল্লাহ তোকে এতো ভালো একটা স্বামী দিয়েছে।তোর কষ্ট বুজার মতো।
কথাটা শুনে প্রিয়তা মাথা উঠিয়ে , কি বলছো মা? তুমি ওনার দেখা পেলে কী করে?

নুর জাহান বেগম কিছু বলার আগেই নিবিড় এসে, বাবা আমায় আপনি ক্ষমা করবেন।আসলে আমি চাইনি প্রিয়তা আজকের দিনটা অন্তত মন খারাপ করে থাকুক।

মোশারফ হোসেন কিছু না বললেও সালমা বেগম বললেন, আজকে কী নিবিড়?
-মা, আজ প্রিয়তার জন্মদিন।
সবার সাথে সাথে প্রিয়তাও অবাক হয়ে নিবিড়ের দিকে তাকিয়ে, আমার নিজেরই মনে নেই। আর আপনি,,,
-তেমন কিছু না।এইটা তোমার প্রাপ্য। আর আমি তোমার স্বামী এইটা আমি মনে রাখবো না তো কে রাখবে বলো?
প্রিয়তা কিছু বললো না।চুপ করে নিচের দিকে তাকিয়ে আজও অভিনয় করছেন মিস্টার নিবিড়। তবে অভিনয়ের মাঝে সারপ্রাইজটা আমার খুব খুব ভালো লেগেছে।
নিবিড় আর কিছু বললো না।উপরে উঠে চলে যেতেই মোশারফ হোসেন বললেন,ভালো হয়েছে আপনারা এসেছেন।কয়েকদিন থেকে আমিও ভাবছি আপনাদের খবর দিয়ে নিয়ে আসবো।প্রিয়তার খারাপ লাগা আমাদেরও খারাপ লাগে।হয়তো আমাদের বুজতে দিতে চায় না।কিন্তু বাবা মায়ের চোখ তো আর ফাঁকি দেওয়া যায় না।

সালমা বেগম এগিয়ে এসে,আসেন আপা আপনারা বসুন।আজকের আনন্দের দিনে সবাই এক সাথে হয়েছে।আসলে আমার ছেলেটাই এমন সবার মনের কথা আগে থেকেই বুজে ফেলে।
প্রিয়তা নিজের রুমে গিয়ে দেখে নিবিড় অফিসের একটা ফাইল হাতে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখছে।
প্রিয়তা কোনো কথা না বলে কাঁদো কাঁদো হয়ে নিবিড়কে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে লাগলো।প্রিয়তা এই প্রথম নিবিড়ের এতোটা কাছে এসেছে।নিবিড় কিছুক্ষণ হতভম্ব হয়ে থাকলেও পরে ফাইলটা খাটের উপর ফেলে দিয়ে নিজেও ধীরে ধীরে প্রিয়তাকে জড়িয়ে ধরলো।
প্রিয়তার সাথে সাথে যেনো নিবিড়েরও চোখ দুটো টলমল করছে।নিবিড় কী বলবে বুজতে পারছে না।গলাটা ধরে আছে।
প্রিয়তা নিজেই উঠে দাঁড়িয়ে, জানেন কেউ আমাকে কখনো আমার জন্মদিনে সারপ্রাইজ তো দূরের কথা উইশও করেনি।বিশ্বাস করুন হয়তো আপনার সব অভিনয় ছিলো বাবা মায়ের সামনে কিন্তু আমার খুব খুব ভালো লেগেছে।এতোটা ভালো আমার শেষ কবে লেগেছে আমি নিজেও জানি না।

নিবিড় অবাক হয়ে,হোয়াট?আমি অভিনয় করলাম এইসব?
প্রিয়তা চোখ মুছতে মুছতে, তা নাতো কী।আপনিই তো বললেন সবার সামনে যেনো আমরা অভিনয় করি।তাই তো আপনি অভিনয় করলেন।

নিবিড় রাগ করে,আসলে আপনার সাথে কথা বলাটা আমার অন্যায়। সামনে থেকে সরুন আমি অফিসে যাবো।
-নাশতা না খেয়ে?
নিবিড় প্রিয়তাকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে, বাহিরে গিয়ে গাড়িতে বসতে বসতে, কতো বড় সাহস আমাকে বলে আমি অভিনয় করছি।এতো বড় একটা সারপ্রাইজ দিলাম আর ওনার কাছে নাকি সব অভিনয়। বেঈমানের মতো কথাবার্তা।

নিবিড় অফিসে এসে দেখে রিসাদ অফিসে নেই।মাহিদ এসে সামনে দাঁড়াতেই রিসাদ সাহেব আসেনি?
-জ্বি না স্যার।
নিবিড় কথাটা শুনে একটুও অবাক হলো না।মনে মনে ভাবলো, মা,বাবা আজ তোমাদের অপেক্ষার অবসান হয়তো ঘটতে পারে।এতোটা বছর তোমরা অনেক কষ্ট পেয়েছো, প্রিয়তা সেদিন আমায় ঠিকি বলেছিলো তোমরা বোনের জন্য এতোটা কষ্ট পাচ্ছো কিন্তু প্রকাশ করছো না।
ভাবনার জগত থেকে ফিরে এসে,মাহিদ কাল তোমায় ফোন দিয়ে যা বলেছিলাম মনে আছে?
-জ্বি স্যার।সন্ধ্যার আগেই সব রেডি হয়ে যাবে।
– ওকে।

নিবিড় অফিস থেকে ফেরার সময় অনেক গুলো রজনীগন্ধা আর গোলাপ নিলো।বাড়ি এসে কাউকেই দেখতে না পেয়ে ছাদে গিয়ে কিছুক্ষণ বসেথেকে প্রিয়তাকে এসএমএস করলো, একটু ছাদে আসুন।

নিবিড় অপেক্ষার প্রহর গুনছে কখন আসবে প্রিয়তা।
ছাদে পায়চারী করতে করতে একটা সময় দেখে প্রিয়তা ছাদের দরজায় দাঁড়িয়ে আছে।
প্রিয়তা পুরো ছাদটাকে ভালো করে দেখে অবাক হয়ে, এইসব কার জন্য?
নিবিড় এগিয়ে গিয়ে প্রিয়তাকে বাহুডোরে জড়িয়ে একটা ছোটো টেবিলের সামনে এনে দাঁড় করালো।
প্রিয়তার সবকিছু দেখে বিস্ময় যেনো আরও বেড়ে গেলো।

নিবিড় ফুলগুলো হাতে নিয়ে হাঁটু গেড়ে বসে প্রিয়তার দিকে ফুল গুলো এগিয়ে দিয়ে,

#আপনি আমার তুমি হবেন?
যেই তুমিকে লক্ষ্মী, সোনা, ময়না, টিয়ে ডাকা যায়!
আদর করা যায়, শাসন করা যায়।
আবার বালিশ দিয়ে পেটানোও যায় !

আপনি আমার তুমি হবেন?
যেই তুমিটার সাথে মতের অমিল হলেই ঝগড়া করা যায়।

আপনি আমার তুমি হবেন?
যেই তুমিটার চুলগুলো এলোমেলো করে দেয়া যায়,
হাতে চুড়ি পড়িয়ে দেয়া যায়,
খোঁপায় গোলাপ গাঁথা যায়,
শাড়ির কুচিগুলো ভাঁজ করে দেয়া যায়,
পায়ের উপর পা তুলে পা-য়ে পায়েল পড়িয়ে দেয়া যায়।

আপনি আমার তুমি হবেন?
যেই তুমিটা খাবারে ‘বিষ’ আছে জেনেও
স্বাভাবিক ভঙ্গিমায় খাবারটা খেয়ে নিবে,
আমি মুখে তুলে দিয়েছি তাই।

আপনি আমার তুমি হবেন?
যেই তুমিটা এ্যাকসিডেন্ট হবে না জেনেও
শক্ত করে আমার হাত ধরে পথ হাঁটবে…
হাঁটতে হাঁটতে ক্লান্ত হয়ে কোলে বা কাঁধে উঠতে চাইবে।

আপনি আমার তুমি হবেন?
যেই তুমিটা আমায় বাউল বিচ্ছেদ গান গাইতে বলবে,
তাল-লয়-সুর কিচ্ছু ঠিক নেই তবু থামাবে না!
শেষে অন্তত এতটুকু বলে উৎসাহিত করবে যে,
“গানের কথাগুলো সুন্দর” আমার ভালো লেগেছে।

আপনি আমার তুমি হবেন?
যেই তুমিটা নিন্দুকের কলঙ্ককে উপেক্ষা করে
সময় অসময় আমার কাছে ছুটে আসবে-
এই ভেবে যে, “আমার কেউ নেই, একমাত্র তুমি ছাড়া”।

আপনি আমার তুমি হবেন?
যেই তুমিটা আমার অপেক্ষায় না-খেয়ে থাকবে!
আমার দুঃখে দুঃখী হবে, সুখে সুখী হবে,
বুকে মাথা রেখে একটা জীবন কাটিয়ে দিবে।
আপনি আমার তুমি হবেন?

প্রিয়াতার চোখ থেকে অশ্রুগুলো টপটপ করে নিছে পড়ছে। ফুলগুলো হাতে নিয়ে, এইটা কী প্রপোজাল করছেন নাকি মারামারি কথা বলছেন।ঠিক আছে,ঠিক আছে আজ থেকে তুমি করেই ডাকবেন।
যাইহোক তবে আলিফ আহমেদের কবিতাটা দারুণ ছিলো।
-নিবিড় মুছকি হেসে উঠে দাঁড়িয়ে প্রিয়তাকে জড়িয়ে ধরে,আজ আমি পরিপূর্ণ তোমাকে পেয়ে। এই
নিবিড়কে একা রেখে যাবে না প্লিজ।
প্রিয়তা মুচকি হেসে,আমার থাকা না থাকা শুধু আপনার উপর নির্ভর করে। আমার উপরে নয়।
-হু,,
প্রিয়তাকে ছেড়ে দিয়ে,এইবার কেকটা কাটো।
প্রিয়তা গম্ভীর গলায় বললো, সবাইকে ছাড়া?
-হু,এইটা শুধু তোমার আর আমার একান্ত সময়।আর সবার সময়টা নিচে মাহিদ রেডি করছে।আর সেই সুযোগে তোমাকে একটু আমার করে পাওয়া।
প্রিয়তা মুচকি হেসে,আপনি শুধু আমায় দিয়েই যাচ্ছেন।আর আমি সব নিয়ে যাচ্ছি।
-এইসব নিয়ে আমরা পরে কথা বলবো আগে কেকটা কাটো।নিচে আবার সবাই অপেক্ষা করছে হয়তো।
প্রিয়তা নিবিড় এক সাথেই কেক কেটে, প্রিয়তা নিবিড়কে খাইয়ে দিয়ে, অনেক অনেক ধন্যবাদ।
নিবিড় প্রিয়তার মুখে আঙ্গুল দিয়ে চুপ করতে বলে,কেকটা খাইয়ে কোলে তুলে নিচে নিজের রুমে নামিয়ে নিয়ে এসে দাঁড় করিয়ে, আজ একবার বলবে?
প্রিয়তা লজ্জা লজ্জা ভাব নিয়ে, কী?
-ওইযে, হনুমান, রাক্ষস, বদরাগী।
প্রিয়তা মাথা উঠিয়ে, কিহ্?
-তুমি কি মনে করো আমি কিছু শুনি না? তুমি জানো তুমি এইসব বললে আমার তখন খুব হাসি পায়?
অনেক কষ্ট করে চাপিয়ে রাখি।
-আপনি এইসব শুনতেন?
-হু।
প্রিয়তা একগাল হাসি দিয়ে, আপনি সত্যিই একটা বদরাক্ষস বলেই নিবিড়ের বুকের সাথে মিশে গেলো।
জুহি পিছন থেকে নিবিড়ের কাধে হাত দিয়ে, রোমান্টিক সিন সেই সন্ধ্যা থেকে অনেক হয়েছে, এইবার নিচে চলুন,বাবা ডাকছে।
নিবিড় কথাটা শুনেই প্রিয়তাকে ছাড়িয়ে তুই এইখানে?

-হু,তোমাদের মাঝে ভিলেন হয়ে এন্ট্রি নিলাম।আমার সিনটা কেমন হলো বললে না তো?
-একদম বাজে।
প্রিয়তা নিবিড় আর জুহির ঝগড়া দেখে হেসেই যাচ্ছে।

-আচ্ছা ঠিক আছে আমি ভুল সময় এসেছি।এখন চলো বাবা ডাকছে।
নিবিড় আর প্রিয়তা নিচে আসতেই মোশারফ হোসেন
বললেন,নিবিড় তুমি বাসায় কখন এলে? মাহিদ বলাতে জানতে পারলাম তুমি বাসায়। এতো আয়োজন করেছো অথচ কাউকে কিছু বলো নি।যাইহোক এখন প্রিয়তাকে নিয়ে আসো কেকটা কাটো।

নিবিড় মাহিদের দিকে তাকাতেই, স্যার ওনারা এখুনি এসে পড়বেন।

মাহিদ কথাটা শেষ করতেই কলিং বেলের শব্দ শুনে শেফালী দরজা খুলে চিৎকারে শব্দ শুনে সবাই দৌঁড়ে গেলেও নিবিড় আর প্রিয়তা দাঁড়িয়ে আছে।
নাদিয়াও অবাক কম হয়নি সবাইকে দেখে।বার বার রিসাদের দিকে তাকাচ্ছে আর সামনে সবার দিকে।
সালমা বেগম দৌড়ে নাদিয়াকে জড়িয়ে, কাঁদতে লাগলো।মোশারফ হোসেন অসহায়ের মতো দাঁড়িয়ে আছে।
নাদিয়া আস্তে আস্তে নিজেকে স্বাভাবিক করে মোশারফ হোসেনকে সালাম করে, বাবা কেমন আছো?
মোশারফ হোসেন কান্নায় গলাটা ভারী হয়ে আসছে তাই কিছু বললো না।রিসাদ এসে সবাইকে সালাম করলো।অধরাকে জুহি আর সালমা বেগম কোলে নিয়ে আদর করছে।মোশারফ হোসেন নাদিয়াকে বাহুডোরে এগিয়ে নিবিড়ের সামনে দাঁড় করাতেই,
ভাই ” কেমন আছিস তুই?
নিবিড় গম্ভীর হয়ে টলমল চোখ দুটো নিয়ে অন্য দিকে ফিরে আছে। প্রিয়তা তখনও ঘোরের মধ্যে থেকে রিসাদের দিকে চোখ পড়তেই যেনো বড়সড় ধাক্কা খেলো।রিসাদও প্রিয়তাকে দেখে বিস্ময়কর চোখে তাকিয়ে আছে।
প্রিয়তা এক পা এক পা করে পিছাতে দেখে নিবিড় একহাত দিয়ে প্রিয়তাকে টেনে ধরে কোথায় যাচ্ছো? এখানে দাঁড়াও।
প্রিয়তার রিসাদকে দেখে দম বন্ধ হয়ে আসছে।তবুও নিবিড়ের কথায় নিজেকে সামলানোর চেষ্টা করছে।

নাদিয়া আবার করুন গলায় বললো, ভাই! তুই কথা বলবি না আমার সাথে?
নিবিড় তখনও চুপ করে অন্যদিকে ফিরে আছে।

চলবে,,,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here