পরাণ প্রিয়া❤ পর্ব-২২

0
2212

#পরাণ_প্রিয়া
#রাবেয়া_সুলতানা
#২২

ফজরের আজান কানে আসতেই প্রিয়তা চোখ খুলে দেখে নিবিড়ের বুকের সাথে মিশে আছে সে।
নিবিড়কে রেখে উঠে বসে রাতের কথা মনে পড়তেই নিবিড়ের দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে উঠে যেতেই নিবিড় আবার কাঁধ টেনে নিজের বুকে সাথে মিশিয়ে, ঘুম ঘুম চোখে,কোথায় যাচ্ছো তুমি?
-নামাজ পড়তে হবে।আপনি যাবেন না?
-একটু পরে যাও।
-না এখন। উঠেন তো!
– আর একটু ঘুমাই না?
-ঠিক আছে।আমি ফ্রেশ হয়ে এসে যেনো দেখি আপনি উঠেছেন।
প্রিয়তা গোসল করে নামাজ পড়ে, মুচকি হেসে নিবিড়ের মাথার পাশে বসলো।আপনি এখনো উঠবেন না?
নিবিড় উঠে বসে,ওকে আমি ফ্রেশ হয়ে নামাজ পড়ে নিচ্ছি।কথাটা শুনে প্রিয়তা মুচকি হাসলো।নিবিড় ফজরের নামাজ ঠিকঠাক আদায় করে না।আজ নিজেই বলছে শুনে প্রিয়তা খুশি হয়ে উঠে গিয়ে জায়নামাজ বিছিয়ে দিলো।
নিবিড় নামাজ শেষ করে,কোথায় যাচ্ছো?
-আপনি এইবার ঘুমান।আমার চা বানাতে হবে।বাবা এসে চা চাইবে।
-নিবিড় প্রিয়তাকে এক ঝাঁটকায় বুকের সাথে মিলিয়ে, আজ তোমার যেতে হবে না। একটু পর দেখবে চা তোমার ঘরেই আসবে।
-মানে? কে নিয়ে আসবে?
-শেফালী আপা।
-আপা তো আসেনি।
-আমাকে কাল ফোন করেছিলো, আজ ভোরে এসেই বাড়িতে পৌঁছে যাবে।
-ঠিক আছে এবার ছাড়ুন।প্রিয়তা নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে,ভেজা চুলগুলো ড্রেসিংটেবিলের সামনে খুলে হাতে চুড়িগুলো পরতে পরতেই আয়নায় খেয়াল করলো নিবিড় মুচকি হেসে আয়নায় তাকিয়ে আছে।
প্রিয়তা পিছনে ফিরে নিবিড়ের দিকে তাকিয়ে ভ্রু নাচিয়ে কী দেখছেন অমন করে?
-চাঁদের বুড়ীকে।
-নজর লাগবে।
-নাহ্ লাগবে না,,,কারণ এইটা শুধু নিবিড়ের,,,আরও কিছু বলতে বলতে নিবিড় এগিয়ে আসতেই প্রিয়তা পিছাতে লাগলো।
নিবিড় প্রিয়তাকে দেওয়ালের সাথে লাগিয়ে,তুমি পিছিয়ে যাও কেনো? এখন তো তোমার পিছানোর সময় নয়।আমি যদি এক পা সামনে আসি তুমিও এক পা সামনে বাড়াবে।যদি তুমি পিছনে দাও মনে করবে আমাদের সম্পর্কটাও পিছাতে থাকবে।আমি চাই না প্রিয়তা তোমাকে কেউ কষ্ট দিক।তোমাকে যে ছোঁয়ার চেষ্টা করবে সে আগে নিবিড়কে টপকাতে হবে।আর নিবিড়কে টপকিয়ে তোমাকে ছোঁয়ার সাহস কারো নেই।
নিবিড়ের কথাগুলো প্রিয়তা মুগ্ধতার চোখে তাকিয়ে শুনছে।
প্রিয়তা আমি সব জানি।
প্রিয়তা কথাটা শুনেই উৎকন্ঠে বললো,সত্যি আপনি জানেন?
– হুম জানি।
-সব জেনে আপনি আমায় ভুল বুজেছেন?বিশ্বাস করুন এতে আমার কোনো হাত ছিলো না।আমি শুধু ওকে বুজাতে ছেয়েছি,,,
-আমি জানি বুড়ী, তুমি ওকে মন থেকে কথাটা বলোনি।আসলে ও তোমার বোন হতে পারে তবে মানুষ নয়।
কথাটা শুনে প্রিয়তা অবাক হয়ে মনে মনে, বোন? কিন্তু আমি তো ওনাকে রিসাদের কথা বলতে চেয়েছিলাম।তারমানে উনি ইভার কথাই বলতে চাইছে।
-কি হলো কি ভাবছো?
-আসলে আপনাকে আমার কিছু বলার আছে।
যা বলার পরে শুনা যাবে,এখন বাজে কথার সময় নয়।
-কিন্তু আমার যে বলাটা জরুরী!
-বললাম তো পরে শুনবো।তোমাকে যে একটা ডায়মন্ড সেট পাঠালাম ওইটা তো তোমাকে পরতে দেখেনি।
-ওইটা মায়ের কাছে আছে।
-মায়ের কাছে কেনো,তোমার পছন্দ হয়নি?
-হয়েছে তো।
-তাহলে।
-আসলে আমি এসবে অভস্ত্য নয়।ছোটো বেলা থেকে যে ভাবে বড় হয়েছি হঠাৎ এগুলোর মাঝে নিজেকে বেমানান লাগে।
-শেটাপ। মায়ের থেকে ওইটা নিয়ে এসে যেনো আমি তোমায় পরতে দেখি।
প্রিয়তা কথাটা শুনে নিচের দিকে তাকিয়ে আছে,
-রাগ করেছো?
কথাটা শুনে প্রিয়তা ছলছল চোখে তাকাতেই নিবিড় প্রিয়তাকে পিছন থেকে জড়িয়ে নিয়ে,তোমার মন খারাপ আমার ভালো লাগে না।মা চলে যাওয়ার পর থেকেই বোন আমার সব ছিলো।বোন বয়সে আমার বড় হওয়ার পরেও কিন্তু আমি ওকে বড় ভাইয়ের মতো প্রটেক্ট করেছি।কখনো বুজতেই দিইনি,আমাদের মাথার উপর আসল ছাদটাই নেই। বোন সব জেনেও একটা ভুল কাজ করে ফেললো।অবশ্য এখন তো সব ঠিক হয়ে গেছে।রিসাদ ছেলেটাও ভালো। বাবা মায়েরও মন জয় করেছে।
ভাবছি রিসাদকে আগের অফিসের এমডি বানিয়ে দিবো।
প্রিয়তা সব শুনে ভেছিলাম আপনাকে আমি সব বলে দিবো।কিন্তু এরপর আমার আর কিছু বলার রইলো না।কারণ আমি জানি আপনি এখন আমায় ভুল বুজবেন,হয়তো বলবেন আমি আপনার বোনকে সহ্য করতে পারি না বলেই এইসব বানিয়ে বানিয়ে বলছি।
কথাটা ভাবতে ভাবতে নিবিড়ের বুকেই নিজের চোখের পানিগুলো লুকিয়ে নিজেকে ছাড়িয়ে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো।

নিচে নেমে শেফালী সবাইকে চা দিচ্ছে দেখে, শেফালী আপা, তোমার মেয়ের বিয়েতে সব ঠিকঠাক হয়েছিলো তো?
-হ ভাবী,ছোটো ভাইজান থাকতে অসুবিধা হইবার পারে?
সব আল্লাহ দয়ায় ঠিক হইছে। এই লন ভাবী আপনার চা।আমি ভাইজানরে কফিটা দিয়ে আসি।

রিসাদ বসে বসে প্রিয়তার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে গম্ভীর হয়ে নিচের দিকে তাকিয়ে চা খেয়েই যাচ্ছে।প্রিয়তা রান্না ঘরে সবার নাশতা টেবিলে দেওয়ার জন্য গেলো। রিসাদও উঠে প্রিয়তার পিছনে দাঁড়িয়ে, কাল নিবিড় সাহেব বুজি খুব আদর করেছে? যার প্রমাণ এখনো রয়ে গেছে।
কথাটা বলতেই প্রিয়তা চমকে উঠে রিসাদের দিকে তাকিয়ে, কি বলতে চাইছো তুমি?
-হু,আমি ঠিক বলছি।শালা দেখছি বউকে কাছে পেলে মাথা ঠিক থাকে না।আরে ভাই আদর করবি ভালো কথা তাই বলে,,,,,
-প্রিয়তা বিরক্তিকর নিশ্বাস ফেলে, দেখো রিসাদ, আমার তোমার এসব নোংরা মানসিকতার কথা শুনতে একদম ভালো লাগছে না।আমার স্বামী, আমাকে আদর করুক, মারুক তাতে তোমার কী?
-আমারই তো যায় আসে। আমার কলিজায় লাগে যখন নিবিড় তুমি রুমে গেলেই দরজাটা আটকিয়ে দেয়।তখন আমার বুকের এইখানটায় লাগে।তবে এই ভালোবাসা টাসা বেশিদিন টিকবে না।কারণ তুমি আমার কাছেই চলে আসবে।

প্রিয়তা কিছু বলার আগেই, নাদিয়া এসে,কি ব্যাপার রিসাদ তুমি এইখানে কী করছো?
রিসাদ হাসি ফুটিয়ে ,নাদু পানি খেতে আসলাম।আর ভাবলাম নাশতাটা করেনি তাড়াতাড়ি তো অফিসে যেতে হবে।
সবাই এসে বসেছে নাশতা করার জন্য।নিবিড়ও একেবারে রেডি হয়ে নিচে এসে চেয়ার টেনে বসতেই প্রিয়তার দিকে নজর পড়লো।গম্ভীরমুখে সবাইকে খাবার নিয়ে দিচ্ছে।
সবাই নিচের দিকে তাকিয়ে নাশতা খাচ্ছে,মোশারফ হোসেন নিচের দিকে তাকিয়ে,তনুসা মেয়েটা দেখি এখনো এলো না? কাল বাহিরে গেছে শুনলাম আর আজও এলো না।নিবিড় এই বাড়ির একটা নিয়ম নীতি আছে। কিন্তু মেয়েটা কোনো কিছুরই তোয়াক্কা করছে না।
নিবিড়ের কোনো সাড়া না পেয়ে মাথা তুলে তাকাতেই দেখে,নিবিড় প্রিয়তাকে চোখ দিয়ে ইশারায় কিছু বুজিয়ে দিচ্ছে।কিন্তু প্রিয়তা না বুজার কারণে বার বার মাথা নাড়াচ্ছে।
নাদিয়া মিটমিট করে হেসে,ভাই তুই বসে খেয়ে নে।প্রিয়তা তুমিও বসে খেয়ে নাও।
-ভাইয়া তোমার অফিসে যাওয়ার সময় আমাকে কলেজে নামিয়ে দিতে পারবা?
-ওকে।
নিবিড় অল্পকিছু খেয়ে,প্রিয়তার পায়ের উপর পা রেখে চাপ দিয়ে, প্রিয়তা আমার রুম থেকে ফাইলটা নিয়ে আসো।
জুহি উঠে যাওয়ার সময় নিবিড়ের পাশে এসে দাঁড়িয়ে, ভাইয়া, ভাবীকে কিন্তু আজ দারুণ লাগছে।
নিবিড় কিছু না বলে প্রিয়তা যাওয়ার পরেই নিজে রুমে গিয়ে,প্রিয়তা ফাইল খুঁজছে দেখে,তুমি যেটা খুঁজে যাচ্ছো ওইটা পাবে না,ফাইলটা আমি যাওয়ার সময় নিচে নিয়ে গেছি।
-তাহলে আপনি আমাকে আনতে পাঠালেন কেনো?
-শেটাপ।তোমার মাথায় কি বুদ্ধিসুদ্ধি কিচ্ছু নেই?
-আপনি আমাকে বকছেন কেনো? আমি কী করেছি? সত্যি আমি আপনাকে বুজতেই পারি না।সকালেও তো আমার সাথে কতো সুন্দর করে কথা বলছিলেন এখন আবার আগের মতো করছেন।
কথা বলেই প্রিয়তা নিজের চোখের পানি মুছে নিচ্ছে।
নিবিড় বিরক্তি গলায় বললো,আচ্ছা তুমি কান্না ছাড়া আর কিচ্ছু পারো না? চোখের সামনে নদী নিয়ে ঘুরো নাকি?
-উহু, কি করলাম আমি বলবেন তো?
নিবিড় প্রিয়তাকে টেনে আয়নার সামনে দাঁড় করিয়ে,ভালো করে নিজেকে দেখো।সকালে আয়নায় তো নিজেকে দেখোনি, দেখেছো তো আমাকে।
প্রিয়তা আয়না দেখেই নিজের গালে হাত দিয়ে,কাঁদো কাঁদো, আপনি এইটা করতে পারলেন?
-কি করলাম আমি?
-আপনি আমায় আদর করার নামে দাগ বসিয়ে দিলেন। এখন ন্যাকামি করা হচ্ছে।
-হু,ওইটা তো আমি ইচ্ছে করেই দিয়েছি।তবে তোমার সতর্ক হওয়া উচিত ছিলো।
-মানে?
-মানে হলো,বউকে সারাজীবন প্রথম দিন মনে করানোর জন্য একটু চেষ্টা।
যতদিন বেঁচে থাকবে আমার এই দাগের কথা মনে রাখবে।
-আপনি এসব কি বলেন? এখন সবাই কী ভেবেছে বলুন তো?ছিঃ ছিঃ,,

-আমি বলার আগেই তো উড়াল দিয়ে বাহিরে চলে গেলে।দেখুক সবাই আমার কী?
-ধ্যাৎ।

তনুসা বিকেলে বাড়ি ফিরে এসেছে দেখে মোশারফ হোসেন বললেন,তনুসা এইটা একটা ভদ্রলোকের বাড়ি।এইখানে কিছু নিয়ম আছে যা তুমি পালন করছো না।
-আংকেল আমি তো এই ফ্যামিলির কেউ নয়, সো আমাকে এসব কেনো মানতে হবে?
-তনুসা! তুমি বাবার সাথে এইভাবে কথা বলছো কেনো?
-নাদিয়া আপু,আমি এই বাড়ির মালিকের গেস্ট।তাই আমি যা বলবো বা করবো আপনারা মেনে নিতে বাধ্য।
কথাটা বলে তনুসা নিজের রুমে চলে গেলো ।
মোশারফ হোসেন দীর্ঘশ্বাস ফেলে, প্রিয়তা কোথায়?
বাবা প্রিয়তা আর জুহি দেখলাম ছাদে গেছে।কিছু লাগবে?
– হঠাৎ বুকের ব্যাথাটা বেড়েছে।প্রিয়তাকে বলিস নিবিড়কে এই মেয়ের কাছ থেকে দূরে রাখতে।কখন কী করে বসে ঠিক নাই।

দুই দিন কেটে গেলো,নিবিড়ের সকাল থেকে মাথা ব্যথা করছে দেখে অফিসে যাইনি।ফোন হাতে নিয়ে রুমথেকে বেরিয়ে মাহিদকে ফোন দিয়ে, মাহিদ, আজকের মিটিংটা টাইম চেইঞ্জ করে রাত আটটায় দাও আমার বাসায়।
ফোন রেখেই নিবিড় নিচে ড্রইংরুমে চোখ পড়তেই দেখে প্রিয়তা রিসাদের সাথে কথা বলছে কিন্তু কী বলছে তা উপর পর্যন্ত শোনা যাচ্ছে না।নিবিড় আস্তে আস্তে নিচে নেমে যেতেই রিসাদের চোখ পড়লো,আরে প্রিয়তা প্লিজ অধরাকে আজকে তোমার কাছে রাখো।আমি আর নাদু কাল ঠিক চলে আসবো।কথার প্রসঙ্গ পাল্টাতে দেখে প্রিয়তা পিছনে ফিরে নিবিড়কে দেখে কিছু না বলেই রান্নাঘরের দিকে চলে গেলো।রিসাদও মুচকি হেসে উপরে নিজেদের রুমে যেতেই নিবিড় রান্নাঘরে গিয়ে,রিসাদ তোমায় কি বলছিলো?
প্রিয়তা চুপ করে আছে।
-কি হলো আমি তোমায় কিছু জিজ্ঞেস করছি।
-তেমন কিছু না। অধরাকে রাখার জন্য বলছিলো।
-হু,আপু কোথাও যাচ্ছে নাকি?আমি তো এই ব্যাপারে কিছু জানি না।
-প্রিয়তা চুলার উপর থেকে কড়াইটা নামিয়ে,আমিও জানি না।
নিবিড় কিছু না বলে তনুসার রুমে গিয়ে,চেয়ার টেনে বসে,কি ব্যাপার! তুমি এতো সহজে সবকিছু মেনে নিবে আমি ভাবতেই পারিনি।
তনুসা চুপ করে অন্য দিকে ফিরে আছে দেখে,ফোন কয়টা তোমার?
কথাটা বলতেই তনুসা ফিরে তাকিয়ে, আমার ফোন একটাই নিবিড়। হঠাৎ এই কথা কেন?
-এমনি।তোমার টিকেট মাহিদ কেটে ফেলেছে,সামনের মাসের দুই তারিখ তোমার ফ্লাইট।
-আমি এখন চলে যাবো?
-হু,যাবে।আমি চাই না তুমি দেশে থেকে আমার আর প্রিয়তার মাঝে কোনো ঝামেলা করো।
-নিবিড়, ঝামেলা আমি করতে চাই না।আমি বুজেছি তোমাদের আলাদা করা আমার সম্ভব না।আমি মিথ্যা স্বপ্ন বুনেছি এতোটা বছর। ঠিক আছে তুমি যেহেতু চাইছো আমি চলে যাবো।

নিবিড় তনুসার রুম থেকে বেরিয়ে এসে,প্রিয়তা সন্ধ্যায় রেডি হয়ে থেকো।আমি এসে তোমাকে নিয়ে যাবো।
-কোথায় যাবো?
-আমার ফ্রেন্ড সাজিদ পার্টি দিচ্ছে।ও যে মেয়েকে বিয়ে করবে সে দেশে এসেছে।এবং ওর শ্বশুর শ্বাশুড়িও।
না গিয়েও উপায় নেই।
-এখানে আমার যাওয়ার দরকার কী?
-আমি যা বলছি তাই করবে।এরচেয়ে বেশি আর একটা কাজও না।
প্রিয়তা মুচকি হেসে,সিঁড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে নাদিয়া আর রিসাদ নেমে আসছে।
-আপু কোথাও যাচ্ছো?
– হ্যাঁ।রিসাদ বললো ওর ভাই আর ভাবী দেশে আসছে।তাই উনাদের সাথে দেখা করতে যাচ্ছি।
নিবিড় রিসাদের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে,কখন আসবেন?
-কাল সকালেই।অধরাকে রেখে যাচ্ছি তো।
নিবিড় প্রিয়তার দিকে তাকিয়ে উপরে উঠে চলে গেলো।

প্রিয়তা নাদিয়াকে বিদায় দিয়ে,নিজের রুমে এসে নিবিড়কে ইজিচেয়ার বসে থাকতে দেখে,আপনি অফিসে যাননি কেনো? আপনি কি কোনো কিছু নিয়ে চিন্তা করছেন?
-নাহ্, তবে মাহিদকে বললাম রাত আটটায় মিটিং এদিকে সাজিদকেও কথা দিয়ে ফেললাম।
-আমরা আপনার মিটিং শেষ হলে অধরাকে নিয়ে যাবো।
নিবিড় উঠে এসে,হু,এখন কথা হলো তুমি আমার কাছ থেকে দূরে দূরে থাকো কেনো?
-আপনি এখন আবার শুরু করে দিলেন?
-আমি করবো না তো কে করবে প্রিয়তা?অন্য কেউ?
কথাটা বলেই প্রিয়তাকে টেনে নিজের কাছে আনতেই নিবিড় ধপাস করে খাটে পড়ে গেলো।আহ্,এইভাবে কেউ ধাক্কা দেয়?
-আমার কি দোষ? আপনিই তো,,,
নিবিড় মুচকি হেসে খেয়াল করলো,প্রিয়তা বুকের সাথে লেপ্টে আছে দেখে,কি হলো এখন দেখি নিজেই চলে আসছো আদর নিতে।
প্রিয়তা তড়িঘড়ি করে উঠে যেতেই, নিবিড় প্রিয়তার হাত টেনে আবার বুকের সাথে নিয়ে প্রিয়তার কপালের সাথে কপাল,নাকের সাথে নাক লাগিয়ে ফ্যাসফ্যাসে গলায় বললো,তুমি এখনো এতো ভয় পাও কেনো আমাকে?
প্রিয়তা ভারী নিশ্বাসে বললো,জানি না।
-জানো না কেনো?
প্রিয়তা আর কিছু বললো না,,লজ্জায় চোখ বন্ধ করে আছে,নিবিড় মুচকি হেসে, প্রিয়তাকে আরও শক্ত করে জড়িয়ে ধরে হারাতে লাগলো দুজন অন্য জগতে।

পার্টিতে এসে প্রিয়তাকে নিবিড় সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দিতে লাগলো।সাজিদ নিবিড়কে রাফিয়ার সাথে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছে।
রাফিয়া, তুমি কার সামনে দাঁড়িয়ে আছো জানো?
-কে উনি সাজিদ?
-আমার বন্ধু,বিখ্যাত বিজনেসম্যান ইসতিয়াক ইসলাম নিবিড়। আর ওর স্ত্রী প্রিয়তা।
-নাইচ টূ মিট ইউ।
-থ্যাংকইউ।
-সাজিদ তোর শ্বশুর শ্বাশুড়ি আসেনি?
-এসেছে নিবিড়। উনারা ভেতরে আছে।
-রাফিয়া, প্রিয়তাকে নিয়ে ভেতরে যাও।
নিবিড় সাজিদকে থামিয়ে,সাজিদ প্রিয়তা এখানেই ঠিক আছে।আমাদের নিয়ে তোর ব্যস্ত হতে না।
সবাই খাওয়া দাওয়া শেষ করে নিবিড় আর প্রিয়তা রাফিয়ার সাথে কথা বলছে।নিবিড়ের ফোন আসতেই নিবিড় প্রিয়তার দিকে ইশারা করে দাঁড়িয়ে থাকতে বলে সরে গেলো।
-রাফিয়া সাজিদ ভাইয়ার মায়ের সাথে দেখা হলো।কিন্তু তোমার বাবা মাকে তো দেখলাম না?
-ভাবী আপনি আসুন আমার সাথে। প্রিয়তা অধরাকে হাতে নিয়ে,ভিতরে গেলো।
-আম্মু দেখো কাকে নিয়ে এসেছি!
প্রিয়তাও হাসি হাসি মুখ করে তাকিয়ে অপেক্ষা করছে রাফিয়ার মাকে দেখার জন্য। রাফিয়ার মা ফোনে কথা শেষ করে পিছনে ফিরতেই প্রিয়তার মাথায় যেনো আকাশ ভেঙ্গে পড়লো।সমুদ্রের ঢেউয়ের মতো বুকের ভেতর উতালপাতাল শুরু হয়ে গেলো। গলাটা ভারী হয়ে আসছে হাসি মুখটা যেনো কালো মেঘে ডাকা পড়েছে।
-রাফিয়ার মা হাসি মুখে,কে মেয়েটা?
-মা ও হচ্ছে সাজিদের বন্ধু এই শহরে বড় বিজনেসম্যান নিবিড় ভাইয়ার স্ত্রী।
-ওহ্ তাই নাকি? ভারী মিষ্টি দেখতে।কী নাম তোমার মা?
প্রিয়তার ভিতর থেকে কথা আসছে না।অনেকক্ষণ পর আস্তে করে বললো,প্রিয়তা।
-আচ্ছা।তোমার হাজবেন্ড কোথায়?
-বাহিরে।
-অধরার দিকে তাকিয়ে, তোমার মেয়ে?
-না,আমার হাজবেন্ডের বড় আপুর মেয়ে।
-ঠিক আছে।ভালো থেকো।রাফিয়া তোর আব্বু তো আমাদের আগেই চলে গেছে।আমাদের এবার এখান থেকে যেতে হবে,চলো। প্রিয়তা তাহলে আমরা আসি?
প্রিয়তা কিছু না বলে চুপ করে দাঁড়িয়ে আছে।
রাফিয়া আর রাফিয়ার মা চলে গেলো।
প্রিয়তা সে জাগায় দাঁড়িয়ে তাকিয়ে আছে অন্যমনস্ক হয়ে।
নিবিড় খুঁজতে খুঁজতে প্রিয়তার সামনে এসে,তুমি এখানে আমাকে বলে আসবে না?
প্রিয়তা কোনো কথাই বলছে না।নিস্তব্ধ নির্বিকার হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।নিবিড় দুই বাহু ধরে ঝাঁকিয়ে,প্রিয়তা আর ইউ ওকে?
প্রিয়তা চমকে উঠে, হু।
-কি হয়েছিলো? এভাবে অন্যমনষ্ক হয়ে ছিলে।
-আমি বাসায় যাবো।
-এখুনি?
-হ্যাঁ।
-আরেকটু থাকো।
-না, আপনি না গেলে আমি অধরাকে নিয়ে ড্রাইভারকে নিয়ে চলে যাচ্ছি।
– ওকে আমি যাচ্ছি।
নিবিড় সাজিদের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে গাড়িতে উঠলো। প্রিয়তা আর একটা কথাও বলেনি।বাড়ি আসতেই, একজন একেক কথা জিজ্ঞেস করছে প্রিয়তা অধরাকে জুহির দিকে এগিয়ে দিয়ে উপরে উঠে চলে গেলো।
দাদী নিবিড়ের কাছে গিয়ে,কী হইলো দাদুভাই পিউ কাউরে কিছু না কইয়া এইভাবে চইলা গেলো?
-দাদী আমিও জানি না।হঠাৎ ওর কী হয়েছে।আমি জানতে পারলে পরে জানাবো।আমি ফ্রেশ হয়ে আসি।
নিবিড় এসে প্রিয়তাকে রুমে না দেখে বারান্দায় গিয়ে দেখে প্রিয়তা চেইঞ্জ না করেই বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছে।

চলবে,,,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here