#পর্ব_০২
#অসমাপ_প্রনয়
#মিঃনাহিদ_হাসান
নিশি রাত হিয়া এগিয়ে যাচ্ছে মাঠের দিকে…
দূর থেকে রায়হান মন্ডল দেখলো একটা মেয়ে এইদিকেই এগিয়ে আসছে, দলবল নিয়ে, ঘিরে ধরলো হিয়াকে…
আপনারা কারা, এইখানে কী চান….!
এতো রাতে তুমি এইখানে কী করো গো পরী.. আমাদের একটু মজা দেও… আমরা যে প্রেমো জ্বলায় ম*রি..
ঝাপিয়ে পড়লো হিয়ার উপর রায়হান মন্ডল, এক এক করে সবাই তাদের চাহিদা মিটিয়ে নেবার পর…
রায়হান খেয়াল করলো,হিয়ার নিঃশ্বাস পড়ছে না,ধরে নিলো মারা গেছে…
একজন বললো ওস্তাদ এখন কী করবেন এই লাশ নিয়া..?
রায়হান মন্ডল দেখলেন, পাশে কী দড়ি_ওই দড়ি দিয়েই হিয়ার লাশটা ঝুলিয়ে দিলো,বট গাছের ডালের সঙ্গে..
লাশটা এইভাবেই থাক, সকালে সবাই মনে করবো,মাইয়া ফাঁসি দিছে…হো করে শয়তানি হাসি দিয়ে দলবল নিয়ে চলে গেলো রায়হান মন্ডল….!
এই রায়হান মন্ডল হলো, গ্রামের মাতব্বর আসিফ মন্ডল এর গুনধর পুত্র, সারাদিন বসে বসে মদ গাঁজা খাওয়া তাঁর কাজ….
———–
কবীর আর কতো ঘুমাবি ওঠ দেখ সকাল হয়ে…
ভাই একটু ঘুমাতে দেও.. কবীর অন্য দিকে ঘুরে ঘুমানোর চেষ্টা করলো…
বায়জিদ ঘরের একটা জানালা খুলে দিতেই, সূর্যের আলো কবীরের চোখে পড়লো…
দূর এইভাবে কী ঘুমানো যায়, বিরক্ত হয়ে কবীর উঠে বসলো….
একটু পরে নাফিসা আসলো,এই কবীর চল খেলতে যাই, কবীর উঠে নাফিসার সাথে চলে গেলো…
মসজিদের হুজুর বসে আছেন, মসজিদের বারান্দায়.. এমন সময় পাশের গ্রামের বাবলু দৌড়ে আসলো,
হুজুর একটা খারাপ খবর আছে, আমাদের গ্রামের সাইফুল মাস্টারের মেয়ে মারা গেছে…
ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন” আরে কী বলিস কেমনে মারা গেলো..
গ্রামের শেষ মাথায় বট গাছের ডালের সাথে কাল রাতে ফাঁসি দিছে,
আস্তাগফিরুল্লাহ_নাউজুবিল্লাহ আত্মহত্যা করছে,
যা এইখানে থেকে, সকাল সকাল কী শুনাই দিলি..
হুজুর সাহেব বললেন তুই যা আমি একটু পর যাইতাছি,কী দিন কাল আইলো যে বাবা…বাবলু চলে গেলো…
কবীর বাহিরে দাঁড়িয়ে ছিলো, বাবলুর কথা সব শুনলো,সে আর কী করতে সে এখনো অনেক ছোট..
হঠাৎ করে নাফিসা বলে উঠলো কবীর আমি মরা দেখতে যাইতে চাই,
নাফু তুই এখনো অনেক ছোট মরা দেইখা ভয় পাবি..মন্ডলের মেয়ে হয়ে যদি ভয় পাস তাহলে মানুষ হাসবো,তোর আব্বা তো গ্রামের মাতব্বর…!
আচ্ছা চল আমিও যামু, তুই আবার ভয় পাস না…
তোরে কতোবার বলছি আমারে নাফু ডাকবি না, আমার নাম নাফিসা কথা কানে যায় না,পরের বার এই নামে ডাকলে আব্বুর কাছে বিচার দিমু…
হইছে হইছে আর বিচার দিতে হবে না,চল মরা দেখতে যাই…
কবীর নাফিসা কে নিয়ে দিলো দৌড়, গ্রামের শেষ মাথায় অনেক মানুষের ভিড় জমা হইছে…
মাঠের মধ্যে একটা বটগাছ,’এই বট গাছের ডালের সাথে নববধু বেশে একটা মেয়ে দড়িতে ঝুলে আছে..
মন্ডলপাড়া আর বানিয়াপাড়া দুই গ্রামের লোকজন জমা হয়েছে, সাইফুল মাস্টার মেয়ের লাশ ধরে কান্না করতেছে…
মা তুই এটা কি করলি, কি দরকার ছিল এমনটা করার, আমি তো রাগ করে বলছিলাম, ম’রে যা আমি তোর মুখ দেখতে চাই না…। তুই কেন অভিমান করে চলে গেলি, আমি এখন কিভাবে থাকবো,কি নিয়ে বাঁচবো আমি, একবারও এই বাপের কথা ভাবলি না….
পুলিশ এসেছে লাশ নিয়ে গেলো…
গ্রামের মানুষ নানা রকম কথা বলতেছে, কিছু কিছু মহিলা বলতেছে দেখ, ওই মেয়ের পেটে মনে হয় বাচ্চা আছে..। পেট কেমন ফোলা ফোলা লাগতেছে কার সাথে আকাম কুকাম করছে কে জানে…
এখন আবার নিজের দোষ ঢাকার জন্য গলায় দড়ি দিয়া মইরা গেছে।
শোনো সাইফুল মাস্টার, আমি মন্ডলপাড়া গ্রামের মাতব্বর আসিফ মন্ডল..।আমাকে দুই গ্রামের মানুষ এক নামেই চিনে, আমি যা বলি তাই সবাই করে ।
তোমার এই পাপী মেয়ের লাশ জানি আর গ্রামে না ঢুকে..
পুলিশ যখন লাশ দিয়ে যাইবো,লাশ নিয়ে আর এই গ্রামে আসবা না… লাশটা মাটির নিচে নিজেই চাপা দিয়ে রাখবা, না হলে গ্রামে যে বড় নদী আছে নদীতে ভাসিয়ে দিয়ো…
মাতব্বর সাহেব, আমার মেয়েটা বাঁইচা থাকতেও শান্তি পায় নাই, মরার পরেও ওরে এত বড় শাস্তি দিয়েন না..
মাস্টার তুমি কিন্তু বেশি কথা বলতাছো তুমি কি জানো না,আমাদের গ্রামের নিয়ম যে মেয়ে বা ছেলে আত্মহত্যা কইরা মইরা যায়, তাকে জানাযা দেওয়া হয় না…
যদি তুমি বেশি বাড়াবাড়ি করো তোমারেও গ্রাম থেকে বের করে দেওয়া হবে তাই চুপচাপ বাড়িতে যাও..।
এতোক্ষন দূর থেকে সবকিছু শুনছিল কবীর আর নাফিসা…
এইটা কেমন নিয়ম,যদি আমি কোনদিন এমনে মারা যাই, আমার ও কী জানাজা হবে না…
নাফিসা কী আবল তাবল কথা বলিস, তুই ক্যান এমনে মরবি,যা এখন বাড়িতে যা অনেক মরা দেখা হইছে।
এই বলে কবীর চলে গেলো….
নাফিসা তুই এই জায়গায় ক্যান, কেন এই জায়গায় আইছো,চল এখনি আমার সাথে বাড়িতে চল..
আব্বা মরা দেখতে আইছিলাম, নাফিসা বললো…
আসিফ মন্ডল মেয়েকে নিয়ে বাড়িতে গেলেন…
পরের দিন সকালে মর্গে থেকে হিয়ার লাশ আনা হলো,
গ্রামের সবাই গালাগালি দিতেছে,এখনই এই লাশ আমাদের চোখের সামনে থেকে তাড়াতাড়ি নিয়ে যাও..
এই বজ্জাত মেয়ের লাশ যতক্ষণ আমাদের গ্রামে থাকবে, আমাদের ওপর অভিশাপ নেমে আসবে তাড়াতাড়ি নিয়ে যাও…
সাইফুল মাস্টার মেয়ের লাশটিকে কাঁধে তুলে নিলেন,, হাঁটতে হাঁটতে গ্রাম পেরিয়ে নদীর ধারে জঙ্গলের পাশে চলে আসলেন। তখন প্রায় সন্ধ্যা..দুঃখি বাবা জঙ্গলের এক কোনায় কবর খুঁড়তে লাগলেন মেয়ের জন্য…
অনেক আদরের মেয়ে ভাসিয়ে দিতে তো আর পারবেন না..
নিয়তি এমন না করলেও পারতো…
এমন সময় পিছন থেকে কেউ একজন ডাকলো চাচা থামেন….
চলবে……..





