পর্ব_২৫ #অসমাপ্ত_প্রনয় #মিঃনাহিদ_হাসান

0
50

#পর্ব_২৫
#অসমাপ্ত_প্রনয়
#মিঃনাহিদ_হাসান

আকাশে তারা নেই, চাঁদ মেঘের আড়ালে লুকিয়ে গেছে..!
কি রে কবীর এইখানে দাঁড়িয়ে আছোস ক্যান, ঘরে যাবি না..??
নাই ভাই ঘরে আর যামু না_দুইদিন থাইকা নাফুর সাথে দেখা হয় না, আমার অস্থির লাগতাছে_কিছুই ভালো লাগতাছে না..! আমি আজকে দেখা করতে যামু..!

দেখ ভাই জেদ করিস না, সকালে যাবি এখন ঘরে আয়..!
কবীর কথা শুনলো না বাহিরেই দাঁড়িয়ে রইলো..?
————

মায়া” এসে খবর দিলো বাপ ব্যাটা দুইজন রাতের খাবার খাইয়া নিছে, মীম বাঁকা ঠোঁটে হালকা হাসলো..!
মায়াকে বললো,রায়হান মন্ডলকে আমার ঘরে আসতে বলো..!
মায়া বেড়িয়ে গেলো_রায়হান মন্ডলকে বললো,মীম ডাকে এখনি যান…!
রায়হান আসলো মীমের ঘরে,মীম লক্ষ করলো রায়হান ঘুমে টুপ পাড়ছে, একটু সুযোগ পেলেই ঘুমিয়ে পড়বে..!

মীম সু্যোগ কাজে লাগালো, রায়হানের কাছে আসলো_নরম গলায় বললো, চলেন বাহিরে চাঁদ দেখতে যাই” কাল তো বিয়ে করবো..!

রায়হান মন্ডল ঘুম ঘুম চোখে বললো_আজকে তো চাঁদ নাই,আর আজকে না গেলে হয় না, এখন একটু ঘুমাই..!
মীম অভিমানী সুরে বললো, চাঁদ নাই তাই কী_আমি ঘুরতে যাবো আপনার সাথে ব্যাস কথা শেষ..!

রায়হান আর কথা বাড়ালো না, স্বীকার করলো সে যাবে..!
মীম তো অনেক খুশি_ছুরিটা কাপড়ের ভিতর লুকিয়ে নিলো..! একটা ব্যাগে নিলো রাম দা আর কিছু দড়ি..!
ঘুমে আচ্ছন্ন হয়ে গেছে রায়হান, তবুও তাকে সাথে নিয়ে মীম বাহিরে বেড়িয়ে আসলো,ঘুম ঘুম চোখে রায়হান চলতে লাগলো মীমের হাত ধরে মৃত্যুর দিকে…!

নিশি রাত কবীর চুপিচুপি আসলো মন্ডল বাড়িতে,টোকা দিলো নাফিসার ঘরের জানালায়_নাফিসা জানালা খুলে দিলো, কবীরকে দেখে অবাক হয়ে গেলো..! কবীর বললো ছাদে আসো আমি ছাদে যাইতাছি..!
কবীর গাছ বেয়ে ছাদে নামলো..নাফিসাও ছাদে এসেছে..!
কেউ কোন কথা বলছে না, দুইজন শুধু তাকিয়ে আছে দুইজনের দিকে..! যেন বহুদিনের না দেখার তৃষ্ণা মেটাতে ব্যাস্ত..!
হঠাৎ নাফিসা এগিয়ে আসলো,হুট করেই জড়িয়ে ধরে কেঁদে ফেললো..! কবীর অসহায়ের মতো বলতে শুরু করলো_পানি ছাড়া মাছ যেমন শুকনো জায়গায় ছটফট করে…! তোমার বিরহে আমি সেইভাবে ছটফট করি..? মাছ যেমন পানি পাইলে বাঁচে, বিশ্বাস করো নাফু তোমার কাছে আসলে আমি যেন বাঁচি_এই প্রনয়ের অনলে পোড়া অন্তরে তুমি নামক প্রশান্তি দায়ক পানি না পাইলে, আমি ছটফট কইরা মরি…!

চাঁদ মেঘের আড়ালে থেকে আবছা আলো ছড়িয়ে পরিবেশটাকে মুখরিত করে তুলছে_খোলা আকাশের নিচে দাঁড়িয়ে দুইজন মন খুলছে কাঁদছে, ভাগ্য তাদের তাদের সাথে থাকবে তো..? কখনো বিচ্ছেদ হবে না তো..! মনে তো কতো প্রশ্ন উঁকি দেয়…!

————
মাঝে মধ্যে শিয়ালের ডাক শোনা যায়, পরিবেশ থমথমে_পুরো গ্রাম ঘুমিয়ে গেছে…!

মীম রায়হান কে নিয়ে আসলো সেই চির পরিচিত নদীর পাড়ে..! এই নদীর পাড় থেকে সে জীবন নামের দুঃখের নদী পড়ি দিতে চেয়েছিলো_কিন্তু ভাগ্য তাকে সায় দেয় নাই..! এই নদীর পাড় তার স্বপ্ন কেড়ে নিয়েছে, কেড়ে নিয়েছে সকল আশা..! সেই ভয়াবহ রাতে এই নদীর পাড়ে মীম বুক ভাসিয়ে কেঁদেছিলো..! কিন্তু আজকে তার চোখে পানি নেই,দুই চোখে জ্বলছে শুধু প্রতিশোধের আগুন..!

মীম রায়হানের হাতটা ছেড়ে দিলো_রায়হান ঘুমে এতোটা বিভোর ছিলো,ধুপ করে মাটিতে পড়ে নাক ডাকতে শুরু করলো..!
প্রিমতমের কথা মনে করে_মীমের চোখের কোনে জল জমতে গেলো..! কিন্তু মীম ভেঙ্গে পড়লো না..সময় নষ্ট না করে ব্যাগ থেকে দড়ি বের করলো..! রায়হান কে টেনে বেঁধে ফেললো একটা গাছে..!
দুই পা দুইটা গাছের সাথে বাঁধলো_নদী থেকে পানি এনে মুখে দিতেই রায়হান জাগনা পেলো_নিজেকে এইভাবে বাঁধা দেখে ওর ঘুম উড়ে গেলো..!

মীম গগন কাঁপানো হাঁসি দিলো, তাঁর হাসিতে মনে হলো যেন একটা রাক্ষসি হাসছে..! রায়হান ভয়ে কুঁকড়ে গেলো..! কিন্তু প্রকাশ করলো না..সে দম্ভ ভারা কন্ঠে বললো, আমার সাথে বেইমানি_শুধু একবার ছাড়া পাই,তোর অবস্থা এমন করবো তোকে নিয়ে কেউ ভাবতেও ভয় পাবে…!

মীম হাসতে হাসতে সামনে আসলো, মরার আগে এইসব না বলে দোয়া পড়ে নিলে ভালো হইতো..!
মীম রায়হানের বুক পা দিয়ে চেপে ধরে _সেই রাতের কথা মনে করে, যেভাবে রায়হান নাহিদ কে ধরেছিলো.!

মীম একটা পৈশাচিক হাঁসি দিয়ে বলে_তোকে এমন মৃত্যু দিবো,তোর লাশ দেখেও যেন লোকেরা ভয় পায়..?
রায়হান এবার অনেক ভয় পেয়ে গেলো, আকুতি মিনতি শুরু করলো তাকে ছেড়ে দেওয়ার জন্য..?
মীমের যেন আনন্দ হচ্ছে সে হাসতে হাসতে বললো…
মনে কর সেই রাতের কথা_ওই সময়টা মনে কর..?
যখন আমি তোর পা ধরে আকুতি করছিলাম, জীবন ভিক্ষা চেয়েছিল আমার ভালোবাসার…! তুই সেদিন আমাকে দয়া করিস নাই.. তুই শুধু আমার ভালোবাসা মে*রে ফেলিস নি_গলা টিপে হত্যা করেছিস আমার সকল আশা ভরসা, মনের মাঝে সাজানো অনেক স্বপ্ন গুলোকে ও..! আজকের দিনের অপেক্ষায় আমি বেঁচে আছি, ইচ্ছা ছিলো তো সেই দিনেই চলে যাই ওইপারে..!

কোন পা দিয়ে এসেছিলি তুই আমার স্বপ্ন ভাঙ্গতে,কোন পা দিয়ে চেপে ধরেছিলি আমার প্রিয়তমের গলা.. আমি আজকে তোর সেই পা রাখবো না…!

মীম রাম দা হাতে নিলো_এক কোপে কেটে ফেললো রায়হানের একটা পা..! রায়হানের গগন কাঁপানো চিৎকার.. মীমের ঠোঁটের কোণে ভয়ংকর হাঁসি..!
নে চিৎকার করে..আরো জোরে চিৎকার কর..!
এই নিঝুম জায়গায় তোর চিৎকার শুনতে কেউ আসবে না…!
কোন হাত নিয়ে এসেছিলি আমার স্বপ্ন গুলো গলা টিপে হত্যা করতে_কোন হাত দিয়ে অসহায় বাবার মা’র বুক থেকে তাদের মেয়েকে কেড়ে নিয়েনিস,দিয়েছিস নোংরা থাবা..! আমি রাখবো না তোর সেই হাত..!
মীম এক কোপে রায়হানের ডান হাত কেটে ফেললো..
রায়হান আর চিৎকার করে কাঁদতে পারছে না.. বলতে লাগলো আমাকে আর কষ্ট দিস না, মেরে ফেল আমাকে তাড়াতাড়ি.. আমি আর সহ্য করতে পারছি না..!

এখন বুঝি কষ্ট হচ্ছে_কতোজনকে কষ্ট দিয়েছিস ওই কষ্ট গুলো এখন অনুভব করে নে…?
তুই কোন চোখে শত শত মেয়ের দিকে কু নজর দিয়েছিস,কোন চোখে তোর আমার সুখ সহ্য হয় নাই, আমি যেই চোখ তুলে ফেলবো..!
মীম ছুরিটা হাতে নিলো_উপড়ে ফেললো রায়হানের একটা চোখ..
কাঁটা একটা হাত_একটা পা আর চোখটা রায়হানের দেহের পাশেই পড়ে আছে.. দেহটা কাঁপছে থরথর করে…
মীমের মুখে বিষাদের হাসি, তাঁর শরীর রক্তে ভিজে গেছে.. মীম রায়হানের কাছে আসলো_ছুরিটা হাতে নিয়ে বলতে লাগলো_তুই এই সমাজের আগছা,আর আমার প্রতিজ্ঞা ছিলো সমাজের আগছা পরিষ্কার করবো_ইচ্ছা ছিলো নরপশুদের রক্তে স্নান করবো, আজকে আমার ইচ্ছা পূরণ হলো,এই দিনের জন্যই হয়তোবা বেঁচে ছিলাম, তুই বেঁচে থাকলে ওইরকম পাতাল পুরীর আবার জন্ম হবে, আবার অনেক মায়ের কোল খালি হবে,যুব সমাজ নষ্ট হবে..!
তাই আমি তোকে উপড়ে ফেললাম…!
মীমের দুই চোখে ভেসে উঠলো সেই রাতের ঘটনা,মীম আর দেরী করলো না,ছুরিটা ঢুকিয়ে দিলো রায়হানের বুকে.. রায়হান নড়াচড়া বন্ধ করে দিলো,নিথর হয়ে গেলো দেহটা..!

নিকোস কালো অন্ধকার রাত, চাঁদ মেঘের আড়ালে লুকিয়ে গেছে..! কিছু তারা মিটিমিটি জ্বলছে..! মীম আকাশের দিকে তাকিয়ে করুণ সুরে বলতে শুরু করলো_শুনছেন প্রিয়তম আমি আপনাকে কথা দিয়েছিলাম, নরপশুদের রক্তে স্নান করবো, আপনার অসমাপ্ত কাজ সমাপ্ত করবো..!
দেখেন আমার অর্ধেক কাজ সম্পন্ন হয়ে গেছে..!
মানুষ আশা নিয়ে বাঁচতে চায়,আর আমার সকল আশা মরে গেছে..! আমি বেঁচে আছি প্রতিশোধের আগুন বুকে নিয়ে..! যখন এই প্রতিশোধের আগুন নিভে যাবে, এই পশুদের রক্তে..!তখন আমিও চলে যাবো আপনার কাছে..!এই জন্মে আমরা এক হতে পারি নাই, কিন্তু ওইপাড়ে আমাদের দেখা হবে_দেখা হতেই হবে..!

রায়হানের ছিন্ন ভিন্ন নিথর দেহ পড়ে রইলো নদীর পাড়ে..!
মীম রাম দা হাতে_ রওনা দিলো মন্ডল বাড়ির দিকে, মুখে বিষাদের হাসি নিয়ে বললো, আসিফ মন্ডল আমি আসছি..! তুই আমার শেষ টার্গেট..! তুই আমার অসমাপ্ত কাজ_যেটা সমাপ্ত হলেই,এই নিষ্ঠুর পৃথিবীকে আমি বিদায় জানাবো…! আমি আসছি প্রিয়তম আপনার কাছে খুব তাড়াতাড়ি…!

চলবে…!

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here