আমি খু*নি,আমি খু*ন করছি আমারে ফাঁ”সি দেন””ফাঁ”সি দেন আমারে,আমি আর বাঁচতে চাই না…
গত দুইদিন থেকে জেলখানায় এইভাবেই চিল্লাচিল্লি করে কান্না করছে কবীর হাসান….
ইন্সপেক্টর আইমান অনেক বার জিজ্ঞেস করছেন,কেন খু*ন করলে তুমি, কী জন্য খু*ন করেছো..?
কবীর কোন কারণ বলে নাই, শুধু বলছে ও আমাকে দেওয়া কথা রাখে নাই, কেন কথা ও রাখে নাই…
এইটুকু বলেই হাউমাউ করে কান্না শুরু করে দিয়েছে…।
এক পাগল ইন্সপেক্টর আইমান কে বলছে,সে নাকি দেখছে কবীর খু*ন করে নাই, তাহলে কবীর কেন নিজেকে খু*নি বলে দাবি করছে,কী রহস্য আছে এর পিছনে..
———————————————————
দেখো কবীর তুমি কেন একজন মেয়েকে এমন নিষ্ঠুর ভাবে খু*ন করলে,
কিছু তো বড়ো কারণ আছেই,বলো কি কারণ-আজকে তোমাকে সব বলতেই হবে..যদি তুমি কিছু না বলো কিছুদিন পর তোমার ফাঁসি হয়ে যাবে,তখন কেউ জানতেই পারবে না,কে দোষী ছিলো..
বলো কি হয়েছিল সেই রাতে…
ইন্সপেক্টর সাহেব আমার জীবনের গল্পটা অনেক বড়ো, এই গল্প শোনার মতো,এতো সময় আপনার হবে না..
তুমি বলো আমি সব শুনতে চাই..
তাহলে ঘটনার সূচনা থেকেই শুরু করি__অনেক বছর আগের কথা,যখন আমার বয়স ছিলো ১৪বছর..
গ্রামের নাম বানিয়া পাড়া,গ্রামের মানুষ গুলো অনেক সহজ সরল,বিধাতা মনে হয় কোন কমতি রাখেন নাই গ্রামটাতে প্রকৃতির মায়াময় সৌন্দর্য বিলিয়ে দিতে…
গ্রামের নামটা কেমন যেন অদ্ভুত বানিয়া পাড়া..
আসলে আমাদের গ্রাম অঞ্চলের মানুষ,যারা সোনার দোকানে কাজ করে_তাদের বানিয়া বলে..
এই গ্রামে নাকি এক সময় কয়েকজন বানিয়া বাস করতো,সেই থেকেই গ্রামের নাম হয়ে যায় বানিয়া পাড়া…
মা বাবা এক্সিডেন্টে মারা যাবার পর বড়ো ভাই বায়জিদ হাসান,বাবা মা দুইজনের আদর দিয়া আমারে বড়ো করছে,, কখনো বুঝতে দেয় নাই আমি এতিম, আমার বাবা মা নাই..
যখন যা আবদার করছি,কষ্ট হলেও ভাই আমার সখ পুরণ করছে…
দিন গুলো ভালোই চলছিলো…
—————————————————-
প্রতিবেশী সাইফুল মাস্টারের মেয়ে হিয়ার আজকে বিয়ে,বধু বেশে হিয়া অপেক্ষা করছে কখন তার ভালোবাসার মানুষটি তাকে নিতে আসবে… তিনবছরের প্রেম তাদের, সাকিব সাইফুল মাস্টারের ছাত্র ছিলো,প্রায়ই স্যারের সাথে দেখা করার অজুহাতে সাকিব আসতো হিয়াদের বাড়িতে…
এভাবেই একদিন হয়ে ওঠে হিয়ার সাথে সাকিবের প্রেমের সম্পর্ক,,হিয়া সাকিবের প্রেমে এতোটাই পাগল ছিলো, সাকিবের এক কথায় শারীরিক সম্পর্ক করতেও রাজি হয়ে যায়…
হিয়া কিছুদিন আগে জানতে পারে সে গর্ভবতী,
সাইফুল মাস্টার যখন এই ঘটনা জানতে পারেন তখন তার মাথায় যেন আকাশ ভেঙ্গে পড়লো..
মাস্টার হিসাবে গ্রামের তার অনেক সুখ্যাতি আছে..
এখন লোক জানাজানি হলে সর্বনাশ হয়ে যাবে…
সাইফুল মাস্টার দৌড়ে গেলেন সাকিবের বাড়িতে হাতে ধরে রাজি করালেন বিয়ে করার জন্য, সাকিব রাজি হলো বিয়ে করার জন্য…
তাই আজকে বিয়ের আয়োজন..
হিয়া অপেক্ষা করতেছে কখন সাকিব আসবে, তাঁকে নিজের ঘরে বউ করে নিয়ে যাবে…
কিন্তু সন্ধ্যায় শুনা গেলো বর বিয়ে করতে আসবে না,বর নাকি বিদেশে চলে গেছে…
এই কথা শুনে বিয়ে বাড়িতে একটা হইহল্লর পড়ে গেলো,সবাই হিয়াকে কটু কথা শুনাতে লাগলো..
সাইফুল মাস্টারের মাথায় যেন বাজ পড়লো..
কিছুক্ষণের মধ্যেই বাড়ি ফাঁকা হয়ে গেলো,সবাই হিয়াকে গালি দিতে দিতে নিজেদের বাড়িতে চলে গেলো..
সাইফুল মাস্টার আসলেন মেয়ের কাছে..
তোকে এইজন্য এতো কষ্ট করে বড়ো করছি,লেখা পড়া শিখাইছি_তোরে নিয়া কতো আশা ছিলো, তুই বড়ো ডাক্তার হবি_গ্রামের মানুষের সেবা করবি…
তুই আমার সব আশা ভেঙ্গে দিলি, আমি কিন্তু তোরে কিছু বলি নাই, বুকে পাথর বেঁধে সব মেনে নিলাম..
কিন্তু আজকে আমাকে এইদিন দেখতে হবে কোনদিন ভাবি নাই, ইচ্ছা তো করতাছে আমি নিজে মইরা যাই।
আরে তুই মেয়ে নামের কলঙ্ক,তুই মইরা যায়’ তোর মুখ আমি আর দেখতে চাই না…
সাইফুল মাস্টার কান্না করতে করতে ঘর থেকে বেরিয়ে গেলেন…
হিয়া এতোক্ষণ চুপ ছিলো, কিছু বলে নাই, সে যেন পাথর হয়ে গেছে…
বারবার কানের কাছে একটা কথাই যেন ধ্বনিত হচ্ছে তুই মইরা যায়’তোর মুখ দেখতে চাই না…
রাত তখন ১২টা হিয়া সাকিবের দেওয়া কথা গুলো ভাবলো,কী সুন্দর করে বলেছিলো বউ করে ঘরে নিবো_সারা জীবন পাশে থাকবো আরো কতো কিছু..
হিয়া আয়নার নিজের মুখটা একবার দেখলো,সেতো দেখতে মোটেই খারাপ নয়,টানা টানা ডাগর ডাগর চোখ, মায়াবী মুখ_বিয়ের সাজে যেন আরো অপরুপ লাগছে…
এমনটা কী হওয়ার ছিলো_এমন না হলেও পারতো, নিয়তি কী ভাগ্যে এটাই লিখেছিলো…
হিয়া নিজেকে শক্ত করলো,ঘর থেকে কিছু দড়ি নিলো..
রাত তখন আনুমানিক ২টা…
হিয়া বেড়িয়ে পড়লো ঘর থেকে_আনমনে হেঁটে চলছে গ্রামের শেষ মাথায় বট গাছটির দিকে…
চলবে……..
#পর্ব_১
#গল্পঃঅসমাপ্ত_প্রনয়
#লেখকঃমিঃ_নাহিদ_হাসান
#মিঃছদ্মবেশী