#পর্ব_২২
#অসমাপ্ত_প্রনয়
#মিঃনাহিদ_হাসান
বারেক খন্দকার মাঝ রাতে ঘুম থেকে চমকে উঠলেন…!
চিৎকার করে ডাকলেন তাঁর কাজের লোককে..!
পাশের ঘর থেকে বেরিয়ে আসলো সুমন..
মালিক কী হইছে আপনার,কোন খারাপ স্বপ্ন দেখছেন নাকি…?
সুমন আমার যেন কেমন লাগতাছে, আমার নাহিদের কিছু হইলো না তো_আমার অস্থির লাগতাছে.. আমি আমার ছেলের কাছে যাবো,এখনি যাবো…!
মালিক এখন তো অনেক রাত হয়ে গেছে, এখন ঘুমান সকালে যাবেন..!
বারেক খন্দকার কথা শুনলেন না,কথায় আছে_ সন্তানের কিছু হইলে,বাবা মা আগে জানে…!
বারেক খন্দকারেরও কলিজার মধ্যে চিন চিন ব্যাথা, তিনি আর থাকতে পারলেন না.! সুমনকে নিয়ে বেড়িয়ে পড়লেন গ্রামের উদ্দেশ্যে…!
——
হা’রাম’জাদা মনে আছে একদিন তুই আমাকে ঘুষি মেরে_ছিলি’ সেইদিন তোরে আমি ছাইড়া দিছিলাম…_আজকে আমি তোকে জিবন্ত কবর দিবো..!
রায়হান মন্ডলের পিছনে আরো ৫-৭জনকে এগিয়ে আসতে দেখে, নাহিদ মীমের হাতটা শক্ত করে চেপে ধরলো_ ফিসফিসিয়ে বললো দৌড় দাও…!
নাহিদ মীমকে নিয়ে প্রাণপনে দৌড়ে চলছে, পিছনে আসছে রায়হান দলবল নিয়ে…!
এই দাঁড়া কোই যাস, আজকে আর বাঁচতে পারবি না..!
নিশি রাত ভোরের আলো ফুটতে এখনো অনেক সময় বাকি..!
নাহিদ ঢুকে পড়লো নদীর পাশে জঙ্গলে, চারদিকে সুনসান নীরবতা_মীমকে বুকে জড়িয়ে দাঁড়িয়ে পড়লো একটা ঝোপের আড়ালে…!
রায়হান দলবল নিয়ে জঙ্গলে হাজির, হুংকার ছেড়ে বললো, খোঁজো ওদের খোঁজে এইখানেই আছে বাহিরে যাইতে পারে নাই_গ্রামের মাইয়া নিয়া ভাইগা যাবো এতো সাহস..ও আমার ময়না পাখি নিয়া ভাগতে চায়, আমি ওর কলিজা টাইনা ছিড়া ফেলমু….!
সবার হাতে রাম দা ছিলো, আবছা অন্ধকারে সবাই ঝোপ ঝাড় কুপাতে লাগলো_কোথায় আছে, আজকে রক্ষা নাই…!
মীম নাহিদ কে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে আছে,যেন নাহিদের সাথে মিশে যেতে চাইছে_কাপাঁ কাঁপা কন্ঠে মীম বললো,”আমার অনেক ভয় লাগতাছে,ওরা আমাদের ধরে ফেলবে না তো…!
নাহিদ মীমের কপালে আলতো কিস করলো,ভয় পেয়ো না আল্লাহ আছেন_কিছুই হবে না..!
জঙ্গলের ঝোপ ঝাড় কুপাতে কুপাতে একজন চলে আসলো’ নাহিদের খুব কাছে,ঝাপের মধ্যে কোপ দিতেই
হঠাৎ একটা রাম দায়ের কোপ পড়লো নাহিদের পিঠে..!
মীম ভয়ে চিৎকার করে উঠলো_দেখে ফেললো ওদের ওই লোকটা…!
পরবর্তী আঘাত করার আগেই নাহিদ লোকটার হাত ধরে ফেললো,মুখ চেপে ধরে_ঘাড় মটকে দিলো..!
নেতিয়ে পড়লো তার দেহ…!
নাহিদ আর দাঁড়িয়ে থাকতে পারছে না,পিঠ থেকে অঝোরে রক্ত পড়ছে,মীম কান্না শুরু করলো..!
ফজরের আজান দিলো_ভোরের আলো ফুটতে শুরু করেছে..!
কারো কোনো সারা শব্দ নেই… মীম নাহিদকে ধরে আস্তে আস্তে নিয়ে আসলো নদীর পাড়ে… মনে মনে একটু খুশি হলো, দিনের নতুন সূর্য উদয় হবার সাথে সাথে তার জীবনেও নতুন সুখের সূর্য উদয় হবে…
কিন্তু মীম খুশি বেশি সময় থাকলো না…!
মীম নাহিদকে নিয়ে নৌকায় ওঠার সময় পিছনে থেকে হাত টেনে ধরলো রায়হান মন্ডল..!
আরেহ ময়না পাখি কোই যাও আমারে রাইখা..?
মীম একটানে হাত ছাড়িয়ে নিলো..! তুই এইখানে থেকে যা শয়তান,দোহাই লাগে যা…নাহিদ উঠে দাঁড়ালো_ওকে এইভাবে বললে বুঝবে না.. নাহিদ ধাক্কা মেরে ফেলে দিলো রায়হান কে…!
রায়হান উঠে দাঁড়ালো বাঘের মতো হুংকার দিলো আজকে তোকে কে”টে ফেলবো..
লাথি দিলো নাহিদের বুক বরাবর, আবছা অন্ধকার থেকে বেড়িয়ে আসলো রায়হানের দলবল..!
এলোপাথাড়ি ভাবে মারতে নাহিদ কে, নাহিদ পারলো না_ এতো জনের সাথে..! মাটিতে লুটিয়ে পড়লো..
রায়হান মন্ডল এসে পা দিয়ে গলা চেপে ধরলো..!
কু”ত্তা’র বাচ্চা আজকের তোকে কে বাঁচাবে…?
মীম দৌড়ে এসে রায়হান মন্ডলের পা জড়িয়ে ধরলো, কান্না ভেজা কন্ঠে নাহিদের জীবন ভিক্ষা চাইলো..
আকাশ কাঁপানো পৈচাশিক হাঁসি দিলো রায়হান..
চুলের মুঠি ধরে মীমকে টেনে তুললো_ধাক্কা মেরে মীমকে ছুড়ে মারলো তার লোকদের দিকে…!
দুইজন মীমকে ধরে আছে_মীম ছুটে আসার চেষ্টা করছে নাহিদের কাছে, চিৎকার করে কান্না করছে, কিন্তু কেউ তার কান্না শুনলো না,তার আকুতি কারো কানে গেলো না..!
মীম চিৎকার করে বলতে শুরু করলো, আপনি আমাকে রাইখা যাইতে পারেন না, আপনি কথা দিছেন_আমার হাত ধরে প্রতিটা শিশির ভেজা সকালে আর জোছনা মাখা রাতে অনেক পথ হাঁটবেন, অনেক অনেক গল্প করবেন.. আমার আব্বা কে আপনি কথা দিছেন_আমাকে সুখি করবেন,এখন আমাকে দুঃখের সাগরে ভাসিয়ে আপনি ছেড়ে যেতে পারেন না…!
সত্যি কিছু মানুষ দুঃখ নিয়ে জন্মায়, তাদের কপালে বিধাতা সুখ লেখে না, আমি সেই অভাগি, আমি সব হারিয়ে ফেললাম সবসময়ই…
ঝাঁপসা চোখে নাহিদ একবার মীমের দিকে তাকালো,
কিছু বলতে যেতেও বলতে পারলো না, রায়হান নিজের সব শক্তি প্রয়োগ করে গলা চেপে আছে…
হঠাৎ রায়হান গলা থেকে পা নামিয়ে,পা দিয়ে বুকে চেপে ধরলো…
নাহিদ অনেক কষ্টে বললো,এই পারে তোমার হতে পারলাম না, কিন্তু আমি ওইপাড়ে তোমার জন্য অপেক্ষা করবো…!
বিধাতার কাছে আকুল আবেদন করে তোমাকেই চাইবো, ওইপারে আমি তোমার হাত ধরে রাখবো..
নাহিদ আরো কিছু বলতে চাইলো কিন্তু, রায়হান আর সুযোগ দিলো না, হঠাৎ একটা ছুরি ঢুকিয়ে দিলো নাহিদের বুকে… দুই একবার কাঁপুনি দিয়ে নিথর হয়ে গেলো দেহটা…
মীম চিৎকার করে কেঁদে উঠলো,তার গগন কাঁপানো চিৎকারে পাখিরাও ভয় পেলো..! উড়ে গেলো কিছু পাখি…
ভোরের আলো ফুটে গেছে, চারদিকে সূর্যের আলো ঝলমল করছে_কিন্তু মীমের আশার আলো নিভে গেছে.. সকল ইচ্ছা মরে গেছে..!
হঠাৎ পরিবেশ নিঝুম হয়ে গেলো,মীম চুপচাপ সে আর কাঁদছে না, মাটিতে ধুপ করে বসে পড়লো,সে পাথর হয়ে গেছে.. হঠাৎ মীম উঠে দাঁড়ালো ধিরে ধিরে এগিয়ে আসলো নাহিদের নিথর দেহের কাছে, ঝাঁপসা চোখ দুটো এখনো তাকিয়ে আছে তার দিকে,রক্তের বন্যা বয়ে গেছে চারদিকে..!
মীম তাকিয়ে রইলো কিছু সময় চোখ দুটোর দিকে,চোখ দুটোর মনে হয় এখনো তৃষ্ণা মেটে নাই তার প্রেয়সীকে দেখার,মীম আলতো করে চোখ দুটো বন্ধ করে দিলো..!
নাহিদের নিথর দেহের পাশে বসে মাথার হাত বুলাতে বুলাতে দুই চোখের জল মুছে, মুখে বিষাদের হাসি নিয়ে
কানের কাছে মুখ নিয়ে_মীম ফিসফিস করে বললো, আপনি শুনছেন” মানুষ বাঁচে আশায়_কিন্তু আমি বাঁচবো এই নরপশুদের রক্তে স্নান করার নেশায়..!
ওই পাড়ে অপেক্ষা করেন, আমি আসছি খুব তাড়াতাড়ি…!
রায়হান তার লোকদের হুকুম দিলো মীমকে নিয়ে আয়, আমি আজকেই আমার ময়না পাখি কে বিয়া করমু…!
দুইজন লোক টেনে হিচরে নাহিদের কাছে থেকে নিয়ে আসলো মীমকে,জোর করে ধরে নিয়ে যেতে থাকলো মন্ডল বাড়ির দিকে…!
——
নাহিদের প্রাণহীন দেহ পড়ে রইলো নদীর পাড়ে…
বারেক খন্দকারের নৌকা ঘাটে ভিড়তেই,দূর থেকে ছেলেকে পড়ে থাকতে দেখে চিৎকার করে উঠলেন, আল্লাহ এটা কি হয়ে গেলো…? দৌড়ে আসলেন তিনি..
রক্ত মাখা নিথর দেহটা টেনে বুকে জড়িয়ে নিলেন, আমাকে এখন বাবা বলে কে ডাকবে, আমি কাকে বাবা ডাকবো…!
জানিস বাবা আমি ভালো হয়ে গেছি, আমার সব খারাপ ব্যবসা আমি বন্ধ করে দিছি..! এই সুখবর আর তোকে দিতে পারলাম না,তুই আমাকে সত্যি শাস্তি দিলি,এতো পাষান কেমনে হইলি ক্যান এই অসহায় বাবাকে ছেড়ে গেলি..?
ছেলের লাশ বুকে জড়িয়ে এক অসহায় বাবার গগন কাঁপানো কান্না…! বারেক খন্দকারের মনে হচ্ছে_ কানের কাছে এখনো যেন নাহিদ ফিসফিস করে বলছে, বাবা আমি তোমাকে শাস্তি দিবো, বাবার কাঁধে সন্তানের লাশ_এটাই তোমার শাস্তি….?
চলবে….