পাগল প্রেমিকা পর্ব-১

0
3253

পাহাড়ের উঁচুতে ঝুলন্ত অবস্থায় রয়েছে একটি মেয়ে আর অন্য একটি মেয়ে পাহাড়ের উপরে মাটিতে শুয়ে ঝুলন্ত মেয়েটির এক হাত শক্ত করে ধরে ঝুলন্ত মেয়েটিকে বলল।

প্লিজ আমার হাত ছাড়িস না তুই হাত ছেড়ে দিলে তুই পরে যাবি আর আমি তোর কিছুই হতে দিবো না I Promise..৷ ঝুলে থাকা মেয়েটি বলল।

আমাকে ছেড়ে দে আর নয়তো তুই ও নিচে পরে যাবি।
আমাদের মধ্যে একজনের বাঁচা জরুরি লক্ষী বোন আমার প্লিজ আমার হাত ছেড়ে দে।

কিছু তেই না আমি তোর হাত ছাড়বো না তুই চিন্তা করিস না আমি তোকে ঠিক বাঁচিয়ে নেবো তুই শুধু আমার হাত শক্ত করে ধরে রাখ।
আমি দেখছি কাউকে সাহায্যের জন্য পাই কি-না। বলেই মেয়েটি চিৎকার চেচামেচি করতে লাগল বার বার বলছে।
হেল্প কেউ কি আছেন এখানে প্লিজ আমাদের সাহায্য করুন।

কিন্তু এই ঘন পাহাড়ি জঙ্গলে মানুষ কোথা থেকে পাবে তাছাড়া ওরা দুজন কিভাবে আসলো এখানে সেটাও ওরা জানে না।
অনেক চেষ্টা করছে ঝুলন্ত মেয়েটাকে উপরে উঠানোর কিন্তু ওর শক্তিতে কুলাচ্ছে না একা পারবে না। তাই আবারও সাহায্যের জন্য মানুষ কে ঢাকছে মনে হচ্ছে এই জঙ্গলে ওরা দু’জন ছাড়া আর কেউ নেই।
আর একটু হলে দুজনই পরে যেতো। নিজের জীবন বাঁচাতে বোনের জীবন কেড়ে নিতে পারবে না ভাবতে ভাবতে ঝুলন্ত মেয়েটি উপরের মেয়ের হাতে কামড় দিলো। মেয়েটি সহ্য করতে না পেরে হাত ছেড়ে দেয়। এদিকে ঝুলন্ত মেয়েটি ও নিচে পরে যাচ্ছে। উপরে বসে থাকা মেয়েটি চিৎকার দিলো।

বৃষ্টিইইই..……!

চিৎকার দিয়ে সোজা বসে পরে শরীর ঘামছে হাত পা কাঁপছে কপাল থেকে ঘাম বেয়ে পরছে সাথে বার বার শুকনো ঢোক গিলছে। এদিকে আরও একটি মেয়ে পাশ থেকে উঠে বসে ওর চিৎকার শুনে সাথে মেয়েটি রুমের লাইট অন করে আর ওই মেয়েটির হাতে কাঁধে গালে হাত দিয়ে জিজ্ঞেস করছে।

কি হয়েছে তোর এমন করছিস কেন আর বৃষ্টি বলে চিৎকার দিছিস কেনো বৃষ্টি কে স্বপ্নে দেখেছিস নাকি কিরে কথা বল। ঘুম থেকে লাফ দিয়ে উঠলি কেনো আর এত হাঁপাচ্ছিস কেনো কিছু তো বল।
কথাগুলো বলে আবারও মেয়েটির হাত ধরে নাড়াচাড়া দেয়।
পাশের মেয়েটার ডাকাডাকিতে এই মেয়েটার হুশশ ফিরে আর ওকে বলে।

আম… আমাকে পানি দে তো এক গ্লাস। (কাঁপা কাঁপা গলায়)

ওয়েট দিচ্ছি। বিছানা থেকে নেমে বিছানার পাশের টেবিলের উপর থেকে এক গ্লাস পানি ঢেলে মেয়েটার দিকে দিলো আর বলল।

নে তারাতাড়ি খা।
মেয়েটি হাত থেকে গ্লাস টা নিয়ে ঢকঢক করে সম্পূর্ণ পানি খেয়ে নিলো পানির গ্লাস দ্বিতীয় মেয়েটির হাতে দিয়ে জোরে জোরে দীর্ঘ শ্বাস ফেলছে।

দ্বিতীয় মেয়েটা গ্লাস জায়গায় রেখে এসে এই মেয়ে টাকে জরিয়ে ধরে আর বলে।

কি দেখেছিস স্বপ্নে বল? (জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে)

মেয়েটি মাথা নাড়িয়ে হাবোধক ইশারা করতেই দ্বিতীয় মেয়েটি ওকে শক্ত করে জরিয়ে ধরে বলে।

কি দেখেছিস?

আমি দেখেছি বৃষ্টি পাহাড়ের উঁচু থেকে পরে গেছে আর আমি ওকে বাঁচাতে পারিনি।
মেয়েটি ওর চুলে হাত বুলিয়ে দিয়ে বলল।

তুই সারাদিন বৃষ্টি কে নিয়ে ভাবিস তাই ওকে স্বপ্নে দেখেছিস বৃষ্টি ঠিক আছে সুস্থ আছে কাল সকালে ঘুম থেকে উঠে ওর সাথে কথা বলে নিস কেমন এখন ঘুমা সকালে আবার আমাদের অনেক কাজ।

ঠিক বলছিস তুই চল ঘুমাই আর আমার জন্য তোরও ঘুমের Disturb হলো সরি।

ওই চুপ কর আর নয়তো বৃষ্টির মতো আমিও লাথি দিয়া তোরে নিচে ফালাই দিমু।

কাল তাপ্পির গায়ে হলুদ আর আমি আমার মাজা ভাঙতে চাই না তুই শান্তি মত ঘুমা আমিও ঘুমাই।

তারপর একজন আরেকজনের উপর গাত পা দিয়ে ঘুমিয়ে পরল।

সকাল হয়েছে সেই কখন এইদিকে এদের দুই মহারানীর ঘুম থেকে উঠার কোনো খবর নেই।
ভেতর থেকে বন্ধ দরজা খুলতে পারে আমাদের হ্যান্ডসাম ও দুষ্ট বয় কাব্য.!
বাহির থেকে দরজা খুলে রুমের ভেতরে ঢুকে নাহিদ, কাব্য, অপূর্ব, বর্ষাও রিমা’র কানের কাছে গিয়ে দিলো চিৎকার।

আহহহহহহহহহহহহহহহহহহ.!

ওদের তিনজনের চিৎকার শুনে লাফ দিয়ে উঠে বসে বর্ষা আর রিমা।
দু’জনেই চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছে ওদের দিকে তখন কাব্য বলল.

কিরে মহারানী ও রাজরানী এখন তো উঠ আর কত ঘুমাবি ভুলে গেছিস নাকি তোরা আজ তনিমার হলুদ অনুষ্ঠান সন্ধ্যায় বাড়ির কাজকাম করবে কে এভাবে তোরা পরে পরে ঘুমালে বল শুনি।

বর্ষা আর রিমা বিছানা থেকে নেমে কাব্য আর নাহিদের সামনে এসে বলল।

তাপ্পির বিয়ে সেটা আমরাও জানি তাছাড়া কাজকাম করার জন্য ডেকোরেশনের লোক আসবে আর বাড়ির বড়রাও তো আছে। আমাদের দায়িত্ব হচ্ছে সাজুগুজু করা আর আমরা তাই করবো যা সর তোরা সামনে থেকে ঘুম থেকে তোদের তিন বাঁদরের চেহারা দেখলাম নিশ্চয়ই আজ দিনটা খারাপ যাবে। (বর্ষা বলল বর্ষার সাথে তালে তাল মিলিয়ে রিমা ও বলল)

ঠিক বলছিস তুই। (রিমা)

রিমার কথা শেষ না হতেই কাব্য খোপ করে রিমার চুল ধরে টান দেয় আর বলে।

কি কইলি তুই টিমটিম কি ঠিক বলছে ওই শয়তানের হাড্ডি টায়?

আহ ভাইয়া ছাড় ব্যাথা লাগছে তো চুল গুলো ছিড়ে ফেলবি নাকি আমার এত্ত ভালোবাসার চুল।
কাব্য রিমার চুল ছাড়তেই রিমা চুলে হাত বুলাতে বুলাতে বলল।

হো তোদের তো ভালোবাসা টিকে নয় আবার? (নাহিদ))

কি বললি তুই ভাইয়া.. (বর্ষা)

কিছুই বলে নাই তোরা ফ্রেশ হয়ে নিচে আয় সব ধরনের আয়োজন তো আমাদেরই করতে হবে।

কিসের আয়োজন কোন আয়োজন? (রিমা)

বুঝবি না তোরা এখনও বাচ্চা। (কাব্য)
কথাটা বলে তিনজনেই প্যান্টের পকেটে হাত ঢুকিয়ে সিটি বাজাতে বাজাতে রুম থেকে বেরোতে গেলো।

আমাদের ইনসাল্ট করলো। (রিমা)

তাইতো তো দেখছি আসলে কি জানিস বৃষ্টি চলে যাওয়ার পর থেকে না এদের তিনজনের পেছনে পাখনা গুজিয়েছে আমাদের টিমের একজন কমে গেছে আর ওদের সমান সমান আছে ধ্যাত ভাল্লাগে না আগে তো বৃষ্টির শয়তানি মাথা থেকে তুফানি আইডি বের করে এদের তিনটা কে শিক্ষা দিতো এখন বৃষ্টি নেই আমরাও অসহায়ের মতো ওই ওদের অত্যাচার সহ্য করছি। (বর্ষা)

এই বৃষ্টি কবে আসবো রে চাচ্চু তো বলছে বৃষ্টি তনি আপুর বিয়েতেও আসবে না। ও আল্লাহ তুমি প্লিজ আমাদের বৃষ্টি কে এনে দাও প্লিজ। উপরে তাকিয়ে কথাগুলো বলছে রিমা এদিকে কাব্য তারাহুরো করে রুমে থেকে বেরোতে গেলে অপূর্ব পায়ের সাথে উস্টা খায়। উস্টা খেয়ে কাব্য নাহিদকে ধরতে গেলে নাহিদ সামনে তাকিয়েই আরও একটু সামনে চলে যায়। কাব্য পেছন থেকে নাহিদের শার্টের কলার ধরে টান দেয় যাতে পরে না হয়। এদিকে পেছনে টান অনুভব করে নাহিদ অপূর্বর হাত ধরে। ফল স্বরূপ তিন জনেই মাটিতে পরে যায়।

ঠাসস ঠুসস শব্দ শুনে বর্ষা ও রিমা দরজার দিকে তাকিয়ে দেখে কাব্য, নাহিদ, অপূর্ব ফ্লোরে পরে আছে ব্যাঙের মতো করে।

ওদের এভাবে পরে থাকতে দেখে বর্ষা ও রিমা হাসতে হাসতে মাটিতে বসে পরে হাসি অনেক হয়েগেছে। গাল ও পেট দু’টোই ব্যাথা করছে কিন্তু ওদের হাসি থামছে না মাটিতে গোড়াগুড়ি খাচ্ছে দুজনে।
ওদের এভাবে হাসতে দেখে দাঁতে দাঁত চেপে দাঁত কটমট করছে ওরা তিনজন লজ্জায় মাথা কাটা গেলো ভেবেই ঝটপট উঠে তিনজনেই দিলো উল্টা পাল্টা দৌঁড় ওদের এভাবে দৌড়াতে দেখে বর্ষা আর রিমার হাসি আরও দ্বিগুন বেড়ে গেলো।

টিক তখনই রুমের মধ্যে প্রবেশ করল তনিমা বর্ষা আর রিমাকে মাটিতে গোড়াগুড়ি খেতে দেখে বলল।

তোরা এমন ছাগলের তিন নাম্বার বাচ্চার মতো গোড়াগুড়ি করছিস কেন?

শেষে কি না ছাগলের তিন নাম্বার বাচ্চা তাপ্পি আর কিছু পাইলা না বলার জন্য (বর্ষা হাসি বন্ধ করে বলল)

জানো কি হইছে তাপ্পি ওই বান্দর তিনটায় ঠাস ঠুস কইরা উস্টা খাইয়া পরছে। (কথাটা বলে রিমা আবারও হাসতে শুরু করল)

হয়েছে অনেক হাসছিস এখন যা গিয়ে ফ্রেশ হো ওইদিকে ছেলের বাড়ির লোক এসে পরবে আর এসে তোদের এই অবস্থায় দেখবে তার থেকে ভালো গিয়ে তারাতাড়ি ফ্রেশ হো আর নিচে আয়।

কথাগুলো বলে তনিমা চলে গেলো। ফ্লোর থেকে উঠে দাড়িয়ে রিমা বলল।

ফ্রেশ তো হবোই কিন্তু পরবো টা কি?

আপাতত একটা জামা পরে নে হলুদ তো সন্ধ্যায়। (বর্ষা)

তারপর দু’জনেই চলে গেলো বাথরুমে…

ওরা ফ্রেশ হতে হতে চলুন ওদের পরিচয় টা দেই আপনাদের গল্পের মেইন নায়িকা কে বলবো না গল্প পড়ে বুঝে নিন কে? বৃষ্টি বর্ষা রিমা ওরা তিনজন কাজিন সিস্টার ওদের জয়েন্ট ফ্যামিলি সবাই এক সাথেই থাকে। আর যে বাদর ছেলে গুলো কে দেখলেন ওরা হচ্ছে ওদের ভাই বলতে কাব্য বর্ষার ভাই আর অপূর্ব রিমার ভাই আর নাহিদ ওদের ফুফাতো ভাই নাহিদের বড় আপু ইতালি থাকে পড়াশোনার জন্য ৬মাস পর পড়াশোনা কমপ্লিট করে দেশে ফিরে আসবে। কাব্য অপূর্ব নাহিদ ওরা তিন জন বৃষ্টি রিমা বর্ষার বড় বেশি না এই দুই বছর এক বছরের বড় তাইতো খোঁচা খুঁচি লেগেই থাকে ভাই বোনদের মধ্যে আর বৃষ্টির কোনো ভাই নেই একটা বড় বোন ছিলো একটা এক্সিডেন্টে মারা গেছে।
ও আরও একটা কথা তো বলাই হয়নি।
উপরে তাপ্পির কথার আগামাথা হয়তো বুঝেননি আজ হলুদ আর ছেলের বাড়ির লোক সকালেই আমাদের বাড়ি কেনো আসছে ভাবছেন তাদের আসার কথা সন্ধ্যায়। আসলে আমাদের হবু দুলা ভাই এর বাড়ি অনেক দূরে তাই দুই ফ্যামিলি মিলে ডিসিশন নিয়েছে হলুদের অনুষ্ঠান বিয়ে সব আমাদের বাড়ি থেকেই হবে৷ বিয়ে হয়ে গেলে বউ নিয়ে চলে যাবে তাই উনারা সকাল সকাল আসবেন। এখন চলুন গল্পে ফিরে আসি।

বর্ষা রিমা রুম থেকে বের হয়ে নিচে চলে আসে।
বর্ষা পরেছে পিংক কালারের গোল জামা আর রিমা পরেছে নীল কালারের গোলজামা।
বর্ষা নিচে এসে কাউকে খুঁজছে সেটা দেখে রিমা জিজ্ঞেস করল।

ওই তুই কাকে খুঁজছিস?

বড় চাচ্চুকে.! (বর্ষা)

আমি দেখছি ওই বাহিরে সোজা গিয়ে ডানে তারপর বামে আবার সোজা গিয়ে ডানে তারপর বামে তারপর একদম সোজা। (অপূর্ব)

তুই বর্ষা রে পুকুর ঘাটের রাস্তার কথা বলছিস কেন? (রিমা)

তোর বাপের মাথা। (বর্ষা)

কি বললি আমার বাপ তোর কি হয়? (অপূর্ব)

আল্লাহ গো উল্টা পাল্টা কি বলে ফেললাম। (মনে মনে)
ফুপা হয়।

নিজের ফুপাকে এই কথা বলা দাঁড়া এখনই গিয়ে আব্বুকে বলতাছি। (অপূর্ব)

কি কবি আর আমি কি বলছি? (বর্ষা)

এই যে একটু আগেই তো বললি তোর বাপের মাথা। (অপূর্ব)

আমি যে এই কথা বলছি তোর কাছে কোনো প্রমান আছে? ( বর্ষা ভ্রু নাচিয়ে জিজ্ঞেস করল)

প্রমান নাই কি রিমা তো শুনছে ও সাক্ষী দিবো। (অপূর্ব)

বর্ষা রিমার দিকে ঘুরে রুমাকে জিজ্ঞেস করল।
তুই সাক্ষী দিবি?

আমি কি সাক্ষী দিমু আমি তো এনে ছিলামই না। বলে দিলো দৌড়.

  • আরে তোর সাক্ষী তো পলাইছে এখন কি বলবি?

তোরে দেইখা লমু পরে। (অপূর্ব)

পরে দেখবি কেন এখনই দেখ তোর সামনেই তো দাঁড়াই আছি। (বর্ষা)

অপূর্ব বর্ষার দিকে তাকিয়ে রাগে গজগজ করতে করতে চলে গেলো তারপর বর্ষা আবারও

#পাগল_প্রেমিকা (উপন্যাস)
#শারমিন_আক্তার_বর্ষা
#পর্ব_০১

চলবে?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here