পাগল প্রেমিকা পর্ব-১৮

0
489

#পাগল_প্রেমিকা
#শারমিন_আক্তার_বর্ষা
#পর্ব_১৮
________
অভ্রর কথায় নিলয় দাঁড়িয়ে গেলেও ওর মনটা চলে গেছে সেই মেয়ের সাথে.!
কিছুক্ষণ পর.!
সবার মাঝখানে স্টেজের সামনে দাঁড়িয়ে আছে কাব্য নাহিদ অপূর্ব আর ওদের তিনজনের দিকে সবাই ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে আছে ওরাও সবাই দিকে তাকিয়ে আছে। ওদের তিনজনকে এভাবে নাচতে দেখে অনেকটাই অবাক হয়েছে সবাই আর কাব্য কে তনিমা কিছু একটা বলার জন্য ডাকলে হঠাৎ আবারও স্পিকারে গান বাজতে শুরু হয়।
🎶🎶🎶🎶
Bano ki mehndi kya kehna Bano Ka Joda kya Kehna Bano Lage Hai Phoolon Ka Gehna.🎶🎶
Bano Ki aankhen Kajrari Bano Lage sabse pyari Bano Pe Jaaon Mein vaari vaari…🎶🎶
গান বাজছে শুনে সবাই অবাক হয় সাথে সামনে তাকাতেই দেখল কাব্য ও নাহিদের পেছন দিয়ে দুইটা ছেলে আর একটা মেয়ে নাচতে নাচতে আসছে। তনিমা ওদের দেখে অবাক হয়ে বলল।
“ওরা কারা.?”
বর্ষা রিমা তনিমার দিকে তাকিয়ে বলল।
ওরা তো নিরব মাহিম আর জুম্মা তিনজনেই বৃষ্টির বেস্ট ফ্রেন্ড.! এত রাতে আসছে কেনো বুঝলাম না হলুদের অনুষ্ঠান তো প্রায় শেষ। রাত বাজতে চলেছে ১১ টা। বর্ষা রিমা দু’জনেই দু’জনের দিকে তাকাচ্ছে। কিছুক্ষণ পর ওদের তিনজনের পেছন থেকে ওই ডান্সার মেয়েটা নাচতে নাচতে বেরিয়ে আসলো আর তাকে দেখে নিলয় তো মহা খুশি হলো আর বলল।
“ওই তো ও চলে আসছে আবার.!
মেয়েটাকে দেখে নিলয় এর মেয়ে বন্ধুদের কপাল কুঁচকে যায়। অভ্র নিলয়ের কাঁধে হাত রেখে বলল।
” তোর ভালোবাসার টানে ফিরে আসছে নাচ শেষ হলে কথা বলিস এখন চুপ করে দাঁড়িয়ে থাক ”
তনিমা রিমাকে জিজ্ঞেস করল এই জুম্মা সেই জুম্মা না?
রিমা বলল. হ্যাঁ তাপ্পি এই সেই জুম্মা মানে আমাদের কাব্যর গার্লফ্রেন্ড আর বৃষ্টির বেস্ট বেস্ট ফ্রেন্ড!
কাব্য জুম্মাকে দেখে খুশি হলো আর ওদের সাথে গিয়ে নাচতে শুরু করল।
Ho hooo hooooo.🎶🎶
Bano ki Saheli Resham ki Dori Chhup Chhup ke sharmaaye dekhe chori chori. Ye mane ya na mane main to ispe mar geya🎶🎶
Ye ladki hay Allah Hayy Hay re Allah🎶🎶🎶

নিলয় মুগ্ধ হয়ে মেয়ে টাকে দেখছে। এদিকে একটা ছেলে শুরু থেকে মেয়ে টা কে ঘুরছে মেয়েটা জানেও না। নিরব মাহিম জুম্মা আহা কি নাচ সাথে কাব্য অপূর্ব নাহিদ ও তাল মিলিয়েছে। নিলয়কে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে অভ্র নিলয়ের কানে কানে বলল.

” এভাবে তাকিয়ে থাকিস না ভাই পরে দেখবি তোরই নজর লেগে যাবে ”

কথাটা বলে অভ্র দাঁড়িয়ে হাসতে শুরু করল। অভ্রর হাসি দেখে শুভ নিলয়কে বলল.

” যেভাবে তাকিয়ে আছিস মনে তো হচ্ছে এখনই আসতো গিলে খাবি ”

শুভর কথায় নিলয় মাথা ঘুরিয়ে চোখ ছোটো-ছোটো করে ভ্রু কুঁচকে তাকায়। যা দেখে শুভ চুপ হয়ে যায় অন্য দিকে ঘুরে মেয়েটার দিকে তাকিয়ে বলে।

“মেয়েটা কিন্তু সেই জোস ”

যা শুনে নিলয় এর প্রচুর রাগ হলো আর সাথে সাথে শুভর পাথায় লাথি মেরে বলল।

” তুই কেনো জোস বলবি বললে আমি বলবো. ”

নিলয় এর এমন আচরণ দেখে তিয়া বলল.

” আহা গো দরদ উথলিয়ে পরছে এখনই. ”
কথাটা বলেই একটা মুখ ভেংচি দিলো। নিলয় তিয়াকে কিছু বলতে যাবে তখনই অভ্র নিলয়ের হাত ধরে চোখ দিয়ে ইশারা করে কিছু না বলার জন্য নিলয়ও মুখ ভাড়ি করে অন্য দিকে ঘুরে যায়। ওইদিকে রিমন পাশে হবু বউ রেখে কিভাবে পারে একটা ডান্সার মেয়ের দিকে তাকিয়ে থাকতে হুহহ একেই বলে লু********চা।
এদিকে হলুদের অনুষ্ঠান তো শেষের দিকে সবাই হলুদ দিয়ে চলে গেছে এখন শুধু কাব্য ওরাই বাকি ওরা হলুদ ছুঁইয়ে দিলেই তনিমা আর রিমনকে বাড়ির ভেতরে নিয়ে যাওয়া হবে। কিন্তু ওদের তো ফুর্তি শেষ হচ্ছে না শুরুতে সবগুলার একটারও খবর ছিলো না এখন শেষের দিকে না জানি কোথা থেকে এসে নাচানাচি শুরু করছে। এদিকে রিমা লক্ষ্য করছে নিলয় শুধু ওই মেয়েটা কেই দেখছে সেটা দেখে রিমা বর্ষাকে বলল.

” দেখ ছেলেটা ওকে কিভাবে দেখছে.?”

রিমার কথা শুনে বর্ষা রিমাকে বলল।

“সেটা আমি শুরুতেই দেখেছিলাম আমি বলেওছি কোনো লাভ নাই এখন তবুও যদি তাকিয়ে থাকে আমি কি করতে পারি বল. ”

বর্ষার কথা শুনে রিমা বলল।

” বেয়াই তো লাগে যাই একটু খোঁচা দিয়ে আসি.”

বলেই রিমা হাঁটতে শুরু করলে বর্ষা রিমার হাত ধরে নেয় আর বলে।

“তুই আবার কি করবি টিমটিম এর বাচ্চা”

রিমা একটু রেগে জবাব দিলো।

“দেখ না কি করি আর আমাকে একদম টিমটিম বলবি না হুহহহ আমার নাম ভুলে যাস নাকি রিমঝিম ” রিমঝিম রিমা” না কি টিমটিম.”

কথাটা বলে মুখ ভেংচি দিয়ে চলে গেলো রিমা নিলয় অভ্র ওদের সামনে। রিমাকে দেখে অভ্র কোমড়ে এক রাখে আর আরেক হাত থুতনিতে রেখে বলে।

” আরে শালী যে.?”

রিমা ভ্রু নাচিয়ে অভ্রকে বলল।

“ব্যাপার কি ভুলে যাওয়ার রোগ টোগ আছে নাকি শালী আমি আপনার নই ওই যে উনার.” (রিমনকে দেখিয়ে বলল)

রিমা নিলয় এর দিকে তাকালো আর এখনও নিলয় মেয়ে টাকে ঘুরেই যাচ্ছে রিমা নিলয়ের মুখের সামনে চুটকি বাজিয়ে বলল.!

” এভাবে যে তাকিয়ে আছেন ও যদি দেখতে পায় মেরে তক্তা বানিয়ে দিবে তখন আপনার ঘোরাঘোরা মুখ কালা কালা হয়ে যাবে ”
আর আপনি কি ভাবছেন আপনি তাকিয়ে থাকলেই ও আপনার প্রেমে পরে যাবে অসম্ভব জীবনেও না ”

নিলয় রিমার দিকে তাকিয়ে বলল!

” Are you jealous? ”

রিমা নিলয়ের কথায় বিরক্ত হয়ে বলল।

” আমি কেনো jealous হতে যাবো ”

” না তোমাকে দেখে মনে হলো যাইহোক Jealous হলেও লাভ নাই আমি তো ঠিক করেই ফেলেছি আমি বিয়ে করলে ওই মেয়ে কোই করবো ”

নিলয়ের কথা শেষ হলে রিমা একটা তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বলল।

” আহা গো চান্দু ও স্বপ্ন জীবনেও পূরণ হবে না। মানুষ ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে স্বপ্ন দেখে আর উনি জেগে জেগেই স্বপ্ন দেখছে ”

রিমার কথায় নিলয় এখন একটু বিরক্তবোধ করছে একটু কঠোরভাবে রাগী কন্ঠে রিমাকে বলল.

” তুমি জানো আমি কে? আমি কে জানার পর ও Definitely এক পায়ে বিয়ে করতে রাজি হবে আমাক ”

রিমা এখনও হাসলো আর বলল।
” ও জীবনেও অন্য কাউকে বিয়ে করতে রাজি হবে না। তাছাড়া আপনি জানেন ও কে? ”

রিমার কথা শেষ হলে শুভ বলে।

” জানি আমরা ও একজন ডান্সার বিয়ে বাড়িতে নেচে বেড়ায় ‘

রিমা শুভর কথায় শুভর দিকে তাকিয়ে বলল।

“ভুল জানেন ও কোনো ডান্সার নয়”

রিমার কথা শুনে নিলয় ভ্রু কুঁচকে রিমাকে জিজ্ঞেস করল।

” কে ও? ”

নিলয়ের কথা শুনে রিমা বলল।

“কেনো বলবো”?

নিলয় রিমার দিকে একটু ঝুকে বলল।

” কেনো বলবে না। ”

“আমার ইচ্ছে নেই বলার তাই আমি বলবো না হুহহ। ”
কথাটা বলে মুখ ভেংচি দিয়ে ওদের সামনে থেকে চলে যায়। রিমন নিলয়, অভ্র, শুভ, সামিয়া, তিয়া ওদের সবাইকে ওর কাছে স্টেজে যেতে বলছে ওরাও মুড অফ করে ওদের পাশে গিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
ওদিকে ওদের সবার নাচ শেষ সবগুলো দাঁড়িয়ে গল্প করছে আর কি হাসি. হাসছে কথা বলছে হাত এদিক সেদিক করে নাড়াচ্ছে এমন সময় রিমন বলল.!

” হাসিতে ভোলাও মন ”

রিমন এর কথা কারো কান পর্যন্ত গেলো না।
তনিমা বর্ষার দিকে তাকিয়ে বলল।

“সবাই তো চলে গেছে আর কতক্ষণ বসে থাকবো এভাবে ১২টা বাজতে চলল। ”

বর্ষা তনিমার দিকে ঘুরে বলল.

“তাপ্পি সবার হলুদ দেওয়া শেষ শুধু ওরাই বাকি আছে ওরা একবার হলুদ দিয়ে দিক তোমাদের তারপর তোমরা চলে যেও ”

রিমন হাতে টিস্যু নিয়ে গালের হলুদ মুছতে মুছতে বর্ষাকে বলল।

“তাহলে ওদের বলো এসে হলুদ দিয়ে যেতে আমারও এখানে বসে থাকতে প্রবলেম হচ্ছে একটু তারাতাড়ি করো প্লিজ ”

রিমন এর কথায় বর্ষা মাথা নাড়ায় আর কাব্য কে ডেকে বলল.!

” তোমাদের আড্ডা + গল্প + নাচ শেষ হলে এসে হলুদ দিয়ে যাও তোমাদের জন্য আর কত বসে থাকবে তাপ্পি আর দুলাভাই ”

বর্ষার কথা শুনে কাব্য সবাইকে বলল আগে হলুদ দিয়ে আসতে পরে গল্প করা যাবে। সবাই হেঁটে স্টেজের দিকে আসছে সাথে ওই মেয়েটাও আসছে। মেয়েটা লেহেঙ্গা দুই হাত দিয়ে ধরে উঁচুতে উঠিয়ে হাঁটছে দেখতে পুরাই ক্রাশ😍 awesome লাগছে। মেয়ে ওর বা পাশে ঘুরে মাহিমের সাথে কথা বলছে আর হাঁটছে। যা দেখে প্রচুর হিংসে হচ্ছে নিলয় এর স্টেজে উঠে মেয়ে বলল আমি আগে হলুদ দেবো আর বরকেই দেবো।
কথাগুলো মেয়ে টা অপূর্বর দিকে তাকিয়ে বলল। অপূর্ব চোখ দিয়ে ইশারা করতে মেয়ে একগাল হাসি দিয়ে লেহেঙ্গা ছেড়ে দিয়ে সোজা বরের সামনে গেলো। রিমন মাথা নিচু করে রেখেছে। মেয়েটা রিমনের সামনে হালকা ঝুঁকে গিয়ে হলুদের বাটি থেকে হাতে হলুদ নিচ্ছে আর তখনই রিমন মাথা উঁচু করে মেয়েটার দিকে তাকালো খুব কাছ থেকে দেখছে সে মেয়েটাকে।
মেয়েটার দুইপাশ দিয়ে মুখের সামনে চুল এসে পরছে আছে দেখতে বিষণ কিউট লাগছে যা রিমনকে মুগ্ধ করছে। দুই হাতে হলুদ নিয়ে মেয়েটা মাথা উঁচু করে রিমন এর মুখের দিকে তাকাতেই মেয়ের মুখের হাসি মলিন হয়ে গেলো। এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে রিমন এর দিকে মেয়েটার দুই চোখ পলকেই পানিতে ছলছল করছে দুই চোখের কার্নিশে পানি জমেছে। রিমন মেয়েটার মায়া ভরা দুই চোখের দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। কিছুতেই বুঝতে পারছে না এতক্ষণ যে হাসিখুশি নাচতে ছিলো সে মেয়েটার চোখে হঠাৎ জল কেনো? রিমনের দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে চোখের কার্ণিশ বেয়ে এক ফোঁটা পানি গড়িয়ে পরে যা শুধু রিমন দেখতে পায়। সবাই অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে সবার আগে হলুদ দিবে বলে গেলো আর দুইমিনিট ধরে এভাবে সং এর মতো দাঁড়িয়ে আছে। বর্ষা মেয়েটা কে বলল।

“ম্যাডাম আপনি কি হলুদ দিবেন আপনি হলুদ দিলে বাকিরাও সুযোগ পাবে। ”
বর্ষার কথায় মেয়েটার হুশশ ফিরে মেয়েটা হলুদ না দিয়ে উঠে সোজা উঠে দাঁড়ায়। যা দেখে বর্ষা আবারও বলে কি হলো হলুদ দে. মেয়েটা বর্ষার দিকে ঘুরে তাকালো বর্ষা রিমা স্পষ্ট দেখতে পেলো মেয়েটার চোখে পানি। রিমা বলল.

“তুই কাঁদছিস কেন কি হয়েছে? ”

রিমার কথা শুনে সবাই মেয়েটার দিকে তাকালো।

দুই চোখের পানি টপটপ করে পরছে এমন সময় মেয়েটা মুখ দিয়ে কিছু বলতেও পারছে না।
মুখ থেকে জিহ্বা বের করে জিহ্বা দিয়ে একবার ঠোঁট ভিজিয়ে নিলো আর দুইচোখ বন্ধ করে চোখ খুলে তোতলিয়ে বলল।

” আআ..মম… আআআ.. আ..আআম”

তনিমা বিরক্ত হয়ে বলল!

” কি আ আ আ করছিস কাঁদছিস কেন কি হয়েছে? ”

মেয়েটা তনিমা আর বর্ষার দিকে তাকিয়ে বলল।

“আ.. আমার হলুদে এলার্জি আছে আমার হাত চুলকাচ্ছে আ…মমি আসছি! ”

কথাটা বলেই মেয়েটা পেছনে ঘুরে লেহেঙ্গা আবারও দুই হাত দিয়ে উঁচু করে তুলে দিলো দৌঁড় কাউকে কিছু বলার সুযোগই দিলো না সবাই অবাক হয়ে ওর ছুটে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছে। সব থেকে বেশি অবাক হয়েছে তো রিমন। কিছুদূর যেতেই মেয়েটার সাথে টেবিলের সাথে ধাক্কা লাগে। ধাক্কা লাগার ফলে একটা কাঁচের গ্লাস নিচে ফ্লোরে পরে ভেঙে চুরমার হয়ে যায়। আর সেই গ্লাসের উপরই মেয়েটার পা পরে যায়। মেয়েটার পায়ে এক টুকরো কাচ ভিদে যার ফলে পা ফুটে রক্ত বের হতে থাকে। কাচ ভিদার সাথে সাথে মেয়েটা “আহহহহহ” বলে চিৎকার দিয়ে পা উঁচু তে তুলে ফেলে। চারদিকে উজ্জ্বল লাইটের আলোতে সবাই সবটা স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছে পা থেকে রক্ত বের হচ্ছে মেয়েটা টেবিলের উপর এক হাত রেখে অন্য হাত দিয়ে পায়ের ভেতর থেকে কাচের টুকরো বের করার চেষ্টা করছে। মেয়েটাকে এমন করুণ অবস্থা দেখে, বর্ষা, রিমা, নাহিদ, অপূর্ব, কাব্য, তনিমা, জুম্মা সবাই একসাথে মেয়েটার নাম ধরে চিৎকার দিলো.!

—বৃষ্টিইইইই

ওদের সাত জনের মুখে এক নাম বৃষ্টি শুনে সবাই চমকে যায় আর মেয়েটার দিকে তাকায় মানে কি?
বৃষ্টি পা থেকে কাঁচের টুকরো বের করে ফেলে দেয় আর পেছনে স্টেজের দিকে ঘুরে একবার রিমনের দিকে তাকালো তারপর আবারও দিলো দৌঁড়।

সামিয়া, তিয়া, অভ্র, শুভ, নিলয় সবাই জেনো ৪৪০ বোল্টের শকট খেয়েছে আর রিমন তো ৮৮০ বোল্টের শকট খেয়েছে। কারণ ওরা সবটাই জানে বৃষ্টি বর রিমনের কথা আর বাকি বর্ষার মুখে শুনেছে ওরা তো খুশিই ছিলো বৃষ্টি বিয়েতে আসেনি ভালোয় ভালোয় বিয়ে টা হয়ে যাবে কিন্তু ওরা কেউ ভাবেইনি এই মেয়েটা বৃষ্টি। পেছন থেকে বৃষ্টি কে সবাই দাঁড়াতে বললেও বৃষ্টি শোনেনি সোজা চলে যায়। জুম্মা পেছনে স্টেজের দিকে তাকিয়ে বর্ষাকে কিছু জিজ্ঞেস করতে যাবে ঠিক তখনই ওর চোখ গেলো তনিমার পাশে বসে থাকা রিমন হাসান এর উপর যা দেখে জুম্মার বুঝতে বাকি রইল না বৃষ্টি এমন করে চলে গেলো কেনো? কাব্য বৃষ্টির পেছনে যেতে নিলে জুম্মা কাব্য কে থামিয়ে বলে। তোমাদের কাউকে যেতে হবে না আমি গিয়ে দেখছি তোমরা এখানেই থাকো কেউ এসো না। (রিমন কে বৃষ্টি ছাড়া একমাত্র জুম্মা দেখেছে রিমন এর ছবি)

জুম্মা কথাগুলো সবাইকে বলে বৃষ্টির পেছনে ছুটে যায়। জুম্মাকে এভাবে যেতে দেখে তনিমার সন্দেহ হয় গেছে ঠিক আছে যাওয়ার আগে অন্য দের যেতো বারণ করলো কেনো? জুম্মা ছুটে যেতে দেখল বর্ষা পেছন থেকে জুম্মা কে ডেকে বলল।

“জুম্মা দাঁড়া আমিও যাবো”

বর্ষা এক পা বাড়াতে নিলেই পেছন থেকে তনিমা বর্ষাকে থামিয়ে বলে।

“তোকে যেতে হবে না আমি দেখছি গিয়ে”

বর্ষা শুরুতে তনিমাকে বলে।
“তাপ্পি তুমি কেনো যাবে তুমি বসো ভাইয়ার সাথে আমি যাচ্ছি তো”
কিন্তু তনিমা বর্ষার কথায় রাজি হলো না বললো ওই-ই যাবে। কথাটা বলে তনিমা স্টেজ থেকে নেমে হাঁটতে শুরু করে। নিলয় পাথরের মতো দাঁড়িয়ে আছে ভাবতেও পারছে না যাকে প্রথম দেখেই মন হারিয়ে ফেলল সে কি না রিমন মানে Seriously রিমন এর পাগল প্রেমিকা। তিয়া রিমন এর পাশে দাঁড়িয়ে কানে কানে বলল।

“তোর পাগল প্রেমিকা বৃষ্টি তোর শালীকা হয়ে গেলো ভাবা যায়” কথাটা বলেই মুচকি হেসে চলে গেলো।

ওইদিকে বৃষ্টি সিঁড়ি দিয়ে দৌড়াতে দৌড়াতে ছাদে চলে যায়। রাতের অন্ধকারে ঝাড়বাতির লাইট একবার জ্বলছে একবার নিভছে। বৃষ্টি ছাঁদের মাঝখানে ফ্লোরে হাঁটু গেঁড়ে বসে হাউমাউ করে কাঁদছে পেছন থেকে জুম্মা এসে বৃষ্টি কে জরিয়ে ধরে। বৃষ্টির কান্না দেখে জুম্মা বৃষ্টি কে থামানোর চেষ্টা করছে কত কিছু বলছে কিন্তু বৃষ্টির কান্না থামছে না। এমন সময় তনিমা ছাঁদের দরজার সামনে চলে আসে ভেতরে ঢুকতে যাবে তখনই বৃষ্টি মুখে কথা শুনে দরজার আড়ালে দাঁড়িয়ে পরে বৃষ্টি চোখের জল মুছতে মুছতে বলছে।

– বাংলাদেশে এত এত মেয়ে থাকতে শেষে আমার তাপ্পিই কেনো? আমার রাইটার বাবুকে যাকে আমি নিজের থেকেও ভালোবাসি সেই রাইটার বাবু সে কি না আমারই তাপ্পির হবু বর রিমন হাসান। তুই আমাকে কি বুঝাতে চাচ্ছিস তুই শোন জুম আমারই চোখের সামনে আমারই প্রিয় মানুষ আমার বড় বোনের স্বামী হয়ে যাবে আমি কি করে সহ্য করবো এই কষ্ট আমি কি করে রিমনকে বড় বোনের স্বামী হিসাবে মেনে নেবো কি করে ওর সামনে যাবো কি করে দুলাভাই বলে সম্মোধন করবো আমি পারবো না রে এটা সহ্য করতে এর থেকে তো মরে যাওয়া অনেক ভালো আমি যাকে ভালোবেসে তার ফিরে আসার অপেক্ষায় দিন গুনছি সে কিনা বর সেজে এসেছে আমার তাপ্পিকে বিয়ে করতে জুম এই কষ্ট সহ্য হওয়ার নয় রে আল্লাহ অন্য কোনো মেয়ে হলে হয়তো আমার এত কষ্ট হতো না কিন্তু তাপ্পি আমি মানতে পারবো না জুম।
বৃষ্টি কে পাগলের মতো করতে দেখে জুম্মা বৃষ্টি কে জরিয়ে ধরে আর বলে।
– কাঁদিস না পাগলি এভাবে আমিও তো জানতাম না তোর রিমনই তোর তাপ্পির হবু বর। ওরা সকালে আসছে আমি তো আসতামই না তুই আসবি না বলে। কিন্তু তুই তো আসলি আমাকেও নিয়ে আসলি আমি যদি সকালে আসতাম তাহলে তোকে আসতে বারণ করতাম এখন এভাবে পাগলের কাঁদিস না যে কেউ চলে আসতে পারে চুপ কর। চল রুমে চল তোর পায়ে আবার ইনফেকশন না হয়ে যায়। বৃষ্টি জুম্মা কে শক্ত করে জরিয়ে ধরে কেঁদেই যাচ্ছে এ কান্নার শব্দ জেনো তনিমার কলিজায় গিয়ে আঘাত করছে। তনিমা সাথে সাথে হেঁটে ওখান থেকে চলে আসে ওর আব্বুর রুমে আর আব্বু রুমে কি কাজ জেনো করছি মেয়েকে দেখে দাঁড়িয়ে মেয়ের কাছে আসে আর তনিমা পেছনে ঘুরে দরজা আটকিয়ে দেয় যা দেখে অবাক হয় মোস্তফা কামাল। ভ্রু কুচকে মেয়ের সামনে আসলো আর মেয়ের সামনে দাঁড়িয়ে চোখের জল মুছে দিতে দিতে বলে।

“বিয়ে তো কাল আজকেই কাঁদছিস কেন আর আজ কালকার মেয়েরা কাঁদে নাকি।”

তনিমা নিজেকে শক্ত করে বলল।

” বাবা আমার তোমার সাথে কথা আছে খুব জরুরি..”

ওইদিকে বর্ষা পায়চারি করছে একবার এদিকে যাচ্ছে আরেকবার অন্য দিকে যাচ্ছে। বৃষ্টি যে বৃষ্টি ওরা সবাই জানার পর ওরাও চুপ হয়ে গেছে। বর্ষা কিছুক্ষণ পর দাঁড়িয়ে এক দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বলল।

“আমি এখানে আর দাঁড়িয়ে থাকতে পারছি না আমি গেলাম রিমা তুই দেখিস ”

বলে দিলো দৌঁড় বৃষ্টির পায়ের রক্তের ছাপ দেখে দেখে বর্ষাও ছাঁদে চলে যায়। এদিকে এখানে অনুষ্ঠান শেষ বলে কাব্য সবাইকে সবার রুমে চলে যেতে বলে। রিমনকে ধরে শুভ আর নিলয়কে অভ্র!

বর্ষা ছাঁদের দরজার সামনে এসে দেখে তনিমা কোথাও নেই ভেতর থেকে কান্নার শব্দ ভেসে আসছে। দৌড়ে ভেতরে যায় সেখানে শুধু জুম্মা আর বৃষ্টি। বর্ষা ভেতরে গিয়ে বলে

“তাপ্পি না তোদের পেছন পেছন এসেছিলো এখানে আসেনি? ”

জুম্মা বর্ষার দিকে তাকিয়ে বলে। না আসেনি হয়তো বৃষ্টির রুমে চলে গেছে।
বর্ষাও বৃষ্টির এমন ভাবে কান্নার কারণ বুঝতে পারছে না বৃষ্টির কাছে গিয়ে বৃষ্টি কে ধরে বারবার জিজ্ঞেস করছে কি হয়েছে কিন্তু বৃষ্টি কান্নার জন্য কিছুই বলতে পারছে না তখন জুম্মা বর্ষাকে সবটা সত্যি সত্যি বলে দেয়। দুলাভাই রিমন হাসন-ই বৃষ্টির রাইটার বাবু শুনে বর্ষারও অনেক রাগ উঠে কিন্তু তাকে কিছুই বলা যাবে। বর্ষা জুম্মা বৃষ্টি কে ধরে রুমে নিয়ে যায় সেখানে আগে থেকেই রিমা দাঁড়িয়ে ছিলো ফাস্টএইড বক্স নিয়ে। বৃষ্টি কে রুমে নিয়ে বিছানায় বসাতেই রিমা আর বর্ষা ওর পায়ে ব্যান্ডেজ করে দেয়। ওইদিকে তনিমা ওর রুমের জানালার পাশে বসে চাঁদের দিকে তাকিয়ে আছে পলকহীন ভাবে। এমন করুণ অবস্থা রিমন, আর নিলয়ের ওরাও সবাই চুপচাপ বসে আছে মনে হচ্ছে শোকসভা পালন করছে সবাই।
বৃষ্টিকে রুমে নিয়ে আসার কিছুক্ষণ পর সবাই এসে দেখা করে গেছে বৃষ্টির সাথে শুধু রিমন, নিলয়, অভ্র, শুভ, তিয়া, সামিয়া ওরা আসেনি।
রাত বাজে ১টা বৃষ্টির রুমে সবাই বেলকনিতে বসে আছে বৃষ্টির সাথে।
বৃষ্টির অতিরিক্ত কষ্ট বুকে চাপা পরলে বৃষ্টি গান করে তাতে ওর মন হালকা হয়। বৃষ্টি বেলকনিতে বসে আছে সাথে রিমা বর্ষা জুম্মা। বৃষ্টি রিমাকে বলল ওর গিটার টা ওকে দিতে বজ ৬মাস পর বৃষ্টি আনার গান গাইবে। রিমা বৃষ্টি কে গিটার এনে দিতেই বৃষ্টি গিটার বাজাতে শুরু করে গান গাইছে… 🎶🎶
Aksar Is Duniya mein Anjaane Milte Hain🎶
Aksar Is Duniya Mein Anjaane Milte Hain. 🎶
Anjaani Raahon Mein Milke Kho Jaate Hain
Anjaani Raahon Mein Milke Kho Jaate Hai.
Lekin Hamesha wo Yaad🎶 Aate Hain. 🎶
Aksar Is Duniya mein Anjaane Milte Hain🎶
Aksar Is Duniya Mein Anjaane Milte Hain.
Anjaani Raahon Mein Milke Kho Jaate Hain
Anjaani Raahon Mein Milke Kho Jaate Hai.
Lekin Hamesha wo Yaad Aate Hain. 🎶🎶
Aksar Is Duniya Mein.🎶🎶

বৃষ্টির গানের কন্ঠই বলে দিচ্ছে ও ওর মনের ভেতর কত কষ্ট চেপে রেখেছে। বৃষ্টির পাশে জুম্মা বর্ষা, রিমা আছে, রিমন এর পাশে ওরা সবাই আছে কিন্তু তনিমা ও একা ওর পাশে কেউ নেই একা বসে কাঁদছে নিজেকে এতক্ষণ সামলাতে পারলেও বৃষ্টির গান শুনে আর নিজেকে আটকাতে পারেনি। উপরে ওরাও বেলকনিতে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে বৃষ্টির গান শুনছে!
রাত বাজে ২টা বর্ষা রিমা জুম্মা বৃষ্টিকে ছাড়া রুমে যাচ্ছে না ঘুমাবে তো দূরের কথা বৃষ্টি ওদের কথা ভেবে ওদেরকে নিয়ে রুমে গিয়ে শুয়ে পরে।
পরেরদিন…

চলবে?

[ আসসালামু আলাইকুম ]
রি-চেইক করা হয়নি ভুলক্রটি ক্ষমা ও সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। ধন্যবাদ
সরি দেরিতে পোস্ট দেওয়ার জন্য একটু সমস্যার জন্য গল্প লিখতে পারছিলাম না।
অনেকেই বলেছে আমি গল্প ছোটো করে লিখি তাই এটা বড় করে দিলাম এরপরও যদি নয় তাহলে বলবেন আরও বড় করে লেখবো। লেখতে লেখতে উগান্ডা চলে যাবো হুহহ।😒
আশা করি গল্পটি আপনাদের কাছে ভালো লাগবে। গল্পটি পড়ে কেমন লাগে ভালো না মন্দ অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবেন। পরের পর্বে হবে ধামাকা….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here