পাগল প্রেমিকা পর্ব-৪২

0
447

#পাগল_প্রেমিকা
#পর্ব_৪২
#Sharmin_Akter_Borsha
___________
আমি যখন বারবার হন্তদন্ত হয়ে ছুটে আসতাম জিজ্ঞেস করতাম কে কল দিয়েছে এমন বিহেভ করছো কেনো কি হয়েছে। তখন তুমি কি বলতে অফিস থেকে কল এসেছে অফিসে কাজের চাপে ডিপ্রেশনে আছি। তখন কেনো বলোনি মুনিয়া তোমাকে ব্লাকমেইল করছে, আমি তো তোর সম্পর্কে সবই জানতাম তাহলে লুকানোর প্রয়োজন টা ছিল কেনো? আমাকে তখন বললে আমি এডজাস্ট করে নিতাম কিন্তু এখন আমি এইসব শুনতে চাই না আমি জাস্ট পাগল হয়ে যাবো। তুই আমাকে পাগল করে দিবি।
বলতে বলতে মেঝেতে বসে পরেছে।

ওইদিন মুনিয়া এইবাড়ি থেকে চলে তো গিয়েছিল কিন্তু রিমনের জীবন থেকে যায়নি। সে অতীতে রিমনের যতগুলো মেয়ের সাথে সম্পর্ক ছিল সবগুলোকে একে একে খুঁজে বের করল। তাদের সম্পর্ক কেমন ছিল সবকিছু খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে জানতে লাগল। কারো সাথেই রিয়েল তেমন সম্পর্ক ছিল না সবাই ছিল অনলাইন গার্লফ্রেন্ড। তবে একজন কে মুনিয়া পেয়ে গেলো যার সাথে রিমনের সাথে মোয়ের সকল ভিডিও ও পিকচার ছিল। সেগুলো মেয়ের ফোন থেকে চুরি করে নেয় মুনিয়া আর সেগুলো দিয়েই রিমনকে প্রতিনিয়ত ব্লাকমেইল করে। সে যদি তার সাথে সম্পর্কে না জড়ায় তাহলে ভিডিও পিকচার গুলো বাড়ি সদ্য সবাইকে দেখিয়ে দিবে। ওইবার তো বৃষ্টির জন্য বেঁচে গিয়েছিল তবে এইবার বৃষ্টি ও ছেড়ে চলে যাবে। কল দিয়ে এইসব বলে কল কেটে দিতো, এতদিন এইসব সহ্য করেছে মুখ বুজে কাউকে কিছু বলেনি। তবে লাস্ট যখন সিদ্ধান্ত নিলো এক দিনের জন্যই তো চায় তারপর তো নিজেই দূরে চলে যাবে সে-ও মুক্তি পাবে। তবে ভাগ্যের কি পরিহাস, কথায় আছে যেখানে বাঘের ভয় সেখানেই সন্ধ্যা হয়। বৃষ্টি উপস্থিত হলো হোটেল রুমের দরজার সামনে। যার কাছ থেকে লুকানোর জন্য এত কিছু সে নিজের চোখে দেখেছে।
রিমন বৃষ্টি কে সব বলার পরও বৃষ্টি রাজি হয়নি এ সম্পর্ক টিকিয়ে রাখার সে সিদ্ধান্ত নিয়ে নিয়েছে, আগে Abortion করাবে পরে ডিভোর্স।

রাতে আর কেউই খায়নি। তবে রিমন রুমে বৃষ্টির জন্য খাবার নিয়ে এসেছিল তা বৃষ্টি ‘ খাবে না ‘ বলে ডিরেক্ট মানা করে দেয়। পুরো রাত দু’জনের একজনও চোখের পাতা এক করেনি৷ মাঝরাতে রিমনের ফোনে মুনিয়া কল দিয়েছিল। ফোনের স্কিনে মুনিয়া নামটা দেখে ফোনটা ফ্লোরে ছুঁড়ে আছাড় মারল। ফোন টা মুহুর্তেই ভেঙে গেলো। আছাড় মারার শব্দে বেলকনির দিকে একবার তাকিয়ে বিছানার উপর উপুড় হয়ে শুয়ে মুখে বালিশ চাপ দিয়ে ধরে কাঁদতে লাগল।

বেলকনিতে দাঁড়িয়ে একটার পর একটা সিগারেট খেয়ে যাচ্ছে এদিকে বৃষ্টির কান্নার আওয়াজ তার কানে পৌঁছাতে জেনো তার কলিজা ছিড়ে যাচ্ছে। সে যন্ত্রণা দূর করতে সিগারেট।

কাঁদতে কাঁদতে বিছানার উপর ঘুমিয়ে যায়৷
এক ঘন জঙ্গলে বৃষ্টি খালি পায়ে পরণে সদ্য সাদা শাড়ি বনের মধ্যে একা একা হেঁটে চলেছে৷ কোথা থেকে এক বাচ্চার কান্নার আওয়াজ ভেসে আসছে, সে আওয়াজের পেছনে ছুটে চলেছে বৃষ্টি, ঘনজঙ্গলের মধ্যে গেলে দেখে একটা বাচ্চা গায়ে জড়ানো সাদা রঙের এক টুকরো কাপড়। বাচ্চা টা এদিক সেদিক হাত ফেলছে আর ‘ মা মা ‘ বলে কাঁদছে , অপলকভাবে তাকিয়ে রইল বৃষ্টি বাচ্চাটার সৌন্দর্যের দিকে বাচ্চার ডাকে ও তার মুখ দেখে মুগ্ধ হয়েছে সে। বাচ্চা টা সামনে বৃষ্টি কে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে বসা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে। গুটিগুটি পায়ে তার দিকেই হেঁটে যাচ্ছে। বাচ্চা টা বৃষ্টির সামনে দাঁড়িয়ে বৃষ্টির এক হাতের একটা আঙুল ধরে নিচের দিকে টান দিলো। বৃষ্টি হাঁটু গেঁড়ে বাচ্চা টার সামনে বসল। বাচ্চা টা বলতে শুরু করল, ‘ তুমি আমাকে চিনতে পারছো না মা। আমি যে তোমারি একটা অংশ তোমার মধ্য থেকে আমি বলছি। মা আমাকে মেরে ফেলো না, আমি এই দুনিয়াতে আসতে চাই আমি তোমার কোলে খেলতে চাই আমি তোমাকে মা বলে ডাকতে চাই মা। আমাকে তুমি মেরে ফেলো না আমি তোমারই অংশ তুমি আমাকে পৃথিবীতে আসতে বাধা দিও না মা। ‘

এরই মধ্যে বৃষ্টি ঘুম থেকে লাফ দিয়ে উঠে বসল। বুঝতে পারল এতক্ষণ সবটা স্বপ্ন দেখছিল। দীর্ঘ শ্বাস ফেলে সামনে তাকালো সিঙ্গেল সোফার উপর আধশোয়া হয়ে ঘুমিয়ে আছে রিমন। পুরো রাত ঘুমাতে পারেনি। বৃষ্টি ঘুমিয়ে ছিল তার পরপর রুমে এসে বিছানায় মাথার কাছে বসে ছিল।
ফজরের আজানের পরপরই নামাজ আদায় করে আল্লাহর কাছে ক্ষমা চায় ও নিজের সন্তানের হেফাজত কামনা করে পার্থনা করে। সোফার উপর গা এলিয়ে দিলে চোখ জোড়ায় ঘুম নেমে আসে। বিছানা থেকে নেমে ওয়াশরুমে চলে যায়। ফ্রেশ হয়ে বের হয়ে দেখে রিমন উঠে গেছে ঘুম থেকে রিমন বৃষ্টির সাথে কথা বলতে আসলে বৃষ্টি রুম থেকে বের হয়ে চলে আসে। রিমনও ফ্রেশ হতে বাথরুমে চলে যায়।

ডাইনিং টেবিলে সকলে একসাথে বসে নাস্তা করছে তখন বৃষ্টি বলল, ‘ আমার সবাইকে একটা কথা বলার ছিল। ‘

বৃষ্টির কথা শুনে মুখের মধ্যে খাবার আঁটকে গেলো রিমন ভেবেছে বৃষ্টি abortion এর কথা বলবে। কিন্তু রিমনকে ভুল প্রমান করে বৃষ্টি বলল।

মা, রিমি, সোহান জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল বৃষ্টির মুখ পানে। মুখটা আগের থেকে শুকনো লাগছে। মা বললেন, ‘ ডাক্তার কি বলেছে মা কাল তো আর আমাকে কিছু জানালে না? ‘

বৃষ্টি নিশ্বাস ফেলে জোর করে হাসার চেষ্টা করে বলল, ‘ ডাক্তার বলেছেন খুশির খবর। ‘

বাস আর কিছুই বলতে হয়নি চেয়ার থেকে উঠে বৃষ্টি কে জড়িয়ে ধরলেন এত আনন্দের খবর টা দেওয়ার জন্য রিমি ও বৃষ্টি কে জড়িয়ে ধরে। সোহান বৃষ্টির মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে দোয়া করে। সবাই অনেক তাদের খুশির সিমা নেই। সোহান নাস্তা খাওয়া রেখে বাজারের উদ্দেশ্য চলে গেলো৷ এত খুশির একটা সংবাদ মিষ্টি না হলে তো চলেই না। রিমন বৃষ্টির দিকে তাকিয়ে আছে কিন্তু বৃষ্টি একবারও রিমনের দিকে ফিরে তাকায়নি।
_______
বৃষ্টি বর্ষার ফোনে মেসেজ দিয়ে বলে এই সুখবরটা বর্ষা খুশিতে গদগদকণ্ঠে বাড়ির সকলে বলল। সবাই এখানেও বেশ খুশি হল। বর্ষা বৃষ্টির ফোনে ভিডিও কল দিলো সবাই বৃষ্টির সাথে কথা বলল। তারা যে কত খুশি হয়েছে তা প্রকাশ করল। বৃষ্টি ও তাদের আনন্দে বিমোহিত হলো।

সন্ধ্যার দিকে বেলকনিতে একা একা দাঁড়িয়ে আছে। ঠান্ডা শীতল বাতাস বইছে খোলা চুলগুলো বাতাসে উড়ছে পেছন থেকে গলা জেড়ে কাশি দিলো রিমন। তাতে বৃষ্টির কোনো হেলদোল নেই। পাশে এসে দাঁড়িয়ে বলল, ‘ আমাকে প্লিজ ক্ষমা করে দাও, ‘

অন্য দিকে তাকিয়ে ইতস্ততভাবে বলল, ‘ ক্ষমা যদি নাই করতাম তবে আজ আমি আপনার বাড়িতে থাকতাম না। ‘

প্রত্যত্তরে রিমন কিছুই বলল না, এতটুকুতেই সন্তুষ্ট যে বৃষ্টি Abortion করাবে না৷ যতক্ষণ বৃষ্টি বেলকনিতে দাঁড়িয়ে ছিল ঠিক ততক্ষণই রিমন বৃষ্টির পেছনে দেয়ালের সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে ছিল। ইচ্ছে করছিল তার বৃষ্টি কে জড়িয়ে ধরতে নিজের জীবনের সব থেকে বড় খুশির খবর পেয়েছে তাও আবার এমন পরিস্থিতিতে।

রুমে ঢুকতে যাবে তখন পায়ে পা লেগে পরে যাচ্ছিল পাশে রিমন বৃষ্টির হাত শক্ত করে ধরল। তাতে বৃষ্টি নিজের হাত ছাড়িয়ে নিয়ে বলল, ‘ আমার আপনার সাহায্যের প্রয়োজন নেই। যে হাত দিয়ে অন্য কাউকে স্পর্শ করেছেন সে হাত দিয়ে আমাকে স্পর্শ করবেন না ‘

বলে রুমে চলে যায়। রিমনও সেখানে একমিনিট দাঁড়ায় না। বাড়ি থেকে বের হয়ে পরে খুব স্পিডে বাইক চালাচ্ছে , রাস্তার সামনে মুনিয়া তার গাড়ি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। গাড়ির সামনে বাইক থামালো। মুনিয়া সামনে এসে আগের ভিডিও পিকগুলো সেই টপিকনিয়ে আবার ছেড়খানি শুরু করে দেয়। এতে রিমন অতিরিক্ত রেগে যায়৷ উল্টো হাতে মুনিয়ার গালে চড় বসায়, থাপ্পড়ের চটে তাল সামলাতে না পেরে মাটিতে বসে পরে। মাটি থেকে টেনে তুলে কালকের ঘটনা মুনিয়া কে বলে। আর মুনিয়া যথেষ্ট বুদ্ধি মতি মেয়ে৷ বৃষ্টি প্রেগন্যান্ট শুনে থমথমে হয়ে দাঁড়িয়ে রয়। আরও কিছু কথা শুনিয়ে রিমন সেখান থেকে চলে যায়। কিছুদূর যাওয়ার পরই বাইক এক্সিডেন্ট করে সেখানে সবাই এক্সিডেন্ট হয়েছে বলে চেচামেচি শুরু করে দেয়। মুনিয়া দৌঁড়ে গিয়ে দেখে সে তো অন্য কেউ নয় রিমন। ধড়াধড়ি করে হাসপাতালে নিয়ে যায়। আইসিইউতে নিয়ে যাওয়া হয় তাকে, মুনিয়া কি করবে বুঝতে না পেরে বৃষ্টির নাম্বারে কল দেয়। তবে বৃষ্টি কল রিসিভ করে না সেজন্য রিমির নাম্বারে কল দেয়। কল রিসিভ করলে রিমনের অবস্থা বলতে রিমি বাড়ি মাথায় তুলে নেয়। সবাই ছুটাছুটি করে হাসপাতালে আসে সাথে বৃষ্টি ও থাকে। আইসিইউর সামনে মুনিয়া কে দেখে বৃষ্টি নিজেকে শান্ত রাখতে না পেরে গালে ঠাস করে চড় বসিয়ে দেয়। হতবাক হয়ে তাকিয়ে রইল বাকিরা চড় মারার কারণ তারা কেউই আন্দাজ করতে পারল না।

ঘন্টা খানিক পর ডাক্তার এসে বললেন।

চলবে?

(কার্টেসী ছাড়া কপি করা নিষেধ)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here