পাগল প্রেমিকা পর্ব-৭

0
607

#পাগল_প্রেমিকা
#sharmin_akter_borsha
#পর্ব_০৭
_____
হাজারও আকুতি মিনতি করার পরে রাজি হলো কাল থেকেই পোস্ট করবে কিন্তু মাঝখান থেকে নয় শুরু থেকে পোস্ট করবে!
আমি প্রথমে না না করছিলাম,,,
পরে কি একটা বুঝাইলো রাজি হয়ে গেলাম সে কাল থেকে গল্প পোস্ট দিবে ইয়াহু আমি তো মহা খুশি like খুশিতে আত্মাহারা! তারপর সে মেসেজ দিলো সন্ধ্যা ৭টায়।
সে– তোমার নাম?
আমি নাম বললাম।
আমি: বৃষ্টি!
আমি নাম বলার সাথে সাথে আমার নাম দিয়া সে আইডির নিক নেইম সেট করলো bristi!
আমিও জিজ্ঞেস করলাম ওনার নাম– আগের আইডিতে একবার বলছিলো কিন্তু ভুলে গেছি তাই আবারও জিজ্ঞেস করলাম!
আমি- আপনার নাম-?
সে– নিলয়!
আমি- ও হে মনে পরছে ওই আইডিতে বলছিলেন ভুলে গেছিলাম।
নিলয় — 🙄
আমি মনে নাই হয়তো কথা যে বলছিল আগের আইডি দিয়া ভুলে গেছে তাই আসমানে তাকাই আছে এই ইমোজি টা দিছে। নিজেই নিজেকে শান্তনা দিলাম।
(শেষ মেসেজ করা)…!

পরে ছেলেটার আইডিতে ঢুকলাম বাহহ প্রথম দেখেই প্রেমে পড়ে গেলাম আর যতটা ফাজিল ভাবছিলাম ততটা ফাজিল নাহ বেশ হ্যান্ডসাম ও ধ্যাত কি ভাবছি আমি নিজেই নিজের মাথায় টুকা মারলাম, ফাজিল না হলেও আসতো একটা বান্দর জন্মের শয়তান ছেলে হুহহহহ.!
আমাকে এইভাবে দেখে বর্ষা রিমা অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে কারণ এই প্রথম আমি এমন করছি কিছুটা পাগলের মতো। ওরা আমার কাছে এসে বসে আমাকে জিজ্ঞেস করলো বেপার কি আর আমিও ওদের থেকে কিছু লুকাই না তাই ওদেরকে সব খুলে বললাম।
রাতে তিনজনেই শুয়ে পরি..

রাত– 11:56pm ………!
হঠাৎ একটা মেসেজ দিলো।

নিলয়- ফোনে কথা বলবে?

আমি তো প্রথমে চরম অভাক হয়েছিলাম মেসেজটা দেখে,,,কিছুক্ষণ আগ পর্যন্ত মেসেজ সিনই করছিলো না আর এখন জিজ্ঞেস করছে কলে কথা বলবে।
এদিকে আমিও না করতে পারি নাই রাজি হইয়া গেছি!

আমি- হ্যাঁ বলতেই পারি বলতে তো আর সমস্যা নাই।

নিলয়– ওকে আমি কিছুক্ষণের মধ্যে কাজ শেষ করে কল দিচ্ছি!

আমি- ওকে.! (বলেই রেডি হলাম সাথে কাশি দিয়ে গলা ঠিক করে নিলাম উঁহু উঁহু)
আমার সাথেই তো আমার বোন বর্ষা রিমা শুয়ে আছে কিভাবে কথা বলবো আমি অতশত না ভেবে ওদের দুজনকে বলে দেই।
ওই শোন তোদের তিনজনকে একটা কথা বলবো!(বৃষ্টি)

কি বলবি বল.! (রিমা)

হুম বল! (বর্ষা)

তারপর বললাম নিলয় আমার সাথে কলে কথা বলতে চায় আর আমিও হ্যাঁ বলে দিয়েছি। চোখ ছোটো ছোটো করে তাকিয়ে আছি ওদের দিকে।
বর্ষা রিমি আমার সামনে এসে আমার দিকে ঝুকে কপালের সাথে কপাল ঠেকিয়ে বলে।
আমরাও শুনবো কি কথা বলিস আমরাও শুনবো তাহলেই কথা বলতে পারবি আর নয়তো চাচুকে বলে দেবো। (বর্ষা, রিমি)
আমি আর কি করতাম ওদের শর্তে রাজি হওয়া ছাড়া আর অন্য কোনো উপায় নাই। এই জন্যই বলে নিজের রুমে একা থাকাই ভালো কিন্তু তিনবোন এক সাথে থাকতে ভালো লাগে তাই নিজের রুমে ওদের নিয়া আসছি আর ওদের রুম খালি আমরা তিনবোন ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে থাকি।
এদিকে হেতির তো খবরই নাই ঘুম আসছে আমার রাত সাড়ে ১২টা বাজে.! তিনজনেই শুয়ে পরি চোখে ঘুম চলে আসছে। আর তখনই হঠাৎ করে ফোনে রিংটোন বেজে উঠলো!

আমি- কেডা রে?

ফোন হাতে নিয়ে ফোনের স্কিনে নাম দেখে খুশি হলাম শুয়া থেকে উঠে বসলাম তারপর কল রিসিভ করে কথা বলতে যাবো তার আগেই সে কথা বলা শুরু করে।
হায়য় আল্লাহ এত কিউট ভয়েস কেন আল্লাহ আমি তো ছবি দেখে ক্রাশ খাইছিলাম আর এহন তো ভয়েস শুনে প্রেমেই পরে গেলাম আল্লাহ এত নেশালো ভয়েস কেন যে কেউ ভয়েস শুনে পাগল হয়ে যাবে আমিও হয়েগেলাম আর কি আল্লাহ মন ভরে শুধু তার কথাই শুনতে লাগলাম আর কিছু জিজ্ঞেস করলে সেটার উত্তর দিচ্ছি অনেক নার্ভাস হয়ে গেছি হাত পা কাঁপতে শুরু করে দিয়েছে অলরেডি। নিলয় হয়তো বুঝতে পেরেছে। কথা বলার মাঝখানে আবার ফিসফিস করে কথা বলতে শুরু করে আর নিলয়ের এই ফিসফিস করে বলা কথা জেনো আমাকে ওর প্রতি দূর্বল করে দিচ্ছে ওর এই ফিসফিস করে বলা কথাগুলো জেনো আমার কান দিয়ে গিয়ে সোজা হৃদয়ে স্পর্শ করছে হায়য়য়য়.! এখন তো মনে হচ্ছে বডি থেকে জান-ই বেরিয়ে যাবে ওর প্রতিটা কথা আমাকে পাগল করে দিচ্ছে আর কথার মধ্যে ও জোরে জোরে নিশ্বাস নিতে শুরু করে সাথে ফিসফিস করে কথা বলা দুটো মিলে ছোটো খাটো একটা স্টক খেলাম নিলয়ের এভাবে জোরে জোরে নিশ্বাস নেওয়া শুনে মনে হচ্ছে হারামী ফিলিংসে হাবুডুবু খাচ্ছে। আর দুনিয়ার যত রোমান্টিক কথা আছে বলা শুরু করছো এদিকে আমি লজ্জায় শেষ সাথে আমার দুইবোন মুখে হাত দিয়ে চোখগুলো রসগোল্লার মতো গোলগোল করে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। না পারছি ওদের থেকে দূরে যেতে না পারছি নিলয়কে কিছু বলতে বা থামাতে।
তারপর দুজনেই কথা বলতে লাগলাম দু’জনে প্রায় ৪ঘন্টা কথা বলছি।
৪ঘন্টায় কি কথা হয়েছে তোমাদের বলা যাবে না হুহহ পার্সোনাল। কথা বলা শেষ না হতেই আমার বলা একটা কথায় কলটা রাগ করে কেটে দেয় নিলয়, পরে সে তিনটা এসএমএস দেয় আমি মেসেজের রিপ্লাই দিতে যাবো তার আগে নিলয় আবার ও কল দেয়। আমিও কল রিসিভ করি তারপর আরও ৩০ মিনিট কথা হয় কি কথা হয় বলা যাবে না হুহহহ। তারপর নিলয় বলে সে এখন কাঁদবে কথাটা বলা মাত্রই কলটা কেটে দেয়।
নিলয় কাঁদবে শুনে আমার অনেক কষ্ট হয় নিজের চোখ বেয়ে নিজেরই অজান্তে পানি গড়িয়ে পরে জানি না কেনো চোখ থেকে জল পরল আর বড় কথা চোখের জল তো সবার জন্য আসে না আপন মানুষের কষ্টে পানি আসে আর নিজে কষ্টে থাকলে পানি আসে আর ওর সাথে এই প্রথম ফোনে কথা বলছি আর তাতেই ওও আমার এত বেশি আপন হয়েগেলো কি করে?
ওর কষ্ট সহ্য করতে না পেরে যে চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পরলো। চোখের পানি মুছে কয়েকটা মেসেজ দিলাম কিন্তু নিলয় ততক্ষণে ফেসবুক থেকে চলে গিয়েছিল মানে অফলাইন হয়ে গেছিলো আর তখন রাত ৪টা বাজে নিলয় চলে যাওয়ার পর কেনো জানি আমার আর ঘুমই আসলো না।
৩ঘন্টায় পুরো কি কি কথা বলছে নিলয় সব কথাই শুনছে বর্ষা রিমা এখন তো ওরাও ফিলিংসে হাবুডুবু খাচ্ছে আর বলছে।
এত রোমান্টিক ছেলে আল্লাহ বৃষ্টি তোর সাথে হেব্বি মানাবে দু’জনের বিয়ে হলে তো সারাদিন রাত শুধু রোমান্সেই ডুবে থাকবি। (বর্ষা)
চুপ কর তুই আর সর ঘুমাবো! (আমি)
লজ্জায় লাল নীল হয়ে গেছে দেখ। (রিমা)
ওদের দু’জনকে ইগনোর করে শুয়ে পরলাম আর ভাবতে লাগলাম এত কি কথা বলছি নিজেও জানি না! নিলয় কথা বেশি বলেছে! আমি তো ওর কথা শুনেছি শুধু। আমাকে দেখে ওরা এত হাসছে মনে হচ্ছে জেনো জোকার দেখেছে।
এদিকে একটু একটু ভালো-লাগা কাজ করছে মনের ভেতর আর আমি নিলয়কে ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে পরি!
এখন থেকে ও প্রতিদিন গল্পটা পোস্ট করে সবাই পড়ে লাইক কমেন্ট লাভ রিয়েক্ট কত কিছু কিন্তু আমি পড়ি না কারণ আমার এই প্রথম পর্ব থেকে ১২পর্ব পর্যন্ত গল্প পড়া নতুন পর্ব থেকেই পরবো!
গল্পটা পোস্ট করেছে দেখে ওকে অনেকবার থ্যাংকস বলেছিলাম ইনবক্সে সাথে কমেন্টেও!
পরেরদিন আমরা বাগান বাড়ি থেকে শহরে চলে আসি তারপরে সারাদিন আমাদের কথা হত না,,, রাতে কথা হত আমি সারাদিন ওকে অনেক বেশি মিস করতাম আর আমি অপেক্ষা করতাম সারাদিন কখন রাত হবে। কারণ রাত হলেই তো কথা বলতে পারবো আর রাত হলেই কথা বলতাম যখন সবাই ঘুমিয়ে যেতো গভীর রাতে।
ভার্সিটি যাওয়ার পর আমার বেস্ট ফ্রেন্ড জুম্মা, মাহিম, নিরভ আর মুন্নী ওরা আমাকে চেপে ধরে এত বদলে গেছি এত ব্লাস করছি কেনো নতুন প্রেমে টেমে পরছি নাকি আগে ওদের একশো বার কল দিয়ে জ্বালাতাম আর এখন ওদেরকে মিসকল ও দেই না। এইসব নিয়ে ওরা বুঝেই ফেলছে আমি কারো প্রেমে পরেছি। ওদের থেকে লুকানোর চেষ্টা করলে পেছন থেকে হেঁটে এসে বর্ষা সব সত্যি কথা বলে দেয়। আর ফলে কয়েকটা লাথি উস্টা খাওয়া লাগে। তারপর কি আমার হাজার টাকা লস গিলে গিলে চিবিয়ে চিবিয়ে ট্টিট খাইলো রাক্ষস রাক্ষসীরা।
বাড়ি ফিরে আসি এখন আর কাব্য নাহিদ অপূর সাথে পাঙ্গা নেই না। ওদের দেখলে টুস করে রুমে চলে আসি বেশ কথা রুম থেকে বের হই না। সারাদিন মোবাইল নিয়ে নিলয়কে মেসেজ করি কিন্তু ও দেখেই না খুব কষ্ট লাগে। আমার আচরণে কাব্যর একটু সন্দেহ হয় তাতে আমার কি আমি তো আমার মতো খুব ভালো আছি।
নিলয় সব সময় রাতে কল দিতো আর রাতেই ৩/৪ঘন্টা আমাদের কথা হতো অনেক কথা বলতো নিলয় আর আমি মন প্রাণ উজাড় করে ওর ভয়েস শুনি। এইভাবে প্রতিদিন আমরা রাতে কথা বলতে লাগলাম!
আমি সারাদিন মেসেজ দিতাম ব্যস্ত থাকার জন্য
মেসেজ সিনও করতে পারতো না তবে প্রতিরাতে ফ্রি হয়ে আমার সাথে কথা বলতো!
তার মিষ্টি মায়া মিশালো কন্ঠ শুনলে শুনতেই ইচ্ছে করে কম হলেও আমাদের ১ঘন্টা তো কথা হতোই আর বেশি হলে ৩/৪ ঘন্টা।

ওর ভয়েস শুনে তারপর ঘুমানো যেনো আমার একটা অভ্যাস হয়ে গেছে!
আমার ভালোলাগা এখন ভালোবাসায় পরিনিত হয়ে গেছে!
আমি এখন ওকে ছাড়া সারাদিন কিছুই ভাবতে পারি না সব কিছুতেই শুধু নিলয়কে ভাবি নিলয়ের প্রত্যেকটা কথা আমার সারাদিন মনে পরে খেতে বসতে শুতে ঘুমাতেও মানে স্বপ্নেও ওর কথা শুনি!

ওকে ভাবতে ভালো লাগে নিলয় আমার আশেপাশে আছে এটা আমার কল্পনা আমার অনূভুতি সম্পূর্ণ জুড়ে নিলয় জরিয়ে গেছে। ঘুমাতে গেলেও বেডে মনে হয় নিলয় শুয়ে আছে একা একা বসে থাকলে মনে হয় নিলয় আমার সাথেই বসে আছে আর আমার সাথে কথা বলছে আমার সাথে হাসছে আমার চলার পথে আমার হাত ধরে পায়ে পা মিলিয়ে হাঁটছে সারাদিন নিলয়ের উপস্থিতি আমার চারপাশে অনুভব করি নিজের অজান্তেই নিজের থেকেও বেশি নিলয়কে ভালোবেসে ফেলি। নিলয় আমার সাথে যেভাবে কথা বলে মনে হয় নিলয়ের মনেও আমার জন্য ফিটিংস আছে মনে হয় নিলয় ও আমাকে ভালো বাসে। কিন্তু নিলয় সেভাবে আমাকে কিছু বলেনি।

এদিকে আমি ওর একটা মেসেজের জন্য সারাদিন অপেক্ষা করি আর ফাজিল টায় সারাদিন কয়েক ঘন্টা পর পরই ফেসবুকে আসে আবার চলে যায় আবার গল্পও পোস্ট করে আর আমার মেসেজ দেখারই সময় নাই শয়তান টার কাছে অনেক কষ্ট হতো তখন যখন মেসেজ সিন করতো না।
এক বস্তা রাগ নিয়ে মুখ ফুলিয়ে বসে থাকতাম মোবাইল নিয়ে!

আর রাতে যখন কল দিতো ওর ভয়েস শুনতাম আমার
বস্তুা ভর্তি রাগ নিমিষেই ভালোবাসায় গলে যেতো
জানি না কি যাদু করেছো তোমাকে ছাড়া যে আর কিছুই ভাবতে পারি না! (মনে মনে বলি ওর কথা শুনে বুঝি না কি আছে এই নেশালো কন্ঠে যা আমাকে পুরো পাগল করে দিচ্ছে ও দিয়েছে। আমার এমন অবস্থা দেখে বর্ষা রিমা মাথায় হাত দিয়ে বসে আমার দিকে তাকিয়ে থাকে আর বলে।
আমরা জীবনেও ভাবিনি আমাদের বৃষ্টির এমন করুণ দষা হবে। কথা গুলো বলতে দু’জনে হাসতে হাসতে একে অপরের উপর হেলে পরছে।

আর তারপর রাতে যখন…..

চলবে?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here