পার্থক্য পর্ব-১৯

0
804

পার্থক্য

১৯ পর্ব।

#রিফাত_হোসেন।

রিফাত কিছুতেই বুঝতে পারছে না তারিন এভাবে এড়িয়ে চলে গেল কেন? কী হয়েছে তারিনের। এর পর কয়েকবার তারিনের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেছে রিফাত। কিন্তু যতবার কাছে গেছে ততবারই রিফাত কে না দেখার অভিনয় করে চলে গেছে তারিন। রিফাতের মনে একটা ভয় ডুকে গেছে। তারিন কে হারানোর ভয়। আজ আর কোন ভাবেই তারিনের সাথে কথা বলার সুযোগ পেলো না রিফাত। রাতে অনেকবার ফোন দিয়েছে, কিন্তু কোন লাভ হয়নি। একবার ফোন বন্ধ পায় তো আরেকবার শুধু বেজেই যায়, কিন্তু রিসিভ করে না।

৩২.
রাতে যত গভীর হচ্ছে তারিনের কষ্ট যেন আরো বেড়েই চলেছে। নিজের কাছে নিজেকে খুব বড় অপরাধী মনে হচ্ছে তারিনের। রিফাতের সাথে অন্যায় করা হচ্ছে। তারিন নিজের অজান্তেই রিফাত কে ভালোবেসে ফেলেছে। কিন্তু সেই ভালোবাসা সফল হওয়া সম্ভব নয়। নিজে সব কষ্ট সহ্য করে হলেও বাবা-মা কে আর কোন কষ্ট দিবে না তারিন। তারিন খুব ভালো করেই জানে রিফাত ওকে ভালোবাসে। কিন্তু এতে তারিনের কিছু করার নেই কারণ নিজেদের সুখের থেকে এই মুহূর্তে বাবা-মা কে খুশি রাখাটা তারিনের কাছে বেশি দরকার। যখন রিফাত সামনে এসে একটাবার কথা বলার জন্য অনুরোধ করছিলো । তখন তারিনের খুব ইচ্ছে করছিলো রিফাতের সাথে কথা বলতে। কিন্তু মায়া নামক বাধার সম্মুখীন হয়ে সেই সাহস আর হয়নি তারিনের। যেন মাথার মধ্যে কেউ গেঁথে দিয়েছিলো রিফাতের মায়ায় না জড়ানোর জন্য। খুব কষ্ট হচ্ছিলো তারিনের। তবুও সব কষ্ট সহ্য করে চুপ করে ছিলো তারিন।

৩৩.
আজ আরিফ সাহেবের বিয়ে। চারদিকে সবাই মজা করছে আর রিফাত আনমনে বসে আছে বিছানার এক কোণে। কারোর সাথে কোন কথা বলে না। কালকের পর থেকে এখনো কিছুই খায়নি রিফাত। স্তব্ধ বালকের মতো চুপ করে বসে আছে। যেন পৃথিবীতে বুক ভরে নিঃশ্বাস নেওয়ার পরেও এক জীনন্ত লাশের মতো করে পড়ে আছে রিফাত। সেই জীবন্ত লাশ কথা বলার শক্তি হারিয়ে ফেলেছে। রিফাত মনে মনে ভাবছে – ‘কী অপরাধ করেছি আমি, যার জন্য আজ এভাবে কষ্ট পেতে হচ্ছে। যেভাবেই হোক আজকে তারিনের সাথে কথা বলতে হবে। আমার অপরাধ, আমাকে জানতেই হবে। আমি তারিন কে ছাড়া এক মুহূর্ত ও ভাবতে পারছি না।

রিফাত ঘরে বসে এইসব কথাগুলো ভাবছিলো। কিছুক্ষন পর আরিয়ান এসে বলল তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে নিতে। আরিয়ানের কথা শুনে রিফাত আর দেরি করেনি। কারণ আজকেই শেষ চেষ্টা করতে হবে। আরিয়ান এখনো কিছু জানে না। বিয়ের নানান কাজে ব্যস্ত ছিলো বলে রাতে বেশি কিছু জিজ্ঞেস করেনি। তবুও জানিনা কীভাবে আরিয়ান রিফাতের সমস্ত কষ্ট বুঝতে পারে। সব সময় রিফাতের পাশে থাকে। হয়তো এটাই ভালোবাসার একজন মানুষ। সব থেকে কাছের বন্ধু, সব থেকে কাছের ভাই।
সবাই রেডি হয়ে তিশাদের বাড়িতে গেল। বরের সাথে রিফাত ও বাকি ফ্রেন্ডরা বসলো। আজও রিফাতের চোখ দু’টো একজনকেই খুঁজছে। চারদিকে অনেকবার তাকিয়ে ও তার কোন দেখা পাচ্ছে না রিফাত। বসা থেকে উঠে গিয়ে তারিন কে খুঁজতে লাগলো। কিছুদূর যাওয়ার পর একটা ঘরে দেখতে পেলো তারিন কে। এই ঘরেই তিশা আছে। একটা ছোট বাচ্চা কে দিয়ে তারিন কে ডাক দিতে বলল। পাশের ঘরে আড়ালে চলে গেছিলো রিফাত।
কারণ রিফাত ভালো করেই জানে ওকে দেখার সাথে সাথে তারিন চলে যাবে। তারিন নরমাল ভাবেই বাহিরের দিকে আসতে লাগলো। তারিন ভেবেছে হয়তো বিয়ে বাড়ির কোন কাজের কথা বলতে কেউ ডাকছে। তাই ওই ঘর থেকে বেড়িয়ে একটু সামনে আসতেই রিফাত তারিনের হাত ধরে একটা টান দিয়ে ঘরের ভিতরে নিয়ে চলে গেল। তারপর তারিন কে দেওয়ালের সাথে চেপে ধরলো। হঠাৎ করে কেউ টান দেওয়াতে তারিন ভয় পেয়ে চোখ বন্ধ করে ফেললো। আস্তে আস্তে চোখ খুলে কিছুটা শান্ত হলেও এখনো মুখে ভয়ের ছাপ স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে। কারণ সামনে দাঁড়িয়ে থাকা রিফাতের চোখে ছিলো অনেকটা রাগ। আর রিফাতের মুখটা তারিনের অনেক কাছাকাছি। যেন একটু নড়াচড়া করলে দু’জনের ঠোঁট একত্র হয়ে যাবে। রিফাতের চোখ দু’টো লাল হয়ে আছে। দেখে বোঝা যাচ্ছে কাল থেকে খাওয়া দাওয়া এবং ঘুম কিছুই হয়নি। রিফাতের কষ্ট তারিন আর সহ্য করতে পারলো না, টপটপ করে চোখ থেকে কয়েক ফোটা জল গড়িয়ে পরলো। রিফাত এক হাত দিয়ে তারিনের চোখ দু’টো মুছিয়ে দিয়ে বলল – ‘কী অপরাধ করেছি আমি? কেন আমাকে এভাবে কষ্ট দিচ্ছেন? এতদিনে ও কী আপনি বুঝতে পারেননি আমি আপনাকে কতটা ভালোবাসি। কাল সারাদিন, সারারাত আমার অনেক কষ্ট হয়েছে। রাতে শুধু ছটফট করেছি একটাবার আপনার সাথে কথা বলার জন্য। সারারাত আপনাকে ফোন করেছি, কিন্তু পাইনি। শুধু মনে হয়েছিলো আপনাকে ছাড়া আমি বাঁচতে পারবো না।

এইকথা বলার পর রিফাত আর কিছু বলতে পারেনি কারণ তারিন নিজের গোলাপি রঙের ঠোঁট দু’টো দিয়ে রিফাতের ঠোঁট আটকে ধরেছে। কিছুক্ষন পর ঠোঁট দু’টো ছেড়ে দিয়ে রিফাতের বুকে মুখ লুকালো তারিন। রিফাত স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। কী হলো কিছুই বুঝতে পারলো না। কয়েক মুহূর্ত যেন থমকে গেল। বিষয়টি বুঝতে রিফাতের একটু সময় লাগলো। হঠাৎ করে তারিন এইরকম কিছু করবে রিফাত কল্পনা ও করতে পারেনি। নিজের অজান্তেই ঠোঁটের কোণে মৃদু হাসি চলে এলো।

তারিন রিফাতের বুকে মুখ লুকিয়ে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছে। তারিন নিজেও জানেনা কেন এটা করলো। যেন একটা ঘোরের মধ্যে ছিলো। তখন রিফাতের মুখে না বাঁচার কথাটা আটকানোর জন্য সামনে রিফাতের ঠোঁটে দু’টো পেয়েছে। তাই নিজের ঠোঁট দু’টো দিয়ে রিফাতের ঠোঁট দু’টো আটকে দিয়েছিলো।

তারিন কে আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলল – ‘কেন আমাকে এই দু’দিন এত কষ্ট দিলেন?’

রিফাতের বুকে থাকা অবস্থায় বলল – ‘আপনি তো জানেন, আমার একটা ভুলের জন্য বাবা- মা কে অনেক কষ্ট সহ্য করতে হয়েছে। তাই আমি চাইনি আবার তারা সেই একি কষ্ট পাক। আপনার প্রতিটি কথা, আমার প্রতি আপনার ফিলিংস দেখে খুব সহজেই বোঝা যায় আপনি আমাকে ভালবাসেন। সত্যি বলতে আমিও আপনাকে ভালোবেসে ফেলেছি। কিন্তু আমার কিছু করার নেই কারণ বাবা-মা কে কিছুতেই আমাদের ভালোবাসার কথা বলতে পারতাম না আমি। তাই আপনার মায়ায় পড়তে চাইনি বলে এই দু’দিন আপনাকে আড়িয়ে চলেছি। কিন্তু আপনার কষ্ট দেখে আমি আর নিজেকে ঠিক রাখতে পারিনি। আমাকে ক্ষমা করে দিন প্লিজ।

এ’কথা বলে তারিন আবারও কাঁদতে শুরু করলো। রিফাত বুক থেকে তারিনের মাথাটা তুলে কপালে আলতো করে একটা চুমু এঁকে দিলো। তারপর বলল – ‘জীবনে কোন মেয়ের ছাঁয়া পড়তে দেইনি নিজের উপর। সব সময় নিজের ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তা করেছি যে আমাকে কিছু একটা করতে হবে। নিজের লক্ষ্য ঠিক রাখতে গিয়ে কখনো কারোর জীবনের সাথে জড়িয়ে যাইনি। অবশ্য সেই সময় ও পাইনি। কিন্তু বিশ্বাস করুন, সেদিন বাস স্ট্যান্ড এ আপনাকে প্রথম দেখাতেই ভালো লেগেছিল। তারপর আপনার সম্পর্কে সব কিছু শোনার পর আপনাকে আরও ভালোবেসে ফেলি। আপনার সাহস দেখে আমি সত্যিই খুব অবাক হয়ে গেছিলাম। আপনার প্রতি ভালোবাসা আর শ্রদ্ধা দিন দিন বেড়েই যাচ্ছিলো। একসময় সেটা এমন একটা রূপ ধারণ করে যে আপনি আমার প্রতিটি নিঃশ্বাসের সাথে মিশে যান। আমি কখনো আশিকের মতো খারাপ চিন্তা নিয়ে আপনাকে ভালোবাসিনি।’

– ‘আমি জানি আপনি আশিকের মতো নন। এর প্রমাণ আমি অনেকবার পেয়েছি।’

– ‘আমি আপনাকে সারাজীবন নিজের করে নিতে চাই।’
– ‘ আমিও আপনাকে ভালোবাসি। কিন্তু আমি বাবা-মায়ের অনিচ্ছায় কিছু করতে পারবো না। তারা যদি মেনে নেয় তাহলে আমিও মেনে নেবো। কিন্তু তারা যদি মেনে না নেয় তাহলে আমার কিছু করার নেই। আপনাকে বাধ্য হয়ে আমার জীবন থেকে চলে যেতে হবে।
– ‘ঠিক আছে আপনার বাবাকে রাজি করানোর দ্বায়িত্ব আমার।’

তারিন কিছু বলার আগেই রিফাত তারিনের থেকে একটু দূরে সরে গেল। তারিব অবাক হয়ে রিফাতের দিকে তাকিয়ে আছে। তার রিফাত মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে। তারিন কে ইশারা করে বলল দরজার দিকে তাকাতে। দরজার দিকে তাকিয়ে তারিন খুব বড় একটা ধাক্কা খেলো। মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়লো। পায়ের নিচ থেকে জমিন কেঁপে উঠলো।

চলবে…….?

বিঃদ্রঃ ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।
গাড়ির মধ্যে থেকে গল্প লিখতে হয়েছে। তাই হয়তো কিছু ভুল হয়েছে।
অনেক ব্যস্ততার মাঝে লিখতে হয় প্রতিদিন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here