পার্থক্য
৭ পর্ব।
#রিফাত_হোসেন।
দারোয়ান কে জিজ্ঞেস করতে বলল ওই মাঠে আছে সবাই। রিফাত যেতে শুরু করলো। কিন্তু কিছুদূর গিয়ে থেমে গেলো।
সামনে দাঁড়িয়ে আছে রাস্তার সেই বখাটে ছেলেগুলো। লোকগুলো রিফাত কে দেখতে পেয়ে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। ওরা হয়ত রিফাত কে এখানে আশা করেনি। রিফাত ঝামেলা একদম পছন্দ করে না, তাই আবার ভিতরে চলে যাওয়ার জন্য পিছনে ফিরতেই আরিয়ান রিফাত বলে ডাক দিলো।
রিফাত পিছনে ফিরে দেখে সবাই রিফাতের দিকে তাকিয়ে আছে। মোটেও এখানে কোন ঝামেলা চাচ্ছে না রিফাত । কিন্তু কী করবে ভেবে পাচ্ছে না। রিফাত নিচের দিকে তাকিয়ে ভাবছে ছেলেগুলো এখানে কোন ঝামেলা করবে না তো। আরিয়ান এর ডাকে রিফাত সামনের দিকে তাকালো।
আরিয়ান বলল – ‘কি রে চলে যাচ্ছিস কেন?’
– ‘না, এমনি।’
আরিয়ান হাত ইশারা করে এদিকে আসতে বলল
রিফাত কোন কিছু না ভেবেই সেখানে চলে গেলো৷
আরিয়ান বলল – ‘ঘুম কখন ভাঙ্গছে।’
রিফাত নরমাল ভাবেই উত্তর দিলো – এই মাত্র ঘুম ভাঙ্গলো। আর ঘুম ভাঙ্গার পর দেখি তোরা কেউ নেই। নিচে এসেও তোদের পেলাম না। তাই দারোয়ান কে জিজ্ঞেস করলাম। সে বলল তোরা এখানে, তাই আমিও চলে এলাম।
আরিয়ান বলল – ‘পরিচয় করিয়ে দেই। আরিফ সাহেব এই হলো আমাদের বন্ধু রিফাত, আর রিফাত ওনি চেয়ারম্যান সাহেবের ছেলে আরিফ।
আরিফ সাহেব রিফাতের দিকে হাত বাড়িয়ে দিলো। রিফাত ও কোন দ্বিধা না করে হাত মিলিয়ে নিলো। তারপর দু’জনে মিলে কথা বলতে শুরু করলো। রিফাত মনে মনে ভাবছে লোকটা কে যতটা খারাপ ভেবেছিলাম ততটা খারাপ না। খুব মিশুক মানুষ। কত সহজেই আমার সাথে মিশে গেছে। মনে হয় কতদিনের পরিচয়। রিফাত যখন এসব কথা ভাবছিল তখন হঠাৎ করেই আরিফ সাহেব
বলে উঠলো – ‘মিঃ রিফাত, আপনার বন্ধু আরিয়ান সাহেবের কাছ থেকে শুনলাম এখানে আসার সময় নাকি একটু ঝামেলা হয়েছে?’
রিফাত বলল – ‘হ্যাঁ এনারা সবাই একটা মেয়েকে ইভটিজিং করছিল। আমি তার প্রতিবাদ করেছি শুধু।’
আরিফ সাহেব রিফাতের হাত ধরে বলল – ‘ওদের হয়ে আমি ক্ষমা চাচ্ছি। আসলে ওরা সবাই আমার বন্ধু। সব সময় আমার সাথেই থাকে। আমার সব কাজে আমাকে সাহায্য করে। ওরা আমাকে বস বলে ডাকে। কিন্তু আমি কখনও ওদের কাছে বস হয়ে থাকিনি। ওদের সাথে সব সময় বন্ধুর মতো ব্যবহার করেছি। আমি ওদের সব সময় বলি এইসব মাস্তানী বন্ধ করতে। কিন্তু এদের এক কান দিয়ে ভিতরে ঢুকে, আরেক কান দিয়ে বের করে। আমি অনেকবার বলেছি যে তোদের আর আমার সাথে রাখবো না। কিন্তু আমার বাবা ও ওদের খুব ভালবাসে। বাবার কিছু শত্রু আছে। আর বাবার ভয় তারা আমার ক্ষতি করবে। তাই আমার সব কাজে ওদের সাথে রাখতে হয়। আপনি কিছু মনে করবেন না প্লিজ।
লোকটার কথা রিফাত মুগ্ধ হয়ে শুনছে। আর ভাবছে চেয়ারম্যান এর ছেলে হয়েও কোন ইগো নেই তার মাঝে।
হঠাৎ আরিফ সাহেবের ফোনটা বেজে উঠলো। তিনি পকেট থেকে ফোনটা বের করে একবার স্কিনের দিকে তাকালো। তারপর ফোনটা রিসিভ না করেই তাড়াহুড়া করে আবার পকেটে ঢুকিয়ে নিলো। রিফাত এবং বাকি সবাই অবাক হয়ে তার দিকে তাকিয়ে রইলো। কেউ বুঝতে পারছে না আরিফ সাহেব এমনটা কেন করলো।
সবার এভাবে তাকিয়ে থাকা দেখে আরিফ সাহেব জিজ্ঞেস করলো – ‘কী হলো আপনারা সবাই এভাবে তাকিয়ে আছেন কেন?’
রিফাত আগ্রহ নিয়ে জিজ্ঞেস করলো – ‘না মানে। আপনি ফোনটা রিসিভ না করেই এভাবে তাড়াহুড়া করে পকেটে ঢুকিয়ে নিলেন কেন? সেটাই বুঝতে পারছি না।’
আরিফ সাহেব কথাটা এড়িয়ে যাওয়ার জন্য বলল – ‘আমার একটা কাজ আছে, আমি এখন যাই।’
কাউকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই আরিফ সাহেব চলে গেলো। কেউ বুঝতে পারলো না হঠাৎ তার এরূপ ব্যবহারের কারণ।
এদিকে রিফাত আর সহ্য করতে পারছে না। আলরেডি পেটের ভিতর হাতুড়ি দিয়ে মারতে শুরু করে দিছে।
হাত দিয়ে পেট ডলতে শুরু করে দিছে। রিফাতের এইরকম অবস্থা দেখে রাফি জিজ্ঞেস
করলো – ‘কি রে তুই পেটে হাত দিয়ে ডলাডলি করছিস কেন?’
রিফাত রাগি মুড নিয়ে বলল – ‘শালা দুপুরের পর থেকে না খাওয়া। পেটে হাত থাকবে না তো মাথায় হাত থাকবে নাকি।’
রিফাতের কথা শুনে সবাই থতমত খেয়ে গেলো। রানা জিজ্ঞেস করলো – ‘কাল রাতে পেটে কিছু পড়েনি তোর।’
– ‘হু খেয়েছি তো।’
– ‘কী খেয়েছিস?’
– ‘শুধু চা খেয়েছি।’
– ‘তাহলে এতক্ষন বলিস নাই কেন?’
– ‘সারারাত ঘুম হয়নি তাই বিছানায় শরীর এলিয়ে দিতেই ঘুম এসে যায়। আর ঘুম থেকে উঠেই তো এখানে চলে এলাম।’
আরিয়ান রিফাতের হাত ধরে বলল – ‘আচ্ছা চল তাহলে আগে কিছু খেয়ে নে।’
– ‘হু চল।’
৯.
আফজাল সাহেব তারিন কে যতটা সম্ভব খুশি করার চেষ্টা করে যাচ্ছে। তারিনের সাথে একের পর এক গল্প করে যাচ্ছে। কিন্তু তারিনের সেদিকে কোন খেয়াল নেই। চুপ করে মায়ের কোলে মাথা রেখে শুয়ে আছে। মেয়ের এভাবে চুপ করে থাকা আফজাল সাহেব বা আমেনা বেগম, কারোরই মনে শান্তি দিচ্ছে না। যে মেয়েটা সারাদিন বকবক করতো, সে আজ নীরব হয়ে আছে। বাবার কাছে গল্প শোনার জন্য সব সময় ছটফট করতো। এমনকি আফজাল সাহেবের চুল টেনে ধরে বলতো গল্প না বললে চুল ছিড়ে ফেলবে। একাই পুরো বাড়ি মাতিয়ে রাখতো। আজ সেই মেয়ের এভাবে চুপ থাকাটা তাদের খুব কষ্ট দিচ্ছে। আফজাল সাহেব পকেট থেকে ফোন বের করে তিশার বাড়িতে একটা ফোন দিলো। তারিনের এই অবস্থার কথা শুনে তিশা দৌড়ে তারিনদের বাড়িতে চলে এলো।
তারিনের মাথার কাছে বসে তিশা আফজাল সাহেব কে বলল – ‘কাকা আমি তারিন কে নিয়ে একটু ঘুরে আসি।’
তারিনের সব থেকে ভাল ফ্রেন্ড ছিল তিশা। যদি তিশার সাথে বাহিরে ঘুরতে যেয়ে তারিনের মন ভাল হয়। এটা ভেবে তিনি সাথে সাথে রাজি হয়ে গেলেন। তিশা একজনের সাথে দেখা করার জন্য রেডি হয়েছে তখনই আফজাল সাহেব ফোন দেয়। তাই তিশার আর রেডি হওয়ার কোন প্রয়োজন ছিল না।
আফজাল সাহেব এবং আমেনা বেগম বাহিরে চলে আসে। তিশা তারিনকে রেডি করে দিয়ে বাহিরে বের হয়।
১০.
রিফাত খাওয়া শেষ করে সবাইকে বলল রেডি হয়ে নিতে।
আরিয়ান জিজ্ঞেস করলো – ‘এখন কোথায় যাবি।’
– ‘এমনি আশেপাশে একটু ঘুরে দেখবো।’
ঘুরতে তো সবাই কম বেশি ভালবাসে, তাই কেউ না করেনি। সাথে সাথে সবাই রেডি হয়ে নিলো। তারপর সবাই বের হলো। বাজার পেড়িয়ে সামনে এগুতেই একটা বড় নদী সামনে পরে। আরিয়ান আর রানা নদীর কাছে গিয়ে ছবি তুলছে। সবাই খুব আনন্দে থাকলেও রিফাতের মনে শান্তি নেই৷ চোখ দু’টো শুধু একজনকেই খুঁজছে। নদীর পাড় ধরে এগুতে লাগলো সবাই। রিফাত বার বার এদিক ওদিক তাকাচ্ছে, কিন্তু তাকে খুঁজে পাচ্ছে না। এতক্ষন পেটে হাতুড়ি পিটিয়েছে আর এখন বুকের বা পাশে হাতুড়ি পেটাচ্ছে। কিন্তু তখনকার থেকে এখন কষ্ট বেশি হচ্ছে। কাউকে না পাওয়ার কষ্ট। রিফাতের মন ছটফট করছে সেই অজানা অচেনা মেয়েটির মিষ্টি হাসি একটাবার দেখার জন্য। সে মায়াবী মুখটা দেখার জন্য রিফাত পাগল হয়ে উঠেছে। যেই মুখের দিকে তাকালে পৃথিবীর সব কিছু ভুলে থাকা যায়। রিফাতের এইরকম ছটফটানি দেখে আরিয়ানের একটু সন্দেহ হলো। তাই জিজ্ঞেস করলো – ‘সত্যি করে বলতো তোর ধান্ধাটা কী?’
আরিয়ানের কথায় রিফাত চমকে উঠে। আমতা আমতা করে বলল -‘ কী আবার ধান্ধা হবে।’
– ‘তুই বার বার এদিক ওদিক তাকাচ্ছিস। অন্যমনস্ক হয়ে হেঁটে চলেছিস।’
– ‘না আসলে নদীটা খুব সুন্দর তাই দেখছিলাম।’
– ‘ওহ্’
আরিয়ান ও আর প্রশ্ন করলো না। আবার সবাই সামনের দিকে হাঁটতে শুরু করলো।
১১.
তিশা তারিনের সাথে গল্প করতে করতে হাঁটতে শুরু করলো। তিশা নিজের সব টুকু দিয়ে চেষ্টা করছে তারিন কে খুশি করার। তারিন তিশা কে জিজ্ঞেস করলো – ‘আমরা এখন কোথায় যাচ্ছি।’
তিশা বলল – ‘একজনের সাথে দেখা করতে।’
– ‘কার সাথে?’
– ‘যে তোর মন ভাল করার মানুষটার খবর দিতে পারবে।’
তিশার কথার কোন মানেই বুঝতে পারলো না তারিন। তাই বলল – ‘তোর কথার আগামাথা কিছুই বুঝলাম না।’
তিশা একটু হাসি দিয়ে বলল – ‘তোর সেই অজানা অচেনা ছেলে রিফাত।’
তারিন তিশার মাথায় একটা টোকা দিয়ে বলল – ‘তোর মাথাটা এবার গেছে। ওনি আমার মন ভাল করার মানুষ কীভাবে হলো।’
– ‘আমি বেশ কয়েকবার খেয়াল করেছি। তোর মন খারাপ থাকলে ওই ছেলেটার কথা বললেই তোর মন ভাল হয়ে যায়।’
তারিন আর কিছু বলল না কারণ তিশা একদম ঠিক কথা বলেছে। তারিন নিজেও এটা ফিল করছে। এতবড় একটা ধাক্কা খাওয়ার পরেও রিফাতের সাথে থাকার সময় একটুও মন খারাপ হয়নি তারিনের। কিন্তু এর মানে কী? কেন লোকটা আমার মনে এতটা জায়গা করে নিয়েছে? কী আছে ছেলেটার মধ্যে? তারিন মনে মনে এইসব কথা ভাবছিল। হঠাৎ সামনে একজন কে দেখে থেমে যায় তারিন।
চলবে…………?