পার্থক্য পর্ব-৮

0
879

পার্থক্য

৮ পর্ব।

#রিফাত_হোসেন।

তারিন মনে মনে এইসব কথা ভাবছিল। হঠাৎ সামনে একজন কে দেখে থেমে যায়। তিশা কে জিজ্ঞেস করলো – ‘ওনি এখানে কেন?’

তিশা বলল – ‘আরে ওনার বাড়ির পাশেই তো গানের অনুষ্ঠান হবে।’

তারিন অবাক হয়ে তিশা কে জিজ্ঞেস করলো – ‘তাতে কী হইছে।’
– ‘ওনি হয়ত যানে রিফাত ভাইয়া এখন কোথায় আছে।’
– ‘সত্যি করে বল তো, রিফাত কোথায় আছে এটা জানার জন্য এখানে এসেছিস নাকি চেয়ারম্যান এর ছেলের সাথে প্রেম করতে এসেছিস।’
– ‘সে যাই হোক না কেন? তোর রিফাতের খোঁজ পেলেই তো হলো।’
– ‘সেটা তো ফোন করেও জানা যেতো।’

তিশা একটু বিরক্তকর মুখ নিয়ে বলল – ‘এসেই যখন পড়েছি, তার কাছ থেকেই জেনে যাই।’
– ‘আচ্ছা চল তাহলে।’

তারিন বলল – ‘ওনার সাথে যে বখাটে ছেলেগুলো থাকে। ওরা আজকেও আমাকে বিরক্ত করেছে।’
– ‘আজকে ওদের একটা ব্যবস্থা করছি দাঁড়া।’
– ‘শুধু আমাকে না, ওনার শার্টের কলার ও ধরছে।’

তিশা বুঝতে পেরেছে তবুও একটু মজা করার জন্য বলল – ‘ওনি টা কে?
– ‘আরে ওই যে তখন বললাম আমাকে যে বাঁচিয়েছে।’
– ‘কই মনে পরছে না তো।’
– ‘তখন বললাম না।’
– ‘তখন কী বললি?’
– ‘রিফাত’
একথা বলেই তারিন হেসে উঠলো।

তিশা হাসতে হাসতে বলল – ‘দেখেছিস রিফাত নাম বলার পর তোর মুখে হাসি ফিরে এসেছে।’

তারিন অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো – ‘ তো’
– ‘তো আর কী? তুই ও ওই লোকটার প্রেমে পড়ে গেছিস।’

তিশার কথায় তারিন কিছুটা লজ্জা পেলেও তা প্রকাশ না করে রাগ দেখিয়ে বলল – ‘তুই আর একটা বাজে কথা বলবি তো ধাক্কা দিয়ে নদীতে ফেলে দেবো।’

তিশা আবার হাসতে হাসতে বলল – ‘সামনেই আমার রাজকুমার দাঁড়িয়ে আছে। আমাকে ফেলে দিলে তিনি ঠিক আমাকে বাঁচিয়ে নেবে।

তারিন ও একটু মজা করার জন্য বলল – ‘এবার চুপ করে চল বেচারা তোকে একটাবার দেখার জন্য ছটফট করছে।’
– ‘হু চল।’

তারপর তিশা আর তারিন আরিফ সাহেবের সামনে গেলো। তারিন সালাম দিয়ে বলল – ‘কেমন আছেন আরিফ ভাইয়া?’

আরিফ সাহেব একটু হাসি দিয়ে বলল – ‘আমি ভাল আছি, তুমি কেমন আছো?’
– ‘হু আমিও ভাল আছি।’

আরিফ সাহেব বলল – ‘তা তারিন আজকে হঠাৎ এদিকে আসলে।’

তারিন একটু হাসি দিয়ে বলল – ‘আপনাদের প্রেমে বিরক্ত করতে চলে এলাম।’
– ‘আসলে এক এলাকায় থাকলেও তুমি আমাদের এই পাশে খুব কম আসো তো তাই জিজ্ঞেস করলাম।’
– ‘এর কারণ তো আপনি ভাল করেই জানেন।’
– ‘হ্যাঁ জানি। কিন্তু কী করবো বলো, বাবার জন্য ওদের কিছু বলতে পারিনা।’

তিশা বলল – ‘ আজকেও তারিন কে রাস্তায় বিরক্ত করেছে।সাথে শুধু শুধু একটা ছেলের সাথে ঝামেলা করছে তোমার ওই মাস্তান বন্ধুগুলো।

একটা ছেলের কথা বলতেই আরিফ এর মনে খটকা লাগলো। তাই জিজ্ঞেস করলো – ‘কোন ছেলের কথা বলছো তোমরা।’

তিশা বলল – ‘ওনার নাম রিফাত। ঢাকা থেকে এসেছে। তুমি চিনো ওনাকে?’
– ‘হ্যাঁ আমাদের বাড়ির পাশে যারা গান গাওয়ার জন্য এসেছে। ওদের মধ্যে একজনের নাম রিফাত।’

তারিন বলল – ‘হ্যাঁ ওনার সাথেই আপনার বন্ধুরা ঝামেলা করছে, তাও আমার জন্য।’

আরিফ সাহেব কৌতূহল
নিয়ে বলল – ‘সব তো বুঝলাম, কিন্তু ওনাকে তোমরা কীভাবে চিনো।’

আরিফ সাহেবের কথা শুনে তারিন চুপ হয়ে গেলো। তিশা একবার তারিনের দিকে তাকালো। তারপর আরিফ সাহেবের দিকে তাকিয়ে বলল – ‘আজ ওনার জন্যই তারিন বেঁচে ফিরেছে।’

তিশার কথার কোন মানে বুঝতে না পারলেও এটা ঠিক বুঝতে পেরেছে তারিনের কিছু একটা হয়েছে। তাই জিজ্ঞেস করলো – ‘তারিনের কী হয়েছিল। আর রিফাত কীভাবে তারিন কে বাঁচালো?’

– ‘ মনে আছে একদিন তোমাকে বলেছিলাম তারিন একটা ছেলেকে ভালবাসে।
– ‘হ্যাঁ, মনে আছে। তুমি বলেছিলে ফেসবুকে রিলেশন হয়েছিল ওদের।’
– ‘ওই ছেলেটা তারিনের সাথে মিথ্যে অভিনয় করে। ওকে ঢাকা নিয়ে যায়। তারপর জোর করে খারাপ কিছু করার চেষ্টা করে। কিন্তু ভাগ্য ভাল ছিল তাই কোন রকমে তারিন সেখান থেকে পালিয়ে আসে। রাস্তায় রিফাত ভাইয়ার সাথে দেখা হয়। তারপর ওনি তারিন কে এখানে নিয়ে আসে।’

আরিফ সাহেব তিশার কথা শুনে স্তব্ধ হয়ে গেলো। কী বলবে বুঝতে পারছে না।

তারিন মাথা নিচু করে বসে আছে। আশিকের কথা মনে পড়তেই বুকটা কেঁপে উঠে। তিশা ওর অবস্থা বুঝতে পেরে তারিনের হাত ধরলো। তারিন কান্না আটকানোর অনেক চেষ্টা করেও পারলো না। তিশাকে জড়িয়ে ধরে কান্না করে দিলো। তিশা বার বার কান্না করতে না করছে। কিন্তু তারিন অনবরত কেঁদেই চলেছে।

আরিফ সাহেব বলল – ‘প্লিজ তারিন কেঁদো না। এখন কেঁদে কোন লাভ হবে না। আমাকে কিছু একটা করতে হবে।

আরিফ সাহেবের কথা শুনে তারিন কিছুটা শান্ত হলো। তারপর জিজ্ঞেস করলো – আপনি আবার কী করবেন?’
– ‘তুমি কোন চিন্তা কর না। ওর ব্যবস্থা আমি করছি।’

তিশা অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো – ‘তুমি ঠিক কী করতে চাইছো বলতো।’
– ‘ঢাকায় আমার এক বন্ধু আছে। সে পুলিশের একটা বড় পোষ্ট এ চাকরি করে।’

তারিন চায় না আশিকের কোন ক্ষতি হোক। তাই বলল – ‘এসব করার কোন দরকার নেই ভাইয়া। ওর পাপের শাস্তি আল্লাহ ঠিক দিবে।’
– ‘কিন্তু তোমার বড় কোন ক্ষতি হয়ে যেতে পারতো।’
– ‘আমি চাইনা গ্রামের সবাই এটা জেনে যাক।’

পাশ থেকে তিশা বলল – ‘তারিন ঠিক কথা বলেছে। এই বিষয় গ্রামে জানাজানি হলে আফজাল কাকার সম্মান নষ্ট হবে।’

– ‘ঠিক আছে। কিন্তু আমি এটা বুঝলাম না তুমি ওর হাত থেকে পালালে কীভাবে?’

আরিফ সাহেবের কথা শুনে তারিন ও তিশা দু’জনেই হেসে দিলো। আরিফ ওদের হাসার কারণ বুঝতে পারলো না তাই, বলল – ‘কী হলো তোমরা হাসছো কেন?’

তিশা হাসি থামিয়ে বলল – ‘ ছেলেটা এখন হয়ত হাসাপাতালে আছে।’
– ‘কেন?’
– ‘তারিন কাচের জগ দিয়ে এত জোরে ওর মাথায় মেরেছে যে লোকটা অজ্ঞান হয়ে গেছে। আর মাথা দিয়ে অনেক রক্ত বের হয়েছে।

আরিফ অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো – ‘আবার মরে যায় নাই তো।’

তারিন – ‘তখন নিজেকে রক্ষা করা ছাড়া অন্য কোন চিন্তা মাথায় ছিল না। তাই ওর মাথায় আঘাত করেই আমি পালিয়ে এসেছি।’

তিশা আরিফ সাহেব কে বলল – ‘আচ্ছা এই কথা এখন বাদ দেও। আগে বল রিফাত এখন কোথায় আছে?’
– ‘ একটু আগেই তো আমি কথা বলে এলাম।’
– ‘তারমানে এখন তোমাদের বাড়িতে আছে, তাই তো।’
– ‘হ্যাঁ’

তিশা একটু হাসি দিয়ে বলল – ‘আমার ফ্রেন্ড তো তাকে দেখার জন্য পাগল হয়ে গেছে।’
– ‘ তুই এসব কী বলছিস।’
– ‘হ্যাঁ সত্যি কথাই তো বললাম।’
– ‘দেখ তুই যদি আবার এগুলো বলিস তাহলে আমি বাড়িতে চলে যাবো।’

আরিফ সাহেব বলল – ‘তোমরা ঝগড়া থামাও আর আমার সাথে চল।’

তারিন জিজ্ঞেস করলো – ‘কোথায়?’
– ‘আমাদের বাড়িতে।’

তারিন একটু লজ্জা পেয়ে বলল – ‘ভাইয়া আপনি তিশার কথা একটুও বিশ্বাস করবেন না। ও এমনি ফাজলামি করছে।’
– ‘না। আমি তিশার কথা শুনে কিছু বলছি না। তুমি অনেকদিন ধরে আমাদের ওদিকে যাও না। তাই এখন আমার সাথে যাবে।’

তারিন আর না করতে পারলো না। বসা থেকে উঠে সবাই যেতে শুরু করলো।

১২.
রিফাতের চোখ দু’টো যেন থামতে চাইছে না। বার বার এদিক ওদিক তাকাচ্ছে। আরিয়ান আবার জিজ্ঞেস করলো – ‘সত্যি করে বল তো। তুই কাকে খুঁজছিস?’

রিফাত একটা ঘোরের মধ্যে থেকে বলল – ‘একটা মেয়ের মায়াবী মুখ খুঁজছি। যে মুখের দিকে একবার তাকালে আর চোখ সরানো যায় না।যাকে প্রথম দেখাতেই বুকের হার্টবিড বেড়ে গিয়েছিল। যে সামনে আসলে দিন কে রাত মনে হয়, আর রাত কে মনে হয় মোঙ্গল গ্রহ। সেখানে শুধু আমি আর সে থাকবো, বাকি সব এলিয়েন।’

সবাই খুব অবাক হয়ে রিফাতের দিকে তাকিয়ে আছে। কেউ বুঝতে পারছে না রিফাত এসব আবোল তাবোল কী বলছে। আরিয়ান গিটার দিয়ে রিফাতের মাথায় একটা টোকা মারলো।
রিফাত আচমকা লাফ দিয়ে উঠলো। মাথায় হাত দিয়ে সামনের দিকে তাকিয়ে দেখে সবাই হা করে তাকিয়ে আছে। রিফাত বুঝতে পারছে না সবাই এভাবে তাকিয়ে আছে কেন। তাই জিজ্ঞেস করলো – ‘কী হলো তোরা এভাবে তাকিয়ে আছিস কেন?’

রাফি বলল – ‘তুই এসব কী বললি?’

রিফাত অবাক হয়ে বলল – ‘কী বললাম?’

রানা – ‘কাকে দেখলে যেন তোর হার্টবিড বেড়ে যায়। আর কী বললি, রাত কে মোঙ্গল গ্রহে মনে হয়। সেখানে তুই আর কে যেন থাকবি।
শালা তোর বাপ কী মোঙ্গল গ্রহের প্রেসিডেন্ট নাকি। যে তুই ইচ্ছে করলেই সেখানে চলে যাবি।’

রাফি – ‘আমার মনে হয় রিফাত কে ভূতে ধরছে।’

আরিয়ান ওদের কথা শুনে রেগে গিয়ে বলল – ‘তোরা আজাইরা কথা বন্ধ কর। আমার মনে হচ্ছে রিফাত কারোর প্রেমে পড়েছে।’

রিফাত এতক্ষন চুপ করে ছিল। কিন্তু যখনই কিছু বলতে যাবে সামনে থেকে কে যেন ডাক দিলো। সবাই সামনে তাকিয়ে যতটা না অবাক হয়েছে তার থেকে বেশি রিফাত অবাক হয়েছে। কারণ সামনে দাঁড়িয়ে আছে আরিফ সাহেব তার ঠিক পাশেই দাঁড়িয়ে আছে তারিন, রিফাতের চোখে সেই মায়াবী মুখটা। রিফাতের চোখ দু’টো এতক্ষন যে মুখটাকে খুঁজছিল সেই মুখটা এখন সামনে দাঁড়িয়ে আছে। একমনে তারিনের দিকে তাকিয়ে আছে রিফাত। আশেপাশে কী হচ্ছে কোন খেয়াল নেই তার। তারিন একটু একটু করে এগিয়ে রিফাতের কাছে চলে এলো। তবুও রিফাতের চোখ দু’টো তারিনের দিকে তাকিয়ে আছে। আরিয়ান কয়েকবার রিফাত কে ডেকেছে। কিন্তু রিফাতের সেদিকে কোন খেয়াল নেই। রাস্তায় ফুচকা দেখলে মেয়েরা যেভাবে তাকিয়ে থাকে। রিফাত ও ঠিক সেভাবেই তারিনের দিকে তাকিয়ে আছে। রিফাতের অবস্থা দেখে সবাই হাসাহাসি করছে৷ তারিন লজ্জায় মাথা নিচু করে মিটমিট করে হাসছে। আরিয়ান রিফাত কে জোরে একটা ধাক্কা দিলো আর রিফাত তারিনের উপরে গিয়ে পড়লো।

চলবে…………?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here