উপন্যাসঃ পাহাড়ে মেঘের ছায়া
পর্ব – ৩২
(নূর নাফিসা)
.
.
“প্রিয় জনক ও জননী,
প্রথমেই বলে নেই তোমাদের ছেলে বয়সে এতো বড় হয়েও অপরাধ করেছে। তোমাদের না জানিয়ে খুব বড় ভুল করে ফেলেছে। তোমরা আমাকে যা শাস্তি দিবে তা আমি মাথা পেতে নিবো। কিন্তু দয়া করে নিজেরা কষ্ট নিও না।
বেড়াতে যাওয়ার পর সিলেটের শ্রীমঙ্গলে ছোট এক পাহাড়ে একটা মেয়ের সাথে দেখা হয় আমার। মেয়েটা পাহাড়ে ছোট বাচ্চাদের পড়াচ্ছিলো। অত:পর পাহাড় ছেড়ে চা বাগানে ঘুরতে যাই। সেখানেও আবার সেই মেয়েকে দেখেছি চা পাতা তুলছে। সেখানে আমি দুতিনদিন থেকেছি আর প্রতিদিনই পাহাড়ে, রাস্তায়, চা বাগানে ওই মেয়েটার সাথে দেখা হতো। তাকে ভালো লেগে যায় খুব। শ্রীমঙ্গল ভ্রমণ শেষ করে ভালোলাগাটা মনের ভেতরে লুকিয়ে রেখেই বিকেলের দিকে শ্রীমঙ্গল ছেড়ে চলে যাচ্ছিলাম অন্যত্র। পথে এক পাহাড় পড়লো যেটাতে আমার ভ্রমণ বাকি ছিলো। ভেবেছি চলে যাওয়ার আগে এই পাহাড়টাও দেখে যাই। সেখানে উঠেও পড়লাম। ঘুরেফিরে দেখছিলাম। পাহাড় থেকে নিচের দিকে তাকাতেই মাথা চক্কর দেয় আর আমি পড়ে যাই। জ্ঞান ফিরেছে আমার প্রায় একদিন পর। চোখ খুলেই দেখেছি আমি এক কাঠের ঘরে শুয়ে আছি। আর সেটা ছিলো সেই ভালোলাগা মেয়েরই। তার নাম নূর নাফিসা। মুসলমান সম্প্রদায়েরই। তার পরিবারে শুধু তার মা ও সে ই আছে। সুস্থ হতে আমার অনেকদিন লেগেছে। মা মেয়ে দুজনেই যত্ন নিয়েছে। আস্তে আস্তে আমি মেয়েটির মায়ায় পড়ে যাই। আশেপাশের লোকজন দেখতে আসতো আমাকে আবার অগোচরে তাদের উল্টাপাল্টা কথাও শুনিয়ে যেত। দুজন মহিলা, ঘরে একজন পর পুরুষ! সেজন্য তখন অনেকটা সুস্থ থাকায় আমি তাদের বাসা ছেড়ে আবার রিসোর্টে উঠি। কিন্তু সেদিন ঠিক করেই ফেলি আমি এই মেয়ের মায়ায়ই সারাজীবন পড়ে থাকবো। অত:পর তাকে মানানোর জন্য চেষ্টা করতে থাকি। বাচ্চাদের পড়ানোর সময় পাহাড়ে চলে যেতাম, আবার পিছু পিছু চা বাগানে চলে গিয়ে বিরক্ত করতাম। কিন্তু মানাতে পারিনি, তার মন পাথরের মতো কঠিন। একদিন বিকেলে সুযোগ পেয়ে এবং সময় চেয়ে নাফিসার সাথে পাহাড়ে গল্প করি। সন্ধ্যায় পাহাড় থেকে নামার সময় স্থানীয় কিছু লোকের সামনে পড়ে যাই। তাদের উপেক্ষা করে নাফিসাকে চা খাওয়ার জন্য রিকোয়েস্ট করি আর টংয়ের দোকানে একসাথে চা খাই। সেখান থেকে নাফিসাকে বাড়ি পর্যন্ত এগিয়ে দিয়ে আসতে যাই আর সেই পথেই ওই লোকগুলোর কুনজরে পড়ে যাই। তারা আমাদের ধরে নাফিসাদের বাসায় নিয়ে যায় এবং এলাকার মেম্বারসহ আশেপাশের লোকজন জমা করে। আর সেদিনই আমাদের বিয়ে দিয়ে দেয়!
আমি চেয়েছিলাম, নাফিসাকে মানিয়ে তোমাদের জানাবো তার কথা আর তোমরা রাজি থাকলে ওকে বিয়ে করবো। কিন্তু দুর্ঘটনাবশত সেদিন বাধ্য হয়েছি বিয়েটা করতে। না হলে এলাকা থেকে তাদের চুনকালি মাখিয়ে তাড়িয়ে দেওয়া হতো। হঠাৎ শুনলে তোমরা কষ্ট পাবে তাই জানাই নি। সেদিন থেকে একটাই চিন্তা করে যাচ্ছিলাম কিভাবে তোমাদের জানাবো। বাবা সিলেট যাওয়ার পরও চেষ্টা করেছি কিন্তু বলার সাহস পাইনি, সুযোগও হয়ে উঠেনি । দিন যত যাচ্ছে আমার চিন্তা তত বাড়ছে তাই হুট করেই আজ চলে এসেছি জানানোর জন্য। আমাকে যা শাস্তি দিবে তা গ্রহণ করার জন্য আমি প্রস্তুত।
আরেকটা কথা, বৃষ্টি কুমিল্লা…! ”
এইটুকু পড়ে থেমে গেছে, বৃষ্টি আর পড়তে পারলো না! মেঘ তার কথা এখানে তুলেছে কেন! বৃষ্টি মেঘের দিকে তাকালো কিন্তু মেঘ মেঝের দিকেই তাকিয়ে আছে। মেঘের চোখ দিয়ে ফোটা ফোটা পানি সরাসরি ফ্লোরে পড়ছে! রায়হান চৌধুরী বৃষ্টির দিকে তাকিয়ে বললো,
– কি, পড়া শেষ?
বৃষ্টি মাথা নেড়ে “না” জবাব দিলো। এবার নিচু স্বরে আবার পড়তে লাগলো,
” আরেকটা কথা, বৃষ্টি কুমিল্লা যায়নি। তোমাদেরকে মিথ্যে বলে সে ফ্রেন্ডদের সাথে সিলেট গিয়েছে। আর আমার সাথে দেখা হয়েছে বাবা সিলেট যাওয়ার দুদিন আগে। আমি সিলেট গিয়েছি তাই সেও সেখানেই গেছে। এতোদূর তোমরা যেতে দিবে না তাই সে তোমাদের কুমিল্লার কথা বলেছে। আর কেউ না বুঝলেও বাবামা সন্তানদের বুঝে। এতো ভালোবাসো আমাদের, এতোসব করেছো আমাদের জন্য তবুও আমরা তোমাদের কষ্টই দিয়ে যাই। আল্লাহও হয়তো ক্ষমা করবে না!”
চিঠি পড়া শেষ হতেই টেবিলে কাগজ রেখে মাথা নিচু করে মেঝের দিকে তাকিয়ে বৃষ্টি দাড়িয়ে আছে। চোখ থেকে গড়িয়ে পড়ছে অশ্রুধারা! ভাইবোন কেউই তারা বাবামায়ের মুখে তাকানোর সাহস পাচ্ছে। রায়হান চৌধুরী ও মোহিনী ছেলেমেয়ের দিকে তাকিয়ে আবার একে অপরের দিকে তাকালো। রায়হান চৌধুরী দেখলেন মোহিনীর চোখে হাজার প্রশ্ন! অর্থাৎ রায়হান চৌধুরীর সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় আছে মোহিনী। রায়হান চৌধুরী স্বাভাবিক কন্ঠে বললেন,
– মোহিনী তাদের শৈশবকালে যে তুমি বেত বানিয়েছিলে সেগুলো কি আছে? থাকলে নিয়ে এসো, তারা যে হাতে পায়ে বেড়ে গেছে সেটা কি বুঝতে পারছে না! না মারতেই আমার বাড়িকে সুইমিংপুল বানানোর সাহস কি করে হয়! আজ আমি বেত্রাঘাত করবো তাদের, যাও নিয়ে এসো।
মোহিনী বুঝতে পেরেছে রায়হান চৌধুরী স্বাভাবিক আছে। ছেলে মেয়ে দুজনেই বাবামায়ের মুখে তাকালো! মায়ের মুখে হাসি আছে, আর বাবাও স্বাভাবিক! রায়হান চৌধুরী আবার বললো,
– মেয়ে তো আমাদের বিশ্বাস করে না! যাইহোক ওর শাস্তি কম হবে কিন্তু তোমার ছেলে এতো বড় অপরাধ করে কিভাবে! ভাবতে পারছো তুমি! বিয়ে করেছে অথচ বউ বাড়ির বাইরে। সাহস কি করে হয় বউ ছাড়া বাড়িতে ঢুকার!
অশ্রুসিক্ত নয়নে দুজনেই বাবার মুখে তাকিয়ে নিজেদের মুখে হাসি ফুটিয়ে তুললো। আর এদিকে মোহিনী বললো,
– অপরাধ করলেই ছেলেমেয়ে আমার হয়ে যায়! আর সুনামের ক্ষেত্রে তোমার হয়ে যায়! না?
– এই দেখো, সবকিছুতে আমি বড় অথচ বেশি রেগে যাচ্ছো তুমি। কোথায় বিয়ে বাড়িতে খুশি থাকবে! তা না করে উল্টো প্রতিক্রিয়া!
মেঘ হেসে বাবার কাছে এগিয়ে এসে বাবাকে বসা থেকে উঠার জন্য টানতে লাগলো! কিন্তু রায়হান চৌধুরী উঠছে না। তিনি মোহিনীকে উদ্দেশ্য করে বললো,
– মোহিনী, পরিষ্কার জানিয়ে দাও। বউয়ের মুখ না দেখিয়ে যেন আমার সামনে না আসে!
এদিকে চোখ মুছে মেঘ পকেট থেকে ফোন বের করে নাফিসার ছবি দেখিয়ে বললো ,
– বাবা, আপাতত ছবি দেখো। আর আমাকে শাস্তি থেকে মুক্তি দিয়ে উঠে দাড়াও।
ফোন নিয়ে বাবা মা দুজনেই নাফিসার ছবি দেখলো। রায়হান চৌধুরী বললো,
– এই মেয়েকে তো আমি দেখেছি কোথাও!
– হ্যাঁ, আমার সাথে জলাশয়ের পাশে জমি দেখতে গিয়ে দেখেছো।
– মোহিনী, তোমার ছেলের কান্ড দেখেছো! আমার সামনে ছিলো অথচ পরিচয় করায়নি! একে এখন কি করা যায় বলো তুমি!
মোহিনী জবাব না দিয়ে নাফিসার ছবি দেখতে লাগলো আর মেঘ বললো,
– উঠো আগে, আমিই বলে দিচ্ছে কি করবে!
মেঘ বাবাকে টেনে তুলে জড়িয়ে ধরে বললো,
– থ্যাংক ইউ সো মাচ বাবা! আমার বিশ্বাস ছিলো তোমরা মেনে নিবে! সত্যি বলো, কষ্ট চাপা রাখোনি তো আবার?
রায়হান চৌধুরী মুচকি হেসে ছেলের পিঠ চাপড়ে বললেন,
– না রে বাবা, সন্তানের সুখেই পিতামাতার সুখ। বৌভাতের আয়োজন করা হোক তাহলে আগামী শুক্রবার।
মেঘ বাবাকে ছেড়ে দিয়ে বললো,
– আগামী শুক্রবার মানে! এই চারদিন পর?
– হ্যাঁ। কাল সকালেই বেরিয়ে পড়বি আর বউমা ও বেয়াইনকে এখানে নিয়ে আসবি। এদিকে যা করার সবটা আমি করবো। একমাত্র ছেলের বিয়ে, বিয়ের আয়োজন তো করতে পারলাম না। অন্তত বৌভাতের আয়োজন করে সবাইকে নিমন্ত্রণ করা হোক।
– আংকেলের সাথে না বিয়ে নিয়ে কথা বলেছো। এখন কি করবে!
– হ্যাঁ তাইতো! তাহলে তুই মারিশাকেও বিয়ে করে নে! কত ভাগ্যবান ছেলে আমার! একসাথে দুইটা বউ পাবে!
– কিহ!
বৃষ্টি ও তার মা হেসে উঠলো! আর মেঘ বোকার মতো বাবার দিকে তাকিয়ে রইলো! বাবা আবার বললো,
– ছাগলের বাচ্চা! কোন বাবা কি তার একমাত্র মেয়েকে বিবাহিত ছেলের কাছে বিয়ে দিতে চাইবে! আমি তাকে বুঝিয়ে বললেই সে বুঝবে। তোর মতো অবুঝ লোক না!
ছাগলের বাচ্চা বলাতে মেঘ আর বৃষ্টি মুখ চেপে হাসতে লাগলো! আর মোহিনী বলেই ফেললো,
– বুড়ো হচ্ছে আর জ্ঞান বুদ্ধি কমছে! লজ্জা করে না ছেলেমেয়ের সামনে নিজেকে ছাগল বলে পরিচয় দিতে!
– এ..এই তুমি উল্টো বুঝো সবসময়! আমি সেটা বলেছি নাকি!
– হ্যাঁ আমি সারাজীবন উল্টোই বুঝি, আর তুমি পাল্টাও!
মেঘ বৃষ্টি মিটিমিটি হাসতে হাসতে বাবা মায়ের মিষ্টি ঝগড়া থেকে কেটে পড়ে নিজেদের রুমে চলে গেলো। আর এদিকে রায়হান চৌধুরী স্ত্রীকে শান্ত করতে ব্যস্ত!
রুমে এসে মেঘ খুশি মনে আম্মির নম্বরে ডায়াল করলো। সাথে সাথেই আম্মি রিসিভ করেছে!
– আসসালামু আলাইকুম।
– ওয়ালাইকুম আসসালাম। মেঘ?
– হ্যাঁ, আম্মি। নাফিসা কোথায়?
– ওর রুমে দরজা লাগিয়ে একা একা বসে কাদছে। ডাকছি একটুও শুনছে না! জেনে গেছে ও, তুমি ঢাকা চলে গেছো।
– আম্মি ওকে ডেকে আমার কথা বলুন। আমি কালকেই ফিরবো। বাবা-মাকে আমি সব জানিয়েছি আর বাবা মা আমাদের মেনেছে।
– আলহামদুলিল্লাহ। তুমি কি কালই ফিরবে?
– ইনশাআল্লাহ, কাল সকালেই রওনা দিবো। নাফিসাকে ডেকে দিন।
আম্মি লাইনে থেকেই নাফিসাকে ডাকলো, মেঘের কথা বললো। নাফিসা আম্মির কথা শুনছে না! কোনো জবাবও দিচ্ছে না! মেঘের মন মানছে না! ইচ্ছে করছে এখনই চলে যেতে। রাতের খাবারটাও খায়নি নাফিসা! মেয়েটা এতো জিদ্দি কেনো! এতোদিন জেদ করে ছিলো মেঘকে মেনে নিবে না আর এখন চোখের আড়ালই হতে দেয় না! কি করবে মেঘ বুঝতে পারছে না! তাকে বলে আসেনি নিশ্চয়ই সেই জেদ নিয়ে বসে আছে! আর বলবেই কিভাবে, বললে তো আসতেই দিতো না! ইচ্ছে থাকলেও এখন যেতে পারছে না মেঘ! এদিকে বাবা-মা কিছু জানতে পারলে টেনশন করবে আবার সেদিকে আম্মিও টেনশন করতে নিষেধ করে দিয়েছে। বলেছে তো আম্মি মানিয়ে নিবে কিন্তু নাফিসার কাছেই হয়তো যেতে পারছে না আম্মি, মানাবে কিভাবে! এতো রাতে জার্নি করে যাওয়াটাও মুশকিল!
নানান কথা ভেবে মেঘ আর রাতে বের হলো না। ঘুম নেই তার চোখে! মেঘা কি করছে সেটাই ভাবছে সে। আর উল্টাপাল্টা যেন কিছু না করে বসে, সেই দোয়াই করছে মেঘ! সেদিন বিয়ের কথা শুনেই যেই রিয়েক্ট করেছে! মন বলছে উল্টাপাল্টা কিছু করবে না। কারণ সবার আগে সে আম্মির কথা ভাববে। তবুও মেঘ শান্ত হতে পারছে না! ওদিকে মা মেয়ে, আর এদিকে মেঘ! তিনজনেরই কেটে গেছে নির্ঘুম রাত! সকাল হতেই মেঘ বাসে করে সিলেটের উদ্দেশ্যে রওনা হলো।
৩২.
দুপুরের শুরুতেই শ্রীমঙ্গল পৌছেছে মেঘ। নাফিসা বাইরে কাপড় নেড়ে দিচ্ছিলো। মাত্রই গোসল করেছে। মেঘকে দেখেই “থ” হয়ে দাড়িয়ে রইলো! মেঘের ভেতরটা কেপে উঠলো নাফিসার চেহারা দেখে! চোখের চারিপাশ কেমন ফ্যাকাসে হয়ে গেছে! সারারাত কেদে চোখ ফুলিয়ে ফেলেছে! মেঘের প্রচুর রাগ হচ্ছে! নাফিসা ছলছল চোখে তাকিয়ে আছে মেঘ পানে! মেঘ তাকে উপেক্ষা করে দ্রুত গতিতে ঘরের পাশে চলে এলো। আম্মিকে দেখেই সালাম দিয়ে কথা বললো। আম্মির কাছে জানতে পারলো সকালে ঘুম থেকে উঠেও নাফিসা কিছু মুখে দেয়নি!
মেঘ ঘরে এসে সোজা আলমারির কাছে গেলো। নিজের কাপড়চোপড় সব বের করে খাটে ফেলছে! আম্মি নাফিসার দিকে তীক্ষ দৃষ্টিতে তাকিয়ে নিজের রুমে চলে গেলো। নাফিসা দ্রুত পায়ে রুমে ঢুকলো! মেঘের আচরণ দেখে কিছুই বুঝতে পারছে না! মেঘ এসব এভাবে ফেলছে কেন! নাফিসা ভয়ার্ত কন্ঠে জিজ্ঞেস করলো,
– এভাবে কাপড়চোপড় নামাচ্ছেন কেন?
মেঘ কোনো জবাব দিলো না। নাফিসা আবার বললো,
– কোথায় যাবেন আপনি?
– এক্সিউজমি? আমাকে কিছু বলছেন?
– এমন করছেন কেন? এসব উলোটপালোট করে কি করতে চাচ্ছেন! আর ফিরেই বা এসেছেন কেন?
– আসতে চাইনি তো! তবুও আসতে হয়েছে! আমার জামাকাপড় এখানে ছিলো, এগুলো নিয়ে যেতে এসেছি। কিছুক্ষণের মধ্যেই গোছগাছ করে আবার ফিরে যাবো।
নাফিসা খাট থেকে জামাকাপড় অগোছালো ভাবেই আলমারিতে তুলে রাখলো। মেঘ তাকে সরিয়ে বললো,
– কে আপনি? আমার জামাকাপড়ে হাত দিচ্ছেন কেন? সরে দাড়ান, আমার কাজে বাধা দিবেন না!
নাফিসা পলকহীন মেঘের দিকে তাকিয়ে বললো,
– বিয়ে করেছেন?
মেঘের রাগ আরও বেড়ে গেছে! সে কাপড়ের ব্যাগ নিতে নিতে বললো,
– হ্যাঁ করেছি তো। একটা বউ আছে, দুইটা খরগোশের বাচ্চা আছে! যত্তসব!
নাফিসা মৃদু হেসে উঠলো অথচ চোখে তার নোনা জল! মেঘ ব্যাগ নিয়ে এদিকে আসতেই নাফিসা তার উপর ঝাপিয়ে পড়লো! মেঘ টাল সামলাতে না পেরে একটু পিছিয়ে গেছে। আর নাফিসা তার বুকে জোকের মতো লেগেই আছে! মেঘের কোন প্রতিক্রিয়া না দেখে নাফিসা ছলছল চোখে তার মুখের দিকে তাকালো! এই মায়াবী মুখটা আর উপেক্ষা করতে পারেনি মেঘ! মেঘাকে মিশিয়ে নিলো তার সাথে!
– এতো পাগলামি কেউ করে! খাওনি কেন হুম? না ঘুমিয়ে চোখ মুখের কি হাল করেছো দেখেছো একবার আয়নায়!
– তুমিও তো ঘুমাওনি!
– তোমার জন্যই পারিনি!
– না বলে গিয়েছো কেন তাহলে!
– বললে তো যেতেই পারতাম না।
– ঘেমে শার্ট ভিজে গেছে, গোসল করবে?
– হুম।
নাফিসা জামাকাপড় নিয়ে বাথরুমে গেলো। মেঘ গোসল করে এলে খাবার খেয়ে নিলো দুজনেই। নাফিসাকে সাথে নিয়ে মেঘ এখন ঘুমানোর জন্য প্রস্তুত। নাফিসা জিজ্ঞেস করলো,
– বাবা-মা কি মেনে নিয়েছে বিয়ে?
– বউ রেখে একা বাসায় ফিরেছি বিধায় বকেছে আমাকে। কালকেই ঢাকা ফিরবো তোমাকে ও আম্মিকে নিয়ে।
– আমি ঢাকা যাবো না।
মেঘ ব্রু কুচকে তাকিয়ে বললো,
– কেন?
নাফিসা দৃষ্টি নামিয়ে বললো,
– এমনি। আর কখনো ঢাকা যাবো না।
– তুমি কি আমাকে বাড়ি ছাড়া করবে!
নাফিসা ছলছল দৃষ্টিতে তাকালো মেঘের দিকে। মেঘ বললো,
– যেতেই হবে। আর কোন কথা হবে না এখন। ঘুমাও চুপচাপ।