পুনম পর্বঃ২১

0
1251

#পুনম
#আয়েশা_সিদ্দিকা
পর্বঃ২১

পুনম কাঁথা মুড়ি দিয়ে শুয়ে আছে।মনটা অকারণেই খারাপ!কিছু সময় থাকে যখন কোন কারণ ছাড়াই মন খারাপ হয়।আজও সেরকম দিন।অথচ আজকে একটা শুভ দিন।ঈদের দিন!আজ মন ভালো থাকার কথা।অথচ….পুনমের মন কেমন করছে।
ছোটবেলায় ঈদের দিন মানেই ছিল সাজুগুজু, সালামি আর নতুন পোশাকের ঘ্রাণ!ছোটবেলার ঈদ আর বড়বেলার ঈদ কখনোই এক নয়! পুনমের কাছে মনে হয়, ছোটবেলার সুখ,খুশি বড়বেলায় এসে সংক্রীর্ণ হয়ে যায়। যা ছোটবেলার আনন্দ তা বড়বেলার আফসোস!

লাবণ্যের ছোটাছুটির আওয়াজ শুনতে পায় পুনম।এই মেয়েটা একমুহূর্ত শান্ত থাকতে পারে না।এত চন্ঞ্চল!রান্নার ঘ্রান আসছে…মা আর সেজ আপা রান্না করছে।লাবণ্য এসে রুমে প্রবেশ করে বলে,
—-এই নয়াপু ওঠো না…নয়াপু আমার সালামী দাও।
পুনম ডাকে সাড়া দেয় না।এই মেয়ে সকাল থেকে সবার কাছে এমন ভাবে সালামী চেয়ে আদায় করছে যে মনে হচ্ছে চাঁদাবাজি করছে।পাঁজির একসার! পুনম সাড়া দেয় না, চোখবুঁজে শুয়ে থাকে।
—–এই নয়াপু ওঠো না….আমার সালামী কই….সবাই দিয়েছে এমনকি মেজ দুলাভাইও দিয়েছে!…ও নয়াপু এমন মটকা মেরে শুয়ে আছো কেন?…..ঢঙ করো না….ওঠো তো….. নয়াপু…..
লাবণ্য কাঁথা ধরে টানতে থাকে আর সাথে কথার ফুলঝুরি।

—-জ্বালাস না লাবু। আমার কাছ থেকে পরে নিস…এখন যা।
—-বাকির নাম ফাঁকি! বাকির কাজ লাবণ্য করে না।তুমি উঠবে নাকি আমি কান্না করবো……নয়াপু, আমার সোনা আপি দাও না…ওঠো না.. আমায় সালামী দিয়ে তারপর তুমি ঘুমাও….
—-মাখন লাগাবি না বেয়াদব।তুই তো সালামই করিস নি তারপর আবার টাকা চাইছিস?কত বড় রাজাকার রে তুই?
—-বাবা বলেছে পা ধরে সালাম করতে নেই। তার বদলে আমি তোমায় একটা কিসসি দেই……বলে লাবণ্য ফট করে পুনমের গালে চুমু দেয়। পুনম হেসে দেয় লাবণ্যের কাজে।
—-যা.. মরিচা আর ইষ্টি মিষ্টিকে ডেকে নিয়ে আয় একসাথে সালামী দেই।
পুনমের একথা বলতে যতটুকু দেরি হয়েছে তার আগেই পর্দার আড়াল থেকে এই তিনজনের বের হয়ে আসতে ততটা সময় লাগেনি। তারমানে এরা এতক্ষণ লুকিয়ে ছিল…. ইষ্টি মিষ্টি সালামী নিয়ে বের হয়ে যায় আর লাবণ্য কপালে থেকে ঘাম মোছার ভান করে। উফফ!কত কষ্ট করে টাকা নিতে হলো। হাতে টাকা পেয়ে মরিচার চোখে পানি চলে আসে, এই মানুষ গুলা এত ভালো কেন?ওর এই একুশ বছরের জীবনে এতটা ভালোবাসা কারো কাছ থেকে পাইনি ও। ষোল বছরে বিয়ে তারপর বাচ্চা না হওয়া, সতীন, তালাক সব কিছুর সামনা হয়েছে কিন্তু এত ভালোবাসা পায়নি।সকালে খালুজান যখন পঞ্চাশ টাকার নোট ওকে সালামী দিয়ে বললো, লাবণ্যের মত মরিচাও তো ছোট তবে এ পাবে না কেন?তখন মরিচার বুকের মধ্যটা খুব পুড়েছে।ওর খালি ওর বাবাজানের মুখটা ভেসে উঠেছে!

সারাদিন বাসায় না থাকার জন্য এখন পুনমের বাসায় থাকতে একটুও ভালো লাগে না। পুনম ঠিক করেছে আজকে সারাদিন ঘুমিয়ে কাটাবে। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে পুনমের গলার কাছটা জ্বলছে।পুনম নারকেল খেতে পারে না।কিন্তু সকালে মা জোর করে মলিদা খাওয়াইছে।মার মতে মলিদা ছাড়া আবার কিসের ঈদ? নারকেল দুধ আর চাল বেঁটে এই শরবত তৈরি হয়।যা পুনমের কাছে কুখাদ্য মনে হলেও মায়ের কাছে অমৃত! এখন কটা ভাত কচলে খেলে তবেই এই অসহ্য ঢেঁকুর আর জ্বলুনি কমবে। পুনম চুপচাপ হেটে গিয়ে খাবার টেবিলে বসে আগের দিনের রান্না করা ভাত বেড়ে খাওয়া শুরু করে। খেতে বসেই দেখতে পায় বাসার সব পুরুষ নামাজ পড়ে এসে সোফায় বসে কথা বলছে।তবে সুমন ভাইয়ের কথার দিকে কোন মনোযোগ নেই সে একমনে সেজ আপাকে দেখছে। আহাম্মক শুধু সারাজীবন দেখেই যাবে…. আর জামাল ভাই মেজ আপার পিছ পিছ ঘুরছে আর ড্যাবড্যাবিয়ে তাকিয়ে কমলা শাড়ি পড়া মেজ আপার রুপের প্রশংসা করছে।মেজ আপা বিরক্তির ভান করে দুলাভাইকে বকছে কিন্তু মনে মনে মেজ আপা আদোও বিরক্ত কিনা তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ আছে পুনমের।
**********************
রুমা ভারি কাতান শাড়ি পড়ে সেজেগুজে হারুনের সামনে চায়ের কাপ এগিয়ে দেয়।হারুন একপলক রুমার দিকে তাকিয়ে চায়ের কাপ নিয়ে তাতে চুমুক দেয়। রুমার দিকে তার কোন মনোযোগ নেই।রুমার মেজাজ খারাপ হয়।হারুন বদলে গেছে….যে হারুনকে সে ভালোবাসতো সে হারুন এই ব্যক্তি নয়।আগে এই পুরুষের চোখে ছিল মুগ্ধতা কিন্তু এখন শুধুই বিরক্তি। রুমা রাগ করে রুম থেকে বের হয়ে যায়। রুমার রাগ হারুনের মনে নাড়া না দিলেও জামিলা যে একটু আগে তাকে কল করে যেতে বলেছে তা ভেবেই সে পুলকিত হয়।চোখের সামনে ভেসে ওঠে জামিলার পাতলা ফিনফিনে নাইট ড্রেস পড়া অবয়ব! মেদহীন নগ্ন শরীর! ভেবেই রোমাঞ্চিত হয় পুরুষ স্বত্বা। রুমার স্থুলকায় শরীর হারুনকে প্রভাবিত করতে পারে না।এতটাদিন ওর শশুড় বাড়ি থাকার কারণই হলো জামিলা। নাহলে যাদের নুন আনতে পান্তা ফুড়ায় তাদের কাছে পড়ে থাকবার লোক এই হারুন তালুকদার নয়।

***************
পুনম যখন ঘুম থেকে জাগে তখন দুপুর গড়িয়ে বিকেল নামতে শুরু করেছে। বড়সড় হাই তুলে এলোমেলো সজ্জায় ড্রয়িং রুমে প্রবেশ করেই একটা বড়সড় ধাক্কা খায়! সোফায় শুকনো মুখে তানভীর বসে আছে।পুনম চোখ বন্ধ করে আবার মেলে।সেকি ভুল দেখছে।মরার মত ঘুমানোর জন্য কি সব উল্টা পাল্টা দেখছে…..তাই হবে হয়তে…তানভীর তাদের বাসায় আসবে কিভাব? বাবা গম্ভীর মুখে বসে আছে উল্টোদিকের সোফায় সাথে দুই দুলাভাইও উপস্থিত। কিন্তু সবকিছু ছাপিয়ে পুনমের নজর আটকায় তানভীরের হাতের দিকে। সেকি!হাতের পাতায় ব্যান্ডেজ কেন?আর চোখও এত লাল কেন? কি হয়েছে?মানুষটাকে এত এলোমেলো কেন লাগছে? তার কি কোন কারণে মন খারাপ?

চলবে,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here