পুনম পর্বঃ২৩

0
1177

#পুনম
#আয়েশা_সিদ্দিকা
পর্বঃ২৩

পুনম হাঁটছে ব্যস্ত পায়ে। পিঠের কাছ থেকে জামাটা ভিজে শরীরের সাথে লেগে আছে….অসহ্য! কালো রঙের অন্তর্বাসটা ঘামে ভিজার কারণে পিঠের কাছ
থেকে সম্পূর্ণ দেখা যাচ্ছে। রাস্তার কিছু লোক তা চোখ দিয়ে গিলছে….
পুনম ওড়নাটা সম্পূর্ণ ছড়িয়ে শরীরে পড়ে…. সব কিছু অসহ্য লাগে পুনমের!জীবন থেকে সম্পূর্ণ রং এভাবে হারিয়ে যাচ্ছে! একটু স্বস্তি কোথায় পাওয়া যাবে জানে না পুনম?

একটা রিকশা নেওয়া দরকার। কিন্তু হাত একদম ফাঁকা!পায়ের ব্যাথাটা বেড়েছে।এন্টিবায়োটিক খাচ্ছে তাতেও কাজ হচ্ছে না!মাথার রগ দপদপ করছে!নানান চিন্তায় কপাল কুঁচকে আসে! একা থাকলেই যত কথা মস্তিস্কে এসে ঘুরপাক খায়।ঈদ চলে গেছে আজ নয় দিন হতে চললো!মেজ আপা আপাতত তার শশুড় বাড়ি আছে।আর বড় আপারা গতকাল চলে গেছে কুমিল্লা ।যাওয়ার আগে অবশ্য অনেক তিতা কথা বলে গেছে মাকে।কথার বাণ গুলো পুনমের জন্য থাকলেও মাধ্যম হিসেবে মাকে বেছে নিয়েছে বড় আপা! গাঁ জ্বালানো কথা কিভাবে বলতে হয় তা বড় আপার কাছ থেকে শিখে রাখা উচিত!
খুব নোংরা ভাবে বড় আপা খাওয়ার খোঁটা দিয়েছে সেজ আপাকে।পুনমের বুঝে আসে না একটা মানুষ যে কারো সাতে পাঁচে থাকে না তাকে নিয়ে বড় আপা এভাবে কথা বলে কিভাবে? পুনমের বুকের ভিতর ভার হয়ে আসে, বড় আপা এমন কেন? আপন বোন কি কখনো এমন হয়?
পুনমের মাঝে মাঝে বড় আপার জন্য ভয় হয়!এত অহম ভালো নয়।সেদিন বড় দুলাভাইকে দেখলো একটা মহিলার সাথে রিকশায় করে যেতে।একজনের হাতের মুঠোয় অন্য জনের হাত ঘনিষ্ঠ ভাবে রাখা।বিষয়টি পুনমের কাছে দৃষ্টিকটু লেগেছে! বড় আপাকে বলতে চেয়েও বলতে পারেনি….উল্টো দশ কথা শুনতে হতো!

একটা ভয়ানক ঝড় এগিয়ে আসছে সামনে…. যা বুঝতে বাকি নেই পুনমের!
পুনম দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে কোচিং সেন্টারে প্রবেশ করে।এমনিতেই দেরি হয়ে গেছে….ক্লাস নেয়া শুরু করে।
******************
সুমন বসে আছে আইনের বইয়ে ঠাসা একটা চেম্বারে।একজন পিয়ন বলে গেলো,–আপনি বসেন এখনি স্যার এসে পড়বে!
সেই এখনি যে কখন শেষ হবে সুমন জানে না।সুমন জানে না কেন এই ঠিকানায় পুনম ওকে আসতে বলেছে?পুনম শুধু কল দিয়ে বললো,—সুমন ভাই আমি একটা ঠিকানা পাঠাচ্ছি। সেখানে চলে যাবেন। আমি তার সাথে কথা বলে রেখেছি,সে যা করতে বলবে আশা করি তার সাথে আপনি কো-অপারেট করবেন।কোন মিন মিন করবেন। ইটস এ হাম্বল রিকোয়েস্ট! কোন অযুহাত দেখাবেন না। মনে রাখবেন এই একটা পথই খোলা আছে আপনার পাবনীর কাছে পৌঁছানোর!
সুমনের তখন শুধুই কানে একটা কথাই বেজেছে,আপনার পাবনী!
পাবনী এই মেয়েটা তার কাছে অধরা!সেদিনের সেই পত্যাখানের দাগ এখনো বুকের ভিতর দগদগে! মেয়েটি ঘুরিয়ে পেঁচিয়ে ওকে ফিরিয়ে দিয়েছে।পাবনী! এই শান্ত মেয়েটি এখন সুমনের কাছে অশান্ত ঢেউ!

সুমনের চোখ ঝাপসা হয়ে আসছে… মাথা চক্কর মারছে…কি বলছে সামনে বসা এই মানুষটা?

রাশেদ নিরবে পানির গ্লাসটা সুমনের দিকে এগিয়ে দেয়।সুমন ঢকঢক করে পানি পান করে।সুমনের চোখের কোণ বেয়ে জল গড়িয়ে পড়ে…..
রাশেদ আবার বলে,
—-শুনুন মি.সুমন। এতটা ভেঙে আপনি পড়বেন না।এই পৃথিবীতে সবই সম্ভব! আমি একজন আইনজীবি হিসেবে যা দেখেছি,যা আপনি কখনো কল্পনাও করতে পারবেন না। পুনম আমার স্ত্রীর কাছে একজন বিশেষ মানুষ। আর সেই সুবাদে আমারও বিশেষ। পুনমের অনুরোধে আপনার কেসটা আমি নিজে খতিয়ে দেখেছি।না হলে এ কাজ আমার সহকর্মীরা করার কথা!আপনার বড় ভাইজান মানে মি. হারুন আপনাকে যেসব দলিল পত্র দিয়েছেন তা সম্পূর্ণ জাল।আপনাকে বলা হয়েছে আপনার বাবা সব কিছু বিক্রি করে দিয়েছে কিন্তু আপনার কি মনে হয়নি একবার সব কিছু যাচাই করে দেখি? এখন সেসব কথা বাদ।আমার তো মনে হচ্ছে… আপনার বাবা মায়ের মৃত্যুর পিছনে আপনার বড় ভাইজান এর হাত আছে কিনা? কে জানে? শুনন মি.সুমন…এখন যা কিছু হবে আইনী ভাবে হবে….আমরা মি.হারুনকে লিগ্যাল নোটিশ পাঠাবো।এতে যদি সে অসম্মতি দেখায় তবে সোজা থানা পুলিশ করতে হবে।

সুমন আঁতকে ওঠে। বিড়বিড় করে বলে,
সে আমার ভাই হয়!তার বিরুদ্ধে আমি কি করে লড়বো? দরকার নেই আমার কোন সম্পত্তির!

রাশেদের মেজাজ খারাপ হয়!পুরুষ মানুষের কি এতটা আবেগী হওয়া মানায়? এরকম হলে এই ছেলের কপালে দুঃখ আছে….রাশেদ বুঝতে পারে সুমন যে ধাক্কাটা পেয়েছে তা থেকে বের হতে সময় লাগবে।তাই রাশেদ বলে,
—আচ্ছা মি.সুমন আমার তাহলে কাল দেখা করি,ততক্ষণে নিজেকে শক্ত করুন।আপনার সামনের লড়াইটা দীর্ঘ কিন্ত জয় সুনিশ্চিত!

*******************
কলেজ মাঠের এককোণে বেঞ্চে বসে তারুণ এক মনে বই পড়ছে।এই ছেলে পড়তে বসলে কোন হুশ থাকেনা। লাবণ্য এসে ধপ করে পাশে বসে।নাকের উপর নেমে যাওয়া চশমাটা হাত দিয়ে ঠিক করে পিটপিট করে তাকায় তারুণ লাবণ্যের দিকে। লাবণ্য দুই গালে হাত দিয়ে বলে ওঠে,
—-ওয়াও সো কিউট!
তারুণ বইয়ের পাতায় চোখ রেখে বলে, কি?
—-তোমার মাথা!
—থ্যাঙ্ক ইউ।
লাবণ্য ফোঁস করে দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে। বিড়বিড় করে বলে,–ভ্যাড়া একটা!
লাবণ্যের মেজাজ খারাপ হয় যাও একটা বন্ধু জুটেছে তাও আবার পড়ুয়া ভ্যাড়া! এ জীবনটা পুরাই করল্লা। কই আজ কলেজে ক্লাস হবে না ঘুরবে ফিরবে!ইনজয় করবে। তা না। সে চোখের সামনে একটা বই মেলে বসে আছে। ডিজিটাল বিদ্যা সাগর একটা!হুহ!
—-এই তারুণ!তারু বেবি আমার!শোনো না।
—ছি! কিসব ডাক এগুলো লাবণ্য।
—এ ব্যাটা ছি! কিসের হ্যা? আমার বন্ধু না তুমি? আর বন্ধুকে যা খুশি বলা যায়।আসছে ছি ছি করতে।একদম ঘুসি মেরে এই কিউট ফেস ভর্তা করে দিবো।

তারুণ ঠোঁটে আঙুল দিয়ে বুঝায় সে চুপ থাকবে।লাবণ্য তা দেখে হেসে ফেলে। তারুণ হটাৎ ই খেয়াল করে আজ লাবণ্য একটুও সাজে নি। শুধু চোখে কাজল টেনে দিয়েছে।লাবণ্য কলেজে আসছে তাও না সেজে, এও সম্ভব!
—-মেকাপ রানী লাবণ্য আজ সাজে নি যে?
—-কি সাজবো?সারা রাত মরিচার যত আজাইরা গল্প শুনে সকালে লেট করে উঠেছি।এরপরও সাজতে পারতাম কিন্তু আজ বাবা সঙ্গে করে নিয়ে আসছে।তাই এভাবে চলে আসছি।কেন?আমাকে দেখতে খারাপ লাগছে।
—-বরং আজই বেশি সুন্দর লাগছে!
তারুণের কন্ঠটা কেমন যেন শুনায়, লাবণ্য চমকে উঠে চায়। পরক্ষণেই লাবণ্য বলে,—এত পড়ালেখা কেন করো তারুণ?
তারুণ সে কথার জবাব না দিয়ে বলে,
—-এই নাও টাকা।যা খুশি খাও বা করো কিন্তু আমায় ডিস্টার্ব করবে না।আমি এই প্যারাটা ততক্ষণে পড়ে নেই।
ঠিকাছে?

লাবণ্য ভেঙচি কেটে উঠে পড়ে টাকা নিয়ে।তারুণ পড়ায় মন দেয়। আর লাবণ্য প্রথমে ঝালমুড়ি এনে কুড়মুড় করে খায় আর তারুণের পড়া দেখে। ঝালমুড়ি শেষ হলে বাদাম, চিনা বাদাম,চিপস, সিংগাড়া, আইসক্রিম এবং সবশেষে আচার খায়।এতটা টাইম চুপ করে পাশে বসে খেয়েছে এখন তো খাওয়া শেষ এখন কি করে চুপ থাকবে?এদিকে তারুণের পড়াও শেষ হয়নি।তাই বিড়বিড় করে বলে,
—এখন কি খাবো?
তারুণ ঠাঁস করে বই বন্ধ করে বলে,আমাকে খাও!পুরাই পেটুক একটা! এত কিছু একসাথে কি করে খায় মানুষ? আর সব আনহাইজেনিক খাবার!
লাবণ্য নাকমুখ কুঁচকে তাকায়। তারুণ হেসে দেয়। লাবণ্য মনে মনে বলে,এই হাসিকে কি নিষ্পাপ হাসি বলে?
তারুণ লাবণ্যের হাত ধরে টেনে উঠায়।এরপর একহাতে বই আর একহাতে লাবণ্যের হাত ধরে হাটা শুরু করে।কলেজ পেড়িয়ে ফুটপাতের রাস্তায় চুপচাপ হাঁটে।একসময় তারুণ বলে,
—-আমার জীবনে আমি মানুষের সঙ্গ পেয়েছি খুব কম।ছোটবেলা থেকেই বোর্ডিং স্কুলে থেকে পড়েছি।খুবই কড়াকড়ি! যখন ছুটিতে বাসায় আসতাম তখন দেখতাম বাবা ব্যবসা সামলাতে ব্যস্ত।মা সবসময় চুপচাপ! ডাক্তার বলে,মায়ের নাকি মানসিক সমস্যা আছে।মায়ের কাছে গিয়ে বসলে মা কেমন চোখে যেন তাকিয়ে থাকতো।সে চোখে কষ্ট না হাহাকার থাকতো তা আমি বুঝতে পারতাম না!বুবুর সাথে বন্ডিংটা হওয়ার আগেই বিয়ে করলো।আর ভাই যে নিজে এক পাহাড় কষ্ট নিয়ে ঘুরে বেড়ায় কিন্তু ভাগ দেয় না কাউকে। তাই একটা সময় বই সঙ্গী হয়ে উঠলো আমার!লাবণ্য আমি শুধু জানি, আমাকে অনেক পড়তে হবে।যেখানেই পড়ি না কেন?আমাকে সবার সেরা হতে হবে!এই তাগিদ ভিতর থেকে আমি উপলব্ধি করি!মনে হয় কে যেন ফিসফিসিয়ে বলছে,—তুই হবি সেরার সেরা!

লাবণ্য অবাক হয়।তারুণ কখনো এত কথা বলে না।
তারুণ আবার বলে,
—–আমরা কেমন বন্ধু লাবণ্য?
লাবণ্য ভুরু কুঁচকে তাকায়। তারুণ বলে,
—যারা একই ক্লাসে পড়ে তারাও বন্ধু, একসাথে বসলে তারাও বন্ধু আবার কেউ বেস্ট ফ্রেন্ড আর কেউ কেউ হয় আত্মার বন্ধু। যাদের বন্ধুত্বে কোন খাদ থাকে না!আমার সাথে যারাই বন্ধুত্ব করেছে সবাই স্বার্থ দেখে করেছে।লাবণ্য তুমি আমার স্বার্থহীন বন্ধু হবে?যে বন্ধু আমৃত্যু আমার পাশে থাকবে ঠিক আমার বইয়ের মত!আমাদের সম্পর্কের একটাই নাম হবে বন্ধু!

—হবো।
—আমি যদি তোমাকে তুই করে বলি তবে কি তুমি রাজি হবে?
—-একশর্তে!
—কি?
—তোকে এখন আমার সাথে টক ঝাল ফুচকা খেতে হবে।
—ওহ!নো লাবণ্য।
—কোন নো ফো নয় দোস্তো।শর্ত না মানলে এই লাবণ্য নাই!
—-আমার আবার বমি হবে।
—হোক।
********************
পুনমদের বাড়িটা আজ ভীষণ চুপচাপ। বড় আপা নেই, মেজ আপা নেই!ইষ্টি মিষ্টির হইচই নেই।বাবা চুপচাপ খবর দেখছেন।মা বিছানায় শুয়ে পড়েছেন।ইদানীং একটু অল্পতেই হাঁপিয়ে ওঠে মা।সেজ আপা বারান্দায় বসে গুন গুন করে কি একটা সুর গাইছে।মরিচাও আজ বড় শান্ত হয়ে রান্না ঘরে ঘুটঘুট করছে।সবথেকে বড় আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে আজ লাবণ্য কোন বায়না ছাড়াই বই পড়ছে।ভাত খাওয়া পড়া নয়!সত্যি সত্যি পড়া!
পুনম ধীরপায়ে ছাদে উঠে।পায়ের ব্যাথাটা বড্ড ভোগাচ্ছে!
সুমন ভাই আকাশের দিকে মুখ করে দাঁড়িয়ে আছে।বাতাসে চুল গুলো উড়ছে। পুনম মৃদুস্বরে ডাক দেয়,
—-সুমন ভাই?
সুমন ফিরে তাকায়।চোখ মুখ ভীষণ লাল।কেঁদেছে নাকি?
—তোমার শরীর এখন কেমন পুনম?
—ভালো।
এরপর দুজনেই চুপ। কেউ কোন কথা খুঁজে পাচ্ছে না।
শেষে সুমন নিরাবতা ভেঙে বলে,
—-আমি তখন এসএসসির স্টুডেন্ট। বড় ভাইজান বাইক চালায়।বন্ধু বান্ধব নিয়ে বাইকে করে এদিক সেদিক ঘুরে।কাকা জীবিত তখন।বড় কাকাকে বললাম, কাকা আমায় একটা বাই সাইকেল কিনে দিবেন?পুনম আমি আমার সীমাবদ্ধতা জানতাম।তাই বাইক চাইলাম না।বড়কাকা কি বললো জানো,—-তোর বাবায় তো মরার আগে সব টাকা পয়সা শ্রাদ্ধ করে গেছে, এবার কি তুই করতে চাইছিস?আমি আমার শখের লাগাম টেনে ধরলাম!সবাই খেতো ভালো খাবার আর আমার জন্য থাকতো বাসি তরকারি।বড় ভাইজান ফুর্তি করে টাকা উড়ায় আর আমি টাকার জন্য ঠিকমত পড়তে পারি নাই।আর এদের জন্যই আমার বাবা কতকিছু করছে।আমি এতকিছুর পরও বড় ভাইজানের মুখের উপর কথা বলিনি।তোমার মনে আছে পুনম,বড় ভাইজানের বিয়ের সময় আমি একটা ফুটো শার্ট পড়েছিলাম!আর তা নিয়ে কত মানুষের কত হাসাহাসি। আমার আসলে দোষটা কোথায় পুনম?

পুনম কি বলবে ভেবে পায়না! মাঝে মাঝে কথা ফুরিয়ে আসে।
—-সুমন ভাই কোন কিছুই আমরা সহজে পাইনা। এই পৃথিবীতে কোন কিছুই আপনাকে সেধে সেধে দিবে না কেউ।আপনি যদি লড়তে না পারেন তবে আপনার স্থান হবে শূন্য জায়গায়!
সুমন চিৎকারের মত বলে উঠে, আমার কিছু চাই না পুনম।কিচ্ছু না।থাকুক ওরা স্বার্থ নিয়ে।
—-শুনুন সুমন ভাই। স্বার্থ বা কারণ ছাড়া কোন সম্পর্ক বা কার্য হয়না।প্রতিটি সম্পর্কে একটা কারণ বা স্বার্থ থাকে।হোক সেটা পজেটিভ বা নেগেটিভ!
আমার কথা গুলো আপনার কাছে কঠিন মনে হতে পারে কিন্তু আমি তবুও বলবো,আপনার ভালো থাকার জন্য সেজ আপাকে দরকার আর সেজ আপার জন্য আপনাকে।শুধু ভালোবাসলেই ভালো রাখা যায় না।আর এই পৃথিবীতে টাকা ছাড়া ভালো থাকা যায় না।কথাটা শুনতে খারাপ লাগলেও এটাই চরম সত্যি!আপনাকে ছিনিয়ে আনতে বলেনি। আপনার বাবার কষ্টে অর্জিত মূল্যকে রক্ষা করতে বলছি।সুমন ভাই, আমার সেজ আপা অনেক কষ্ট করছে। এবার সে ভালো থাকুক।আর তার জন্য যা করার আপনি করবেন।অনিশ্চিত পথের দিকে আমি কোনদিন ঠেলে দিব না আপাকে।এতে যদি আপনি আমায় স্বার্থপর ভাবেন তাতে আমি মাইন্ড করবো না।

সুমন অবাক চোখে তাকিয়ে থাকে। পুনম ছাদ থেকে নেমে যায়।এই কঠিন কথাগুলো বলার দরকার ছিল। এত মহান হয়ে এই সমাজে টিকে থাকা যায় না!

**********************************
টিউশন থেকে তিনদিনের ছুটি নিয়েছে পুনম।আজ ওরা কক্সবাজার যাবে।আজ অবশ্য দিনের টিউশন ও কোচিং কম্পিলিট করেছে।তারপরও এভাবে পড়া কামাই দিয়ে পুনমের টাকা নিতে ভালো লাগে না।
পুনম বারবার মোবাইল চেক করছে আর ব্যাগ গুছাচ্ছে। এই দশটা দিনে একবারও তানভীরের কোন খোঁজ পায়নি পুনম।একটা মানুষ এভাবে উধাও হয়ে যেতে পারে? না কোন কল করছে না কোন টেক্সট। পুনম যতবার বাহিরে বের হত বারবার চোখ ঘুরিয়ে এদিক ওদিক তাকাতো।যদি তানভীর কে একবার দেখা যায়।কিন্তু না!পায়নি।
সবথেকে আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে ঈদের পরদিন পুনম এক্সিডেন্ট হলো।রাস্তার পাশ থেকে পুনম বাড়ি ফিরছিলো কোথা থেকে একটা হোন্ডা এসে এমন ভাবে ধাক্কা দিলো যে পাশের ওয়ালের উপর পড়ে কপাল কেটে গেছে।পায়ে বেশি ব্যথা পেয়েছে।পুরো একদিন বাবা হসপিটালে রেখে তারপর বাসায় এনেছে।এতকিছু হলো তারপরও তানভীর কোন খবর নিল না। তানভীর কি জানে না পুনম এক্সিডেন্ট করেছে?নাকি মানুষটারই কোন বিপদ হয়েছে?না চাইতেও পুনমের মনে তানভীর নামক চিন্তা এসে ভীর করে।পুনম মনে মনে বলে,যেখানেই আপনি থাকেন না কেন নবাবপুত্র আল্লাহ যেন আপনাকে ভালো রাখে!

চলবে,
আজকের পর্বে জানিনা কি লিখেছি।ব্যক্তিগত কারণে ডিস্টার্ব আছি।শুধু আপনারা অপেক্ষায় থাকবেন তাই দেয়া।কোন জায়গায় বেখাপ্পা লাগলে মন্তব্য করবেন। আর বলুন তো পুনমের এক্সিডেন্ট কি সত্যিই এক্সিডেন্ট নাকি প্রিপ্লান কিছু?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here