পূর্ণিমাতিথি পর্ব-৪ ৫

0
3432

#পূর্ণিমাতিথি
#লেখিকা-তাসনিম জাহান রিয়া
#পর্ব-৪+৫

বেলকনিতে রাখা ডিভানে বসে আছি। সত্যিই আমার পোড়া কপাল। আমার কোনো স্বপ্নই পুরণ হলো না। উরুম দুরুম বিয়ে হয়ে গেলো। এমনকি ঠিক করে কাঁদতেও পারলাম না। বিদায়ের সময় যখন আমি আম্মুকে জড়িয়ে ধরে কাঁদছিলাম তখনি রুদ্র ভাইয়া এসে তাড়া দেওয়া শুরু করে। রুদ্র ভাইয়ার কথায় রুদ্র ভাইয়ার কাজিন আমাকে আম্মুর কাছ থেকে টেনে নিয়ে এসে গাড়িতে বসিয়ে দেয়। আমরা গাড়িতে বসতেই গাড়ি চলতে শুরু করে।

বাড়িতে আসতেই আমাকে এই রুমে রেখে যাওয়া হয়। কারণ রুদ্র ভাইয়ার রুম নাকি এখনো সাজানো কম্পলিট হয়নি। এই বাসার প্রতিটি কোণা আমার চেনা। হবেই না কেনো ফুফির বাসা বলে কথা।

_______________

কিছুক্ষণ আগেই রিদি আপু আমাকে রুদ্র ভাইয়ার রুমে বসিয়ে রেখে গেছে। রিদি আপু রুদ্র ভাইয়ার বড় বোন। বিয়ে হয়েছে ৫ বছর, চার বছরের একটা মেয়েও আছে। আমি চোখ ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে রুমটা স্ক্যান করছি। এ বাসায় অনেক বার আসা হলেও এই রুমে তেমন আসা হয়নি। কারণ একটাই রুদ্র ভাইয়া নিজের রুমে অন্য কারো উপস্থিতি ভালো লাগে না। আজকে তো রুমটা অন্য রকম সাজে সেজে ওঠেছে। সারা রুম ফুলের গন্ধে মৌ মৌ করছে।

ঠাস করে দরজা লাগানোর শব্দ আমি চমকে সামনে তাকালাম। রুদ্র ভাইয়া এসেছে। রুদ্র ভাইয়াকে দেখে আমি গুটিয়ে গেলাম। কেমন যেনো অদ্ভুত অনুভূতি হচ্ছে। আমি কী করবো বুঝতে পারছি না। রুদ্র ভাইয়ার ফুফি তো বলছিল স্বামী বাসর ঘরে আসলেই পায়ে ধরে সালাম করতে। কিন্তু আমাদের ইসলাম ধর্মে তো আল্লাহ ছাড়া আর কারো সামনে মাথা নত না করতে।

রুদ্র ভাইয়াকে আমার দিকে এগিয়ে আসতে দেখে আমি জড়সড় হয়ে বসলাম। রুদ্র ভাইয়া এসে ঠিক আমার সামনে দাঁড়ালো। রুদ্র ভাইয়া বরাবরের মতো গম্ভীর কন্ঠে বললেন,

আমাকে দেখে এতো আনইজি ফিল করার কিছু হয়নি। তোমাকে আমার কিছু বলার আছে।

আমি এবার রুদ্র ভাইয়ার দিকে চোখ তুলে তাকালাম। রুদ্র ভাইয়া একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলতে শুরু করেন,

এই কথাগুলো আমার আগেই বলা উচিত ছিল। আমি বলার চেষ্টাও করেছিলাম। কিন্তু বলার সুযোগ পায়নি। হয়তো তোমার সাথে অন্যায় করা হচ্ছে। কিন্তু আমি নিরুপায়। আমি আমার মাকে খুব ভালোবাসি। এতোটা ভালো হয়তো আমি নিজেকেও বাসিনি। আম্মুর কথা আমি কোনোদিনও ফেলতে পারি না। তাই তো তোমাকে বিয়ে করতে হলো। আম্মুকে আমি অনেক বোঝানোর চেষ্টা করেছিলাম। কিন্তু আম্মু বুঝতে নারাজ। তোমাকে তার পুত্র বধূ হিসেবে চাই চায়। আমি বিয়েতে রাজি নাহলে খাওয়া দাওয়া সব বন্ধ করে দিবেন। এক ফোটা পানিও খাবেন না।
আমি বিয়েতে রাজি হলেও বাড়ি ছেড়ে চলে যেতে চেয়েছিলাম। কিন্তু আম্মু দিব্বি দিয়ে বসে। আমি দিব্যি বিশ্বাস না করলেও। আম্মুর লাইফ নিয়ে বিন্দু পরিমাণ রিস্কও নিতে চাই না। তোমাকে ফোন ও দিয়েছিলাম। কোনো কারণে হয়তো কল কেটে গিয়েছিল। এরপর থেকে তোমার ফোন বন্ধ ছিল, আর আম্মুও জেনে গিয়েছিল বিয়ে ভাঙার জন্য আমি তোমাকে ফোন করছি। আম্মু তখন বলেছিল, যদি আরেকবার আমি তোমার সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করি। তাহলে আম্মু বাসা ছেড়ে চলে যাবে।

আপনি এগুলো আমাকে কেনো বলছেন?

আমি কোনো সিনেমার নায়ক না যে, আমার অমতে বিয়ে হয়েছে বলে তোমার ওপর অত্যাচার করবো। আমি অবুঝ নই। যেখানে আমি ছেলে হয়ে বিয়ে ভাঙতে পারি নাই, সেখানে তোমার পক্ষে তো অসম্ভব। তার ওপর তোমার আগে একটা বিয়ে ভেঙেছে। এখানে দোষ তোমার না আমার। এই অন্যায়ের জন্য আমাকে যা করতে হবে তাই করবো। কিন্তু তোমাকে নিজের স্ত্রী হিসেবে মানতে পারবো না। তোমার সাথে আমার ঠিক যায় না। আমি নিজেকে বোঝানোর চেষ্টা করেছিলাম। কিন্তু তোমাকে ভালোবাসা বা নিজের স্ত্রী হিসেবে মেনে নেওয়া আমার পক্ষে সম্ভব না। তুমি আমার থেকে বয়সে অনেকটাই ছোট, আর তুমি আমার কাজিন। এই ব্যাপারগুলো আমার কাছে বিশ্রী লাগছে। তাই প্লিজ তুমি আমার বউ হবার বা নিজের অধিকার আদায়ের চেষ্টা করোনা।

বাহ আপনি কতো সহজে কথাগুলো বলে দিলেন। আপনি যতটা সহজে কথাগুলো বলে দিলেন সবকিছু কী এতোটাই সহজ? আমার কী কোনো সেল্ফ-রেসফেক্ট নেই আপনাদের বাসায় এমনি এমনি পড়ে থাকবো? আপনি আমার লাইফটা নষ্ট করে দিলেন।

আমি তোমার জীবন নষ্ট হতে দিব না। কয়েক মাসের মাঝেই আমাদের ডিবোর্স হয়ে যাবে। আর এই ব্যাপার কেউ কিছু জানবে না। আমাদের ফেমিলি ব্যতীত আর কেউ কোনোদিন তোমার আমার বিয়ে অথবা ডিবোর্সের কথা জানবে না। তুমি যতদিন এখানে আছো ততদিন তুমি আমার দায়িত্ব। আরাফ আয়মান রুদ্র কখনো নিজের দায়িত্ব অবহেলা করে না।

কথাগুলো বলে রুদ্র ভাইয়া নিজের ড্রেস নিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেলেন। আমার চোখ থেকে টুপ টাপ অশ্রু গড়িয়ে পড়ছে। বুকে অসহনীয় ব্যথা হচ্ছে। এরকম জীবন তো আমার কাম্য নয়। আমি তো আমার স্বামীর দায়িত্ব না ভালোবাসা হতে চেয়েছিলাম। দোষ তো আমারই। আমার উচিত ছিল রুদ্র ভাইয়াকে কল করা। তাহলে আজকে এই দিন দেখতে হতো না। দরজার খোলার আওয়াজে আমি দ্রুত চোখের জল মুছে নিলাম। আমি নিজেকে কারো সামনে দুর্বল প্রমান করতে চাই না।

রুদ্র ভাইয়া ওয়াশরুম থেকে বের হতেই আমি ওয়াশরুমো প্রবেশ করলাম। ফ্রেশ হয়ে বের হয়ে দেখি রুম ড্রিম লাইট জ্বলছে শুধু। উনি বিছানার এক সাইড হয়ে শুয়ে আছেন।আমি বিছানার এক পাশে দাঁড়িয়ে ভাবছি শুয়ে পড়বো না দাঁড়িয়ে থাকবো। সারা রাত তো এভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে পারবো না। আমি ইতস্ততঃ বোধ করতে করতে উনাকে জিঙ্গেস করলাম,

আমি কোথায় শুবো?

রুদ্র ভাইয়া এতক্ষণ চোখ বন্ধ করেছিল আমার কথা শোনার সাথে সাথে ধপ করে চোখ খুলে ফেলেন। আমি একটু চমকে ওঠি। উনি রাগ মিশ্রিত গলায় বললেন,

আমার মাথায় শোও ডাফার। এখানে কোনো সিরিয়াল হচ্ছে না আর না আমি সেই সিরিয়ালের নায়ক। আমরা লিগ্যাল হাজবেন্ড ওয়াইফ আমরা বেড শেয়ার করতেই পারি। তোমার জন্য অন্য একটা অপশন আছে।তুমি চাইলে বেলকনিতে থাকতো পারো। [ লেখিকা- তাসনিম জাহান রিয়া ]

উনি আবার চোখ বন্ধ করে ফেলেন। এদিকে উনার কথা শুনে আমার মাথায় ধপ করে আগুন জ্বলে ওঠেছে। আমি ঠাস করে উনার সাথে শুয়ে পড়লাম। সাথে সাথেই তিনি ছিটকে সরে গেলেন। আর মৃদু চিৎকার করে বলেন,

পাশে শুতে দিয়েছি বলে আমাকে ছোঁয়ার মতো দুঃসাহস দেখিয়ো না। তোমার শরীর যদি একটু আমার শরীরকে স্পর্শ করে। তাহলে সোজা বাপের রেখে আসবো।

এই যে শুনুন……

আরেকটা কথা বললে রুম থেকে বের করে দিবো।

______________

সকাল সকাল ঘুম ভেঙে গেলো। বিছানা ছেড়ে ওঠতে গিয়েও টান অনুভব করি। পিছনে তাকিয়ে দেখি রুদ্র ভাইয়ার পিঠের নিচে আমার উড়না। উড়না ধরে টান দিলাম কাজ হলো না। আমি এবার উনাকে ডাকা শুরু করলাম।

রুদ্র ভাইয়া,, রুদ্র ভাইয়া, রুদ্র ভাইয়া।

এই মেয়ে এভাবে ষাঁড়ের মতো চিংকার করছো কেনো। আমি কানে কালা নই। আস্তে ডাকলেও শুনতে পাব। বল কেনো ডাকছো?

আপনার পীঠের নিচে আপনার উড়না ছিল রুদ্র ভাইয়া।

আরেকবার যেনো তোমার মুখে ভাইয়া না শুনি। আমাদের সম্পর্কটা কেমন সেটা শুধু আমাদের মাঝেই সীমাবদ্ধ থাকবে। আম্মু না যেনো না জানতে না পেরে।

______________

ড্রয়িংরুমে আসতেই আমি চমকে ওঠি। ড্রয়িংরুমের সোফায় বসে আছে বিহান। আমার মনে ঘুরপাক খাচ্ছে একটা প্রশ্নই বিহান এখানে কী করছে?

চলবে……
#পূর্ণিমাতিথি
#লেখিকা-তাসনিম জাহান রিয়া
#পর্ব-৫

ড্রয়িংরুমে আসতেই আমি চমকে ওঠি। ড্রয়িংরুমের সোফায় বসে আছে বিহান। আমার মনে ঘুরপাক খাচ্ছে একটা প্রশ্নই বিহান এখানে কী করছে?

এখানে কী করছো?

আমি চমকে পিছনে তাকাই। আমার ঠিক পিছনেই দাঁড়িয়ে আছে রুদ্র ভাইয়া মানে রুদ্র। রুদ্রের কথা শুনে বিহানও এদিকে তাকায়।

আব মানে।

এখানে এভাবে না দাঁড়িয়ে থেকে ডাইনিং রুমে যাও। আরে মি. বিহান যে। তা কী মনে করে আমার মতো একটা সামান্য ডক্টরের বাড়িতে।
আপনার পায়ের ধুলো আমাদের বাসায় পড়লো আমি তো ধন্য হয়ে গেলাম।

বিহান রুদ্রের কথা পাত্তা না দিয়ে আমাকে উদ্দেশ্য করে বলে, রিয়া তুমি এখানে? ডক্টর রুদ্রের বাসায় তুমি কী করছো?

বিহানের সাথে রুদ্রের আগে দেখা হয়নি। মামুনির সাথে বিহানের পরিচয় হলেও রুদ্রের সাথে হয়নি। রুদ্র আমার বিয়ের কোনো অনুষ্ঠানই ছিল না। আমি কী বলবো বুঝতে পারছি না। আমতা আমতা করে কিছু বলতে যাব। তার আগেই রুদ্র থমথমে গলায় বলে,

আপনি ঐদিকে নজর না দিয়ে এদিকে দিন। রিয়া এখানে কী করছে? সেটা আপনাকে না জানলেও চলবে। রিয়া তুমি ডাইনিং রুমে যাও।

রুদ্রের চোখে আমি স্পষ্ট রাগের আবাশ পাচ্ছি। তাই কোনো কথা না বাড়িয়ে সেই স্থান ত্যাগ করি। আমি সোজা কিচেনে যাই। কিচেনে মামুনি কাজ করছিল। আমি মামুনিকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে বলি,

কী রান্না করছো মামুনি?

তুই আমাকে মামুনি ডাকছিস কেনো?

প্লিজ মামুনি তুমি আমাকে এখন তোমাকে আম্মু ডাকার কথা বলো না। সবাই তোমাকে ফুফি ডাকলেও আমি কিন্তু ছোটবেলা থেকেই তোমাকে মামুনি ডেকে আসছি। আমি আম্মু টাম্মু বলতে পারবো না। আমি তোমাকে সারাজীবন মামুনি বলেই ডাকবো।

পাগলি একটা। ডাইনিং টেবিলে বস আমি তোর জন্য খাবার নিয়ে আসছি। আজকে তোর ফেবারিট বিরিয়ানি রান্না করছি।

তুমি সকাল সকাল ব্রেকফাস্টে বিরিয়ানি রান্না করছো শুনলে তোমার ছেলে বাসা মাথায় করে ফেলবে। তোমার ছেলে তো হেলথ নিয়ে এক ঢোক জল বেশি খায়। সকালে এই অয়লি ফুড জীবনেও তোমার ছেলে খাবে না। বরং একশ একটা ঙ্গানের বাণী শুনিয়ে দিবে।

ও ওর প্রিয় খাবার খাবে আমাদের প্রিয় খাবার আমরা খাব। ওর প্রিয় ঘাস টাস রান্না করে রেখে দিয়েছি। আমি গরম গরম বিরিয়ানি এক প্লেট নিয়ে ডাইনিং রুমে বসে পড়লাম। এক চামচ বিরিয়ানি মুখে দিতে যাব তখনি বিহানের একটা কথা আমার কানে আসে।

প্লিজ ডক্টর রুদ্র আপনি আমার বাবার অপারেশনটা করে দেন।

আমার মতো একটা সাধারণ ডক্টর দিয়ে আপনি আপনার বাবার চিকিৎসা করাবেন? আপনি না বলেছিলেন আমার থেকেও বড় ডক্টর দিয়ে আপনার বাবার চিকিৎসা করাবেন।

সেদিন আমি ভুল করেছিলাম তার জন্য ক্ষমা চাইছি। আপনি আমার বাবার অপারেশন করাতে রাজি নন শুনে অন্য কোনো ডক্টর আমার বাবার অপারেশন করাতে রাজি হচ্ছে না।

তো আমি কী করবো?

প্লিজ আপনি রাজি হয়ে যান অপারেশন করানোর জন্য। নাহলে অনেক বড় ক্ষতি হয়ে যাবে। আপনি যত টাকা চান ততই দিব।

আমাকে টাকা দেখাতে আসবেন নাহ। আপনাকে কিনে নেওয়ার মতো ক্ষমতা আমার আছে। হার্টলেস মানুষের আমি হার্টের অপারেশন কী করে করবো? এতগুলো মানুষের সামনে বিনা কারণে নিজের ছেলের দ্বারা একটা মেয়েকে অপমানিত হতে দেখেও যে লোক চুপ করে থাকে, আমার মনে হয় না সেই লোকের হার্ট আছে। আপনি এখন আসতে পারেন।

________________

আমি খাচ্ছিলাম আর মামুনি সাথে কথা বলছিলাম। আমার দৃষ্টি স্থির হয় রুদ্রের দিকে। রুদ্র আমার দিকে অগ্নি দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে আছে। উনি কেনো রেগে আছেন সেটা আমি বুঝতে পারছি না। আমি ভয়ে ভয়ে চোখ নামিয়ে ফেললাম। আমার আর খাওয়া হলো না। কেউ আমার দিকে তাকিয়ে থাকলে আমি খেতে পারি না। পেট ভরে গেছে বলে রুমে চলে এলাম। কী ভয়ানক চাহনি। বুকে হাতে দিয়ে লম্বা শ্বাস নিলাম।

যেটা পড়তে পারো না, সেটা পড়ো কেনো?

আমি চমকে পিছনে তাকাই। আমি ভ্রু কুচকে বলি,

মানে?

আজকের পর থেকে তোমাকে যেনো আর শাড়ী পড়তে না দেখি।

আপনি বললেই হলে নাকি। আমি আপনার ইচ্ছে মতো একদম চলবো না। আমি আমার মতো করে চলাফেরা করবো। আপনি আমাকে নিজের স্ত্রী হিসেবে মানেন না। সেহেতু আমার ওপর কোনো বিষয় নিয়ে জোড় করার অধিকার আপনার নেই। আপনি আপনার মতো থাকবেন আমি আমার মতো থাকব। আপনি আমার লাইফে ইন্টারফেয়ার করবেন না, আমি আপনার লাইফে ইন্টারফেয়ার করবো না।

তোমার ফর্সা পেটে যে একটা তিল আছে সেটা সবাইকে দেখাতে হবে।

আমি চমকে নিজের দিকে তাকাই। পেটের কাছ থেকে শাড়িটা সরে যাওয়ায় পেটের কিছু অংশ দেখা যাচ্ছে। আমি আঁচল দিয়ে পেট ডেকে ফেললাম। উনি ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেলেন। লজ্জায় আমার মাথা কাটা যাচ্ছে।

রুদ্র ওয়াশরুম থেকে বের হতেই আমি উনার সামনে দাঁড়িয়ে বলি,

আমি তো আপনাকে ভদ্র ভেবেছিলাম। কিন্তু আপনি তো দুনিয়ার অসভ্য। আপনার নজর ভালো না। আপনি মেয়েদের পেটের দিকে তাকিয়ে থাকেন। ছিঃ

এখানে ছিঃ বলার কী আছে? দেখার জিনিস দেখবো না। তুমি দেখাইবা আর আমি দেখবো না।

আমি চোখ রাঙিয়ে উনার দিকে তাকিয়ে বলি, আপনি………

হুশশ। একদম আমার সাথে চিৎকার করে কথা বলবে না। আমি বলেছি তাই দোষ। আর বিহান যে হা করে তাকিয়ে ছিল। জানো তখন আমার কী ইচ্ছে হচ্ছিল? ঐ বিহানকে যাস্ট খুন করে ফেলতে। আর তোমাকে একটা থাপ্পড় মেরে বোঝায় শাড়ী কেমন করে পড়তে হয়। আমি মেয়েদের গায়ে হাত তুলি না। তাই তুমি বেঁচে গেলে। আই সয়্যার আরেকদিন যদি তোমাকে এভাবে শাড়ী পড়তে দেখি আমি যাস্ট তোমাকে খুন করে ফেলবো। প্রোপারলি যেদিন শাড়ি পড়তে পারবে সেদিন থেকে শাড়ি পড়বে।

আমি যেভাবে ইচ্ছে সেভাবে শাড়ি পড়বো আপনার কী? ইচ্ছে হলে আমি বলিউডের নায়কাদের মতো করে শাড়ি পড়বো তাতে আপনার কী? আপনার এতো জ্বলে কেনো?

উনি আমার দিকে চোখ রাঙিয়ে তাকান। পরে কোনো বাক্য ব্যয় না করে সোজা রুম থেকে বের হয়ে যান। উনি রুম থেকে বের হয়ে যেতেই আমি লজ্জায় মিইয়ে গেলাম। আমি এতক্ষণ ধরে সবার সামনে এভাবে ছিলাম। ভাগ্য ভালো আংকেল বাসায় ছিল না। নাহলে লজ্জায় মাথা কাটা যেতো। বিহানের ওপর ভীষণ রাগ হচ্ছে। ইচ্ছে করছে ঐ লুচ্চাটার মাথা ফাটিয়ে দিতে।

_____________

রাত ১২ টা বেজে ৩০ মিনিট এখনো রুদ্র বাসায় ফেরেনি। মামুনি আর আংকেল সোফায় বসে আছেন। আমি রুমে পায়চারি করছি। রুদ্র কখনোই এতো দেরি করে বাসায় ফিরেন নাহ।

বাইরে প্রচুর বৃষ্টি হচ্ছে। তাই সবার টেনশনটা একটু বেশিই হচ্ছে। এদিকে রুদ্র ফোনও বন্ধ। হিম শীতল বাতাস বার বার শরীর ছুঁয়ে দিচ্ছে। ঠান্ডা বাতাসে বার বার কেঁপে ওঠছি। বাসার নিচে সিএনজি থামার শব্দ শুনে দৌড়ে বেলকনিতে যায়। একটা লোক সিএনজি থেকে নামল। অন্ধকারের জন্য লোকটাকে দেখা যাচ্ছে না। তবে লোকটার অবয়ব বোঝা যাচ্ছে। এটা রুদ্র। কিন্তু রুদ্র গাড়ি রেখে সিএনজি দিয়ে কেনো আসবে?

লোকটা বাসার ভিতর প্রবেশ করলো। আমি দৌড়ে ডয়িংরুমে গেলাম। ঠিক তখনি কলিংবেল বেজে ওঠলো। আমি দৌড়ে গিয়ে দরজা খুলে দিলাম। দরজার সামনে ভিজে অবস্থায় দাঁড়িয়ে আছে রুদ্র।

চলবে…….

[আগামীকাল একটা রহস্য উন্মোচন হবে। অনেক কিছু আপনাদের কাছে ক্লিয়ার হবে। ]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here