ডিভোর্স পেপার হাতে নিয়ে নিজের হাসবেন্ডের দ্বিতীয় বিবাহ দেখছে পূর্ণি। নির্বাক চোখ বেয়ে সরু রেখা করে অশ্রুজল গড়িয়ে পড়ছে তার মুখশ্রী বেয়ে।
একটা মুহুর্তের জন্য পূর্ণির পৃথিবী ফাকাঁ ফাকাঁ লাগছে ।যার হাতে নিজের জীবনে গুরুত্বপূর্ণ গোটা দু বছর দিয়ে দিয়েছিলো আজ সেই তাকে ডিভোর্স দিয়ে চোখের সামনে অন্যকারো হয়ে যাচ্ছে।ডিভোর্স পেপারটাতে উজ্জল অক্ষরে নির্ঝরের সই দেওয়া আছে।
পূর্ণি চেয়েও কিছু বলতে পারছেনা পাথরের মতো নির্বাক হয়ে নির্ঝরের দিকে চেয়ে আছে সে।
নির্ঝর হাস্যজ্জল মুখে তার নববধূ নিদিয়ার দিকে চেয়ে আছে।
পূর্ণির হৃদয়ে রক্তক্ষরণ চলছে নির্ঝরের এই হাস্যজ্জল চেহারাতে।এমনি একদিন সেও নির্ঝরের পাশে দাড়িয়ে নির্ঝরের এই হাস্যজ্জল মুখের সঙ্গী হয়েছিলো।
অগ্নিকে সাক্ষী রেখে নির্ঝর প্রতিজ্ঞা করেছিলো কখনো তাকে কোন মুহুর্তে ছেড়ে যাবেনা।
পূর্ণির মাথা ঘোড়াচ্ছে,দাড়িয়ে থাকতে পারছেনা সে কে জানি তার প্রচন্ড বমি আসছে।
পূর্ণি আর নিজেকে সামলাতে পারলোনা ধুপ করে মাটিতে পড়ে গেলো। তার হাতে থাকা ডিভোর্স পেপার টা হাওয়ায় উড়ে ঠিক নির্ঝর নিদিয়ার বিয়ের অগ্নিকুন্ডে গিয়ে পড়লো।
পূর্ণি শুধু এক নজর চেয়ে দেখলো এরপর আর তাকাতে পারলোনা।
.
চোখ খুলতেই নিজেকে স্টোর রুমের ফ্লোরে আবিস্কার করলো পূর্ণি।চোখের সামনেই কিছুদূরে একটা চেয়ারে পায়ের উপর পা তুলে বসে আছেন নির্ঝরের মা মিসেস কণা রায় চৌধুরি।
পূর্ণি ঢুগ গিলে কাচুমাচু হয়ে দেয়াল ঘেষে বসে পড়লো।
মিসেস কনা রায় চৌধুরি রাগান্বিত চোখ একটা পেপার মুচরে পূর্ণির মুখের দিকে ছুড়ে মারলো।
আর রাগী স্বরে বলে উঠলো।
” তোমার মুখে আমি ত্রিশ লাখ টাকা ছুড়ে মেরেছিলাম নির্ঝরের লাইফ থেকে চলে যেতে!সেখানে তুমি নির্ঝরের বাচ্চার মা হয়ে গেলে! ওর সাথে তুমি স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক গড়লে?(রাগান্বিত গলায়)
পূর্ণি যেনো আকাশ থেকে পড়লো বড় বড় চোখে কণা রায় চৌধুরির দিকে তাকিয়ে পরপর কয়েকটা ঢুগ গিলে পাশে পড়া মুচরানো পেপারটার দিকে তাকালো!
পূর্ণি বিশ্বাস করতে পারছেনা সে নির্ঝরের বাচ্চার মা হতে চলেছে।
মুচরানো পেপারটা হাতে তুলে তাড়াহুড়ো করে খুলল।
সেটা প্রেগনেন্সির টেস্ট রিপোর্ট। রিপোর্টে স্পস্ট লেখা সে নির্ঝরের সন্তানের মা হতে চলেছে।প্রেগনেন্সির দুমাস সম্পূর্ণ হয়েছে।
পূর্ণির চোখে জল জড়ো হতে লাগলো। সব বিষাদ লাগছে পূর্ণির কাছে।
পূর্ণির ইচ্ছে করছে সময়টাকে থামিয়ে চিৎকার করে কাঁদতে।
পূর্ণির পুনরায় মাথা ঘোড়াচ্ছে আধোআধো চোখে মিসেস কণা রায় চৌধুরির দিকে তাকালো সে।
এদিকে মিসেস কণা রায় চৌধুরি রাগে ফোস ফোস করতে করতে উঠে আসলেন আর ঠাস ঠাস শব্দ করে পূর্ণির গালে কয়েকটা চড় লাগিয়ে দিয়ে পূর্ণির চুল চেপে ধরে রাগে ফোস ফোস করতে করতে বলে উঠলেন।
“তোকে বলেছিলাম নির্ঝরের লাইফ থেকে চলে যেতে।কিন্তু সেখানে তুই নির্ঝরের সন্তানের মা হচ্ছিস,তার সাথে শারিরীক সম্পর্ক গড়েছিস! এই বাচ্চা কখনো পৃথিবীর আলো দেখবেনা আর না এর কথা নির্ঝর জানবে কয়েকদিনের মধ্যেই তোর এবোর্শন
করাবো আমি!ততদিন তুই এইখানে এই স্টোর রুমেই বন্ধি থাক।
সাান্য আশ্রিতা মালির মেয়ে কিনা রায় চৌধুরি বংশের উত্তরাধিকাকে নিজের অপবিত্র গর্ভে ধারণ করবে?(রাগান্বিত গলায়)
পূর্ণির চারদিক আবার অন্ধকার হয়ে উঠতে লাগলো। মিসেস কণার কথা পূর্ণির আর সহ্য হচ্ছেনা।
এই খুশির সময়ে শুধু সে আশ্রিতা মালির মেয়ে বলেই কি এতটা কথাঘাত পাচ্ছে।
মিসেস কণা হৃদয়হীনার মতো পূর্ণিকে মেঝেতে ফেলেই স্টোর রুমের দরজায় তালা দিয়ে চলে গেলেন।
পূর্ণি সেখানে নিস্প্রাণের মতোই পড়ে রইলো।
.
.
পেটের মধ্যে স্বজোড়ে কেউ লাথি মারতেই গলা ফাটিয়ে চিৎকার করে উঠলো পূর্ণি।
ইতিমধ্যেই কেউ পেটে লাথির পাশাপাশি পূর্ণির ঘাড়ে ধারালো কিছু বসিয়ে দিয়েছে।
আবছা আলোয় ঘোলাটে চোখে পূর্ণি দেখতে পেলো এক যুবক কে!
যুবকটা আর কেউ না তার দেবর নিরব। নিরব পূর্ণি তলপেট বরাবর স্বজোড়ে লাথি মেরেছে আর ঘাড়ে ইনজেকশন জাতীয় কিছু স্বজোড়ে মেরেছে।
পূর্ণি মুখ দিয়ে কিছু বলতে পারছেনা নিস্তেজ হয়ে যাচ্ছে ক্রমশ।
এক আলাদা নরক-যন্ত্রণা উপভোগ করছে নিশ্চুপে।
ঝাপসা চোখে দেখলো সামনেই দরজা দিয়ে মিসেস কণা,তার বড় জা,তার শ্বশুড় মি.অভিনব রায় চৌধুরিকে।
নিজের শেষকে অতি সন্ন্যিকটেই উপলব্ধি করলো পূর্ণি।
পূর্ণি শেষবারের জন্য দেখলো দোর দিয়ে আরেকজন প্রবেশ করেছে সে হলো নির্ঝর। নির্ঝরের মুখে ছিলো তৃপ্তীর হাসি।
সময়টাকে বিষাদময় ভেবে মনের মধ্যে গেথেঁ নিলো পূর্ণি ভেবেছিলো নির্ঝর তার ভ্রমের মাঝ দিয়ে এসেছে।
পূর্ণির সব বিষাদময় লাগছে,মাথা ভো ভো করা ঘুড়াচ্ছে,সারা শরীর জ্বলে যাচ্ছে যেনো কেউ এসিড ছুড়েঁ মেরেছে গায়ে।
চোখ বন্ধ করে নিলো পূর্ণি আর সঙ্গে সঙ্গে উচ্চস্বড়ে হাসির স্বর ভেসে উঠলো চারদিকে।
.
.
.
চোখ খুলতেই নিজের গায়ে হসপিটালের পোশাক দেখে ভড়কে গেলো পূর্ণি।তারমানে তখন তাকে অবচেতন করার জন্য ইনজেকশন দিয়েছিলো।
ঘাড়েঁ তার এখনো প্রচন্ড ব্যাথা করছে সেইসাথে পেটেও
নিরবে স্বজোড়ে তার পেটে লাথি মেরেছে।
নিজের এই সর্বনাশকে দেখছে আর প্রতি নিয়ত বাচাঁর আশা হাড়াচ্ছে পূর্ণি।
নিয়তিকি এতটাই খারাপ যে তার সাথে এতটা জঘন্য কাজ করা হচ্ছে
সবার কাছে অবহেলায় এতটা ঝড়া ফুল হয়ে উঠছে। সেতো কারো বাগানের উজ্জল,ফোঁটা গোলাপ ফুল ছিলো তবে কার নজর লাগলো যে উজ্জল গোলাপ থেকে ঝড়া ফুলে পরিণত হচ্ছে।
পূর্ণির কানে পাশের কেবিন থেকে কথা বলার শব্দ কানে ভেসে আসছে
“আপনি কি সিওর মিসেস কণা রায় চৌধুরী বাচ্চাটা আপনি রাখতে চান না?আবারও ভেবে দেখুন এখানে একটা নিস্প্রাণের কথা জড়িত আছে! পেশেন্টের হাসবেন্ড কি রাজী আছেন পেশেন্টের এবোর্শন করাতে?
” আপনাকে এত এত টাকা দিচ্ছি তা কি হচ্ছেনা আর হাসবেন্ড পেশেন্টের হাসবেন্ড একদম রাজি আছে ওর এবোর্শন করাতে!কারন এটা অবৈধ সন্তান!এখন আপনি আপনার কাজ শুরু করুন নো মোর এক্সকিউজ!(রাগী স্বরে)
পূর্ণির কান বিষ হয়ে গেছে কথাগুলো শুনে মানুষ কতটা নির্দয়,হৃদয়হীনা হলে ছেলে বউয়ের বৈধ সন্তানকে এভাবে অবৈধ বলে মেরে ফেলতে চায়!
পূর্ণি কান হাত দিয়ে কান চেপে ধরেছে যেনো আর কোন একটা তীরাঘাত কথা যেনো কানে না আসে।
মানুষ এতটা জঘন্য কিভাবে হতে পারে।
পূর্ণির এইসব কিছুকে দুঃসপ্ন মনে হচ্ছে!নিজেকে পাগল পাগল লাগছে তার।
মনের মধ্যে প্রবল ইচ্ছা জাগছে ছোট ছোট হাত,পা ধরে একটা কিউট বাবুর সাথে সারাক্ষণ খেলা করতে! বুকে জড়িয়ে ধরতে প্রবল ইচ্ছা জাগছে কেউ বছর কয়েক পর ভালোবাসার অস্ফুষ্ট স্বরে উচ্চারণ করবে
“মাম্মা”।
পূর্ণি খুব করে চাইছে একটা ভরসার হাত জেনো তার দিকে হাত বাড়িয়ে বলে!
“ভয় নেই তোমার আর বাবুর কিছুই হবেনা!
পূর্ণি বাচবে সে নির্বাক হতে নিজের আর নিজের অনাগত বৈধ সন্তানকে প্রণয়ের আগুনের পুড়ে ধ্বংস হতে দিবেনা। বরং তাকে আচঁড়ে বাচঁবে সর্বক্ষণ বুকে জড়িয়ে নিজের কাছে আগলে রাখবে।
পূর্ণি পালাবে এখান থেকে সে নিজ চোখে নিজের অনাগত নিস্পাপ সন্তানের মৃত্যু দেখতে পারছেনা।
পূর্ণির হাটতে কস্ট হচ্ছে পেটে তার প্রচন্ড ব্যাথা করছে।
.
.
হসপিটাল থেকে অনেকদূরে পালিয়ে চলে এসেছে পূর্ণি। যত কদমই হাটছে তত কদমেই মাতৃত্বের স্বাদকে উপলব্ধি করার প্রবল আগ্রহ জাগছে তার। সে কিছুতেই তার সন্তানের ক্ষতি হতে দিবেনা।
ভাবলেসহীন ভাবে পাথরের মতো হাটতে হাটতে একসময় মেইন রোডের মধ্যখানে চলে আসে পূর্ণি। তখনই বাম সাইড থেকে গাড়ির হর্নের আওয়াজ শুনতে পায় যে সেদিকে তাকানোর আগেই প্রাইভেট গাড়িটার সাথে প্রচন্ড বাজেভাবে ধাক্কা লাগে পূর্ণির সাথে।
তবে এখানেই কি পূর্ণিমা অধ্যায়ের ইতি ঘটবে! ” মা” শব্দটা শোনার প্রবল ইচ্ছাটা হাড়িয়ে ফেলবে সে!
#চলবে,,
[প্রথম পর্ব পড়েই কেউ বাজে মন্তব্য করবেন না।ভুল-ক্রুটি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।]
#পূর্ণিমা🍂
#পর্ব_১
#Sanchita(Writer)