প্রজাপতি উৎসব পর্ব-৩৫

0
387

প্রজাপতি উৎসব
#প্রেমের_গল্প #প্রজাপতি_উৎসব
পর্ব ৩৫
সাদিয়া আপুর বাসায় আজ রাতে দাওয়াত ছিল। মোহন ড্রাইভিং টেস্ট পাশ করে একটা গাড়ি কিনেছে। দশ বছরের পুরনো, সত্তর হাজার মাইলেজের বিএমডাব্লিউ । রূপালী রঙের হ্যাচব্যাকটা নিয়ে আমরা সন্ধ্যা ছটায় সাদিয়া আপুদের বার্কিং-এর বাসায় হাজির হলাম।
সাদিয়া আপুর হাজবেন্ড সেলিম ভাই ব্ল্যাক ক্যাব ট্যাক্সি চালান। লন্ডনে ব্ল্যাক ক্যাব ট্যাক্সি ড্রাইভারের আয় অনেক চাকুরীজীবীর আয়ের চেয়ে বেশী। সেটা ওদের বাড়ি দেখলেও বোঝা যায়। তিন বেডরুমের দোতালা বাড়িটা পেছেনে বর্ধিত করে বড় একটা লাউঞ্জ বানানো হয়েছে। সেখানে গিয়ে দেখলাম পরিচিত আরও অনেকেই এসেছে। আমাকে দেখে সাদিয়া আপু এগিয়ে এসে বললেন,
-আল্লাগো, যে বালা লাগে তুমি যে আমরার গরো আইসো।
এখন আমি মোটামুটি সিলেটি বুঝতে পারি কিন্তু বলতে পারি না। আমি সাদিয়া আপার হাত ধরে বললাম,
-আপনি ইনভাইট করেছেন বলে আমরাও খুশি। আমার তাইনে তো আবার সিলটি বুঝইন না।
-আহা তাই তো। আসুন মোহন ভাই। ওখানে আমার হাজবেন্ড আছেন। তাইন তো আফনেরে কুব বালা ফাইন।
মোহন হেসে বললো,
-সে তো হবেই আপা। একজন ভালো মানুষ আরেকজন ভালো মানুষকে পছন্দ করবে ওটাই স্বাভাবিক।
মোহন সেলিম ভাইয়ের সাথে গল্প করতে চলে গেলো। সাদিয়া আপু বললেন,
-এলিটা এসেছে। জানো তো ওর বিয়ে?
-না জানি না তো।
-কেন তোমাকে ইনভাইট করেনি?
-আমার সঙ্গে তো ওনার পরিচয় নেই, আপনি সাবধান করার পর আমি আর আগ বাড়িয়ে ওনার সঙ্গে মিশিনি।
-এলিটা বাংলাদেশ থেকে ছেলে বিয়ে করে আনছে।
-ভালোই তো। কিন্তু এখানে কাউকে পেলো না?
-ওর বাবা মা ওদের রিলেটিভের সঙ্গে ওর বিয়ে দিতে চাচ্ছে।
-এলিটা রাজি আছে।?
-অরাজি নেই। কিন্তু ছেলে খুব সিরিয়াস। মেয়ের কোন আগের সম্পর্ক থাকতে পারবে না।
-তেমন হতেই পারে। যার যেমন শর্ত। বলেকয়েই তো বিয়ে হচ্ছে।
সাদিয়া আপু এবার আমার কানের কাছে মুখ এনে বললেন,
-এলিটার কত বয়ফ্রেন্ড ছিল জানো?
-নাহ। আমি কীভাবে জানবো আপু?
-আমি নিজেই তো ওকে তিনটা ছেলের সাথে মিশতে দেখেছি। তার ভেতর একটা ছেলের সঙ্গে কিছুদিন লিভ টুগেদারও করেছে।
-এলিটার হবু স্বামী তো শর্ত দিয়ে রেখেছে। তাহলে তো বিয়ের রাতে…
-সেটাই তো। বিয়ের রাতে তো সব মিথ্যা ফাঁস হয়ে যাবে। এজন্য এলিটা কী করেছে জানো?
-কী করেছে?
-টার্কি গিয়ে সার্জারি করিয়ে এসেছে।
-সার্জারি মানে? কীসের সার্জারি?
-উফ বুঝো না কেন। সেই সার্জারি?
-কোন সার্জারি?
সাদিয়া আপু কপালে হাত দিয়ে বললেন,
-উফ। হাউমেনোপ্লাস্টি। আবার সে নতুন করে ভার্জিন হবে। ছি, কী অবস্থা ভাবতে পারো?
আমার কান গরম হয়ে গেলো। অস্বস্তি নিয়ে বললাম,
-আপু আমার ভালো লাগছে না এসব শুনতে। আমারএতে কোন আগ্রহ নেই।
আমার অনাগ্রহে সাদিয় আপু একটু নিভে গিয়ে বললেন,
-তুমি তাহলে লিভিং রুমে গিয়ে গল্প করো। আমার কিচেনে কিছু কাজ আছে। একটু পর আসছি।
-আমি কি হ্যান্ড দিতে পারি আপু?
-না, না, লাগলে বলবো। যাও গিয়ে অন্যদের সাথে গল্প করো।
আমি লিভিং রুমে গিয়ে দেখলাম এলিটা আর শাপলা আলাপ জুড়ে দিয়েছে। শাপলা আমাকে এলিটার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিয়ে বললো,
-এলিটাকে চেনেন?
আমি বললাম,
-আগে দু একবার দেখেছি কিন্তু পরিচয় হয়নি।
এলিটা আমার দিকে তাকিয়ে বললো,
-আপনাকেও চেনা লাগছে আপু। আমি এলিটা। ওই হ্যান্ডসাম ভদ্রলোক কি আপনার হাজবেন্ড?
এলিটার কথায় আমি সাবধান হয়ে বললাম,
-কে মোহন?
-জি জি মোহন ভাই।
আমি মাথা নেড়ে হ্যাঁ বললাম। শাপলা খুশী হয়ে বললো,
-আমার সঙ্গে একটু আগে মোহন ভাইয়ের গল্প করলেন। ইস উনি এত সুন্দর করে কথা বলেন। উনি কিন্তু খুব সুইট অ্যানফানি । আপু, মোহন ভাইকে নিয়ে একবার আমার বাসায় আসবেন কিন্তু। আচ্ছা আপু, উনি অ্যাকাউন্ট্যান্ট তাই না?
আমার কোলে পদ্মপাতা কান্না শুরু করেছে। তার উপর এই মেয়ের মোহনকে নিয়ে এত ফ্যানফ্যানানি আমার কেন যেন ভালো লাগছে না। আমি না চাইতেই মুখ দিয়ে বেরিয়ে গেলো,
-আপনি নাকি টার্কি গিয়ে কী সার্জারি করিয়ে এসেছেন বিয়ের জন্য?
মুহুর্তের ভেতর নিজেকে সামলে নিয়ে বললো,
– আমার বিয়ে আপনি কীভাবে জানলেন?
-খেয়াল নাই কে বলেছে। সার্জারি হয়েছে ঠিকমত?
-আর বলেন না, সার্জারি বলতে একটা দাঁতে রুট ক্যানেল করে ক্যাপ বসানো। এখানে এত খরচ, তাই টার্কি গিয়ে করে এলাম। বিয়ের কথা কিন্তু ফাইনাল হয়নি। ফাইনাল হলে আপনাকে জানাবো। মোহন ভাইকে নিয়ে আসবেন কিন্তু।
বুঝলাম এলিটা মেয়েটা একটু ঘোড়েল প্রকৃতির। এর থেকে সাবধানে থাকা ভালো। আরেকটা মেয়ে এসে এলিটার সাথে গল্প জুড়ে দেয়ায় আমি এ যাত্রা বাঁচলাম। আড়চোখে তাকিয়ে দেখলাম মোহন বারবার ঘুরে এলিটাকে দেখছে।
নর্থ সার্কুলার রোড দিয়ে গাড়িতে বাড়ি ফেরার সময় মোহনকে বললাম,
-এলিটা মেয়েটা খুব অ্যাট্রাক্টিভ, তাই না?
মোহন অবাক হয়ে বললো,
-এলিটা কে?
-ওই যে বডি হাগিং লাল সিল্কের গাউন পরে যে মেয়েটা এসেছে। এলিটা তো বললো তোমার সঙ্গে ওর অনেক গল্প হয়েছে।
-ও হ্যাঁ মনে পড়েছে। ওর নাম এলিটা নাকি? খুব ফানি কিন্তু মেয়েটা।
-আমি জানি না ফানি নাকি, আমার অত কথা হয়নি।
মোহন হঠাৎ প্রসঙ্গ ঘুরিয়ে বললো,
-তোমার মাস্টার্স কোর্স কেমন চলছে?
বুঝলাম মোহন এলিটাকে নিয়ে কথা বলতে চাইছে না। না চাইলে নাই। আমি বললাম,
-ভালোই তো চলছে।
-প্রথম কিস্তির টাকা তো আমি দিলাম। দ্বিতীয় কিস্তির টাকা কবে দিতে হবে?
কোন অপ্রিয় প্রসঙ্গ এলেই মোহন টাকার কথা তুলে আমাকে দুর্বল করে দেয়। আমি বললাম,
-গ্রসারি শপের কাজ থেকে তো টাকা জমাচ্ছি। আর দ্বিতীয় সেমিস্টারেরে টাকা দিতে এখনো অনেকদিন বাকি আছে।
বাড়ি ফিরে মোহন হুইস্কির বোতল নিয়ে বসলো। আগে সে প্রায় রাতে মদ খেয়ে বাড়ি ফিরতো। কখন ফিরবে, কী আচরণ করবে এ নিয়ে চিন্তায় পড়ে যেতাম। একদিন মাতাল অবস্থায় ডাইনিং টেবিল থেকে দেয়ালে চায়ের কাপ ছুঁড়ে মেরেছিল, অল্পের জন্য পদ্মপাতার গায়ে কোন টুকরো এসে বেঁধেনি। এরপর মোহনকে বলে কয়ে রাজি করিয়েছি ড্রিংক করলে অন্তত ঘরে বসে যেন করে। এখন মোহন মাঝে মধ্যে ঘরে বসে ড্রিংক করে আবার কখনো রাত করে মাতাল হয়ে বাড়ি ফেরে। একবার মাতাল হলে মোহনের আচরণ সেই আগের মত হয়ে যায়। রাতে ইচ্ছের বিরুদ্ধে আমার উপর হামলে পড়ে। সবচেয় বড় কথা কোন কারণে মাতালকে বাঁধা দিতে গেলে সে পদ্মপাতার ক্ষতি করবে বলে শাসায়।
পদ্মপাতা এখন তার তুরুপের তাস।
(চলবে)
পর্ব ৩৪ https://www.facebook.com/groups/Anyaprokash/permalink/1384975758684114/
পর্ব ৩৬ https://www.facebook.com/groups/Anyaprokash/permalink/1387457668435923/

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here