প্রণয়ের_দহন পর্ব_১৯

প্রণয়ের_দহন
পর্ব_১৯
#তাসনিম_জাহান_রিয়া

হুট করে আরিয়ানের এমন কথায় আমি থমকে যায়। আরিয়ান কী বললো এটা? আরিয়ান ৭ মাস মেন্টাল হসপিটালে ছিল? সেটা কীভাবে সম্ভব? যদি থাকত তাহলে আমি জানতে পারতাম না। সব আমার মাথার ওপর দিয়ে যাচ্ছে। আরিয়ান কী আমার সাথে মজা করছে? কিন্তু উনার মুখ দেখে তো তা মনে হচ্ছে না। মনে হচ্ছে উনি সিরিয়াসলি বলছেন।

তুমি নিশ্চয়ই আমার সাথে মজা করছো তাই না?

একদমি না। তোমার আমার মুখ দেখে মনে হচ্ছে আমি মজা করছি?

তুমি ৭ মাস মেন্টাল হসপিটালে থাকলে আমি জানতাম নাহ।

তোমার আমার সম্পর্কে জানার প্রয়োজন বা আগ্রহ কোনটাই ছিল না তখন।

আমার চোখে পানি টলমল করছে। আমি উনার দিকে অশ্রু সিক্ত নয়নে তাকিয়ে বলি,

তুমি এই কথা আমাকে আগে বলোনি কেনো?

আগে বললে কী করতে? আমাকে বিয়ে করতে না? না সেই উপায় তো তোমার কাছে ছিল না। তোমাকে তো আমার সাথে জোড় করে বিয়ে দেওয়া হয়ছে। তাহলে কী আমার সাথে থাকতে না? আমাকে ডিভোর্স দিয়ে দিতে? সত্যিই তো কে বা চায় একজন পাগলের সাথে সংসার করতে। প্রত্যেকটা মেয়েই নিজের লাইফ পার্টনার হিসেবে একজন পারফেক্ট মানুষ চায়।

আরেক বার নিজেকে পাগল বললে আমি তোমার মাথার চুল ছিঁড়ে ফেলব। তুমি আমাকে বোকা পাইছো? হুম? তুমি যা বলবে তাই আমি বিশ্বাস করে ফেলব।

বিশ্বাস করা বা না করা তোমার ব্যাপার। এটাই সত্যি যে আমি একজন মানসিক রোগী। যাকে মানুষ পাগল বলে।

আমি এবার উনাকে জড়িয়ে ধরে হু হু হু করে কেঁদে দেই। কাঁদতে কাঁদতেই বলি,

তুমি কেনো এমন কথা বলো? তুমি বুঝো না তোমার এসব কথা আমাকে কতটা কষ্ট দেয়? আমি তোমাকে নিজের থেকেও বেশি ভালোবেসে ফেলেছি। তুমি পাগল ছাগল যাই হও না কেনো তুমি শুধু আমার। আমি তোমাকে কখনো ছেড়ে যাবো না।

আরে বাবা তুমি এভাবে কাঁদছ কেনো? আমি তো জাস্ট ফাজলামো করছিলাম। তুমি ফাইজালোও বুঝো না।

আমি এবার আরো জুড়ে কেঁদে দিলাম। উনি আমার চোখের পানি মুছে দিয়ে বলেন,

আমি বললাম তো মজা করছিলাম। বাবুদের মতো কান্না করছে। বাই দা ওয়ে কাঁদলে কিন্তু তোমাকে ভীষণ সুন্দর লাগে। ইচ্ছে করে টুপ করে গিলে ফেলি। এখন থেকে প্রতিদিন আমি তোমাকে কান্না করাব।

আমি উনার দিকে রাগী দৃষ্টিতে তাকিয়ে উনাকে ধাক্কা দিয়ে নিজের থেকে সরিয়ে দিলাম। তারপর হনহনিয়ে রুম থেকে বের হয়ে এলাম।

রাগে মাথায় আগুন জ্বলছে। ইট দিয়ে বারি মেরে আরিয়ানের মাথা ফাটিয়ে দিতে পারলে শান্তি লাগতো। লোকটা কতটা বেয়াদব। সব সময় আমার ইমোশন নিয়ে খেলে। আমার ইমোশনের কোনো দাম নেই তার কাছে। কথায় বলবো না উনার সাথে।

সোজা ভাইয়ার রুমের দিকে চলে এলাম। ভাইয়ার রুমের দরজা হা করে খোলা। তার মানে ভাইয়া ঘুম থেকে ওঠে গেছে। আমিও রুমে ঢুকে পড়লাম। রুমের ঢুকতেই আমার চোখ দুটো বড় বড় হয়ে যায়। বিষ্ময়ে আমার মুখটা হা হয়ে যায়। রুমে ঢুকেই এমন একটা সিন দেখবো ভাবতেই পারিনি। আহা কী রোমান্টিক সিন! সবাই তো আর আরিয়ানের মতো নিরামিষ না।

ভাইয়া ভালোই তো রোমান্স চালাচ্ছো আমার ননদিনি থুক্কু ভাবির সাথে। আহা কী রোমান্টিক সিন! চোখ জুড়িয়ে গেলো।

আনহা আর ভাইয়া দুজন দুজনকে জড়িয়ে ধরে ছিল। আমার কথা শুনে দুজন দুই দিকে ছিটকে সরে গেলো। আনহা আঙ্গুলে শাড়ীর আঁচল পেচাচ্ছে। লজ্জায় মাথা নুইয়ে ফেলছে মেয়েটা। ভাইয়া মাথা চুলকে মুচকি মুচকি হাসছে। আমি তাদের অবস্থা দেখে মিটিমিটি হাসছি।

কতোদিন ধরে চলছে এসব?

ভাইয়া আমতা আমতা করে বলে, তুই যেমনটা ভাবছিস তেমন কিছু না। আমি তো জাস্ট এমনি……

তুমি তো জাস্ট এমনি কী?

তুমি তো জাস্ট এমনি কী? দেখো একদম আমার সাথে মিথ্যা বলার চেষ্টা করবা না। সন্দেহ তো আমার আগেই হয়েছিল। কিন্তু এখন কনফার্ম হয়ে গেলাম।

লজ্জা করে না বড় ভাইয়ের রোমান্সে বাম হাত ঢুকিয়ে দিতে?

বড় ভাই যদি দরজা হা করে খোলা রেখে রোমান্স করতে পারে। তাহলে আমি কেনো বড় ভাইয়ের রোমান্সের সময় বাম হাত ঢুকাতে পারব না?

আমাদের কথোপকথনের মাঝেই আনহা দৌড়ে রুম থেকে বের হয়ে গেলো। আমাদের আর বুঝতে বাকি রইল না যে, আনহা লজ্জা পাচ্ছে। আমি আর ভাইয়া উচ্চ স্বরে হেসে দিলাম।

কেমন আছিস বোনু?

ভাইয়ার কথা কর্ণগোচর হতেই হাসি বন্ধ হয়ে গেলো আমার। মুখটা কালো অন্ধকার মেঘে ডেকে গেলো। এক রাশ অভিমান জমা হলো মনের কোণে।

বললি না তো কেমন আছিস তুই?

আমি কিছু বলতে যাব তার আগেই। আরিয়ান আমাকে ডাকতে ডাকতে রুমে এলো।

আরশি আমি তোমাকে কখন থেকে ডাকছি তুমি শুনতে পাচ্ছো না?

আমি আরিয়ানকে দেখেই মুখ ঘুরিয়ে নিলাম। আমি কথা বলবো না এই বেয়াদপ লোকের সাথে। যার কাছে আমার ইমোশনের কোনো দাম নেই তার সাথে কেনো কথা বলবো আমি?

বাহ আরিয়ান বউকে তো একেবারে চোখে হারাচ্ছিস? কী ব্যাপার?

কোনো ব্যাপার ট্যাপার নেই। একমাত্র বউ তাকে চোখে চোখে না রাখলে কাকে রাখব?

বুঝলাম তোর এক মাত্র বউ আমারও তো একমাত্র বোন। আমার সাথেও কথা বলার জন্য দুই মিনিট সময় দে।

তুই দুই মিনিট সময় চাচ্ছিস আর আমি তো পাক্কা ১০ মিনিট সময় দিলাম কথা বলার জন্য। তোর জন্য তো আমার বোনই আছে। আমার বউ নিয়ে টানাটানি না করে নিজের বউ নিয়ে থাক।

আরিয়ান ভাইয়াকে আর কোনো কথা বলার সুযোগ না দিয়ে টানতে টানতে আমাকে রুমে নিয়ে আসলেন। আমি হাত ছাড়ানোর জন্য মুচরা মুচরি করতে থাকি। কিন্তু উনি আমার হাত ছাড়লেন না বরং আরেকটু শক্ত করে চেপে ধরে রুমে নিয়ে আসলেন।

তোমার সমস্যাটা কী? এভাবে টানতে টানতে রুমে নিয়ে আসলে কেনো?

আমার সব সমস্যা তো তুমি। আমার বউকে আমি টেনে টেনে নিয়ে আসবো নাকি কোলে করে নিয়ে আসব। সেটা সম্পূর্ণ আমার ব্যাপার। তোমার প্রবলেম কী?

আপনি আমাকে টেনে টেনে রুমে নিয়ে আসবেন আর আমাকেই জিঙ্গেস করবেন আমার প্রবলেম কী?

আমি তো তোমাকে নিয়ে আসিনি। আমি তো আমার সুইট, কিউট ওয়াইফকে টেনে নিয়ে আসছি।

দেখো আমি কিন্তু ফাইজলামির মুডে নাই। আমি তোমার ওপর ভীষণ রেগে আছি।

তো আপনি কী ভাবছেন আমি আপনার রাগ ভাঙাব। একদমি না। এসব রাগ টাগ ভাঙানো আমার কাজ না। কেউ রেগে গেলে আমি কখনোই তার রাগ ভাঙাই না বরং তার রাগ আরও বাড়িয়ে দেই। কারো রাগ বাড়িয়ে দিলে আমি একধরনের পৈশাচিক আনন্দ পায়।

আমি অবাক হয়ে উনার দিকে তাকাই। আমি বুঝতে পারছি না আরিয়ান এভাবে কেনো কথা বলছে? পরমুহূর্তেই বুঝতে পারলাম আরিয়ান আবার মজা করছে।

এখন যদি ইট দিয়ে তোমার মাথা ফাটাতে পারতাম তাহলে আমার শান্তি হতো। তোমার মতো আমিও পৈশাচিক আনন্দ পেতাম।

মাথা ফাটিয়ে টাটিয়ে দেওয়ার কাজ পরেও করতে পারবে। এখন তাড়াতাড়ি রেডি হও ।

কেনো?

আমি তোমাকে নিয়ে একটা জায়গায় যাব।

সেই জায়গাটা কোথায়।

আমার সবচেয়ে প্রিয় জায়গা। যেখানে গেলে আমার মন ভালো হয়ে যায়। সেই জায়গাটা যেমন আমার মন ভালো হয়ে যাওয়ার জায়গা তেমনি মন খারাপেরও।

সেই জায়গাটা কোথায়?

আহ! তুমি এতো প্রশ্ন করো কেনো? যা বলছি তা করো না। তাড়াতাড়ি রেডি হও। গেলেই দেখতে পারবে।

আমিও আরিয়ানের কথা মতো রেডি হয়ে নিলাম। আম্মু প্রথমে যেতে দিতে রাজি হচ্ছিল না। পরে আরিয়ানের ইমার্জেন্সি হসপিটালে যেতে হবে এটা শোনার পর আর না করে না।আনহা আজকে আমাদের বাসায় থাকবে পরের দিন ভাইয়া গিয়ে আনহাকে দিয়ে আসবে।

আমরা দুইজন গাড়িতে ওঠে পড়লাম। গাড়ি চলছে আপন গতিতে কারো মুখে কোনো কথা নাই। দুই জনই নিরাবতা পালন করছি। কিছুক্ষণ পর গাড়িটা এসে থামে একটা কবরস্থানের সামনে। আমি অবাক হয়ে একবার আরিয়ানের দিকে তাকাই তো আরেকবার কবরস্থানের দিকে।

চলবে….

( গল্প লেইট করে দেওয়ার জন্য আমি দুঃখিত।তাই পড়াশোনার অনেক চাপ। গল্প লেখার সময় পাই না।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here