প্রণয়ের_দহন
পর্ব_৪
#তাসনিম_জাহান_রিয়া
আরিয়ান ভাইয়া মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানায়। আমি মুখ টিপে হাসছি। আরিয়ান ভাইয়া আমার দিকে কটমট করে তাকিয়ে আছে। আমি উনার এই দৃষ্টির মানে খুব ভালো করেই জানি। উনি বুঝাতে চাইছেন, তুই রুমে চল। তারপর তোর দাঁত কেলানো বের করব।
আমিও একটা ডোন্ট কেয়ার ভাব নিলাম। যেনো উনাকে দেখতেই পায়নি। এখন ভয় পেলেও রুমে গেলে শাস্তি দিবেন ভয় না পেলেও। তাই এখন ভয় পেয়ে খাবার খাওয়ার মুড নষ্ট করতে চাই না।
খাওয়া শেষ হতেই আনহা কলেজে চলে গেলো। আরিয়ান ভাইয়া ঠাস ঠুস করে রুমে চলে গেলো। আংকেল গিয়ে সোফায় বসলেন। আন্টি সবকিছু গুছিয়ে রাখার জন্য কিচেনে চলে গেলেন। আমিও চেয়ার থেকে ওঠে গুটি গুটি পায়ে আংকেলের পাশে গিয়ে সোফায় বসে পড়লাম। কথা বলতে যেয়েও গলায় কথাগুলো দলা পাকিয়ে আসছে। ভীষণ ভয় করছে। ভয়ে বুক কাঁপছে যদি আংকেল অপমান করে। আমি ভয়ে ভয়ে বললাম,
আংকেল।
আংকেল কোনো কথা বললেন। আমি আবার বললাম,
আংকেল।
আংকেল এবারও কোনো কথা বললেন নাহ। আংকেল আগের ভঙ্গিতেই বসে আছে। এবার আমার কান্না চলে আসছে। আমি নিজের কান্না আটকে রাখতে না পেরে শব্দ করে কেঁদে দিলাম। আমার কান্নার শব্দ শুনে আংকেল হয়তো একটু চমকে গেছেন। আংকেল বিচলিত হয়ে অস্থির গলায় বলে,
কী হয়ছে মা? কাঁদছিস কেনো? তোকে কেউ কিছু বলেছে? আনহা কিছু বলেছে? আরিয়ান?
আমি মাথা নেড়ে না জানালাম।
তাহলে কাঁদছিস কেনো মা? তুই না বললে বুঝবো কী করে? কী হয়ছে?
তুমি আমার সাথে কথা বলছো না কেনো? তোমাকে এতোবার ডাকলাম তুমি রেসপন্স করলে না কেনো?
এটার জন্য আমার মা টা কাঁদছে? আমি তো তোর ওপর রাগ করে কথা বলছিলাম না। তুই আমাকে সেই কখন থেকে আংকেল বলে ডাকছিস। তুই আরিয়ানের বউ। আমি তো এখন থেকে তোর শ্বশুর তার মানে বাবা। তোর উচিত না আমাকে বাবা বলে ডাকা।
সরি বাবা। তুমি কী ঐদিনের ঘটনার জন্য আমার ওপর রাগ করে আছো?
একদমই না। বরং আমি খুশি হয়েছি আরিয়ানের সাথে তোর বিয়ে হয়েছে বলে। ঐ নিহান ছেলেটাকে আমার একদম পছন্দ নয়। বদ ছেলে একটা। তুই ছেদ না ধরলে তোর আব্বু ঐ নিহানের সাথে কিছুতেই তোর বিয়ে ঠিক করতো না। বিয়ে তো অনেক দূরের কথা তোর আশেপাশেও ঘেষতে দিত না। ঐ দিন বিয়ের দিন ছিল বলে ঐ ফাজিল ছেলেটা বেঁচে গিয়েছিল। নাহলে মেরে জেলে ভরে দিতাম।
( বাবা পুলিশ ইন্সপেক্টার। আরিয়ান ভাইয়া পেশায় ডক্টর । সবে মাত্র তিন মাস হয়েছে হসপিটালে জয়েন করেছে। আমি অনার্স সেকেন্ড ইয়ারে পড়ি। )
বাবার সাথে আর কিছুক্ষণ কথা বলে রুমের দিকে পা বাড়ালাম। আজকে ভীষণ শান্তি লাগছে আন্টি বা আংকেল কেউই আমার ওপর রেগে নেই। রুমে গিয়ে দেখি আরিয়ান ভাইয়া সারা রুম জুড়ে পায়চারী করছেন। আমার ওপর রাগ ঝাড়ার জন্যই হয়তো ওয়েট করছেন। আমি রুম ঢুকতেই উনি আমার হাত দুটো দেওয়ালে সাথে চেপে ধরেন। আমি চোখ মুখ কুচকে ফেলি।
তখন তো খুব ৩২ পাটি দাঁত বের করে ক্লোজআপ এ্যাড দিচ্ছিলি। এখন এমন মুখ অন্ধকার করে রেখেছ কেনো বাবু? এখন হাসো দেখি। কত হাসতে পারো বাবু?
উনার মুখ থেকে ‘তুমি’ আর ‘বাবু’ শুনে আমার চোখ বড় বড় হয়ে গেলো। উনি কী পাগল হয়ে গেছেন? আমাকে বাবু ডাকছে? উনি ডেইট এক্সপায়ার্ড কিছু খেয়েছেন? আমি চোখ ছোট ছোট করে বলি,
আপনি উল্টা পাল্টা কিছু খেয়েছেন?
জাস্ট সাট আপ।
উনি এতো জুড়ে ধমক দিয়েছেন সে, আমি ভয়ে লাফিয়ে ওঠি। উনি আমার হাত দুটো আরেকটু জুড়ে চেপে ধরেন দেওয়ালের সাথে। আমি ব্যথায় চোখ মুখ কুঁচকে ফেলি। আমি কাতর গলায় বলি,
আহ ভাইয়া লাগছে।
ভাইয়া বলতে দেরি হলো কিন্তু উনার ধমক দিতে দেরি হলো না।
চুপ বেয়াদপ। নিজের হাজবেন্ডকে কেউ ভাইয়া ডাকে? জীবনে শুনছিস? আরেকবার ভাইয়া ডাকলে থাপড়ায়া তোর গাল লাল করে দিব। মেনার্সলেস মেয়ে কোথাকার নিজের হাজবেন্ডকে ভাইয়া ডাকে।
উনি আমার দিকে কটমট করে তাকিয়ে থেকে ওয়াশরুমে চলে যান। উনি ওয়াশরুমে যেতেই আমি অট্টহাসিতে ফেটে পড়ি। আমি খুব ভালো করেই বুঝতে পারছি উনি বাবার কথাগুলোই আমাকে ফিরিয়ে দিচ্ছেন। বাবার মুখের ওপর তো কিছু বলতে পারলেন নাহ। তাই সুযোগ পেয়ে আমার ওপর টর্নেডো বয়ে দিলেন।
হঠাৎ আমার নজর যায় বুকসেলফে রাখা উনার একটা ডায়েরীর ওপর। আমি ডায়েরীটা হাতে নিলাম। ডায়রী ওপর সুন্দর করে আয়না নামটা লেখা। তাহলে ডায়েরীটা আয়না আপুকে নিয়ে লেখা। এই ডায়েরীটা পড়ে অবশ্যই আয়না আপু সম্পর্কে কিছু জানতে পারব। আয়না আপু সম্পর্কে কিছু জানতে পারলে উনাকে আর আয়না আপুকে এক করতে আমার সুবিধা হবে।
ডায়েরী প্রথম পাতায় এক জোড়া চোখ আঁকা। এতো সুন্দর করে নিপুণহাতে চোখ জোড়া এঁকেছে।যা কোন প্রফেশনাল আর্টিস্ট ছাড়া সম্ভব না। চোখ জোড়া অদ্ভুত সুন্দর আর মায়বী। চোখ জোড়া যেনো কথা বলছে। চোখ জোড়া নিশ্চয়ই আয়না আপুর। চোখ জোড়া উনার আর আয়না আপুর ভালোবাসার গভীরতা প্রকাশ করছে।কিন্তু চোখ জোড়া আমার কাছে অনেক পরিচিত মনে হচ্ছে। মনে হচ্ছে এই চোখ জোড়া আমি আগেও অনেক বার দেখেছি। কিন্তু এখন মনে পড়ছে না। আমি আর কিছু না ভেবে পাতা উল্টায়। ডায়েরী দ্বিতীয় পাতায় লিখা উনার আবেগ অনুভূতি মিশ্রিত কিছু কথা।
আমি সব ভুলতে পারি পারিনা ভাবতে তোমায় ভুলার কথা,সব কথা বলতে পারি পারিনা শুধু বলতে তোমায় ভালবাসার কথা।
আমি দ্বিতীয় পেইজ উল্টায়। দ্বিতীয় পেইজে লেখা।
তুমি আমাকে যতই কষ্ট দাও..আমি তোমাকে আপন করে নেবো, তুমি আমাকে যতই দুঃখ দাও..আমি সেই দুঃখকেই সুখ ভেবে নেবো, তুমি যদি আমাকে ভালোবাসা দাও..তোমাকে এই বুকে জড়িয়ে নেবো, আর কখনও যদি তুমি আমাকে ভুলে যাও, আমি তোমাকে সারাটি জীবন…নিরবে ভালোবেসে যাবো…….!
আরেকটা পেইজ পড়তে যাব তার আগেই কেউ ছুঁ মেরে আমার হাত থেকে ডায়েরীটা কেঁড়ে নেয়। হুট করে এভাবে ডায়েরী কেঁড়ে নেওয়ায় আমি একটু চমকে ওঠি। সামনে আরিয়ান ভাইয়া দাঁড়িয়ে আছে। এই মুহূর্তে আরিয়ান ভাইয়াকে আমি আমার সামনে আশা করিনি। আমি একটু অপ্রস্তুত হয়ে পড়ি।
উনার চোখের দিকে তাকিয়ে আমি ভয় পেয়ে যায়। উনার ডায়েরী হাতে নেওয়ার জন্য নিশ্চয়ই উনি আমার ওপর রেগে গেছেন। রেগে যাওয়ারই কথা না বলে ধরেছি উনার পার্সোনাল জিনিস। আমি ও প্রচণ্ড বোকা। উনি রুমে না থাকলে ডায়েরীটা ধরতাম। তাহলে উনি জানতেও পারতেন নাহ আর আমার ডায়েরীটা পড়া কম্পলিট হয়ে যেতো। উনি ওয়াশরুম থেকে বের হওয়ার আগে ডায়েরীটা আগের জায়গায় রেখে দিলেই পারতাম। নিজের বোকামির জন্য নিজেকেই ধিক্কার জানাচ্ছি। উনি রেগে দাঁতে দাঁত চেপে বলেন,
তোর সাহস হয় কী করে আমার জিনিসে হাত দেওয়ার? তুই এতো মেনার্সলেস কেনো? এতো বড় হয়ে গেছিস এখনো জানিস না না বলে কারো জিনিস ধরতে নেই? আর তুই আমার ব্যক্তিগত সম্পত্তি নিয়ে টানাটানি করছিস? নেক্সট টাইম আমার জিনিস টার্চ করবি না।
আমার জিনিসের ধারে কাছেও তুই ঘেষবি না। নেক্সট টাইম আমার জিনিসে হাত দিলে তোর হাত কেটে ফেলবো আমি।
আরশি,,, আরশি,,, আরশি,,, আরশি।
হুট করে কোনো পুরুষালি কন্ঠে নিজের নাম শুনে আমি চমকে ওঠি। এই কন্ঠের মালিক যে আমার পরিচিত। পরিচিত না আমার আপনজন। একান্তুই আমার আপন জন। আমার চোখ দিয়ে দু ফোট অশ্রু গড়িয়ে পড়ে। আমি দৌড়ে চলে যেতে নিলে আরিয়ান ভাইয়া আমার হাত টেনে ধরে।
চলবে……..
( কিছু পার্সোনাল সমস্যা জন্য এই কয়েকদিন গল্পটা নিয়মিত দিতে পারিনি। এখন থেকে নিয়মিত গল্প দিব। হ্যাপি রিডিং।)